Golpo romantic golpo নির্লজ্জ ভালোবাসা

নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৪৫


নির্লজ্জ_ভালোবাসা

লেখিকাসুমিচোধুরী

পর্ব ৪৫ (❌কপি করা নিষিদ্ধ❌)

কারও কথা শুনে তুরা সাথে সাথে রৌদ্রকে ঠেলে সরিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়াল আর সামনে তাকিয়ে দেখে আরফা। রৌদ্র আরফাকে দেখে একেবারে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল।

“আসার আর সময় পাইলি না তুই! বউটারে একটুখানি কাছে পাইছিলাম, শা*লী! তুই এসে পুরো বারোটা বাজিয়ে দিলি! টোটালি ডিসগাস্টিং ইন্টারাপশন! হোয়াট দ্য হেল ইজ রং উইথ ইউ, আরফা?”

রৌদ্রের কথা শুনে আরফা আকাশ থেকে পড়ার ভঙ্গি করে চোখ বড় বড় করে বললম।

“এ্যা! আমি কি আর ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা যে জানব তুমি এই খোলা ময়দানে মানে পাবলিক প্লেসে তোমার বউয়ের সাথে প্রকাশ্যেই রোমান্স করছো? তোমরা পেয়েছোটা কী? পুরো পৃথিবীটা কি তোমাদের ব্যক্তিগত প্রেম কুঞ্জ নাকি? তোমার কাণ্ড দেখো! তুমি রোমান্স করছো রুমের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আর ওদিকে আরশি আর শিহাব ভাইয়া তো রুমের দরজা হাট করে খুলে একেবারে মেঝেতে শুয়ে শুয়ে ঢলাঢলি করছে! মানে কী, তোমরা খোলামেলা জায়গায় রোমান্স করলে কোনো দোষ নেই, আর আমরা একটু চোখ দিয়ে দেখলেই যত দোষ! আরে বাবা, তোমরা কি ভাবছো আমরা কি চোখ বন্ধ করে ঘুরব, নাকি? আমার তো মনে হয়, তোমাদের একটা ‘নো রোমান্স জোন’ বোর্ড ঝুলিয়ে রাখা উচিত ছিল! সিরিয়াসলি, গেট আ রুম, পিপল!”

আরফার মুখে শিহাব আর আরশির রোমান্সের কথা শুনে তুরা আর রৌদ্র যেন থতমত খেয়ে গেল! তারা বিস্ময় নিয়ে একে অপরের দিকে চাউনি হানল, চোখে চোখে প্রশ্ন এ কী শুনছি? শিহাব-আরশি রোমান্স করছে? কথাটা কি একটুও সত্যি?

রৌদ্র বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে দ্রুত জিজ্ঞেস করল আরফাকে।

“কী বললি তুই? আরশি আর শিহাব রোমান্স মানে? সত্যি করে বল!”

আরফা মুখ টিপে হেসে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল, তারপর পুরোপুরি ভাবলেশহীন মুখে বলল।

“হুঁ, রোমান্স। একেবারে ঘনিষ্ঠ হয়ে চুম্মা-চুমি পর্ব চলছিল! আমি অবশ্য সেই সুযোগটা হাতছাড়া করিনি। আমিও সঙ্গে সঙ্গে যাইয়া তাদের প্রেমের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে এসেছি! যেমন তুমি এখন তোমার বউকে জড়িয়ে ধরে স্বর্গের সুখ উপভোগ করছিলে আর আমি এসে মধুচন্দ্রিমা ভেঙে দিলাম! আমার তো মনে হয়, সৃষ্টিকর্তা আমাকে পৃথিবীতে প্রেমিক-প্রেমিকাদের রোমান্সের বারোটা বাজানোর স্পেশাল মিশনে পাঠিয়েছেন! আমি হলাম তোমাদের রোমান্স-বিরোধী প্রধান দূত।”

আরফার কথাগুলো শুনে রৌদ্র এবং তুরা দু’জনেরই গলা শুকিয়ে গেল! তারা লজ্জায় লাল হয়ে একে অপরের দিকে তাকাতে পারল না, বরং একসাথে খক খক করে কেশে উঠল। বিয়ের হাজারো ব্যস্ততার মধ্যে আরফার হুঁশই ছিল না যে, সে রৌদ্রের ছোট বোন আরশির গোপন কেচ্ছা একেবারে ভাইয়ের সামনেই এভাবে ফাঁস করে দিয়েছে!

নিজের মারাত্মক ভুল বুঝতে পেরে আরফা আতঙ্কে জিভ কামড়ে ধরল! সে দ্রুত লজ্জায় মুখ ঢেকে, পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি করে তুরার দিকে তাকিয়ে বলল।

“আরে বাবা তুরা! তুই এখনও এইখানে দাঁড়িয়ে আছিস? এখনই ছাদে চল,গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে,তোকে তাড়াতাড়ি ডেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে পাঠানো হয়েছে, তাড়াতাড়ি আয়।”


হলুদ আর নাচের ধুম অবশেষে শুরু হলো গায়ে হলুদের জমকালো অনুষ্ঠান। তুরা আর তিথিকে পাশাপাশি সুন্দর করে সাজিয়ে স্টেজে বসানো হয়েছে। চারপাশ ঘিরে পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজনরা একে একে এসে তাদের গায়ে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে, বক্সে চলছে উরাধুরা হিন্দী গানের আওয়াজ, আর পুলাপান সেই তালে তালে নাচে মেতে উঠেছে।

ঠিক সেই সময়, আরফা আর আরশি হাতে হাত মিলিয়ে নাচতে নাচতে তুরা আর তিথির সামনে এসে দাঁড়াল। তারা দুজনেই ফুল সাউন্ডে বক্সের গানের তালে তালে মাথা নেড়ে সুর করে হিন্দি গেয়ে উঠল।

~সাজন সাজন সাজন মেরে সাজন মেরে সাজন~
~তেরে দুলহান সাজাউঙ্গি~
~ তেরে দুলহান সাজাউঙ্গি~ (২ বার)

গান গাওয়ার সাথে সাথে তারা দুজনের দিকে তাকিয়ে মজা করে কোমর দোলাতে লাগল। তারপর আবার একসঙ্গে সুরে সুর মিলিয়ে বলল।

~ওয়াদা দিয়া তুহে জো ভি~
~ওয়াদা দিয়া তুহে~

~ম্যায় ও ওয়াদা নিভাউঙ্গি~
~ম্যায় ও ওয়াদা নিভাউঙ্গি~

নাচ আর গানের তালে তুরা আর তিথি হেসে উঠল। গায়ে হলুদের মঞ্চ যেন এখন আরফা আর আরশির নাচের মঞ্চ।প্রথম গানের প্রথম কলি শেষ হতেই, আরফা আর আরশি সামান্য থামল। এরপর ঠিক তখনই, গানের ধারা না ভেঙে, তারা একই নাচের তালে তালে দ্বিতীয় কলি গাইতে গাইতে মঞ্চে আরও একবার নিজেদের মেলে ধরল।

~ঝিলমিল সিতারোঁ কি ছাঁইয়া~
~লুঙ্গি ম্যাঁয় তেরি বলাইয়া~ (২ বার)

এই কলি গাওয়ার সময় তারা দুজনেই তুরা আর তিথির দিকে ঘুরে, স্নেহ ও মজা করে তাদের ওপর থেকে নজর নামানোর বলাই দূর করার ভঙ্গি করে করল।

~ইতনা তুঝে পিয়ার দুঙ্গি~
~ইয়ে জিন্দেগী ভার দুঙ্গি~

এই কথাগুলো বলার সময় তারা বুকে হাত রেখে তুরা আর তিথির দিকে ভালোবাসার ইশারা করল এবং হাত ছড়িয়ে দেখাল যে তারা সবটুকু জীবন উৎসর্গ করবে।

গায়ে হলুদের উৎসবের মাঝেও শিহাবের মনের গভীরে যেন এক চাপা কষ্ট খেলা করছে। সে জোর করে মুখে হাসি ধরে রাখার চেষ্টা করছে, শান্ত থাকতে চাইছে, কিন্তু ভেতরের যন্ত্রণাটা যেন তাকে বারবার আঘাত করছে। এই অস্বস্তি নিয়ে শিহাব আর অন্যদিকে তাকাতে পারল না। সে ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে যাবে, ঠিক তখনই তার চোখ আটকে গেল আরশির দিকে।

আরশি একটা সুন্দর লেহেঙ্গা পরেছে, যার ওড়নাটা নাচের সময় বেশ খানিকটা নিচে ঝুলে গেছে। আরশি যেভাবে উদ্দীপনার সাথে নাচছে, তাতে শিহাবের মনে হলো যে কোনো সময় আরশি তার ওড়নায় পা জড়িয়ে পড়ে যেতে পারে।

ঠিক এই ভাবনাটা মনে আসার মুহূর্তেই ঠিক তাই ঘটল। আরশি নাচতে নাচতে ঝুলে থাকা ওড়নাটিতে পা জড়িয়ে ফেলল, আর একদম পিছনের দিকে হেলে পড়ে যেতে শুরু করল।

মুহূর্তের মধ্যেই চারদিকে এক আতঙ্কিত চিৎকার ছড়িয়ে পড়ল। উপস্থিত সবাই আরশির নাম ধরে চিৎকার করে ডাক দিল।

“আরশিইইইইইইই।”

আরশি যখন শূন্যে হেলে পড়ছিল, চারপাশের মানুষজন এতটাই ভয়ে ও আতঙ্কে জমে গিয়েছে যে তাদের মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আরশিকে যে পড়ে যাওয়া থেকে ধরতে হবে, এই প্রাথমিক চিন্তাটাও যেন সবাই মুহূর্তের জন্য ভুলে গেল!

সময় নষ্ট না করে শিহাব বিদ্যুতের গতিতে দৌড় দিল!আরশি শূন্যে হেলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই, শিহাবের পাশাপাশি রৌদ্রও তড়িৎ গতিতে আরশিকে ধরার জন্য ছুট লাগালো। কিন্তু দুজনেই কাছাকাছি পৌঁছানোর আগেই আরশি ততক্ষণে অনেক নিচের দিকে চলে গেছে। আর মাত্র তিন ইঞ্চি এগোলেই তার মাথাটা ঠাস করে মেঝেতে বাড়ি খাবে।

শিহাবের চোখে যখন এই ভয়াবহ দৃশ্যটা ধরা পড়ল, তার মনে হলো যেন তার কলিজাটা অজান্তেই মোচড় দিয়ে উঠলো।

শিহাব আর দৌড় দিয়ে গতির অপেক্ষায় রইল না। সে যেন জীবনের শেষ বাজি ধরল। আরশি যখন প্রায় পড়ে যাবে, মাথাটা মেঝেতে লাগার ঠিক সেই মুহূর্তে শিহাব লাফিয়ে গিয়ে মেঝেতে হাঁটু গেঁড়ে বসে আরশিকে দুই হাতে ধরে ফেলল!

ভয়ে সবার চোখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে হয়ে গেল। এই বুঝি আরশি পড়ে যাবে, আর মাথাটা ঠাস করে মেঝেতে ফেটে যাবে এই আতঙ্কে সবাই চোখ বন্ধ করে ফেলল। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে, যখন সবাই ধীরে ধীরে চোখ খোলল, দেখল আরশি একদম নিরাপদে, শিহাবের শক্ত আলিঙ্গনে ধরা রয়েছে।

আরশি ভয়ে চোখ শক্ত করে বন্ধ করে রেখেছে। তার মাথায় কেবল একটাই চিন্তা এই বুঝি সে মেঝেতে পড়বে, মাথা ফেটে টকটকে লাল রক্তে ভেসে যাবে, আর তাকে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে অসহায়ভাবে লড়াই করতে হবে। এত উপর থেকে মাথা সরাসরি মেঝেতে লাগলে কী ভয়ংকর আঘাত লাগতে পারে, সেই দৃশ্যই তার চোখের সামনে ভাসছিল। তার শরীরের প্রতিটি অংশ তখন সেই ভয়ঙ্কর আঘাতের প্রত্যাশায় কুঁকড়ে ছিল।

কিন্তু অদ্ভুত বিষয়! বহু সেকেন্ড কেটে গেল, অথচ কোনো ব্যথা নেই!
ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে আরশি ধীরে ধীরে চোখ খুলল। আর চোখ খোলতেই তার দৃষ্টিতে ধরা পড়ল শিহাবের মুখ।

আরশির মাথাটা একদম সুতোয় বাঁধা পুতুলের মতো শিহাবের দুই হাতের ওপর আলতোভাবে স্থির। শিহাব হাঁটু গেঁড়ে মেঝেতে বসে, আরশিকে নিচ থেকে শরীরের পুরো শক্তি দিয়ে ধরে আছে। আরশি যেন বিস্ময়ে একদম থমকে গেল। তার মানে, জীবনের সবচেয়ে বড় বিপদ থেকে এই শিহাব তাকে বাঁচাল!

শিহাবের দিকে তাকিয়ে আরশি স্তম্ভিত হয়ে গেল। শিহাব বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে, যেন সে মৃত্যুর মুখ থেকে অত্যন্ত প্রিয় কিছু ছিনিয়ে এনেছে, ঠিক এমন ভাবে শ্বাস নিচ্ছে যেন তারই প্রাণ পাখিটা এই বুঝি বেরিয়ে যাচ্ছিল।

শিহাবকে দেখতে দেখতে হঠাৎ আরশি তার পিঠের নিচের দিকে এক ধরনের ঠান্ডা, ভেজা স্পর্শ অনুভব করল। সে ইতস্ততভাবে মাথা ঘুরিয়ে ছাদের মেঝেতে তাকাল, আর দেখেই তার হৃৎপিণ্ড যেন থেমে গেল রক্ত।

রক্তের একটা ছোট ধারা মেঝেতে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আরশি ভয় পেয়ে গেল। রক্ত কোথা থেকে এলো? তার কি তবে মাথায় আঘাত লেগেছে মাথা কি ফেটে গেছে? কিন্তু সে তো কোনো ব্যথা পাচ্ছে না! তাহলে এই রক্ত কার, আর কোথা থেকে আসলো?

আরশি যখন মেঝেতে রক্তের উৎস নিয়ে ভয়ে সিঁটিয়ে আছে, ঠিক তখনই জনস্রোত ভেঙে সবাই এক হুড়মুড় করে আরশির কাছে ছুটে এলো। ভিড় ঠেলে সবার আগে এলেন রৌশনি খান। তিনি আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে আরশিকে সজোরে নিজের বুকে টেনে নিলেন, আর হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। যতই মনোমালিন্য থাকুক, আরশি তো তার কলিজার টুকরা একটা মাএ মেয়ে! এইখান থেকে পড়লে কী মর্মান্তিক ক্ষতি হতে পারত সেই ভয়াবহ চিন্তা মাথায় আসতেই তিনি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না।

কিন্তু এতো মানুষের উদ্বেগ আর কোলাহলের মাঝেও মেঝেতে ছড়িয়ে পড়া সেই রক্ত কিন্তু কারো চোখে পড়ছিল না।সবার দৃষ্টি তখনো আরশির দিকে।

ঠিক তখনই, রক্তগুলো চোখে পড়ল তুরার। রক্তটা ঠিক কোথা থেকে গড়িয়ে আসছে, তা দেখতেই তুরার বুকটা ধক করে উঠল! এক রাশ তীব্র কষ্ট নিয়ে তার অজান্তেই চোখ দিয়ে গরম অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তুরা কাঁপা গলায় খুব আস্তে করে ডাকল।

“শিহাব ভাইয়া।”

তুরার সেই চাপা ডাক সবার মনোযোগ আকর্ষণ করল। সবাই চমকে শিহাবের দিকে তাকাল। আরশিকে নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত ছিল যে তাদের মনেই ছিল না, এই বীরত্ব দেখানো মানুষটিও তাদের পাশেই স্থির হয়ে আছে।

আর মুহূর্তেই তাদের সবার চোখ গেল মেঝেতে ছড়ানো রক্তের দিকে। সবাই যেন বিদ্যুতের শক খেল! তাদের চোখ অবাক বিস্ময়ে স্থির হয়ে গেল শিহাবের দিকে।

কারণ, শিহাবের দুই হাতের কনুই থেকেই ঝরঝর করে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে! দূর থেকে শূন্যে ঝাঁপ দিয়ে আরশিকে ধরার সময়, মেঝেতে ঘষা লেগে তার কনুই দুটোর চামড়া উঠে মাংস অনেকটুক ছিলে গেছে। সেই গভীর ছিলে যাওয়া জায়গাগুলো থেকে রক্ত ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে মেঝেতে ছোট ছোট পুকুর তৈরি করছে। কিন্তু শিহাবের মুখ ছিল পাথরের মতো স্থির, একটুও শব্দ নেই, কেবল মাথা নিচু করে হাঁটু গেঁড়েই বসে আছে।

আরশিও এবার সেই নীরবতায় ধীরে ধীরে শিহাবের দিকে তাকাল। আর তার চোখ মুহূর্তে চলে গেল শিহাবের রক্ত ঝরা কনুই দুটোর দিকে। আরশি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। ঠিক কতটা মানবিকতা থাকলে, এমন ভয়ঙ্কর মুহূর্তে নিজের আঘাতের চিন্তা না করে আরেকজনকে বাঁচাতে মানুষ এমন মরিয়া হয়ে ওঠে তা আরশি এই শিহাবকে আজ এভাবে না দেখলে জানতোই না। আরশির চোখ থেকেও অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।

শিহাবের দুই কনুই থেকে রক্ত ঝরতে দেখে আনোয়ার খানের মুখ উদ্বেগে বিবর্ণ হয়ে গেল। তাঁর চোখদুটো যেন মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্কিত হয়ে উঠল। তিনি দ্রুত শিহাবের দিকে তাকিয়ে প্রায় চিৎকার করে বললেন।

“বাবা! এ কী সর্বনাশ! তোমার রক্ত ঝরছে যে।”

এক মুহূর্তও নষ্ট না করে তিনি ডানদিকে ঘুরে দাঁড়ানো আয়ানকে লক্ষ্য করে কঠোর নির্দেশ দিলেন।

“এই আয়ান, তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে ফোন কর! এক্ষুনি!”

আয়ান তড়িৎ গতিতে পকেট থেকে ফোন বের করে ডাক্তারকে কল করতে শুরু করল।

অন্যদিকে, রৌদ্র তখনো যেন অন্য এক জগতে। সে এক পলকও না সরিয়ে শিহাবের দিকে তাকিয়ে আছে। শিহাবের এই বীরত্বপূর্ণ কাজ, নিজের আঘাতের তোয়াক্কা না করে ঝাঁপিয়ে পড়া এই দৃশ্য রৌদ্রের মনের গভীরে এক গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করল। তার হৃদয় যেন ফিসফিস করে বলে উঠল আরশি সত্যিই ভাগ্যবতী! শিহাবের মতো একজন মানুষ তার জীবনের রক্ষক এবং সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে। রৌদ্রের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাল হয়তো আজ সম্পর্কের শীতলতা আছে,কিন্তু শিহাব নিশ্চিতভাবেই খুব দ্রুতই আরশিকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসে মেনে নেবে,যা আজ শিহাবের সাহসীগতা প্রমাণ করে দিচ্ছে।

এদিকে শিহাব তখনো একদম নিশ্চুপ, স্থির হয়ে বসে আছে। তার কনুই থেকে যে রক্ত ঝরছে, সেদিকে যেন তার একদম খেয়ালই নেই। তার সমস্ত চেতনা তখনো অন্য কোথাও সেই ভয়াবহ মুহূর্তটিতে আটকে আছে।

শিহাবের বুকের ভেতরটা এখনো দাউ দাউ করে জ্বলছে, হৃৎপিণ্ড ধক ধক করে দ্রুত তালে বাজছে, যেন এইমাত্র সে এক ম্যারাথন দৌড়ে জিতেছে। শিহাব কিছুতেই বুঝতে পারছে না আরশির পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে তার ভেতরে এতটা তীব্র কষ্ট কেন হচ্ছিল? কেন সে আরশির জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছিল? এই তীব্র মানসিক আলোড়ন তাকে গভীরভাবে বিভ্রান্ত করে তুলছে।

রানিং…!

ভুলক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই, আর জ্বরের কারনে রীচেক দিতে পারলাম না, তাই বানান ভুল হলে মানিয়ে নিয়েন, আর জ্বরের মাথা নিয়ে আজকে সারাদিনে কুত পেরে পেরে এই পর্বটা লেখলাম জানি না কেমন হয়ছে।

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply