Golpo romantic golpo উড়াল মেঘের ভেলায়

উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ১৫


উড়ালমেঘেরভেলায়

লেখনীতে— #ঝিলিক_মল্লিক

পর্ব_১৫

[কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।]

শাহ আহমেদ আভিয়ান।
রানিয়ার কাছে এক অপার রহস্যের নাম। আভিয়ানকে এতোগুলো দিনেও ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেনি রানিয়া৷ অবশ্য বুঝবেই বা কীভাবে? কিছু মানুষ খোলসে আবৃত থাকে স্বেচ্ছায়। তাদেরকে বোঝার চেষ্টা করেও বোঝা যায় না। আভিয়ানও ঠিক তেমনই। আর রানিয়ার সাইকোলজি বোঝার ক্ষমতা এমনিতেও একটু কমই। এজন্যই বোধহয় আভিয়ানের বিষয়ে আরো বেশি অজ্ঞ ও।
রানিয়া আভিয়ানের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে। একদম দৃঢ় ভঙ্গিতে। আভিয়ান ঠোঁট কামড়ে ওকে পর্যবেক্ষণ করছে। মেয়েটার চোখে-মুখে একরাশ কৌতূহল। আভিয়ানের চোখ ওর ওপর থেকে সরছেই না। তবে কোমরে বিচরণ করতে থাকা হাতের বাঁধন বেশ কিছুটা আলগা হয়েছে৷ রানিয়ারও অস্বস্তিও কমে এসেছে। জোর ফিরে পেয়ে ও ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি রেখে আভিয়ানকে প্রশ্ন করলো, “আপনার তো কোনোকিছু যায়-আসার কথা নয় আভিয়ান। আপনি আমাকে নিয়ে ভাবেন না, আপনার কাছে আমার কোনো গুরুত্ব নেই, তাহলে কেন আপনি জাহিনের সাথে কথা বলা নিয়ে এতোটা ওভার পজেসিভ হচ্ছেন বলুন তো? ঘটনা কী? তাহলে কি আমি ধরে নেবো, আপনি জেল্যাস?”

“নোপ। আমি জেল্যাস নই। তবে, এখনও পর্যন্ত কাগজে-কলমে তুমি আমার স্ত্রী। তাই আহমেদ আভিয়ানের স্ত্রী হওয়ার দরুন তোমাকে এসব কার্যকলাপে শোভা পায় না। গট ইট?”

“না, বুঝতে পারিনি। আচ্ছা, আপনি আমাকে ডিভোর্স দিবেন ভালো কথা, তাহলে দিচ্ছেন না কেন? দিয়ে দিতে পারেন তো। তবে আমার-ই সুবিধা হয়।”

ডিভোর্সের কথাটা শুনে আভিয়ান কিছুটা গম্ভীর, অন্যমনস্ক হলো। হঠাৎ কি হলো কে জানে! ও রানিয়ার মুখ চেপে ধরে ঠোঁটে একটা গাঢ় চুমু খেল পরম আদরে। এরপর আলতোভাবে রানিয়ার গালে হাত রেখে ফিসফিসিয়ে বললো, “তুমি সত্যিই ডিভোর্স চাও?”

“আপনিই তো বলেছিলেন ডিভোর্সের কথা!”

রানিয়া অবাক হলো। এই লোকের একেক সময় হয় কি! কিছুদিন আগেও ডিভোর্সের কথা বললো। এখন আবার এই কথা বলছে! রানিয়া ঠোঁট চেপে বললো, “আপনি কি কনফিউজড আভিয়ান?”

“কোন বিষয়ে?”

“এইযে আমাকে ডিভোর্স দিবেন কি দিবেন না— এটা নিয়ে কনফিউশানে আছেন?”

“বোধহয়।”

“আপনার জেদ-ই সবকিছু শেষ করে দেবে আভিয়ান।”

“আর তোমার জেদ? তোমার জেদ নেই?”

আভিয়ানের গলার স্বর একটু অন্যরকম শোনালো। আবছা আঁধারেও অনুভব করতে পারলো রানিয়া। ও কম্বলের ভেতর থেকে একহাত বের করে আভিয়ানের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িযুক্ত গালে রাখলো। আভিয়ানের মুখ ঠান্ডা অনেক। রানিয়ার উষ্ণ হাত তবু সেই ঠান্ডা অনুভব করতে পারলো না। ও আকুতি স্বরে বললো, “আমি জেদ ধরে ভুল করেছিলাম। আমার বোঝা উচিত ছিল, সবার সাথে আসলে জেদ ধরা যায় না, মানায়ও না৷ এর পরিণতি যে খুব খারাপ হবে আমার জন্য, সেটাও বুঝে উঠতে পারিনি। আগে বুঝলে কখনোই জেদ ধরতাম না।”

আভিয়ান রানিয়ার হাতটা সরালো না গাল থেকে৷ বরং, আরো এগিয়ে গেল। ওর চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো, “কী পরিণতি খারাপ হয়েছে?”

রানিয়া এহেন প্রশ্নে থতমত খেলো। কী পরিণতি খারাপ হয়েছে — এই প্রশ্নের বিপরীতে কি জবাব দেবে তা খুঁজে পেল না। আর জবাবটা ও দিতেও পারবে না। আভিয়ানকে জানানো সমীচীন হবে না। শত হোক, লোকটার উদ্দেশ্য এখনো পরিষ্কার নয়। কি করতে চাইছে, করবে বা করে চলেছে — কিছুই মাথায় ঢুকছে না রানিয়ার। হঠাৎ ওর কি হলো কে জানে! আভিয়ানের শার্টের কলার চেপে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বললো, “কী পেয়েছেন কি আমাকে?”

“কী পাবো?”

“খেলনা পুতুল মনে করেন? যে, যখন খুশি যেভাবে খুশি নাচাবেন আপনার ইশারায়! এমন ভেবে থাকলে ভুল করবেন আভিয়ান। আপনি আসলে আমার সাথে সম্পর্কটা কোনোদিনই রাখতে চাননি। সেটা আমাকে শুরুতে বলে দিলেই হতো। একটা মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট করে দিতে বিবেকে বাঁধলো না আপনার? নাকি আপনার অন্য কোথাও সম্পর্ক আছে? যার জন্য আপনি আমাকে এভাবে শুরু থেকেই দূরে সরিয়ে রেখেছেন! ওইযে হিয়ার সাথেই কি—”

রানিয়া আর কিছু বলতে পারলো না৷ তার আগেই আভিয়ান ওর মুখ শক্ত করে চেপে ধরলো। এতোক্ষণ যথেষ্ট শান্ত থাকলেও এবার ও কিছুটা চড়াও হলো৷ মেজাজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললো। একটু জোর গলায় বললো, “জাস্ট স্টপ রানিয়া! হিয়া আমার বোনের মতো। কলিগ ও আমার৷ ওর সম্পর্কে আমাকে জড়িয়ে কিসব বাজে কথা বলছো তুমি! পাগল হলে নাকি?”

“হ্যাঁ আমি পাগল হয়ে গিয়েছি। আপনি আমাকে পাগল করেছেন। আপনার জেদের জন্য আজ আমার এই দশা। নিজেকে পাগল পাগল লাগে। মনে হয়, আপনি আমাকে এভাবেই মেরে ফেলতে চান। হিয়া তো আপনার কলিগ তাইনা? তাহলে ওরা কেন আপনার ফ্যামিলি ট্যুরে সাথে আসবে? ওদের কী কাজ এখানে?”

“এতো কৈফিয়ত আমি তোমাকে কেন দেবো? এতো বেশি জানার আগ্রহ কেন তোমার? হুঁ?”

আভিয়ান এবার একটু কঠোরভাবেই চেপে ধরলো রানিয়াকে। পেটে সামান্য চাপ পরতেই ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো রানিয়া। সঙ্গে সঙ্গে আভিয়ান ওকে ছেড়ে দিলো। রানিয়া তবু ওর কলার থেকে হাত সরালো না। মাথা চক্কর কাটছে ওর। উঠে বসার চেষ্টা করলো। টাল সামলাতে না পেরে আভিয়ানের হাতের বাহু খামচে ধরে রাখলো। নিচের দিকে ঝুঁকে রইলো৷ আভিয়ান রানিয়ার এমন অবস্থা দেখে ওকে শক্ত করে ধরে রাখলে। ওর গালে হাত রেখে মুখ তুলে বললো, “কী হয়েছে রানিয়া? শরীর খারাপ লাগছে তোমার?”

“উহুঁ।”

রানিয়া না বললেও আভিয়ান মানলো না৷ ওকে জড়িয়ে ধরে রাখলো। রানিয়া কম্বলের নিচে আভিয়ানের শরীরের উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে মিইয়ে গেল। জাদুর মতো যেন ধীরে ধীরে ওর শারীরিক জটিলতা কেটে যেতে লাগলো। ও স্বাভাবিক হতে শুরু করলো। রানিয়ার পিঠে নরমভাবে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আভিয়ান। ওর ঠোঁট রানিয়ার মাথায় চেপে ধরা৷ আভিয়ান ওর চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে চোখ বুঁজে। রানিয়ার চোখে ঘুম নেমে আসতে লাগলো। ও আভিয়ানের বুকে নিজের মাথা ঘষে ওর আরো কাছ ঘেঁষে বসলো। আভিয়ান হঠাৎ রানিয়াকে বলে বসলো, “একটা কথা শুনবে রানিয়া?”

রানিয়া মুখ তুলে আভিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো, “জি, বলুন।”

“আমি তোমাকে ছাড়তে চাই না।”

“মানে?”

“মানে, তোমাকে আমি ছাড়ছি না।”

রানিয়া ভীষণ অবাক হলো আচনক এমন অপ্রত্যাশিত কথা শুনে। আভিয়ানের দিকে অবাক চাহনিতে চেয়ে রইলো। আভিয়ান সেই চাহনি পাত্তা না দিয়ে পুনরায় বেশ গম্ভীর স্বরে বললো, “ভেবে দেখলাম বুঝলে।”

“কী ভাবলেন?”

“ভেবে দেখলাম যে, যেহেতু আমারও জেদ বেশি, আর তোমারও অনেক জেদ; তাই আমাদের বেবি হলে সে হবে জেদি আলট্রা প্রো ম্যাক্স। আর আমার জেদি ছেলেমেয়ে খুব ভালো লাগে। এরা চাইলে লাইফে অনেক কিছু করে ফেলতে পারে। অন্তত নিজের ছেলেমেয়ের ক্ষেত্রে তো আমি তেমনই চাইবো। এজন্য হলেও তোমাকে ছাড়া যাবে না।”

“ডিভোর্স?—”

“ওয়ার্ডটা মুখেও এনো না। আর যেন দ্বিতীয়বার তোমার মুখে এই ওয়ার্ডটা না শুনি।”

“তাহলে আপনি আমার সাথে অমন আচরণ কেন করলেন আভিয়ান? কেন সেদিন সবকিছুর পরেও ডিভোর্সের কথা বললেন?”

“সে-কথা আরেকদিন বলবো৷ এখন চুপচাপ ঘুমাও তো। দেখি, এদিকে আসো।”

আভিয়ান রানিয়াকে কাছে টেনে নিলো। রানিয়া অনিচ্ছা থাকা স্বত্তেও সরতে পারলো না। বিস্ময়ের পর বিস্ময় পাচ্ছে ও। আভিয়ানের কার্যাদি ধরে উঠতে পারছে না। আভিয়ান আসলে চায়টা কী? বোঝা মুশকিল।

রানিয়ার ভাবনাকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ হতে দিলো না আভিয়ানের একটি কথা। আভিয়ান হঠাৎ বলে উঠলো, “স্যরি রানিয়া। আমি জানি, আমার জেদ বেশি। আমি সেটাকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করি বা করছি। কিন্তু তোমাকেও কম্প্রোমাইজ করতে হবে৷ একটা সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এফোর্ট দেওয়া সবচেয়ে বেশি জরুরি। হ্যাঁ আমার ভুল ছিল, আমি এফোর্ট দিতে পারিনি। তবে কেন পারিনি, সেই জবাব আরেকদিন দেবো। কিন্তু তোমাকেও সংযত হতে হবে। আমাদের সম্পর্কটাকে আমি আরেকবার সুযোগ দিতে চাইছি। তুমি কি রাজি?”

রানিয়া কোনো জবাব দিলো না। শুধু ড্যাবড্যাব করে আভিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আভিয়ান তোয়াক্কা না করেই এবার চোয়াল শক্ত করে বললো, “তুমি রাজি না হলেও আমার কিছু যায় আসে না। সিলেট থেকে ফিরে এবার তোমাকে আমার সাথে চট্টগ্রামে নিয়ে যাবো। আমার সাথে সেখানেই থাকবে। তারপর দেখবো, কিভাবে পালাও।”

রানিয়াকে বিছানায় শুইয়ে দিলো আভিয়ান। নিজেও ওর ওপরে শুয়ে পরলো। দু’জনার শরীরের ওপর কাঁথাটা টেনে নিয়ে সম্পূর্ণ ঢেকে দিলো আভিয়ান। এরপর একটানা দীর্ঘক্ষণ রানিয়ার চোখ-মুখ, নাক, কান, গাল, কপাল আর গলায় চুমু খেয়ে শেষমেশ ঠোঁটে গিয়ে থামলো। ওষ্ঠদ্বয়ে দীর্ঘক্ষণ পরম আশ্লেষে চুমু খেয়ে এরপর ছেড়ে দিলো। তারপর চুমুর ঝড়ে লাল হয়ে থাকা ওই ঠোঁটজোড়ার দিকে তাকিয়ে থেকে আভিয়ান ফিসফিস করে বলে উঠলো, “এই ঠোঁটের প্রতি মারাত্মক লোভ আমার। এই ঠোঁটের অধিকার আমি এতো সহজে ছাড়বো ভেবেছো?”

“আভিয়ান —”

রানিয়া কিছু একটা বলার চেষ্টা করলো। আভিয়ান ওকে বলতে দিলো না। পুনরায় ওর ঠোঁট আঁকড়ে ধরে বললো, “বোকাফুল! এমন বোকাই থাকো প্লিজ। তোমার এই বোকা বোকা রূপটা বড্ড আবেদনময়ী। যদিও আমি তোমাকে খুব কাছ থেকে শাড়ি পরিহিত দেখিনি। তাহলে বোধহয় এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হতো।”

রানিয়া নাক-মুখ কুঁচকে ফেললো লজ্জায়। বলে কি এই ব্যাটা। রানিয়ার মাথা ঘোরা বন্ধ হয়েছিল। আভিয়ানের এসব নির্লজ্জ কথাবার্তা শুনে আবারও মাথা ঘুরতে শুরু করলো ওর৷ রানিয়া এবার মুখ ফসকে বলে ফেললো, “আপনি কি নেশা করেছেন আভিয়ান? যতদূর জানি, ডিফেন্স পেশার লোকেরা তো নেশা করে না।”

“হোয়াট? নেশা কেন করবো?”

“না মানে, আপনি তো এসব কথা বলেন না কখনো। তাই একটু কনফিউজড হয়ে গিয়েছি আরকি।”

আভিয়ান ওর কোমরে আলতো চাপ প্রয়োগ করে বললো, “চুপ ইডিয়ট। চুপচাপ শুয়ে থাকো।”

রানিয়া চুপ করে শুয়ে রইলো। খুশি হবে, নাকি দুঃখ পাবে — তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ও। রানিয়ার ঘাড়ের ওপরে আভিয়ানের মুখটা। রানিয়া হঠাৎ বলে উঠলো, “ধরুন আভিয়ান, এমন কোনো কথা আপনি জানতে পারলেন আমার সম্পর্কে ; যেটা খুব সেনসেটিভ, কিন্তু আমি আপনার কাছ থেকে লুকিয়ে গিয়েছি, অন্যায় করছি; তখন আপনি কী করবেন?”

“জানে মেরে ফেলবো তোমাকে।”

চলবে

🔹 গল্পটা আর কতগুলো পর্ব হবে? বলুন তো?

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply