Golpo ডার্ক রোমান্স ডিজায়ার আনলিশড

ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ১৪(প্রথমাংশ+শেষাংশ)


ডিজায়ার_আনলিশড

✍️ সাবিলা সাবি

পর্ব-১৪ (প্রথমাংশ)

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। শহরের আকাশে ম্লান আলো ছড়িয়ে পড়েছে, ঠিক সেই সময়েই মেইলস্ট্রোম খবর পেলো—রিকার্দোকে যে খু/ন করেছে, সে আসলে নাইট রেভেন–এর লোক। খবরটা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার চোখ রক্তাভ হয়ে উঠলো। এক মুহূর্ত দেরি না করে নিজেই গাড়িতে উঠলো। ইঞ্জিনের গর্জনে চারপাশ কেঁপে উঠলো, আর মেইলস্ট্রোম ছুটে বেরিয়ে গেলো রাস্তায়।

কিন্তু অচিরেই অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলো। হঠাৎ এক বিশাল ট্রাক তার গাড়ির সামনে এসে পড়লো। যেন ইচ্ছে করেই ট্রাকটা তাকে ধাক্কা মারতে চাইলো। প্রচণ্ড শব্দে ধাক্কা লাগলো, গাড়িটা কেঁপে উঠলো।

মেইলস্ট্রোমের গাড়ি আর ট্রাকের সংঘর্ষে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের মতো শব্দ হলো। স্টিয়ারিং চেপে ধরলেও ধাক্কা সামলাতে পারলো না। গাড়িটা কয়েক পাক ঘুরে রাস্তার একপাশে আছড়ে পড়লো। কাঁচ ভেঙে ছিটকে গেলো চারদিকে, লোহার টুকরো ছড়িয়ে পড়লো রক্তের সঙ্গে মিশে।

পেছনের গাড়ি থেকে নামা তার গ্যাংস্টাররা ছুটে এলো। চোখে মুখে আতঙ্ক। মেইলস্ট্রোম তখন অচেতন, শরীর রক্তে ভিজে যাচ্ছে। গ্যাংস্টাররা চিৎকার করে উঠলো—
“বস! বস চোখ খুলুন!”

অবস্থা গুরুতর বুঝে তারা দ্রুত তাকে তুলে নিলো। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সাইরেন বাজাতে বাজাতে অ্যাম্বুলেন্স এগিয়ে এলো। তড়িঘড়ি করে মেইলস্ট্রোমকে স্ট্রেচারে তুলে নিয়ে গেলো হসপিটালের পথে।

হসপিটালের আইসিইউতে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তাররা দ্রুত চারপাশে জড়ো হলো। রক্তচাপ প্রায় নেই বললেই চলে। সারা শরীরে কাটা-ছেঁড়া, ভাঙা হাড়, আর ভেতরের আঘাত এতটাই ভয়ঙ্কর যে মুহূর্তে বোঝা গেলো— মেইলস্ট্রোমের জীবন এখন সূক্ষ্ম সুতোয় ঝুলছে।

গ্লাসের ওপাশে তার গ্যাংস্টাররা দাঁড়িয়ে। মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। তাদের মনে শুধু একটাই প্রশ্ন—যদি বস না বাঁচে, তাহলে নাইট রেভেনের খেলা কে সামলাবে?

মেইলস্ট্রোমকে আইসিইউতে আছে খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই ইসাবেলার মুখের রঙ উবে গেল। দ্রুতই তিনি হাসপাতালে পৌঁছে গেলেন—চোখে লাল অগ্নি, গলার স্বরে তীব্র কষ্টের আটচল। লম্বা কালোন কোটটা ঝোলানো তার গায়ে,উচ্চকণ্ঠতে ইসাবেলা এক নজরেই পুরো হসপিটালের বাতাবরণ বদলে দিলেন।

গ্যাংস্টাররা ঘরভর্তি দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান জানালেন, কিন্তু ইসাবেলার দিকে তাদের কণ্ঠে ভয় পরিলক্ষিত—কারণ তিনি কেবল মা নন, মাফিয়া কুইন; মর্মে থাকলে প্রতিশোধ যেন তার জন্মস্বরূপ। পুরোনো দিনের মতই তিনি ঠাণ্ডা চোখে সবাইকে এক এক করে বললেন—

—“বলো, কে আমার ছেলেকে মারার চেষ্টা করল? ওদের আনো—আমার সামনে হাজির করো। আমি এক এক করে তাদের জবাব নেব।”

চেয়ারগুলোতে একেবারে নিস্তব্ধতা নেমে এলো। এক সিনিয়র লোক ধীর করে মাথা নামিয়ে আতংকে ঢেউ খেলানো কণ্ঠে বলল——“ম্যাম, সেই ট্রাকচালক মারা গেছে—রাস্তায় ধ্বংসাবশেষে পাওয়া গেছে। ঠিকমতো প্রমাণ নেই। তবে অনুমান করা হচ্ছে, এটা নাইট রেভেনের কোনো লোকের কাজ।”

ইসাবেলার চোখ তখন আরও ধিক্কারে জ্বলে উঠল। মুখে কড়া, ধোঁয়াশাহীন কণ্ঠে বললেন——“নাইট রেভেন? কে এই নাইট রেভেন? ওকে আমার সামনে আনো—আমি তার সঙ্গে দেখা করব।”

লোকটি ধীর গলায় জানাল——“ম্যাডাম, আজ পর্যন্ত কাউকেই ওনার মুখ দেখায়নি। ওনার একান্ত পরিচিতরা ছাড়া কেউ তাকে চিনতে পারবেনা।”

ইসাবেলা হাঁটতে শুরু করলেন, মন্দ্রগর্জনে বললেন—
—“আমি মাফিয়া কুইন ইসাবেলা। আমারও দেখার অধিকার আছে। যদি আমি চাই, পুরো মেক্সিকোই আমি ভেঙে দিতে পারি—আরও বড় কিছু করার দরকার পড়লে করব। আমার ছেলের ওপর যে আঘাত এসেছে, তার হিসাব সবাইকে দিতে হবে। এখনি ব্যবস্থা নাও।”

তার কথায় ঘরটা কেঁপে উঠল—তার লোকেরা বুঝে গেল যে আজ রাতটায় আর কোনো আলাপ-আলোচনা নয়; সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়। ইসাবেলার চোখে প্রতিশোধের অদমনীয় আগুন—সে কাউকে আর ছাড়বে না।

খবর ছড়াল মুহূর্তেই শহরটা কাঁপতে লাগল। টিভির লাইভ ব্যানার লাল-সাদা করে ঝলমল করতে লাগল — “বড় ধাক্কা: মেইলস্ট্রোম অপারেশনের রুমে মৃত্যু সজ্জায়”।

ক্যামেরার লাইভফিডে হাসপাতালের মূল গেট, গভীর রাতে আলোর চিকচিক, এবং জানালা দিয়ে ভেসে ওঠা আইসিইউ-র লাইট—সব মিলিয়ে যেন এক ধাক্কার মত ছড়িয়ে পড়ল। নিউজঅ্যাংকররা চট করে বিক্ষিপ্ত তথ্য যোগাড় করতে লাগল; সোশ্যাল মিডিয়ায় #MailstromTrending হয়ে গেলো।

রাস্তাঘাটে মানুষ টালি-টিপসির মত গুঞ্জন তুলল—একদিকে সহানুভূতি, অন্যদিকে কৌতূহল। ব্রেকিং নোটিফিকেশন ঘরে ঘরে পৌঁছাল; পত্রিকার হেডলাইন বড় বড় করে টেনে দিলো—“মাফিয়া বসের জীবনে অনিশ্চয়তা”। টিভি-স্টুডিওগুলোতে বিশেষ বিশ্লেষণ শুরু হলো—শত্রুদের কৌশল, ক্ষমতার শূন্যতা, ভবিষ্যৎ ভ্যাকুম—সব আলোচনা চলে একসাথেই।
.
.
.
.

অন্যদিকে হাসপাতালের করিডরে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। অপারেশন থিয়েটারের দরজা থেকে ডাক্তার বেরিয়ে এসে গম্ভীর কণ্ঠে জানালেন—

—“অপারেশন শেষ হয়েছে। রোগী এখনো অচেতন অবস্থায় ঘুমাচ্ছে। আঘাত গুরুতর, হাত–পা ভেঙে গেছে। সুস্থ হতে সময় লাগবে।”

খবরটা শোনার পর থেকেই সাইফ চৌধুরী অস্থির হয়ে পায়চারী করছেন। বাকিরা নিস্তব্ধ মুখে বসে আছে। জাভিয়ান আর তান্বীও সেখানে উপস্থিত।

তান্বী কাঁচের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখল মার্কোকে—শয্যায় শুয়ে আছে, সারা শরীরে ব্যান্ডেজ, হাত–পা প্লাস্টারে মোড়ানো। তার বুকের ভেতরটা হঠাৎ কেমন হালকা কেঁপে উঠল। সে অচেতনভাবে জানালার দিকে আরও একটু ঝুঁকতেই জাভিয়ান এসে তার হাত টেনে ধরল।

—“চলো, বাড়িতে যাবো।”

তান্বী অবাক হয়ে তাকাল।—“কি বললেন? সবাই বসে আছে, আপনার ভাইয়ের অবস্থা এত খারাপ… আর এখন আমি বাড়ি যাবো?”

জাভিয়ানের কণ্ঠ শক্ত হলো।—“ও আমার ভাই, তোমার নয়। তোমার এত দরদ কেনো উথলে পড়ছে?”

তান্বীর চোখ চকচক করে উঠল।—“কারণ উনি আপনার চেয়ে ভালো। আচরণে, ব্যবহারে—সবকিছুতে আপনার থেকে অনেক বেটার।”

জাভিয়ান ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল—“লাস্টবার বলছি, বাড়ি চলো।”

ঠিক তখনই এগিয়ে এলেন জাভিয়ানের মা।—“কি হয়েছে, জাভি? ওকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছো কেনো?”

জাভিয়ান গম্ভীর মুখে উত্তর দিল——“মম, আমি বাসায় ফিরতে চাই। আমার খুব ক্লান্ত লাগছে।”

মা অবাক হয়ে তাকালেন।—“মার্কো হাসপাতালে জীবন–মৃত্যুর লড়াই করছে, আর তুমি ভাইকে ফেলে বাড়ি যাবে?”

জাভিয়ান গলা নামিয়ে বলল——“মা, আমি খুব টায়ার্ড। মার্কো এখন সেফ।বাট আমাকে রেস্ট নিতে হবে।”

মা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন——“ঠিক আছে, তুমি যেতে চাইলে যাও। কিন্তু তান্বী এখানে থাকুক। ওকে কেন টানছো?”

জাভিয়ান রাগী চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে আঙুল তুলল।—“আমার ওয়াইফ সেখানেই থাকবে, যেখানে আমি থাকব। আমি ওকে ছাড়া ঘুমোতে পারি না, ওকে জড়িয়ে না ধরলে আমার ঘুম আসেইনা।”

এই কথা শুনে জাভিয়ানের মায়ের মুখ লাল হয়ে গেল লজ্জায়। তিনি আর কোনো কথা বললেন না, ধীরে পাশে সরে গেলেন।

তান্বীর চোখে ক্ষোভ জমে উঠল।—“ছিঃ! আপনি কি করে এমন অসভ্য কথা আপনার মায়ের সামনে বলতে পারেন? আপনার এই আচরণে এখন ওনার চোখের দিকে তাকাতেও আমার লজ্জা লাগবে।”

কক্ষজুড়ে নীরবতা নেমে এলো। তান্বীর কণ্ঠে ক্ষোভ, জাভিয়ানের ঠোঁটে তীব্র বিদ্রূপের হাসি—সব মিলিয়ে চারপাশে অদ্ভুত চাপা উত্তেজনা ভর করল।

তান্বী জোরে চেঁচিয়ে বলল, “আপনি গেলে যান — আমি যাবো না!”

জাভিয়ান আর কোনো উত্তর দিল না। হঠাৎ সে তান্বীর দিকে এগিয়ে এসে এক ঝটকায় তাকে কাঁধে তুলে নিল। হাসপাতালের করিডর জুড়ে থাকা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল—সাইফ চৌধুরী, জাভিয়ানের মা, চাচা আর লুসিয়া; লুসিয়ার চেহারা একেবারে লাল হয়ে উঠল রাগে।

তান্বী অটলভাবে ছটফট করতে থাকলো, “প্লিজ—আমাকে নামান! আমি স্বইচ্ছায় যাবো!”

জাভিয়ান কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর না দিয়ে তান্বীকে নরম করে নামিয়ে দিল। তান্বী গর্জনে ফুঁসতে ফুঁসতে বেরিয়ে এসে হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে পড়লো। তার বুক ধুকপুক করছিল—রাগ, লজ্জা আর অভিমান মিশে একরকম অস্থিরতা।

কিছুক্ষণ পর পার্কিং লট থেকে জাভিয়ানের গাড়ি চলে এলো। সে দরজা খুলে তান্বীকে ডাকলো। তান্বী গাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ল। দু’জনের চোখে চোখ পড়তেই তান্বী ঠোঁট বেঁধে বলল,—“আপনার মুখ থেকে এতো নোংরা, বাজে অসভ্য কথা বের হয় কিভাবে?”

জাভিয়ান সে সরাসরি স্বীকার করে বলল, হালকা কণ্ঠে, “কারন আমার লিবিডো সবসময় হাই লেভেলে থাকে, তাই কন্ট্রোল করতে না পেরে মুখ চালাই।”

তান্বী এক মুহূর্ত থেমে রেগে উঠল, তীব্র তীব্র ভঙ্গিতে বলল,—“মানুষের বিপি হাই হয় শুনেছিলাম, এখন অদ্ভুত তথ্য জানলাম !”

জাভিয়ান হঠাৎ তান্বীর দিকে ঝুঁকে এসে বললো
—“দ্যান—কল মি ‘টিচার’ আই উইল টিচ ইউ এভরিথিং প্র্যাকটিক্যালি ।”

তান্বীর চোখ রাগে ঝলসে উঠল। জাভিয়ান যখন মুখটা কাছে আনল, সে হঠাৎ দু’হাত দিয়ে তাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।

—“গেট লস্ট!” তান্বীর গলা কাঁপছিল রাগ আর অপমানে।

গাড়ির ভেতর মুহূর্তের জন্য নিস্তব্ধতা নেমে এলো। জাভিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে রইল—চোখে রাগ নয়, বরং এক অদ্ভুত চ্যালেঞ্জের দৃষ্টি।

তান্বী ঠোঁট কামড়ে জানালার বাইরে তাকাল, যেন তাকে আর দেখতে চাইছে না। কিন্তু বুকের ভেতরটা ঢিপঢিপ করছিল—রাগে, ভয়ে, নাকি অজানা টানে, সেটা সে নিজেও বুঝতে পারছিল না।

গাড়ি তখনো হাসপাতালের গেট পেরিয়ে অন্ধকার রাস্তায় এগিয়ে চলেছে।
.
.
.
.
হাসপাতাল থেকে ফিরতেই তান্বী ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোফায় বসে পড়ল। জাভিয়ান সরাসরি রুমে ঢুকে শাওয়ারের দিকে গেল। তান্বী ভেবেছিল, হয়তো দ্রুত বের হবে। কিন্তু মিনিট দশ… পনেরো… কেটে গেল, তারপরও কোনো সাড়া নেই।

ঘাম আর ধুলো মেখে সারাদিন হাসপাতালের দৌড়ঝাঁপে তান্বীর নিজেরও ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিল। শরীরটাও যেন কেমন ভারী হয়ে উঠছিল। শেষমেশ বিরক্তি আর অস্বস্তিতে সে উঠে বাথরুমের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল।

“আপনার… আর কতক্ষণ লাগবে?!”—তান্বী প্রথমে ধীরে ডাকল। কোনো উত্তর নেই।

সে বিরক্ত হয়ে দরজায় ধাক্কা দিল, তারপর আরো জোরে—ধপ… ধপ…

হঠাৎ দরজা খুলে গেল। সামনে দাঁড়িয়ে জাভিয়ান। শরীর ভরা সাদা সাবানের ফেনা, কোমরে শুধু একটা টাওয়েল, আর ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। চোখে অদ্ভুত এক দৃষ্টি নিয়ে সে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
—“কি হয়েছে? এত জোরে দরজা ধাক্কা দিচ্ছো কেনো?”

তান্বী ভ্রু কুঁচকে বলল,—“আমি শাওয়ার নিতে চাই। খুব অস্বস্তি হচ্ছে আমার। আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি বের হোন।”

কথা শেষ হতে না হতেই জাভিয়ান খপ করে তার হাত চেপে ধরল। ঠোঁটে একরাশ দুষ্টু হাসি খেলে গেল।
—“ওকে… তাহলে ভেতরে আসো। একসাথে শাওয়ার নেই। এতে পানির অপচয় হবে না, সময়ও বাঁচবে।”

তান্বী আঁতকে উঠে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল।—“ছাড়ুন! লাগবে না আমার শাওয়ার।আপনার যতক্ষণ ইচ্ছা ভেতরে থাকুন। দরকার হলে বারথরুমেই ঘুমান!”

সে হাত টেনে নিলো জোরে, চোখে রাগ আর লজ্জার ঝিলিক।

জাভিয়ান তখনো দাঁড়িয়ে রইল ভেজা শরীর নিয়ে, হাসি মুছে না গিয়ে আরও গভীর হলো তার ঠোঁটে।
.
.
.

অনেকক্ষণ পরে জাভিয়ান শাওয়ার সেরে বের হলো। ভেজা চুল থেকে এখনো পানি পড়ছে, আর শরীর থেকে গরম বাষ্প বেরোচ্ছে। সে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছিল, এমন সময় সোফায় বসা তান্বী আস্তে করে মুখ তুলল।

গলায় চাপা কম্পন নিয়ে বলল,—“আমার বাবা-মা আর এলিনা আপাকে দেখতে ইচ্ছে করছে… প্লিজ একটা ব্যবস্থা করে দিন দেখার। আমি ওদের খুব মিস করছি।”

জাভিয়ান তোয়ালে ফেলে আয়নার সামনে দাঁড়াল। নিজের কণ্ঠে দৃঢ়তা রেখে বলল,—“হ্যাঁ, দেখা হবে। কিন্তু এখন না… দু’দিন পর।”

কথাটা যেন ঠাণ্ডা পানির মতো গিয়ে বিঁধল তান্বীর বুকে। সে কিছুই বলল না, শুধু চোখ নামিয়ে নিল। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল, যেন আর কোনো তর্কে যেতে চায় না।

সোজা হাঁটতে হাঁটতে শাওয়ারের ভেতরে ঢুকে গেল। দরজা বন্ধ হওয়ার মুহূর্তে তার ঠোঁট থেকে ভেসে এলো ক্ষীণ একটা দীর্ঘশ্বাস।

রুমে একা দাঁড়িয়ে রইল জাভিয়ান। আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে দেখতে ভেতরে অদ্ভুত এক অস্বস্তি খেলে গেল তার চোখে।
.
.
.
.

রাতের ডিনার শেষে হঠাৎ জাভিয়ান গম্ভীর ভঙ্গিতে বলল,—“এই মেয়ে… যাও, আমার জন্য এক গ্লাস ম্যাংগো জুস নিয়ে আসো। একদম ফ্রেশ আম দিয়ে বানাবে, আর চিনি কম দেবে।”

তান্বীর ভুরু কুঁচকে গেল। সে কিছু বলতে যাচ্ছিল—“আমি পারব না”—কিন্তু হঠাৎ থেমে গেল। চোখে এক অদ্ভুত ঝিলিক ফুটে উঠল। কোনো কথা না বলে চুপচাপ উঠে কিচেনের দিকে চলে গেল।

কিছুক্ষণ পর হাতে ট্রে নিয়ে ফিরে এলো। গ্লাস ভর্তি সোনালি ম্যাংগো জুসটা বাড়িয়ে দিল জাভিয়ানের দিকে।

জাভিয়ান গ্লাস হাতে নিয়ে হালকা হাসল, কিন্তু তার চোখে সন্দেহের ছায়া ভেসে উঠল। ধীরে ধীরে বলল,
—“হুম… আবার পয়জন-টয়জন মিশিয়ে দিয়েছ নাকি?”

তান্বী ঠোঁটে ঠাণ্ডা হাসি ফুটিয়ে উত্তর দিল,—“হ্যাঁ, মিশিয়েছি। কী করবেন?ফেলে দিবেন?আপনার ইচ্ছা হলে খান নাহলে ফেলে দিন।”

জাভিয়ান এক মুহূর্ত তার চোখের দিকে তাকিয়ে গ্লাসটা ঠোঁটে নিল। এক চুমুক দিতেই তার মুখ পাল্টে গেল। ঠোঁট, চোখ, নাক মুহূর্তেই লাল হয়ে উঠল। আসলে তান্বী জুসে মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে দিয়েছে।

তান্বীর বুক ধকধক করতে লাগল।জাভিয়ান এতোক্ষণে বুঝে ফেলেছে এবার কি করবে কে জানে!

কিন্তু জাভিয়ান গ্লাস নামাল না। বরং চোখ রক্তিম হয়ে উঠলেও এক নিঃশ্বাসে পুরো জুস গিলে ফেলল।

গ্লাসটা টেবিলে ঠাস করে রেখে হেসে উঠল, যদিও তার হাসিটা অন্যরকম ছিলো।—“আমি তো জানতাম তুমি অন্যরকম… কিন্তু এভাবে সারপ্রাইজ দেবে, সেটা আশা করিনি।”

তান্বী স্তব্ধ দাঁড়িয়ে রইল। ভেতরে ভয়, বাইরে অবাধ্যতা—দুটোই মিলেমিশে তার চোখ চকচক করছিল।

গ্লাস ফেলে রেখে জাভিয়ান ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। তার চোখ, নাক ঠোট তখনও লাল, ঠোঁটের কোণ থেকে হালকা ঘাম আর ঝালের রেখা ফুটে উঠছে। ধীরে ধীরে সে তান্বীর দিকে এগোতে লাগল।

তান্বীর বুক ধুকপুক শুরু হলো। সে আতঙ্কিত গলায় বলল,—“আপনি… এভাবে কাছে আসছেন কেনো?”

জাভিয়ানের ঠোঁটে তির্যক হাসি খেলে গেল। কণ্ঠস্বর নিচু, কিন্তু ভয়ংকর দৃঢ়,—“এতো স্পেশাল সারপ্রাইজ দিলে… তুমিও তো একটা স্পেশাল গিফট ডিজার্ভ করো।”

তান্বী পিছু হটতে হটতে দেয়ালে ঠেকে গেল। আর এক মুহূর্তও সময় দিল না জাভিয়ান—ঠাস করে তার ঠোঁট তান্বীর ঠোঁটে বসিয়ে দিল।

তান্বী আতঙ্কে জাভিয়ানের শার্টের কাঁধের কাছে খামচে ধরল, বারবার চেষ্টা করল নিজেকে ছাড়ানোর। কিন্তু জাভিয়ান তার দুই হাত একসাথে টেনে নিয়ে নিজের এক হাতের মুঠোয় আটকে ফেলল। আরেক হাত দিয়ে শক্ত করে তার চোয়াল চেপে ধরে রাখল।

চুম্বনটা ক্রমশ গভীর হতে লাগল, যেন প্রতিটি ঝাল, প্রতিটি কষ্ট, প্রতিটি রাগ তান্বীর ভেতর ঢেলে দিচ্ছে সে।

তান্বীর চোখ বুঁজে এলো, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠল… অথচ জাভিয়ান থামল না। থামবে কেবল তখনই, যখন নিজের ভেতরের আগুন নিভে আসবে, মরিচের ঝাল ধীরে ধীরে প্রশমিত হবে।

কিছুক্ষন পর জাভিয়ান ধীরে ধীরে ঠোঁট সরিয়ে নিল, আর কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালো কিন্তু চোখে তখনও দহন, ঠোঁটে নির্মম হাসি——“এবার বুঝলে, আমার আগুন নিয়ে খেলা করলে কেমন হয়?”

তান্বী হঠাৎ কেঁদে উঠলো আর তান্বীর বুকফাটা কান্না রুমজুড়ে ছড়িয়ে পড়তেই জাভিয়ান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো —“এই মেয়ে, এত কান্না করছো কেনো? আমি কি তোমাকে মেরেছি? সামান্য চুমুতে কেউ কাঁদে।”

তান্বী কাঁপতে কাঁপতে, কান্নাজড়ানো কণ্ঠে জবাব দিলো,—“আপনার কাছে এটা সামান্য হতে পারে… হ্যাঁ, সামান্যই… কারণ আপনার জীবনে তো এরকম হাজারটা মুহূর্ত এসেছে, অজস্র মেয়েকে চুমু দিয়েছেন আপনি। কিন্তু…”

সে হঠাৎ থেমে গেল, বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হলো। চোখের পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। _“কিন্তু এটা আমার প্রথম… আমার প্রথম চুম্বন… ছিলো”

শব্দের সঙ্গে সঙ্গেই তার গলা ভেঙে গেল, সে আর নিজের কান্না আটকে রাখতে পারল না। বুকের ভেতরের সব ভাঙা টুকরো যেন একসাথে চিৎকার করে উঠল, আর তান্বী হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল।

জাভিয়ান মুহূর্তের জন্য থেমে গেল। তার চোখে একরকম অবাক দৃষ্টি ফুটে উঠল। ঠোঁটের কোণে থাকা খুনসুটে হাসিটা মিলিয়ে গেল, আর তার চাহনিতে এক অজানা অস্বস্তি ভেসে উঠল—যেন সে বুঝতেই পারেনি, তার এক মুহূর্তের ‘সামান্য’ কাজ কারো জন্য কতটা গভীর আঘাত হতে পারে।

রুমের বাতাস যেন মুহূর্তেই ভারী হয়ে উঠল।
তান্বী চোখে অশ্রু নিয়ে দেয়ালের সাথে হেলে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎই জাভিয়ান পুনরায় তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রেগে গিয়ে শক্ত করে দেয়ালে চেপে ধরল।

—“কান্না কি করে থামাতে হয় তা আমার ভালো করেই জানা আছে।”

কথা শেষ না হতেই জাভিয়ান তার ঠোঁটের ওপর নিজের ঠোঁট বসিয়ে দিলো। তান্বী মরিয়া হয়ে উঠলো চুম্বন প্রতিরোধ করতে তার ঠোঁট সে শক্ত করে বন্ধ করে রাখল,আর বন্ধ চোখে অশ্রু ঝরতে লাগলো।

কিন্তু জাভিয়ানের হাত হঠাৎই তার গলায় চাপ দিলো, জোরে, এতটাই যে তান্বীর শ্বাসরোধ হয়ে এল। আতঙ্কে তার ঠোঁট ফাঁক হয়ে গেলো, আর সেই মুহূর্তেই জাভিয়ান আরও গভীরভাবে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে চুম্বনে ডুবে গেল।

তান্বীর বুক ধকধক করে উঠছে, তার শরীর অসহায়ভাবে কাঁপছে, কিন্তু জাভিয়ান নির্দয়ভাবে চেপে ধরে রেখেছে। এক অদ্ভুত আগ্রাসন, এক ধরনের উন্মত্ততা ভর করেছে তার ভেতর।

মাঝেমাঝে ঠোঁট টেনে কামড় বসাচ্ছিল, এতটাই জোরে যে তান্বীর নিঃশ্বাস কেঁপে উঠছিল। প্রতিটি কামড়ে তার চোখে জল ভরে উঠছিল, তবুও জাভিয়ান থামল না। বরং আরো গভীর, আরো তীব্রভাবে ঠোঁট খুঁজে নিল, যেন তাকে শ্বাস নিতে দেবে না।

তান্বীর হাত দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে কাঁপছিল, চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে গালে পড়ছিল, অথচ জাভিয়ানের রাফ চুম্বনের দমন থামছিল না—সেটা হয়ে উঠছিল শাসন, শাস্তি আর অদম্য অধিকার প্রকাশের এক নির্মম ছাপ।

জাভিয়ান একেবারে রাফলি তান্বীর ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে রেখেছে। তার শক্ত হাতগুলো এখনো তান্বীর কব্জি আর চোয়াল আঁকড়ে ধরে রেখেছে। তান্বী সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করতে চাইছিল, কিন্তু ঝাল, যন্ত্রণা আর শ্বাসরুদ্ধ চুম্বনের চাপ মিলিয়ে শরীর ক্রমে নিস্তেজ হয়ে পড়ছিল।

কিছুক্ষণ পর হঠাৎই তান্বীর শরীর ঢলে পড়ে। ঠোঁট খোলা অবস্থায়ই একেবারে অজ্ঞান হয়ে জাভিয়ানের বুকের উপর ভর দিয়ে ঢলে পড়ে সে।

জাভিয়ান প্রথমে অবাক হয়ে স্থির দাঁড়িয়ে রইল। এক মুহূর্ত পরে নিচু চোখে তাকাল—তান্বীর মাথা তার বুকে হেলান দিয়ে নিস্তব্ধ। নিঃশ্বাস চলছে ক্ষীণভাবে, মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।

জাভিয়ান তান্বীর গালে হালকা চাপড় দিলো।
—“এই তান্বী…এই শুনছো?”

কোনো সাড়া নেই। তার শরীর একেবারে ঢলে পড়ে আছে।

জাভিয়ান এক মুহূর্ত স্থির হয়ে তাকিয়ে রইল, তারপর ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে ফিসফিস করে বলল—“মাফিয়ার কবলে আটকা পড়েও ভাঙোনি তুমি… নিজের চোখের সামনে বাবাকে গু/লিবিদ্ধ হতে দেখেছো, তবুও অজ্ঞান হওনি। মা–বাবাকে ছেড়ে একেবারে অপরিচিত শহরে চলে এসেছো… সেখানেও ভাঙোনি। অথচ আমার সামান্য একটা চুমুতেই গুটিশুটি মেরে ঢলে পড়লে?”

তার চোখে কেমন এক অন্ধকার খেলা করছিল। হাসিটা ছিল তাচ্ছিল্যের, অথচ গভীরে যেন লুকিয়ে ছিল অন্যরকম কৌতূহল।

সে নিচু হয়ে তান্বীর মুখটা ভালো করে দেখল। নিঃশ্বাস চলছে, তবে ক্ষীণ। এক হাতে আবারও গালে আলতো চাপ দিল, এবারও কোনো সাড়া নেই।

—“তুমি আসলেই অদ্ভুত মেয়ে তান্বী। কিন্তু দেখতে একবারে জিন্নীয়া।”

চলবে……

(আরো কিছু অংশ এডিট বাকি তাই দুই অংশে দিবো। আপনারা পেইজে ফলো না দিয়েই গল্প পড়ে চলে যান। বাকিটা তখনি দিবো যখন ৪৬কে থেকে ৪৮কে ফলোয়ার্স হবে। কারন ৮০ পার্সেন্ট পাঠিকা ফলো দেননি। এগুলা ড্যাশবোর্ড চেক করলে পাওয়া যায় কতজন গল্প পড়ে আর কতজন ফলোয়ার্স গল্প পড়ে আর নন ফলোয়ার্স গল্প পড়ে তাই যারা ফলো দেন নি এখনি পেইজে বলো দিন।আর হ্যাঁ জিনের ফিমেল ভার্সনকে মানুষ পরি ভাবে কিন্তু পরির আসল নাম মানে জীনের ফিমেল নাম জিন্নীয়া আর জিন্নীয়া অপ্রাকৃতীব সৌন্দর্যের অধিকারী হয়ে থাকে)

ডিজায়ার_আনলিশড

✍️ সাবিলা সাবি

পর্ব- ১৪ (শেষাংশ)

সকালের নরম আলো জানালা দিয়ে কক্ষে প্রবেশ করলো। তান্বী ধীরে ধীরে চোখ মেলল। কিন্তু চোখ খোলার সাথে সাথেই মনে পড়ে গেলো গত রাতের ঘটনাটা—

জাভিয়ান… জোর করে ওকে কিস করেছিলো। একবার ভাবলো হয়তো এটা কোনো দুঃস্বপ্ন ছিলো কিন্তু মুহূর্তেই যখন ঠোঁটের মধ্যে ব্যাথা অনুভব করলো তখনি বুঝলো এটা আসলে দুঃস্বপ্ন নয় বাস্তবেই হয়েছিলো। আর সেই স্মৃতি মনে আসতেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। চোখ ভিজে উঠলো অজান্তেই।

ও পাশ ফিরে তাকাতেই চোখ আটকে গেলো সেদিকে।পাশের কক্ষে কাঁচের দরজা দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে—জাভিয়ান ভারী ওজন তোলার ব্যায়ামে ব্যস্ত। ঘামে ভিজে শরীর চকচক করছে, মুখে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।

তান্বী হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো, পা টেনে সোজা ঢুকে গেলো জিম রুমে।রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল—“আপনার এতো বড় সাহস হলো কিভাবে? কোন সাহসে আমার পারমিশন ছাড়া কিস করলেন আমাকে?”

জাভিয়ান ডাম্বেল নামিয়ে রেখে ধীরে ধীরে তাকালো, চোখেমুখে দুষ্টু গাম্ভীর্য। ঠোঁট বাঁকা করে বলল—“তুমি আমার ওয়াইফ। যদিও ‘ওয়াইফ’ শব্দটার কোনো মানে আমার কাছে নেই… তবুও কাগজে তো সাইন করেছো। তাই হিসেব অনুযায়ী শুধু কিস না… চাইলে আরও অনেক কিছুই করতে পারি আমি তোমার সাথে।”

তান্বী ক্ষোভে কাঁপতে কাঁপতে বলল—“খবরদার! মুখে যা খুশি বললেও গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করবেন না। আপনি আমার ঠোঁটের ভার্জিনিটি শেষ করে দিয়েছেন। এবার ভুলেও…”

তার কথা শেষ হবার আগেই জাভিয়ান জিম থামিয়ে সোজা দাঁড়ালো। তার চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়ে উঠলো। ধীরে ধীরে তান্বীর দিকে এগিয়ে এসে নিচু গলায় হুমকি দিলো—“আমার সাথে যদি সামান্যও চালাকি করার চেষ্টা করো, তাহলে শুধু ঠোঁটের নয়… তোমার পুরো বডির ভার্জিনিটি আমি শেষ করে দিবো।”

তান্বী রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে দাঁড়িয়ে আছে। জাভিয়ান কিছুক্ষণ ব্যায়াম করে থেমে গেলো। তারপর পানির বোতল থেকে বড় বড় চুমুকে পানি খেলো আর টাওয়াল দিয়ে গলা-মুখ মুছতে লাগলো।

তান্বীর চোখে হঠাৎই যেনো ঝলসে উঠলো অতীতের অপমানগুলো—জাভিয়ান বারবার বলেছে ওকে ঠাকুমার জুলির শাকচুন্নী… সুন্দর চুলকে তুচ্ছ করে বলেছে বন-জঙ্গল।

এখন তার সামনে দাঁড়িয়ে ওরকম একটা অ্যাটিটিউড নিয়ে শরীর ঝলকাচ্ছে জাভিয়ান।তান্বীর ঠোঁট বাঁকা হলো। হাসি চাপতে না পেরে সরাসরি মুখে ছুঁড়ে দিলো—“কি ভাবছেন? আপনার এই জিম করা বডি খুব সুদর্শন লাগছে? একেবারে হৃতিক রোশনের মতো লাগছে?”

এক মুহূর্ত থেমে কটাক্ষের হাসি হেসে আবার বলল—“পুরো এভেঞ্জার্সের হাল্কের মতো লাগছে।”

ঘর নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। জাভিয়ানের চোখ রাগে লাল হয়ে উঠলো, আর তান্বী বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো যেনো মুখোমুখি যুদ্ধের ডাক দিচ্ছে।

তান্বীর কথা শুনে জাভিয়ানের মুখ কালো হয়ে গেলো। পানি খাওয়ার বোতলটা টেবিলে ছুড়ে রেখে সে ধীরে ধীরে তান্বীর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। চোখে ঝলসে উঠছে হিংস্র আগুন।

তান্বী দাঁড়িয়ে থেকেই তার ভয়ঙ্কর চাহনি টের পেলো। মুহূর্তেই বুক ধুকপুক করতে লাগলো।ৎজাভিয়ান আর এক কদম এগুতেই তান্বী পিছিয়ে গেলো।

—“কি হয়েছে, এখন মুখ এত শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? খুব বড় বড় কথা বলছিলে, হাল্কের মতো দেখতে বলছিলে…” — জাভিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বললো।

কিন্তু তান্বী আর এক মুহূর্তও দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।চোখেমুখে আতঙ্ক আর ভয়ের ছাপ নিয়ে সে হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

পেছন থেকে জাভিয়ান হেসে উঠলো ঠাণ্ডা, তীক্ষ্ণ হাসিতে।—“যতখুশি দৌড়াও, কিন্তু মনে রেখো,আমার হাত থেকে কেউ পালাতে পারে না আর তুমিও পারবেনা।”
.
.
.
.
সকালের রোদ্দুর গাড়ির কাঁচ ভেদ করে জাভিয়ানের মুখে পড়ছিলো। কাল রাতের ক্লান্তি নিয়ে অফিসে পৌঁছে চেয়ারে বসতেই চমকে উঠলো। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রায়হান— বহুদিনের নিখোঁজ সহকারী।

জাভিয়ান ঠোঁটে তীক্ষ্ণ হাসি টেনে বললো,—“বাহ, মিস্টার রায়হান! আসার কতা মনে হলো অবশেষে? আপনার সময় হলো তবে?”

রায়হান নিচু গলায় কিছুটা সংকোচ নিয়ে এক কাপ কফি বাড়িয়ে দিলো।—“স্যার… আসলে আমার কিছুদিন আরও ছুটি প্রয়োজন।”

কফির কাপ হাতে নিয়ে জাভিয়ান ভ্রু কুঁচকালো।
—“কেন?”

রায়হান দ্বিধা ভাঙলো অবশেষে।—“আমার চাচা আমার জন্য মেয়ে দেখেছে, এতদিন এই নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। সব ফাইনাল হয়েছে। এখন শুধু মেয়ের সঙ্গে আলাদা কথা বলতে যেতে হবে। তাই—”

কথা শেষ হবার আগেই জাভিয়ানের কণ্ঠ ছুরি হয়ে ছিড়ে গেলো বাতাসে।—“রায়হান, তুমি কোনো ছুটি পাবে না। ইভেন ছুটি কেনো— আমি বেঁচে থাকতে তুমি বিয়ে করতে পারবে না।”

রায়হান হতবাক, তার হাতের কাপ থেকে কফি ছলকে পড়লো টেবিলে।—“কি বলছেন স্যার? আমি কেনো বিয়ে করতে পারবো না?”

জাভিয়ান সিগার ধরিয়ে চোখ সরু করে তাকালো।—“কারণ আমি তোমাকে বিয়ে করতে দেবো না।”

রায়হানের বুক ধড়ফড় করতে লাগলো।—“কিন্তু… কারণটা কি স্যার?”

জাভিয়ান ধোঁয়া ছেড়ে ঠাণ্ডা স্বরে বললো,—“বিয়ে করলে তুমি পাল্টে যাবে। আজ আমার এসিস্ট্যান্ট, কাল হয়তো বউয়ের দাস হয়ে যাবে। ধরো মাঝরাতে যদি আমার তোমাকে দরকার পড়ে, আমি ফোন দিলাম— তখন তোমার বউ হয়তো ফোন ধরতে দিবে না আসতে দেয়া তো দূরের কথা। আমি এমন ঝুঁকি নেবো না।”

রায়হান নির্বাক। চোখেমুখে অবিশ্বাস আর ক্ষোভ মিশে এক অদ্ভুত ছায়া নেমে এলো।

রায়হান থমকে গেলো।—“স্যার, আপনি তো বিয়ে করেছেন। তাহলে আমি পারবো না কেনো?”

জাভিয়ান হেসে উঠলো ঠাণ্ডা হাসিতে।—“আমার বিয়েটা কেমন বিয়ে, সেটা তুমি ভালো করেই জানো। ওটা বিয়ে করা আর না করা এক কথা। আর তোমার যদি অন্যদিকে সমস্যা থাকে, গার্লফ্রেন্ড রাখো, সাইডচিক রাখো, এনজয় করো— কিন্তু বিয়ে করবে না।”

রায়হান কিছুটা হতাশ আর কিছুটা জেদ নিয়ে বললো,
—“স্যার, বউ আর ওসব টাইমপাস মেয়েরা এক জিনিস নয়। বউয়ের সঙ্গে বৃষ্টি বিলাস, বাগান বিলাস, ভ্রমণ বিলাস— এ সবই আলাদা অনুভুতি।”

জাভিয়ান হেসে সিগারের ধোঁয়া ছাড়লো।—“এত বিলাস করে কি হবে, রায়হান? শেষ পর্যন্ত সবকিছুই তো বিছানা বিলাসে গিয়ে শেষ হয়। মানুষ মাছ ধরার জন্য ছলনা করে, বরশিতে খাবার দিয়ে মাছকে লোভ দেখিয়ে পানি থেকে তুলে আনে। তেমনি বউকে বেডে নেওয়ার জন্য এসব বৃষ্টি বিলাস আর কত কি করতে হয়। এতো সময় নষ্ট করার কি আছে? সোজা বিছানায় নিয়ে গেলেই হবে। আর বিছানায় নিতে তোমার বিয়ের দরকার নাই। আমি মরলে তারপর বিয়ে করে নিও।”

রায়হানের বুকটা যেনো চেপে ধরলো।—“স্যার… এভাবে সারাজীবন বিয়ে ছাড়া কিভাবে থাকবো পরিবার বড় করার একটা ব্যাপার ও তো আছে তাইনা?”

জাভিয়ান তার দিকে ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে বললো,—“তুমি যদি মেয়ে হতে তাহলে আমি তোমাকেই বিয়ে করে সারাজীবন আমার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে রেখে দিতাম।”

রায়হান কাশতে কাশতে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। মনে মনে বললো, “ভাগ্যিস মেয়ে হয়নি। নাহলে আপনার মতো পুরুষের কপালে পড়ার চেয়ে না জন্মানোই ভালো পৃথিবীতে।”

জাভিয়ান তখন চেয়ারে হেলান দিয়ে বললো,—“শোনো রায়হান, আর একদিনও তুমি কোথাও যাবে না। আমার কোম্পানীর অনেক কাজ বাকি। বাবাকে দেখিয়ে দিতে হবে— ‘আমার পারফিউম’ বিশ্বের সেরা ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। তবেই প্রমাণ করতে পারবো, তাকে ছাড়াও জাভিয়ান এমিলিও চৌধুরী সাকসেস হতে পারে।”
.
.
.
.
অফিসের কেবিনে হালকা আলো পড়েছে। ডেস্কে আরেকটা নতুন ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ। জাভিয়ান মনোযোগ দিয়ে ফাইলের পাতা উল্টাচ্ছিল, হঠাৎ রায়হান নিরবতা ভেঙ্গে মুখ খুললো তার চোখেমুখে এক অদ্ভুত গম্ভীর ভাব।

—“স্যার, একটা খবর শুনেছেন? মেইলস্ট্রোমকে কে যেনো মারার চেষ্টা করেছে। এখন হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি। এই প্রথমবার তার ওপর এত বড় আঘাত আসলো। ব্যাপারটা ভাবনার কিন্তু।”

জাভিয়ান ধীরে ধীরে কফিতে চুমুক দিলো। ঠোঁটে হালকা এক অচেনা হাসি ফুটে উঠলো।—“মাফিয়াদের জীবন এমনটাই হয় রায়হান। এই জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই।”

একটু থেমে চোখ সরাসরি রায়হানের দিকে নিবদ্ধ করে জিজ্ঞেস করলো,—“মিসেস বেলা এখন কী করছে? তার কি খবর?”

রায়হান নিঃশ্বাস ফেললো।—“তার আর কী খবর হবে স্যার? ছেলের এমন অবস্থা, কোনো মা ভালো থাকে না। সারাক্ষণ হাসপাতালে বসে আছেন, আর সবাইকে আদেশ দিচ্ছেন তার ছেলেরা খু/নিকে বের করে আনতে।”

জাভিয়ান চুপ করে গেলো। চোখের দৃষ্টি জানালার বাইরে আটকে রইলো। তারপর আস্তে ফিসফিস করে বললো,—“সব মায়েরা এক হয়না রায়হান। বন্দুকের গুলি যতটা আঘাত দেয়, তার চেয়েও বেশি আঘাত দেয় কিছু কিছু পরিবার।”
.
.
.
.
রায়হান বুঝতে পারলো যে জাভিয়ানের মন অন্য দিকে ঘুমে যাচ্ছে তাই প্রসঙ্গ ঘোরাতে সে ফাইল গোছাতে গোছাতে রায়হ দ্বিধা নিয়ে বললো,—“স্যার… একটা কথা জিজ্ঞেস করি? আপনার আর গজদন্তনির মধ্যে এখনও তেমন কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি… তাই না?”

জাভিয়ান হালকা হাসলো, ঠোঁটের কোণে একটুখানি ব্যঙ্গের রেখা ফুটে উঠলো।—“হাহ, তুমি যা বলতে চাইছো, আমি বুঝছি। তবে সামান্য একটা চুমুতেই যে মেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়… তার সাথে বাকি কিছু কিভাবে সম্ভব বলো তো?”

রায়হানের চোখ বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেল।—“কি বলেন স্যার! আপনি সত্যি চুমু খেয়েছেন? তা হলে নির্ঘাত এমনভাবে চুমু দিয়েছেন, যেটার ধাক্কাতেই সে অজ্ঞান হয়ে গেছে।”

জাভিয়ান কফির কাপে আঙুল চালাতে চালাতে হালকা বিরক্তি মেশানো স্বরে বললো,—“আমি কী করে জানবো কিভাবে চুমু দিতে হয়? আমি কি আগে কখনো কাউকে চুম্বন করেছি নাকি? তবে তখন মাথায় রাগ ছিল, তাই…কিভাবে চুমু দিয়েছি নিজেও জানিনা। কিন্তু বলো তো আসলে কিভাবে চুমু দিতে হয়?”

রায়হান ভুরু কুঁচকে ভেবে নিয়ে বললো,—“শুরুর দিকে অ্যাগ্রেসিভ হওয়া যাবে না স্যার। আগে স্লো মোশনে, সফট কিস করতে হয়। আমি তো আন্দাজ করতেই পারছি আপনি কেমন করে কিস করেছেন।”

জাভিয়ান মাথা নাড়লো, চোখ সরাসরি রায়হানের দিকে।—“হ্যাঁ, কারণ এসবের কোনো ধারনা আমার নেই। তবে তোমার তো মনে হয় বেশ ভালো এক্সপেরিয়েন্স আছে এসব নিয়ে।”

রায়হান হকচকিয়ে গেল। হাত নাড়াতে নাড়াতে বললো,
—“আরে না দূর স্যার! কি বলেন এসব? এতোটাও আবার অভিজ্ঞতা নেই আমার।”

কথোপকথন শেষ হতেই হঠাৎ জাভিয়ানের ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে এক ঝলক নাম ভেসে উঠতেই তার ঠোঁটে হালকা বিরক্ত খেলে গেল। কল রিসিভ করে মাত্র কয়েকটা শব্দ বলেই কেটে দিলো।

তারপর সরাসরি রায়হানের দিকে তাকিয়ে আদেশের সুরে বললো,—“আজ রাতের প্ল্যান বদলেছে। রায়হান, তুমি আজ বাড়ি ফিরবে না। রাতটা আমার সাথে থাকবে। আর… রাতের আগে আমরা ক্লাবে যাবো।”

রায়হান থমকে দাঁড়ালো, অবিশ্বাসে চোখ বড় হয়ে গেল।
—“কি বললেন স্যার? আমি বাড়ি ফিরবো না,আর আপনি আবার ক্লাবে যাবেন?”

জাভিয়ান কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে নির্বিকার স্বরে বললো,—“হ্যাঁ। আজ রাতে আমি ক্লাবেই থাকবো আর তুমিও থাকবে আমার সাথে —অতিরিক্ত প্রশ্ন করার অভ্যাসটা বাদ দাও এবার।”

রায়হান ভেতরে ভেতরে হতভম্ব, তবু চুপ করে রইলো। তার চোখে এক অদ্ভুত কৌতূহল আর অস্বস্তি—জাভিয়ানের আবার কি হলো?
.
.
.
.

বিকেলের দিকে হঠাৎ পুরো বাড়িটা যেনো সরব হয়ে উঠলো। গেট দিয়ে ঢুকতেই কয়েকজন অতিথির আগমন চোখে পড়লো। তান্বী অবাক হয়ে দেখলো—অপরিচিত কিছু মুখ। তার চোখে শুধু ধরা দিলো, জাভিয়ানের মায়ের পাশে এক সুদর্শনা, স্মার্ট মহিলা আর তার সাথে এক অল্পবয়সী মেয়ে।

তান্বীর মন ভেতরে ভেতরে কৌতূহলী হয়ে উঠলো—এরা কারা?

কিছুক্ষণ পরেই জাভিয়ানের মা এগিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দিলেন।—“তান্বী, এ আমার বোন রেজিনা। মেরিডা থেকে এসেছে। আর এ হচ্ছে তার মেয়ে কাতারিনা, মানে জাভিয়ানের খালাতো বোন।”

তান্বী হালকা ভদ্রতাপূর্ণ হাসি দিলো। খালা মেক্সিকান হওয়ায় প্রথমে নিজের ভাষায় কিছু বললেন, কিন্তু বুঝতে পেরে ইংরেজিতেই আলাপ শুরু করলেন। তান্বীও ইংরেজিতেই উত্তর দিলো।

তবে পাশে থাকা খালাতো বোনের মুখ দেখে তান্বীর মনে হলো—সে একদমই খুশি নয়। ঠোঁটের কোণে জোর করে টানা একটুখানি হাসি, চোখে অদ্ভুত শীতলতা। তবুও ভদ্রতার খাতিরে শুধু বললো,—“Hi… Hello.”

তান্বীর বুকের ভেতরে কেমন যেনো অস্বস্তি জমে উঠলো। মনে হলো, এই বাড়িতে আবারো নতুন কোনো ঝড়ের আভাস আসতে চলেছে।
.
.
.
.
ড্রয়িংরুমে নরম আলো জ্বলছে। বড়ো সোফায় একসাথে বসে আছেন জাভিয়ানের মা, তার খালা রেজিনা আর পাশে নির্ভীকভাবে বসে আছে তান্বী। চারপাশে খাবারদাবার সাজানো, গরম চায়ের ধোঁয়া উঠছে কাপ থেকে। খালাতো বোন কাতরিনা তখনি সরে গিয়ে লুসিয়ার রুমে আড্ডায় বসেছে, ফলে এখানে এক অদ্ভুত শান্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

কথায় কথায় হঠাৎ জাভিয়ানের খালা তান্বীর দিকে তাকিয়ে ইংরেজিতে হেসে বললেন,—“So, my girl… how’s our Javian? How’s married life with him?”

প্রশ্ন শুনে তান্বীর বুকটা ধড়ফড় করে উঠলো। মুহূর্তের জন্য ভেবেছিলো কী উত্তর দেবে। তারপর এক চিলতে দুষ্টু হাসি নিয়ে হালকা স্বরে মজার ছলে গুনগুন করে গাইল তান্বী—“আসলে ছেলে ভালো শুধু রাত্রে একটু খায়, সব সময় খায় না তাও… যখন জুয়া খেলতে যায় তখন একটু খায়।”

জাভিয়ানের খালা ভ্রু কুঁচকে রাখলেন সে কিছুই বুঝতে পারলেন না। মুখে বিভ্রান্তির ছাপ ফুটে উঠলো। তিনি জাভিয়ানের মায়ের দিকে ফিরলেন,—“What did she just say?”

জাভিয়ানের মা তখন হকচকিয়ে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে বললেন,—“She said… Javian is a very good boy. Very good husband.”

খালা তখন হাসলেন স্বস্তির সাথে। কিন্তু জাভিয়ানের মায়ের চোখে লুকোনো অবাক ভাব তান্বীর চোখ এড়ালো না। মনে হচ্ছিলো, মা যেন বুঝতে পারছেন—তান্বী আসলে খোলাখুলি কিছুটা কটাক্ষই করেছে।
.
.
.
.
রাত গভীর হয়ে এসেছে। বাড়ির চারপাশে নীরবতা, কেবল হালকা বাতাসের সোঁ সোঁ শব্দ। তান্বী নিজের রুমে বসে আছে, সামনে খোলা জানালা দিয়ে বাইরের আলো ঘরে পড়ছে। কাল রাতের ঘটনাগুলো এখনো তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

হঠাৎ করেই দরজায় হালকা ঠকঠক শব্দ হলো। তান্বী ঘুরে তাকাতেই দেখলো জাভিয়ানের খালাতো বোন কাতারিনা দরজার ফাঁক দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। মুখে মিষ্টি একটা হাসি নিয়ে সে বললো,“ক্যান আই সিট হেয়ার?”

তান্বী হালকা মাথা নেড়ে ইশারা করলো। মেয়েটা এসে তান্বীর বিছানার পাশে বসল। কিছুক্ষণ নীরবতা, তারপর হঠাৎই সে বললো,—“জাভি ব্রো কখন আসবে?”

প্রশ্নটা শুনে তান্বী চমকে উঠলো। ভ্রু কুঁচকে বললো,
—“তুমি… বাংলা জানো?”

কাতারিনা ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে জবাব দিলো,—“হ্যাঁ। প্রয়োজনীয় কিছু বাংলা শিখেছিলাম একজনের জন্য।”

তান্বী থমকে গেলো। কিছু একটা আন্দাজ করলেও মুখে কিছু বললো না। ধীরে ধীরে প্রশ্ন করলো,—“কার জন্য শিখেছিলে?”

কাতারিনা একটুও ঘুরিয়ে না বলে সরাসরি উত্তর দিলো,—“জাভি ব্রো’র জন্য।”

তান্বীর চোখে বিস্ময়। কথাটা শুনেই কাতরিনা যেন নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,—“চিন্তা করোনা, এখন তো তার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন আর কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। তবে তোমাকে একটা সিক্রেট বলি…”

তান্বী ভ্রু উঁচু করলো,—“কী সিক্রেট?”

কাতারিনা ধীরে ধীরে বললো,—“আমার সাথে জাভি ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করেছিলো পরিবারের সবাই… কিন্তু হয়নি।”

তান্বী মনে মনে একটু অস্বস্তি অনুভব করলেও মুখে কৌতুকের ছাপ আনলো। নিজেকে বললো,(“আমি কোন দুঃখে চিন্তা করতে যাবো? তোমার সাথে বিয়ে হলে অন্তত ওই বদমাইশটার হাত থেকে আমি বেঁচে যেতাম।”)

তারপর ঠোঁটে একচিলতে হাসি এনে বললো,—“কেনো বিয়েটা হয়নি?”

কাতারিনা তান্বীর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,—“ডোন্ট মাইন্ড… আই থিঙ্ক তুমি জানো কিনা জানিনা। কিন্তু জাভি ভাইয়া অন্যরকম ছিলো। এসব বিয়ে-টিয়ে বিশ্বাস করতো না। সে মেয়েদের একবারের বেশি ইউজ করতে পছন্দ করতো না… মানে নিজের কাজে একবার ব্যবহার করতো, তারপর আর না। কিন্তু তোমাকে কিভাবে বিয়ে করে এতদিন রাখলো সেটাই ভাবছি।”

তান্বীর বুকের ভেতরটা হঠাৎ মোচড় দিয়ে উঠলো। সে বুঝলো—এ মেয়েটা খোলাখুলি তার সামনে সত্যি কথাই বলে যাচ্ছে, আর সেটা শুনে তার মনের ভেতর অদ্ভুত এক কাঁপন কাজ করছে।
.
.
.
.

ক্যাসিনো ক্লাবের ভেতরে মৃদু আলো আর গাঢ় ধোঁয়াটে আবহ। একপাশে সুরেলা পিয়ানো বাজছে, আর অন্যপাশে কয়েকজন উচ্চবিত্ত লোক পোকারে মগ্ন। জাভিয়ান একটা ভিআইপি কর্নারে বসে আছে। ঠোঁটে লালচে ওয়াইনের গ্লাস, অন্য হাতে সিগারের ধোঁয়া ভেসে যাচ্ছে চারপাশে। তার চোখে ঝাপসা আলো আর মুখে হালকা ক্লান্তির ছাপ।

রায়হান, কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে, তার সামনে চেয়ারে বসল। নীরবতা ভেঙে সে বললো——“স্যার, হঠাৎ কী হলো? বিয়ের পর আপনাকে তো একবারও আমি ক্লাব… তো দূর, বাইরে রাত কাটাতে দেখিনি। আজ হঠাৎ?”

জাভিয়ান এক চুমুক ওয়াইন খেলো, তারপর নিঃশ্বাস ফেলে হালকা বিদ্রূপের হাসি দিয়ে বললো——“বাসায় খালা আর কাতারিনা এসেছে। আর তুমি তো জানো… ও আমাকে দেখলেই কী করে।”

রায়হান কৌতূহলী হয়ে বললো—“খালা? আর কাতরিনা?”

জাভিয়ান সিগারের ধোঁয়া ছেড়ে বললো——“হ্যাঁ। আর সেটাই আমার সবচেয়ে অপছন্দের। গায়ে পড়া মেয়ে আমি ঘৃণা করি… সে যেই হোক না কেন। তাই আজ বাসায় যাবোনা।”

রায়হান একটু হাসি চাপল, তারপর সতর্ক গলায় বললো——“কিন্তু মিস গজদন্তনি তো চিন্তা করবে আপনি না গেলে…”

জাভিয়ান ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি টেনে গ্লাসটা ঘুরিয়ে বললো——“ও আমাকে নিয়ে চিন্তা করবে না। আমি না থাকলে ও বরং শান্তিতেই থাকবে বাসায়।”

জাভিয়ানের কণ্ঠে যেন ক্লান্তি আর উদাসীনতার মিশেল ছিলো। রায়হান এক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো, ভাবলো—এই মানুষটা আসলে কী লুকিয়ে রাখছে নিজের ভেতরে।
.
.
.
.

রাত অনেকটা গড়িয়ে গেছে, তবুও জাভিয়ান বাসায় ফেরেনি। ডাইনিং টেবিলে সবাই বসে আলোচনা করছে। হঠাৎ জাভিয়ানের মায়ের ফোনে কল আসে। স্ক্রিনে ভেসে ওঠে জাভিয়ানের বাবার নাম্বার।

ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে কড়া কণ্ঠ ভেসে এলো—”তোমার ছেলে কোথায় জানো কোনো খবর রাখো, আজ আবার ক্যাসিনোতে গিয়েছে সে।”

এটা শুনে জাভিয়ানের মা ভুরু কুঁচকে তাকালেন। তিনি তখন তান্বীর দিকে ঘুরে বললেন—”তান্বী, তুমি কি জানো জাভি আজ রাতে ক্যাসিনোতে গিয়েছে?”

তান্বী একটু থমকে গেলো, তারপর আস্তে বললো—
“না মম! আমাকেতো কিছু জানায়নি।”

এবার পাশে বসা জাভিয়ানের খালা কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন—”তাহলে জাভি যে এভাবে গেলো, তোমার কোনো ধারণাই নেই?”

জাভিয়ানের মা একটু বিরক্ত স্বরে বললেন—”ওর এসব আগেও ছিলো, কিন্তু তখন সিঙ্গেল ছিলো বলে কেউ কিছু বলতো না। এখন বিয়ে হয়েছে, এসব আর চলবে না।”

খালা তখন ঠান্ডা গলায় তান্বীকে বললেন—“It’s a wife’s job to keep her husband under control. A wife must hold her title tight. Go, bring him back home, Tanbi.”

তান্বীর বুকটা কেঁপে উঠলো। সে আস্তে বললো—”আমিতো জানিনা উনি কোন ক্লাবে গেছেন, আমিতো এসব চিনিনা।”

তখন হঠাৎ কাতারিনা বলে উঠলো—”আন্টি, আমি জানি! আমি জানি জাভি ব্রো কোন ক্লাবে যায়। চলো তান্বী, আমি নিয়ে যাবো তোমাকে।”

জাভিয়ানের মা সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভারকে ডাকলেন—” ড্রাইভার গাড়ি বের করো।”

সবাই তাকিয়ে থাকলো তান্বীর দিকে। সে কিছু না বলে চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেলো রেডি হতে। আসলে তান্বী জানে না, কাতারিনার মনে আগেই একটা ছক কষা হয়ে গেছে।লুসিয়া সব ফাঁস করেছে ওকে—জাভিয়ান আর তান্বীর মধ্যে আসলেই কোনো হাজবেন্ড-ওয়াইফ সম্পর্ক নেই।

লুসিয়ার ইচ্ছে একটাই—তান্বীকে কখনোই এই বাড়ির “ভাবি” হিসেবে মানতে হবে না।ওর কাছে কেবল কাতারিনাই উপযুক্ত জাভিয়ানের স্ত্রী হওয়ার জন্য।

এই কারণেই কাতারিনা ভেতরে ভেতরে খেলায় নেমেছে। সে চায়, তান্বীর চোখে জাভিয়ান আরও খারাপ মানুষ হয়ে উঠুক—যাতে তান্বী ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে আর আলাদা হয়ে যায়।
.
.
.
.
ড্রাইভার গাড়ি বের করলো। কাতারিনা পেছনের সিটে বসতেই তান্বীও পেছনে বসতে যাচ্ছিল।কিন্তু কাতারিনা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল—”তুমি সামনের সিটেই বসো ড্রাইভারের পাশে।”

তান্বীর ভেতরে রাগ ফুটে উঠলো,কিন্তু মুখে কিছু না বলে মনে চেপে রাখল।মাথা উঁচু করেই সামনের সিটে বসল।

অবশেষে গাড়ি এসে থামলো ক্যাসিনো ক্লাবের সামনে।
ভেতরে ঢুকতেই তান্বীর মাথা ঘুরে গেল।চারপাশে বাজে আলো, কর্কশ গান,নেশায় বুঁদ লোকজন আর মেয়েদের অশালীন পোশাক—তার জীবনে প্রথমবার এমন জায়গায় আসা।

কাতারিনা তীক্ষ্ণ চোখে চারপাশে তাকিয়ে এক ঝলকে
জাভিয়ানকে দেখে ফেলল।ও জানতো ঠিক কোন টেবিলে জাভিয়ান বসে থাকবে।

—”তুমি এখানে দাঁড়াও, আমি আসছি,”বলেই কাতারিনা এক সাইডে চলে গেল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ক্লাবের এক মেয়েকে কিছু টাকা ধরিয়ে দিল আর কিছু শিখিয়ে দিলো। মেয়েটি তখন টলমল করে হেঁটে গেল জাভিয়ানের টেবিলে, সরাসরি তার পাশে সোফায় বসে পড়লো।

জাভিয়ান ভ্রু কুঁচকালো, বিরক্তি নিয়ে তাকালো,কিন্তু মেয়েটা আরো কাছে ঘেঁষে বসল। কিছু একটা ফিসফিস করতে লাগলো।

ঠিক তখনই কাতারিনা ফিরে এসেতান্বীকে হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে গেল।ইশারায় দেখিয়ে দিল—”ওই দেখো, জাভি ব্রো…”

তান্বী অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।সে দেখলো, আধো অন্ধকার আলোয়একটা মেয়ে বাজে পোশাক পরে জাভিয়ানের গায়ে গা ঘেঁষে বসে আছে।হাসছে, কথা বলছে।

জাভিয়ান যখন মেয়েটাকে সরাতে যাচ্ছিল,হঠাৎই চোখ ঘুরিয়ে তান্বীকে দেখে ফেললো। তার সাথে দাঁড়িয়ে আছে কাতারিনা।

জাভিয়ানের ঠোঁটে হালকা এক শয়তানি হাসি ফুটলো।
সে আর মেয়েটাকে সরালো না—বরং যেন ইচ্ছে করেই আরও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে মেয়েটার সাথে কথায় মেতে উঠলো।

তান্বীর বুকটা হালকা কম্পন দিয়ে উঠলো। কাতারিনার চোখে তখন সন্তুষ্টির ঝিলিক।

তান্বী এবার আর কাতারিনার খেলায় পা দিলো না।
চোখে ভেসে ওঠা জ্বালা আর অজানা রাগকে বুকের ভেতর আটকে রেখেসে একটা “ডোন্ট কেয়ার” ভাব নিয়ে এগিয়ে গেল। সোজা জাভিয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে দৃঢ় গলায় বলল—

“আপনার খালা এসেছেন বাড়িতে। উনি বলেছেন আপনাকে নিয়ে যেতে। তাই আমি আর আপনার খালাতো বোন এসেছি আপনাকে নিতে।”

ক্লাবের শব্দময় পরিবেশ হঠাৎ যেন থেমে গেল তান্বীর কানে।
কিন্তু পাশের মেয়েটা ঠোঁটে বাঁকা হাসি নিয়েমেক্সিকোর ভাষায় জাভিয়ানকে কিছু জিজ্ঞেস করলো—“এই মেয়েটা কে? আর কি বলছে?”

তান্বী কিছুই বুঝলো না ভাষার। তবে জাভিয়ানের চোখের কোণে এক সেকেন্ডের ঠান্ডা ঝিলিক দেখলো।

আর পরের মুহূর্তেই জাভিয়ান ঠোঁটের কোণে সিগার চেপে, অলস ভঙ্গিতে ইংরেজিতে উত্তর দিলো—“She is my wife.”

তান্বীর বুকটা ধক করে উঠলো।কথাটা কানে বাজলো বারবার—“She is my wife… my wife…”

মেয়েটা অবাক হয়ে জাভিয়ানের দিকে তাকালো।

কিন্তু তান্বীর চোখে তখন স্পষ্ট পড়ে গেল—জাভিয়ানের সেই উত্তরটা কি সত্যিই সম্মানের জন্য, না কি কেবল মুহূর্তের এক ঠান্ডা খেলা?

চলবে…….

(৪৭ হাজার ফলোয়ার্স হয়েছে তাই পর্ব দিলাম। আসলে আপনারা যারা ফলো দেন না তারা ফলো দিবেন এতে করে গল্প দিলে ফলোয়ার্স ম্যানশন করলে আপনাদের কাছে পৌঁছে যাবে পর্ব আর আমি আবার টানা কিছুদিন রেস্ট নিবো তাই ২ হাজার রিয়েক্ট হলেই পরের পর্ব দিবো🥱✍️ আর হ্যাঁ মেইলস্ট্রোমের কাহিনী আসবে সেটাও বড়সড় ধামাকা নিয়ে তাই ধৈর্য রাখুন কোন ক্যারেক্টার কখন আসবে কখন তার ভূমিকা সেটা প্লট অনুযায়ী এগিয়ে যাবে।)

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply