জেন্টাল_মন্সটার
লামিয়ারহমানমেঘলা
পর্ব_১২
গত ২ ঘন্টা যাবত আদ্রিতা বসে আছে আদ্রিসের রুমের সোফায়।
আদ্রিতার এবার ঘুম পাচ্ছে। এভাবে মুখ বন্ধ করে বসে থাকা যায়। তার সামনেই বিছনায় শুয়ে ফোন টিপতে টিপতে ঘুমিয়ে গেছে আদ্রিস।
চোখত বন্ধ দেখেত ঘুমই মনে হচ্ছে।
আদ্রিতা ধিরে উঠে আদ্রিসের সামনে আসে।
না চোখ বন্ধ ঘুমিয়েই আছে। আদ্রিতা পা টিপে টিপে যখন দরজার কাছে যেতে নিল তখনই শোনা গেল গম্ভীর কন্ঠ,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
আদ্রিতার পা দু’টো থেমে গেল। সে ফিরে চায়। আদ্রিস চোখ বন্ধ অবস্থাতেই কথা বলছে।
আদ্রিতা ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে গেছে।
“এভাবে আমাকে বসিয়ে রাখার মানেটা কি?”
“বেশি কথা বলিস না। আমার মাথা যন্ত্রণা করছে। চোখ খুললে তোর খবর আছে।”
“ম মানে কি? আপনি সব সময় নিজেরর মনমানি করেন।”
“মনমানির দেখেছিস কি? এখনোত কত গুলো পজিশন ট্রায় করব সেটা ঠিকই করিনি।”
আদ্রিতা অবাক হয়। এগিয়ে এসে আদ্রিসের দিকে তাকিয়ে বলে,
“হে পজিশন। কিসের পজিশন?”
“শোন নোন্টে ইঁদুর যতক্ষণ আমার চোখ বন্ধ আছে ততক্ষণ তুই সুরক্ষিত থাকবি। আমার চোখ খোলার পর তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না বলে দিলাম।”
“আমি নোন্টে ইঁদুর?
এমন কেন আপনি? সব সময় এমন করেন। কি মজা পান এইসব করে?”
আদ্রিস চোখ খুলে তাকায়। আদ্রিতা এবার ভয় পেয়ে যায়। যে ফোর্স নিয়ে তাকিয়েছে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে।
আদ্রিতা শুঁকনো ঢোক গিলে,
“ই ইয়ে মানে ব বড় মা ডাকছে আমি যাই।’
আদ্রিতা পেছন ফিরতে আদ্রিস ওর হাত ধরে টেনে নিজের উপরে ফেলে।
“কোথায় পালাচ্ছিস? তোকে বলেছিলাম না আমার চোখ খুললে খবর আছে। আয় তোকে পজিশন শেখাই।”
কথাটা বলার সাথে সাথে আদ্রিস, আদ্রিতাকে ফ্লিপ করে নিজের নিচে ফেলে। ঘটনা এত দ্রুত ঘটেছে আদ্রিতা রিয়াকশন দেওয়ার সময় পায়নি।
“ক কি করছেন?”
আদ্রিস এক হাতে আদ্রিতার দু’টো হাত চেপে ধরে।
আদ্রিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আদ্রিস নিজের নিচের ঠোঁট লিক করে।
এরপর বিনা বাক্যে আদ্রিতার ওষ্ঠদ্বয় দখল করে। যেন এটা তারই ব্যক্তিগত সম্পত্তি।
এটার মালিক আদ্রিস নিজে। নিজের বিচরণ চালাতে শুরু করে।
আদ্রিতার পক্ষে নিজেকে ছাড়ানো অসম্ভব।
আদ্রিস না চাইলে এক চুল পর্যন্ত নড়তে পারবে না।
আদ্রিস, আদ্রিতার মাঝে হারিয়ে গেছে। তার অন্য হাত আদ্রিতার অন্য কোথাও চলে গিয়েছে। আদ্রিতা চোখ বড় বড় করে নেয়। নিঃশ্বাসও নিতে পারছে না মেয়েটা।
ওদিকে হুট করেই দরজায় কারোর ধাক্কানোর শব্দ শোনা যায়।
“আদ্রিস। দরজা খোল বাবা।”
দরজার ওপাশে মাধবী বেগমের গলা শুনে আদ্রিতা খুব চেষ্টা করে নিজেকে ছাড়ানোর কিন্তু তা সম্ভব হয়না৷
আদ্রিস, যেন আদ্রিতাকে আরও চেপে ধরছে।
আদ্রিতার মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে নিঃশ্বাস না নিতে পেরে।
আদ্রিস তা দেখে সরে আসে একটু। আদ্রিতা খুব জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। ওদিকে মাধবী বেগম আরও বেশি দরজা ধাক্কাচ্ছেন।
আদ্রিস বিরক্ত হয়।
আদ্রিতাকে ছাড়ে। আদ্রিতা দ্রুত উঠে বসে জামা ঠিক করে নেয়।
আদ্রিতার ভয় করছে মাধবী বেগন এখন তাকে অনেক বেশি কথা বলবে।
আদ্রিস একবার আদ্রিতার দিকে তাকায়।
“যা ওয়াসরুমে যা৷”
“এখন?”
“না ত কখন?”..
আদ্রিতা বিনা বাক্যে ওয়াসরুমের ভেতরে চলে যায়।
আদ্রিস দরজা খুলে দেয়।
” বাবা। তুই এমন কেন করছিস। মম ড্যাডের উপর এভাবে রাগ করতে হয় বুঝি?”
আদ্রিস, মায়ের হাতে চুমু খায়।
“নো আমি রেগে নেই।”..
মাধবী বেগম অবাক হলেন।
আদ্রিস মাকে জড়িয়ে ধরে। তার মাথায় এই মুহুর্তে অন্য কিছু চলছে।
” আদ্রিস আমি..”
“মম আমি চাই আদ্রিতা 24 Hour’s আমার কাজ করবে। আমার সাথে থাকবে। বাড়ির অন্য কোন কাজ ওকে দিয়ে না করালে খুশি হব৷”..
“কিন্তু আদ্রিস।”
“মম।”
মাধবী বেগম আর কোন কথা বললেন না।
“ঠিক আছে। খাবার পাঠাই?”
“না দুপুরে সবার সাথে লাঞ্চ করব।”
“আচ্ছা। আদ্রিতাকে বলব রান্না করতে?”
“শুধু আমার রান্নাটাই সে করবে।”
“কিন্তু।”
“মম আই সেইড শুধু আমার।”
“ওকে।”..
মাধবী বেগম বেরিয়ে গেলেন।
আদ্রিতা ওয়াসরুম থেকে সব কথাই শুনেছে। এই কাজের লোকের জীবন থেকে তার মুক্তি নেই।
আসলেই নেই।
” বেরিয়ে আয়।”
আদ্রিসের ডাকে আদ্রিতার ধ্যান ফিরে। সে চোখ মুছে বেরিয়ে আসে।
“যা মম তোকে খুঁজবে হয়ত।”
আদ্রিতা বেরিয়ে যায়।
আদ্রিস দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
“জাস্ট কিছু দিন আদ্রিতা। তোর জন্য প্রাসাদ গড়েছি আমি। কথা দিচ্ছি সব কষ্ট ভুলিয়ে দেব। আমাকে শুধু একবার ডিল করতে দে সব কিছুর সাথে। “
আদ্রিতা লুকিয়ে নিজের রুমে চলে এসেছে।
মাধবী বেগম রুমে প্রবেশ করে আদ্রিতাকে দেখে বিরক্ত বোধ করছেন।
“আদ্রিতা।”
“জি।”
“আদ্রিসের পছন্দ মত রান্না কর যা। আমার ছেলেটা অনেক দিন পর ফিরেছে। আমি চাই ওর পছন্দ মত সব হোক।”
“জি।”
“আর শুধুমাত্র আদ্রিসের টাই রান্না করবি অন্য কারোর টা না।”
“জি।”
মাধবী বেগম কিছুক্ষণ চুপ থাকেন। এরপর আদ্রিতার দিকে এগিয়ে যায়। আদ্রিতা মাথা নামিয়ে রেখেছে তখনো। মাধবী বোগম গিয়ে আদ্রিতার কুনুই চেপে ধরেন জোরে। আদ্রিতা ভয় পেয়ে যায়। সাথে যন্ত্রণাও হতে লাগে।
“দুরে থাকবি আদ্রিসের থেকে। তোর মত ছোট লোক মেয়েকে আমার ছেলের বউ বানাব না আমি। না জানি কার রক্ত তোর ভেতরে আছে।”
আদ্রিতা অবাক হয়ে তাকায়।
“ক কার র রক্ত মানে?”
“তোকে এত মানে জানতে হবেনা। আমার বোনের মেয়ে ঐশীর সাথেই আদ্রিসের বিয়ে হবে। ভালো হবে তুই ওর থেকে দুরে থাকলেই। তোকে আমি না মেরেই গুম করে দেব বেয়াদব। “
আদ্রিতা ফুপিয়ে ওঠে।
“ন্যাকা কান্না কাঁদবি না বেয়াদব। রাগ উঠাস। দিন ভর প্যান প্যান করে কেঁদে লাভ কি হ্যাঁ।”
মাধবী বেগম বেরিয়ে যায়। আদ্রিতা তাকিয়ে থাকে সে দিকে। আজ যদি তার মা বেঁচে থাকত। তাহলেকি এমন হতো।
আদ্রিতা বসে খাটে।।আসলে তার দোষটা কি? আদ্রিতা আজও এর উত্তর জানেনা।
জীবনটা আসলে এমন কেন?
হটাৎ কাঁধে কারোর স্পর্শ অনুভব হয়। ফিরে তাকায় আদ্রিতা। প্রিয়াকে দেখে আদ্রিতা নিজেকে সামলাতে পারেনা। প্রিয়াকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে।
প্রিয়া, আদ্রিতার মাথায় হাত বুলায়। সে সবই শুনেছে তার মায়ের কথা।
“কাঁদিস না। এখন আর ভয় পাবি না। আমি জানি তোর কষ্টের দিনের অবসান ঘটতে চলেছে।”
“কে করবে আমার কষ্টের অবসান।”
“ভাইয়া।”
আদ্রিতা মাথা তুলে তাকায়।
“আর যদি সে নিজেই আমাকে অপছন্দ করে তাহলে?”
প্রিয়া হাসে।
“বোকা মেয়ে বুঝিস কম। “
“ওনাকে বলতে শুনেছি। উনি চায় আমি ওনার পার্সেনাল মেড হিসাবে কাজ করি।”
“সবার কাজ করার থেকে একজনের কাজ করাটা ভালো নয় কি?”
“সেইত কাজই। “.
” বোকা মেয়ে তুই আসলেই কম বুঝিস।”..
আদ্রিতা মাথা নামিয়ে নেয়।
“যা গোসল করে নে। ভালো লাগবে।”
“না আপু। রান্না করে আসি যাই।”
“কার জন্য? “
“কার জন্য আর ওনার জন্য ।”
প্রিয়া মৃদু হেসে আদ্রিতাকে ধাক্কা দেয়।
“উম হুম ওনার জন্য হুম। “
আদ্রিতা লজ্জা পেয়ে যায়।
“উফ আপু।’
আদ্রিতা বেরিয়ে যায়। প্রিয়া একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস নেয়।
“আল্লাহর কাছে সব সময় দোয়া করি তোর জন্য আদ্রিতা।”..
কিচেনে আপাততঃ আদ্রিতা একাই কাজ করছে। বাড়িতে তেমন কোন সার্ভেন্ট নেই। আদ্রিতাকে শুধু একজনের জন্যই রান্না করতে বলা হয়েছে। তাই আদ্রিতা একা হাতেই সব করছে। পোড়া হাত নিয়ে একটু কষ্ট হলেও আদ্রিতা এসবে অভ্যস্ত। গ্যাস অন করে কাজ করছে আদ্রিতা। ওদিকে ভাত হচ্ছে। কিচেনটা পুরাই গরম হয়ে গিয়েছে। আদ্রিতাও ঘেমে গিয়েছে। আদ্রিতার চুল বাঁধা। ঘেমে জামা পিঠের সাথে লেপ্টে আছে। সাদা জামা তাই বেশি বোঝা যাচ্ছে। ওড়ানাটা বুকেই বাধা ছিল। খোঁপা থেকে দু একটা চুল গলায় ঘামের সাথে লেপ্টে আছে।
এই মুহুর্তে দু’টো লালসাময়ী দৃশ্য আদ্রিতাকে দুর থেকেই দেখছে। যেন একটু হলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে আদ্রিতার উপর।
হটাৎ করেই আদ্রিতার পোড়া হাতে কারোর শক্ত মুঠো অনুভব করতে কেঁপে ওঠে সে।
পাশ ফিরে আদ্রিসের ভয়ঙ্কর রাগান্বিত দৃষ্টি দেখে ভয় পেয়ে যায় আদ্রিতা।
” ক কি হয়েছে?”
“সাদা জামা কেন পরেছিস?”
“স সাদা জ জামা। আ আসলে। আ আমার।”
আদ্রিস দ্বিতীয় কোন কথা না বলে আদ্রিতাকে টানতে টানতে সেখান থেকে নিয়ে যায়।
“কি করছেন ছাড়ুন। আদ্রিস ভাইয়া ব্যাথা করছে হাতে। আমি কি করেছি আমার দোষটা কি সেটাত বলুন।”
আদ্রিস, আদ্রিতাকে নিজের রুমে এনে ফ্লোরে ছুড়ে মারে।
“সাদা জামা কেন পরেছিস? যাতে ঘামে লেপ্টে গেলে শরীর দেখা যায় এই জন্য? “
আদ্রিতা, আদ্রিসের মুখশ্রী দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছে। আদ্রিসকে কোন মন্সটারের থেকেও ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে।
“ন না বিশ্বাস করুন আ আমিত।”
“জামা খোল।”
আদ্রিতা অবাক হয়ে যায়।
“মানে?”
“জামা খুলতে বলেছি।”
“ভাইয়া কি বলছেন এগুলো।”
“জামা খুল এক্ষুনি জামা খুলবি তুই।”
“আদ্রিস ভাইয়া।”
“জামা খুলবি নাকি টেনে ছিড়ব৷”
“আদ্রিস ভাইয়া দোহায় লাগি এমন করবেন না আমার ভয় করছে।”..
আদ্রিস রেগে যায় আরও। আদ্রিতার কাছে এগিয়ে আদ্রিতার জামার চেইন খুলে, জামাটা জোরপূর্বক খুলে নেয়। আদ্রিতা দু হাতে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করছে।
আদ্রিস সাইড টেবিল থেকে লাইটার নিয়ে জামায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
আদ্রিতা ভয়ে রুমের এক কোণায় হাঁটু জড়িয়ে ধরে রাখে। ওড়ানাটা দিয়ে নিজেকে পেঁচিয়ে নিয়েছে। আদ্রিতা ভেবেছিল আদ্রিস হয়ত অন্য কিছু করবে। কিন্তু আদ্রিস এখানে যা করছে তা আদ্রিতার মাথায় ঢুকছে না। আদ্রিতা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছে এমন কান্ডে। চোখের সামনে জামাটা পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
আদ্রিসের চোখে তখনো রক্ত ঝড়ছে।
রাগের কারণে তার মাথার শিরা গুলো ফুলে উঠেছে।
আদ্রিতার জামাটার সাথে আদ্রিসের চোখেও আগুন জ্বলছে।
এই মুহুর্তে সে সব কিছু ধ্বংস করে দেবে এমন ভাব।
চলবে?
( রিমাইন্ডার আদ্রিসের সাইকোগিরির মাত্র শুরু তাই এইসব ভালো না লাগলে এড়িয়ে যাবেন)।
Share On:
TAGS: জেন্টাল মন্সটার, লামিয়া রহমান মেঘলা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৭
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৪
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ২
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৯
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৮
-
জেন্টাল মন্সটার গল্পের লিংক
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১০
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৩
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৬
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৬