উড়ালমেঘেরভেলায়
লেখনীতে— #ঝিলিক_মল্লিক
পর্ব_২
[কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ]
সন্ধ্যায় আভিয়ানের হুমকিস্বরূপ বলা অমন কথাবার্তায় মারাত্মক ভয় পেয়েছে রানিয়া। ওর একটা স্বভাব হচ্ছে, নিজেকে যতোই সাহসী দেখানোর চেষ্টা করুক না কেন, আভিয়ানের মতো লোকের রূঢ় কথাবার্তা শুনলে ঠিকই ভেতরে ভেতরে ভয় পায়। তারওপর ওকে হুমকি দেওয়া হয়েছে— ঢাকায় এসে নাকি ওকে দেখে নেওয়া হবে! ওর ইয়ার্কি-ফাজলামি ছুটানো হবে! কিন্তু রানিয়া-ই যে ফোনের এপাশে ছিল, সেটা ওই লোকটা বুঝলো কিভাবে? বড় ধাঁধাময়! আভিয়ান যে রানিয়ার নাম মনে রাখবে— এতোটাও আশা করেনি রানিয়া। অথচ বিয়ের দিনও লোকটা এমন ভাব করে ছিল, যেন বিয়ে-শাদি, শ্বশুরবাড়ি-বউ নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা-ই নেই। রানিয়াকে যে মনে রেখেছে— এই ব্যাপারটা দেখে ভীষণ আশ্চর্য হয়েছে ও।
রাত বারোটার বেশি বেজে গেছে। এতোক্ষণ প্রায় দেড়ঘন্টা যাবত ঘর-বেলকনিময় পায়চারি করছিল রানিয়া। ঢাকা শহরের একপ্রান্তে ছোট্ট একটা তিনতলা বাড়ি ওদের। নিচের দুই তলায় ভাড়াটিয়াদের অবস্থান। রানিয়ারা যেহেতু বাড়িওয়ালা, সুতরাং ওরা তিনতলায় থাকে। রানিয়া এতোক্ষণ যাবত ভয়ে তটস্থ ছিল। উপায় খুঁজছিল কিভাবে আভিয়ানের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তার কথা নিতান্তই তুচ্ছভাবে নেওয়া যাবে না। ওই লোকটাকে ট্রেনিং সেন্টারে থাকাকালীন কয়েক মাসেই বেশ ভালোমতো চিনে গিয়েছিল রানিয়া। মুখে একবার যেই কথা বলে ফেলে, সেটা করেই ছাড়ে। তারমানে রানিয়ার বাঁচার চান্স জিরো পার্সেন্ট। কিন্তু ও হাল ছাড়ার পাত্রী নয়৷ কোনোভাবেই ধরা দেবে না আভিয়ান স্যারের কাছে। দরকার পরলে আরো পাকাপোক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করবে, নিজেকে খুব খারাপ প্রমাণ করবে। এতে আভিয়ান নিজেই রেগে গিয়ে ওকে ছেড়ে দেবে। অবশ্যই বিবাহিত হওয়ার পরেও অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক করা মেয়েকে নিজের বউ হিসেবে রাখার মতো লোক আভিয়ান নয়! এটুকু ভালো করে বুঝে গেছে রানিয়া। তাই ও এই পন্থা-ই অবলম্বন করবে বলে ঠিক করলো। কথাটা মাথায় আসতেই তৎক্ষণাৎ ওর নিজের কলেজের বন্ধু জাহিনের কথা মনে পরলো। সঙ্গে সঙ্গে এই রাতেই কনট্যাক্ট লিস্টে সার্চ করে জাহিনের ফোন নাম্বার বের করে ওকে কল করলো রানিয়া। প্রথমবার রিং হতেই কল রিসিভ করলো জাহিন। রানিয়া ফোনটা কানে নিয়েই চিল্লিয়ে আফসোসের সুরে বলতে লাগলো, “দ্যাখ বন্ধু আমার কি কপাল!”
“ক্যান রে? কী হইসে? কেউ কিছু বলসে তোরে? একবার জাস্ট নামটা বল। কেটে রেখে আসবো।”
“না রে বন্ধু। কেউ কিছু বলেনি আমাকে। কিন্তু আমার কি আর দুঃখের শেষ আছে? তুই আমার দোস্ত হয়েও একবার মাত্র কল দেওয়াতে সঙ্গে সঙ্গেই রিসিভ করলি। এদিকে আমার স্বামীকে বারবার কল দিলেও তার কল রিসিভ করার সময় হয় না৷ আমার জীবনটা তামাতামা হয়ে গেল রে দোস্ত!”
“ডিভোর্স দে দোস্ত। জাস্ট ডিভোর্স। এর ওপরে আর কোনো কথা নেই।”
“ডিভোর্স তো দেবোই দোস্ত। এজন্যই এতো রাতে তোকে কল দিয়ে ডিস্টার্ব করলাম।”
“আরে ডিস্টার্ব কীসের? তুই তো আমার প্রাণের বন্ধু। তোর জন্য একটু সময় হবে না আমার? সমস্যা নেই কোনো। তুই কন্টিনিউ কর।”
“ঠিক আছে। এখন মেইন টপিকে আসি তাহলে। আসলে আমি উনাকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছি। কিন্তু এরজন্য শক্ত কোনো রিজন নেই আমার কাছে। হ্যাঁ একটা কারণ আছে। সেটা হলো, উনি রাগী আর অনেক স্ট্রিক্ট। কিন্তু এটা কোনো পাকাপোক্ত কারণ হিসেবে দাঁড় করাতে পারবো না। উনি এই কারণের জন্য আমাকে ডিভোর্স দেবে বলেও মনে হয় না৷ তাই আমাকেই একটা সেনসেটিভ কারণ দাঁড় করাতে হবে।”
“কী কারণ?”
ফোনের ওপাশ থেকে জাহিনের কৌতূহলী কন্ঠস্বর শোনা গেল। রানিয়া একটু রয়েসয়ে ফিসফিস করে বলতে লাগলো— “উনার সামনে আমার নিজেকে খারাপ প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু আমার তো একমাত্র তুই ছাড়া কোনো ছেলেবন্ধু নেই। আর না তো আছে কোনো এক্স অর নেক্সট। এজন্য তোর-ই আমাকে হেল্প করতে হবে।”
“কী হেল্প দোস্ত। তুই জাস্ট একবার বলে দ্যাখ। তোর জন্য জানও দিয়ে দিতে পারবো।”
“আরে শালা জান দেওয়া লাগবে না। তুই জাস্ট কয়েকদিনের জন্য আমার প্রেমিক হওয়ার অ্যাক্টিং করবি। এতেই চলবে।”
“কিন্তু দোস্ত…”
জাহিনের আমতা আমতা কথা শুনে রানিয়া ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো, “কিন্তু কী?”
“আমার গার্লফ্রেন্ড। ও যদি জানতে পারে . .”
“আবে শালা ও জানলে কী হবে? তুই তো আমার ফেইক বয়ফ্রেন্ড সাজছিস তাইনা? ও জানলে কোনো সমস্যা হবে না। কথা হচ্ছে, আভিয়ান স্যার যেন সত্যিটা জানতে না পারে।”
“কিন্তু দোস্ত আমার তো আভিয়ান স্যারের কথা শুনলেই ভয় লাগে। উনি নাকি স্ট্রিক্ট মানুষ। যদি রেগে গিয়ে আমার হাত-পা ভেঙে দেয়? তারপর তো আমার আর বিয়ে হবে না। গার্লফ্রেন্ড ছেড়ে চলে যাবে।”
“তুই না একটু আগে বললি, আমার জন্য জান দিতে পারবি? তাহলে এখন ভয় পাচ্ছিস কেন গাধা? শোন, আমি এতো কথা শুনছি না তোর। আগামীকাল তুই রমনার পার্কে আয়। দেখা করি, ফটো তুলি, তারপর স্টোরি দিই।”
“স্টোরি.. স্টোরি কেন?”
“তোর জাউরা দুলাভাইকে দেখাবো তাই।”
ওপাশ থেকে জাহিনের আর্তনাদ শোনা গেল। তবে রানিয়া সেসব কানে নিলো না। চট করে কল কেটে দিলো। জোরে শ্বাস টানলো ও। জাহিনের আসা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। গাধাটা আসবেই। রানিয়াকে প্রাণের বন্ধু মানে ও। এজন্য ওকে নিয়ে চরম আত্মবিশ্বাস আছে রানিয়ার। আগামীকালের জন্য একটা চতুর পরিকল্পনা করে বিছানায় শুতে গেল ও।
.
.
আজ রবিবার। দিনটা ভীষণ সুন্দর ছিল আজ। রানিয়ার জন্য আজ একটু বেশিই সুন্দর। এতো সুন্দর রবিবার রানিয়ার জীবনে এসেছে বলে মনে পরে না ওর। বিকেলটা বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে কেটে গেছে। কলেজ জীবন শেষ করেছে একবছর হলো। এরমধ্যে আরেকটা বছর গ্যাপ গেছে রানিয়ার। ওর সব ফ্রেন্ডরা অ্যাডমিশন দিয়ে একেকজন একেক জায়গায় পড়াশোনা করছে। ট্রেনিং-এর চক্কের রানিয়ার গ্যাপ গেছে একবছর। আজ দীর্ঘ মাসখানেক পরে পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছিল ওর। রমনার পার্কে জাহিনের সাথে আর দু’জন ফ্রেন্ড, নীতি আর মিশাও এসেছিল। ওরা আজ অনেক জায়গায় ঘুরেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরে টিএসসি, দোয়েল চত্বরে গিয়েছে, একসাথে চা খেয়েছে, গল্প করেছে, অনেক ছবিও তুলেছে। তবে রানিয়া মনে করে দু’টো ছবি আলাদাভাবে জাহিনের সাথে তুলেছিল। সন্ধ্যায় বাসায় আসার পরপরই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সেই ছবি ফেসবুক স্টোরি দিয়েছে। রানিয়ার আইডিতে ফ্রেন্ডের সংখ্যা মাত্র আড়াই’শ। সেই আড়াই’শ জনের মধ্যে দুইশত ঊনপঞ্চাশ জনকে হাইড করে শুধুমাত্র শাহ আহমেদ আভিয়ান নামক আইডিটাকে রেখে স্টোরি আপলোড করেছে ও। তবে হতাশার ব্যাপার হলো, গোটা ঘন্টা তিনেক পেরিয়ে গেলেও লোকটা স্টোরি সিন করেনি। অবশ্য সবসময় যে রানিয়ার স্টোরি সিন করে, তা-ও ঠিক নয়। মাঝেমধ্যে সিন করে। রানিয়া প্রায় প্রতিদিনই দুই-তিনটা করে স্টোরি দেয়। হিসাব করলে আভিয়ান বোধহয় মাসে ওর চার-পাঁচটা স্টোরি সিন করে৷ তা-ও বোধহয় ভুল করে সিন করে ফেলে। তবে স্টোরিতে কোনো রিয়্যাক্ট অবধি দেয় না। আজ-ও যে সিন করবে, তার কি গ্যারান্টি? তবুও রানিয়া চব্বিশ ঘন্টার জন্যই স্টোরিটার স্থায়িত্ব রাখবে। যদি লোকটা আসলেই সিন করে তখন? সেই আশায়-ই তো বসে আছে ও।
রানিয়া আভিয়ানের আইডি ঘুরে এসেছে। লোকটার অ্যাক্টিভ স্ট্যাটাস সবসময় অফ করা থাকে। এখন অনলাইনে আছে কিনা, সেটাও ঠিক বোঝা যাচ্ছে না এই কারণে। খুব হতাশ হলো ও।
.
.
ঘড়ির কাটা রাত দেড়টার ওপরে৷ রানিয়া আজ রাতে দেরি করে খাবার খেয়েছে। সাড়ে বারোটায় নিজে রান্নাঘরে গিয়ে খাবার বেড়ে খেয়ে নিয়ে একটু বেলকনিতে হাঁটাচলা করেছে। এতোক্ষণ ফোন হাতে নেওয়া হয়নি ওর। এখন ঘরে এসে বিছানা ঠিকঠাক করে শুয়ে পরলো রানিয়া। ওর অভ্যাস হলো, ঘুমানোর আগে মিনিট পনেরো-বিশেক ফোন স্ক্রল করা। সেই মোতাবেক ফোনটা হাতে নিয়ে চালু করতেই চমকে উঠলো ও। তেরোটা মিসড কল! তা-ও আবার আভিয়ানের নাম্বার থেকে। লোকটার ফোন নাম্বার — “বাজে লোক” লিখে সেভ করে রেখেছিল ও। সেই বাজে লোক ওকে এই প্রথমবার কল দিয়েছে। তা-ও এতোবার! কী কারণে? রানিয়ার হঠাৎ মনে পরতেই ওয়াই-ফাই অন করে দ্রুত ফেসবুকে ঢুকলো। এরপর সোজা নিজের স্টোরির ভিউয়ে। দু’টো স্টোরি দিয়েছিল ও। দু’টো-ই আভিয়ান সিন করেছে। বরাবরের মতোই কোনো রিয়্যাক্ট নেই। কিন্তু স্টোরির রিপ্লাই করেছে লোকটা। রিপ্লাইতে কি লিখেছে, তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। রানিয়া মেসেঞ্জারে আভিয়ানের কনভারসেশনে প্রবেশ করতেই দেখলো আভিয়ান মেসেজে লিখেছে— “বেয়াদব! সামনে পেলে থাপ্পড় মেরে মুখের মানচিত্র চেঞ্জ করে দেবো!”
মেসেজটা পড়ামাত্র-ই রানিয়ার হাত অটোমেটিক মুখে চলে গেল। তখন খেয়াল করলো, আভিয়ানের আজ ফেসবুকের অ্যাক্টিভ স্ট্যাটাস অন করা। রানিয়া ভয় পেয়ে দ্রুত নিজের মেসেঞ্জারের অ্যাক্টিভ স্ট্যাটাস অফ করতে যাবে, তখনই আভিয়ানের মেসেজ আসলো আবারও৷ যেখানে ও লিখেছে— “অ্যাক্টিভ স্ট্যাটাস অফ করে ফাজলামি করার কথা ভুলেও ভেবো না৷ আরেকবার কল দেবো। রিসিভ না করলে বিলিভ মি, ঢাকায় এসে মাটিতে দাফন করে দিয়ে যাবো তোমাকে।”
রানিয়া মেসেজটা দেখে বুকে ফুঁ দিয়ে দোয়া-দরুদ পড়তে লাগলো। আজ ও শেষ। কল রিসিভ করলে না জানি কি কি বলবে। রানিয়া ভয়ে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে গেছে। কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। তখনই আভিয়ানের কল আসলো। রানিয়ার সেই মেসেজটার কথা মনে পরতেই তড়িঘড়ি করে কল রিসিভ করে ভয়ে ভয়ে কানে ধরলো ও। মিনিটখানেকেও ফোনের ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ না আসায় ও কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠলো, “হ্যালো..”
“ইডিয়ট!”
রানিয়া “হ্যালো” বলা মাত্রই ফোনের ওপাশ থেকে ধমকের শব্দটা শোনা গেল। কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো ও। তবে মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে সামান্য হাসার চেষ্টা করে বললো, “ইডিয়ট! কে ইডিয়ট?”
“বুঝো না? বোকা সাজো তুমি?”
“কই না তো।”
“স্টোরির ওই ছেলেটা কে?”
“কেন দেখতে পান না চোখে? একপাশে তো ক্যাপশন লিখেই দিয়েছি— “উইথ মাই বিলাভ্ড।” আপনি ইংরেজি বোঝেন না বুঝি? আহারে৷ ঠিক আছে, সমস্যা নেই। আমিই বলে দিচ্ছি। এই কথাটার অর্থ হচ্ছে — “আমার ভালোবাসার মানুষের সাথে।” এবার বুঝেছেন?”
“তুমি আসলে থাপ্পড় খাওয়ার-ই যোগ্য, বেয়াদব! এসব বলতে মুখে বাঁধে না তোমার?”
“না, একটুও বাঁধে না। বাঁধবে কেন? কত সহজ একটা কথা। আমি কি বাক প্রতিবন্ধী নাকি যে আমার বলতে মুখে বাঁধবে?”
আভিয়ান তখন ভীষণ ক্লান্ত। আজ ক্যান্টনমেন্টে ফিরেছেই রাত সাড়ে বারোটার পরে৷ এসে সামান্য বিশ্রাম অবধি নিতে পারেনি। তারমধ্যে এই কাহিনী। মস্তিষ্কে যেন জ্বলন্ত আগুন দপদপ করছে। রাগে মাথাব্যথায় মাথা চিঁড়ে চৌচির হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। আভিয়ান রানিয়ার কথাগুলো শুনছে। রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি এই মুহূর্তে। নাহলে ওর মুখ থেকে এখন এমন কথা বের হয়ে যাবে যে, ওই মেয়ে তা সহ্য করতে পারবে না। আভিয়ান দ্রুত হাতড়ে বেডসাইড ড্রয়ার থেকে মার্লবোরোর প্যাকেটটা নিলো। সেখান থেকে একটা সিগারেট মুখে নিয়ে তার মাথায় লাইটার দ্বারা দক্ষতার সাথে আগুন জ্বালিয়ে নিলো।
আভিয়ানের একহাতে ফোন৷ সেটা কানের কাছে ধরা। আরেক হাতে সিগারেট। যেটা বারবার মুখের কাছে নিয়ে তাতে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছে। পরনে ওর একটা খাকি জলপাই রঙের প্যান্ট আর জলপাই রঙের স্যান্ডো গেঞ্জি। জিম করা হাতের বাহু ঘেমে গেছে৷ কপালের কোণ বেয়ে চুল হতে ঘাম গড়িয়ে পরছে মুখে। আজ সেটা মোছারও প্রয়োজন বোধ করছে না আভিয়ান। ফোন শক্ত করে চেপে ধরে শান্তভাবে কিছুটা গম্ভীর গলায় ফোনের ওপাশে রানিয়াকে উদ্দেশ্য করে ও বললো, “রানিয়া, ভালোভাবে বলছি আমি, প্লিজ এসব কাজ কোরো না। আমার রেপুটেশন নষ্ট করার চেষ্টা কোরো না। তোমাকে এই ফার্স্ট অ্যান্ড লাস্ট টাইম ওয়ার্ন করছি আমি।”
“কীসের ওয়ার্নিং? আপনার ওয়ার্নিং-এর ধার ধারি নাকি আমি? আর আপনি কী মনে করেন? আপনাকে ভয় পাই? আপনার কথামতো চলবো আমি? হোয়াট অ্যা জোক!”
কথাটা বলে রানিয়া খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো। তাচ্ছিল্যের হাসি ওর৷ মেয়েটার কথাবার্তা শুনে এপাশে আভিয়ানের রাগে মাথায় দপদপ করে আগুন জ্বলছে। ও হাত মুঠো করে দাঁতে দাঁত পিষে রানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো, “দূরে আছি বলে যা খুশি করছো তাই-না? ইচ্ছাস্বাধীনমতো চলাফেরা করছো, ছেলেপেলের সাথে মেলামেশা করছো, কোনোকিছুর পরোয়া করছে না! একবার শুধু আসতে দাও, তোমার ছাল তুলে নেবো, হাত-পা বেঁধে বসিয়ে রাখবো!”
“আরে আসেন আসেন। আপনাকে ভয় পাই নাকি আমি? এসে দেখিয়ে যান আপনার ওই জল্লাদের মতো চেহারাটা৷ যদিও ওই চেহারাটা দেখলে আমার দিন খারাপ যায়। এজন্য আপনি রাতে আসবেন, ওকে?”
“বিলিভ মি রানিয়া, তোমার এসব কাজের জন্য যদি টেনশনে আমার আজ রাতের ঘুম খারাপ হয়; তাহলে ঢাকায় ফেরার পর তোমার প্রতিটা রাতের ঘুম হারাম করবো আমি। একটা রাতও শান্তিতে ঘুমাতে দেবো না!”
কথাটা বলেই রানিয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিলো আভিয়ান। এদিকে রানিয়া এতোক্ষণ আভিয়ানকে জব্দ করতে পেরেছে ভেবে বেশ আমোদে থাকলেও লোকটার শেষোক্ত কথাটা শুনে চমকে-থমকে গেল। অজানা এক ভয়ে ওর শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল যেন৷ দ্রুত বিছানায় শুয়ে গায়ের ওপর কম্বল টেনে মুখ অবধি ঢেকে নিলো। পরপরই চোখের কাছ থেকে কম্বল চেপে ধরে নামিয়ে দিতেই ট্রেনিং সেন্টারে থাকাকালীন আহমেদ আভিয়ানের ওই জিম করা অর্ধ-উন্মুক্ত জলপাই রঙের স্যান্ডো গেঞ্জি এবং খাকি প্যান্ট পরিহিত শরীর, চেহারা ভেসে উঠলো চোখের সামনে। সঙ্গে সঙ্গেই মনে পড়ে গেল আভিয়ানের কিছুক্ষণ আগে বলা শেষ কথাটা— “আমার আজ রাতের ঘুম খারাপ হলে ঢাকায় ফিরে তোমার প্রতিটা রাতের ঘুম হারাম করবো আমি। একটা রাতও শান্তিতে ঘুমাতে দেবো না!”
কথাটা মনে আসতেই শিউরে উঠলো রানিয়া।
চলবে
.
.
আগামীকাল আরো একটা পর্ব আসবে। আপনারা গল্প পড়ে সবাই রিয়্যাক্ট আর কমেন্ট ঠিক রাখবেন প্লিজ। তাহলে আমি নিয়মিত গল্প দিতে উৎসাহ পাই। আর পেইজটা অবশ্যই ফলো করবেন। তাহলে গল্প আপলোড দিলে আপনার সামনে যাবে। সবাইকে ভালোবাসা। ❤️
Share On:
TAGS: উড়াল মেঘের ভেলায়, ঝিলিক মল্লিক
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ১১
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৩
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৫
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৯
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ১২
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৮
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ১০
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৬
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৭
-
উড়াল মেঘের ভেলায় গল্পের লিংক