জেন্টাল_মন্সটার
লামিয়ারহমানমেঘলা
পর্ব_১৩
চোখোর সামনে জামাটা পুড়ে ছাই হয়েছে। আদ্রিসের দৃষ্টি তখনো সে দিকে স্থির।
কিছুক্ষণ পর আদ্রিস, আদ্রিতার দিকে তাকায়। আদ্রিতা তা দেখে নিজের পা দু’টো আরও শক্ত করে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।
ভয়ে তার শরীর কাঁপছে। পারলে সে দেয়াল ভেঙে ওপাশে চলে যায়।
আদ্রিস এগিয়ে আসে আদ্রিতার দিকে। আদ্রিতার চোখে মুখে ভয় দেখে আদ্রিস হাঁটু ভাজ করে বসে আদ্রিতার সামনে।
“ভয় পাচ্ছিস?”
আদ্রিতা কিছু বলেনা। হেঁচকি তুলছে শুধু। আদ্রিস এবার শব্দ করে বলে ওঠে,
“ভয় পাচ্ছিস?”
“হ হ্যা।”..
আদ্রিতা মাথা নামিয়ে নেয়। ভয়ে একটা বলের মত নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।
” তুই কি আর কখনো সাদা জামা পরার সাহস করবি?”..
“ন না। আ আর কোন দিন না।”
“ঠিকত?”
“হ হ্যা।”
আদ্রিস উঠে দাঁড়ায়। আদ্রিতার কনুই ধরে ওকে দাঁড় করায়। আদ্রিতা নিজের ওড়না চেপে ধরে তার ভয় লজ্জা আতঙ্ক সব রকম অনুভুতি হচ্ছে এক সঙ্গে।
আদ্রিস ঠাস করে ধাক্কা মেরে মেয়েটাকে বিছনায় ফেলে।
“রুম থেকে বের হবি না। অবশ্য সে উপায় তোকে দিচ্ছিও না। আমি যতক্ষণ না চাইব তুই কিছু পরতে পারবি না।”
“ক কিন্তু।”
আদ্রিস, আদ্রিতার চোখের দিকে তাকায়।
আদ্রিতা ভয় পেয়ে যায়। সে মাথা নামিয়ে নেয়।
আদ্রিস বেরিয়ে যায় যাবার সময় দরজা বন্ধ করে দেয় বাহির থেকে।
আদ্রিতা তাকিয়ে রয় দরজার দিকে। আদ্রিতা মাথা নামিয়ে নেয়। এভাবে থাকা যায়। তবে আদ্রিসের চোখে কোন লালসা দেখেনি আদ্রিতা। দেখেছে শুধু ক্রোধ। আদ্রিতা তাকায় কাবার্ডের দিকে।
আদ্রিসকে বেরিয়ে যেতে দেখে মাধবী বেগম এগিয়ে যায়। কিন্তু আদ্রিস ততক্ষণে বেরিয়ে গেছে।
মাধবী বেগম অবাক হয়। কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। হটাৎ কি হলো।
আদ্রিস বেরিয়ে গেলে মালিহা বেগম, আফজাল শেখ, জারিফ, ঐশী সবাই আসে খান মেনশনে।
“আরে মালিহা তুই। “
মালিহা বেগম, বোনকে জড়িয়ে ধরে।
“কেমন আছো আপু?”
“এইত। জানিসত… “
মাধবী বেগমকে থামিয়ে দিয়ে মালিহা বেগম বললেন,
“আদ্রিস এসেছে তাইত?”
“হ্যাঁ আদ্রিস এসেছে। আমার ছেলেটা কত দিন পর ফিরেছে।”
“কোথায় সে। তার জন্যই এলাম।”
“মাত্র বাহিরে গিয়েছে হয়ত কোন কাজ আছে।”
ঐশী এগিয়ে আসে,
“ও মামনি ব্যাড টাইমিং হয়ে গেল। আরেকটু আগে আসলে ওকে যেতেই দিতাম না।”
এই ৫ বছরে ঐশী বেশ সুন্দরী হয়ে উঠেছে।
তবে সে প্রসাধনী লাগানোতে মনোযোগ দিয়েছে। বেশ সাজুগুজু শিখেছে এত দিনে।
ঐশী অফ হোয়াইট রঙা একটা টপস এবং জিন্স পরে এসেছে।
মাধবী বেগম ঐশীকে জড়িয়ে ধরে,
“সেটাইত চাই আমি। তুই চলে এসেছিস এখন আর আমার ভয় নেই। দুলাভাই আপনি রুমে গিয়ে বসুন। আমি সার্ভেন্ট কে বলে নাস্তা পাঠাচ্ছি।”
আফজান শেখ এতক্ষণ ফোনে কথা বলছিলেন। ফেন কাটতে মাধবী বেগমের কথা শুনে তিনি ভেতরে চলে গেলেন।
“ঐশী যাও মা প্রিয়া মিশু রুমেই আছে।”
“ঠিক আছে মামনি। “..
ঐশী চলে যায়। মাধবী বেগম, মালিহা বেগমের হাত ধরে বলে,
” আমার সাথে আয়।”
দু’জন মাধবী বেগমের রুমে চলে যায়।
“কি হয়েছে আপা?”
“ঐশীকে কিছু দিনের জন্য রাখতে চাচ্ছি।”
“কিন্তু ওরত পরিক্ষা।”
“জানি আদ্রিতারও পরিক্ষা এক সাথে দেবে।”
“আপা তুমিত ওকে চিনো আদ্রিতার সাথে যে কখনোই যাবেনা।”
“আমি মেনশনের ড্রাইভার দিয়ে ওকে পাঠাব সমস্যা নেই।”
“তোমার মাথায় কি চলছে আপা?”
“আমি আদ্রিসের কাছে কাছে রাখতে চাই ঐশীকে।”
মালিহা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
রেভেন দাঁড়িয়ে আছে পুরাতন একটা পরিত্যক্ত শপিংমলের সামনে।
ভাঙাচোরা বিল্ডিং। এই খানে আগুন লেগেছিল ফলে শপিংমল ছেড়ে সবাই চলে গিয়েছে।
“আমায় বস এখানেই কেন আসতে বলল?”
রেভেনের ভাবনার মাঝে হুট করেই একটা ব্লাজ মার্সিডিজ দ্রুত বেগে এসে রেভেনের সামনে থামে।
রেভেন ভয় পেয়ে যায়।
“ওও মাই গুড নেস।”
রেভেন বুকে হাত রাখে,
“আআহহহ বস। ভয় পাইয়ে দিলেন। আমার আত্মা বেরিয়ে গেছিল ইউ নো।”
রেভেন দেখে আদ্রিসের দিকে। আদ্রিসের চোখের দিকে তাকিয়ে রেভেন শুঁকনো ঢোক গিলে।
আদ্রিস রেগে আছে অতিরিক্ত রাগে তার কপালের রগ ফুলে উঠেছে।
“হেলমেট।”
রেভেন কাপা হাতে আদ্রিসকে হেলমেট এগিয়ে দেয়। আদ্রিসের হাতে হকি স্টিক নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।
গার্ড’স আদ্রিসকে গ্রিট করে।
আদ্রিস তাদের দিকে তাকায়। এরাই আদ্রিসের সাথে ছিল। চারজন আদ্রিসের খুবই কাছের মানুষ।
“স্যার আপনি যেভাবে বলেছিলেন সেভাবেই ওনাকে রাখা হয়েছে।’
“গুড।”
আদ্রিস এগিয়ে যায়। চেয়ারের সাথে হাত বা বাঁধা অবস্থায় একটি ছেলে বসে আছে। পরনের পোশাকে কাঁদা মাটি লেগে আছে।
তার মুখের উপর কালো কাপড় দেওয়া। সে এই মুহুর্তে কিছুই দেখতে পারছে না।
আশেপাশে কারোর পদধ্বনি শুনে ছেলেটা মাথা উঁচু করে।
“ক কেউ আছেন। আ আমাকে কেন বেঁধে রাখা হয়েছে। আমার কি দোষ।”
আদ্রিস ইসারা করে। গার্ড গিয়ে লোকটার মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দেয়। ছেলেটার চোখের সামনে সব কিছু ক্লিয়ার হতে সময় লাগে।
চোখের সামনে গার্ড’স দের হাতে বন্দুক দেখে ছেলেটা ভয় পেয়ে যায়৷।
“আ আমার কি অপরাধ?”
“তুই নিজের জীবনের সব থেকে জঘন্যতম অপরাধ টা করেছিস।”
“আ আমি কি করেছি।”
আদ্রিস নিচু হয়ে ছেলেটার চোখে তাকায়।
“তুই সে দিকে নজর দিয়েছিস যেটা শুধুমাত্র আমার। তুই সম্পত্তির উপর বদনজর দিয়েছিস।”
“ব বিশ্বাস করুন আমি এমন কিছুই করিনি।”
আদ্রিস বাঁকা হাসে।
“তোর চোখের এই ভয় আমাকে শান্ত করছে। আমার ভেতরের আগুন ঠান্ডা হচ্ছে। মানুষের মৃত্যুর আগের এই ভয়টা দেখে আমার খুশি হয়। ভীষণ খুশি হয়।”
“আ আমার দোষটা কি।”
আদ্রিসের চেখ দু’টো পুনরায় ভয়ঙ্কর হয়ে যায়।
“কে পাঠিয়েছে তোকে?’
” ম মানে?”
“খান মেনশনে কাজ করতে তোকে কে পাঠিয়েছে?”
“কেউ না। আমার টাকার প্রয়োজন ছিল তাই কাজ করতে গেছিলাম।”
“কুত্তা প্রভু ভক্ত হয়। তোর মত কুত্তা প্রভুর খুব ভক্তি করে এটা আমার বোঝা উচিত ছিল।”
“বিশ্বাস করুন স্যার আমি কিছু করিনি।”
“কিছু করিস নি তুই?”
“হ্যাঁ। আমাকে কিসের শাস্তি দিচ্ছেন এটাত বলেন।”
“তুই কার শরীরের উপর নজর দিয়েছিস?
ডিড ইউ নো হু সি ইজ? সি ইজ ফাকিং মাই প্রপাটি।
শুধুমাত্র আমার সেই অধিকার আছে ওর শরীরের দিকে লালসা দৃষ্টি নিক্ষেপ করা। শুধুমাত্র আমি পারি ওকে ছুঁতে।
জানিস ওকে আমি ছোট থেকে কি শিখিয়েছি? আমি বাদে পৃথিবীর সব পুরুষের স্পর্শ ওর জন্য হারাম। আর তুই আমার সেই সম্পত্তির উপর নজর রেখেছিস। বলনা তোকে ঠিক কিভাবে মারলে তুই খুশি হবি? যদিও এই অপশনটা আমি সবাইকে দেইনা কিন্তু তোকে দিলাম। মৃত্যুর আগে তোর শেষ ইচ্ছে। বল কিভাবে মারব,? কিন্তু আমার একটা ইচ্ছে যেটাত আমি পূর্ণ করব। তোর চোখ দু’টো আগে খুঁচে বের করব। যে চোখ আমার কলিজার উপর পড়েছে সেই চোখত থাকবে না।”
লোকটা ভয়ে ঘেমে গিয়েছে।
“আ আমি আর কখনো এমন করব না। বিশ্বাস করুন আর কখনো এমন করব না। “
আরহাম ইসারা করে তাকে একটা সরু চিকন চাকু ধরে দেওয়া হয়।
লোকটা সেটা দেখে আরও ভয় পেয়ে যায়।
“তুই এটা করার জন্য দ্বিতীয় বার জীবিত থাকবি না। তুই যার উপর নজর রেখেছিস ওটা আমার কলিজা। তুই জানিস যখন তোর দৃষ্টি ওর ঘামে ভেজা শরীর থেকে মজা নিচ্ছিল। তখন আমার ভেতরটা কেমন লাগছিল? চল তোকে অনুভব করাই।”
কথাটা বলে আদ্রিস, ছেলেটার চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরে।
রেভেন মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কারণ সে জানে এখন কি হতে চলেছে।
আদ্রিসের হাতে সরু ছুরিটা ছেলেটার ডান চোখের ভেতর প্রবেশ করে। সাথে সাথে ছেলেটা চিৎকার করে ওঠে জীবন বাঁচাতে। আদ্রিস চাকুটাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চোখ টাকে বের করে আনে।
হাতের উপর জ্যান্ত চোখটা এসে পড়ে। রক্তের স্রোত বয়ে গেছে। ছিটে আদ্রিসের মুখে সার্টে লেগেছে।
আদ্রিসের ঠোঁটে বাঁকা হাসি।
“ইউ হ্যাভ বিউটিফুল আইস বয়।”..
রেভেন, ছেলেটার চিৎকার শুনতে পাচ্ছে স্পষ্ট।
আদ্রিস এক সেকেন্ড অপেক্ষা না করে ছেলেটার বাম চোখে আঘাত করল।
চোখ দু’টো এভাবে উঠে আসার ফলে ছেলেটা জ্ঞান হারায়।
আদ্রিস তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ ছেলেটার দিকে।
“Called me crazy. Yes i am crazy but only for her.”
আদ্রিস পকেট থেকে বন্দুক।বের করে ছেলেটার দিলে তাক করে।
মাথা, বুক এবং পেটে নিশানা লাগায়।
“গো টু হেল।”
আদ্রিস বেরিয়ে যায়।
রেভেন দ্রুত আদ্রিসের পিছু পিছু যায়। আদ্রিসকে এই মুহুর্তে ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। ওর চোখে মুখে রক্ত ছিটে লেগেছে। সাদা সার্ট ভরে গিয়েছে।
আদ্রিসের হাতে ছেলেটার উপরে ফেলা চোখ দু’টো ছিল।
পাশেই কিছু কুকুর জড়ো হয়ে ছিল।আদ্রিস বাঁকা হেসে চোখ দু’টো সে দিকে নিক্ষেপ করে। কুকুর গুলো মুহুর্তের ভেতর সেটা ছিঁড়ে খেয়ে ফেলে।
“ওর দিকে তাকানো প্রতিটা চোখের শেষ পরিণতি এটাই।”
“বস এভাবে যাবেন বাড়িতে?”
“না। চেঞ্জ করতে হবে।”
“এ একটা কথা বলব।”
আদ্রিস ফিরে তাকায়।
“হোয়াট?”
“ভ ভাবি যদি কখনো আপনার এই দিকটা সম্পর্কে জানতে পারে?”
আদ্রিস হেলমেট টা খুলে গাড়িতে রাখতে রাখতে বলে,
“ওর কাছে আমি ব্যাতিত কোন রাস্তা নেই। ওর জন্য পৃথিবীর সকল রাস্তা বন্ধ। যে রাস্তা গুলো আমি নিজ হাতে বন্ধ করেছি।
She is mine. It will be good for her if she accepts me. If she doesn’t, I know what else to do.”
রেভেন বুঝতে পারে এই লোকটা সাইকো। পুরোটাই সাইকো। আর কেন সাইকো তা আজ বোঝা হয়ে গেল।
খান মেনশন।
আদ্রিতা ওভাবেই ঘুমিয়ে গেছে। কি আর করবে। বহু বার চেষ্টা করেছে বের হবার পারেনি।
আদ্রিসের একটা সার্ট পরে নিয়েছে।
আর কিছু করারও নেই।
নিচে,
ঐশী এদিক ওদিক আদ্রিতাকে খুঁজছে,
“মামনি আদ্রিতা কোথায়?”
মাধবী বেগম ঐশীর প্রশ্ন শুনে ঐশীর দিকে তাকায়।
“কেন?”
“না মানে ওকে দেখছি না। আজ সব কাজ সার্ভেন্ট ই করছে। মামনি প্লিজ আমার কাজটা যেন আদ্রিতাই করে।”
মাধবী বেগম কিছু বলবে তার আগেই কারোর গম্ভীর কন্ঠ শোনা গেল,
“কেন সে তোমার চাকর নাকি। তোমার কাজ সে কেন করবে?’
চলবে?
Share On:
TAGS: জেন্টাল মন্সটার, লামিয়া রহমান মেঘলা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৪
-
জেন্টাল মন্সটার গল্পের লিংক
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৯
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৬
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৭
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১২
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১০
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৫
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৩