জেন্টাল_মন্সটার
লামিয়ারহমানমেঘলা
পর্ব_০৯
ভোরের আলো ফুটেছে। ধরণী জুড়ে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ছে। আদ্রিসের মুখের উপর রোদ এসে পড়তে আদ্রিস চোখ খুলে তাকায়।
নিচু হয়ে দেখে আদ্রিতা তার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা সকাল যেখানে আদ্রিতা উঠে তার জন্য চা বানিয়ে এনে দাঁড়িয়ে থাকবে। ওর ভেজা চুল দিয়ে টপটপ পানি গড়িয়ে পড়বে। আদ্রিস সকাল সকাল আদ্রিতার ওই ফ্রেশ ওষ্ঠ জোড়া আঁকড়ে ধরবে এবং ভালোবাসা দেবে। এটা আদ্রিসের স্বপ্ন। সেই কবে থেকে নিজের ভেতরে এই স্বপ্ন পুশে রেখে এসেছে আদ্রিস। সে জানেনা আদও এই স্বপ্ন সত্যি হতে কত সময় লাগবে। তবে আদ্রিতাকে তার প্রয়োজন। ঠিক পানির মত।
“কি দেখছিস?”
“জানিনা, আপনাকে দেখতে ইচ্ছে হলো।”
“সেটা কেন?”
“মনে হচ্ছিল আপনি হারিয়ে যাবেন।”
আদ্রিসের বুকের ভেতর ধক করে উঠল। আদ্রিতার মুখে এ কথাটা শুনে ভেতরটা কেমন চুপশে যেতে লাগল।
“কেন?”
“জানিনা।”
আদ্রিস, আদ্রিতার কপালে চুমু খায়।
“বিয়ে বাড়িতে যাবি?”
“হ্যাঁ। “
“যা ফ্রেশ হয়ে আয়।”
আদ্রিতা উঠে চলে যায়। আদ্রিতার চুল লম্বা কোমড় পর্যন্ত। আদ্রিসের হাতের উপর থেকে চুল গুলো চলে গেল। আদ্রিতা হেঁটে বেরিয়ে গেল। আদ্রিস তাকিয়ে রইল। তারও কেমন একটা অনুভুতি হচ্ছে।
আসরাফ খান তার পিএয়ের সামনে বসে আছে।
“স্যার এর থেকে বেশি আপাততঃ কিছু জানা যায় নি৷”
আসরাফ খানের হাতে একটা ঘড়ি। আদ্রিসের ঘড়ি এটা।
“আজ মিরার বিয়ে। বিয়ে বাড়িতে কোন সিনক্রিয়েট চাইনা। সাহেলের ফোন দিয়ে ওর মাকে টেক্সট পাঠাও। মা আমি বাসায় আছি। আমি সত্যি আদ্রিতার সাথে বাজে আচরণ করেছিলাম বিধায় চলে এসেছি।”
“এরপর?”
“ওর ডেড বডিটা সামলে রাখো। মিরার বিয়েটা হয়ে গেল এক্সিডেন্ট দেখিয়ে দিও।”
“কিন্তু স্যার আসলে।”
“আবার কি?”
পিএ এগিয়ে গেল। ডেড বডির মুখ থেকে কাপড় সরাতে আসরাফ খান চোখ বন্ধ করে নেয়।
“বন্ধ করো।”
লাসের মুখে কাপড় দিয়ে দেওয়া হয়।
আসরাফ খানের গলা কাঁপতে থাকে,
“এ এরকম অবস্থা? “
“জি। পুরো শরীর থেকে চামড়া আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।”
আসরাফ খান আর বসে থাকতে পারলেন না।
“বলে দিও গাড়িতে আগুন লেগে গেছিল। আর তুমি কাগজ রেডি করে সন্ধ্যার ভেতর পাঠাও।”
“জি স্যার।”
আসরাফ খান গাড়িতে উঠে বসেন। তার হাত পা কাঁপছে। তিনি একটা ঘোরের ভেতরে আছে।
আদ্রিসের হিংস্রতায় তিনি ভয় পেয়ে যাচ্ছেন। তবে এরপর তিনি যা করতে যাচ্ছেন এতে কি আদও সমাধান হবে? নাকি আদ্রিস হয়ে উঠবে আরও হিংস্র।
বিয়ে বাড়িতে।
মাধবী বেগম আদ্রিসকে বার বার কল করছে কিন্তু আদ্রিস ফোনই ধরছে না। বিরক্ত হয়ে মাধবী বেগম নিজের সাথেই কথা বলা শুরু করেন। এমন সময় মেইন গেট দিয়ে আদ্রিতা এবং আদ্রিস প্রবেশ করল। আদ্রিসের পরনে কালো সুট আর আদ্রিতার পরনে খুব সুন্দর একটা গাউন জামা।
দু’জনকে দেখতে এত সুন্দর লাগছে। কিন্তু মাধবী বেগমের ধ্যান ফিরে তখন যখন মনে পড়ে পাশের মেয়েটা আদ্রিতা।
মাধবী বেগম, ছেলের সাথে আদ্রিতাকে সহ্য করবেন না। আদ্রিসের সে ভালো বিয়ে দিতে চায়। সব থেকে বড় কথা নিজের বোনের ছোট মেয়েটাকে সে আনতে চায়। এটা নিয়ে দু’জনের ভেতর বহু আগে থেকেই কথা হয়ে আছে।
মাধবী বেগম এগিয়ে আসে,
“আদ্রিস ওর হাত ছাড়ো।”
“কেন মম?”
“কেউ তোমাদের দেখলে ভাই বোন বলবে না তাই।”
“হতেও চাইনা।”
“আদ্রিস।”
আদ্রিস, আদ্রিতার হাত ছেড়ে দেয়।
“,যা মিরা আপুর কাছে যা।”
আদ্রিতা মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। মাধবী বেগম বিরক্ত হয়ে বলেন,
“কি সমস্যা আদ্রিস?”
“,তুমিই বলো। আমারত কোন সমস্যা নেই।”
“আদ্রিতাকে নিয়ে একটু বেশি মাতামাতি করো তুমি। কাল ওকে বাড়িতে কেন নিয়ে আসো নি?”
“ইচ্ছে হয়নি তাই।”
“বড্ড বিরক্তিকর আদ্রিস তুমি।”
“মম এত বেশি কেন ভাবো তুমি?”
বিয়ে বাড়িতে মেহমান এবং গান বাজনা। আনন্দ আর খাওয়া দাওয়া। বরযাত্রী চলে এলো। সবাই তাদের ওয়েলকাম করল।
বিয়েটা খুব ভালো ভাবেই কেটে গেল।
সন্ধ্যার সময়। মিরার বিদায় হয়ে গিয়েছে। সবাই টায়ার্ড হয়ে আছে।
প্রিয়ার পাশে বসে আছে আদ্রিতা। বাকি সব কাজিন রাও আছে।
তবে আদ্রিতার কান্না পাচ্ছে। সে মিরাকে অনেক ভালোবাসে।
আদ্রিস আদ্রিতার সামনেই বসে ফোন টিপছে।
এমন সময় ঐশী গিয়ে আদ্রিসের পাশে বসে।
“হেই আদ্রিস ভাইয়া।”
আদ্রিস ফোনের দিকেই মুখ করে বলে,
“হোয়াট?”
“এত রুড কেন তুমি?”
“রুডনেস এর কি দেখেছো তুমি?”
আদ্রিতা দুর থেকে শুনতে পাচ্ছে না ওরা কি বলছে কিন্তু এটা দেখে খুব জেলাস হচ্ছে যে আদ্রিস ওর সাথে কথা বলছে। সাথে ঐশীর হাত টাও আদ্রিসের কাঁধে। ঐশী ইচ্ছে করেই অনেক কাছে চলে গিয়েছে আদ্রিসের।
“বড্ড বেখেয়ালি তুমি আদ্রিস। তোমায় নিয়ে আমার চিন্তা হয়। তোমায় কিভাবে সামলাব সারাটা জীবন৷”
আদ্রিস, ডেড লুক দেয় ঐশীকে। যা দেখে ঐশী নিজের হাত সরিয়ে নেয়। এবং নিজেও সরে বসে।
“আদ্রিস ভাইয়া। কথাটা মনে রেখো। ভাইয়া ডাকবা।”
“ও ওকে এতটা রেগে কেন জাচ্ছেন?”
“বিরক্ত করোনা।”.
ঐশী সেখান থেকে উঠে যায়। আদ্রিতা মৃদু হাসে।
আদ্রিসের ফোনে তার বাবার ফোন এসেছে। আদ্রিস তা দেখে উঠে যায় সোফা থেকে।
” হ্যালো ড্যাড।”
“আদ্রিস মেনশনে এসো দ্রুত।? “
“কেন ড্যাড?”..
“আদ্রিস প্লিজ দ্রুত এসো। প্রশ্ন করোনা।”
“ওকে। আসছি।”
আদ্রিস ফোনটা পকেটে নিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলে একবার পিছে ফিরে তাকায়। আদ্রিতা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আদ্রিসের কেমন একটা লাগছে যেন একটাই তার শেষ দেখা।
আদ্রিস বুকে হাত রাখে। আদ্রিতা তখনো তাকিয়ে ছিল আদ্রিসের দিকে। ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে আদ্রিতার ওষ্ঠ জোড়া আঁকড়ে ধরতে।
কিন্তু আদ্রিস নিজের ইচ্ছে গুলো নিজের ভেতর চাপা দিয়ে বেরিয়ে গেল। আদ্রিতা তাকিয়ে রইল সে দিকে।
হটাৎ চোখ বেয়ে টুপ করে গড়িয়ে পড়ল এক ফোঁটা পানি। যার অর্থা আদ্রিতা নিজেও জানেনা। আদ্রিতা মিরার জন্য কান্না করছিল। তাই কেউ সে দিকে খেয়াল করল না।
আদ্রিস এবং আসরাফ খান মুখোমুখি বসে আছে। তবে আদ্রিস দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে আদ্রিস।
“হোয়াট হ্যাপেন্ড ড্যাড?”..
” ২ ঘন্টা পর তোমার ফ্লাইট। রাশিয়া যাচ্ছো তুমি। ওখানের ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন হয়ে গিয়েছে তোমার। তুমিত জানো তোমার মামা জহিরুল ইসলাম থাকেন সেখানে। তার ইউনিভার্সিটিতেই তোমার এডমিশন হয়েছে।”
কথাটা শোনা মাত্র আদ্রিসের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। তবে চোখে মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট।
“হু দ্যা হেল আর ইউ টু ডিজাইড দ্যাট ড্যাড?”
“আদ্রিস আমি তোমার ড্যাড।”
“সেই জন্যই এখনো চুপ আছি। টিকিক ক্যান্সেল করো। আমি কোথাও যাব না। আর না করলেও সমস্যা নেই। ওটা এমনিতেও ওয়েস্ট হবে।”
“তাহলে কি চাও আদ্রিতাকে চিরদিনের মত গ্রামে পাঠিয়ে দেই মোরল মসাই এর সাথে বিয়ে করিয়ে দেই?”
আদ্রিসের চোখ বড় বড় হয়ে যায় সেই সাথে রাগে কপালের রগ গুলো ফুলে উঠেছে। আদ্রিস দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“আর ইউ কিডিং মি ড্যাড?”
“নো। আমি মোটেই মজা করছি না। তুমি জানো এই মুহুর্তে তোমার থেকে ক্ষমতা আমার বেশি। নেওয়াজ ভাইও আমার কথাই শুনবে। তুমি চাইলেও আমায় ঠেকাতে পারবে না। আমি আদ্রিতাকে মেরেও ফেলতে পারি।”
“সাট আপ ড্যাড। তুমি ড্যাড বলে নাহলে এতক্ষণ…..”
“এতক্ষণে আমারো অবস্থা সাহেল এবং এভির মত হতো তাইনা আদ্রিস?”
থেমে যায় আদ্রিস, বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছে তার পৃথিবী উল্টে গিয়েছে।
“তুমি খুব চালাক আদ্রিস কিন্তু ভুলে যেও না আমি তোমার ড্যাড। আদ্রিতা তোমার জন্য হার্ম হলে আমি আদ্রিতাকেই সরিয়ে দেব রাস্তা থেকে। তুমি জানো এই মুহুর্তে তুমি আমার ক্ষমতার কাছে কিছুই নও। ডিসিশন তোমার।”
আদ্রিস স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। কোন কথা বলছে না। এটা সত্যি যে আসরাফ খান যেটা বলছে সেটা সে করতেই পারে।
“তুমি কি চাও ড্যাড?”
“টেবিলের উপর কাগজ গুলো পড়েই আছে আদ্রিস।”
“আমি চলে যাওয়ার পর আমার কলিজায় কেউ হাত দেবে না এটার নিশ্চয়তা?”
“আমি দিচ্ছি। বাবা হিসাবে তোমাকে দেওয়া এ কথা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পালন করব। “
আদ্রিস নিজের পায়ের বল হারায়। হাঁটু ভাজ করে বসে পড়ে মাটিতে। চোখ দিয়ে নোনা পানির স্রোত গড়িয়ে পড়তে থাকে। ছেলেটা কাঁদতেও জানে। আদ্রিসকে কাশতে দেখা আমাবস্যায় চাঁদের মতই।
আদ্রিস সহজে কাদে না।
আসরাফ খানের মায়া হয়।
“আদ্রিস আমি।”
আদ্রিস থামিয়ে দেয় বাবাকে,
“একটা কথা মনে রেখো ড্যাড আদ্রিস খান ওকে রেখে যাচ্ছে। মরে যাচ্ছে না। আদ্রিস খানের নিঃশ্বাস থাকতে ওর গায়ে কোন আচ পড়লে ধ্বংস করে দেব আমি সব।”
আসরাফ খান দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
“আমি আমার কলিজা ছিড়ে রেখে যাচ্ছি ড্যাড। আমি তাকে অক্ষত চাই।”
“সেটাই হবে।”
আদ্রিস পুনরায় বলে,
“সি ইজ মাইন ড্যাড। অনলি আদ্রিস খান কেন টাচ হার৷”.
আসরাফ খান দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আবারো।
“তুলে নেও কাগজ গুলো। দেখা করবে মম এর সাথে?”
“না। কারোর সাথে দেখা করব না আমি। কথাও বলব না। যে ফিরব কথা দিচ্ছি তোমার থেকে দ্বিগুণ ক্ষমতা হাসিল করে ফিরব। তোমার ক্ষমতার কাছে মাথা নুইয়েছি ড্যাড জাস্ট আমাকে ফিরতে দেও।”
আদ্রিস কথাটা বলে বেরিয়ে গেল।
“আদ্রিস।”
আদ্রিস দাঁড়াল না। বেরিয়ে গেল মেনশন থেকে। গাড়িতে ওঠার পর থেকেই নিজেকে কেমন শূণ্য শূণ্য লাগছে। যেন পুরো পৃথিবী তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিয়েছে। ব্যাস্ত শহরে দুঃখ গুলোকে একান্ত নিজের বলে মনে হয়। সবাই নিজের কাজে ব্যাস্ত। আদ্রিস ফোন বের করে কাউকে কল করে।
তাকে কিছু বলে ফোন কেটে দেয়।
“ওয়েট ফর মি জান। আদ্রিস খান শুধুমাত্র তোর জন্য ফিরবে। এবার ভয়ঙ্কর রূপেই ফিরবে।”
আদ্রিতার চোখ দু’টো শুধু আদ্রিস কেই খুঁজেছে। কিন্তু কই আদ্রিস। আদ্রিস নেই কোথাও।
সে রাতটা ওভাবে কেটে যায়।
পর দিন সকালে সবাই মেনশনে ফিরে আসে। প্রিয়া, আদ্রিতার হাত ধরে বলে,
“তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?”
“কেমন দেখাচ্ছে আপু?”
“খুব দুঃখ লেগেছে কিছু নিয়ে?”
“না।”..
” কাউকে খুঁজছিস? “
“না আপু।”..
আদ্রিতা ভেতরে চলে আসে। প্রিয়া ভাবছে কাহিনি কি। আদ্রিসকেও দেখছে না কাল থেকে।
বিকালের দিকে।
মাধবী বেগম রুম থেকে বেরিয়ে চিৎকার করে আদ্রিতাকে ডাকছে।
” আদ্রিতার বাচ্চা মুখপুরি বাহিরে আয় তুই। এক্ষুনি আয়।”
আদ্রিতা, চিৎকার শুনে বেরিয়ে আসে।
“কি হয়েছে বড় মা? “
আদ্রিতা এগিয়ে আসতে মাধবী বেগম চড় বসিয়ে দেয় আদ্রিতার গালে। আদ্রিতা ছিটে পড়ে। প্রিয়া এ দৃশ্য দেখে দৌড়ে আসে। ততক্ষণে মাধবী বেগম আদ্রিতার হাত ধরে ওকে উঠিয়ে আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় গালে।
চলবে?
Share On:
TAGS: জেন্টাল মন্সটার, লামিয়া রহমান মেঘলা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ২
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১১
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৩
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৮
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৫
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৪
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৬
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৪
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৬
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১