#আড়ালে_তুমি |০৮|
#_সাইদা_মুন
হঠাৎ একটি ছেলে এভাবে তাদের সামনে হাটু গেড়ে বসায় তারা বিহ্বলিত হয়ে একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে। বুঝে উঠছে না আসলে কাকে প্রপোজ করতে বসলো। হাতে তো গোলাপ বা অন্য ফুল ও নেই আছে ৩ টা চকোলেট। সুমনা বিষ্ময় নিয়ে প্রশ্ন করেই ফেললো,
-” ভাই কোনডা নীলডা না কালাডা? “
মূলত আজকে পিহু কালো আর ধূসর রঙের মিশ্রনে জামা পড়েছে আর মেঘ নীল। সেই সুবাদে ওদের দুজনকে ইঙ্গিত করেই বলেছে। সুমনার কথায় ছেলেটা হালকা মাথা চুল্কিয়ে লজ্জা ভাব নিয়ে বলে,
-” তিনডাই “
তিনজনকেই লাগবে শোনে সবাই চমকিত কন্ঠে একসাথেই “কিইইই” বলে চিৎকার করে উঠে। তাদের চিৎকার শোনে ছেলেটি কানে ধরে উঠে দাঁড়ায়। হাটু ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,
-“আরে ভাই কানের পর্দা ফাটাই দিবি নাকি। আমি কি প্রেম করতে প্রপোজাল দিলাম নাকি। আমি তো তোদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে প্রপোজাল দিলাম।”
মেঘরা অবাক এর চরম লেভেলে পৌছে গেছে। ফ্রেন্ডশিপ প্রপোজাল তাও আবার এভাবে। এদের স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্ত হয়ে রিক নিজেই কথা বাড়ায়,
-“হেই বোবা’স আই এম রিক.. রিক মির্জা, তোদের ক্লাসমেট। কিন্তু এখন থেকে তোদের বন্ধু ।
বলেই সবার হাতে একটা করে চকোলেট ধরিয়ে দিলো। পিহু বিষ্ময় নিয়েই বলে,
-“মানে কি, ফ্রেন্ডশিপের প্রপোজালও আছে ? “
-“আরে আমি একটু ইউনিক ট্রাই করলাম আরকি “
সুমনা এদের কথার মাঝেই কিটকাটের পেকেট খুলে কামর বসিয়ে দিয়েছে অলরেডি । শা*লি বিশ্ব খাদক একে খাবার দিয়ে যে কেউ পটাতে পারবে রাস্তার পাগল ও। এই যে এখন রিকের কথায় গলে গেলো,
-“উম্মম ইয়াম্মি, যা ফেভারিট চকোলেট দিয়েছিস বলে এক্সেপ্ট করলাম “
সুমনার কথা শোনে রিক ছেলেটি খুশি হয়ে হাত বাড়ায় হ্যান্ডশেক করতে। তবে মেঘ আর পিহু কটমট চোখে তাকায়। মেঘ তো সুমনাকে টেনে সাইডে এনে বলে,
-“আজব অচেনা এক ছেলে এসে বললো আর তুইও নাচঁছিস এর সাথে। এর আসল উদ্দেশ্য কি আমরা জানি নাকি? কি মতলব এ এসেছে, ভালো না খারাপ কে যানে। “
পাশ থেকে রিক কানপেতে এদের কথাই শোনছিলো। সেই অবস্থাতেই বলে,
-” আরে কোনো মতলব নেই, রিক ইজ এ গুড বয় “
মেঘ চমকে পাশে তাকায়। কি সাঙ্গাতিক ছেলেরে লুকিয়ে কথা শোনে,
-” এই ছেলে আড়ি পেতে আমাদের কথা শোনছো কেনো “
-“যা বাবা এভাবে ফাটা বাশের মতো বললে কে না শুনবে “
মেঘ একটু রেগে যায় ফাটা বাশ মানে কি। পিহু সামনে এসে হাত মোচড়াতে মোচড়াতে বলে,
-“এই ছেলে দূরে থাকবি আমাদের থেকে নয়তো ঘুষি মেরে নাক ফাটাই দিবো, আমি কিন্তু ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন মাথায় রাখিস”
রিককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ক্লাসের উদ্দেশ্যে চলে যায় তারা। এদিকে বেচারা রিক আফসোস করছে,
-“ধুরু হুদাই ৩০ টা টাকা পানিতে ফালাইলাম। শালিরা এক্সেপ্ট করিসনি তো চকোলেট ফেরত দিয়ে গেলিনা, কিপ্টা জামাই জুটবে তোদের কপালে “
ক্লাসে বসে সুমনাকে ঝারি দিচ্ছে মেঘ। তখন রিকও ক্লাসে আসে একদম লাস্টের বেঞ্চ এ গিয়ে একা বসে। কোনো পরিচিত কেউ নেই বিধায় বন্ধুও নেই, সবাই গ্রুপ হয়ে গেছে অলরেডি। সে এতোদিন ক্লাস করেনি দুদিন ধরে এ্যাটেন্ড করছে। স্কুল কলেজ লাইফে তো ইজিলি ফ্রেন্ড হতে পারা গেছে। তবে এখানে সবাই ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়, নিজেদের পরিচিতদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এই যেমন অনেকেই স্কুল বা কলেজ ফ্রেন্ড বা রুমমেট নয়তো এলাকার পরিচিত এক কথায় চেনা গন্ডিতেই নিজেদের ফ্রেন্ড করে নিয়েছে। তবে এর মানে এই না অপরিচিতদের সাথে ফ্রেন্ডস হয়না, হয় তবে একটু সময় লাগে।
এদিকে সুমনা রিককে দেখে বলে,
-“দেখ ছেলেটা একা বসে আছে, সত্যি হয়তো এর কোনো ফ্রেন্ড নেই “
সুমনার কথায় মেঘ পিহু দুজনেই পেছনে তাকায়। তাদেরকে তাকাতে দেখে রিক মুখ ভেংচা মারে। তা দেখে ওরা সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয়,
-“বেয়াদব ছেলে, মুখ ভেঙ্গায় “
-“হু তাকাস না এর দিকে “
কিছুক্ষণের মধ্যে ক্লাস ভড়ে যায় স্টুডেন্টস এ, ক্লাস শুরু হতে আরও ১০ মিনিট বাকি। সবাই যে যার ফ্রেন্ড সার্কেলের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। শুধু রিকই একা একা বসে আছে গালে হাত দিয়ে। পিহুর মায়া হলো,
-” খারাপ লাগছে রে আসলেই হয়তো এর কোনো ফ্রেন্ড নেই, আমিও প্রথমদিন ক্লাসে এসে এভাবে অসহায়ের মতোই বসে ছিলাম,নিজেকে কেমন এতিম এতিম লেগেছিল”
পিহুর কথায় মেঘেরও মন গলে। একই ক্লাসের যেহেতু ফ্রেন্ড হতে সমস্যা কিসের ভেবে বলে,
-“তাহলে চল এর প্রপোজাল এক্সেপ্ট করা যায় “
-“তবে বলছিস এর সাথে ফ্রেন্ড হবি? “পিহু সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায়।
-“হুম হওয়া যায় “
-“ওকে, দাড়া একে ডেকে আনি “
বলেই সুমনা পেছন ফিরে রিককে ডাকে। সুমনা সামনে থেকে ডাকছে দেখে সে ব্যাগ রেখেই তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ব্রু কুচকে বলে,
-“কি সমস্যা? আমার মতো অবলা ছেলের ৩০ টাকা মেরে শান্তি হয়নি এখন আবার কিজন্য ডেকেছিস “
এর কথা শোনে মেঘরা হতভম্ব। একে ফ্রেন্ড করতে ডেকে এনলো আর এ কিনা নিজেই চকোলেট দিয়ে, নিজেই খুচা মারছে। সুমনা কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
-“এই রিকের বাচ্চা, তকে আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে এড করতে ডাকলাম আর তুই কিনা আমাদেরই কথা শোনাচ্ছিস। যা ক্যানসেল ভাগ যা যা জায়গায় যা “
সুমনার কথা শোনে রিকের চোখমুখ আলোকিত হয়ে উঠে,
-“সত্যি বলছিস..?যাক তাহলে আমার ৩০ টাকা কাজে লাগলো, দাড়া “
বলেই নিজের জায়গায় চলে গেছে। রিকের কান্ড দেখে তারা হেসে ফেলে, ছেলেটি অনেক মজার। ব্যাগ নিয়ে ফিরে এসে তাদের ঠিক পেছনের ব্রেঞ্চ এ বসে,
-“আমি তো ভেবেছিলাম এই জনমে আর বন্ধুই পাবোনা। যাই হোক তোদের নাম বললি না “
তারপর একে একে সবাই পরিচিত হয়। কথা বার্তা হয় এর মধ্যে অনেক ভালো বন্ডিং ও হয়ে উঠে তাদের। ছেলেটি অনেক মিশুক আর বাচ্চাসুলভ, ফানিও বটে তাই তো এতো তাড়াতাড়ি ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে।
পৃথিবীর এই এক সম্পর্ক “বন্ধুত্ব ” যা এক নিমিষেই গড়ে তোলা যায়।
দুইটা ক্লাস করেই তারা বেরিয়ে যায় ক্লাস থেকে পরের ক্লাসটা বোরিং তাই ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখবে ভেবেছে।
ইউনিভার্সিটিটা অনেক বড় জায়গা নিয়ে অবস্থিত। প্রবেশ করতেই সরু রাস্তা এক সাইডে বড় একটি মাঠ, মাঠের মাঝে একটি শিমুল গাছও আছে এর নিচে বসে অনেকেই আড্ডা দেয় অনেকে আবার ঘাসের উপর জায়গায় জায়গায় বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে বসে আছে। অপরপাশে একটি পুকুরও আছে যার চারিদিকে বড় গাছে ঘেরা এখানেও ছাত্রছাত্রীদের আনাগোনা আছেই।
ছাত্রছাত্রীরা এখানে কেবল পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত নয়, তারা নাটক, সংগীত, কবিতা, বিতর্ক, রাজনীতি, প্রেম সব কিছুর সাথেই মিশে আছে । সবার মধ্যে একটা “আমি আলাদা” ভাব। রুমমেটদের সঙ্গে গল্প, ক্যাম্পাস প্রেম, একতরফা ভালোবাসা, হোস্টেলের ঝগড়া, সব মিলিয়ে এখানে দিনগুলো চলে যায় দুঃস্মৃতির মতো সুন্দর করে। এটা শুধু একটা ইউনিভার্সিটি না, এটা একটা ছোট শহর। এখানে জীবন বইছে একেবারে নিজের ছন্দে।
মেঘরা হাটঁতে হাটঁতে ক্লান্ত হয়ে ক্যান্টিনের দিকে যায়। কিছু খাওয়া দরকার সবার পেটেই খিদে । সবাই টেবিলে বসতেই রিক গিয়ে খাবার অর্ডার করে আসে। তারা নিজেদের মতো আড্ডা দিচ্ছিলো।
তখনি হঠাৎ কোথায় থেকে অনু এসে মেঘের সামনে দাঁড়ায়। চোখেমুখে প্রচন্ড রাগ তবে তা ধমিয়ে রেখে মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“আই এম স্যরি মেঘ, কালকে ভুল বশত তোমাকে চড় মেরেছিলাম। কিছু মনে করোনা। “
মেঘ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে, বুঝছে না এই মেয়ের মতলব কি। তখনই পিহু একগ্লাস পানি নিয়ে অনুর মুখে ছুড়ে ফেলে,
-“অপ্স, আই এম এক্সট্রেমলি স্যরি আপু । ভুল বশত পানি পড়েগেছে কিছু মনে করবেন না। “
আশেপাশের ছাত্রছাত্রীরা এতক্ষণে সার্কাস দেখতে লেগেছে। পিহুর কান্ডে সবার মধ্যে টিপি টিপি হাসির শব্দ তবে কেউ তেমন হাসছে না অনু সিনিয়র বলে। এদিকে অনু এতোবড় অপমান যেনো মেনে নিতে পারছে না সাথে সাথে হাত উঠায় পিহুকে মারার জন্য। তবে পিহু সাথে সাথে সেই হাত ধরে ফেলে। এমনভাবে ধরেছে যে এখন অনু তার হাত ছোটাতে মোচড়া মোচড়ি করছে। কিন্তু পিহু না ছেড়ে তার হাত মোচড়ে পিঠের পেছনে নিয়ে মুখ বরাবর নিজের মুখ রেখে বলে,
-“নিজের সীমানায় থাকবেন আপু নয়তো ভুলে যাবো আপনি আমাদের সিনিয়র।”
বলেই ছেড়ে দেয়। অনু হাত ছাড়া পেয়ে হাত ঘষতে থাকে একদম লাল হয়ে গেছে এতো শক্তি একজন মেয়ে মানুষের। পিহুর দিকে লাল চোখে তাকিয়ে বলে,
-“তোদের আমি দেখে নিবো, জাস্ট ওয়েট এন্ড সি “
অনু যেতেই তাদের টেবিলে হাসির রুল পড়ে যায়। তবে বেচারা রিকের মাথার উপর দিয়ে গেলাও সব। তা দেখে তারা সব ঘটনা খুলে বলে। সব শোনে রিক তার ইউজ করা টিস্যু মেঘের উপর ঢিল মারে।
-“এই গাধি তখনই পালটা চড় বসাতি, কিসের সিনিয়র জুনিয়র আগে মাইরালই এমন হবি “।
ভেজা টিস্যু তার উপর পড়ায় মেঘ কপট রাগ দেখিয়ে কয়েকটা টিস্যু একসাথে করে রিকের দিকে ছূড়ে মারে আর রিক মাথা একসাইডে সরিয়ে নেয় যার ফলে টিস্যু গিয়ে পড়ে অন্য কারোর উপর।
রুদ্র তার গ্যাং সহ কেবলই প্রবেশ করেছিল। রুদ্রের মাথাটা ধরেছে তাই সে কফি অর্ডার দিতেই কাউন্টারের দিকে এগোয়, ঠিক তখনি ডান সাইড থেকে একটি টিস্যু এসে তার বুক বরাবর লাগে। বিরক্তি নিয়ে পাশে ফিরতেই মেঘকে দেখে আরও বিরক্ত হয়ে যায়। মেঘ তো এদিকে ভয়ে নখ কামড়াচ্ছে। রুদ্র তাদের টেবিলের আরেকটু সামনে গিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বলে,
-“হাত তো ভালোই চলে, তা সময় মতো চলে না কেনো?”
মেঘ অবাক হয়ে তাকায় কিসের কথা বলছে। তবে পিহু রুদ্রের কথা ভালোই বুঝতে পারে। মেঘ ভয়ে ভয়ে বলে,
-“ভাইয়া আমি আপনাকে মারিনি এই রিককে মেরেছিলাম স্যতি বলছি “
রুদ্র এই মেয়েকে ভয় পেতে দেখে চরম লেভেলের বিরক্ত। নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে “আমি কি বাঘ না ভালুক যে ভয় পেতে হবে ইডিয়েট একটা”।
মেজাজ দেখিয়ে ঝারি দিয়ে বলে,
-” সে তুমি যাকেই মারো নিশানা তো আমার দিকেই তেড়ে আসে, স্টুপিড “
বলেই চলে যায়। এদিকে মেঘ ভাবে হয়তো কালকের ব্যবহার আর এখন এর এই কাজে উনি একটু বেশি রেগে আছেন তার উপর। তাই সে উঠে রুদ্রের পেছন পেছন যায়।
-“ভা..ভাইয়া শুনছেন “
রুদ্র পেছন ফিরে দেখে মেঘ। তাকে দেখেই ব্রু উচু করে, যার অর্থ কি দরকার। মেঘ বলে,
-“আসলে কালকের জন্য ধন্যবাদ আর আজকের জন্য স্যরি। “
-“ওহ “
রুদ্রের ওহ শোনে মেঘের মুখটা চুপসে যায়। এতো সুন্দর করে ধন্যবাদ বললো আর ইনি কিনা… নিরামিষ একটা। রুদ্রের আড়ালেই তাকে একটা ভেংচি কেটে চলে আসে। এদিকে রুদ্র হেসে ফেলে, কারন সামনের জানালার গ্লাসে মেঘের ভেংচি মারা স্পষ্ট দেখা গেছে।
-“মেয়েটাকে এভাবেই ভালো লাগে। এমন ভীতু একদম মানায় না “
চলবে……….
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১১.১
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬০
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫২
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬৫
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৬
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১২
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৫২
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২