Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৭


#আড়ালে_তুমি |০৭|

#_সাইদা_মুন

পিহু বাড়িতে এসেই কারো সাথে কোনো কথা না বলেই ভাইয়ের রুমের দিকে অগ্রসর হয়। সে ভিষণ রেগে আছে দেখেই মনে হচ্ছে। বাড়ির সবাই জিগ্যেস করেছে কি হয়েছে, তবে সে কাউকে কিছুই বলেনি। 

পিহু ভাইয়ের রুমে এসেই ধুম শব্দ করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে, হঠাৎ শব্দে রুদ্রের হালকা ঘুম ঘুম ভাব উরে গেলো। দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় বোনের রাগী মুখ। পিহুর আবার কি হলো চিন্তিত হয়ে উঠে আসলো বোনের কাছে, 

-” কি হয়েছে পিহু, এভাবে কেউ দরজা খুলে। “

পিহু সেসবে তোয়াক্কা না করেই রেগে বলে,

-“ভার্সিটি কি একা তোমাদেরই যা মনে চায় তা করবে জুনিয়রদের সাথে। “

বোনের কথা শোনে রুদ্র ভেবে নেয় পিহুকে কেউ কিছু বলেছে বুঝি, 

-” তোকে কে কি করেছে জাস্ট নাম টা বল, বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি। “

-” আমাকে না। তোমার প্রানপ্রিয় বান্ধুবি অনু না ফনুর বাচ্চা, আমার বান্ধুবিকে থাপ্পড় মেরেছে। এতো সাহস কে দিয়েছে তাকে? “

পিহুর কথা শোনতেই রুদ্রের ব্রু কুচকে আসে, 

-” ঘটনা কি সেটা বল হুদাই থাপ্পড় মারবে কেনো আর তর কোন বান্ধুবি ? “

পিহু ভাইয়ের দিকে চোখ কটমট করে তাকায় , 

-” মেঘকে থাপ্পড় মেরেছে ওই মেয়ে। সাথে থার্ড ক্লাস যা নয় তা বলেছে তাকে। “

মেঘকে থাপ্পড় মেরেছে শোনে রুদ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে।

-” কখন মেরেছে ? “

-” ক্লাস শেষ করে তোমাকে খুজতে গেছিলাম ক্যান্টিনে, তোমাকে না পেয়ে ওই ডাইনি কে দেখে মেঘ জিগ্যেস করে তোমার কথা। কিন্তু শা*লি অনুর বাচ্চা কিছু না বলেই ঠাস করে চড় মেরে বসে ভরা ক্যান্টিনে, সবাই কি করে তাকিয়ে ছিলো মেঘের দিকে,মজা নিচ্ছিলো। আর ওই মেয়ে বলছিলো মেঘের জন্য নাকি তার ফ্রেন্ডশিপ এ ঝামেলা হয়েছে ব্লা ব্লা। “

রুদ্র শান্ত কন্ঠেই বলে , 

-” তোর বান্ধুবিকে মেরে চলে গেলো আর সে তাকাই তাকাই দেখছিলো পাল্টা চড় বসাতে পারেনি?”

-” এই মেয়ে একটু বেশিই ভীতু চড় খেয়েও কিছু বলেনি ঝামেলা হবে দেখে।  উল্টো আমরা প্রতিবাদ করায় আমাদের টেনে নিয়ে এসেছে। বলে আমার জন্য তোরা ঝামেলায় পড়িস না। তবে তুমি যদি এর একটা বিচার না করো তবে তোমার খবর আছে। “

রুদ্র বিছানায় শোয়ে বলে, 

-” ওমা তদের তদের মেয়েদের ঝামেলা আমি কি করবো মাঝে,তরা মেয়েরা তো ঝগড়ায় পারদর্শী তোরাই ঝগড়া কর, যা তো যা ঘুমাবো। “

পিহু ভাইয়ের এমন কথা শোনে রেগে যায়। ভাইয়ের উপর বালিশ ছুড়ে, 

-” তুমি কি করবে মানে, তোমার ভন্ড বান্ধুবি দেখে ছেড়ে দিয়েছি নয়তো ওর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হাতটা ভাংতে সময় লাগতোনা আমার। এমনি এমনি ক্যারাটে শিখিনি। “

পিহু কথাটা বলে চলে যায়। রুদ্র হেসে ফেলে। পরমুহূর্তেই মুখটা লাল হয়ে উঠে। অনুর এমন করার কারন কি এই মেয়েটার সাথে সে ভেবে পাচ্ছে না। 

এদিকে পিহু ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই তার বাবা এরশাদুল চৌধুরীর ডাকে তার কাছে যায়, 

-” আমার আম্মুটা বুঝি আজ ভার্সিটি থেকে ফিরে অনেক রেগে ছিলো?  কেউ কিছু বলেছে?  আমাকে বলো একদম জবান কেটে ফেলবো, কার এতো সাহস। 

পিহু বাবার কোলে মাথা রেখে সোফায় শোয়ে পড়ে, 

-” উহু আব্বু আমাকে কেউ কিছু বলবে সেই সাহস আছে বুঝি কারো, আর বললে বুঝি আমি ছেড়ে দিবো। আমিও এরশাদুল চৌধুরী অরুপে মন্ত্রী মশাই এর একমাত্র আদরের মেয়ে, কেউ কিছু বললে মুখ ভেঙে দিয়ে আসবো হুহ। 

তখনি এনামুল চৌধুরী নিচে নামতে নামতে বলেন,

-” কি ভাইজান, তুমি কি আমার ছোট পরিটাকে এতো ভীতু মনে করো নাকি। সে নিজেকেই নিজে প্রটেক্ট করতে পারে। 

এরশাদুল চৌধুরী মুচঁকি হাসে। পিহু তার ছোট বাবার কথা শুনতেই উঠে তার কাছে চলে যায়। মেয়েটা বড় আদরের। চৌধুরী পরিবারের  ছোট মেয়ে,  সবার জান সে। 

এরশাদুল চৌধুরী,  বর্তমানের দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর তার ছোট ভাই এনামুল চৌধুরী তিনি পারিবারিক ব্যাবসা সামলাচ্ছেন। তাদের বাবা আলি চৌধুরী যিনি গত হয়েছেন ৮ বছর হয়েছে, আর মা আফসানা চৌধুরী যিনি এখনো বেচেঁ আছেন। এরশাদুল চৌধুরীর স্ত্রী সিদ্দিকা ও তাদের দুই ছেলে মেয়ে, রুদ্র চৌধুরী ও পিহু চৌধুরী। আর এনামুল চৌধুরী ও তাহেরা চৌধুরীর ৩ ছেলে মেয়ে,  বড় ছেলে সাদ, রুদ্রের থেকে ১ বছরের ছোট, মেঝো মেয়ে সামিয়া, এবার অনার্স ২য় বর্ষে, আর ছোট ছেলে তাহমিদ এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার এ। এই হলো চৌধুরি পরিবার। 

——————-

আজ শুক্রবার হওয়ায় মেঘ বাড়িতেই সকাল থেকে তেমন কোনো কাজ নেই তার। কারণ আজ বড় আব্বু বাসায় থাকায় কেউ মেঘকে কিছুই বলছে না। নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার সবার সাথেই খেয়ে নেয়। 

বিকালের দিকে মেঘ ফেইসবুকে গল্প পড়ছিল, তার উপন্যাসের প্রতি একটা অন্যরকম নেশা কাজ করে সেই দশম শ্রেনি থেকে টিফিনের টাকা জমিয়ে জমিয়ে বই কিনে পড়তো সে। তবে এখন স্মার্ট ফোন থাকায় ফেইসবুকেই সে অহরহ পড়তে পারে। 

হঠাৎ ফোনে কল আসায় একটু বিরক্ত হয় মেঘ। তবে পরক্ষণেই মনটা ভালো হয়ে যায়। পিহুরা ভিডিও কল করেছে মূলত মেসেঞ্জারে গ্রুপ কল। সে জয়েন হতেই পিহু জিগ্যেস করে, 

-” কি করিস মেঘ?”

-“এইতো গল্প পড়ছিলাম “

-” তুই কি সারাক্ষনই গল্প পড়তে থাকিস নাকি “

-” আরে না সময় পেলে একটু আকটু পড়ি ভালো লাগে”

সুমনা কথার মাঝে আফসোসের সুরে বলে,

-” এখন কি আর গল্প গল্পের মতো আছে কিছু পাবলিক গল্পের নামে অশ্লীলতা লিখছে, আমি আগে পড়তাম তবে এখন আর ভালো লাগেনা “

-” উহু এখনো অনেক লেখক লেখিকা আছে যারা রুচিশীল গল্প লিখছে হয়তো তেমন ভাইরাল হচ্ছেনা তাই চোখে পড়ছে না। তবে খোঁজ করলেই পেয়ে যাবি।”

-” আচ্ছা সেসব কথা পরে হবে,আগে শোন যে কারনে কল করেছি একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা “

পিহুর কথা শোনে মেঘ সুমনা ব্রু কুচকে যায় এই মেয়ের আবার কি ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে। পিহু ওদের প্রশ্নবোধক চাহনি দেখে নিজেই বলতে শুরু করে,

-” সামনের সপ্তাহে আমার জন্মদিন তোরা কিন্তু চলে আসবি। “

সুমনা এক্সাইটেড হয়ে যায়। 

-” তা কি বলতে হয় আমি তো সবার আগে যাবো “

পিহু মেঘের দিকে তাকায় তার উত্তরের আশায় তবে সে কিছুই বলছে না। 

-” কিন্তু মেঘ যে কিছু বলছে না। মেঘ আসবি না তুই? 

মেঘ হালকা হাসে। তার এসবে যাওয়ার কপাল নেই, স্কুলে থাকতে একবার এক বান্ধুবির জন্মদিনে যেতে চেয়েছিল বলে মা তার গায়ে হাত ও তুলেছিল। কারো বাসায় ও যেতে দিতো না, অবশ্য সারাক্ষণ বাড়িতে না থাকলে এটা ওটা অর্ডার কাকে দিবে তারা। মলিন হেসে বলে, 

-” না রে আমাকে যেতে দিবে না “

পিহুর মনটা খারাপ হয়ে যায়। সে চেয়েছিল মেঘ আর সুমনা কে তাদের বাড়ির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। 

-“কেনো আমি তোর পরিবারের সাথে কথা বলবো তাদের রাজি করাবো “

-” রাজি হবেনা রে হুদাই, আমি চিনি ওদের “

-” ধুর তর বড় আব্বুকে কল দিয়ে বলবো তাহলেই হয়ে যাবে উনি রাজি হলে বাকিরা কে কি বলবে “

সুমনার কথায় পিহুও সম্মতি দেয় । মেঘ আর কিছু বলেনা, যদি বড় আব্বু রাজি থাকে তাহলে তারও যেতে আপত্তি নেই।

———

পরেরদিন ভার্সিটিতে আসতেই, ভরা মাঠের মধ্যে একটি ছেলে ধুম করে এসে মেঘেদের সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে……. 

চলবে…..

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply