নির্লজ্জ_ভালোবাসা
লেখিকাসুমিচৌধুরী
পর্ব ৩৯(❌কপি করা নিষিদ্ধ❌)
আরশি শিহাব কে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলল।
“আমি কতটা খুশি তা আপনি ধারণাও করতে পারবেন না! আমি জানতাম, শিহাব ভাইয়া, আপনি ঠিক এমনটাই মহান কাজ করবেন! আমার ভাই আর তুরার ভালোবাসাটাকে এক করে দেওয়ার জন্য আপনাকে আমার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে থ্যাংক ইউ!”
আরশির কথায় শিহাব ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করল। কেন জানি আরশির এই শীতল, মিষ্টি স্পর্শ আজ তার কাছে অবাধ্য এক আশ্রয় মনে হচ্ছে। তার ভেতরের মন যেন চীৎকার করে বলল। ‘শিহাব, তুই হেরে যাসনি! এই স্পর্শ নিয়ে তুই সারাজীবন কাটিয়ে দে তোর আর কিছু লাগবে না!’ শিহাব সেই ডাক উপেক্ষা করে চোখ খুলে আরশিকে ছাড়াতে যাবে, আরশি সাথে সাথে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলল।
“আমার কী যে আনন্দ হচ্ছে, বিশ্বাস করবেন না শিহাব ভাইয়া! দুইটা বিয়ে এক সাথে! অফফ! উত্তেজনায় আমার নাচতে ইচ্ছে করছে!”
শিহাবের মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা আবারো নিভে গেল। না চাইতেও আরশিকে ছেড়ে দিল না, পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল। আরশি শিহাবকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনুভব করল। তাকে ছেড়ে দিয়ে ধীরে ধীরে শিহাবের সামনে এসে দাঁড়াল। আরশি গভীর সহানুভূতি নিয়ে শিহাবের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল।
“নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিতে আপনার অনেক কষ্ট হয়েছে, তাই না?”
শিহাব আরশির কথায় বিদ্রূপের হাসি হেসে বলল।
“তুমিই তো স্বয়ং দিয়েছো শিক্ষাটা! তাহলে কষ্টের কী আছে? ভাগ্যে যা লিখন ছিল, তাই হয়েছে।”
কথাটা বলেই শিহাব আর এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়ানোর সাহস পেল না। আরশির পাশ কেটে প্রায় উন্মাদের মতো দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
,,,,,,,,
রাতের গভীর নিস্তব্ধতায় ব্যালকনিতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তুরা। ফিসফিসে ঠান্ডা বাতাসে তার এলোমেলো চুলগুলো বারবার কপালে এসে আলতো করে কানের কাছে এসে যেন আদর করছে। তুরা একমনে ওই অন্ধকার দূর আকাশের দিক তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ তুরার নাকে তীব্র, মিষ্টি গোলাপ ফুলের ঘ্রাণ এসে লাগল। তুরা আনন্দে প্রায় লাফিয়ে ওঠে। মাথা নিচু করে দেখে, কেউ তার নাকের কাছে একটা তাজা, লাল গোলাপ ধরেছে। আর পরের মুহূর্তেই কেউ তার চোখ দুটি খুব সাবধানে ধরে ফেলল। তুরা অবলীলায় মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে রইল। এই স্পর্শ, এই উষ্ণতাএ যে রৌদ্রের, তা চিনতে তার এক সেকেন্ডও সময় লাগল না।
রৌদ্র তুরাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ ছেড়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই তুরাকে পিছন দিক থেকে অধিকারের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরল। তুরার ঘাড়ে উষ্ণ নিঃশ্বাস ফেলে সে বলল।
“বোঝে গেছিস আমি এসেছি? কী করে টের পেলি?”
রৌদ্রের উষ্ণতায় তুরা একটু কেঁপে উঠে ধীরে স্বরে বলল।
“না বোঝার কী আছে? আপনার স্পর্শ আমার নিশ্বাসের মতো চেনা।”
তুরার কথায় রৌদ্র তুরার কানের কাছে মুখ নিয়ে গভীর ফিসফিস করে বলল।
“তাই? এখনো পুরোপুরি স্পর্শ করলাম না, এই আঙুলের আলতো ছোঁয়াতেই চিনে ফেলিস?”
তুরা প্রেমিকাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার ভঙ্গিতে শান্ত কণ্ঠে জবাব দিল।
“চিনতে হলে গভীর ভাবে শরীরের স্পর্শ লাগে না। আলতো স্পর্শকেও যখন মন থেকে তীব্রভাবে অনুভব করা যায়, তখনই আসল মানুষটাকে চেনা যায়।”
রৌদ্র তুরাকে আবেশে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের লতিতে মুখ ঘষে আদুরে গলায় বলল।
“বুঝেছি! আমার বউ অনেক বেশি বুদ্ধিমতী! ক্লাস নিতে হবে এখন থেকে প্রতি রাতে সেটাই হবে আমাদের প্রতিদিনের পড়া!”
রৌদ্রের কথায় তুরা গরম স্রোতের মতো লজ্জায় জ্বলে উঠল। সে কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু মাথা নিচু করে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
রৌদ্র তুরাকে এমনভাবে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্নেহমাখা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল।
“কী রে বউ, মন খারাপ কেন? কিছু ভাবছিস?”
তুরা আকাশের দিকে তাকিয়ে বুকের সমস্ত বাতাস টেনে নিয়ে ভারী গলায় বলল।
“আচ্ছা, শিহাব ভাইয়া আমাদের বাসায় কেন?”
রৌদ্র পুরোপুরি হতবাক হলো। তুরা এখনো জানে না শিহাবের যে আরশির সাথে বিয়ে হয়েছে! পর মুহূর্তে নিজের ভুল বোঝল। এত ঝামেলার মধ্যে ও এসব জানবে কী করে? রৌদ্র তখন আস্তে করে গভীর শ্বাস তুরার ঘাড়ে ফেলে, যন্ত্রণা মেশানো কণ্ঠে বলল।
“শিহাব আর আরশির বিয়ে হয়েছে।”
বিদ্যুতের ঝলকের মতো তুরার চোখ কপালে উঠে গেল! সে হিংস্র এক ঝটকায় রৌদ্রের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে চীৎকার করে উঠল।
“কীহহহহহহ?”
রৌদ্র তখন ধৈর্য ধরে সব কিছু তুরাকে খুলে বলল। সব শুনে তুরার চোখ থেকে বৃষ্টির মতো পানি ঝরে পড়তে লাগল। ‘আরশি তার জন্য নিজে আত্মত্যাগ করেছে! কোন বোনই বা আজ আরশির মতো করে নিজের সুখ এভাবে বিসর্জন দেয়?’কথাটা তীরের মতো বুকে বিঁধতেই তুরা আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। বায়ুবেগে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। পিছনে হতভম্ব রৌদ্রও ছুটল।
আরশি ঘুমের জন্য বিছানা যত্ন করে গুছিয়ে রাখছিল। শিহাব তখন ব্যালকনিতে আলো ছায়ার মাঝে নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল। এমন শান্ত মুহূর্তে আর্তনাদের মতো শব্দ তুলে তুরা ঝড়ের বেগে রুমে ঢুকল। এক মুহূর্তও না থেমে সে আরশিকে পিছন দিক থেকে সর্বশক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে চীৎকার করে উঠল।
“আপুউওওওওওওও!”
বলেই হাউমাউ করে কান্না শুরু করল। আরশি অবাক না হয়ে পারল না। শিহাবও কান্নার শব্দ পেয়ে ব্যালকনি থেকে রুমে ঢুকল। তুরাকে এভাবে কান্না করতে দেখে সেও থমকে গেল। রৌদ্রও পিছনে পিছনে রুমে এল। শিহাব এক পলক রৌদ্রের দিকে তাকাল তারপর দ্রুত আবার তুরা আর আরশির দিকে তাকিয়ে রইল।
আরশি সামনের দিক ঘুরে তুরার ভেজা গাল থেকে চোখের পানি আলতো করে মুছে দিয়ে বলল।
“কী হয়েছে সোনা? তুই হঠাৎ এভাবে কাঁদছিস কেন?”
তুরা বাচ্চাদের মতো ফুলে ফুলে হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলল।
“আপুউউ! তুমি এত ভালো কেন ? পৃথিবীতে যে এত মহামূল্যবান আপুও থাকে, তা আমি তোমাকে না দেখলে জানতাম না! এত কেন ভালোবাসো আমায়, কেন?”
বলেই সে আরশিকে দম বন্ধ করা এক আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরল। আরশি তবুও হতবাক, তার বোঝে আসছিল না হঠাৎ তুরার কী হলো।
“আমি বোঝতে পারছি না, আমাকে জড়িয়ে ধরে হঠাৎ তুই এই কথা বলছিস কেন?”
তুরা কান্নায় ভেঙে পড়া কণ্ঠে তার মুখ তুলে বলল।
“তুমি শিহাব ভাইয়াকে বিয়ে করে নিয়েছো! শিহাব ভাইয়া আমাকে পছন্দ করে এই চরম সত্য জানা সত্ত্বেও সেই বিষাদের বোঝা মাথায় নিয়ে তুমি নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছো! কেন করলে আপু এরকম?”
আরশি এখন আর কোনো লুকোচুরি না করে পুরোপুরি বোঝল তুরা কেন কাঁদছে। আরশি তুরার উন্মত্ত কান্না দুহাতে ধরে শক্ত করে বলল।
“আমি তোকে ভালোবাসি না, আমি তোর ভালোবাসার পবিত্রতাকে ভালোবাসি যেইটা তুই আমার ভাইকে সত্যি করে বেসেছিস! বোঝেছিস? আর এক ফোঁটাও জল নয়!”
তুরা আবারো গভীর হাহাকারের সাথে বলল।
“আপু! তুমি কী করে এমনটা করতে পারলে? তুমি নিজে কতবড় ঝুঁকি নিলে আমাকে পালাতে সাহায্য করে! আর তারপর শিহাব ভাইয়াকে বিয়ে করে নিলে! পরিবারের চোখে নিজেকে খারাপ বানালে! কেন আমাদের বাঁচাতে নিজেকে এত বড় অভিশাপ দিলে?”
এই কথাগুলো শিহাবের কানে তীরের মতো বিঁধল। ভিতরের সমস্ত কিছু ভেঙে গেল তার। শিহাব নিশ্চিত হলো আরশিই ছিল সেই অদৃশ্য হাত! আর সেদিন বিয়ের সময় আরশির বলা আবেগময় কথাগুলো সবই ছিল তার এক নিখুঁত, হৃদয়বিদারক অভিনয়! যাতে শিহাব ক্ষোভে পাগল না হয়। এসব ভাবতেই শিহাবের বুক ভেঙে শ্বাস নিতে হলো। সে আবার ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল। মানুষ এত ভয়ংকর সুন্দরভাবে মিথ্যা বলতে পারে, তা আরশির কাছ থেকে শিহাব শিখে নিল।
আরশি তুরার কথাগুলো উড়িয়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে তাকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরে বলল।
“আমার কথা নিয়ে এক সেকেন্ডও চিন্তা করবি না! আর কে বলছে আমি বিসর্জন দিয়েছি? শিহাব ভাইয়া স্বর্ণের মতো খাঁটি! আমাকে রাজার হালে রাখছে, আর সারাজীবন ভালো রাখবে। শোন, আমি গর্ব করি এমন একজন স্বামী পেয়েছি। আমি শিহাব ভাইকে পেয়ে স্বর্গের থেকেও বেশি খুশি, বোঝেছিস?”
তুরাও আরশিকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘ, নীরব কান্নায় ডুবে রইল। আরশি যে সবকিছুই ঢেকে দেওয়ার জন্য বলছে, তা তুরা আরশির ফ্যাকাশে মুখ দেখেই বোঝতে পারল শিহাব এখনো আরশিকে স্বীকার করেনি। এই কষ্ট নিয়েই তুরা আরশিকে ছেড়ে ধীরে ধীরে রুমের চারপাশে তাকাল দেখল শিহাব সেখানে নেই। ‘ব্যালকনি ছাড়া আর কোথায় যাবে?’এসব ভাবতেই তুরা অপরাধবোধের ভার নিয়ে ধীর পায়ে ব্যালকনির দিকে এগোলো।
তুরার পিছন পিছন আরশি যেতে যাবে, সাথে সাথে রৌদ্র তার হাত ধরে বলল।
“ওদেরকে একটু একা বলতে দে। এখন যাস না!”
রানিং…!
Share On:
TAGS: নির্লজ্জ ভালোবাসা, প্রিঁয়ঁসেঁনীঁ
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ২০
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৩
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৫৩
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৪৫
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৪৪
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ২৯
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৬
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৫০
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৫২
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ২৫