Golpo romantic golpo নির্লজ্জ ভালোবাসা

নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৪৩


নির্লজ্জ_ভালোবাসা

লেখিকাসুমিচোধুরী

পর্ব ৪৩ (❌কপি করা নিষিদ্ধ)

দুই হাত গালে চেপে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে তিথি। এই তো এক মুহূর্ত আগে এই কথাটি বলার অপরাধেই আয়ান তার দু’গালে ঠাস ঠাস করে তীব্র চড় বসিয়ে দিয়েছে।

আয়ান কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে তিথির এই কান্না দেখল। তারপর গলা সপ্তমে চড়িয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ল।

“কী বললি তুই? আমি তোর ইজ্জত কেড়ে নিয়েছি? তোর এত বড় সাহস।”

আয়ানের চোখ দুটো তখন আগুনের মতো লাল। এই মুহূর্তে তিথি আয়ানকে দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছে। তবুও তিথি একগুঁয়েমি নিয়ে সাহস করে পালটা জবাব দিলো।

“তা নয়তো কি? আমার এই বদনাম নিয়ে আমি এখন কাকে মুখ দেখাবো?”

তিথির কথায় আয়ানের রাগ আরও শতগুণ বেড়ে গেল। সে দাঁতে দাঁত ঘর্ষণ করে বলল।

“ওরে বেয়াদব মহিলা! দাঁড়া, তোর আসল রূপ দেখাচ্ছি!”

কথাটা বলেই আয়ান দ্রুত স্টাডি রুমে গেল এবং একটি ল্যাপটপ নিয়ে এলো। এরপর দ্রুত লিভিং রুমে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজটি চালু করে তিথির একেবারে সামনে তুলে ধরে বলল।

“এই নে! ভালো করে দেখ! কার ইজ্জত কেড়ে নেওয়া হয়েছে আর কে পাগল হয়েছিল!”

তিথি ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকাল। কাল রাতে নেশার ঘোরে সে কীভাবে আয়ানের সাথে বেয়াদবি করেছে, এবং সব শেষে সে কী চরম কাণ্ড ঘটিয়েছে সবটা দেখল। সেই দৃশ্য দেখে সে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে চাইল। তিথি এবার অপরাধবোধে মাথাটা নিচু করে ফেলল। আয়ান তখন কিছুটা শান্ত স্বরে, তবে কঠোর কণ্ঠে বলল।

“দেখ! যা হওয়ার, তা তো হয়েই গেছে। আর কী বললি যে তোর বিয়ে হবে না, তোর স্বামী তোকে গ্রহণ করবে না? তুই হয়তো ভুলেই গেছিস আমিই তোর স্বামী! আর কালকেই আমাদের সামাজিকভাবে আবার বিয়ে। আজ শুধু পরিবার ও তাদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে এই বিয়েতে মত দিয়েছি। নাহলে তোর মতো একরোখা মেয়েকে বিয়ে করার এক বিন্দুও ইচ্ছে আমার ছিল না!”

তিথি মাথা নিচু করে রইল, একটা কথাও বলল না। লজ্জায় সে জড়সড় হয়ে আছে এত বড় একটা কাজ সে কীভাবে ঘটাতে পারল? ছিহ্! ছিহ্! এই কথা ভাবতেই তিথির মনে হচ্ছে আত্মগ্লানিতে সে মরেই যাক।

তিথিকে এভাবে নিষ্প্রাণ পুতুলের মতো চুপ করে বসে থাকতে দেখে আয়ান বলল।

“গেট আউট এই মুহূর্তে আমার রুম থেকে বেরিয়ে যা! তুই আর কখনো আমার ধারেকাছে আসবি না। শোন! তোর সাথে বিয়ে হলেও, আমি কখনো তোকে আমার স্ত্রী হিসেবে মানবো না। বাইরের লোকের কাছে তুই আমার স্ত্রী হবি ঠিকই, কিন্তু আমার কাছে তোর কোনো স্থান নেই।”

আয়ানের কথা শুনে তিথির সর্বাঙ্গে যেন আগুন জ্বলে উঠল। সে তার আসল ইজ্জত টাই নিয়ে নিল, আর এখন বলছে তাকে স্ত্রী হিসেবে মানবে না! এই ভাবনা আসতেই তিথি ক্রোধে কিছু একটা বলতে উদ্যত হলো, কিন্তু আয়ান তার আগেই ধমকে থামিয়ে বলল।

“আমি কোনো সাফাই শুনতে চাই না! এখনই বের হ এখান থেকে! নাহলে তোকে তুলে নিয়ে আছাড় মারতে আমার এক সেকেন্ডও লাগবে না!”

কথাটা বলেই আয়ান দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। তিথি ধীরে ধীরে নিজের পোশাক পরে খাট থেকে নামল। আর নেমে প্রথম পা বাড়াতেই শরীরের তীব্র যন্ত্রণায় তার পা টলে গেল। সে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেল, আর সেই ব্যথায় তার মুখ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত চিৎকার বেরিয়ে এলো।

“আহহহ! আম্মু!”

তিথি অতিকষ্টে উঠে দাঁড়াল, এবং পা টেনে টেনে ঘর থেকে বের হলো। তুরা আর আরফা তিথিকে ছাদে খুঁজে না পেয়ে আবার নিচে নেমে আসছিল। তিথি ধীরে ধীরে খোঁড়াতে খোঁড়াতে নিজের ঘরের দিকে যাওয়ার পথেই আরফা আর তুরার সামনে পড়ে গেল। তিথি দুজনকে দেখেই তাড়াহুড়ো করে ওড়নাটা টেনে ভালো করে নিজের শরীরটা আবৃত করার চেষ্টা করল। তুরা তিথিকে দেখে সন্দেহ নিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল।

“কিরে! এত সকালে তুই কোথায় গিয়েছিলি?”

তিথি ভয়ে ঢোঁক গিলে আমতা আমতা করে বলল।

“ও… ওহ, আপু! একটু বাইরে গিয়েছিলাম, একটু ফ্রেশ বাতাস খেতে।”

“ওহ, তাই বুঝি! তো আমাদের কিছু বলবি না? এদিকে আমি আর আরফা তোকে পাগলের মতো খুঁজে মরছি।”

“আপু, আমি তো বুঝতে পারিনি যে তোমরা আমাকে খুঁজছো,”

তিথি বলল।

“আচ্ছা, ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। মা সকালের নাস্তার জন্য ডাকছে।”

“আচ্ছা।”

কথাটা বলেই তিথি দাঁতে দাঁত চেপে চেষ্টা করল স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে, কিন্তু পারল না। সে আবার খোঁড়াতে শুরু করল। তুরা তিথিকে খোঁড়াতে দেখে সন্দেহ নিয়ে বলল।

“কিরে! এমনভাবে পা টেনে হাঁটছিস কেন? পায়ে আঘাত পেয়েছিস নাকি?”

তিথি থতমত খেয়ে সেখানেই থেমে গেল। তার পুরো শরীরটা ভয়ে কাঁপতে লাগল। তারপর কোনোমতে গলা পরিষ্কার করে বলল।

“ও… ওই আসলে আপু, রাস্তায় পা স্লিপ করে একটু ব্যাথা লেগেছে, তাই এমন করে হাঁটছি,চিন্তা করো না ঠিক হয়ে যাবে।”

কথাটা বলেই তিথি প্রায় ছুটে গিয়ে রুমে ঢুকল এবং তাড়াতাড়ি দরজাটা ভেজিয়ে দিলো। তুরা আর আরফা সন্দেহ নিয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকাল। তবে আর কিছু না ভেবে, তারা দুজনেই নিচের তলার দিকে রওনা দিলো।

তিথি রুমে এসেই নতুন পোশাক নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে প্রবেশ করল। শাওয়ার ছেড়ে দিলো, আর ঠান্ডা জলের ধারা শরীরে পড়তেই তার শরীর আরও বেশি কাঁপতে শুরু করল। এরপর সে আয়নায় নিজের দিকে লক্ষ্য করল তার সারা শরীরে যেন লালচে ছোপ ছোপ কামড়ের দাগ স্পষ্ট হয়ে আছে। তিথির বুঝতে বাকি রইল না, আয়ানেরই করা এই ক্ষতগুলো। আর আয়ান যে শুধুমাত্র চরম জেদ ও রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই কামড়েছে, তিথি সেটাও যন্ত্রণা নিয়ে বুঝে গেল।

তিথি শাওয়ার নিয়ে এসে কাঁপা শরীরে কম্বল গায়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। আর ক্লান্তিতে তার চোখ জড়িয়ে এলো, আর ধীরে ধীরে সে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।

একে একে সবাই ডাইনিং টেবিলের চারপাশে ভিড় করল। অনেক আত্মীয়-স্বজনও একত্রে নাস্তার জন্য বসেছেন। আয়ানও ফ্রেশ হয়ে ফিটফাট সেজে নিচে নামল। আরশি, শিহাবও এলো, রৌদ্রও সবার শেষে নামল। সকলে ডাইনিং টেবিলে নিজেদের আসনে বসল। হঠাৎ তনুজা খানের চোখ গেলো সবাই তো আছে, তিথি কেন এখনো অনুপস্থিত? এই চিন্তা মাথায় আসতেই তিনি তুরাকে জিজ্ঞেস করলেন।

“কিরে মা, তোকে না তিথিকে ডেকে আনতে বলেছিলাম?”

তুরা জবাব দিলো।

“হ্যাঁ মা, ও তো বলল নিচে আসছে, কিন্তু এতক্ষণেও কেন এলো না, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।”

তনুজা খান বললেন।

“ঠিক আছে। তোরা খাওয়া শুরু কর। আমি একবার উপরে গিয়ে দেখে আসছি।”

কথাটা বলেই তনুজা খান তাড়াতাড়ি উপরে গেলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর তিনি মুখ ভার করে এবং হতাশ ভঙ্গিতে ফিরে আসলেন। তনুজা খানকে একা ফিরে আসতে দেখে রৌশনি খান চিন্তিতভাবে জিজ্ঞেস করলেন।

“তিথি কই? ও কি এলো না?”

তনুজা খান শান্ত ও স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন।

“পরে খাবে। এখন নাকি ওর একদম খেতে ইচ্ছে করছে না।”

আর কেউ কোনো প্রশ্ন তুলল না বা কথা বাড়াল না। সবাই নিজেদের মতো করে খাওয়া শুরু করল।


দুপুর ঠিক দুটো ছুঁই ছুঁই। গায়ে হলুদের জমকালো স্টেজ সাজানো সম্পূর্ণ হয়েছে, আর সকল আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে পুরো বাড়িটা যেন উৎসবের আনন্দে টইটম্বুর। রৌদ্র কোথায় জানি গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে, তবে সে সন্ধ্যার আগে অবশ্যই ফিরবে বলে জানিয়েছে।

আরশি দুই হাত ভরে আনন্দের মেহেন্দি লাগিয়েছে। আরশি প্রাণখোলা খুশি মনে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে রুমে প্রবেশ করতে লাগল।

“কিনে দে কিনে দে রে তুই রিশমি চুরি, নয়লে করবো তোর সাথে আড়ি।”

ঠিক সেই মুহূর্তে শিহাব ফোন স্কল করতে করতে রুম থেকে বের হচ্ছিলো। আরশিও ছিল প্রচণ্ড খুশি আর অন্যমনস্ক, শিহাবও তাই। দুজনে একরকম ঘোরের মধ্যে থাকায়, সজোরে ধাক্কা খেল এবং ধড়াম করে মেঝেতে পড়ে গেল। আরশি সোজা গিয়ে শিহাবের বুকের উপর পড়ল। আরশি আতঙ্কে সাথে সাথে শিহাবের শার্টের কলারটা খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলল। শিহাব প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে আরশিকে কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনই তার দৃষ্টি থমকে গেল আরশির লাজে রাঙানো বন্ধ চোখের দিকে। শিহাবের হাত অসাড়ভাবে আরশির কোমরটা শক্ত করে চেপে ধরল। শিহাব যেন মুহূর্তে এক ঘোর লাগা জগতে প্রবেশ করল। নিজের অজান্তেই তার ঠোঁট ধীরে ধীরে আরশির ঠোঁটের পানে এগিয়ে যেতে লাগল।

আরশিও অতি সন্তর্পণে চোখ দুটি মেলল। আর চোখ খুলেই সবার আগে তার দৃষ্টিতে ধরা পড়ল শিহাবের নেশাচ্ছন্ন, তীব্র আকর্ষণ ভরা চোখজোড়া। আরশি স্পষ্ট অনুভব করল, শিহাব তীব্র গতিতে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। আরশিও যেন পাথর হয়ে গেল, সরা বা বাধা দেওয়ার কথা যেন ভুলেই গেল সে এক ঘোরের মধ্যে শিহাবের দিকে চেয়ে রইল। শিহাব খুব সাবধানে আরশির ঠোঁটের কাছে একেবারে ঘনিষ্ঠ হলো। আর আরশির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দেওয়ার ঠিক সেই মুহূর্তেই, কারও গগনভেদী তীক্ষ্ণ চিৎকার ভেসে এলো।

“আআআআআআআ! ওহ্ মাই গড! আমি কিছু দেখিনি!”

রানিং…!

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply