৮.
Dark_Desire
ডার্ক_ডিজায়ার
দূর্বা_এহসান
মৃন্ময় গাড়ি থেকে নেমে দাঁত কিরমিরিয়ে এগোচ্ছে। চোখে অগ্নি।শরীরে উত্তেজনার জ্বালা। পিছনের গাড়িতে থাকা লোকটি অবলীলায় তাকিয়ে আছে। কিন্তু মৃন্ময় কোনো শব্দ বের করলো না। ধীরে ধীরে তার দিকে এগোতে থাকল। প্রতিটি ধাপেই রাগের তীব্রতা আরও বাড়ছে।
কাছে পৌঁছে সে হাত শক্ত করল, চোখ লালিমায় জ্বলে উঠল। মৃদু, কিন্তু ভয়ঙ্কর কণ্ঠে বলল, “কি সমস্যা?”
লোকটা হঠাৎ দাঁত করে হাসলো। ঠোঁটের কোণে সেই হাসি মৃদু কিন্তু চক্রান্তপূর্ণ।
“কোনো সমস্যা নেই।”
মৃন্ময় হঠাৎ আঘাতের মতো এগোলো, দুই হাতে লোকটির শার্ট ধরে টেনে আনল।তার চোখে আগুন, ভেতরে রাগের তীব্রতা।লোকটি প্রতিরোধ করতে চাইল।
“গাড়িতে মাল..”
কথা শেষ করতে পারল না লোকটা।মৃন্ময় এক ঝটকায় সামনে ঝাপিয়ে পড়ল, দুই হাতের শক্তি বাড়িয়ে লোকটির হাত কাঁপিয়ে তুলল। লোকটি পিছনে সরে গেল।
দুইজনের মধ্যে লড়াই শুরু হলো। আঘাত সব মিলেমিশে রাস্তায় এমন শব্দ কল্পনা করা যায় না। মৃন্ময় প্রতিটা আঘাতে আরও রাগের তীব্রতা অনুভব করছে।
“বন্ধ করো! আর একটাও আঘাত না!”
হঠাৎ তরুর কণ্ঠ বাতাস কেটে এলো। সে দৌড়ে এলো। “শান্ত হও”
মৃন্ময় কিছুক্ষণ থমকে গেল। তরুর কোমল হাতের স্পর্শে, চোখে চরম রাগের সাথে কিছুটা স্থিরতা আসল। সে তাকিয়ে আছে, ধীরে ধীরে শ্বাস নিচ্ছে।
লোকটি সরে দাঁড়াল। হালকা হাসি ফেলে বলল, “কি মা”ল পেয়েছিস রে”
তরুর দিকে তাকিয়ে বলল লোকটা।রাস্তায় তখন হালকা কুয়াশা নামছে। বাতাসে পেট্রোল আর ধুলো মেশানো গন্ধ। তরু পাশে দাঁড়িয়ে।মুখে আতঙ্ক।মৃন্ময়ের রাগ যেন বুকের ভেতরে গরম কয়লার মতো জ্বলছে।তরু আঁতকে উঠল এবার।বুঝে গেলো আর মৃন্ময় কে থামানোর উপায় নেই।
লোকটা সামান্য গা ঝেড়ে নিল, মৃদু হেসে বলল,
“কি হলো? রাগ হলো?”
ওই হাসিটাই শেষ ছিল তার জন্য।মৃন্ময় এক পা এগিয়ে গেল। এবার কোনো গর্জন নেই, কোনো হুমকি নেই .নিঃশব্দে এগিয়ে গেল যেন মৃত্যু নিজেই হেঁটে আসছে।লোকটা হঠাৎ পিছোতে চাইল, কিন্তু গাড়ির দরজায় ধাক্কা খেল।মৃন্ময় সামনে এসে থামল, ঠোঁটের কোণে শক্ত চাপ।
“কার দিকে নজর দিয়েছিস জানিস!?”
কণ্ঠে এমন ঠান্ডা হিসহিসে রাগ। তাতে হাড় পর্যন্ত ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার মত।মৃন্ময় আর অপেক্ষা করল না।তার ডান হাত ঝড়ের মতো উঠল, লোকটার গলা চেপে ধরল।তরু চিৎকার করে উঠল, “না ! থামো!”
কিন্তু রাগের ঝড়ে কোনো শব্দ পৌঁছায় না।লোকটার চোখ বড় হয়ে গেল, হাত পা ছুঁড়ছে, কিন্তু মৃন্ময়ের দৃষ্টি স্থির ।এক মুহূর্ত পরে, মৃন্ময় গলা ছেড়ে দিল।লোকটা হাঁপাতে হাঁপাতে মাটিতে পড়ে গেল। কাশছে, গলা ধরে কাঁপছে।
তরু মৃন্ময়ের পাশে দাঁড়িয়ে, কাঁপা গলায় বলল,
“চলুন এখান থেকে”
ঠিক তখনই লোকটা পকেট থেকে কিছু একটা বের করল।বন্দুক!চোখে আতঙ্ক নয়, হিংস্রতা।
“এখন খেলা আমার,” বলল সে, নিশানায় তুলল মৃন্ময়কে।
তরু চেঁচিয়ে উঠল, “না!”
কিন্তু মৃন্ময় ঝাঁপিয়ে পড়ল।
দুইজন গড়াগড়ি খেতে লাগল রাস্তার ধারে। বন্দুক ছিটকে পড়ল।হঠাৎ একটা গুলির শব্দ ।একটাই।সব থেমে গেল।
তরু ছুটে গেল, হাঁপাতে হাঁপাতে।মাটিতে পড়ে আছে লোকটা, বুকের ঠিক মাঝখানে গুলির দাগ।
তাতেও যেনো তার রাগ কমলো না।মৃন্ময় তাকিয়ে রইল, কোনো কথা বেরোলো না।লোকটার শেষ হাসিটা বাতাসে মিলিয়ে গেল । কিন্তু সেই হাসির কালো দিকটা মৃন্ময়ের চোখে চিরদিনের মতো বসে গেল।
[লেখকের পেজের নাম— দূর্বা এহসান : Durba Ehsan ]
————————
এয়ারপোর্ট
ধুলোময় আলোর নিচে মানুষ ছুটে চলছে, লাগামহীন ব্যস্ততা আর কথা-আড্ডার শব্দ মিলেমিশে এক বিশৃঙ্খল সঙ্গীত সৃষ্টি করছে। মৃন্ময় একটি করিডরের পাশের বেঞ্চে দাঁড়িয়ে আছে। হাতের আঙ্গুলগুলি একে অপরের সাথে লড়ছে, যেন মনে হচ্ছে ধৈর্য ধরে রাখতে হবে। চোখ বারবার দরজা দিকে তাকাচ্ছে।
তরু পাশে। মুখ ভয়াতুর। কিছু সময় আগের লোকটার পরিণতি ভাবতেই তার শরীর কেঁপে উঠছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা কতটা নির্মম!
মৃন্ময় নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে, কিন্তু শরীরে সেই আগুনের খেলা থামছে না। চোখে ঘুরেফিরে তরুর দিকে চলে যাচ্ছে। ইখতিয়ার এয়ারপোর্ট এসে রজনী কে রিসিভ করতে বলেছে।নাহলে কোনোভাবেই সে আসতো না।এই মানুষ , যার কথা সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। ধৈর্য্য রাখতে পারছে না সে তরুকে কাছে পাওয়ার। তরু দেখলো মৃন্ময়ের ছটফটানি।চুপ থাকলো সে।ভাবছে কে এমন আসছে যার জন্য সে এমন অধৈর্য হয়ে উঠেছে।
“আসবে তো” নিজেকেই ধমক দিয়ে মৃন্ময় দাঁড়িয়ে আছে।
মৃন্ময় তরুর একটা হাত ধরলো।তরু চমকালো তার উষ্ণ ছোঁয়ায়।একই সাথে মৃন্ময়ের শরীরের উষ্ণতা অনুভব করলো সে।
“পাখি!”
“হু”
আনমনে জবাব দিলো তরু।মৃন্ময় আশ্চর্য হয়ে তাকালো তার দিকে। চোখে মুখে ছড়িয়ে পড়ল কোমল শান্তি।
“পাখি”
“হু”
আবারো একই ভাবে তরু জবাব দিলো। সাথে সাথে তরু বুঝতে পারল এবার। মৃন্ময়ের থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো।কিন্তু মৃন্ময় ততক্ষণে তার আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল জড়িয়ে নিয়েছে।
হলটি ভিড় আর শব্দে ভরে উঠছে। প্লাজার বড় স্ক্রিনে ফ্লাইটের নাম্বার টানার মতো আওয়াজ বাজছে। এবং ঠিক সেই মুহূর্তে এগিয়ে এলো ওয়েস্টার্ন ড্রেসে একটা মেয়ে।
চলন্ত ভিড়ের মধ্য দিয়ে মেয়েটি আসছে। মেয়েটার শরীরের ভঙ্গি আর হেঁটে আসার ধাপের স্বাভাবিক অহংকার।
তরুর চোখে অল্প ক্ষিপ্ত । “এ কি স্বভাব?” সে মনে মনে বলল। মেয়েটির চোখ সরাসরি মৃন্ময়ের দিকে। অশালীন ভঙ্গিতে এগিয়ে আসতে লাগলো।তরু বুঝল না তাদের দিকে কেন আসছে?আর তারাই বা এখানে কেন?মেয়েটার হাব ভাব তার পছন্দ হচ্ছে না।চোখ ফিরিয়ে নিলো সে। মৃন্ময়ের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো সে মেয়েটির দিকেই তাকিয়ে আছে।তরু ভাবলো হয়তো সে ভুল দেখলো।এক হাতে চোখ কচলে আবার দেখলো।নাহ্ ঠিকই দেখছে।এবার মৃন্ময়ের ঠোঁটের কোণে হাসিও দেখতে পেলো।
তরুর ভেতরটা যেন হঠাৎ ভারি হয়ে গেল। বুকের ভেতর টান ধরল এক অদ্ভুত অনুভূতি।অস্বস্তি, রাগ, নাকি হতাশা, ঠিক বোঝা গেল না। চারপাশের শব্দ, মানুষের হাঁটাচলা সব এক মুহূর্তে ঝাপসা হয়ে গেল তার চোখে।মনের ভেতর জমে থাকা অগোছালো চিন্তাগুলো হঠাৎ একসাথে মাথা তুলল। “কে এই মেয়ে? কেন এমন করে তাকাচ্ছে মৃন্ময়?” নিজের মনেই প্রশ্ন ছুঁড়ল তরু। অথচ উত্তর নেই। শুধু একটা কষ্টের ঢেউ বুকের ভেতর উঠছে।যা লুকাতে চায়, অথচ ঠিক লুকাতে পারে না।
ওর মনে হচ্ছিল, মৃন্ময়কে এতদিন যতটা চিনেছে, তার ভেতরে কিছু অংশ বোধহয় ওর অজানাই থেকে গেছে। সেই অজানা অংশটাই এখন চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তরু নিঃশব্দে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিল। অনুভব করল, বুকের ভেতরটা ভার হয়ে আছে, কিন্তু মুখে কিছু বলার মতো ভাষা নেই। শুধু একধরনের নীরব ক্ষোভ চেপে আছে ভিতরে।যা নিজের কাছেও অচেনা।
মেয়েটি এগিয়ে এসে হঠাৎই জড়িয়ে ধরল মৃন্ময়কে। এমনভাবে ধরল, যেন বহুদিনের চেপে রাখা তৃষ্ণা এক নিমিষে উথলে উঠেছে।ওর দু’হাত মৃন্ময়ের কাঁধ জড়িয়ে এমনভাবে আঁকড়ে ধরল, যেন পারলে তাকে নিজের ভেতরটায় টেনে নেবে।বলে উঠল,
“জান আই মিস ইউ”
চলবে,,
Share On:
TAGS: ডার্ক ডিজায়ার, দূর্বা এহসান
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
ডার্ক সাইড অফ লাভ পর্ব – ২
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ৩(প্রথমাংশ + শেষাংশ)
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ২
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১৫
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১৪
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১০
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১৩
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ৫
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ৭