Golpo romantic golpo কাছে আসার মৌসুম

কাছে আসার মৌসুম পর্ব ১


#কাছে_আসার_মৌসুম!

কলমে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি

সূচনা পর্ব

(১)

কাওরান বাজারের একটা ছোট্টো জায়গা।

পেটের নাড়িভুঁড়ির পাকের মতো অলি-গলিতে প্যাঁচানো চারিপাশ। সীমার মাঝে ভিড় করা বেহিসেবি ছোটো ছোটো টিনের ঘর দাঁড়িয়ে । এপাশ-ওপাশ থেকে ড্রেনের নোংরা পানি কলকল করে বইছে। ময়লা,আবর্জনার স্তুপে কোনাকানি মাখা। আলো-বাতাসের স্বল্পতা নিয়ে তৈরি এই জায়গা বস্তি নামে পরিচিত।

যেখানে পরিচ্ছন্ন জলের দেখা পাওয়া যায় না বললেই চলে।

বস্তিতে ঢোকার পরপরই একটা বড়ো কলপাড় চোখে পড়বে। যেটা বস্তির সবচেয়ে দামি সম্পদ। দিনের মধ্যে দুবার পরিষ্কার খাবার জল সাপ্লাই হয় এখানে। একবার সকালে,আরেকবার সন্ধ্যায়।

কিন্তু বিকেল নাগাদই ট্যাপের সামনেটা ভরে যায় বস্তির মেয়ে-বউ দিয়ে। আজকেও এর আলাদা কিছু হলো না।

একেক রঙের হাঁড়ি-কলসি নিয়ে ট্যাপের সামনে অজগরের মতো একটা বড়ো লাইন বেঁধে গেল। শ্যাওলা পড়া দুটো ইটের ওপর কলসিটা মাত্রই দাঁড় করিয়েছেন রোকেয়া। ট্যাপ ঘুরিয়ে ছাড়তেই,

আচমকা কলসিটাকে ছো মেরে নিয়ে ফেলে দিলো কেউ একজন। শীর্ণ নারী চমকালেন। চোখ তুললেন হতভম্ব হয়ে। বাকিদের দশাও তাই। দৃষ্টিতে বিনা মেঘে বজ্রপাত তাদের।

রোকেয়া ভীষণ রেগে বললেন,

“ এইডা কী করলি?”

চোখের সামনে এসে দাঁড়াল একটা ফরসা মতো পাতলা শরীর। পরনের লাল শার্টটায় কালো রঙের চেক চেক দাগ। অর্ধেক মাথা তার ছাই রঙা জিন্স প্যান্টের ভেতর ইন করে ঢোকানো। হাত দুটো গুটিয়ে কনুই অবধি এসেছে। লম্বা কোকড়া চুল ওপরে পনিটেইল করে বাঁধা। কখনো ঘাড় নাড়ানোর সাথে হেলছে-দুলছে। দুপায় দুখানা চটির টাসটাস শব্দ তুলে মেয়েটা এসে থামল হেথায়।

কপাল কুঁচকে বলল,

“ চেল্লাচ্ছো কেন? কী করলাম দেখোনি? আগে আমি ওয়াটার নেব,তারপর সবাই।”

“ ক্যান, তুই আগে নিবি ক্যান? তুই কী আগে আইছোস? এইহানে পানি নিতে হইলে লাইনে খাড়াইতে হয়। যা,পিছনে গিয়া খাড়া।”

“ হট ইউ সে? আমি পেছনে এসট্যান করব? ইউ পাগল মহিলা। তুশি কখনো পিছনে এসট্যান করে না। তুশি যেখানে দাঁড়ায়,লাইন সেখান থেকে শুরু হয়।”

রুমা বিরক্ত গলায় বললেন,

“ আবার শুরু হইল। এই মাইয়া যহনই পানি নিতে আইব,একটা না একটা ক্যাচাল লাগবই এহানে। এইডা কি তোর মামার বাড়ি পাইছোস, তুশি? আমরা ঘন্টা ধইরা লাইনে খাড়ামু,আর তুই আইয়াই পানি লইয়া যাবি?”

তুশির চেহারা অপরিবর্তিত। হাবভাবেও হেলদোল হলো না। মাথা নাঁচিয়ে বলল,

“ বললাম না,আগে আমি ওয়াটার নেব? এত্ত কথা তো ভালো লাগে না। আই নট লাইক দিচ।”

রোকেয়া মুখ বাঁকালেন।

“ উহ,ইংজেরি বলে ভাব দেখাচ্ছে। পইড়ছিস তো ওই কেলাস থিরি অবদি। তোর লেখাপড়ার দৌড় বুঝি আমরা জানি না?”

পড়াশোনা নিয়ে খোঁচা? তুশির ভীষণ সম্মানে লাগল। চোখ পাকিয়ে বলল,

“ হাউ সাহস অফ ইউ! একদম ফালতু টক করবে না। তাও তো আমি এসটাডি করেছি। তোমরা তো ইসকুল আই দিয়েও দেখোনি। আই বুঝেছ তো? চোখ চোখ। মূর্খ মুরুব্বি কোথাকার! ”

তিনি চটে বললেন,

“ অ্যাই তুশি অ্যাই, বাজে কথা কবি না কিন্তু। ”

তুশিও পালটা ক্ষেপে বলল,

“ আই রাঙাচ্ছো কাকে? ভুলে যেও না আমি কে!

দি সেলবিরিটি তুশি। এই বস্তিতে যাকে সবাই এক নামে চেনে। তোমাদের কজন চেনে শুনি?”

রুমা ভেঙচি কাটলেন । কণ্ঠে বিদ্রুপ,

“ উহ রে, আমার সেলিবিটি! করোস তো চুরি। চোর আবার সেলিবিটিও হয়?”

তুশির বড়ো বড়ো চোখ গুরুতর হলো। মহাভারত অশুদ্ধ হওয়ার মতন খবর শুনল যেন। আঙুল তুলে বলল,

“ ইসকুজ মি। হু চোর? একদম আমাকে চোর টক করবে না।

ঘাপটি মেরে চুরি করি না আমি। দিনের বেলায় বুক ফুলিয়ে সবার সামনে দিয়ে ম্যানদের পকেট মারি। এখন অবধি পাঁচশ লোকের পকেট কেটেছি,কিন্তু কেউ কিচ্ছু করতে পারেনি। ধরা পড়া তো অনেক লং ব্যাপার। এটা আর চুরি এক হোলো?

অবশ্য ইউ কী বুঝবে? মুরদ তো শুধু বরের পকেট কাটার।

এসবের জন্য যোগ্যতা লাগে বুঝলে, যোগ্যতা!’’

বলতে বলতে হাত দিয়ে চুলটা ব্যাকব্রাশ করল তুশি। চোখেমুখে কী গর্ব!

বাকিরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। চেহারায় তাদের হতবুদ্ধি ভাব। পকেটমারতেও যোগ্যতা লাগে!

তুশি বলল,

“ যাক গে। হেবি বাজে টক করেছ। নাউ সরো। ওয়াটার নেবো।”

এগোতে নিলেই ফের বাধ সাধলেন রোকেয়া।

“ না। আগে আমি আইছি,আমি আগে নিমু।”

তুশি চ সূচক শব্দ করল।

“ ডিসকাসটিং। ইউ ভালো ভালোয় ডোন গো তাই না? ঠিক আছে,আসো মারামারি ধরি। ইউ জিতলে ইউ নেবে। আই জিতলে আই।”

দুহাতের মুঠো করে শরীরটা একটু পেছাল তুশি। বক্সারদের মতো হাবভাব করে বলল,

“ কাম। এসো।”

এ যাত্রায় নিভে গেলেন রোকেয়া।

তুশির চালচলন ছেলেদের মতো। পরেও ব্যাটাছেলের পোশাক। মেয়েলি কোনো স্বভাবই নেই। বড্ড মারকুটে গোছের। সেবার তো বস্তির আক্কাস আলী ওকে চোখ টিপেছিল বলে, একেবারে মেইন পয়েন্টের ব্রেক কষে দিয়েছে। এমন ডানপিটে মেয়ের সাথে গায়ের জোরে পারবেন তিনি?

কিন্তু শঙ্কার ছাপ,মুখায়বে ফেলতে দিলেন না রোকেয়া। কণ্ঠের ধার বজায় রেখে বললেন,

“ ডর দেহাস আমারে?”

তুশি ফের হাতটা চুলে বোলাল।

“ হোয়াই ভয় দেখাব? এসো,তারপর আন্ডার-এসট্যান করবে।”

এতক্ষণের এই তর্কে বিরক্ত বাকিরা। তুশি যা গোঁয়ার! সবার আগে পানি নেবে মানে,নেবেই। শুধু শুধু সময় নষ্ট হচ্ছে দেখে একজন বললেন,

“ তিন্নীর মা,ওরে যাইতে দাও। এই মাইয়ার লগে মুখ লাগাইয়া বস্তিতে কেউ জিতছে কহনো? যা তুশি, তুই পানি নিয়া যা।”

তুশি প্রসন্ন হাসল।

মাথা নাঁচিয়ে বলল,

“ ভেরি গুড। থিংক হচ্ছে এই বস্তিতে একজনই ইনটোলিজেন (ইন্টেলিজেন্ট) আছে। যে আমাকে খুব ভালো চেনে।

দেখি সরো।”

রোকেয়া মুখ ঝামটালেন। তুশির যায়ই এলো না।

গুনগুন করতে করতে কলসিতে জল ভরল সে। অতো বড়ো ভারি কলসি কোমরে না দিয়ে,সোজা তুলে ফেলল কাঁধে। ফরফর করে হেঁটে গেল তারপর।

রুমা নাক-মুখ কুঁচকে বললেন,

“ এইডা মাইয়া কে কইব! চাইল-চলন ব্যাডাগো মতো। এডারে কুনোদিন বিয়া করব কেউ?”

ট্যাপের জায়গা পেরিয়ে আসার পর একটা ছোটোখাটো খেলার মাঠ পরে। এখানকার পুকুর ভরে বানানো এটা।

বারো-তেরো বয়সি সাত-আটজন ছেলে খেলছিল সেখানে। একটা ফুটবল ঘিরে ছোটাছুটি ওদের। কারো গায়ে জামা নেই। ধুলো-ময়লা মেখে একশেষ সব।

তুশিকে দেখেই ডাকল একজন,

“ ওস্তাদ,আইজকা খেলবা না?”

ও উত্তর দিলো চেঁচিয়ে,

“ নো। টুডে আমি বিজি। তোরা প্লে কর।”

চলে যাওয়া তুশিকে দেখে বিড়বিড় করল কিশোর,

“ আবার ইংলিশ কয়। কইতে যাইয়া দাঁত ভাইঙা ফালায় তাও শিক্ষা হয় না।”

তুশির হাঁটার গতিতে নম্রতা নেই।

কেমন হনহনিয়ে ঘরে এলো। টিনের তৈরি খুপড়ি এটা।

ভেতরে ঢুকে ডাকল,

“ দাদি ও দাদি। ইয়র ওয়াটার এনেছি।”

হাসনা বানু উঠে এলেন। মুখখানা কালো। সাদা থানে ঘেমে যাওয়া ঘাড় মুছে বললেন,

“ ওই কোনায় রাখ।”

তুশি তাই করল। কলসি রেখে সোজা হয়ে বলল,

“ অল ফিনিস। শোনো দাদি, ইসকাই মেঘলা, বৃষ্টি ইজ কামিং। একটু খিচুড়ি কুক করো না।”

হাসনা বানু অতীষ্ঠ গলায় বললেন,

“ উফ! হয় তুই বাংলায় ক,নাইলে বিদায় হ এন্তে। তোর এই ভাঙ্গা ভাঙ্গা ক্যাসেটের ইংজিরি আমি আর নিবার পারি না বাপু।”

তুশি হুঙ্কার ছুড়ল,

“ নিউজদার দাদি। আমার ইংরেজি নিয়ে কিছু বলবে না।”

হাসনা বুঝলেন না। চোখ গোটালেন প্রশ্নে,

“ নিউজদার! হেইডা কী?”

তুশির কণ্ঠে অসন্তোষ।

“ এটাও জানো না?

নিউজ মানে খবর। খবরদার।”

তিতিবিরক্ত শ্বাস ফেললেন বৃদ্ধা।

“ তোর লগে কতা বাড়ায় পাগলে। আমি যাই,কাম করি।”

হাসনা বানু শোবার ঘর ছাড়লেন। এই বাড়িতে দুটো রুম। পাশে ছোটোখাটো একটা রান্নাঘর। তাতে কোনোরকম একজন বসে উনুনে হাত চালানো যায়।

তুশি গিয়ে ছোটো টেবিল ফ্যানের সুইচ টিপল। ফুরফুরে হাওয়ার সামনে বসে কলার ঝাড়ল শার্টের। পা ছড়িয়ে বিছানায় শুতে যাবে, আবার হাজির হলেন তিনি।

থমথম করে জানালেন,

“ আজকে খিচুড়ি হবে না।”

বাধা পেয়ে তুশি আর শুলো না। কপাল কুঁচকে বলল,

“ হবে না! হুয়াই?”

“ খিচুড়ি রানমু কী আমার মাথা দিয়া? বাইত্তে চাইল-ডাইল কিছু আছে? শ্যাষ কবে বাজার করছিলি ক-তো।”

তুশির মনে নেই। মাথা নেড়ে বলল,

“ সেটাতো থিংক করতে পারছি না। থাক,নো চিন্তা। আমি নাউ গিয়েই বাই করে আনছি।”

“ কী দিয়া আনবি? গোলাপের আগের চাইলের টিয়াই তো বাকি আছে। এইবার গ্যালে কোনো কিছু দিবো?”

তুশির বিশেষ উদ্বেগ এলো না। উলটে হাসল দাঁত মেলে।

“ বিফোর গো। তারপর সি!”

ঘাড় দুলিয়ে ফুরফুরে ভঙ্গিতে চলে গেল মেয়েটা।

প্রস্থান দেখে হাসনা মাথা নাড়লেন দুপাশে। চোখেমুখের এক আকাশ বিরক্তি চেপে বললেন,

“ আবার ইংজিরি!”

বস্তির এ মাথায় বড়ো বাজার বসে। এইতো,মেইন রোডের পাশেই এটা। চৌমাথা পেরিয়ে ওই পাড়ের দোকানটায় এলো তুশি।

গোলাপ তখন ক্যালকুলেটর টেপায় ব্যস্ত। ম্যামো কার্ডের ফর্দো মিলিয়ে হিসেব কষছে কিছুর।

ও এসেই বলল,

“ গোলাপ চাচা, কুইক করে টু কেজি চাল আর হাফ কেজি ডাল দাও। মানি টু-ডেস পরে দিয়ে যাব।”

কণ্ঠ শুনেই তড়িৎ কাজ থামিয়ে চাইল গোলাপ।

মুখ গোঁজ করে বলল,

“ ও নামে ডেকো না। বুকে বড়ো ব্যথা পাই।”

তুশি ফোস করে শ্বাস ফেলে হাসল। টেনে টেনে বলল,

“ তাহলে কী ডাকব?”

গোলাপের ঠোঁটে লাজুক হাসি।

“ তোমার যা ইচ্ছে।”

ওর কণ্ঠে রসিকতা।

“ গোলাপ ভাই ডাকি?”

গোলাপ মন খারাপ করে বলল,

“ আবার ভাই কেন?”

তুশি ঠোঁট চেপে হাসল। সুর দিয়ে ডাকল,

“ গোপুউউউ। গোপুউউউ শুনছো…”

গোলাপ মুচড়ে উঠল খুশিতে। লজ্জায় ফোলা গাল নিয়ে বলল,

“ কী সুন্দর করে ডাকলে তুশি! বলো না, তোমার কী চাই!”

“ ওই যে, টু কেজি চাল এন্ড হাফ কেজি ডাল। পরে টাকা দিয়ে যাব।”

“ তোমার কাছে আবার টাকা কী জিনিস? “

বলেই হাত চালাল গোলাপ। বড়ো বড়ো পলিথিনে চাল ডাল ভরে এনে বলল,

“ চাল দু কেজিই দিলাম। কিন্তু হাফের জায়গায় ডাল এক কেজি দিয়েছি। এই বাড়তি হাফ কেজি তোমাকে ভালোবেসে দিলাম, তুশি।”

তুশি গালে হাত দিলো। অবাক হওয়ার ভান করে বলল,

“ হায়ায়ায়া, তাই?

ঠিক আছে। অনেকেই আমাকে ভালোবাসা দিতে চায়। তবে, তোমারটা নিলাম।”

তারপর পলি দুটো এক হাতে খপ করে টেনে নিলো মেয়েটা। গোলাপ প্রস্তাব ছুড়ল ফিসফিস করে,

“ রাতে দেখা করতে আসবে? ওই সেরেজ গাছের নিচে?”

তুশির উত্তরের আগেই এক লোক এসে দাঁড়ালেন। মোটামুটি বয়সের পুরুষ বলা যায়। ওনাকে দেখে থামল গোলাপ।

প্রেমের আলাপে বিঘ্ন পাওয়ায় নাখোস হওয়ার ছাপ বসল মুখে। জিজ্ঞেস করল গমগম করে,

“ কী চাই?”

লোকটা জ্বিভ নাড়িয়ে একটা বড়ো লিস্ট বললেন।

দু ডজন ডিম,দুধ আরও কত কী!

কাস্টমারের সামনে গোলাপ বিশেষ সুবিধা পেলো না। হুকুম মানতে ফ্রিজ খুলে দুধের প্যাকেট আনতে চলল। লোকটা বেনসন নিয়ে ঠোঁটে চাপলেন। দোকানে ঝুলন্ত লাইটার তুলে জ্বালালেন মাথাটা।

তুশি পলি নিয়ে পাশ কাটাতে গেল,আচমকা ধাক্কা লাগল গায়ে। ডালের প্যাকেট মুঠো খসে মাটিতে পড়ে গেল।

লোকটা চমকালেন কিছু।

ঘুরে চাইতেই দারুণ করে হাসল তুশি।

“ সরি। নট সি ইউ।”

সুন্দরী মেয়ে দেখে আটখানা ভদ্রলোক। তারওপর এত মনকাড়া হাসি! ঘনঘন ঘাড় নেড়ে বললেন,

“ না না। কোনো সমস্যা নেই।”

তুশি যেন লতিয়ে গেল। হেলায় পড়ে থাকা ডাল দেখিয়ে বলল,

“ একটু তুলে দিন না,পিলিজ!”

“ হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই।”

সানন্দে ঝুঁকে ডালের পলি তুললেন তিনি। সোজা হয়ে হাসলেন।

“ নিন।”

তুশি ধরল।

“ থ্যাংকস।”

আর একটাও কথা নয়। কেমন ঝড়ের বেগে পাশ কাটাল মেয়েটা।

ভদ্রলোক চেয়ে রইলেন সেদিকে। আরেকটু কথা বাড়ানোর ইচ্ছে ছিল,কিন্তু তুশি দিলো না। এই হাঁ করে থাকা গোলাপের পছন্দ হয়নি। গজগজিয়ে বলল,

“ আর কী চাই?”

লোকটা ফিরে চান।

“ কত হলো?”

“ ৫৩৫ টাকা।”

মুখ ভার করে জানাল গোলাপ।

লোকটা পকেটে হাত দিলেন মানিব্যাগ বের করতে। পিলে চমকাল তখনই। এ কী! মানিব্যাগ কই?

হাতানোর গতি বাড়ালেন তিনি। এ পকেট- ও পকেট ঘেটে উদ্ভ্রান্ত চোখে চারপাশ দেখলেন। দুশ্চিন্তায় একশা হয়ে বললেন,

“ আমার মানিব্যাগ, আমার মানিব্যাগ কোথায়?”

গোলাপ কিছুক্ষণ দেখে,কিছু একটা ভাবল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধাল,

“ পাওয়া যাচ্ছে না?”

“ না। এখানে আসার আগেও তো ছিল। এখন পাচ্ছি না।”

গোলাপ নিষ্প্রভ। কেমন করে আওড়ায়,

“ তাহলে আর পাবেনও না।”

লোকটা বুঝলেন না। ব্যথিত চোখ আশেপাশে তখনো। টাকা না থাকলে এখন বিল মেটাবেন কী করে?

বস্তির ভেতর ঢুকেই মানিব্যাগ বের করল তুশি। ভেতরে পাঁচশ টাকার কয়েকটা কড়কড়ে নোট। অল্প কিছু খুচরোও আছে। সব হাতে নিয়ে,বাকিটা উল্টেপাল্টে দেখল ও। না,আর কিছু নেই। কাগজপত্রে ভরা! এসব ওর কাজের নয়। নোটের গায়ে চুমু খেয়ে মানিব্যাগটা ছুড়ে ফেলে দিলো সে।

টাকা গুণতে গুণতে বলল,

“ হ্যান্ডে মানি চলে এসেছে। টুডে শুধু খিচুড়ি না, একটা মুরগীও buy করে নেব।

জমিয়ে eat করা যাবে। উফ!”

*****

চ্যাপ্টা,পুরোনো উঁচু ভবন। ভেতরে গমগমে আবহ। এদিক হতে ওদিকে, ব্যস্ত মানুষের যাতায়াত। মাথার ওপর কতগুলো ক্যাটক্যাটে ফ্যানের তাণ্ডবে খাকি পোশাক পরা মানুষ গুলো অথিতু বেশ। দুদণ্ড ফুরসত নিয়ে বসে নেই কেউ। নিয়ম-শৃঙ্খলায় একেবারে উপচে পরা পরিবেশ যাকে বলে।

এসবের মাঝেই লম্বা পায়ে কোনো একটা ঘরের দিকে রওনা করল শরিফুল। এই বিশাল থানার এস-আই তিনি। সোজা এসে ঢুকল ভেতরে। কপালে আঙুল মিশিয়ে সালাম ঠুকে বলল,

“ স্যার, একটা মেয়ে কমপ্লেইন লেখাতে এসেছে। বলছে আপনার সাথে দেখা করবে। খুব জোরাজোরি করছে আর কী!”

ওপাশের পুরুষটি দাঁড়িয়ে। বিশাল তাকের খাঁজ থেকে ফাইল তুলেছে হাতে। কথা শুনে প্রস্থে চওড়া,সুগঠিত লম্বা শরীরটা

ঘুরিয়ে ফিরল সে। সুষম চেহারা!

ফ্যানের তোড়ে মাথার ঘন-কালো ক্ষুদ্র চুলের একাংশ নড়ছে । দীপ্তিময়,দুরদর্শি চোখের নিচে আকর্ষণীয় গম্ভীরতা তার। ধারালো নাকের পাটা যেন প্রতাপি তিরের ফলার মতো। চমৎকার পুরুষটি উত্তর দিতে ভ্রু কোঁচকাল। হাল্কা রঙের ত্বক, ভাঁজ বসাল কপালে এসে।

খুব ছোট্টো শব্দে আওড়াল,

“ তো?”

“ না মানে স্যার,রেইপ কেস। কী করব বুঝতে পারছি না।”

বাইসেপসে ফোলা হাত দিয়ে ফাইলটা চট করে বন্ধ করল পুরুষ। চোখমুখ দেখেই যেন প্রশ্নটা বুঝে ফেলল শরিফ। নিজেই জানাল,

“ আমি বাইরে বসিয়ে রেখে এসেছি, স্যার।”

“ ডাকো।”

শরিফের ভেতর উশখুশে ভাব। সেকেন্ড খানেক পার হলেও জায়গা থেকে নড়ল না।

চেহারায় বিস্তর দোনামনা দেখে প্রশ্ন এলো,

“ কী সমস্যা, শরিফ?”

ভদ্রলোক জ্বিভে ঠোঁট ভেজায়। কথাতে মিনমিনে ভাব,

“ না মানে স্যার,কমপ্লেইনটা এমপির ছেলের নামে।”

শোভিত পুরুষের চোখদুটো দপ করে উঠল। ইঙ্গিত বুঝেই, চোয়াল শক্ত হলো নিমিষে। দরাজ স্বরে বলল,

“ সো হোয়াট? তোমাকে ডাকতে বলেছি,ডাকো।”

শরিফ থমকাল খানিক।

সামনের মানুষটা তার চেয়ে বয়সে ছোটো। কিন্তু উচ্চতা থেকে পদ,সবকিছুতে এগিয়ে। তেজদীপ্ত চোখ হতে সূক্ষ্ণ মুখের গড়ন, সব চকচক করছে আত্মগরিমায়।

টেবিলে রাখা নেমপ্লেটে একবার চোখ রাখল সে।

সফেদ কড়া বাল্বে জ্বলজ্বল করছে,

“ এ-এস-পি ইয়াসির আবরার সার্থ।”

অগত্যা মাথা নাড়ল শরিফ। ফিরল মিনিট কয়েকে । সাথে বাইশ-তেইশ বছর বয়সি একটি মেয়ে,জড়োসড়ো হয়ে এসে দাঁড়াল কোনোরকম। ইয়াসির সামনের চেয়ার দেখাল,

“ বসুন।”

মেয়েটি বসল। দেহে সংকোচ,চাউনীতে ভয়।

“ আপনার নাম?”

“ ফারিন ইসলাম।”

ইয়াসির মেয়েটির চোখের দিকে চাইল। একেবারে তড়াক দৃষ্টিতে রাখ-ঢাক নেই।

পূর্ণ তীক্ষ্ণতায় মেপে নিলো কিছু।

জিজ্ঞেস করল হাস্যহীন,

“ বলুন,কী হয়েছিল?”

মেয়েটি মাথা নামাল।

মুখায়বে অস্বস্তি। পরপর ঢোক গিলতে দেখে,চুপচাপ পানির গ্লাসটা ঠেলে দিলো ইয়াসির।

“ খান। সময় নিন,তারপর শুনছি।”

ফারিন হাত বাড়িয়ে গ্লাস নেয়। ফাঁকা করে এক শ্বাসে। যেন বহুদিন জলের ছোঁয়া পায়নি। তারপর ঠোঁট মুছে দম নিলো। আস্তেধীরে বলল,

“ আমি **** ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। বিবিএ সেকেন্ড ইয়ার। রুহান আমার ব্যাচমেট। কদিন ধরেই খুব বিরক্ত করছিল। আজেবাজে প্রস্তাব দিচ্ছিল,রাজি হইনি। শেষে সেদিন মাঝরাতে ফোন করে খুব হম্বিতম্বি করে। তুলে নিয়ে যাবে এই সেই।

কথা শুনেই বুঝেছিলাম,ও ড্রাংক।

সেজন্যে অতটা আমোলে নিইনি। গত বুধবার টিউশন করিয়ে হোস্টেলে ফিরছিলাম। আনুমানিক নয়টা বাজে তখন। আচমকা রুহান গাড়ি নিয়ে সামনে দাঁড়াল। সাথে আরো দুজন। তারপর আমাকে টেনেহিঁচড়ে….”

বাকি কথার আগেই,হুহু করে কেঁদে উঠল মেয়েটা। ফুঁপিয়ে ওঠার ধাত সামলাতে সময় লাগল বেশ। এক চোট অশ্রু বিসর্জনের ইতি টেনে বলল,

“ বৃহস্পতিবার ও আমাকে হোস্টেলের রাস্তাতে ফেলে রেখে যায়। আমার তখন সেন্স ছিল না। চোখ মেলে নিজেকে হাসপাতালে দেখি।

সুস্থ হওয়ার পর **** থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু রুহানের কথা জানার পর কেউই কেস নিতে চাচ্ছে না। উল্টে আমাকেই কথা শুনিয়ে বের করে দিচ্ছে। বাবা মাও আমার পাশে নেই। ওনারা চাইছেন না,আমি এসব জনে জনে বলে বেড়াই। তাহলে সম্মান যাবে। সমাজ আমাকে থুথু দেবে। কিন্তু স্যার,আমি দিনের পর দিন মরার মতো বাঁচব,আর রুহান এত বড়ো একটা ক্রাইম করেও বুক ফুলিয়ে ঘুরবে? এই দেশে কি আসলেই অন্যায়ের কোনো সঠিক বিচার নেই?”

ইয়াসির নিশ্চুপ। তার নিম্নোষ্ঠ দাঁতের নিচে। প্রখর মনোযোগে ভাবছে কিছু। কিন্তু শরিফ চুপ থাকতে পারেনি। কর্কশ ভাষায় বলল,

“ দেখুন, এসব ইমোশনাল কথাবার্তা থানায় চলে না। এখানে প্রমাণ চাই,সাক্ষি চাই। এমন মুখে মুখে তো আর অভিযোগ নেয়া সম্ভব না। আপনার কাছে প্রমাণ আছে?”

ইয়াসির তপ্ত চোখে চাইতেই,মাথা নোয়াল সে। আমতা-আমতা করল,

“ না মানে স্যার, আমিতো…”

“ চুপ করে দাঁড়াও।”

গর্জনে শরিফের মুখটা ছোটো হয়ে এলো। কিন্তু ফারিন উদ্বেগ নিয়ে বলল,

“ আমার কাছে কিছু প্রমাণ আছে। ও আমাকে হুমকি দিয়েছিল সেই কল রেকর্ডস। ওর পাঠানো আজেবাজে ম্যাসেজ। আর আমাদের হোস্টেলের রাস্তার সিসিফুটেজটা,ওখানে নিশ্চয়ই এসব রেকর্ড হয়েছে। আপনারা তো চেক করলেই পাবেন। এসবে নিশ্চয়ই বোঝা যাবে,আমি মিথ্যে বলছি কী না!”

মেয়েটির চোখে আশা। প্রশ্নের উত্তর পেয়ে একটু সাহারা পাওয়ার ইচ্ছে। কিন্তু ইয়াসির উত্তর দিলো না। তার ভাবনা কাটেনি। ও ফের বলল,

“ স্যার, আমি আপনার ভরসাতেই এখানে এসেছি। আমার এক বন্ধু আপনাকে চেনে। ওই বলেছিল আপনি একজন সৎ পুলিশ অফিসার। অপরাধের সাথে আপোষ করেন না শুনেছি। আপনাকে *** থানায় খুঁজেও এসেছিলাম। পাইনি দেখে এখানে…”

মাঝপথে হাত তুলে থামাল ইয়াসির। বলল,

“ এত এক্সপ্লেইন করতে হবে না। আপনার কাছে যা প্রুফ আছে,জমা করে যান। বাকিটা আমি দেখছি। শরিফ,মিস নেহাকে ডাকো।”

মাথা নাড়ল শরিফ। হাঁক ছুড়লে ছুটে এলেন নেহা। সালাম ঠুকতেই, ইয়াসির বলল,

“ ওনার স্বীকারোক্তির একটা ভিডিও ক্লিপ নিন। এরপর মেডিকেল টেস্ট হবে।”

“ জি, স্যার।

আপনি আসুন আমার সাথে।”

শেষটুকু ফারিনকে বললেন নেহা। মেয়েটা জড়োতা নিয়ে উঠে দাঁড়ালেও,মুখমণ্ডলে স্বস্তি। মনে হচ্ছে, এবার সঠিক কিছু হবে। হয়ত ইজ্জত হরণের সুষ্ঠু বিচার পাবে সে।

ততক্ষণে ইয়াসির উঠে দাঁড়িয়েছে। ব্যস্ত ভঙ্গিতে মাথায় পুলিশি টুপিটা চাপালে দু পা এগিয়ে এলো শরিফ।

ভেতরকার উৎকণ্ঠা গিলে বলল,

“ এখন কী করব, স্যার?”

“ জিপ রেডি করো।”

ভদ্রলোকের চেহারায় বিদ্যুৎ স্ফূরণ।

“ স্যার আপনি কী…”

মাঝপথেই দগদগে স্বরের জবাব এলো,

“ আ’ম গোয়িং টু অ্যারেস্ট দ্য বাস্টার্ড।”

শরিফ আঁতকে ওঠে।

ইয়াসির এলাকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বেশিদিন হয়নি। তাই ভালো করে কিছু জানে না। এই এমপি তো যে সে লোক নয়। এর অনেক জায়গায় হাত। তারওপর আবার কমিশনারের চাচাতো ভাই।

বলতে চাইল,

“ স্যার, কোনো সমস্যা হলে?”

ফিরে চাইল ইয়াসির।

স্থূল ভ্রুটা তুলে শুধাল,

“ কীসের সমস্যা?”

“ না মানে স্যার, এমপির সাথে রূপক স্যারের চলাফেরা ভালো। চাকরি নিয়ে কোনো…”

“ এফ-আই-আর লেখা হয়েছে?”

কথার মাঝে হঠাৎ প্রশ্ন। শরিফ ঘাবড়ে গেল কিছু। এই বাক্যের এই উত্তর সে আশা করেনি।

একটু থমকে বলল,

“ জি।”

“ সাক্ষি রেডি?”

“ জি।”

“ প্রুফ?”

এবারেও একই উত্তর এলো। “ জি মানে, সব রেডি।”

ইয়াসিরের স্বর অটল।

“ নো মোর দেন। সময়ের কাজ সময়ে করা পুলিশের দায়িত্ব, শরিফ। এটা বাংলা সিনেমা নয়,যে তুমি প্রত্যেকবার মারপিট শেষে গিয়ে পৌঁছোবে। একটা মেয়ে রেপড হয়েছে, আর তুমি তোমার চাকরি নিয়ে ভাবছো?”

মুখের ওপর কঠোর জবাবে,

শরিফ মাথা নিচু করল।

“ সরি স্যার।”

ইয়াসির কিছু বলল না। প্রতাপি পায়ে হাঁটা ধরল ঘুরে। অগত্যা মুখ গোজ করে পিছু নিলো সেও।

এতদিন কী আরামটায়ই না থাকত এখানে!

কর্তৃপক্ষ যে কার বুদ্ধিতে ইয়াসিরকে এই থানার দায়িত্ব দিয়েছে! সারাক্ষণ শুধু রুলস আর জ্ঞান। ধুর!

জিপ রেডি। আরো কজন পুলিশের সাথে একজন মহিলা কর্মচারিও আছেন।

ইয়াসির ওঠার সময় মুঠোফোন বাজল। সিটে বসতে বসতে কানে গুঁজল সে।

ওপাশ থেকে মা হড়বড়িয়ে উঠলেন,

“ কী রে, সার্থ? কোথায় তুই?”

“ ডিউটি টাইম, মা। কোথায় থাকব তাহলে?”

“ এখনো থানায়? আমি যে সকালে বলে দিলাম, সন্ধ্যায় তোর জন্যে মেয়ে দেখতে যাব।”

“ তো যাও। আমাকে বলছো কেন?”

“ ওমা,এ আবার কী কথা?

আমরা একা গিয়ে দেখব? তুই দেখবি না?”

“ জরুরি কাজে যাচ্ছি। এখন এসব হবে না। তোমরা গিয়ে দেখে এসো।”

মা মন খারাপ করলেন।

“ তোকে ছাড়া কীভাবে যাই?”

ইয়াসির নিরুৎসাহিত। কেমন কাঠখোট্টা বলল,

“ তাহলে যেও না। রাখছি এখন।”

বলেই লাইন কাটল সে। শরিফ আলগোছে হাসল। ইয়াসিরের চোখে পড়ল সেটা।

সোজা রাস্তায় চেয়ে বলল,

“ হাসির কী হয়েছে?”

ভদ্রলোক ঠোঁট সামলালেও মনের কথায় চাপ পড়ল। বলল রয়েসয়ে,

“ না মানে স্যার,ক্রিমিনাল ধরার জন্যে আপনি মেয়ে দেখাও বাদ দিয়ে দিচ্ছেন। এর আগেরবারও এরকম হলো। আজকেও তাই। মেয়েরা এমনিতেই বরের বেশি ব্যস্ততা পছন্দ করে না। সেখানে বারবার এমন করলে তো আপনাকে কেউ বিয়ে করতেও ভয় পাবে।”

ইয়াসির এমন ভাবে তাকাল,শরিফের শ্বাস আটকে পড়ল গলায়।

ছোটো কণ্ঠে বলল,

“ সরি স্যার।”

সে মুখ খুলল শক্ত বাক্যে,

“ আমার কাছে দায়িত্ব আগে। যে পোশাক পরেছি,তাতে বিয়ের থেকে ক্রিমিনাল ধরাটাও আগেই হওয়া উচিত।”

শরিফের আদলে অন্ধকার। গাড়ি সেই চালাচ্ছে। ড্রাইভিংয়ের হাত ভালো, তাই।

ইয়াসিরের কথায় মাথা নাড়লেও,ঠোঁটে হাসি এলো না। উলটে কটমট করে ভাবল,

“ এত ক্রিমিনাল ক্রিমিনাল করিস!

ব্যাটা, তোর বিয়েটাও যেন কোনো ক্রিমিনালের সাথেই হয়।”

#কাছে_আসার_মৌসুম!

কলমে:নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি

সূচনা পর্ব

(অনুপ্রাণিত হয়েও কোনো সংলাপ ব্যবহার নিষেধ)

[ মোটামুটি বুঝতে পেরেছেন,নায়িকা এখানে চোর। আর নায়ক পুলিশ? নায়িকা পড়াশুনা জানে না তাই ভুলভাল ইংলিশ বলবে। যাক গে,প্রথম পর্ব কেমন লাগে জানাবেন। ভয় পাবেন না,দুদিন পরপর গল্প পাবেন। প্রমিস❤️]

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply