Golpo romantic golpo তাজমহল সিজন ২

তাজমহল সিজন ২ পর্ব ১৫+১৬


তাজমহল #দ্বিতীয়_খন্ড

পর্ব_১৫

প্রিমাফারনাজচৌধুরী

উঠোনে এসে বাইকটা থামালো আনিস। উঠোনে শাহিদা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন। গায়ে শাল জড়ানো। তিনি ঠকঠক করে কাঁপছেন। আনিস ফিরতে দেরী করছিল বলে উনি বাইরে এসে ছেলের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। শাওন এত করে বললো কিন্তু তিনি শুনলেন না।

আনিসের পেছন থেকে তাসনুভাকে নামতে দেখলেন। তাসনুভা বলল,”আপনাকে ভাড়া দিতে হবে?”

আনিস বলল,”না যাও।”

“এটা রাখুন।”

হাতের মুঠোয় কত টাকা সেটা দেখা গেল না। তবে আনিস এতটুকু বুঝলো এই মেয়ে টাকা দিয়ে ভাড়া দিচ্ছে না। তার গাল বরাবর ঠাস ঠাস করে দুটো চড় দিচ্ছে সাহায্য করার প্রতিদান হিসেবে। নিজের বিরক্তি আর রাগ লুকিয়ে সে বলল,

“এত অল্প টাকায় কি হবে? গাড়ির তেলের দাম দিতে হবে। এত অল্প টাকা নেব না।”

তাসনুভা চোয়াল ঝুলে পড়ার অবস্থা! মানে? সে দেবে তেলের টাকা? কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ভাড়া দিচ্ছিল আক্কেল করে কিন্তু তাই বলে এভাবে তেলের দাম চেয়ে বসবেন উনি? এত নির্লজ্জ পুরুষ মানুষ সে জীবনেও দেখেনি। ভারী আশ্চর্য তো!

সে মুখ ঝামটা মেরে বলল,”এক টাকাও দেব না।”

বলেই ঘুরে দাঁড়ালো চলে যাওয়ার জন্য। আনিস বলল,”সুস্থ মস্তিষ্কে আমি যদি তোমাকে আর কোনোদিন আমার বাইকে উঠিয়েছি…

তাসনুভা তাকে পুরোটা বলতে না দিয়ে বলল,”আমারও এমন দুর্দিন আর আসবে না যে আপনার বাইকে উঠতে হবে। থ্যাংকস ফর ইয়োর টাইম এন্ড হেল্প টুডেই।”

বলেই হিল জুতোর শব্দ তুলে গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল। কিন্তু তৌসিফ ইচ্ছে করেই দরজা খুলছে না। দরজায় চড় কিল ঘুষি দিতে দিতে সে চেঁচামেচি করতে লাগলো। জোহরা বেগম বললেন,

“তৌসিফ দরজা খুলে দে।”

তৌসিফ কম্বল নিয়ে এসেছে। কম্বলটা মুড়িয়ে সোফায় ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে সে বলল,”একঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকুক বাইরে।”

তাসনুভা সিঁড়িতে বসে রইলো আর না পেরে। শীতের রাত এত দীর্ঘ যে একঘন্টা দ্রুত ফুরোচ্ছে না।

আনিস মাকে উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,"আম্মা তুমি পাগল? এত শীতের মধ্যে মানুষ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে?"

"একা একা অতদুর থেকে আসছিলি তাই চিন্তা হচ্ছিল। ওই মেয়েকে কোথায় পেলি?"

"ইশরাকের বউ ওর বান্ধবী।"

"বাইকের পেছনে করে নিয়ে এলি?"

"বিপদে পড়েছে। উদ্ধার করতে হবে না? তৌসিফ ফোন করে বললো ওকে নিয়ে আসতে।"

মা-ছেলের কথোপকথন চলতে চলতেই আনিস ঘরে ঢুকে পড়ল। শাহিদা বেগমও তার পেছন পেছন এলেন।

"একটু চা খাবি?"

"না, এখন চা খেলে আর ঘুম আসবে না।"

"অত শীতের মধ্যে বেরিয়ে গেলি। একটা জ্যাকেট, মাফলার নিয়ে গেলিনা? কাল দেখবি জ্বর চলে আসবে। অফিস আদালত করা মানুষদের নিজেদের শরীরের কথা ভাবতে হয়।"

আনিস পাঞ্জাবি খুলে বাথরুমের দিকে যেতে যেতে বলল,"তুমি যাও শুয়ে পড়ো। বাবু কাঁদছে মনে হয়।"

"আর বলিস না। ওর মা একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারছে না। সারাদিন ঘুমাবে। আর রাতের বেলা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদবে।"

রুমের কোণায় থাকা ছোট ওয়াশস্ট্যান্ডে গিয়ে কল ছেড়ে সে মুখহাত ধুয়ে নিল। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ  একটা মেয়েলী কণ্ঠস্বর শোনা গেল। উঠোনে নেড়ি কুকুরের দল ঘেউ ঘেউ করছে। শাহিদা বেগম কানখাড়া হয়ে শুনলেন। কি হলো আবার!

আনিস তোয়ালে দিয়ে মুখ মোছা শেষে গায়ে শার্ট জড়াতে জড়াতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। শাহিদা বেগম তার পিছু যেতে যেতে বলল,

"বেরোস না এখন। কুকুরগুলো আচ্ছা বজ্জাত হয়েছে। গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে।"

আনিস দরজা খুলে উঠোনে বের হলো একটা লাঠি হাতে নিয়ে। সাথে সাথে আনিসের মেঝ চাচা আর তাদের বাড়ির গলি থেকে কেউ একজন এসে তার পেছনে লুকিয়ে পড়লো তার পিঠের শার্ট চেপে ধরে। ঠকঠক করে হাত কাঁপছে। 

"আনিস ভাই হেল্প মি! এই বিচগুলো আমাকে চোর  ভেবে নিয়েছে!"

আনিস ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখে অবাক হয়ে গেল।

"তুমি এখনো বাড়ি যাওনি?"

তাসনুভা দু'পাশে মাথা নাড়লো। 

"ছোটো ভাইয়া দরজা খুলছে না। পানিশ।"

আনিস হতাশ হয়ে বলল,"শার্ট ছেড়ে দাও।"

বিষয়টা তাসনুভার বোধগম্য হতেই সে শার্ট ছেড়ে দিল। কুকুরগুলো তাদের দেখে আরও বেশি ঘেউঘেউ করছে। গায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে এমনভাবে ডাকাডাকি করছে।

আনিস পাশ থেকে ইট পাথর কুড়িয়ে মারার ভয় দেখালো। ঘেউঘেউ করে সরে পড়তে লাগলো তারা।  আরেকটা তেড়ে আসতেই আনিস ইট ছুঁড়ে দিল। কুকুরটি ঘেউঘেউ করে দূরে সরে গেল। তাসনুভা হাততালি দিয়ে বলল,

"আরেকটা মারুন।"

আনিস তার দিকে ফিরলো। সাথে সাথে তাসনুভার চেহারা গুমোট হয়ে এল। আনিস বলল,"এবার যাও। তৌসিফকে ডেকে তোলো।"

"আপনি ডাকুন। বদমাশটা দরজা খুলছে না।"

শাহিদা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছেন। 

আনিসকে যেতে হলো তৌসিফকে ডেকে দেয়ার জন্য। দরজায় ধড়াম ধড়াম কয়েকবার শব্দ করতেই তৌসিফ এসে দরজা খুলে দিল। গায়ে কম্বলটা জড়ানো। দরজা খুলে দিয়ে সে ঘুমঘুম চোখে সোজা নিজের ঘরে চলে গেল।

তাসনুভা দরজা বন্ধ করতে গিয়ে আনিসকে দেখে থেমে গেল। বলল,

"আবারও ধন্যবাদ কিন্তু নায়ক নায়ক ভাব নেয়ার দরকার নেই। আপনি খুব আহামরি কিছু করেননি। যাদেরকে পুষেন তাদেরকে জাস্ট তাড়িয়েছেন। নাথিং এলস।"

আনিস দাঁড়ালো না। মেয়েটার সাথে কথা বলে এনার্জি লস করার কোনো মানে হয় না। মাথায় সমস্যা আছে নির্ঘাত।

তাসনুভা দরজা বন্ধ করতে গিয়ে আবারও ডাকল,

"আনিস ভাই, আনিস ভাই দাঁড়ান।"

আনিস থমকে দাঁড়ালো। না ফিরেই বলল,"বলে ফেলো।"

"গুডনাইট। কাল আপনি বিয়েতে না থাকলে আমি খুশি হবো। আপনার জন্য আমি ভালো করে ছবি তুলতে পারিনি।"

~~

তিতলি গালফুলিয়ে বলল,”আমি বিয়েতে যাব না। আমি এককথার মানুষ।”

তাসনুভা বলল,”শাটআপ তিতলি! আমি তোমাকে ড্রেস সিলেক্ট করে দিচ্ছি। তুমি এটা পরে ভাইয়ের সাথে চলে যাবে। আর কোনো কথা শুনতে চাই না।”

তিতলি বলল,”আমি গাউন পরবো না। আমি থ্রি পিস পরবো।”

“সবাই গাউন পরবে। তোমাকেও গাউন পরতে হবে।”

দুজনেই তর্ক করে যাচ্ছে। ঝিমলি এসে বলল,”কি হলো রে বাবা! দু’জনের এত ঝগড়া কি নিয়ে?

তাসনুভা অভিযোগের সুরে বলল,”ওকে কাল না নিয়ে গিয়ে আমার গিল্টি ফিল হচ্ছিল তাই আমি কাল অত কষ্ট করে চলে এসেছি ওকে আজকে নিয়ে যাব বলে। কিন্তু ও আমার কথা শুনছেই না। খুব অসভ্য হয়েছে ও।”

তিতলি বলল,”আমার চোখের পানি ফিরিয়ে দাও। আমাকে কাঁদিয়েছ কালকে।”

তাসনুভা বলল,”তোমাকে যেতে হবে না বিয়েতে।”

গাউনটা নিয়ে সে ভাঁজ করতে লাগলো। এমনভাবে ভাঁজ করতে লাগলো দেখে মনে হলো কাপড়টাকে শক্ত করে ধরলে সেটি ব্যাথা পাবে।

ঝিমলি বলল,”ননদিনী আপনি চলে যান। ও যাবে কি যাবে না সেটা দেখা যাবে।”

“ও যদি থ্রি-পিস পরে যায় আমি ওকে ক্লাবে ঢুকতেই দেব না।”

তিতলি বলল,”ওই ক্লাব তোমার বাপের?”

বলেই জিভে কামড় দিল সে। তাসনুভা বলল,

“কি বলেছ?”

তিতলি দুপাশে মাথা নেড়ে বলল,”কিচ্ছু না।”

“তুমি টেবিলের উপর উঠে বসেছ কেন বেয়াদব মেয়ে? নামো।”

তিতলি দুপাশে মাথা নাড়লো।

“কোলে করে নামাও।”

“হোয়াট!”

ঝিমলি হাসতে হাসতে বলল,”এই দুই বোন সবাইকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে দেখছি।”

শাইনা ঘরে উঁকি দিল চেঁচামেচি শুনে। ঝিমলি বলল,”দেখো এরা কি অবস্থা করছে।”

শাইনা তিতলিকে বলল,”বড়োআম্মু ডাকছে।”

তিতলি টেবিলের উপর থেকে একলাফে নেমে এল। তাসনুভার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জিভ দেখিয়ে দিল। তাসনুভা তার পেছন পেছন বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,

“আম্মুকে বলবো তুমি আমাকে জিভ দেখিয়েছ। তুমি আমার সাথে এটা করতে পারলে?”

দু’জন চলে যেতেই ঝিমলি শাইনার দিকে তাকিয়ে বলল,”চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?”

শাইনা বলল,”আমি কিছু চেঞ্জেস দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে বেবি নড়ছে না।”

ঝিমলি কপাল কুঁচকে ফেললো।

“কখন থেকে?”

“সকাল থেকেই এমনটা মনে হচ্ছে। মেঝ মা বললো এটা স্বাভাবিক। বড়ো আম্মু বলল আমি একপাশে শুয়েছিলাম তাই এমন হচ্ছে।”

ঝিমলি বলল,”আমি নুভাকে বলবো?”

“না না আমি চাচ্ছিলাম বাড়িতে যেতে। ছোটো ভাইয়াকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাব।”

“আমি রায়হানকে বলি?”

“না ভাইয়া একটা কাজে বেরিয়েছে। ডিস্টার্ব করার দরকার নেই।”

“তাহলে ছোটো ভাইয়াকে বলি।”

“উনি মনে হয় বিয়েতে যাবেন। চুল কাটতে গিয়েছেন। আমি বাড়ি যাই।”

“আম্মুকে বলে যাও।”

শাইনা বলল,”বলেছি।”

শাইনা তাদের বাড়িতে এসেছে। বাড়ির সবাই বিয়ে খেতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

শাহিদা বেগম সবটা শুনে বললেন,"তোর মেঝ ভাইকে বলবো?"

"তোমরা সবাই আজ বিয়েতে যাচ্ছ! ছোটো ভাইয়াও যাবে?"

"স্বপরিবার দাওয়াত করেছে না? যেতে তো হবেই। ইশরাকের মা আবার রাগ করবে। তোর ভাইয়ের বিয়েতে দাওয়াত দিলে আসবে না। দাঁড়া আমি আনিসকে বলি।"

তিনি আনিসের ঘরে গেলেন। সে তার কোর্ট আইরন করাচ্ছিল। মাকে ঘরে ঢুকতে দেখে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। শাহিদা বেগম বললেন,

"শানুকে নাকি ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।"

"কি হয়েছে?"

শাহিদা বেগম সবটা খুলে বললেন। আনিস বলল,"ক্লাবে যাব দুইটাই। ততক্ষণে চলে আসা যাবে। ও এতক্ষণ পর বলছে কেন? এসব নিয়ে বসে থাকা যায়? তাজদারের কানে গেলে ও কি বলবে?"

শাহিদা বেগম বললেন,"কানে যাক। ওর বাড়ির লোকজন তো এসব কানেও নিল না। মেয়েটা কেন ধড়ফড় করছে একটু বোঝার চেষ্টা তো করলো না কেউ।"

"ওরও দোষ আছে। তাজকে ফোন করলেই তো হয়। ও সবাইকে বলতে পারে। চাপা স্বভাবের হওয়া ভালো। কিন্তু বেশি চাপা স্বভাব ভালো না।"

"তোরা সবাই একরকম। তুইও কম কীসে?"

আনিস বলল,"আচ্ছা ওকে কিছু খাইয়ে দাও ভালো করে। বোরকা নিতে বলো।"

শাইনা কিছু খেল না। দ্রুত বোরকা পরে নিল। তিতলি এসে তার রিপোর্টগুলো দিয়ে গেল। শাইনাকে বলল,"বাবুর কিছু হবে না দেখো। হলে আমি শেষ.. সবাই বলবে আমি লাথি মেরেছি। আমি আজকের পর থেকে তোমার সাথে ঘুমাবো না ভাই।"

শাইনা তাকে কিছু বললো না। তার বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। এরা বলছে তাজদার সিদ্দিকীকে বলতে। কিন্তু সে জানে তাজদার সিদ্দিকীর কানে কথাটা যাওয়া মানেই অতিরিক্ত দশটা ঝামেলা বেড়ে যাওয়া। কাকে কি বলে বসবে। তারপর সবাই বলবে সে কানপরা দিয়েছে। আবার কাউকে কিছু বলতে বারণ করলে বলবে সে ইচ্ছে করে এমন করছে। তার বাচ্চা তাই সে ইচ্ছে করে অবহেলা করছে। আরও অনেককিছু বলবে। যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। 

আনিস তাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। তাসনুভা তখুনি পার্লারের উদ্দেশ্যে বেরোচ্ছিল। সে কপাল কুঁচকে আনিসের পিছু পিছু শাইনাকে যেতে দেখলো। পুনরায় ঘরে গিয়ে রওশনআরাকে বলল,

"আম্মু শাইনা কোথায় যাচ্ছে?"

"বাবু নাকি নড়ছে না।"

"তোমাদের কাছে এটা নরমাল?"

"এরকম হয় মাঝেমধ্যে।"

জোহরা বেগম বললেন," আজকালকার মেয়েদের কান্ডকারখানা দেখে অবাক হই। কিছু হতে না হতেই ডাক্তার আর ডাক্তার।"

"কিন্তু এটাকে এত নর্মালি নেয়ার কি আছে মেঝ আম্মু? ভাইয়া শুনলে ওমাইগড! আমাকে বকবে ভাইয়া।"

রওশনআরা বললেন,"তোমাকে বকবে কেন? তুমি কি করেছ?"

তাসনুভা রেগে গেল ভীষণ। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল,

"কি করেছি মানে? বলবে শাইনাকে ওই বাড়িতে কেন যেতে হলো। তোমাদের কিছু বলবে? বলবে তো আমাকে। উফ!"

সে বিরক্ত হয়ে গটগট পায়ে হেঁটে পার্লারের উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেল। পার্লারে যাওয়ারে পথে শেভরনে গেল। 

সেখানে আনিসের পাশে শাইনা বসা ছিল। হাতে একটা পানির বোতল। চোখমুখ লাল। মনে হচ্ছে এখন ঠোকা দিলেই চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়বে। আনিস তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কি যেন বলে যাচ্ছে আদুরে গলায়। পাশে কিছু কাগজের পলি আছে। সেখানে কিছু খাবার আছে। যেটা শাইনা অর্ধেক খেয়ে রেখে দিয়েছে।

তাসনুভা সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই শাইনা চোখ তুলে তাকালো তার দিকে। 

"ডাক্তার কি বলেছে?"

শাইনার বাম চোখ থেকে একফোঁটা জল পড়তেই সে সাথে সাথে মুছে ফেলে সেখান থেকে উঠে বেরিয়ে যেতে লাগলো। 

তাসনুভা আনিসের দিকে তাকালো। 

"সিরিয়াস কিছু্? বেবি ঠিক আছে?"

আনিস বলল,

"হ্যাঁ, ডাক্তার বলেছে ও পানি কম খায়। পানির পরিমাণ কমে হলে বেবি কিছুটা অক্সিজেন ও পুষ্টি কম পায় এরকম কিছু বলছে ডাক্তার।"

তাসনুভা বলল,"ও কাঁদছে কেন?"

"তাজ বকেছে।"

"কেন?"

"কেন বকবে? ওকে সবার আগে বলেনি তাই।"

তাসনুভা ভীতকণ্ঠে বলল,"আমাকেও দেবে। আপনার বোন সবসময় আমাকে বিপদে ফেলে। ওকে নিয়ে যান। আমি পার্লারে যাচ্ছি।"

"এতই যখন চিন্তা ভাইয়ের বউকে নিয়ে তুমি নিয়ে যাও।"

তাসনুভা বলল,"ইউ নৌ হোয়াট আনিস ভাই, আপনি একটা...

আনিস বলল,"ফালতু কথা বলবে না এখানে দাঁড়িয়ে। যেখানে যাচ্ছ যাও।"

তাসনুভা ক্ষোভের দৃষ্টিতে চেয়ে তারপর চলে গেল। 

তাজদার ঘুমঘুম চোখে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইউকেতে তখন ভোরের আলো। সকাল ৭টা। বাংলাদেশে দুপুর ১টা।

ফোনটা রিসিভ হতেই শাইনা কোথায় যেন চলে গিয়েছিল। ক্যামেরায় শুধু সিলিং দেখা যাচ্ছে।
মনে হচ্ছে তাড়াহুড়োয় ফোনটা কোথাও ফেলে রেখেছে।

তাজদার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো। কেউ নেই। এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন বিয়ে করতে তাকে কে বলেছে? শেষমেশ বিরক্ত হয়ে কল কেটে দিয়ে অডিও কল দিল।

কিছুক্ষণ পর রিসিভ করলো শাইনা। ভিজে চুল থেকে টুপটুপ পানি পড়ছে। তোয়ালেটা কাঁধে।

কানে ফোনটা দিতেই তাজদার গলা ভারী করে বলল,“কল রিসিভ করে কোথায় গিয়েছ?”

শাইনা চুপ। শব্দ নেই। তার গলা দিয়ে শব্দ আসছে না। ভাইয়ার সামনে তাকে বকেছে। ভাইয়া এখন কি ভাববে! কোনো লাজলজ্জা নেই। একা কল দিয়ে বকতে পারতো। কিন্তু ভাইয়ার সামনে! ভাইয়া ভাববে সে সারাক্ষণ বোকামি করে। তাজদার সিদ্দিকী তাকে সবসময় বিপদে ফেলে দেয়।

তাজদার গম্ভীর মুখে ডাকল,”শাইনা?”

“জি।”

“চুপ কেন? কথা বলো। ভিডিও কলে আসো।”

শাইনা কোনো কথা বললো না। তাজদার এবার আরও ঠান্ডা গলায় ডেকে উঠলো,”শাইনা!!!”

ধীরে ধীরে শাইনার ভেজা, ক্লান্ত গলা শোনা গেল,“আযান দিচ্ছে, আমি নামাজ পড়ব। আপনি ব্রেকফাস্ট করে ফোন দিন।”

তাজদার শক্ত গলায় বলল,

“আগে কথা শেষ করো। সবসময় পালাই পালাই করবে না খবরদার। আমি সবসময় তামাশা করার মুডে থাকি না। তোমার কোনো আইডিয়া নেই আমি কতটা পেরেশানিতে থাকি। ভিডিও কলে আসো। কথা একবারের চাইতে দু’বার বলবো না।”

শাইনা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বলল,

“আমাকে বকে আবার কেন ফোন করেছেন? ভাইয়ার সামনে বকেছেন। আমার মানসম্মান রাখেননি।”

তাজদার দাঁত কটমট করে বললো,“আল্লাহর ওয়াস্তে ভিডিও কলে আসো। আমার মেজাজ খারাপ করো না।”

অনেকটা অনিচ্ছায় শাইনা ভিডিও কলে এল।

স্ক্রিন জ্বলে উঠতেই দেখা গেল শাইনার চুলগুলো ভেজা। সোজা সিঁথি, নাকের ডগা, চোখের কোণা লাল। তাজদার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর প্রশ্ন করলো,

“এতক্ষণ কোথায় ছিলে?”

শাইনা ঠান্ডা গলায় বলল,”মলি খালার সাথে কথা।বলছিলাম। কুঁচকে কুঁচকে কাপড় শুকাতে দেয়। ওগুলো ভেতরে ভেজা থেকে যায়। ওইসব ব্যাপারে।”

তাজদার চুপ। শাইনা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো ঠিক কিন্তু অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ফোনের দিকে তাকাচ্ছে না। তাজদার তার দিকে চেয়ে রইলো। তারপর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,

“চুলটা মুছে নাও ভালো করে। পানি পড়ছে।”

“মুছবো পরে।”

“তুমি ভীষণ খাপছাড়া গোছের মেয়ে।”

শাইনা সাথে সাথে ক্যামেরার দিকে তাকালো। ফোনে হাত দিতে যাবে তখুনি তাজদার বলল,

“খবরদার ক্যামেরা অফ করবে না। উচিত কথা বললে খারাপ লাগে তাই না? Do you have any idea how tense I feel here all the time Shyna Momtaz?”

শাইনা মুখ ফিরিয়ে রাখলো। ক্যামেরার দিকে ফিরালো না। তাজদার তার মুখের একপাশ দেখতে পাচ্ছে শুধু।

” ওয়েল, তোমার আমার চেহারা দেখতে ভালো লাগছে না। বেশ দেখো না। অফ করো ক্যামেরা। বাট লিসেন, তুমি ভীষণ খাপছাড়া গোছের একটা মেয়ে। তুমি সব ব্যাপারে আমাকে জানানোর ব্যাপারে অমনোযোগী। ইচ্ছে করেই এমন করো তাই না? যাতে আমার হেল্প ছাড়া সবকিছু ম্যানেজ করতে পারো? এত পন্ডিত হলে একা থাকতে। বিয়েশাদি করেছ কেন? আমাকেই বা কে বলেছে এই মেয়েকে বিয়ে করতে?”

শাইনা বলল,”আপনার যদি বলা শেষ হয় তাহলে আমি একটা কথা বলতে পারি।”

“বলো।”

“আমার হাতখরচের টাকা দরকার। আমার কাছে টাকা থাকলে কাউকে দরকার নেই। একাই ডাক্তারের কাছে চলে যেতে পারব। বাড়িতে যেতে আমার লজ্জা হয়।”

“একাউন্টে চলে যাবে কাল।”

“থ্যাংকস!”

ফোন কেটে দিল তাজদার সিদ্দিকী। শাইনা মেসেজে লিখলো,

“এভাবে ফোন কেটে দিয়েছেন কেন?”

“তোমার যা মনে হয়।”

“আমার মনে হচ্ছে হাত খরচের কথা বলেছি বলে ফোন কেটে দিয়েছেন।”

“ছোটোলোকি চিন্তাভাবনা। আমার যদি সাধ্য থাকতো তোমাকে ভুলে থাকার আমি তাই করতাম। বিয়ে করে ফেঁসে গেলাম আমি। শালার!”

শাইনা ব্যঙ্গ করে লিখলো,”ভিয়ে খরে ফেচে গেলাম, ছালার।”

তাজদার তাকে ব্লক করে দিল।

~

তাসনুভা বেবি পিংক কালারের একটা গাউন পরেছে। মন খারাপ। তাজদারের বকা খেয়ে একপাশে চুপ করে বসে আছে। আর কত বকা খেতে হবে সে জানে না।

শাইনা এত বোকা একটা মেয়ে! ও ভুল করবে। বকা খেতে হবে তাকে। রাগে তার মাথাব্যথা করছে। ভাইয়ার কথাগুলো এত শক্ত শক্ত! সে মাথা থেকে সরাতে পারছে না।

হঠাৎ সাবরিনাকে দেখতে পেল সে। ওরা সবাই এসেছে নাকি? সাবরিনা, আশরাফ, আশরাফের কোলে তার বাচ্চা ছেলেটা। শাহিদা বেগমকেও দেখা গেল। তাসনুভাকে দেখে সাবরিনা হাত নাড়লো।

“তাসনুভা এদিকে এসো।”

তাসনুভা এগিয়ে গেল। আশরাফ বলল,”নুভাও এসেছে?”

“জি ভাইয়া। মুক্তা আমার ফ্রেন্ড।”

“তাহলে তো ভালোই।”

সাবরিনার সাথে শাইনার ব্যাপারে কথা বলতে বলতে শাওনকে দেখলো সে। শাওন এসে বলল,”নুভা, তৌসিফ তিতলি আসেনি?”

“জানিনা আসবে কিনা।”

শাওন অন্যদিকে চলে গেল।

“আম্মা ভাবিকে নিয়ে চলে এসো। এখানে কনেপক্ষের লোকজন। ওইদিকে বরপক্ষ। চলো। এই..এই শাওন। এদিকে আয়।”

আনিসের কণ্ঠস্বর ভেসে এল। সবাই তার কথা শুনে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। নেভি ব্লু রঙের চকচকে দামী স্যুটবুট তার পরনে।

তাসনুভাকে দেখামাত্রই বলল,”একা এসেছ?”

তাসনুভা বুকে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে ছোট্ট করে বলল,

“হ্যাঁ, গোটা ফ্যামিলি নিয়ে হাজির হওয়া আমি পছন্দ করি না।”

আনিস আঙুল দিয়ে দূরেই তাক করলো। তাসনুভা তার আঙুল অনুসরণ করে তাকাতেই দেখলো,

“তিতলি মুরগীর রোস্ট খাচ্ছে তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে। পাশেই তৌসিফ, শাওন, রায়হান, ঝিমলি।”

তাসনুভা অবাক!

মুক্তার বোন সুপ্তি তিতলিকে আর মাংস তুলে দিচ্ছে। সে খুব খুশি হয়েছে। তাসনুভা আনিসের দিকে ফিরতেই আনিস চোখ সরিয়ে নিল। পেছন থেকে একজন মহিলা বলল,

“আনিস না?”

আনিস ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। আন্টি! মহিলার পাশে থাকা লোকটির সাথে হেসে হ্যান্ডশেক করে বুকে জড়ালো। মহিলা বলল,

“আনিসের প্রমোশোন হয়েছে না?”

শাহিদা বেগম বলে উঠলেন,”হ্যাঁ প্রমোশন বেড়েছে কালই খবর পেল। এখনো কাউকে শোনাইনি। এখান থেকে গিয়ে সবাইকে শোনাবো। মেয়ে একটা পাশের বাড়িতে বিয়ে দিয়েছি। মিষ্টি পাঠাতে হবে। তাই শোনাইনি।”

আনিস মাকে সাবধান করার জন্য নানান ইঙ্গিত করছে কিন্তু মা তার দিকে তাকাচ্ছে না।

পাশ থেকে আরেক বন্ধুর মা শাহিদা বেগমের উদ্দেশ্যে বলল,”ছেলের প্রমোশন হয়েছে। এবার বউ ঘরে তুলুন। আর কত?”

শাহিদা বেগম হাসিমুখে বললেন,”ছেলেগুলো এত মা ন্যাওটা। কতবার বললাম নিজে পছন্দ করে একটা বিয়ে কর। না তার মেয়েদের সাথে কথা বলতেও নাকি লজ্জা করে। কখন আমি মেয়ে খুঁজবো আর তাকে বিয়ে করাবো। বড়োটাকে কোনোমতে করালাম। এখন এইটার জন্য একটা ভালো মেয়ে নিয়ে আসতে পারলে বাঁচি।”

আনিস বলল,”আম্মা চলো খাবে। আন্টি আপনারাও চলুন। এক টেবিলে বসিয়ে দিই।”

তাসনুভা সাবরিনাকে বলল,”আপনার দেওর আজকে এভাবে সেজেগুজে এসেছে কেন তার কারণ বুঝলাম!”

সাবরিনা হেসে ফেললো। মজা করে বলল,”আমার দেওর না সাজলেও চকচক করে। শোনো, ওই মেয়েটাকে দেখছি তোমার আনিস ভাইয়ের জন্য। ভালো হবে না? দেখো দেখো।”

সাবরিনা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। তাসনুভা মেয়েটির দিকে তাকালো। একটা ব্লু সাদা রঙের সেলোয়ার-কামিজ পরেছে। মাঝেমধ্যে শাহিদা বেগম, আশরাফ আনিস যেখানে দাঁড়িয়েছে সেদিকে লাজুক ভঙ্গিতে তাকাচ্ছে।

“এটা ঠিকঠাক আছে।”

তাসনুভা বলল,”আনিস ভাইয়ের কচি মেয়ে পছন্দ দেখছি। আচ্ছা আচ্ছা। থুড়থুড়ে বুড়োগুলোও কচি মেয়ে পছন্দ করে আজকাল। সেখানে আনিস ভাই! ইটস ওকেই।”

সাবরিনা বলল,”না না, এমন না।”

আনিস ডাকলো,”ভাবি খেতে আসো। কথা পরে বলবে। তুমি খেয়েছ?”

নুভা নিজের দিকে আঙুল তাক করে বলল,”আমি?”

“হ্যাঁ, খেয়েছ?”

“আমি বিয়েবাড়িতে খেতে আসি না। ঘুরবো ফিরবো ছবি তুলবো।”

“বেশ ভালো। আমরা সবাই খেতে এসেছি। ভাবিকে ছেড়ে দাও। খেয়ে আসুক।”

“আমি ধরে রেখেছি? আশ্চর্য!”

সাবরিনা চলে গেল শাহিদা বেগমের সাথে। আনিস খুঁজে খুঁজে দেখছে তার পরিচিত আর কে কে খেতে বসেনি।

হাত তুলে আশরাফকে ডাকলো,”ভাইয়ে!”

আশরাফ তার দিকে তাকালো।

“বাবুকে কোলে নিতে হবে। তোর ভাবি খেয়ে উঠুক। আমি পরে খাব।”

“ওকে শাওনের কোলে দেব। খেতে বসে যাও তুমি। এখন আমাকে দাও।”

আশরাফ তার ছেলেকে আনিসের কোলে দিল। আনিস তাকে নিয়ে শাওনের দিকে চলে যাচ্ছিল তখুনি তাসনুভা তিতলির কাছে ছুটছিল। মুখোমুখি পড়ে যেতেই বলল,

“Congratulations!”

আনিস বলল,”কীসের জন্য?”

“একি! যেদিকেই যাচ্ছি সেদিকেই আপনার প্রমোশন আর প্রমোশন শুনতে পাচ্ছি।”

“ওহ থ্যাংকস! না খেলে ওদের সাথে বসে যাও।”

“খাব না আমি।”

“রসিক শীতেও মরে, ভাতেও মরে।”

“হোয়াট!”

আনিস সোজা চলে গেল।

খাওয়াদাওয়া শেষ হতেই চেয়ারে বসে বসে মেয়েটাকে দেখছিল ঝিমলি আর সাবরিনা। তক্ষুনি তাসনুভা তিতলির হাত ধরে টেনে এনে নিয়ে যাচ্ছিল সাজঘরে। লিপস্টিক সরে গিয়ে কি বাজে দেখাচ্ছে তিতলিকে।

আগে সে তিতলিকে একটা চড় দেবে। কারণ তার পছন্দের ড্রেস না পরে পরেছে ছোটো ভাইয়ার পছন্দের ড্রেস। যেটা তাকে মানায়নি। দ্বিতীয়ত সে নাকি শাইনার জন্য টিস্যু পেপারে মুড়ে ফ্রাইড চিকেন নিয়েছে ব্যাগের মধ্যে।

তৃতীয়ত লিপস্টিক দিয়েছে শেড না বুঝে। চতুর্থত, সে বেশি করে ব্লাশন দেওয়ায় তাকে পুতুলের মতো দেখাচ্ছে। পঞ্চমত, সে জুতো পরেছে যেটা ড্রেসের সাথে মানানসই নয়। তাই তিতলি একটা চড় ডিজার্ভ করে।

তাকে রেগেমেগে তিতলিকে নিয়ে যেতে দেখে ঝিমলি বলল,

“এই ননদিনী!”

তাসনুভা শুনতে পেল না। ঝিমলি আবারও ডাকলো,

“এই ননদিনী রায়বাঘিনী?”

তাসনুভা থেমে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো।

“কি হয়েছে আপনার? এত রাগ কেন? এত রাগ নিয়ে আপনি যাবেন কার কাছে বলুন তো।”

“কোথাও যাব না।”

“এত রাগ সামলাবে কে?”

তাসনুভা থেমে গেল। সাবরিনা, ঝিমলি দুজনেই নিজেদের মধ্যে তার কথা বলতে বলতে হাসছে।

তাসনুভা বলল,”আমি নিজেকে সামলাতে জানি।”

ওরা আবারও হাসলো।

“আচ্ছা। তিতলিকে আস্তে করে মারিয়েন। বাচ্চা মেয়ে।”

তিতলি হঠাৎ করে বলল,”আপু ওই দেখো শাইনার মেঝ ভাবি। শাইনার সাথেই পড়ে। ওটার সাথে আনিস ভাইয়ের বিয়ে হবে। ওহ ওহ কতদিন পর বাড়িতে বিয়ে নামবে।”

তাসনুভা তার আঙুল অনুসরণ করে তাকালো। ওই মেয়েটির আশেপাশে শাওন, আনিস, তৌসিফ, আশরাফ, রায়হান সবাই দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছে। আরও একজন আছে সাথে। মেয়েটির ভাই হবে হয়তো। তিতলি বলল,

“হাত ছেড়ে দাও। আমাকে ওই মেয়েটার ছবি তুলতে হবে।”

বলেই সে তাসনুভার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে দৌড়ে চলে গেল মেয়েটির পাশে।

চলমান…

তাজমহল

দ্বিতীয়খন্ড #পর্ব১৬

বিকেলের দিকে শাইনাকে আনব্লক করেছে তাজদার সিদ্দিকী। কোনো মেসেজ দেয়নি। শাইনা শুধু খেয়াল করলো তাকে আনব্লক করেছে। সাথে সাথে সেও এদিক থেকে তাজদারকে ব্লক করে দিল। শোধবোধ হওয়া দরকার।

তিতলি বিয়ে খেয়ে এসে ঢুসে ঢুসে ঘুমাচ্ছে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কোথাও গেলে সেখান থেকে আসার পর তাকে ঘুমাতে হয়।

ঘুম ভাঙলো নিজের ফোনের রিংটোনের শব্দে। বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করলো সে। কানে দিতেই তাজদারের গলা শুনে লাফিয়ে উঠলো।

“তিতলি?”

“জি ভাইয়া!”

“শাইনার ফোনটা নিয়ে ভাইয়ার নাম্বারটা সব জায়গা থেকে আনব্লক করো।”

তিতলি শুরুতেই কিছু বুঝতে পারলো না। মানে? কে কাকে ব্লক করেছে? তাজদার বলল,”শুনতে পেয়েছ?”

“হ্যাঁ হ্যাঁ যাচ্ছি।”

কোথাও যেতে হলো না। ওয়ারড্রবের উপরেই শাইনার ফোনটা পাওয়া গেল। কিন্তু লক খোলার পাসওয়ার্ড জানা নেই। অগত্যা ফোনটা নিয়ে শাইনার কাছে ছুটতে হলো।

লন্ডনের ক্যানারি ওয়ার্ফের ৩৩-তলায় একটি আধুনিক টাওয়ারে তাজদারের অফিস। এখন সেখানে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা।

দিনের আলো ঝলমলে হলেও বিশাল কাঁচের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে ঘন সাদা মেঘের দ্রুত আনাগোনা।

তাজদার ৩৩ তলার ক্যান্টিনের একটি কোণে লম্বা গ্রানাইট কাউন্টারের পাশে একা বসে আছে। তার সামনে প্লেটে রাখা কারি উইথ গার্লিক নান সুশি রোলস, চিকেন টিক্কা কাবাব, ফ্রেশ অরেঞ্জ জুস। বাম দিকে ল্যাপটপটা খোলা, যদিও তার মনোযোগ এখন ফোনে।

সে আরাম করে হেলান দিয়ে বসল। ধূসর রঙের পিস স্যুটটি তার সুঠাম শরীরে নিঁখুতভাবে মানিয়েছে। সাদা ক্রিস্প শার্টের ওপর গাঢ় নেভি ব্লু টাইটা আলতো করে বাঁধা। বুকের পকেটে সামান্য উঁকি দিচ্ছে একই রঙের পকেট স্কোয়ার। সে ফোনটা হাতে নিয়ে বসে রইলো। কপালটা বরাবরের মতে কুঁচকে আছে।

শাইনা বাড়ির পেছনে বেরিয়েছে একটু হাঁটতে। ঘরে ভালো লাগছিল না। সন্ধ্যা সাতটা। তার দাদীমা এসেছে তাকে দেখে। দাদীমার সাথে কথাবার্তা বলছিল সে।

দাদীমা মজা করছে তার সাথে তাজদারের ব্যাপার নিয়ে। ঠিক তখুনি তিতলি গেল তার কাছে। বলল,”শাইনা পাসওয়ার্ডটা বলো।”

শাইনা তার দিকে ফিরলো। অবাক হলো। “কেন?”

“আরেহ বলো না। কত?”

শাইনা পাসওয়ার্ড বললো। তিতলি লক খুলে তাজদারকে সব জায়গা থেকে আনব্লক করে শাইনাকে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। আনব্লক করার সাথে সাথে কল ভেসে এল তাজদার সিদ্দিকীর। শাইনা সময় দেখে নিল। এখন তো অফিসে থাকার কথা। ফোন দিচ্ছে কেন?

সে কিছুক্ষণ ফোনের দিকে চেয়ে রইলো। কল কেটে গেল। আবারও কল এল। দাদীমা বলল,”বউপাগল সোনামিয়া নাকি?”

শাইনা বলল,”হুম।”

“ধর ধর, ফোন ধর।”

শাইনা ফোন রিসিভ করে দাদীমাকে ধরিয়ে দিল। সাথে সাথে তাজদার সিদ্দিকী গমগমে গলায় বলল,

“শাইনা লাঞ্চ টাইমে ফোন দিয়েছি। খবরদার আর ব্লক করবে না। যথেষ্ট শোধ নিয়েছ। আমি অফিস থেকে ফিরে কল করছি। সাথে সাথে যেন পাই।”

দাদীমা তার কথাগুলো বুঝলেন না।

ধীরে ধীরে ডাকলেন,”নাতজামাই!”

তাজদার সিদ্দিকী একটু চুপ থেকে ডেকে উঠলো,”দাদু?”

দাদীমা হাসলেন,”হ্যাঁ।”

তাজদার সালাম দিয়ে সে বলল,”শাইনা কোথায়?”

দাদীমা সালাম নিয়ে বললেন,”আছে পুকুরঘাটে।”

“কেমন আছেন আপনি?”

“আছি ভালো। মাঝেমধ্যে ফোনটোন দিও নাতজামাই। তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে।”

“হ্যাঁ, দেব। এখন প্রচুর ব্যস্ততা যাচ্ছে তাই সময় হয়ে উঠছে না। সময় করে দেব। বাড়ির সবাই ভালো আছে তো?”

“হ্যাঁ আছে। শানু নে কথা বল।”

শাইনা এগিয়ে এল। ফোনটা দাদীর হাত থেকে নিয়ে কানে চাপা দিল। একটা দীর্ঘশ্বাস ভেসে এল।
তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,”বিজি টাইমে কল কেন?”

শাইনার দিক থেকে আর কিছু বলার আগেই তাজদার শান্ত, ধীর স্বরে উত্তর দিল,”একটা মানুষ আমাকে ব্লক দিয়ে রেখেছে তাই। পেইনফুল।”

শাইনা চুপ করে রইল।

“শোধবোধ হয়ে গেছে? নাকি আরও রাখা উচিত?”

তাজদার শান্তভাবে মাংসের একটি ছোট টুকরো মুখে তুলে নিল। গলার স্বর সামান্য নরম করল।

“আমি অফিস থেকে ফিরে কল দেব। সাথে সাথে যেন পাই। জরুরি কথা আছে। তুমি বাইরে কি করছো এই ঠান্ডার মধ্যে?”

“ঘুরছি। সবাই বলে আমি নাকি হাঁটাচলা করিনা। তাই হাঁটতে বেরিয়েছি। আপনার খাওয়া শেষ?”

“খাচ্ছি।”

“খাওয়াদাওয়া শেষ করে ব্লক করুন।”

তাজদার বলল,”আমি কিন্তু..

শাইনা তার কথা কেড়ে নিয়ে বলল,”মশকরা বোঝেন না যখন, তখন করতে যান কেন? আমার সাথে আর কখনো মশকরা করবেন না। আপনি করতে পারেন। কিন্তু আমি করলেই রেগে যান। আমি আজকের পর থেকে আপনার সাথে জীবনেও মশকরা করবো না।”

শেষের কথাটা মনে হলো সে অভিমান করে বলেছে। অন্তত তাজদারের কানে এমন শোনালো। ব্লক দেয়া অবশ্যই ভুল হয়েছে।

কিন্তু এই মেয়ে কখনো তার শূন্যতা অনুভব করছে কিনা সেটা হয়তো কখনোই তার পক্ষে জানা সম্ভব হবে না। শাইনা মমতাজ নিজেকে তার সামনে কখনোই খোলা খাতার মতো মেলে ধরবে না। সুখী দম্পতির চাদরে ঢাকা এই নীরব বিক্ষোভের সংসার আর কতদিন চলবে জানা নেই। তাজদার সিদ্দিকী এবার ধীরেধীরে হাল ছেড়ে দিচ্ছে। তার এত আগ্রহ সত্যিই কমানো দরকার। একপাক্ষিক ভালোবাসার বোঝা আর কতক্ষণ বহন করা যায়?

~

শাইনার চুল খোলা। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে সে সাজগোছ করছে। রাতে স্কিন কেয়ার করে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়েছে। এখন হাতে চুড়ি পরছে। সাজগোছ করলে তার মন ভালো হয়ে যায়। বোরিংনেস কমে।

তাজদার সিদ্দিকী এক্ষুণি কল দেবে। সহজে ছাড়বে না। দেড় দুই ঘন্টা এইসেই কথা বলতেই থাকবে। অবশ্য আজকে অন্য কাজও ছিল। তাই এখনো ফোন করে কিচ্ছু জানায়নি।

তিতলি কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে আর মাঝেমধ্যে একচোখ খুলে শাইনাকে দেখছে। শাইনা সেটা খেয়াল করলো। বলল,

“বাঁদরনি ওঠো। সাজিয়ে দিই। ঘুমের ভান করে লাভ নেই।”

তিতলি ফিক করে হাসলো। লাজুক ভঙ্গিতে বলল,”ভাইয়া ফোন করবে তাই সাজছো?”

শাইনা কপাল কুঁচকে ফেললো। তিতলি হাসছে। এত জোরে হাসছে যে শব্দ হচ্ছে না কিন্তু পালঙ্ক কাঁপছে। শাইনাও তার হাসি দেখে নিজেও হাসতে লাগলো।

“পাজি মেয়ে কোথাকার। তোমার ভাইয়াকে বলে দেব কথাটা।”

তিতলি কানে ধরলো।

“না! ভাই আমার একটা মানসম্মান আছে।”

শাইনা হাসতে হাসতে বলল,”তোমার মানসম্মান আমি বের করছি।”

তিতলি প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,”এদিকে আসো। তোমাকে আরও সুন্দর করে সাজিয়ে দেই। কাজল দাও।”

“না, রাতে কাজল পরতে ভালো লাগে না।”

“আরেহ দাও।”

তিতলি তাকে জোর করলো। শাইনা তার কথা রাখতে খুব সুন্দর করে চোখে কাজল পরলো। ঠোঁটের লিপস্টিক একটু গাঢ় করলো। কানে দুল পরলো। চুলগুলো মাঝখানে সিঁথি করে আয়নায় নিজেকে কয়েকবার দেখলো।

তিতলি বলল,”নায়িকা নায়িকা লাগছে। ও বাল্লে বাল্লে।”

নাচতে নাচতে ধপ করে শুয়ে পড়ে সে কম্বল টেনে নিল মাথার উপর। শাইনা বলল,”ঘুমাও। কানখাড়া করে আমাদের কথা শুনলে সোজা ঘরের বাইরে।”

তিতলি কম্বল ফেলে দিয়ে বলল,”একটু শুনলে কি হবে?”

শাইনা ঠোঁট উল্টে বলল,”সমস্যা নেই। তোমার ভাইয়া আর আমার কথাগুলো দেশবাসী শোনার মতো।”

তাজদার সিদ্দিকী রান্নাঘরের গ্রানাইট কাউন্টারটপের উপর ঝুঁকে মনোযোগ দিয়ে লাল ক্যাপসিকাম কাটছে। তার মনোযোগ দেখে মনে হচ্ছে প্রতিটি ফালি একই মাপের হতে হবে। নইলে বিরাট সমস্যা হয়ে যাবে। 

আকাশে আজ মস্তবড়ো একটা চাঁদ। চাঁদের আলো বড় জানালা দিয়ে এসে পড়েছে কিচেন জুড়ে। তার পরনের হালকা গ্রে রঙের শার্টের হাতার ভাঁজ কনুই পর্যন্ত তোলা। ভিজে চুলের কিছু গোছা কপালে এসে পড়েছে। গোসল করার ঠিক পরের এই এলোমেলো রূপে তাকে বড়ো নিষ্পাপ দেখায়।

ভিডিও কলে শাইনা হাসছে তাকে দেখে।  তার এতো সিরিয়াসনেস দেখে মনে হচ্ছে ক্যাপসিকামের নিউরোসার্জারি করছে। 

তাজদার ক্যাপসিকাম কাটা শেষ করে নাইফটি সন্তর্পণে নামিয়ে রেখে ফোনের স্ক্রিনে তাকালো। তার চেহারা ক্লান্ত। কিন্তু হাসিমুখের একটি রেখা ফুটে উঠল শাইনাকে দেখামাত্র। 

"হ্যালো!"

শাইনার চোখদুটো দেখা যাচ্ছে। মুখের সামনে ওড়না দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে। তাজদার নাইফটা তুলে সরু চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল,

"কাজল! হঠাৎ এত সাজগোছ?"

শাইনা তিতলির দিকে তাকালো। তিতলি কম্বল দিয়ে মুখ ঢেকে বলল,"আমি শুনতে পাইনি।"

শাইনা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলল,"উহু।"

"মুখ থেকে ওড়না সরাও ষ্টুপিড।"

শাইনা সরালো না। তার অসম্ভব লজ্জা লাগছে। 
তিতলি তাকে চিমটি দিয়ে ফিসফিস করে বলল,"আই লাভ ইউ বলো। গাধা! তুমি এত আনরোম্যান্টিক কেন? বলো। ভাইয়া খুশি হয়ে যাবে।"

চিমটি দেয়ায় শাইনা নিজের বাহু চেপে ধরলো। মুখ থেকে হাতটা সরে গেল। তিতলিকে বলল,"দাঁড়াও তোমাকে আমি দেখে নিচ্ছি।"

তাজদার সিদ্দিকী সেই ফাঁকে তাকে দেখে ফেললো। শাইনা সাথে সাথে মুখ ঢেকে বলল,"জানেন তিতলি আজকে কি করেছে?"

তাজদার সিদ্দিকী কিচেনে ব্যস্ত। কাজের ফাঁকেই বলল,"কী?"

"আজ ও ক্লাব থেকে একটা ফ্রাইড চিকেন নিয়ে এসেছে আমার জন্য।"

"লাকি ইউ।"

"ইয়েস, আই নৌ দ্যাট ভেরি ওয়েল। আমি অবশ্যই অবশ্যই লাকি। আমার ননদিনী সবচেয়ে ভালো।"

তিতলি ফিসফিস করে বলল,"তুমি খুব বেরসিক শাইনা। যাও তোমার সাথে আর কোনো কথা নেই। আই মিস ইউ অন্তত বলো। ভাইয়া খুব খুশি হবে।"

"কচু, আমাকে পঁচাবে। আমার বরকে তুমি আমার চাইতে বেশি চেনো না।"

তিতলি টেনে টেনে বলল,"আমার বরররর?"

শাইনা তাকে জোরে একটা চিমটি দিল। তিতলি হিসহিসিয়ে বলল,"ভাই তাজদার দেখেন আপনার বউ আমাকে কি পরিমাণ অত্যাচার করতেছে। ভাই আপনে এর বিচার করেন। করেন ভাই করেন।"

শাইনা তার কথা শুনে না হেসে পারলো না। 

ক্ষিধে লেগেছে, তাজদার তাই এখন খাওয়ার জন্য স্প্যানিশ অমলেটের জন্য কাস্ট আয়রনের ভারী প্যানটি হবের সামনের ডানদিকের মাঝারি আকারের বার্নারে বসালো।

নব ঘুরিয়ে বার্নারটি চালু করলো। সাথে সাথে পরিষ্কার নীল ফ্লেম জ্বলে উঠলো। কাঁচের সারফেসে প্রতিফলিত হচ্ছে সেই আগুন।

প্যানটি গরম হতেই তাতে পরিমাণমতো অলিভ অয়েল ঢেলে তেলটা পুরো প্যানে ঘুরিয়ে নিলো সে। তারপর প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ঢেলে দিয়ে হাতটা মুছে ক্যামেরার দিকে তাকালো।

সে ক্যামেরার দিকে তাকিয়েছে সেটা শাইনা খেয়াল করলো একটু পর। আর তখনই মুখের সামনে কম্বলটা তুলে দিল।

তাজদার ওপাশে শব্দ করে হেসে উঠে আবারও কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। শাইনা মুখ লুকিয়ে লিপস্টিক একটু একটু করে মুছে নিতে লাগলো পরনের ওড়নাটা দিয়ে।

তিতলি ঘুমিয়ে পড়েছে। শাইনার বিশ্বাস হলো না যদিও। কিন্তু সে কয়েকবার সুড়সুড়ি দিল। তিতলির পেটে হাত দিতেই সে লাফিয়ে উঠে সুড়সুড়ি সইতে না পেরে। কিন্তু এবার নড়াচড়া নেই দেখে শাইনা নিশ্চিত হলো সে ঘুমিয়ে পড়েছে।

তাজদার অমলেটটা নামিয়ে চামচ দিয়ে কেটে মুখে পুরলো। আরেক টুকরো শাইনার দিকে বাড়িয়ে দিল। শাইনা বলল,”লোভ দেখিয়ে লাভ নেই।”

টুকরোটি মুখে পুরে তাজদার বলল,” আমাকেও লোভ দেখিয়ে লাভ নেই।”

শাইনা সাথে সাথে তার ইঙ্গিত বুঝে নিয়ে হাঁটুতে মাথা গুঁজে বলল,”ধুত্তেরি!”

তিতলির দিকেও একবার তাকালো সে। শুনতে পেল কিনা। তাজদার সিদ্দিকীর হাসির শব্দ ভেসে আসছে।

ডিনারের জন্য রান্নাবান্না শেষ করতে করতে প্রায় অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। শাইনার ঝিমুনি আসছে। সে শুয়ে পড়লো। তাজদার খেতে বসেছে তখন। শাইনার চোখ বন্ধ। তাজদার কথা বললেই চোখ মেলছে।

তার পেটে হঠাৎ ব্যাথা লাগছে। ইদানীং এমনটা হচ্ছে। মাঝরাত থেকে ব্যাথাটা শুরু হয়। অনেকক্ষণ ব্যাথাটা স্থায়ী হয়। তারপর ধীরেধীরে কমে আসে।

তাজদার খাওয়াদাওয়া সেরে নিজের রুমের কিছু কাজ শেষ করলো। তারপর এক মগ কফি নিয়ে সামনে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। ক্যামেরার দিকে তাকালো। শাইনা কপাল কুঁচকে শুয়ে আছে। সে গলা ঝেড়ে কেশে বলল,”হ্যালো! ঘুম?”

শাইনা চোখ মেললো। ধীরেধীরে উঠে বসলো।
ব্যাথাটা অসহ্য লাগছে। তাজদার বলল,

“এখনো বেবি আসেনি তারমধ্যে তোমার এই অবস্থা হয়ে গেছে। ও আসার পর তোমাকে আমি আর খুঁজেই পাব না। কোনো সমস্যা হচ্ছে?”

শাইনা মুখ ফিরিয়ে নিল। বলল,”আর দশ বছরেও আমি বাচ্চা কাচ্চার নাম নেব না এবার যদি বেঁচে ফিরি।”

তাজদার সিদ্দিকী মাথা দুলিয়ে বলল,”আচ্ছা, আমি দেশে ফিরি। তখন দেখা যাবে।”

শাইনা তার কথার ইঙ্গিত বুঝে ক্যামেরার দিকে অবাক চোখে তাকালো। হাঁ করে রইলো কিছুক্ষণ।

তাজদার কফির মগে চুমুক দিয়ে হাসিটা আড়াল করে রাখলো। শাইনা বিড়বিড় করছে। তাজদার নিশ্চিত, সে নির্ঘাত চাটগাঁইয়ার বিখ্যাত গালিটা দিয়ে বসেছে এতক্ষণে।

শাইনা একটু রাগী ভঙ্গিতে বলল,”আপনার দেশে আসার কোনো দরকার নেই।”

“আসব না, আসব না। তুমি রিল্যাক্সে থাকো।”

পরিস্থিতি গুমোট হয়ে আসছে দেখে শাইনা বলল,

“আপনি ঘুমাবেন কখন? কফি নিয়েছেন কেন? কফি খেলে আর ঘুম হবে? আজব!”

“আমার এমনিতেই ঘুম কম হয়।”

“কেন?”

“আবার কেন? পাশে বউ নেই তাই। আমি তাকে খুব বাজেভাবে মিস করছি। কি বোকা বোকা কথা বলছি না? হা হা।”

সহজ সরল নিষ্পাপ স্বীকারোক্তি! শাইনা চুপ হয়ে গেল। তাজদার সিদ্দিকী কিছুক্ষণ পর তার দিকে তাকিয়ে বলল,”ঘুমাও।”

শাইনা বলল,”ওকে, তবে একটা কথা শুনুন।”

তাজদার কফির মগে চুমুক দিতে দিতে তার দিকে তাকালো। এবং শুনলো। শাইনা অকপটে বলল,

“সেও আপনাকে মিসটিস করে। শুভরাত্রি।”

চলমান….

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply