ডিজায়ার_আনলিশড
✍️ সাবিলা সাবি
পর্ব ৯.
আজকের দিনটা অন্যরকম। আজ জাভিয়ান আর তার পরিবার ফিরে যাচ্ছে মেক্সিকোতে। দীর্ঘদিনের এই সফরের পর দাদি সোফিয়ার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার মুহূর্তটা যেন সবার জন্যই ভারী হয়ে উঠেছিল।
দাদি সোফিয়ার চোখে জল। তিনি তান্বীর হাত ধরে ফিসফিসিয়ে বললেন— “তোর দায়িত্ব কিন্তু অনেক… আমার জাভিয়ান একটু অন্যরকম, কিন্তু আমি জানি তুই ওকে সামলাতে পারবি। একটা কথা তোকে বলি, আমার জাভিয়ানের জীবনে কোনোকিছুর অভাব নেই শুধুমাত্র ভালোবাসা এই একটা জিনিস ওর জীবনে অভাব, এমন একজন ওর জীবনে দরকার যে নিজের থেকেও ওকে বেশি কেয়ার করবে আর আমি তোকে প্রথমে দেখেই বুঝেছি ও সঠিক মানুষকেই বিয়ে করেছে। একমাত্র তুই পারবি ওর জীবনটা সুন্দর গুছিয়ে দিতে।”
তান্বী হালকা হেসে মাথা নাড়ল।
তারপর বিদায় নিলো জাভিয়ানের বাবা সায়েম চৌধুরী আর মা কার্গো চৌধুরী তার কাছ থেকে। সবার চোখেই যেন অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা। জাভিয়ান তারা দাদিকে জড়িয়ে ধরলো কারন এই একটা মানুষ পৃথিবীতে যাকে জাভিয়ান সম্মান করে আর ভালোবাসে।
দুটি গাড়ি বের হলো এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। একটিতে জাভিয়ান তান্বী আর রায়হান, আর আরেকটিতে তার বাবা মা।
গাড়ি ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে তান্বী ধীরে জাভিয়ানের দিকে তাকাল। “একটা অনুরোধ করবো?”
জাভিয়ান হালকা বিরক্ত মুখে তাকালো—“এখন আবার কী?”
তান্বীর কণ্ঠ কাঁপছিলো। “আমাদের গাড়িটা… যদি পুরান ঢাকার রেহমান প্রিয়াঙ্গনের পাশ দিয়ে নিয়ে যেতেন… একবার, একপলক দূর থেকে… বাবা-মাকে দেখতে চাই।”
জাভিয়ান প্রথমে চুপ করে থাকলো। চোখ কড়া হয়ে উঠলো।“তান্বী, এখন গাড়ি ঘুরিয়ে ওইদিকে নিতে পারবোনা আমাদের ফ্ল্যাইটের সময় বেশি নেই।”
কিন্তু তান্বীর সেই ভাঙা কণ্ঠস্বর, অনুনয়ের চোখ… জাভিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে অবশেষে বলল—“ঠিক আছে। তবে দূর থেকে, কেবল একবার দেখার সুযোগ পাবে।”
গাড়ি ঢুকে গেল পুরান ঢাকার সরু রাস্তায়। অবশেষে থামলো রেহমান প্রিয়াঙ্গন নামের পুরনো বাড়ির সামনে।
তান্বী আস্তে করে গাড়ির কাচটা নামালো। মুহূর্তেই বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো—এই সেই বাড়ি… যেখানে তার শৈশব, কৈশোরের প্রতিটি রঙ কেটেছে।
কিন্তু আজ উঠানে কেউ নেই। একদম ফাঁকা হয়ে আছে।তার বাবা-মা ঘরের ভেতরেই আছেন দরজাটা বন্ধ।
তান্বীর চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো। তার মনে পড়লো পুরনো দিনের দৃশ্য— তার জন্মদিনের দিন ভাই ফারহান কেক হাতে নিয়ে আসছে, বোন এলিনা হাসিমুখে মোমবাতি জ্বালাচ্ছে, আর পুরো বাড়িটা রঙিন সাজে ভরে যাচ্ছে।
হঠাৎ যেন সে চোখের সামনেই দেখলো, ফারহান আর এলিনা মিলে একে অপরকে কেক লাগাচ্ছে, হাসাহাসি করছে… আর ছোট্ট তান্বী লাফাচ্ছে আনন্দে।
গাড়ির ভেতরে বসেই তান্বীর ঠোঁট কাঁপলো, চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
জাভিয়ান একবার তার দিকে তাকালো। কিছু বললো না।সে হয়তো বুঝতেও পারলোনা, তান্বীর প্রতিটি অশ্রুর পিছনে কতটা ভাঙা স্মৃতি জমে আছে।
.
.
.
.
অনেকক্ষন পেরিয়ে গেলো এরপর জাভিয়ান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিরক্ত কণ্ঠে বলল—“তান্বী, আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। এবার চল।”
কিন্তু তান্বীর চোখ এখনও সেই পুরনো বাড়ির দিকে আটকে।সে ভাঙা গলায় বললো “একটু… প্লিজ। হয়তো মা, বাবা, আপা… এক্ষুনি বের হবে।”
হঠাৎ করেই পুরনো কাঠের দরজা শব্দ করে খুলে গেল।
তান্বী নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাকাল।
তার মা ধীরে ধীরে উঠানে নামাচ্ছেন… একটা হুইলচেয়ার।চেয়ারটিতে বসে আছেন তার বাবা—মুখটা শুকনো, চোখ ক্লান্ত, আর শরীর নিস্তেজ।
তান্বীর বুকের ভেতর ঝড় বয়ে গেল। কারণ সে জানে… সেদিন জাভিয়ানের গুলিতেই তার বাবার পা ভেঙে গিয়েছিল। এখন বুঝতে পারলো তার বাবা আর কোনোদিন হাঁটতে পারবেন না।
তান্বীর চোখ ভিজে গেলো। তারপর তার দৃষ্টি ব্যাকুলভাবে খুঁজতে লাগলো একটিমাত্র মুখ—বোন এলিনা। কিন্তু উঠানজুড়ে নেই তার প্রিয় বোন।
ঠিক তখনই ড্রাইভার গড়ির ইঞ্জিন চালু করলো। গাড়ি ধীরে ধীরে এগোতে লাগলো।
তান্বী চিৎকার করে, ভেঙে পড়া কণ্ঠে বললো “না-আ-আ! থামান! আমার মা, বাবা…!”চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে, সে কাঁপতে কাঁপতে কাচের ওপর হাত রাখলো।
জাভিয়ান বিরক্ত হয়ে ধমক দিলো—“এই মেয়ে চেঁচামেচি করছো কেনো এত? চুপ করো তো, এতো দিন তো কাঁদতে দেখেনি এখন কেনো কাঁদছো?”
রাহয়ান ড্রাইভারের পাশের সিটে বসা ছিলো। জাভিয়ানের ধমকে সে ঘুরে পেছনে তাকালো তবে কি বলবে তার কিছু বলার নেই।
কিন্তু তান্বী আরও জোরে কাঁদতে লাগলো “এতদিন কাঁদিনি… কিন্তু এখন! এখন দেখলাম আমার বাবা হুইলচেয়ারে বসে আছে… আপনার জন্যই আজ আমায় বাবা পঙ্গু! আপনার গুলির জন্য…! আমি আপনাকে কোনোদিন ক্ষমা করবো না!”
তার কণ্ঠ ভেঙে যাচ্ছিলো। “আমার ভাই এখন নেই…এখন কে দেখবে আমার পরিবারকে?”
জাভিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “চিন্তা কোরো না। মাসে মাসে আমি টাকা পাঠিয়ে দেবো। তোমার পরিবারের কোনো কষ্ট হবে না।”
তান্বী হঠাৎ চোখ তুলে তাকালো। তার কণ্ঠ রাগে জ্বলে উঠলো “খরচ দিলে কি আমার বাবার পা আবার ঠিক হয়ে যাবে? খরচ দিলে কি আমার ভাই ফিরে আসবে?”
তার চোখের জল আর ক্ষোভ মিশে গিয়ে যেনো জাভিয়ানের বুকের ভেতরেও অদ্ভুত এক ভার তৈরি করে দিলো।
.
.
.
.
গাড়ি পুরান ঢাকা পেরিয়ে হাইওয়েতে উঠে গেলো।
তান্বী নাক টেনে টেনে কাঁদছে। চোখ লাল, বুক ওঠা-নামা করছে থরথর করে।
হঠাৎ জাভিয়ান বিরক্ত স্বরে ধমক দিলো—“এই মেয়ে, যদি আরেকবার কান্নার আওয়াজ পাই, তাহলে একদম রাস্তার মাঝে নামিয়ে রেখে দিয়ে চলে যাবো।”
তান্বী থমকে গেলো। কণ্ঠ আর বের হলো না, শুধু নিঃশব্দ হাহাকার বুক ভরলো। সে জানালার কাচে মাথা হেলিয়ে দিলো। বাইরে ছুটে চলা আলো-অন্ধকার মিলেমিশে যাচ্ছে তার চোখের জলে।
তান্বীর ভেতরের ভাবনারা উঠে এলো সে
মনে মনে ভবলো “কি থেকে কি হয়ে গেলো আমার জীবন… একটা ঝড় সবকিছু শেষ করে দিলো। আজ আমি হাজার মাইল দূরে চলে যাচ্ছি… মা, বাবা হয়তো ছটফট করছে তাদের মেয়েকে একবার দেখবে বলে। তারা তো জানেই না, আমি কোথায় যাচ্ছি…”
চোখের পানি আর নাকের পানি এক হয়ে গিয়ে গাল ভিজিয়ে দিলো। ধীরে ধীরে কাঁদতে কাঁদতে সে অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়লো।
জাভিয়ান পাশেই বসে ছিলো। কান্নার আওয়াজ হঠাৎ থেমে গেলো। সে তাকালো আর দেখলো—তান্বী একেবারে শান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে।
জাভিয়ান আস্তে করে হাত বাড়িয়ে তার মুখের সামনে এসে পড়া এলোমেলো কয়েকটা চুল সরিয়ে দিলো। তখনই দেখলো— তান্বীর চোখ বন্ধ, কিন্তু চোখের কোণে স্বচ্ছ দানার মতো অশ্রু এখনও গড়িয়ে পড়ছে। তখন গাড়িতে হালকা মিউজিক চলছিলো।
জাভিয়ান কয়েক সেকেন্ড একদম থেমে গেলো। তার দৃষ্টি স্থির হয়ে থাকলো সেই মুখে। তান্বীর কান্নারত চেহারা, ঘুমন্ত মুখ—এমন মায়াবী, এমন নিষ্পাপ দেখাচ্ছে…
গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ, বাইরের আলো-অন্ধকার সবকিছু থেমে গেছে যেনো। শুধু জাভিয়ানের সামনে ঘুমন্ত তান্বী।
কিন্তু হঠাৎ নিজের ভেতরে একটা ঝাঁকুনি খেলো।
সে দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো।ঠোঁট চেপে দাঁতে দাঁত ঘষলো, যেনো নিজের মনের অস্থিরতা লুকোতে চাইছে।
তারপর আস্তে করে সিটের পাশের বক্স থেকে কয়েকটা টিস্যু বের করলো। তান্বীর গাল ভিজে যাওয়া অশ্রু আর নাকের পানি নীরবে মুছে দিলো।কোনো শব্দ নয়, কোনো বাড়তি দৃষ্টি নয়—শুধু চুপচাপ করে।
সব মুছে শেষ করে আবার টিস্যুটা গুছিয়ে রাখলো।
তারপর ঠাণ্ডা মুখে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলো।
গাড়ি ছুটছে, আলো-অন্ধকার মিলেমিশে যাচ্ছে, আর জাভিয়ান ভেতরে দাঁতে দাঁত খিচে যেনো নিজের অনুভূতি বন্দি করে রাখলো।
.
.
.
.
গাড়ি এসে থামলো এয়ারপোর্টের ভিআইপি গেটের সামনে। রায়হান দরজা খুলে দিলো। তান্বী তখনও ঘুমে অচেতন।
জাভিয়ান একটু দ্বিধা করলো। তারপর ঠাণ্ডা মুখে, কিন্তু অদ্ভুত কোমলতায় তাকে জাগালো—“এই মেয়ে… উঠো ঘুম থেকে। প্লেন মিস হলে কিন্তু তোমাকেই ঝুলিয়ে রাখবো।”
তান্বী ধীরে চোখ খুললো।এক মুহূর্তের জন্য সে ভুলে গেলো কোথায় আছে। কিন্তু গেটের আলো, ভেতরে দাঁড়ানো বিদেশি সিকিউরিটি আর তার পাশে জাভিয়ানকে দেখে হঠাৎ সবকিছু মনে পড়লো।
তার বুকটা ধক করে উঠলো।চোখ ভিজে আসলো, কিন্তু সে কাঁদলো না—কাঁদার মতো আর শক্তি নেই।
গাড়ি থেকে নেমে চলতে শুরু করলো ধীর পায়ে। পেছনে তাকালো একবার—যেনো কুয়াশার ভেতরে ঢাকা পড়া ঢাকা শহরকে শেষবারের মতো বিদায় জানালো।য়সেই শহর, যেখানে তার শৈশব, তার বাবা-মা, তার বোন এলিনা আর ভাই ফারহান…সবকিছু রয়ে গেছে।
.
.
.
.
চেক-ইন শেষ করে ওরা বসে আছে এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে। তান্বী জানালার পাশে বসে রানওয়ের আলো দেখছে।তার চোখ শুকনো, কিন্তু ভেতরটা ফাঁকা।
জাভিয়ান পাশ থেকে তাকিয়ে দেখলো, সে কিছু বলছে না। একটুখানি হাত বাড়ালো, আবার সরিয়ে নিলো—যেনো নিজেকেই থামালো। তারপর ঠাণ্ডা কণ্ঠে বললো,
“কাঁদলে সমস্যা নেই…কিন্তু স্ট্রং থাকতে শিখো। মেক্সিকোতে কাউকে চোখের পানি দেখানোর সুযোগ নেই, কেউ দেখবে না।”
তান্বী হালকা হাসলো, ব্যঙ্গ মেশানো ভাঙা কণ্ঠ—“আমার চোখের পানি আর আপনার ব্যাংক ব্যালেন্স… দুটোই আনলিমিটেড।”
জাভিয়ান কিছু বললো না।শুধু নিঃশ্বাস ফেললো, দাঁতে দাঁত খিচলো আর কাচের ওপারে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।
প্লেন আকাশে উঠলো। ঢাকা শহরের আলো নিচে মিলিয়ে গেলো। তান্বী মাথা হেলিয়ে সিটে বসে রইলো।
তার চোখ বন্ধ, কিন্তু বুকের ভেতরে কেবল একটাই প্রশ্ন বাজছে—“কোনোদিন আমি আবার ফিরতে পারবো আমার পরিবারের কাছে?”
জাভিয়ান পাশের সিটে বসে তাকালো তার দিকে।
চোখ বন্ধ মেয়েটার গালে এখনও আগের কান্নার চিহ্ন শুকিয়ে আছে।সে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো, তারপর হঠাৎ মুখ ফিরিয়ে নিলো— যেনো নিজের অজান্তেই সে কিছু হারাতে বসেছে।
সকালে প্লেন টারম্যাকে নামলো। মেক্সিকোর এয়ারপোর্টে ভিআইপি প্রটোকলের লাল গাড়ি ও কালো স্যুট-পরা বডিগার্ডরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। এয়ারপোর্টের ভিআইপি এক্সিট দিয়ে বের হতেই কনভয়ের হর্ন শোনা গেলো।
তান্বী চোখ বড় বড় করে তাকালো—এ যেন হলিউডের কোনো ব্লকবাস্টার মুভির দৃশ্য।
তখনই রায়হান এগিয়ে এলো তান্বীর দিকে ফরমাল স্যুটে, হাতে ট্যাবলেট। সে হালকা মাথা নুইয়ে ভদ্রভাবে বললো—“Welcome to Mexico, মিসেস গজদন্তনী.”
তান্বী একটু থমকে গেলো। ডাকনামটা শুনে গালে হালকা হাসি ফুটলো মুখে। সে কিছু বললো না, শুধু কুণ্ঠিত চোখে জাভিয়ানের দিকে তাকালো। জাভিয়ান হালকা এক ভ্রু কুঁচকে রায়হানের দিকে তাকালো।
জাভিয়ানের মা কার্গো চৌধুরী গাড়িতে ওঠার আগে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন—“Welcome home, Tanvi.”
তান্বীর বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো। সে নিজেকে প্রশ্ন করলো— “আমি কি সত্যিই সঠিক জায়গায় এসেছি?”
.
.
.
.
গাড়ির কনভয় শহর ছেড়ে চলে এলো বিশাল এক প্রাইভেট এস্টেটে। লোহার গেট খুলতেই চোখ ধাঁধানো দৃশ্য। তান্বী গাড়ি থেকে নেমে এক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার চোখ যেন বিশ্বাসই করতে চাইছিল না।
দূর থেকে ভিলা এস্পেরেন্জা দেখলেই মনে হয় স্বপ্নের প্রাসাদ—কাচ আর সোনালি ঝলকের মিশ্রণে তৈরি এই অট্টালিকা যেন আকাশ ছুঁয়েছে। বাড়িটা একেবারে আধুনিক আর্কিটেকচারের মাস্টারপিস। পুরো ভবনটা তৈরি হয়েছে গাঢ় কালো মার্বেল আর গ্লাস দিয়ে, যেটা একসাথে শক্তি আর এলিগেন্সের প্রতীক। চারতলা বিশাল কাঠামোর প্রতিটি জানালায় সোনালি ফ্রেম।
প্রবেশমুখে আছে গ্র্যান্ড স্টেয়ারকেস, যার ধাপে ধাপে এলইডি লাইট বসানো, ফলে বাড়ির সামনে দাঁড়ালেই মনে হয় যেন কোনো ফাইভ-স্টার হোটেলের ভিআইপি লবিতে প্রবেশ করা হচ্ছে। দু’পাশে সিমেট্রিক্যালভাবে রাখা হয়েছে সাদা মার্বেলের আর্ট ভাস্কর্য, যেটা বাড়ির লাক্সারি ফিলকে আরও শার্প করেছে।
ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনটাও আধুনিক স্টাইলে—নিখুঁতভাবে ট্রিম করা লন, সোজা লাইনে সাজানো পাম ট্রি আর লাইটিং স্ট্রিপ দিয়ে হাইলাইট করা ওয়াকওয়ে।
ড্রাইভওয়ের মাঝেই পার্ক করা আছে তিনটা সুপারকার—কালো বেন্টলি, সাদা আর কমলা-কালো ল্যাম্বরগিনি। এগুলো যেন বাড়ির সৌন্দর্যের অংশ হিসেবেই রাখা, একেবারে শো-স্টপার!
গ্লাস ওয়ালের ভেতর দিয়ে দেখা যায় ঝুলন্ত ঝাড়বাতি আর আধুনিক ইন্টেরিয়রের ঝলক, যা বুঝিয়ে দেয় এই বাড়ি শুধু একটা বসবাসের জায়গা নয়—এটা হলো পাওয়ার, রিচনেস আর টেস্টের এক্সপ্রেশন।
সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো সারি সারি কর্মচারী, মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানাল।
তান্বী নির্বাক দাঁড়িয়ে রইল। তার রেহমান প্রিয়াঙ্গনের ছোট্ট উঠোনের স্মৃতি মুহূর্তেই মুছে গেলো এই প্রাসাদের বিশালত্বে।
ভিলার ভেতরে প্রবেশ করলো সবাই। দরজা খোলার সাথে সাথে ঝলসে উঠলো ঝাড়বাতির আলো।দেয়ালে রেনেসাঁস যুগের তেলচিত্র, সোনালী কারুকাজ, দামি মার্বেলের মেঝে।
তান্বী স্তম্ভিত হয়ে চারদিকে তাকালো।অবচেতন মনে বেরিয়ে এলো—“এখানে তো… সাধারণ মানুষ থাকে না।”
জাভিয়ান হেঁটে যাচ্ছিলো সামনে, একবারও পেছনে তাকালো না। শুধু সংক্ষিপ্ত করে বললো—“তাড়াতাড়ি হাঁটো বাড়ি পরেও দেখতে পারবে।”
তান্বীর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। কিন্তু পরমুহূর্তেই মনে হলো ছি বাড়ি যেন সোনার খাঁচা—ঝলমলে, কিন্তু নিঃশ্বাস রুদ্ধ করা।
তান্বী আস্তে আস্তে জাভিয়ানের পিছু পিছু সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠলো আর জাভিয়ানের পেছন পেছন তার রুমে ঢুকলো।বড় সোনালী দরজা ঠেলতেই তার চোখ বিস্ফোরিত হয়ে গেলো। ভেতরে ঢুকেই মনে হলো যেনো কোনো ফাইভ-স্টার হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইটে প্রবেশ করেছে।চারপাশে কাচের দেয়াল, বিশাল জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে সবুজ বাগান আর দূরের পাহাড়।মেঝেতে মোটা কার্পেট, ছাদের ঝাড়বাতি থেকে নরম আলো পড়ছে।
বাম দিকে পুরো এক দেওয়ালজুড়ে ডিজিটাল স্ক্রিন—
কেউ চাইলে সিনেমা, নিউজ বা সিকিউরিটি ক্যামেরা—সবই দেখা যায়। আরেক পাশে বুক শেলফ, সোনালী ফ্রেমে সাজানো বিরল বই আর কয়েকটা অস্ত্রশস্ত্রও।
তান্বী হাঁটতে হাঁটতে চোখ বড় করে বললো—“এটা কি ঘর… নাকি কোনো জাদুঘর আর স্পেসশিপ মিশ্রণ?”
বিছানার দিকে তাকিয়ে তার নিঃশ্বাস আটকে গেলো।
কিং সাইজের বিশাল বেড, সাদা সিল্কের চাদরে ঢাকা। পাশে স্বয়ংক্রিয় কফি মেশিন, মিনিবার, আর এক কোণে ব্যক্তিগত জিম।
সে নিঃশ্বাস ফেলে অবাক হয়ে বললো—“এমন রুম তো আমি শুধু সিনেমায় দেখেছি… বাস্তবে কখনো না। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষের ঘরও হয়তো এর চেয়ে কম।”
তান্বী হঠাৎ থমকে গেলো।তার মনে হলো সে যেনো ভুল জগতে এসে পড়েছে—যেখানে রাজকীয় আভিজাত্য আছে, কিন্তু স্বাধীনতার কোনো অস্তিত্ব নেই। ঠিক তখন সে নিজের লাগেজ টেনে নিয়ে বলল—“আসার সময় দাদি অনেকগুলো শাড়ি দিয়েছে… কোথায় রাখবো?”
জাভিয়ান কেবল আঙুল তুলে আলমারির দিকে ইশারা করলো। ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতেই আলমারির দরজা স্লাইড হয়ে খুললো— ভেতরে বিশাল ওয়াক-ইন ক্লোজেট, তান্বীর চোখ কপালে উঠে গেলো। আলমারির ভেতর যেনো এক ফ্যাশন শো-র কালেকশন—শত শত স্যুট, শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট, শর্টস, জ্যাকেট, টাই, বেল্ট…ঘড়ি প্রতি শেলফে,প্রতি হ্যাঙ্গার ভর্তি জাভিয়ানের পোশাকে। এক ইঞ্চি ফাঁকও নেই।
তান্বী এক পলক জাভিয়ানের দিকে তাকালো। জাভিয়ান মুহূর্তেই বুঝে ফেললো।সে উঠে এসে নিজের কয়েকটা ড্রেস টেনে বের করে বলল— “এখন রাখো। তবে সাবধান, আমার জিনিসে হাত দিলে আমি সহ্য করবো না।”
তান্বী শাড়িগুলো গুছিয়ে রাখলো, কিন্তু মনে মনে বললো— “আপনার মতো অসভ্য ইতর মানুষের জিনিস ধরার ইচ্ছাও আমার নেই।”
.
.
.
.
সাদা আলোয় ভরা বড় রুম। এক কোণে অক্সিজেন সিলিন্ডারের হালকা শব্দ, মনিটরে হৃদস্পন্দনের ধীর টোন শোনা যাচ্ছে—বিপ… বিপ… করে। বিছানায় শুয়ে আছে মেইলস্ট্রোম। তার শরীর ফ্যাকাশে, ঠোঁট শুষ্ক হয়ে আছে, বুক ধীরে ধীরে ওঠানামা করছে। চোখদুটো বন্ধ, মুখে নিঃশব্দ ব্যথার ছাপ ফুটে আছে —যেন সমুদ্রের ভেতর এখনও ডুবে আছে সে।
ডাক্তারের দল একের পর এক মেডিকেল চেক করছে, হাতের শিরায় স্যালাইন ঝুলছে। শরীরের তাপ ধরে রাখতে হিটার চালানো হয়েছে, তবুও তার আঙুলগুলো শীতল। পুরো রুম নিস্তব্ধ, কেবল মেশিনের শব্দই জীবনের প্রমাণ।
রুমের বাইরে করিডরে দাঁড়িয়ে আছেন ইসাবেলা মোরেলাস। চোখে উদ্বেগ আর কণ্ঠে আগুন নিয়ে। ফোনে তিনি তার লোকজনের সাথে কথা বলছে—“২৪ ঘন্টার মধ্যে রিকার্দোকে চাই। জীবিত কিংবা মৃ*ত, আমি চাই ওকে টেনে এখানে আনা হোক।”
কিন্তু ভেতরে অচেতন অবস্থায় শুয়ে থাকা মেইলস্ট্রোম জানেই না বাইরের এই যুদ্ধের কথা। তার মনে এখনও কেবল ব্লাস্টের প্রতিধ্বনি আর পানির অন্ধকার।
মেশিনের টোন চলতে থাকে—বিপ… বিপ… বিপ…। যেন সময় ধীরে ধীরে তাকে আবার জীবনের কাছে ফিরিয়ে আনছে, কিন্তু তার আত্মা এখনো বন্দি সেই ডুবে যাওয়া শিপের মধ্যে।
.
.
.
.
ঢাকার পুরোনো গলির গভীরে রিকার্দোর গোপন আস্তানায় আগুনের মতো আক্রমণ নেমে এলো। মেইলস্ট্রোমের ছায়া-দল কালো পোশাকে ঢুকে পড়েছে ভেতরে—বুলেটের শব্দে দেয়াল কেঁপে উঠছে, রক্তের গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে গেছে।
এক এক করে রিকার্দোর লোকেরা পড়ে যাচ্ছে মাটিতে।
আস্তানার ভেতরে ধোঁয়া আর চিৎকারের মাঝেই হঠাৎ তাদের চোখ আটকে গেলো— একটা ছেলে সিলিং থেকে উল্টো ঝুলছে, দুই হাত বাঁধা, শরীর ক্ষতবিক্ষত, বুকের উপর মোটা ব্যান্ডেজ। মুখে নেই রঙ, নিস্তেজ শরীর, মনে হচ্ছিলো যেকোনো মুহূর্তে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।
ঠিক তখনই, দুই দলের গুলির লড়াই চলাকালীন হঠাৎ এক বুলেট এসে ছিঁড়ে ফেললো সেই দড়ি। ঝুলন্ত শরীর ধপ করে মাটিতে পড়ে গেলো সেই ছেলেটার।
মেইলস্ট্রোমের লোকেরা ছুটে গেলো। একজন বন্দুক ঠেকিয়ে দিলো রিকার্দোর এক লোকের মাথায় আর গর্জে উঠলো—
“বল! রিকার্দো কোথায় আছে?”
ভয়ে কাঁপতে থাকা সেই লোকটা বারবার মাথা নাড়লো
“আমরা… জানিনা… জানিনা…”
তাদের পিছনে মৃদু কাশির শব্দ হলো। অন্ধকারের কোণ থেকে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো সেই ছেলেটা—রক্তাক্ত অবস্থায়, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছে, কিন্তু চোখে অদম্য আগুন।
ফারহান।
সে মাটিতে হাত ঠেকিয়ে দাঁড়াল, কষ্টে শ্বাস নিতে নিতে ফিসফিস করে বলল—“আমি জানি… আমি জানি রিকার্দো এখন কোথায় থাকতে পারে।”
সবাই স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। যেন মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে উঠে এসে ফারহান একটা নতুন অধ্যায় খুলে দিলো।
.
.
.
.
ঢাকার পুরোনো রেহমান প্রিয়ঙ্গনের সেই উঠোন এখন নিরব। কোনো হাসি নেই, কোনো দৌড়ঝাঁপ নেই।
তান্বীর বাবা হুইলচেয়ারে বসে আছেন, মুখটা নিস্তেজ, চোখের পাতায় অগণিত হাহাকার জমে আছে।
তার মা ধীরে ধীরে সেই চেয়ারের হাতলে হাত রেখে বসে আছেন, মুখে অনন্ত ক্লান্তি।দু’জনেরই চোখে পানি, অথচ কথা নেই—শুধু শূন্য দৃষ্টি।
তাদের একসময়ের প্রাণের বাড়ি, যেখানে প্রতিদিন তিন সন্তানের হাসি আর ঝগড়ার শব্দে ভরে থাকতো,আজ ভয়ঙ্কর শূন্যতায় ডুবে গেছে।
মা হঠাৎ ভাঙা গলায় বললেন—“আমরা বেঁচে আছি… কিন্তু আমাদের তিন সন্তান তো আর নেই । এলিনা,তান্বী… কোথায় গেলো তারা? বেঁচে থেকেও আমরা এখন মৃত মানুষের মতো। হয়ে গেলাম ”
চোখ ভিজে উঠলো দুজনেরই। ছাদের দিকে তাকিয়ে বাবা কেঁপে ওঠা কণ্ঠে বললেন—“জানিনা আমার মেয়ে দুটো এখন কোথায় আছে, কেমন আছে …তাদের ছাড়া আমাদের এই ঘর, এই জীবন—সব ফাঁকা।”
মা তখন চুপচাপ চোখ মুছলেন, কিন্তু হাত কাঁপছিলো।
তাদের বুকের ভেতর জ্বলছে অব্যক্ত প্রশ্ন—কে ফিরিয়ে দেবে সেই হারানো দিনগুলো? কে ফিরিয়ে দেবে তাদের সন্তানদের? রেহমান প্রিয়ঙ্গনের সেই বাড়ি আজ পরিণত হয়েছে অশ্রুর কারাগারে।
.
.
.
.
ডাইনিং টেবিলটা যেনো কোনো রাজকীয় প্রাসাদের মতো সাজানো। বিশাল ঝাড়বাতির নীচে দীর্ঘ টেবিল, সোনালি ধারওয়ালা প্লেট, ক্রিস্টালের গ্লাস, আর মোমবাতির আলোয় খাবারগুলো ঝিলমিল করছে। চারপাশে পরিবেশটা অভিজাত, অথচ কোথাও যেন অদৃশ্য টানটান উত্তেজনা।
আজ প্রথমবার জাভিয়ানের চাচা সাইফ চৌধুরী আর তার পরিবার তান্বীকে দেখলো। সাইফ চৌধুরী টেবিলে বসে আছেন আর তার পাশে বসেছে তার ছেলে মার্কো চৌধুরী, আর মেয়ে লুসিয়া চৌধুরী। লুসিয়ার দৃষ্টি বারবার ঘুরছে তান্বীর দিকে—তীক্ষ্ণ, কৌতূহলী, খানিকটা অবহেলাও মিশে আছে।
কিছুক্ষণ পরেই সাইফ চৌধুরী কণ্ঠ খোলেন। “তাহলে জাভি, এই মেয়ের বাবা কী করেন? বাংলাদেশে পরিবারের অবস্থা কেমন?”
ঘরের ভেতর মুহূর্তেই চাপা নীরবতা ছড়ালো। তান্বী শ্বাস আটকে ফেললো। কিন্তু জাভিয়ান ঠাণ্ডা অথচ কঠোর গলায় বাধা দিলো—“চাচ্চু, এসব অযথা প্রশ্ন যদি খাবার টেবিলে না করলে, আমি অনেক বেশি খুশি হবো। ওর পরিবারের ইতিহাস জানার প্রয়োজন নেই। শুধু এটুকু জানলেই যথেষ্ট—ও এখন মিসেস তান্বী চৌধুরী। সেটাই ওর আসল পরিচয়।”
ঘরে বাতাস আরও ভারী হয়ে উঠলো। লুসিয়া ঠোঁটে ব্যঙ্গমাখা হাসি টেনে বললো— “ভাইয়া, সত্যি বলতে আমি ভেবেছিলাম তোমার চয়েজ খুব টেস্টফুল। কিন্তু ভাবি দেখতে তো বেশ সুন্দরই! তবে দুঃখের বিষয়… আমি বাংলাদেশিদের একদম পছন্দ করি না। তারা সবাই আনকালচার্ড।”
তান্বী এবার আর চুপ করে থাকলো না।চোখে আগুন নিয়ে সরাসরি জবাব দিলো— “মিস, নিজেকে কি ভেবেছেন? রানিং এলিজাবেথ শাখা রানি ভিক্টোরিয়া হ্যাঁ? আনকালচার্ড কাকে বলছেন? কখনো আয়নায় নিজেকে দেখেছেন? খুব কালচারাল হয়ে থাকলে অন্তত শিখতেন কোথায় কীভাবে কথা বলতে হয়। সেটা তো শেখেননি।”
এক মুহূর্তে পুরো টেবিলে নীরবতা নেমে এলো।
সবার চোখ লুসিয়ার দিকে।য়লুসিয়া রাগে কাঁপতে কাঁপতে কিছু বলতে যাচ্ছিলো, ঠিক তখনই জাভিয়ান হাত তুলে দৃঢ় ইশারায় ওকে চুপ করিয়ে দিলো “Enough.”
লুসিয়া আর দাঁড়াতে পারলো না। চেয়ার ঠেলে উঠলো আর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেলো। তার পিছু নিলো সাইফ চৌধুরীও। টেবিলে কিছুক্ষণ গম্ভীরতা ভেসে থাকলো।
তখন হালকা গলায় মার্কো বললো— “যাই হোক, আমি তোমার থেকে বড়, তাই নাম ধরেই বলছি—তান্বী, তুমি কিছু মনে করোনা। লুসিয়া এমনই স্বভাবের মেয়ে।”
তান্বী ধীরে মাথা নাড়লো, কিন্তু তার চোখের ভেতরে স্পষ্ট দ্যুতি।
.
.
.
.
রাত গভীর। বিশাল কক্ষে হালকা হলুদ আলো জ্বলছে, দেয়ালের আধুনিক লাইটশেড যেনো নরম ছায়া ফেলেছে চারদিকে।
জাভিয়ান বড়সড় আর্মচেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে, ঠোঁটে অর্ধেক হাসি, চোখে কৌতূহল।সে হঠাৎ গম্ভীর স্বরে বললো— “তুমি এতো ঝগড়াটে কেনো, হ্যাঁ?”
তান্বী সবে মাত্র ওয়াশ রুমে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলো আর কথা শুনেই চোখ কুঁচকালো, ভ্রু তুলে উত্তর দিলো—“ আমি মোটেও ঝগড়াটে নই। কিন্তু আমাকে যদি কেউ অপমান করে…” সে এক মুহূর্ত থেমে গেলো, তারপর চোখে আগুনের ঝিলিক এনে যোগ করলো—“…আমি তাকে ছাড়বো না। সে যেই হোক—প্রেসিডেন্ট হলেও। আমি জবাব দেবোই।”
জাভিয়ান ঠোঁটের কোণে খেলা করা হাসিটা চেপে রাখতে পারলো না। —“ওয়াও, মিস ট্রমা! তুমি সত্যিই একটা জিনিস।”
.
.
.
.
রাত ১২টায় জাভিয়ান ভারী সোফায় হেলান দিয়ে বসলো। তার রাখা সামনে ক্রিস্টালের গ্লাসে লালচে ওয়াইন, হাতে অর্ধেক জ্বলা সিগারেট। রুমের আধুনিক লাইটিংয়ের আলোতে ধোঁয়া ভেসে উঠে ঘুরপাক খাচ্ছিলো।
তান্বী ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে অবাক হয়ে গেলো আর রাগান্বিত হয়ে বললো— “এসব কি ছাইপাস খাচ্ছেন? তাও আবার ঘরের ভেতর! আমার এইসবের গন্ধ…আর এই সিগারেটের অতিরিক্ত ধোঁয়া সহ্য হয় না, প্লিজ।”
জাভিয়ান ঠোঁটে হালকা বাঁকা হাসি টেনে উত্তর দিতে যাচ্ছিলো। কিন্তু তার আগেই তান্বী কণ্ঠ উঁচু করে বললো—
“আমার ভাই কখনোই এসব আমাদের সামনে খেত না। আসলে… সে তো এসব খেতই না। আর মারামারি…সে তো একদম…”
কথা শেষ করার আগেই তান্বীর গলা কেঁপে গেলো। বাক্যটা যেন হঠাৎ করেই আটকে গেলো তার ভিতরের গভীর ব্যথায়। সে চুপ করে গেলো।
কক্ষের মধ্যে এক মুহূর্তে ভারী নীরবতা নেমে এলো।
জাভিয়ানের সিগারেটের ধোঁয়াটা যেন আরও বেশি ঘন হয়ে তান্বীর দিকে ফিরে আছড়ে পড়লো।
জাভিয়ান ধোঁয়া টেনে ধীরে ধীরে ছাড়লো। চোখে-মুখে কোনো আবেগ নেই, শুধু ঠাণ্ডা নির্লিপ্ততা। গ্লাসটা টেবিলে রেখে ভারী গলায় বললো—“অভ্যাস করে নাও। এটাই আমার লাইফ। আমি যেমন আছি, তেমনই থাকবো। আমার কিছুই… কারো জন্য বদলাবে না।আর তোমাকে এভাবেই থাকতে হবে আমার সাথে।”
তার গলায় ছিলো এক অদৃশ্য শক্তি—যেন এই কথাগুলো শুধু সতর্কবার্তা নয়, বরং এক ধরনের নিয়ম, যার বাইরে যাওয়া মানেই ভেঙে পড়া।
(চলবে………)
(পর্ব রিচেক করিনি, বানান ভুল থাকলে বা কোথাও ত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিবেন ধন্যবাদ)
Share On:
TAGS: ডিজায়ার আনলিশড, সাবিলা সাবি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ৭
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ১০
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ২০
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ১৮
-
আযদাহা সব পর্বের লিংক
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ১৫
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ১৩
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ২৩
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ২৪(প্রথমাংশ+শেষাংশ)
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ১২