জেন্টাল_মন্সটার
লামিয়ারহমানমেঘলা
পর্ব_০৫
পর দিন সকাল সকাল আদ্রিতার ঘুম ভাঙলে সে নিজেকে আদ্রিস এর রুমে দেখে অবাক হয়ে যায়।
বিভ্রান্ত হয়ে বিছনা ছেড়ে উঠতে নিলে টের পায় কেউ তার কোমড় জড়িয়ে ধরে রেখেছে শক্ত করে। আদ্রিতা পাশে ফিরে তাকায়। আদ্রিস ঘুমিয়ে আছে।
সকালের ঝিকমিক সূর্যের আলো পর্দায় ফাঁকে ফাঁকে রুমে প্রবেশ করছে। মাঝে মধ্যে আদ্রিসের চোখের উপর এসে পড়ছে।
আদ্রিতা বেশ অনেকটা সময় তাকিয়ে রইল সে দিকে। এরপর সে ভাবল।
“রাতে ত মিরা আপুর সাথে ছিলাম। তাহলে এখানে কিভাবে এলাম।”
এসব কথা ভাবতে ভাবতে আদ্রিতাকে, আদ্রিস আরও বেশি কাছে টেনে নিল। আদ্রিতার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
আদ্রিস, আদ্রিতার ঘাড়ে মাথা রেখে ঠিকঠাক হয়ে ফের ঘুমায়।
আদ্রিতা এবার ধিরে আদ্রিসের হাত সরাতে চায় কিন্তু ফলশ্রুতিতে আদ্রিসের ঘুম ভেঙে যায়।
সে চোখ খুলে তাকায়।
“কি সমস্যা? সকাল সকাল তুই আমাকেই পেয়েছিলি ঘুম নষ্ট করার জন্য? “
“আদ্রিস ভাইয়া ছাড়ুন। এভাবে জড়িয়ে ধরেছেন কেন? কেউ দেখে ফেলবে আমি নিচে যাব।”
“আদ্রিস ভেইয়া ছেড়ুন, কেউ দেখে ফেলবে [ ব্যাঙ্গ করে ]। “
আদ্রিতা হা করে তাকিয়ে আছে। কি বাজে লোক। কিভাবে ব্যাঙ্গ করছে।
“কি? হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?”
“এরাম ভাবে বলছেন কেন? আমি কি একা একা এখানে এসেছি। আমিত মিরা আপুর সাথে ঘুমিয়ে ছিলাম।”
“তোকে কি সারা জীবন মিরা আপুর সাথেই ঘুমাতে দেব?”
“ভারি আজব। আমি কখন তা বললাম?”
“তর্ক করছিস কেন?’
আদ্রিতা, এই কথাটা শুনে রীতিমতো হা হয়ে গেছে,
” তর্ক করলাম কখন?”
আদ্রিস, আদ্রিতার, ঘাড়ে আবার নাক গুঁজে।
“ঘুমোতে দে।’
” না ছাড়ুন, সকাল হয়েছে কেউ দেখলে কি হবে? আমাকেত পঁচা ভাববে। বড় মা বলেছে কোন ছেলের কাছে এত কাছে যাবেনা। এটা বাজে কথা৷”
আদ্রিস আদ্রিতার কপাল থেকে চুল সরিয়ে বলে,
“ঠিকই বলেছে আম্মু। কিন্তু তোকে আমি বলেছিলাম, আমি বাদে পৃথিবীর সব পুরুষের টাচ তোর জন্য ব্যাড টাচ। অর্থাৎ আমি ছুতে পারি। “
“আহা ছাড়ুন আপনি। আপনিও ছলে মানুষ।”
আদ্রিস, আদ্রিতার চোয়াল শক্ত করে ধরে নিজের দিকে ফেরায়,
“আমার কথা কবে এক বারে বুঝবি তুই?”
আদ্রিসের হাত, আদ্রিতা যতই ছাড়াতে চাইতে আদ্রিসের হাত ততই শক্ত হচ্ছে।
আদ্রিতা এবার ব্যাথায় কাতরে ওঠে,
“আহ… ব্যাথা পাচ্ছি ছাড়ুন।”
আদ্রিস ফের মাথা তুলে তাকায়,
“কি রে বাবা তোকেত এখনো ঠিক মত ধরলামই না।
এখনই ব্যাথা শুরু হয়ে গেল।”
আদ্রিতা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
“ধরেছেন নাত কি করেছেন?”
“এরকম আহ উহ শব্দ করবি না। আমি টার্ন অন হয়ে গেলে সামলাতে পারবি না বলে দিলাম।”
আদ্রিতার মাথার ২ বিঘাত উপর দিয়ে যাচ্ছে আদ্রিসের কথা গুলো।
সে হুট করেই আদ্রিসের হাতে চিমটি কেটে দেয়। আদ্রিস হাত সরিয়ে আনতে আদ্রিতা উঠে দৌড় লাগায়। আদ্রিস চাইলে ধরতে পারত। কিন্তু সে ধরল না। বিছনায় শুইয়েই আদ্রিতাকে যেতে দেখল।
নিচের ঠোঁট নিজেই কামড়ে ধরে।
“পাখি তুই মুক্ত আকাশে উড়বি সারা দিন। কিন্তু রাত হলে আমার খাঁচায় তোকে ফিরতে হবে। তোর গন্তব্য তীর বিহীন সমুদ্রের মাঝে বন্দি খাঁচার পাখির মত। যে পাখি সারা দিন উড়ে তীর খুঁজে না পেয়ে ফের নিজের খাঁচায় ফিরে আসে। “
সকালের ব্রেকফাস্ট শেষ করে আদ্রিসের খালা, খালু চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পর্শুদিন মিরাদের বাড়িতে সবাই। বিয়ের আগে শপিং আছে। তাই বাচ্চা দের নিয়ে মাধবী বেগম যাবে প্রথম এরপর বিয়ের আগেই আসরাফ খান এবং নেওয়াজ খান যাবেন।
সব ঠিকঠাক করে তারা চলে যায় খান মেনশন থেকে। যাবার সময় জারিফ, আদ্রিতার কাছে এসে বলে,
“আদ্রিতা, কাল তোর জন্য এটা নিয়ে এসেছিলাম।”
“এটা কি?”
“একটা চকলেট, সবাইকে দিয়েছি তোকে দেওয়া হয়নি।”
“ওও আমি কোথায় ছিলাম?”
“জানিনা পাইনি তোকে।”
“ও..”
আদ্রিতা খুশি হয়ে চকলেট টা নিয়ে নেয়। মেইন ডোরের সামনে পকেটে হাত গুঁজে আদ্রিস সেটা দেখছে। তার পরনে কালো হুডি। মাথায় হুডির টুপি টা উঠানো। হটাৎ করেই কেউ দেখলে প্রেমে পরে যাবে। ফর্সা শরীরে কালো রং বেশ মানায় যে।
জারিফ চলে যায় আদ্রিতা খুশি হয়ে হাতের ইসারায় টাটা দেয়।
মিরা হুট করে পেছন থেকে আদ্রিসের কানের কাছে এসে ফিসফিসে বলে,
“সব রাতেই হবু বউকে নিয়ে ঘুমাস নাকি কালই ঘুমিয়েছিলি।”
হটাৎ মিরার ফিসফিসানি শুনে আদ্রিস সোজা হয়ে দাঁড়ায়। মিরা এক ভ্রু উঠিয়ে আদ্রিসের দিকেই তাকিয়ে আছে।
“তুমি কিভাবে জানলে?”
মিরা আদ্রিসের ঘাড়ে হাত দিয়ে বলে,
“আচ্ছা বেটা, উল্টা চোর পুলশ কো ধামকায়ে হু।”
“নো, আই নট থিফ, সি ইজ মাইন।”
“হ হ সি ইজ মাইন। সামলে রাখিস। খুবই আলতো করে সামলাবি। রাগ করবিনা মোটেই।”
মিরা কথা গুলো বলে সোজা হেটে আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে। এরপর বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে।
ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করে। গাড়িটা খান মেনশন থেকে বেরিয়ে যায়। সবাই ভেতরে চলে আসে একে একে।
আদ্রিতা খুশি মনে ভেতরে আসার আগেই আদ্রিস ওর কুনুই ধরে টেনে বাগানে নিয়ে আসে।
আদ্রিতা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আদ্রিসের দিকে।
“ক কি হয়েছে?”
“চকলেট টা ফেল।”
আদ্রিতা হাতের মুঠোয় চকলেট টার দিকে দেখে। কিন্তু ফেলার ওর একটুও মন নেই। সে শক্ত করে ধরে জিজ্ঞেস করে,
“কেন?”
“বলেছি তাই। ফেল।”
“না। সবাই পেয়েছে আমি পেলে কি সমস্যা? “
আদ্রিস এবার জোরপূর্বক আদ্রিতার থেকে চকলেট টা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে। আদ্রিতা কিছু বলার আগেই।
আদ্রিতার ছোট্ট মনটা ভেঙে যায়।
“কেন করলেন এমন?”
“তোকে চকলেট দেওয়ার অধিকার শুধু আমার। আমি বাদে সবার চকলেট এভোএট করবি।”
কথাটা বলে আদ্রিস ভেতরে চলে যায়। আদ্রিতা সে দিকে তাকিয়ে থাকে।
তার পুরো জীবনে এতটা মাথা গরম করা মানুষ সে কখনো দেখেনি।
আদ্রিতা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে। তার কাছে এটাই মনে হয় হয়ত আদ্রিসের চোখে তার খুশিটা সহ্য হয়না।
বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে বিধস্ত এক লাস পাওয়া গিয়েছে। চোখ দু’টো উপড়ে ফেলা। তার থেকে বড় কথা হাত পা খন্ড খন্ড করে কাটা। একটা ব্যাগে ভরে সেটাকে ফেলা হয়েছে। লাসটা কোথা থেকে এসেছে কেউ জানেনা। কার এটাও এখনো পর্যন্ত সনাক্ত করা যায়নি।
তবে এতটুকু জানা গিয়েছে খুন কাল রাতে হয়েছে। কারণ লাসের অবস্থা সেটাই বলছে।
তবে কোন সাধারণ সাভাবিক মানুষ কাউকে এতটা বাজে ভাবে মারতে পারে এটা একটা ভীষণ ভয়ানক ব্যাপার।
ঢাকা শহরে এমন কোন জঙ্গলও নেই যেখান থেকে কোন পশু এসে এমন কাজ করবে।
পুলিশ তদন্ত করছে।
আপর দিকে জাকারিয়া মির্জার ছেলে এভি মির্জা তাকে পাওয়া যাচ্ছে না কাল থেকে।
পুলিশ অবশ্য খুনের লাসটাকে এভির বলতে পারেনি কারণ এভির কোন চিহ্নই লাসটার ভেতরে ওরা পায়নি। ডি এন এ টেস্ট করার পর বোঝা যাবে। তবে শুধুমাত্র রক্ত বাদে মৃত দেহের থেকে কিছুই স্যাম্পল নেওয়া পসিবল হয়নি।
আসরাফ খান মনোযোগ দিয়ে সব সংবাদ গুলো শুনছিলেন।
এমন সময় আদ্রিস গিয়ে বাবার মুখোমুখি বসে।
আসরাফ খান হটাৎ করেই চমকে উঠেন।
“ওহ আদ্রিস তুমি।”
“ড্যাড কি দেখছো এত মনোযোগ দিয়ে?”
“কিছু না। সংবাদ দেখছিলাম।”
আদ্রিস তখন নিজের ফোনে মনোযোগ দেয়।
“তবে আদ্রিস।”
“জি।”
“কাল তোমার সাথে এভির ঝামেল হয়েছিল কি?”
আদ্রিস নিজের ফোন থেকে মাথা সরিয়ে বাবার দিকে তাকায়।
“কেন বলোত?’
” না মানে গলির মোড়ে তোমার আফতাফ চাচু আমায় বলল তুমি নাকি কাল এভির আর ওর সাঙ্গপাঙ্গ দের মেরেছো।”
“হ্যাঁ মেরেছি। কারণ ছিল।’
” জানতে পারি কি কারণ ছিল?’
“আমার বোনদের ছবি উঠাচ্ছিল।”
“বেশ ভালো করেছো তাহলে। তবে আদ্রিস তুমি কি জানো এভিকে পাওয়া যাচ্ছে না।”
“না। এত খবর রাখার সময় নেই ড্যাড।”
আদ্রিস কথাটা বলে উঠে চলে গেল।
আসরাফ খান শান্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। তবে তার চেহারায় স্পষ্ট কিছুর ভয় দেখা গেল। যেটা একান্ত তার ভেতরের ভয়।
আদ্রিস রুমে যেতে যেতে বাঁকা হাসল। তবে সেই হাসির অর্থ আদ্রিস বাদে কেউই জানেনা।
দেখতে দেখতে কেটে গেছে ৪ দিন। আজ মাধবী বেগম সবাইকে নিয়ে মিরাদের বাড়িতে যাবে। সবাই খুবই এক্সাইটেড।
আদ্রিতা নিজের জামা গোছাচ্ছিল। হটাৎ করেই তার জামার নিচে অনেক গুলো চকলেট দেখতে পায়।
আদ্রিতা বেশ অবাক হয়। সে কোন চকলেট আনেবি। তবে এই চকলেট গুলো কে এখানে রাখল। আদ্রিতার রুমেত কেউ তেমন আসেনা প্রিয়া বাদে। তবে কি প্রিয়া রেখেছে। আদ্রিতা চকলেট গুলো হাতে নিয়ে এদিক ওদিক দেখে। তার পছন্দের চকলেট গুলো। আদ্রিতা মনে মনে খুশি হলেও ভাবে যে এটার মালিক যদি সে না হয়।
চলবে?
Share On:
TAGS: জেন্টাল মন্সটার, লামিয়া রহমান মেঘলা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১১
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৪
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৩
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৫
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১২
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৭
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৩
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৪
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৬