Golpo romantic golpo নির্লজ্জ ভালোবাসা

নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৩৫


নির্লজ্জ_ভালোবসা

সুমি_চৌধুরী

পর্ব ৩৫ (❌কপি করা নিষিদ্ধ❌)

রাতটা কবরখানার মতো নিস্তব্ধ। বাইরে মাঝে মাঝে শুধু কুকুরের করুণ ডাক ভেসে আসছে। আয়ান বিছানার এক কোনায় মাথা চেপে ধরে বসে আছে, তার প্রতিটি শ্বাস যেন ভারী পাথর। তিথি বিছানার অন্য কোণে প্রাণহীন পুতুলের মতো গুটিসুটি মেরে আছে। ঘরের মধ্যে নীরবতা নয়, যেন পাথরের মতো জমাট বাঁধা আতঙ্ক।

কিছুক্ষণ পর আয়ান পেটে বাতাস টেনে নিয়ে একটি লম্বা ভারী দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এভাবে বসে থাকলে চলবে না। সে ধীরে তিথির দিকে ঘুরল। তিথি তাকে ঘুরতে দেখে ভয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফেলল, এই বুঝি চড় পরবে তার গালে।

তিথিকে অবাক করে দিয়ে আয়ান অবিশ্বাস্য শান্ত গলায় বলল।

“তিথি, সত্যি করে একটা কথা বল তো? তুই আমার গাড়িতে কিভাবে এলি?”

তিথি আয়ানের কথায় মাথা গুঁজলো। কিভাবে বলবে যে শুধুমাত্র তাকে শাস্তি দিতে গিয়ে আজ এই সর্বনাশ! এই কাণ্ড জানার পর আয়ান শান্ত থাকবে? কক্ষনো না! মেরে তো মাসকালাই ডাল বানিয়ে দিবে। এখন বাড়িতেও নেই যে বাবার কাছে আশ্রয় নিবে। এখন অন্য শহরে, অন্য এলাকায়, সে এই ছোট ঘরে আয়ানের সাথে আক্ষরিক অর্থেই বন্দী।

তিথিকে চুপ করে থাকতে দেখে আয়ানের গলার স্বর আরও শান্ত, কিন্তু বিপজ্জনক হয়ে উঠল।

“কী হলো তিথি বল?চুপ করে আছিস কেন?।”

তিথি কোনো রকম গলায় সুর এনে আমতা আমতা করে বলল।

“ইয়ে মানে… আমি জানি না আয়ান ভাইয়া।”

আয়ান এবার ধমকের স্বরে যেন বিষ ঢেলে দিল।

“জানিস না মানে? হাওয়া থেকে উড়ে এসেছিস নাকি? হেঁটে গাড়িতে না উঠলে তো আর উঠতে পারতি না। এখন ভালোই ভালোই বলছি বল তুই কিভাবে আমার গাড়িতে এলি! নাহলে আজ রাতে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে তোর লাশ এখানেই ফেলে আমি দেশ ছেড়ে পালাব!”

আয়ানের সেই ভয়ঙ্কর ধমকে তিথি চমকে উঠে কেঁপে গেল। শেষমেশ আয়ানের মৃত্যুভয় শুনে সে ভয়ে জলদি জলদি সব কিছু বলতে শুরু করল। যা শুনে আয়ানের চোখ আক্ষরিক অর্থে কপালে উঠল! আয়ান ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে মুহূর্তে হাত উঁচিয়ে তিথিকে মারতে গেলে তিথি চিলের মতো আর্তনাদ করে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বাচ্চাদের মতো করে বলল।

“না আয়ান ভাইয়া, মেরো না! প্লিজ! ব্যথা লাগবে! ব্যথা লাগলে আমি জোরে জোরে কান্না করব!”

তিথির সেই আর্জি আর হুমকি মেশানো কথা শুনে আয়ানের উঠে আসা হাতটা ঠিক সেখানেই জমে গেল। সে রাগে নিজের হাতের আঙ্গুলগুলো মুচড়ে একাকার করল। তিথির এই ছেলেমানুষি ভুলের জন্য আজ তাদের এত বড় সর্বনাশ হলো! আয়ানের ইচ্ছে করছিল তিথিকে ইচ্ছেমতো আছড়ে ফেলে মারতে। কিন্তু এখন মারলে তিথি প্যাঁ পু করে চিৎকার করবে, আর গ্রামের মানুষ শুনলে নেগেটিভ মাইন্ডে নিবে।

আয়ান এসব কিছু ভেবে কোনোমতে নিজের রাগ গিলে ফেলে বিছানার এক কোনায় ধপাস করে, মৃতদেহের মতো শুয়ে পড়ল। সারাদিনের ক্লান্তি, অপমান আর উত্তেজনা সব মিলিয়ে সে মুহূর্তেই অবসন্ন হয়ে পড়ল।

তিথি আয়ানকে অচেতনের মতো শুয়ে থাকতে দেখে, তার মুখের দিকে সাবধানে উঁকি দিল এবং দেখল ঘুমিয়ে আছে। তিথি বড় বড় শ্বাস নিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল এবং মনে মনে বলল।

“শালা গোমড়া মুড়ি! খালি কথায় কথায় গায়ে হাত তুলিস! আজ আমি বিপদে পড়েছি বলে এত শান্ত থাকলাম, নাহলে বাড়িতে থাকলে তোকে নুন-পানি ছাড়া কাঁচা চিবিয়ে খেতাম!”


খান বাড়িতে শোকের স্তূপ নেমে এসেছে। শত শত মানুষের ভিড়, কিন্তু সেই ভিড়ের আওয়াজকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে হৃদয়ভাঙা কান্নার শব্দ। পোস্টমর্টেম শেষে তিথির নিথর দেহটা সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে খাটিয়ার ওপর শুইয়ে রাখা হয়েছে।

আনোয়ার খান নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে আশিক খানকে ধরে আছেন। আশিক খান তখন পাগলের মতো বুক চাপড়ে চিৎকার করছেন।

“ও আল্লাহ! আমার ফুলের কলির মতো মেয়েটার সাথে এত বড় জুলুম হলো! আল্লাহ, তুমি এর কড়ায় গণ্ডায় বিচার কোরো! আমার মেয়েটা সে আর আমাকে ‘বাবা’ বলে ডাকবে না! কোনো আবদার করবে না!”

আরিফুল খানও গুমরে কেঁদে উঠে আশিক খানকে ধরে আছেন।আরশি এক কোনায় দেয়ালের সাথে মিশে গিয়ে নীরবে ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। তার চোখ কাঁদতে কাঁদতে লাল টকটকে হয়ে গেছে। রৌদ্র আরশিকে ফোন করে নিশ্চিত করে দিয়েছে যে সে আসছে। বাড়ির শোকার্ত সদস্যেরা সবাই শুধু জানে তাদের বড় ছেলে রৌদ্র দেশে ফিরছে। তার উপস্থিতিতে হয়তো শোকার্ত পরিবেশে কিছুটা শক্তি পাওয়া যাবে।কিন্তু একটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্যটি শুধু আরশির কাছেই ছিল। সে জানে রৌদ্র একা আসছে না, সাথে তুরাও আসছে

আরশির মনে দ্বিধা তিথির মৃত্যু যেমন কষ্ট দিচ্ছে, তেমনই চিন্তা হচ্ছে, রৌদ্র আর তুরাকে দেখে বাড়ির এই বিপর্যয় কেমন হবে। আর শিহাব এই দৃশ্য দেখে কি সে শান্ত থাকবে, নাকি আবার সব হারিয়ে পাগলামি শুরু করবে? এই ভয়াবহ চিন্তাটাই আরশির কলিজাটা চিড় ধরিয়ে দিচ্ছে।

শিহাব আরশির দিকে দৃষ্টি ফেরাল। দেখল মেয়েটার চেহারা শুকিয়ে গিয়েছে, চোখ দুটো অস্বাভাবিকভাবে ফোলা। শিহাব ধীরে ধীরে আরশির দিকে এগিয়ে এসে, নিঃশব্দে তার পাশে দাঁড়াল। এরপর সামনে খাটিয়ার দিকে তাকিয়ে শীতল, ভারি কণ্ঠে আরশির উদ্দেশ্যে বলল।

“জানো আরশি? এই মুহূর্তে তুরার কথা ভীষণ মনে পড়ছে। এক বোন তো আজ চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেল। আর তুরা,সে তো পালিয়ে গেল কোথায় আছে, কেউ জানে না।”

শিহাবের সেই করুণ মন্তব্যে আরশি এক পলক তার দিকে তাকাল। তিথির খাটিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে, শোকের এই পরিবেশে, আরশি যেন নিজেই নিজের অজান্তে এক ভয়ঙ্কর প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল শিহাবের দিকে।

“আচ্ছা শিহাব ভাইয়া, একটা কথা বলি?”

শিহাবের চোখ তখনো খাটিয়ার দিকে স্থির। সে ধীর, ক্লান্ত স্বরে বলল।

“হুম, বলো?”

আরশি মুহূর্তের দ্বিধা কাটিয়ে সরাসরি তার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের কথাটি বলল।

“যদি এখন তুরা ফিরে আসে আপনি কি আমাকে ছেড়ে আবারো তুরাকে বিয়ে করতে চাইবেন?”

আরশির এই অসহায়, ধারালো প্রশ্নে শিহাবের যেন শ্বাস থেমে গেল। সে যেন পাথরের মতো সেখানে থমকে গেল। ধীরে ধীরে সে চোখ ঘুরিয়ে আরশির লাল ফোলা চোখের দিকে তাকাল। আরশি তখন নিজের চরম পরিণতি জানার জন্য ভয়ঙ্কর দৃঢ়তা নিয়ে শিহাবের দিকে তাকিয়ে আছে।

আরশির এই কথার উত্তর দেওয়াটা শিহাবের কাছে এক আকাশ পরিমাণ কঠিন মনে হলো। এই মুহূর্তে সে তার ভেতরের তুমুল ঝড়কে ভাষায় প্রকাশ করার মতো সামান্য শক্তিও খুঁজে পাচ্ছে না।

যদিও বিয়ে জীবনে একবারই হয় এই নীতিতে শিহাব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। কিন্তু তুরার বেলায় তা মানতে যেন তার হৃদয়ের প্রতিটি শিরা ছিঁড়ে যাচ্ছে। তুরাকে শিহাব মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারেনি। হয়তো সেই আবেগ প্রকাশ করা ছেড়ে দিয়েছে, কিন্তু তার আবেগ, স্মৃতি, উপস্থিতি সব আগের মতোই শিহাবের মনের গভীরে গেঁথে আছে। এই মারাত্মক কষ্টগুলো শিহাব বুকের পাঁজর দিয়ে চাপা রেখে বাইরে ভালো থাকার ভান করে চলছে।

কিন্তু সত্যি সত্যি যদি তুরা আসে, তাকে দেখে কি আবার তার আগের সেই অপ্রকৃতিস্থ পাগলামিটা জেগে উঠবে? আবারো কি তুরাকে জোর করে পাওয়ার সেই পুরনো জেদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে? আবারো কি সে তুরাকে দেখে দুর্বল হয়ে পড়বে৷ এসব ভাবতেই শিহাবের ভেতরটা যেন তীব্র যন্ত্রণায় মুচড়ে গেল। তার গলার কাছে কিছু একটা দলা পাকিয়ে গেল, তাই শিহাব কোনো উত্তর দিতে পারলো না।

আরশি শিহাবের সেই জটিল নীরবতা দেখে মুহূর্তেই বুঝে নিল তার ভেতরের যুদ্ধটা। আরশি আর চাপ না দিয়ে অত্যন্ত শান্ত, কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে বলল।

“ভালোবাসা একটা খুব পবিত্র জিনিস। কিন্তু সেই ভালোবাসার পবিত্রতা ধরে রাখতে সবাই পারে না। কেউ সেই ভালোবাসাটাকে পাগলের মতো জোর করে আদায় করতে চায়, যেটাকে আসলে পাগলামি বলা হয়, ভালোবাসা নয়।”

আরশি তখন খাটিয়ার দিকে চোখ ফিরিয়ে,অশ্রুসজল কণ্ঠে বলল।

“সেই ভালোবাসাটাই পবিত্র, যেই ভালোবাসার মানুষটাকে অন্যজনের পাশে হাসতে দেখে তার সুখ কামনা করে শান্তিতে বলতে পারে, ‘তুমি সুখে আছো, এতেই আমি খুশি। এর থেকে বেশি কিছু চাই না আমি।'”

“এই সামান্য আত্মত্যাগটুকুকেই একজন মানুষের পবিত্রতম ভালোবাসা বলা হয়। এই সামান্য কথাটুকু সবাই বলতে পারে না, শিহাব ভাইয়া। কিন্তু কেন জানি আমার বিশ্বাস হয় আপনি ভালোবাসাটাকেও পবিএ ধরে রাখতে পারবেন এবং এই কথাটুকু ও বলতে পারবেন।”

আরশির অসাধারণ গভীর কথায় শিহাবের হৃদপিণ্ডটা যেন মুচড়ে উঠল। কিন্তু শোকের আবহে আরশি কেন এই জীবনবোধের কথাগুলো বলল, তা শিহাব এক মুহূর্তের জন্যও বুঝে উঠতে পারছিল না।শিহাব সেই রহস্যের কিনারা করার জন্য আরশির দিকে তৎক্ষণাৎ ঘুরে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই আরশি মুখ ফিরিয়ে সেখান থেকে দ্রুত সরে গেল।শিহাব বরফের মূর্তির মতো সেখানেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। তার কানে শুধু আরশির সেই আত্মত্যাগের কথাগুলো প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল, আর সে বারবার ভাবতে থাকল আরশি আজ হঠাৎ তাকে এমন কঠিন সত্য কেন বলে গেল?


রৌদ্র আর তুরা তখনো রাস্তায় গাড়িতে। বাইরে প্রচণ্ড যানজট, গাড়ি এক ফোঁটা নড়ছে না। তুরা অবিরত ফুঁপিয়ে কান্না করতেই আছে। রৌদ্র শত চেষ্টা করেও তাকে শান্ত করতে পারছে না।

জ্যাম যখন দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিল, শোকে ও উদ্বেগে তুরার ধৈর্যের বাঁধটা যেন হুট করে ভেঙে গেল। তুরা কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই, যেন দম আটকে আসছে গাড়ি থামা মাত্র দরজা খুলে রাস্তায় নেমে পড়ল। রৌদ্র কিছু বোঝার আগেই তুরা পাগলের মতো জ্যামের মাঝখান দিয়ে ছুটল। রৌদ্র ও গাড়ি থেকে নেমে তুরার পিছনে ছুটল। ততক্ষণে তুরা অনেক দূরে চলে গেছে। রৌদ্র বুঝতে পারল, তুরা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, তাই আর না ছুটে গাড়িতে ফিরে এসে নিঃশ্বাস ফেলল। তুরা জ্যামের অনেক সামনে এসে একটা সিএনজিতে উঠে পড়ল।

তুরা সেই সিএনজিকে একদম বাড়ির মূল ফটকের সামনে এসে থামিয়ে চালককে ভাড়া না দিয়েই ঝড়ের বেগে বাড়ির দিকে দৌড় দিল। পিছন থেকে হতভম্ব চালক গলা ফাটিয়ে চিৎকার করল।

“আরে ম্যাডাম! আমার ভাড়াটা তো দিয়ে যান!”

ততক্ষণে তুরা সব উপেক্ষা করে উঠোনে চলে এসেছে। তুরা দৌড়ে একদম তিথির খাটিয়ার সামনে এসে আচমকা থমকে দাঁড়ালো। সামনে সাদা কাপড়ে মোড়ানো তার বোনের নিথর দেহ।

মুহূর্তেই শোকার্ত সবার চোখ সেই ক্ষিপ্ত তুরার দিকে পড়ল। শিহাব এক মনে খাটিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ শিহাবের চোখ পড়ল খাটিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তুরার দিকে, মুহুর্তে শিহাবের চোখ বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে স্থির হয়ে গেল।

আশিক খান নিজের মেয়েকে দেখে দূর থেকেই বুকফাটা, গলা-ভাঙা আর্তনাদ করে ডাক দিলেন।

“তুরা মা রে! ও মা! তুই আসছিস? মা রে, আমার বুকে আয়! আমার যে কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে তুষের আগুনের মতো জ্বলছে! আয়, আমার বুকে আয়! আমার কলিজাটা একটু ঠান্ডা করে দিয়ে যা! আমার এক মেয়ে চলে গেছে তুই যাস না রে মা।”

আশিক খানের ডাকে তুরা দৌড়ে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরল। তনুজা খানও তাড়াতাড়ি এসে চিৎকার করে জড়িয়ে ধরলেন। আরফা আরশিও দৌড়ে এসে যোগ দিল। তিথির নিথর দেহের পাশে তখন খান বাড়ির সবাই মিলে এক বুক ফাটা, করুণ কান্নার বৃত্ত তৈরি করল।

তুরা সেই হাহাকারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো চিৎকার করে বলল।

“বাবা, আমার কলিজার টুকরা বোন তিথি কোই? ওকে ডাক দাও! বলো, ‘তোর বোন এসেছে!’ আর আর ওই সাদা কাপড়ে মোড়ানো লাশটা কার? আমাদের বাড়িতে কেন? হ্যাঁ? আমার বোন তিথি কোথায়? ওকে ডাক দাও!”

তুরার সেই অবিশ্বাস আর আক্রোশ মেশানো প্রশ্নে কেউ কিছু বলল না। তারা শুধু মাথা ঠুকে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।আরশি কান্নার মাঝেই কাঁধের ওপর দিয়ে খেয়াল করল, রৌদ্রকে দেখতে পাচ্ছে না। রৌদ্র কোথায়? এই ভাবনার মাঝেই আরশির চোখ গেল বাড়ির গেটের দিকে অপেক্ষাকৃত দামি একটি গাড়ি ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে।

শিহাব বিশাল ধাক্কা খেয়ে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে ছিল। এই অকল্পনীয় মুহূর্তে তুরা যে সত্যি সত্যি এসে পড়বে, তা সে ভাবেনি। শিহাবের শরীর ভিতর থেকে বাইরে পর্যন্ত অসহায়ের মতো কাঁপতে লাগল।

হঠাৎ শিহাবের চোখ গেল সেই গেট দিয়ে ঢোকা গাড়িটির দিকে। শিহাব চোখ বড় করে তাকাল। আর পরমুহূর্তেই গাড়ি থেকে নেমে এলো রৌদ্র! শিহাবের মাথার শিরাগুলো যেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলো। তুরাকে অনুসরণ করে রৌদ্রও কেন আসলো? শিহাবের মস্তিষ্ক যেন এই মুহূর্তে চূড়ান্তভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

আরশি সেই বিভ্রান্তিকর দৃশ্য উপেক্ষা করে একমাত্র আশ্রয়ের খোঁজে প্রাণপণে দৌড়ে গিয়ে রৌদ্রকে জড়িয়ে ধরল এবং তার বুকে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ল।

রানিং….!

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply