Golpo ডার্ক রোমান্স ডিজায়ার আনলিশড

ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ১৮


ডিজায়ার_আনলিশড❤️‍🔥

✍️ সাবিলা সাবি

পর্ব-১৮

⚠️ MATURE CONTENT WARNING (18+) ⚠️THIS EPISODE CONTAINS GRAPHIC THEMES OF EXTREME VIOLENCE, TORTURE, AND PSYCHOLOGICAL HORROR.
READER DISCRETION IS STRONGLY ADVISED. (এটি একটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক ডার্ক থ্রিলার।)

মেক্সিকো সিটির আকাশ তখন সবেমাত্র লালের রেশ কাটিয়ে উজ্জ্বল হতে শুরু করেছে। সকালের প্রথম আলো শহরের ধোঁয়াশা ভেদ করে মেইলস্ট্রোমের সুরক্ষিত, ভূগর্ভস্থ ডেরার কংক্রিটের দেওয়ালে এসে পড়েছে। কক্ষটি ঠান্ডা, কৃত্রিম আলোয় ঢাকা। এখানে স্বাচ্ছন্দ্য নয়, কেবল দক্ষতা আর ক্ষমতা প্রকাশ পায়।

হসপিটাল থেকে ফেরার পর মেইলস্ট্রোম তখনো তার ডেরায় ছিল। তার চোখে শারীরিক দুর্বলতার সামান্য চিহ্ন, কিন্তু দৃষ্টিতে ইস্পাতের মতো ধার। ঠিক তখনই তার প্রধান সহকারী, আলভারো দ্রুত তার কাছে ছুটে এলো—তার চেহারায় স্পষ্ট উদ্বেগ।

আলভারো দ্রুত শ্বাস ফেলে, উদ্বিগ্ন ও নিচু স্বরে বললো “স্যার, আজ সকালে আমাদের অস্ত্র সরবরাহের একটি বড় চালান ছিনতাই হয়েছে। ট্রাকটি যাচ্ছিল মেক্সিকো সিটির কোলোনিয়া রোমা নর্তে এলাকার দিকে।“

মেইলস্ট্রোমের চোখ কঠিন হয়ে উঠলো, যেন সেই শীতল দৃষ্টিতে সমস্ত উদ্বেগ গলে যায়।সে আওয়াজ না তুলে, শুধু ঠোঁট নেড়ে বললো তার কণ্ঠস্বর ছিলো হিমশীতলক “কে এই দুঃসাহস দেখালো?

আলভারো মাথা নিচু করে, ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো “খোঁজ নিয়েছি,বস। এটা অন্য মাফিয়া গোষ্ঠী—ব্লাড হক-এর কাজ। তারা জানতে পেরেছিল যে আপনি অসুস্থ, তাই এই সুযোগ নিয়েছে। আমাদের অস্ত্রগুলো এখন তাদের হাতে।

মেইলস্ট্রোমের ঠোঁটের কোণে এক শীতল, বিপজ্জনক হাসি ফুটে উঠলো। তার দুর্বলতা প্রমাণ করতে চাওয়াটা যে ব্লাড হক-এর সবচেয়ে বড় ভুল ছিল, সেই বার্তাটি যেন তার চোখে জ্বলজ্বল করছিল।

মেইলস্ট্রোম কঠোর, পাথরের মতো কণ্ঠে বললো “দ্রুত আমার গাড়ি প্রস্তুত করো। রোমা নর্তের কাছাকাছি ওদের ডেরা খুঁজে বের করো। আমি নিজেই যাবো। আর যে এই খবর ওদের দিয়েছে, তাকে খুঁজে বের করো। আমি তাকে জীবিত চাই।”
.
.
.
.
মেইলস্ট্রোম দ্রুত তার বুলেটপ্রুফ গাড়িতে করে কোলোনিয়া রোমা নর্তের এক পরিত্যক্ত গুদামঘরের কাছে পৌঁছালো। এলাকার পরিবেশ তখনো থমথমে। সেখানে ব্লাড হকের সদস্যরা ছিনতাই করা অস্ত্রগুলো তাদের ট্রাকে লোড করছিল।

মেইলস্ট্রোম গাড়ি থেকে নামলো। তার হাতে সাইলেন্সার লাগানো একটি পিস্তল। তার চলনে কোনো অস্থিরতা ছিল না, ছিল শুধুই স্থির, শীতল পেশাদারিত্ব। সে কোনো শব্দ না করে গুদামঘরের দিকে এগিয়ে গেল।

প্রথমে সে তাদের প্রধান ট্রাক ড্রাইভারকে লক্ষ্য করে গুলি চালালো—গুলি সরাসরি তার কপালে বিঁধলো। ট্রাক ড্রাইভার মাটিতে লুটিয়ে পড়তেই সেখানে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলো।

ব্লাড হকের বাকি সদস্যরা অস্ত্র হাতে পাল্টা আক্রমণের সুযোগ পাওয়ার আগেই মেইলস্ট্রোম একাই তার দক্ষতা দেখালো। সে তীব্র দ্রুতগতিতে এবং নির্ভুলভাবে গুলি চালিয়ে বাকি সদস্যদের একে একে নিকেশ করলো। র/ক্তে ভিজে গেল গুদামঘরের মেঝে, কিন্তু মেইলস্ট্রোমের চোখে এক ফোঁটা দ্বিধা বা অনুশোচনা ছিল না।

তবে মেইলস্ট্রোমের নজর ছিল অন্য দিকে। অস্ত্রগুলো ছিনতাইয়ের খবর যে ব্লাড হককে দিয়েছিল, সেই বিশ্বাসঘাতকের সন্ধানে সে সফল হলো। সে দেখলো, তার নিজেরই এক পুরনো লোক ভয়ে গুদামের এক কোণে গুটিয়ে লুকিয়ে আছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই মেইলস্ট্রোমের লোকেরা বিশ্বাসঘাতক লোকটিকে টেনে নিয়ে এলো। মেইলস্ট্রোম তাকে মারলো না, বরং তার গাড়িতে তুলে নিজের গোপন আস্তানার টর্চার সেলে নিয়ে গেলো।

সেখানে আলো-আঁধারির মধ্যে মেইলস্ট্রোম এসে লোকটির সামনে দাঁড়ালো। তার মুখ তখন ভয়ংকর শান্ত।

মেইলস্ট্রোম বিশ্বাসঘাতক লোকটির দিকে তাকিয়ে, ঠান্ডা, হিসেবি কণ্ঠে বললো “মাদারফা/কার তুই আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছিলে। কিন্তু এখনতো আমি সুস্থ। আর তোর মতো বিশ্বাসঘাতকদের জন্য দুর্বলতা নয়, শুধু যন্ত্রণা অপেক্ষা করে।

টর্চার সেলে আলো-আঁধারির মধ্যে বিশ্বাসঘাতক লোকটি একটি শক্ত চেয়ারের সাথে বাঁধা। তার নাম ফার্দিনান্দো (Fernando)। ভয় আর আতঙ্কে তার সর্বাঙ্গ থরথর করে কাঁপছে। মেইলস্ট্রোম তার সামনে এসে দাঁড়ানো, হাতে একটি অস্ত্র। সে ফার্দিনান্দোর দিকে আরও ঝুঁকে এসে বললো “এখন বল, এই খেলায় নাইট রেভেনের কোনো হাত ছিল কিনা?“

মেইলস্ট্রোমের চোখে তখন কোনো আবেগ ছিল না—ছিল শুধুই শীতল, হিসেবি প্রতিশোধের আগুন।

ফার্দিনান্দো তখন ভয়ে আকুল হয়ে উঠলো।মিনতি ভরা, কাঁপা কণ্ঠে বললো “নাইট রেভেন ছিলো কিনা আমি জানিনা। তবে আমাকে ক্ষমা করে দিন,বস! প্লিজ! আর কোনোদিন আমি এরকম করবো না! আমি শুধু টাকার লোভে পড়েছিলাম,বস! ব্লাড হক বলেছিল আমাকে অস্ত্র পাচারের অর্ধেক টাকা দেবে! আমাকে ক্ষমা করে দিন… আমার জান ভিক্ষা দিন, বস!

মেইলস্ট্রোমের মুখে এক ক্রূর হাসি ফুটে উঠলো। সে ধীরে ধীরে ফার্দিনান্দোর কাছে ঝুঁকে এলো।চোখে তীব্র ঘৃণা নিয়ে, ক্ষুরধার কণ্ঠে বললো “আমার সাথে থেকেও আমাকে চিনতে পারলিনি, ফার্দিনান্দো? এতদিন তোর চোখের সামনে আমি এমন কত মানুষকে মেরেছি! কত বাস্টার্ডকে মেরেছি! আর তুই জান ভিক্ষা চাইছিস? ফাঁকিং অ্যাসহোল!

মেইলস্ট্রোম তার দিকে একধাপ এগিয়ে এলো তার উপস্থিতিই শ্বাসরোধ করে দিচ্ছে। সে আঙ্গুল দিয়ে ফার্দিনান্দোর কপাল ছুঁয়ে বললো “ভেবেছিলি আমি আর কোমা থেকে উঠবো না, তাই না?

ফার্দিনান্দো তখন চেয়ারের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় ছটফট করতে লাগলো। তার চোখে ভেসে উঠলো তার সামনে মেইলস্ট্রোমের আগের করা প্রত্যেকটা ভয়ানক খুন—সেই শীতলতা, সেই নির্মমতা। সে বুঝতে পারলো, আজ তার জান ভিক্ষা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ফার্দিনান্দোর করুণ মিনতি এবং চরম ভয় উপেক্ষা করে মেইলস্ট্রোম সামান্য নুইয়ে তার দিকে তাকাল। তার চোখ তখন ছিল হিংস্র, কিন্তু তার মুখ ছিল অবিশ্বাস্য রকমের শান্ত।

মেইলস্ট্রোমের ইশারায় তার চার-পাঁচজন অনুচর দ্রুত ফার্দিনান্দোর কাছে এলো। তারা বাঁধা অবস্থায়ই ফার্দিনান্দোকে শক্ত করে ধরে রাখলো, যাতে সে সামান্য নড়তেও না পারে।

এরপর মেইলস্ট্রোম ধীরে ধীরে ঘরের এক কোণ থেকে একটি স্টিল ট্রে টেনে আনলো। ট্রে’টির ভেতরে ছিল সারিবদ্ধভাবে সাজানো নানা রকমের সরঞ্জাম—যা দেখে মনে হতে পারে কোনো মেডিকেল সার্জারি বা অপারেশন করার যন্ত্রপাতি, কিন্তু সেগুলোর চকচকে ধার এবং অস্বাভাবিক আকার বুঝিয়ে দিচ্ছিল যে এগুলোর উদ্দেশ্য নিরাময় নয়, যন্ত্রণা। কাঁচির ঝলক, ধারালো ক্ষুর ও অন্যান্য ধাতব যন্ত্রপাতির শীতল উপস্থিতি ফার্দিনান্দোর আতঙ্ক কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিলো।

ফার্দিনান্দো গলা শুকিয়ে আসা কণ্ঠে বললো “না… না, বস! প্লিজ!দয়া করুন।“

মেইলস্ট্রোম ট্রে’টি ফার্দিনান্দোর চোখের সামনে রাখলো। তার চোখে তখন এক সাইকোপ্যাথিক আনন্দ। এইবার সে তার প্রতিশোধ নেবে—ধীরে, শীতলভাবে।

মেইলস্ট্রোম ধীরে ধীরে সেই স্টিলের ট্রে থেকে একটি ধারালো, চিকন ব্লেড হাতে তুলে নিলো। তার চোখ তখন ফার্দিনান্দোর মুখের দিকে নিবদ্ধ। ফার্দিনান্দোর চোখে তখন মৃত্যুভয়।

মেইলস্ট্রোম কঠিন, শান্ত কণ্ঠে,বললো,যেন কোনো সাধারণ নির্দেশ দিচ্ছে “যেই জিভ দিয়ে আমার গোপন তথ্য ফাঁস করেছিস, সেই জিভ আমি আর রাখবো না।“

ফার্দিনান্দো চিৎকার করার সুযোগ পেল না, তার কণ্ঠনালীতে আটকে গেল ভয়। কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই মেইলস্ট্রোম বিদ্যুৎ গতিতে ফার্দিনান্দোর মুখ চেপে ধরলো এবং অপর হাত দিয়ে তার জিভ টেনে ধরলো। সেই ধারালো ব্লেড তখন প্রস্তুত…মুহূর্তের মধ্যে এক টানে মেইলস্ট্রোম সেই জিভ কেটে ফেললো।

ফার্দিনান্দোর মুখ থেকে এক বীভৎস, চাপা গোঙানির শব্দ বের হলো—যা তার কাটা জিভের কারণে কোনো শব্দে পরিণত হতে পারলো না। গলগল করে রক্ত ঝরতে শুরু করলো। অনুচররা শক্ত করে ফার্দিনান্দোকে ধরে রাখলো, যাতে ব্যথায় সে নিজেকে আঘাত না করে।

মেইলস্ট্রোম নির্বিকার। রক্তমাখা জিভটি সে হাতে ধরে রেখে একপাশে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।

মেইলস্ট্রোম রক্তাক্ত জিভের দিকে তাকিয়ে, ঠান্ডা চোখে বললো “এটাই প্রথম মূল্য, ফার্দিনান্দো। এখন বল—নাইট রেভেন এর পেছনে ছিল কি না। নাকি তুই আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবি?

ফার্দিনান্দো তখন চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় কাঁপছে, মুখ দিয়ে ফেনা ওঠা রক্তের স্রোত নেমে আসছে। সে কথা বলার জন্য ছটফট করছে, কিন্তু জিভ না থাকায় কেবল এক বীভৎস শব্দই বেরোচ্ছে। মেইলস্ট্রোম বুঝে গেল, কথা বলার জন্য সে এখন আর প্রস্তুত নয়।

মেইলস্ট্রোম তখন ধীরে ধীরে সেই স্টিলের ট্রে-এর দিকে তাকালো। জিভ হারানোর যন্ত্রণায় ফার্দিনান্দো তখন কেবল ছটফট করছে। মেইলস্ট্রোম এরপর চোখ তোলার জন্য বিশেষ ধরনের একটি ধাতব যন্ত্র তুলে নিলো। সে যন্ত্রটি নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে, শীতল কণ্ঠে বললো “তুই তোর দৃষ্টি দিয়ে আমাকে দুর্বলতার চোখে দেখেছিলি, ফার্দিনান্দো। এখন সেই দৃষ্টি তোর আর দরকার নেই।“

মেইলস্ট্রোম ধীরে ধীরে ফার্দিনান্দোর মুখের কাছে ঝুঁকে এলো। ফার্দিনান্দো ভয়ে জ্ঞান হারানোর দ্বারপ্রান্তে। সে চিৎকার করার চেষ্টা করলো, কিন্তু তার কণ্ঠনালী থেকে শুধু রক্ত ও বাতাসের এক বীভৎস ফোঁস ফোঁস শব্দ বের হলো।

অনুচররা তার মাথা শক্ত করে ধরে রাখলো। মেইলস্ট্রোম তখন তার শীতল হাত ফার্দিনান্দোর মাথার পাশে রাখলো।

মেইলস্ট্রোম ফিসফিস করে বললো “চল, এই পৃথিবীর অন্ধকার থেকে আমি তোকে মুক্তি দিই।

এরপর সেই ধারালো যন্ত্রটি ফার্দিনান্দোর ডান চোখের কোণে বসিয়ে দেওয়া হলো। মেইলস্ট্রোম কোনো দ্বিধা বা তাড়াহুড়ো না করে, এক নিষ্ঠুর দক্ষতায় প্রথম চোখটি তুলে আনলো। যন্ত্রটি সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটি বীভৎস শব্দ হলো এবং রক্ত ছিটকে পড়লো।

ফার্দিনান্দোর শরীর তখন এক চরম খিঁচুনিতে বেঁকে গেল, কিন্তু অনুচরদের লৌহমুষ্টিতে সে বন্দি। মেইলস্ট্রোম দ্বিতীয় চোখটির দিকে তাকালো। সেই চোখ তখনো আতঙ্ক আর যন্ত্রণায় ছটফট করছে। মুহূর্তের মধ্যে, মেইলস্ট্রোম একইভাবে তার বাঁ চোখটিও তুলে আনলো।

দুটি চোখ তুলে আনার পর, ফার্দিনান্দোর মুখে কেবল দুটি রক্ত ঝরা শূন্য গহ্বর রইলো। সেই চরম যন্ত্রণা তার কণ্ঠনালী থেকে এক চাপা আর্তনাদ বের করলো, যা টর্চার সেলের নিস্তব্ধতা ভেঙে দিলো। মেইলস্ট্রোম তখনো নির্বিকার। তার প্রতিশোধ যেন সবেমাত্র শুরু হলো।

ফার্দিনান্দোর চোখ তুলে আনার পর তার শরীর তখন মৃত্যু যন্ত্রণায় নিস্তেজ। কেবল রক্ত ঝরার শব্দ আর চাপা গোঙানি টর্চার চেম্বারের নীরবতাকে মাঝে মাঝে ভাঙছে। মেইলস্ট্রোম স্টিলের ট্রেতে রাখা রক্তলাল গোলক দু’টির দিকে একবার তাকালো, তারপর দৃষ্টি সরিয়ে নিল। তার মুখ তখনো ভয়ংকরভাবে শান্ত—যেন এই চরম নৃ/শংসতা তার কাছে ছিল কেবল একটি কঠিন, নিরাসক্ত গাণিতিক সমীকরণ।

ঘরের এক কোণে রাখা ভারী যন্ত্রগুলোর দিকে মেইলস্ট্রোম ধীরে হেঁটে গেল। সরঞ্জামগুলোর মধ্যে সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো ছিল একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল-গ্রেড ড্রিল মেশিন—শক্তিশালী মোটরযুক্ত, মোটা হাতল এবং মাথায় পরিবর্তনযোগ্য স্টিলের বিট।

যন্ত্রটি হাতে নিতেই মেইলস্ট্রোমের ক্ষমতা যেন আরও বহুগুণ বেড়ে গেল।মেইলস্ট্রোম ড্রিলের মোটর একবার চালিয়ে পরীক্ষা করলো; তার কণ্ঠস্বর ছিল ধীর, কিন্তু হিসেবি এবং স্থির: “এই হাত দিয়ে তুই আমার অস্ত্র পাচার করেছিস, ফার্দিনান্দো…।”

মোটর ঘুরে উঠলো—ঘরের স্যাঁতসেঁতে দেয়াল কেঁপে উঠলো এক ভয়াবহ, চাপা ঘররররর–ঘররররর শব্দে।

মেইলস্ট্রোম এক হাতে ফার্দিনান্দোর ডান হাত তুলে ধরলো। তার দৃষ্টি এবার ফার্দিনান্দোর খোলা পাঞ্জার দিকে। বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হিসেবে সেই হাতকেই সে বেছে নিলো। সে ড্রিল মেশিনের মাথাটি এনে ফার্দিনান্দোর ডান হাতের কব্জির ঠিক উপরে স্থাপন করলো, যেখানে কব্জির হাড়গুলো স্পষ্ট। মেইলস্ট্রোম কোনো ঝাঁকুনিও দিলো না, মুখেও নেই সামান্যতম আবেগের ছাপ। তার অনুচররা তখন ফার্দিনান্দোর শরীর শক্ত করে ধরে আছে।

ড্রিলটা ত্বকের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই ফার্দিনান্দোর গলা থেকে তীব্র, বিকৃত এক গোঙানির শব্দ বেরিয়ে এলো। রক্ত ও হাড়ের গুঁড়ো মেশানো এক বীভৎস মিশ্রণ ছিটকে পড়লো। ব্যথার তীব্রতায় তার শরীর ধনুকের মতো বেঁকে যাচ্ছিল, কিন্তু বাঁধা থাকায় সে নড়তে পারলো না।

মেইলস্ট্রোম ড্রিলটি চালিয়ে রাখলো, যেন সেই যান্ত্রিক কম্পন ফার্দিনান্দোর প্রতিটি স্নায়ুতে বিদ্যুতের মতো আঘাত করছে।

এরপর মেইলস্ট্রোম কব্জি থেকে ড্রিল সরিয়ে নিল। সেই হাতের অবস্থা তখন বীভৎস। ফার্দিনান্দো শ্বাস নেওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করছে। মেইলস্ট্রোম একই যন্ত্র দিয়ে কাঁধ, পাঁজরের ফাঁক, উরু—প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হিসেব করে, ধীরে, শীতলভাবে আঘাত হানতে থাকলো। প্রতিটি আঘাতের উদ্দেশ্য ছিল একটাই—ফার্দিনান্দো যেন মারা না যায়, বরং বোঝে যে বিশ্বাসঘাতকতার মূল্য কতটা ভয়ংকর।

ড্রিল বন্ধ হতেই সেই ধাতব শব্দ মিলিয়ে গেল। মেইলস্ট্রোম রক্তাপ্লুত ফার্দিনান্দোর কানে ঝুঁকে গেলো। তার ফিসফিসানি ছিল বরফের মতো শীতল। “নাইট রেভেন বা ব্লাড হকের কাছে এই বার্তা পৌঁছাবে… মেইলস্ট্রোমের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলে মৃ/ত্যু নয়—তার আগের প্রতিটি মুহূর্তই আসল শাস্তি।”

ড্রিল মেশিন নামিয়ে রেখে মেইলস্ট্রোম এবার ধীর পায়ে চলে গেলো বড়, ধারালো ক্রেনিয়াল স্প্লিটার-টির দিকে—অস্থি-চেরা এই যন্ত্রটি তার হাতে ছিল মৃ/ত্যু থেকেও ভয়ংকর শাস্তির মাধ্যম। সে ফার্দিনান্দোর মস্তকের ওপর হাত রাখলো। ঠান্ডা, বরফমতো শক্ত হাত।

ফার্দিনান্দোর নিঃশ্বাস তখনো চলছে—টেনে টেনে, কষ্টে, ভাঙা জীবনের শেষ আশার মতো। মেইলস্ট্রোম যন্ত্রটি নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে, ফিসফিস করে বললো “মানুষের আসল পরিচয়, প্রত্যেকটা কাজ করার পরিকল্পনা লুকিয়ে থাকে খুলির ভিতরে…আর যদি সেটাই না থাকে তবে কেমন হয়।“

যন্ত্রটি মস্তকের কাছে স্থিরভাবে ধরে মেইলস্ট্রোম অদ্ভুত এক মনোযোগে কাজ শুরু করলো। তার চোখে কোনো রাগ নেই, কোনো উন্মাদনা নেই—ছিল শুধু হিসেব, ঠান্ডা সিদ্ধান্ত, আর এক ভয়ংকর শান্তি। যন্ত্রটা ঘোরার সাথে সাথে যেন ঘরের বাতাস ভারী হয়ে উঠতে লাগলো। ফার্দিনান্দো কেঁপে উঠলো—যন্ত্রণায় নয়, বরং এমন এক অনুভূতিতে যেন নিজের অস্তিত্বই খুলে যাচ্ছে।

একসময় মেইলস্ট্রোম থামলো। সে খুলির কঠিন স্তরটি তুলে নিলো—যা সরিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে ফার্দিনান্দোর মুখে যেন শেষবারের মতো কোনো আলো নিভে গেল।

মেইলস্ট্রোম অদ্ভুত শান্ত কণ্ঠে বললো “ তুই আমার সাম্রাজ্যের ভিতরের মানুষ হয়ে বাইরে খবর পাঠাতে চেয়েছিলি—এখন তোর মাথাই প্রমাণ হবে, আমার বিরুদ্ধে দাঁড়ালে ব্রেইনটাই থাকে না।“

সে যন্ত্রটি রেখে ঘুরে দাঁড়াল। ফার্দিনান্দোর শরীর তখন টেবিলে নিথর, নিস্তব্ধ—কিন্তু মেইলস্ট্রোমের কাছে এটা ছিল কেবল অধ্যায়ের শুরু। এই নিস্তব্ধতাই ছিল নাইট রেভেন এবং ব্লাড হকের কাছে পাঠানো তার চরম সতর্কবার্তা।

ফার্দিনান্দোর দেহ তখনো চেয়ারে নিথর। মেইলস্ট্রোম এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে তার নিস্তব্ধতা নিশ্চিত করলো। তার প্রতিশোধের প্রথম পর্ব শেষ। এখন পালা এই চরম বার্তার মোড়ক তৈরির।

মেইলস্ট্রোম অনুচরদের দিকে ফিরলো,তারপর কর্তৃত্বপূর্ণ ও শীতল কন্ঠে বললো “লাশ সরানোর ব্যবস্থা করো। কিচেনে নিয়ে চলো।

মেইলস্ট্রোমের ইশারায় অনুচররা নিথর ফার্দিনান্দোর দেহটি দ্রুত টেনে নিয়ে গেলো। লাশটি তার গোপন ডেরার লাগোয়া একটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং পরিষ্কার কিচেনে রাখা হলো—একটি বিশাল স্টেইনলেস স্টিলের বোর্ডের ওপর, যেন এটি কোনো রান্না হওয়ার জন্য প্রস্তুত কাঁচামাল।

মেইলস্ট্রোম এরপর টর্চার চেম্বার থেকে বেরিয়ে কিচেনে এল। সে তার রক্তমাখা পোশাক পরিবর্তন করে নিলো। এবার সে পরল একটি পরিষ্কার, সাদা শেফের মতো অ্যাপ্রোন এবং হাতে তুলে নিলো রাবারের গ্লাভস। তার এই পোশাক যেন কোনো দক্ষ শেফের, যা তার আসন্ন কাজের নৃশংসতা আরও বহুগুণ বাড়িয়ে তুললো।

সে কিচেনের সরঞ্জামগুলোর দিকে তাকালো। সেখানে সাধারণ রান্নার জিনিসপত্র নেই, আছে তীক্ষ্ণতা আর ধারালো ধাতব সরঞ্জাম। মেইলস্ট্রোম তখন টেবিল থেকে বড় বড় মাংস কাটার ছুরি (cleavers), ধারালো দা (machetes) এবং অন্যান্য বিশেষ সরঞ্জাম তুলে নিলো। তার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল অত্যন্ত হিসেবি, মনে হলো সে কোনো জটিল রেসিপি তৈরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

মেইলস্ট্রোমের চোখে তখনো কোনো রাগ নেই, আছে কেবল এক বিকৃত শৈল্পিকতা। ফার্দিনান্দোর দেহটি এখন তার কাছে কেবলই একটি উপাদান, যা দিয়ে সে ব্লাড হকের জন্য একটি চরম “উপহার” তৈরি করবে।

মেইলস্ট্রোম তখনও কিচেনের স্টেইনলেস স্টিলের বোর্ডের সামনে স্থির। তার পরনে শেফের সাদা অ্যাপ্রোন, হাতে ধারালো দা এবং ছুরি। চারপাশের বাতাস তখন রক্ত আর ধাতুর শীতল গন্ধে ভারী।

সে অবিশ্বাসযোগ্য দক্ষতা ও স্থিরতার সঙ্গে কাজ শুরু করলো। দ্রুত, নিখুঁতভাবে ফার্দিনান্দোর দেহকে ছোট ছোট টুকরো করতে লাগলেন। তার হাতের পেশীতে সামান্য টান নেই, মুখের অভিব্যক্তিও নির্বিকার—সে মাংস কাটছে না, বরং সে ক্ষমতা আর প্রতিশোধের এক জটিল স্থাপত্য তৈরি করছে। দীর্ঘ সময় পর ফার্দিনান্দোর দেহ কাটার কাজ শেষ হলো। বোর্ডের ওপর শুধু টুকরোগুলো সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো। মেইলস্ট্রোম তখন বিশেষভাবে একটি অংশ খুঁজলো।

সে সাবধানে ফার্দিনান্দোর হৃৎপিণ্ড এবং কলিজা বের করে আনলো। কলিজাটি ছিল আকারে বড়। মেইলস্ট্রোম সেটিকে একপাশে সরিয়ে রাখলো। মেইলস্ট্রোম নিচু কন্ঠে ফিসফিস করে বললো “কলিজাটা, এটা আমার জন্য। বিশ্বাসঘাতকদের কলিজা ভোজনে এক অন্যরকম শান্তি আছে।

এই বীভৎ/স কাজের পরও মেইলস্ট্রোমের স্থিরতা ছিল অটুট।এই চরম নৃশংসতা ছিল ব্লাড হোকের প্রতি মেইলস্ট্রোমের চ্যালেঞ্জ এবং তার নিজের মানসিক বিকৃতির চূড়ান্ত প্রকাশ।

মেইলস্ট্রোম এবার বড় কাস্ট-আয়রন পাত্রটা স্টোভে বসালো। চুলা জ্বলার শব্দে পুরো কিচেন লাল আলোয় ভরে গেল—আগুনের উষ্ণতা যেন এই শীতল প্রতিশোধের পরিবেশকে আরও তীব্র করে তুললো।সে একে একে হাতে নিল মরিচ, পাপরিকা, অরেগানো, জিরা—সব শক্তিশালী মশলা। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো—যে “প্রধান উপাদান” ফার্দিনান্দোর লাশের টুকরো টুকরো মাংশগুলো পাত্রে দিল…কোনো শব্দ হলোনা না, শুধু পাত্রে পড়ে এক নরম, ভেজা শব্দ হলো। সেই নীরব, নরম শব্দটিই ছিল গোটা দৃশ্যের মধ্যে সবচেয়ে অস্বস্তিকর।

মেইলস্ট্রোম স্ট্যুটি নেড়ে নেড়ে বলতে লাগলো ফিসফিস করে চোখ সরাসরি পাত্রের দিকে। তার কণ্ঠে সামান্যতম আবেগ নেই “এই পাত্রে যা ফুটছে, সেটা খাবার নয়, সেটা তোর বিচার। তুই আমাকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিস? এখন তোর পাপ দিয়েই আমি আমার ফাইনাল ডেজার্ট তৈরি করছি। প্রতিটি মশলা, ফার্দিনান্দো—তোর বিশ্বাসঘাতকতার সাক্ষ্য দেবে।“

সে চিলির মাত্রা বাড়াল—এতটাই যে সেই তীব্র ঝাঁজে চোখে পানি চলে আসে। কিন্তু তার চোখ শান্ত। সে পাত্রের ভেতর সেই মাংসগুলো টেনে চিবিয়ে দেখলো নরম হয়েছে কিনা। তখন তার ঠোঁটে এক নির্মম শিহরণ ফুটে উঠলো।

এরপর সে আলাদা ট্রেতে রাখা সবচেয়ে নরম অংশটি হ্নদপিন্ড তুলে নিলো—এটা সে ব্লাড হককে পাঠাবে না। এটা শুধু সে নিজেই খাবে। ট্রে-টা কাছাকাছি নিয়ে মেইলস্ট্রোম ধীরে ধীরে উপাদানটা দেখলো—এক শেফের মতো, যে নিজের প্রিয় মাংসের মান পরীক্ষা করছে।

সে ছোট স্কিলেটে মাখন গলালো। তাতে রসুন কুঁচি দিলো। হালকা সিজনিং… আর তারপর সেই বিশেষ হ্নদপিন্ডটাকে স্কিলেটে রাখলো। স্কিলেটে ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ শব্দ উঠলো—সেই শব্দ যেন পুরো ঘরটা জানিয়ে দিল যে এটা কোনো সাধারণ রান্না নয়, বরং এক ভয়ংকর সমাপ্তি। মেইলস্ট্রোম স্কিলেটের ওপর ঝুঁকে বললো “এটা আমার জন্য। বিশ্বাসঘাতকের হৃদয়েও যদি ভয় থাকে, তার স্বাদ সবচেয়ে তীব্র হয়।“ তার চোখে এক নির্লিপ্ত হাসির দিপ্তী ফুটে উঠলো।

ব্লাড হকের জন্য তৈরি স্ট্যুটি একটি সিল করা কালো কন্টেইনারে ভরে সে হাতে লিখলো—এবার আর শুধু ডিনার উপভোগ করার অনুরোধ নয়, বরং এক চরম সতর্কবার্তা। মেইলস্ট্রোমের হাতের লেখা ছিল দৃঢ় এবং স্থির।

“To: Blood Hawk
From: মেইলস্ট্রোম
“আমি ফিরে এসেছি কোমা থেকে।
এই ডেলিকেসি উপভোগ করো—কারণ এটা তোমার নতুন গল্প বলবে। আর মনে রাখবে, আমি জানি কে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তোমার দরজায় আমি খুব শীঘ্রই আসছি।”

নিজের প্লেটটা সে টেবিলে রেখে বসলো। কাঁটা ছুরি হাতে নিলো। চারপাশে নীরবতা। মোমবাতির মতো দুর্বল আলোয় কিচেনটি আবছা হয়ে আছে। একজন মানুষ, একটি রান্নাঘর—কিন্তু রান্নাটা মানুষের নয়, প্রতিশোধের।

মেইলস্ট্রোম প্রথম কামড় নিলো। কোনো তাড়াহুড়ো নেই, যেন বহুদিনের প্রত্যাশিত এক ভোজ শুরু হলো। সে সেই বিশেষ ” হ্নদপিন্ড অংশটিকে” ধীরে ধীরে চিবাতে লাগলো—তার মুখমণ্ডলে তখন এক তীব্র তৃপ্তি ফুটে উঠলো। রসুনের হালকা ঘ্রাণ আর মাখনের মোলায়েম ভাব সেই জঘন্য স্বাদকে মেইলস্ট্রোমের কাছে এক বিজয়ের স্বাদ এনে দিল।

তাঁর চোখ তখন বন্ধ। সে সেই খাবারের প্রতিটি পরতে যেন অনুভব করছে ফার্দিনান্দোর শেষ মুহূর্তের ভয়, ব্লাড হকের চক্রান্ত এবং নিজের ক্ষমতা। চোখ বন্ধ করলে মনে হয়—সে খাবার নয়, বিচার করছে। সেই বিচার সম্পূর্ণ, নির্মম এবং তার মনের মতো। প্লেট শেষ হলো। মেইলস্ট্রোম ধীরে শ্বাস নিল। তার প্রতিশোধের প্রথম ধাপ, রক্ত ও মাংসের মোড়কে—সম্পূর্ণ হলো।

অবশিষ্ট থেকে যাওয়া মাংসের টুকরোগুলো সে যত্ন করে আলাদা বাক্সে রাখলো। সেই মাংসগুলো ব্লাড হকের জন্য নয়, বরং তার পালিত নেকড়ের জন্য। এই মাংসও নষ্ট হবে না। মেইলস্ট্রোম বাক্সটি ফ্রিজে রেখে দিল। বিশ্বাসঘাতকদের শেষ চিহ্নটুকুও তার সাম্রাজ্যের বাইরে যাবে না।
.
.
.
.
বিলাস বহুল ভিলা এস্পেরেন্জায় তখন সকালের ব্যস্ততা। জাভিয়ান তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরি কক্ষে বসে কিছু জরুরি কাগজপত্র দেখছিল। তার মুখে ছিল রাতের মতোই সেই নিরাসক্ত শীতলতা।

দরজার কপাট দ্রুত ঠেলে ঘরে প্রবেশ করলো জাভিয়ানের খালাতো বোন কাতারিনা। তার চোখে স্পষ্ট উদ্বেগ। সে জাভিয়ানের সামনে এসে প্রায় চিৎকার করে উঠলো।

কাতারিনা উদ্বেগ ও অস্থির কণ্ঠে বললো “জাভি ভাইয়া! তুমি এখনো বসে আছো কিভাবে? তুমি জানো লুসিয়া কিডন্যাপ হয়েছে!“

জাভিয়ান ধীরেসুস্থে কাগজপত্র থেকে মুখ তুলল। তার চোখে কোনো চাঞ্চল্য নেই। সে শান্ত, নিরাসক্ত ভঙ্গিতে বলল “জানি।“

কাতারিনা হতাশায় প্রায় ভেঙে পড়লো। সে রাগান্বিত কন্ঠে বললো “তাহলে তুমি এত শান্ত! তুমি এখনো ওকে উদ্ধার করতে যাচ্ছো না কেন? তোমার কোনো মাথাব্যথা নেই?“

জাভিয়ান হাতে থাকা ফাইলটি টেবিলের ওপর রাখল। তার দৃষ্টি কাতারিনার দিকে স্থির রেখে শীতল ও আত্মবিশ্বাসী কন্ঠে বললো “ লুসিয়াকে কিডন্যাপ করেছে ফারহান নামের একজন। আর সে লুসিয়ার কিছুই করবে না, তা আমি জানি। তবে ফারহান যা চাইছে, সেটা ফারহান কোনোদিনও পাবে না। তাই যদি লুসিয়া আজীবন ওর কাছে বন্দি থাকে—
থাকুক।“

কাতারিনার চোখ বড় হয়ে উঠলো জাভিয়ানের এমন ভয়ঙ্কর নিস্পৃহতা দেখে। সে দৃঢ় কণ্ঠে বললো “তাহলে তোমাকে যেতে হবে না। আমাকে বলো লুসিয়া কোথায় আছে! আমি যাবো।“

জাভিয়ান এক মুহূর্ত ভাবল, তারপর কাতারিনার দিকে এক টুকরো কাগজ এগিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক স্বরে বললো “ওর লোকেশন নাও। যা করার করো। আমার কাছে এখন এর চেয়েও জরুরি কাজ আছে।“

জাভিয়ান এরপর কোনো দিকে না তাকিয়ে দ্রুত কক্ষ ত্যাগ করল। কাতারিনা হাতে কাগজ নিয়ে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

কক্ষের বাইরে করিডোরে একটি স্তম্ভের আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল তান্বী। জাভিয়ান যখন প্রবেশ করেছিল, তখন সেও কিছু কাজের জন্য যাচ্ছিল, কিন্তু কাতারিনার চিৎকার শুনে আড়াল থেকে সব শুনে ফেলে। ফারহান, কিডন্যাপ এবং জাভিয়ানের ভয়ঙ্কর ঔদাসীন্য—সব তার কানে গেছে।
জাভিয়ান যখন বেরিয়ে গেল, তান্বী তখনো কাঁপছিল। জাভিয়ানের কথাগুলো যেন তার বিশ্বাসের মূলে আঘাত করলো: “…তাই যদি লুসিয়া আজীবন ওর কাছে বন্দি থাকে—থাকুক।”

তান্বীর মনে হল, সে এক দানবের সঙ্গে বাস করছে। লুসিয়া তার কাছে নতুন হলেও, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে এভাবে বন্দি থাকুক, এটা সে মেনে নিতে পারলো না।

এক মুহূর্তের জন্যও সে দ্বিধা করলো না। দ্রুত কাতারিনার দিকে তাকালো—সে তখনও স্তম্ভিত অবস্থায় কাগজটি ধরে আছে।
তান্বীর মনে দৃঢ় সংকল্প জেগে উঠলো “জাভিয়ান যেতে পারে না, কিন্তু আমি পারবো। লুসিয়াকে আমিই ফিরিয়ে আনবো।

তান্বী নিঃশব্দে কাতারিনার দিকে এগিয়ে গেল। সে স্থির করে ফেললো। ফারহানের কাছে সেই যাবে, লুসিয়াকে ফিরিয়ে আনার জন্য।

জাভিয়ান কক্ষ ত্যাগ করার পরই তান্বী আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো। সে দ্রুত কাতারিনার কাছে এগিয়ে গেল। কাতারিনা তখনো জাভিয়ানের নিস্পৃহতায় হতবাক হয়ে হাতে কাগজটি ধরে ছিল। তান্বী দৃঢ়, শান্ত কণ্ঠে বললো “কাগজটা দাও। লুসিয়াকে আমি ফিরিয়ে আনবো।“

তান্বীর কথা শুনে কাতারিনা প্রথমে হতভম্ব হলো, তারপর হঠাৎ একরাশ তাচ্ছিল্যের হাসি তার ঠোঁটে ফুটে উঠলো।

সে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে, অবিশ্বাস নিয়ে বললো “তোমার মতো একটা মেয়ে? সে কিনা কিডন্যাপার থেকে আমার বোনকে ছাড়িয়ে আনবে? আমার সাথে মজা করছো, তাই না?“

তান্বীর চোখে তখন কোনো হাসি বা ভয় ছিল না, ছিল শুধু স্থির সংকল্প।সে চোখে চোখ রেখে, অত্যন্ত কঠিন ও নিচু স্বরে বললো “চিন্তা করো না। ওই কিডন্যাপার, ফারহান, আমার ভাই।“

কাতারিনার সেই তাচ্ছিল্যের হাসি মুহূর্তে মিলিয়ে গেল। তার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে উঠলো। “তোমার ভাই?”—এই দুটি শব্দই যেন তার গলায় আটকে গেল।

কাতারিনা কিছু বুঝে ওঠার আগেই, তান্বী দ্রুত কাতারিনার হাত থেকে কাগজটি ছিনিয়ে নিলো। লুসিয়ার ঠিকানা এখন তার হাতে। তান্বী আর এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়ালো না। ফারহানের ঠিকানা নিয়ে সে তীব্র গতিতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। কাতারিনা তখনো তার দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

সেদিন দুপুরের দিকেই লুসিয়াকে ফিরিয়ে আনার জন্য তান্বী ভিলা এস্পেরেন্জা থেকে বেরিয়ে পড়লো। কাতারিনার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ঠিকানাটি তার হাতে শক্ত করে ধরা। সে দ্রুত বাড়ির একটি গাড়িতে উঠে পড়লো।

মেক্সিকো সিটির ব্যস্ত রাস্তা পেরিয়ে যাওয়ার সময় তান্বীর মনে চাপা উত্তেজনা আর সংকল্প কাজ করছিল। সে ফারহানের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, যে তার ভাই হওয়া সত্ত্বেও লুসিয়াকে বন্দি করেছে—এই চিন্তা তাকে সাহস যোগাচ্ছিল।

হঠাৎ শহরের একটি জনবহুল এলাকায় গাড়িটি এসে জ্যামে আটকে গেল। তান্বী অধৈর্য হয়ে জানালার বাইরে তাকালো।

ঠিক তখনই, পাশের লেন-এ থাকা একটি কালো বিলাসবহুল গাড়ি থেকে জাভিয়ানকে নামতে দেখলো সে। জাভিয়ানের পরনে ছিল কালো ট্রাউজার এবং একটি গাঢ় রঙের শার্ট। সে সোজা রাস্তার পাশে থাকা একটি পুরোনো কবরস্থানের গেটের দিকে হেঁটে গেল আর ভেতরে ঢুকে গেল।

তান্বী হতবাক হয়ে তার ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলো।
বিস্মিত ও কৌতূহলী কণ্ঠে “ওইটা জাভিয়ান না? কিন্তু উনি কবরস্থানে কেন যাচ্ছেন?“

ড্রাইভার পেছনের লুকিং গ্লাসে একবার তাকিয়ে দেখলো।
তারপর স্বাভাবিক স্বরে বললো “স্যার প্রায়ই এখানে আসেন, ম্যাডাম। কারো একটা কবর দেখতে আসেন বলে শুনেছি। তবে কার কবর—তা আমি জানি না। এই কবরস্থানটা শহরের সবচেয়ে পুরোনো আর ব্যক্তিগত কিছু কবর আছে এখানে।“

তান্বীর মনে হঠাৎ এক তীব্র কৌতূহল জেগে উঠলো। জাভিয়ানের মতো শীতল, নির্মম একজন মানুষ কেন একা একটি পুরোনো কবরস্থানে আসবে? তার ইচ্ছা হলো একবার নেমে কবরস্থানে ভেতরে গিয়ে দেখুক।

কিন্তু ঠিক তখনই, সামনে জ্যাম ছেড়ে দিলো। পেছনের গাড়িগুলো হর্ন দিতে শুরু করলো। লুসিয়া এবং ফারহানের চিন্তা সাথে সাথে তার মাথায় ফিরে এলো। জাভিয়ানের রহস্যময়তা তার কাছে লুসিয়ার নিরাপত্তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারলো না।

তান্বী দ্রুত ড্রাইভারকে নির্দেশ দিলো “চলুন! দেরি করা যাবে না।”

গাড়িটি আবার তীব্র গতিতে ফারহানের দেওয়া ঠিকানার দিকে ছুটতে শুরু করলো।

অনেকটা সময় শহরের রাস্তা পেরিয়ে তান্বীর গাড়ি শেষমেশ ফারহানের দেওয়া গোপন ঠিকানার কাছাকাছি পৌঁছালো। জায়গাটা শহরের কোলাহল থেকে দূরে, প্রায় জনমানবশূন্য একটি পুরোনো শিল্পাঞ্চলের শেষ প্রান্তে।

তান্বী গাড়ি থেকে দ্রুত নামলো। সে দ্রুত দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতে যাবে, ঠিক তখনই অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলো।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকার আগেই সে দেখলো, ফারহান বেরিয়ে আসছে। আর তার সঙ্গে রয়েছে লুসিয়াও!

লুসিয়া দেখতে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, বরং কিছুটা বিরক্তিই তার চোখে-মুখে। ফারহানের চোখে-মুখেও কোনো উদ্বেগ বা জোর-জুলুমের ছাপ নেই। তান্বীকে দেখে তারা দুজনেই থমকে গেলো।

ফারহান তান্বীর দিকে একধাপ এগিয়ে আসলো। কিন্তু লুসিয়া একেবারেই অপেক্ষা করলো না। লুসিয়া তার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে, মনে মনে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো “ওহ্ গড! আর এক মিনিটও দেরি করা চলবে না।মিউজিক রেকর্ডিংয়ের ডেডলাইনটা আমার কাছে সব চেয়েও জরুরি!

লুসিয়া আর এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে, তান্বী বা ফারহানের দিকে না তাকিয়ে, দ্রুত পায়ে এলাকা ছেড়ে একটি ট্যাক্সি ধরার জন্য হেঁটে চলে গেলো। লুসিয়ার কাছে তার বয়ফ্রেন্ডের রেকর্ডিংয়ের কাজই সবচেয়ে জরুরি।

তান্বী তখনো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এত ঝুঁকি, এত ভয় নিয়ে সে যাকে উদ্ধার করতে এলো, সে কিনা এত স্বাভাবিকভাবে চলে গেল!

লুসিয়া দ্রুত চলে যেতেই, ফারহান এবার তার বোন তান্বীর দিকে এগিয়ে আসলো। তার চোখে মুখে এক গভীর সন্তুষ্টির হাসি।সে এগিয়ে এসে, স্নেহপূর্ণ কণ্ঠে বললো “বোন, তুই এসেছিস? আমি জানতাম তুই আসবি। ওই জাভিয়ান তোকে পাঠাতে বাধ্য হবেই।

তান্বী তখনও বিস্ময় এবং রাগের মিশ্রণে কাঁপছিল।
সে ফারহানের চোখে চোখ রেখে, কঠোর কণ্ঠে বললো “জাভিয়ান আমাকে পাঠায়নি! ইভেন ও জানেই না আমি এখানে এসেছি। তার আগে তুমি বলো ভাইয়া, তুমি এমন জঘন্য কাজ কেন করলে? কেন লুসিয়াকে কিডন্যাপ করলে তুমি?“

ফারহানের হাসি মিলিয়ে গেল। তার চোখে তখন ফুটে উঠলো এক গভীর উদ্বেগ, যা তান্বীর জন্য।সে শান্ত কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে বললো “আমি যা করেছি, তোর জন্য বোন। যাতে তোকে ফিরিয়ে দিতে পারি বাবা-মা’র কাছে নিরাপদে।“

ফারহানের কথা শুনে তান্বী হতাশ হল। সে জাভিয়ানের ওপর নিজের আস্থা ধরে রাখার চেষ্টা করলো।সে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো “বাবা-মা’র কাছে আমার ফিরতে হবে না, ভাইয়া। তারা ভালো থাকবে। তাদের সাথে এলিনা আপু আছে।“

ফারহান যেন আকাশ থেকে পড়লো। তার চোখে অবিশ্বাস। সে অবাক ও কম্পিত কণ্ঠে বললো “এলিনা… ও কোথা থেকে আসবে?“

তান্বী দৃঢ়তার সঙ্গে বললো “কেন? বাবা-মা’র সাথেই তো এলিনা আপুকেও বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। জাভিয়ান নিজেই বলেছে।“

ফারহান সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো না।সে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে রইল। তার চোখ ছলছল করে উঠলো, কণ্ঠস্বর কাঁপতে শুরু করলো। সে গলা ধরে, অত্যন্ত কষ্টের সঙ্গে বললো “তান্বী… তুই তাহলে ভুল জানিস। তোকে ভুল বোঝানো হয়েছে। আসলে এলিনা আর বেঁচে নেই, বোন!“

তান্বী তখনো বিশ্বাস করতে পারলো না। জাভিয়ানের দেওয়া আশ্বাস তার মনে গেঁথে আছে। সে রাগান্বিত হয়ে বললো “ভাইয়া, তুমি আমার সাথে নাটক করছো কেন? কী দরকার এমন মিথ্যা বলার?“

ফারহান আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। তার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তে লাগলো। সে তখন চরম যন্ত্রণার সঙ্গে সব খুলে বললো। সে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে “এলিনাকে ওই রিকার্দো পাচার করে দিয়েছিল…দুর্ভাগ্যবশত সেই জাহাজ ব্লাস্ট হয়ে যায়।এলিনাকে আমি বাঁচাতে পারিনি! তান্বী।“

ফারহানের গলা কাঁপছিল, চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল—যা দেখে তান্বী বুঝলো, ফারহান সত্যি বলছে। তার পুরো শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেল। জাভিয়ানের মিথ্যা তখন তার কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠলো। সে তখন অবাক ও হতাশ কণ্ঠে বললো “কিন্তু… জাভিয়ান যে বলেছে, সে বাবা-মা আর এলিনা আপুকে ওই রিকার্দোর হাত থেকে ছাড়িয়ে এনেছে…।“

তান্বীর হতবাক প্রশ্ন শুনে ফারহান এবার দু’হাত দিয়ে তার হাত চেপে ধরলো। তার চোখে তখন শুধু কান্না নয়, এক তীব্র আর্তি।ফারহান ভাঙা কন্ঠস্বরে বললো “জাভিয়ান তোকে মিথ্যা বলছে, বোন! সে তোকে শুধু ভুল বোঝায়নি, সে তোকে আটকে রাখার জন্য আমাদের নিয়ে মিথ্যার জাল বুনেছে।“

সে তান্বীর হাত ধরে টানল, চোখে করুণ মিনতি নিয়ে বললো “তুই চল আমার সাথে! আমাদের বাবা-মা অনেক অসহায়। তাদের সাথে এই মুহূর্তে কেউ নেই। না এলিনা, না আমি। তোকে দরকার তাদের, তান্বী! তোর মতো একটা অবলম্বনই এখন তাদের একমাত্র শক্তি।“

ফারহানের কথাগুলো তান্বীর মনের ভেতরের কঠিন আবরণ ভেঙে দিলো। লুসিয়ার কিডন্যাপের চেয়েও ভয়ঙ্কর সত্য এখন তার সামনে—এলিনা আর নেই, এবং জাভিয়ান তাকে এত বড় মিথ্যা বলেছে। জাভিয়ানের শীতলতা, তার নিরাসক্ত ক্ষমতা—সবকিছুর আড়ালে লুকিয়ে থাকা সেই অন্ধকার সত্যটা এবার তার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠলো। তার চোখে তখন বাবার অসহায় মুখ আর মায়ের নীরব কান্না ভেসে উঠলো।
তান্বীর শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো।

ফারহানের মুখ থেকে যখন এলিনার মৃত্যুর খবরটা বেরিয়ে এলো, সেই শব্দগুলো যেন বোমার মতো ফেটে পড়লো তান্বীর কানে। মুহূর্তের মধ্যে তার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো। নিজের কানকে সে বিশ্বাস করতে পারছিল না; মনে হচ্ছিল এটা এক দুঃস্বপ্ন, এক্ষুনি ভেঙে যাবে।

তান্বীর মস্তিষ্ক দ্রুত হিসেব কষতে শুরু করলো। এক মুহূর্তে মনে হলো, হয়তো সে ভুল শুনেছে—ফারহান মিথ্যা বলছে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়লো—জাভিয়ান! তাহলে জাভিয়ান তাকে এতগুলো দিন একটা মিথ্যার মধ্যে রেখেছিল! এত বড় একটা ভয়ঙ্কর খবর সে তার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখলো?

এই নির্মম প্রতারণার ধাক্কা সামলাতে না পেরে তান্বী ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছিল, কিন্তু ভেতরে যেন কোনো আওয়াজ নেই। তার হৃদপিণ্ড যেন পাথরের মতো ভারী ও কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। হাউমাউ করে কান্না করার তীব্র ইচ্ছে হচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু মানুষ বোধহয় এমন এক চূড়ান্ত আঘাতের সময় স্তব্ধ হয়ে যায়। তান্বী তখন সেই কঠিন, নীরব স্তব্ধতাতেই ডুবে গেলো।

তান্বীর নীরব স্তব্ধতা দেখে ফারহান দ্রুত এগিয়ে আসলো। তার চোখে তখন শুধু ভাইয়ের করুণ আকুতি। সে ফ্লোরে বসে থাকা তান্বীকে ধরে উঠানোর চেষ্টা করলো। সে কাঁপা হাতে তান্বীকে ধরে তুলে বললো “চল তান্বী, আমার সাথে ফিরে চল। প্লিজ! ওই জাভিয়ান তোর জীবন শেষ করে দেবে!“

ফারহান তান্বীকে বুকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করতেই, তান্বী প্রচণ্ড শক্তিতে এক ধাক্কা মারলো। ফারহান কিছুটা দূরে ছিটকে গেলো। তান্বীর চোখে তখন চরম ঘৃণা।সে হিংস্রভাবে কেঁপে উঠে, দাঁতে দাঁত চেপে বললো “আমাকে ধরবে না, ভাইয়া! আমি তোমাকে ঘৃণা করি! এতদিন আমি তোমাকে একটুও ঘৃণা করতে পারিনি, কিন্তু আজ… আজ যখন আমার বোনটা—আমার নিরীহ বোন যার কোনো পাপ ছিল না, যার কোনো অপরাধ ছিল না—আজ তাকে শাস্তি পেতে হলো! শুধু মাত্র তোমার পাপের জন্য! তোমার করা অপরাধের শাস্তি আমার পুরো পরিবার কেন পেলো?“

ফারহানের মাথা নুইয়ে গেল। তার মুখ চরম অনুশোচনায় কালো হয়ে উঠলো। সে মাথা নিচু করে, কষ্টে বিধ্বস্ত কণ্ঠে বললো “আমি জানি বোন! আমি অনেক বড় পাপী। এই পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ সন্তান, সবচেয়ে খারাপ ভাই আমি। কিন্তু তোর যা শাস্তি দেওয়ার, আমাকে দিস… কিন্তু এখান থেকে চল, প্লিজ! ওই জাভিয়ানের কাছে আমি তোকে থাকতে দেবো না। এক বোনকে হারিয়েছি, তোকে হারাতে পারবো না!“

তান্বী তখন চিৎকার করে উঠলো, প্রতিটি শব্দে তীব্র আঘাত ছড়িয়ে পড়লো “সাট আপ! আমাকে বোন বলে ডাকবে না! আমি তোমার বোন না! আর হ্যাঁ, আমি ওখানেই থাকবো! জাভিয়ানের কাছেই থাকবো! কারণ ওই তো আমাকে মিথ্যা বলেছে ঠিকই, কিন্তু তোমার চেয়ে দোষী বা অপরাধী নয়! আমার সামনে তুমি আর কোনোদিন তোমার চেহারা দেখাবে না! তুমি রাস্তায় মরে পড়ে থাকলেও আমার আর আফসোস কোনো হবে না!“

ফারহানের চোখ থেকে আরও জল গড়িয়ে পড়লো। সে মাথা নিচু করে ভাঙা গলায় কাতর কণ্ঠে বললো “আমি মরে গেলেই ভালো হতো… আমি জানি এলিনার জায়গায় আমার মরা উচিত ছিল। তুই আমাকে মেরে ফেল, তবুও জাভিয়ানের কাছে থাকিস না।“

তান্বী তখন ঠোঁট বেঁকিয়ে, বিদ্রূপাত্মক সুরে বললো “কেন থাকবো না? তোমার সাথে যাওয়ার চাইতে ওই জাভিয়ানের কাছেই আমি নিরাপদ! ওই তো আমাকে কোনো টর্চার করে না! তাহলে কেন যাবো আমি?“

ফারহান এবার রাগে ও কষ্টে গর্জে উঠলো। সে চরম সত্যটা উদঘাটন করলো। সে চোখ লাল করে, তীব্র ঘৃণা নিয়ে বললো “তার মানে তুই ওই জাভিয়ানের কাছে যাবি? যে কিনা তোর বাবাকে তোর চোখের সামনে গু/লি করেছে!

তান্বী থমকে গেল, কিন্তু তার দৃঢ়তা ভাঙলো না। তার সমস্ত রাগ তখন ফারহানের ওপর কেন্দ্রীভূত। সে কষ্টে ফিসফিস করে বললো “ হ্যাঁ, যাবো! তবু তোমার মুখ দেখতে চাই না! চলে যাও আমার সামনে থেকে!“

ফারহান এবার হতাশ হয়ে বললো “আচ্ছা ঠিক আছে! তাহলে চল, তোকে জাভিয়ানের বাড়িতে পৌঁছে দেই।“

তান্বী এক ধাপ পিছিয়ে গিয়ে, চোখে দৃঢ় সংকল্প আর ভয়ংকর হুমকি নিয়ে বললো “নো ওয়ে! আমি একাই যাবো! আমার সাথে আসার চেষ্টা করবে না! তাহলে আমি সুইসাইড করবো!“

এই চরম হুমকি দিয়ে তান্বী ঘুরে দাঁড়ালো। ফারহান তখন বিধ্বস্ত অবস্থায় তার চলে যাওয়া দেখছিল।সে জানে, এই মুহূর্তে তার বোনকে অনুসরণ করা মানে তাকে চিরতরে হারানোর ঝুঁকি নেওয়া।

ফারহানকে চরম হুমকি দিয়ে তান্বী যখন দ্রুত রাস্তার কিনার ধরে হাঁটতে শুরু করলো, তখনই তার খেয়াল হলো—তার গাড়িটি সেখানে নেই। লুসিয়া, তার বয়ফ্রেন্ডের কাছে পৌঁছানোর তাগিদে, অপেক্ষা না করে সেই গাড়ি নিয়েই চলে গেছে।

এখন তান্বী সম্পূর্ণ একা। মেক্সিকো সিটির ওই জনমানবশূন্য শিল্পাঞ্চলের রাস্তায় তখন পড়ন্ত বিকেল। আকাশ গাঢ় ধূসর মেঘে ঢাকা, মনে হচ্ছে এক্ষুনি বৃষ্টি নামবে। প্রায় অন্ধকার হয়ে আসা সেই রাস্তার কিনার ধরে তান্বী পাথরের মতো হেঁটে চলতে লাগলো। তার লক্ষ্য ভিলা এস্পেরেন্জা, কিন্তু তার মন তখন অন্য কোথাও।

কিছুক্ষণ বাদেই টিপ টিপ করে বৃষ্টি শুরু হলো। ধীরে ধীরে বৃষ্টির ফোঁটা বাড়লো, আর তান্বী সেই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই হাঁটতে লাগলো। তার কাছে এখন শরীরের ভেজা বা রাস্তার কষ্ট তুচ্ছ।

বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা যেন তার মনে এলিনার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি স্মৃতিকে জাগিয়ে দিচ্ছিল। মনে পড়লো, সকালে তান্বী স্কুলে যেতে চাইতো না। কত বায়না, কত আলস্য! তখন তার বোন এলিনা তাকে কোলে করে উঠিয়ে দিতো, আদর করে রেডি করে দিতো। নিজের হাতে এলিনা তার চুল বেঁধে দিতো, ব্যাগ গুছিয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে দিতো—প্রতিটি কাজ করতো নিঁখুত ভালোবাসায়।

আরেকটি স্মৃতি এসে আঘাত হানলো। একবার তান্বী পাশের বাড়ির একটা মেয়ের হাতে একটি বড় পুতুল দেখে তাকিয়ে ছিলো। পুতুলটা নেওয়ার তীব্র ইচ্ছা ছিল তার, কিন্তু তখন তাদের সংসারে ছিল চরম অভাব-অনটন। তান্বী জানতো, বায়না করার কোনো উপায় নেই।

কিন্তু তান্বীর জন্মদিনে, এলিনা নিজের সবটুকু জমানো টাকা দিয়ে সেই পুতুলটি কিনে এনেছিল। এলিনার মুখটা মনে পড়লো—সেই হাসি, সেই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। আর আজ সেই এলিনা নেই! এই জঘন্য সত্যটা যেন বৃষ্টির পানির সাথে মিশে তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছিল। ফারহানের পাপ—ফলস্বরূপ সে তার বোনকে হারিয়েছে। তান্বী শুধু হাঁটছিল। তার গন্তব্য ছিল নিশ্চিত, কিন্তু মন তখন শোক, ঘৃণা এবং তীব্র প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছিল।

এলিনার স্মৃতিগুলোর তীব্র আঘাত আর।জাভিয়ানের মিথ্যা আর ফারহানের করা জঘন্য অপরাধেথ যন্ত্রণায় তান্বীর শরীরের সমস্ত শক্তি নিস্তেজ হয়ে এলো। সে আর হাঁটতে পারলো না।

রাস্তার কিনার ধরে চলতে চলতে সে হঠাৎই ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো। আকাশ তখনো কাঁদছিল, আর সেই বৃষ্টির মধ্যেই তান্বী এবার নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না। তার ভেতরের সমস্ত নীরব শোক যেন এবার বাঁধ ভেঙে বেরোলো। সে একপ্রকার শুয়ে পড়ে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। তীব্র, অসহায় কান্না। তার এই কান্না ছিল শুধু এলিনার জন্য আর ফারহানের পাপের ভারে বিধ্বস্ত হওয়ার কান্না। শহরের জনমানবহীন সেই রাস্তার কিনার ধরে বৃষ্টিতে ভিজে তার আর্তনাদ যেন বাতাসের সঙ্গে মিশে যাচ্ছিল। তার শরীর তখন কাদামাটি আর জলে মাখামাখি, কিন্তু তার ভেতরের যন্ত্রণা ছিল বহুগুণ বেশি গভীর।
.
.
.
ভিলা এস্পেরেন্জায় ফিরে জাভিয়ান কাতারিনার কাছ থেকে জানতে পারলো যে তান্বী লুসিয়াকে ফিরিয়ে আনতে বেরিয়ে গেছে। সেই মুহূর্তে জাভিয়ানের চোখ কঠিন হয়ে উঠলো—তান্বীর সাহস এবং তার প্রতি ফারহানের প্রভাব, দুটোই তাকে ক্ষিপ্ত করলো। সে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে, নিজের গাড়ি নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়লো।

তখন ঝুম বৃষ্টি। রাস্তার আলো আর গাড়ির হেডলাইট সেই অন্ধকার আর বৃষ্টিকে ভেদ করতে পারছিল না। তীব্র গতিতে গাড়ি চলতে চলতে হঠাৎ কিছু দূর যাওয়ার পর জাভিয়ান দেখল—পাশের রাস্তার কিনার ধরে কাদামাটির ওপর একটি মেয়ে বসে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে তার অবস্থা শোচনীয়। প্রথমে তার মনে হলো এটা তান্বী নাকি অন্য কেউ।

জাভিয়ান সতর্ক হলো। সে কিছুটা দূরে গাড়ি থামিয়ে লুকিং গ্লাসে তাকাল। একবার নিশ্চিত হতেই, কোনো দেরি না করে গাড়ির দরজা খুলে দ্রুত বেরিয়ে আসলো।

বৃষ্টিতে ভিজে জবুথবু হয়ে থাকা তান্বীর কাছে আসতেই জাভিয়ান আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। তার কণ্ঠে স্পষ্ট ক্রোধ। সে তীব্র ও কঠিন কণ্ঠে বললো “এখানে বৃষ্টিতে এভাবে কেন বসে আছো? কে তোমাকে এখানে বসতে বলেছে? আর আমাকে না জানিয়ে ফারহানের ওখানে গিয়েছিলে কেন?

কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফোলা তান্বী ধীরে ধীরে জাভিয়ানের দিকে তাকালো। তার চোখে এখন আর ভয় নেই, আছে শুধু এক শীতল ঘৃণা। তার কণ্ঠস্বর ছিল ভাঙা, কিন্তু দৃঢ়। সে চোখে স্থির দৃষ্টি রেখে, ধীরে কিন্তু কঠিন কণ্ঠে বললো “আপনি আমাকে মিথ্যা কেন বলছিলেন? কেন এত বড় একটা সত্যি আমার কাছ থেকে লুকিয়ে গেলেন?“

জাভিয়ানের মুখে এক মুহূর্তের জন্য কাঠিন্য এলো। সে বুঝতে পারলো, ফারহান নিশ্চিত কোনো সত্যিটা ফাঁস করেছে। জাভিয়ান তখন স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে, ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো “কী হয়েছে? কিসের কথা বলছো?“

তান্বী তখন চিৎকার করে, সমস্ত শক্তি দিয়ে বললো “আমার বোনটা যে মারা গেছে—সেটা আপনি কেন আমাকে বলেননি? কেন মিথ্যা বলে আমাকে এখানে আটকে রেখেছিলেন?“

জাভিয়ান চারপাশে একবার তাকাল। বৃষ্টি তখনো ঝরছে। জাভিয়ান স্বীকার করে নিয়ে, কিন্তু যুক্তির সঙ্গে বললো “সেটা জানালে তুমি আমার সাথে মেক্সিকোতে আসতে না। আমি জানতাম।“

তান্বী উন্মত্তের মতো হেসে, দু’হাতে কাদা ছুঁড়ে দিয়ে বললো “আপনি কী আমার কষ্ট বুঝবেন? আপনজন হারানোর যন্ত্রণা! কি বুজবেন? আপনার কেউ তো আর কখনো মরেনি! তাই বুঝবেনও না!

জাভিয়ান এবার তাকে টেনে তোলার জন্য হাত বাড়াল।
তারপর কঠোর, আদেশ দেওয়ার ভঙ্গিতে বললো “যা বলার, বাড়িতে গিয়ে বলবে। বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লাগবে। গাড়িতে ওঠো!

তান্বী হাত সরিয়ে দিয়ে, বিদ্রোহী কণ্ঠে বললো “যাবো না আমি কোথাও! এখানেই থাকবো! এই রাস্তায় পড়ে থাকবো!“

তান্বী যখন কোনোভাবেই গাড়িতে উঠতে রাজি হলো না, জাভিয়ান আর এক মুহূর্তও নষ্ট করলো না। সে জোর করে তান্বীকে কোলে তুলে নেওয়ার আগেই, তান্বী উন্মত্তের মতো জাভিয়ানের হাত ছাড়িয়ে রাস্তার দিকে ছুটতে চাইলো—তীব্র গতিতে আসা গাড়ির নিচে নিজেকে ছুঁড়ে দিতে।

জাভিয়ান বিদ্যুৎ গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো আর তান্বীকে জাপটে ধরলো। দুজনে কাদামাটি ও বৃষ্টির মধ্যে টাল খেতে খেতে রাস্তার কিনারে ফিরে এল।

জাভিয়ান হাঁপাতে হাঁপাতে, চিৎকারের মতো কণ্ঠে বললো “কী করছিলে তুমি? পাগল হয়ে গেছো?

তান্বী হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো “সুইসাইড করতে যাচ্ছিলাম! আমার বোন বেঁচে নেই এই পৃথিবীতে! আমারও অধিকার নেই বাঁচার!

তান্বীর এই চরম হতাশা ও মৃ*ত্যুকামনা জাভিয়ানের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিলো।সে ক্ষিপ্ত, রাগ এবং এক গভীর যন্ত্রণার মিশ্রণে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারালো জাভিয়ান সর্বশক্তি দিয়ে তান্বীর গালে কঠিন এক থাপ্পড় মারলো।

থাপ্পড়ের শব্দে বৃষ্টির শব্দ চাপা পড়লো। তান্বী কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে জাভিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর ধীরে ধীরে তার হাত তার স্পর্শকাতর গালের ওপর রাখলো এবং নিচু স্বরে ফুঁপিয়ে উঠলো। তার কান্না একপ্রকার হিচকি ওঠার মতো হয়ে গেল।

জাভিয়ানের চোখে তখন নিজের কাজের জন্য এক তীব্র অনুশোচনা। জাভিয়ান চোখে অনুতপ্ত নিয়ে, ভাঙা কণ্ঠে বললো “আম…সরি।“

‘সরি’ শব্দটি তার মুখ থেকে বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই, তান্বী আকস্মিকভাবে জাভিয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তার সমস্ত রাগ, ঘৃণা এবং চরম শোক যেন জাভিয়ানের বুকে ঠেলে দিতে চাইল। জাভিয়ানের বুকে মাথা গুঁজে সে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো—যেন এই বাঁধনটি না থাকলে সে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।

জাভিয়ান তখন পাথর হয়ে গেলো। এমন তীব্র আবেগ, এমন ঘনিষ্ঠতা সে কখনোই অনুভব করেনি। হঠাৎই তার বুক জুড়ে এক তীব্র ব্যথা শুরু হলো। ঠিক যেমনটা অনেক বছর আগে একবার তার হয়েছিল—যা তার অতীতকে মনে করিয়ে দেয়। তার প্রায় শ্বাসকষ্টের মতো শুরু হলো। জাভিয়ান অনুভব করলো, তার ভেতরের কঠিন আবরণটা যেন ভেঙে যাচ্ছে। সে কোনোমতে নিজেকে সামলে নিলো এবং ধীরে ধীরে তান্বীর পিঠে হাত রাখলো।

চলবে………

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply