Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬৫


#আড়ালে_তুমি |৬৫| (অন্তিম পর্ব)

#_সাইদা_মুন

সাফা প্রবেশ করে, তার সাথে হুইলচেয়ারে একজনকে দেখতেই উপস্থিত সবাই চমকে ওঠে। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে, চোখের পলক ফেলতেও ভুলে যায় তারা। এ যেন এক স্বপ্ন, চোখের পলক ফেললেই ভেঙে যাবে। তখনই রাহুলের মায়ের চিৎকারে সবার ধ্যান ভাঙে,

-“রাহুললল বাবা আমার, আমার বাবা…”

বলতে বলতে উনি দৌড়ে যান ছেলের কাছে। রাহুলের চোখ দিয়েও পানি পড়ছে তবে নড়াচড়া করতে পারছে না। খালি চোখ দিয়ে ইশারা করছে কিছু। রাহুলের মা ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে সে কী কান্না। তার বাবাও ছুটে যায়। সাফাও কাদছে মা ছেলের কান্নায়। উপস্থিত সবার চোখে পানি, সাথে বিস্ময়ও। রুদ্র এগিয়ে এসে রাহুলের মাকে সামলাতে বলে,

-“মামণি শান্ত হও। এত উত্তেজিত হলে রাহুলও উত্তেজিত হচ্ছে। এতে তার সমস্যা হবে, প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো..”

তবে মায়ের মন কি আর মানে। এতোদিন পর ছেলেকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে থাকেন,

-“আমার বুকের ধন, আমার বাচ্চা, আমার বাবাটা ফিরে এসেছে। আমি জানতাম কিচ্ছু হয়নি আমার বাবার। কোথায় ছিলে বাবা আম্মুকে ফেলে রেখে? জানো, আম্মু কত কষ্ট পেয়েছি তোমাকে না পেয়ে।”

রাহুলের বাবা ছেলের অবস্থা দেখে স্ত্রীকে টেনে তুলে ধরেন। আশেপাশের সবাই প্রশ্নাত্মক চোখে তাকিয়ে। মেঘরা, ফারহানরা সবাই প্রশ্ন নিয়ে চেয়ে আছে রুদ্রের দিকে। সেদিন রাহুল মারা গেলে এখন বেঁচে আছে কীভাবে সম্ভব?

তাদের অবস্থা দেখে রুদ্র বলে ওঠে,

-“সেদিন যখন রাহুলের লাশ নিতে কেবিনে ছিলাম, সেদিন আমিও ভেবেছিলাম রাহুল মারা গেছে। ডাক্তাররাও তাই ভেবেছিল। কিন্তু সেদিন সাফা ছাড়ছিলই না, রাহুলকে নিয়ে যেতে দিচ্ছিল না। পাগলামি করছিলো। ডাক্তার-নার্স মিলে যখন তাকে উঠাতে লাগল তখন ঝাপটে ধরে রাহুলের বুকে পড়ে থাকে। আর ঠিক তখনই সে হার্টবিট শুনতে পায়, অকেক্কজনে একবার। সাথে সাথে ডাক্তারকে বললে ডাক্তাররা আবার চেকআপ করে। তখন গিয়ে জানতে পারি রাহুল বেচেঁ আছে। কিন্তু মাথায় অতিরিক্ত আঘাত ও রক্তক্ষরণের জন্য সে কোমায় চলে গিয়েছিল। আই’ম সরি মামণি, আমি তখন আর কাউকেই বলিনি এ ব্যাপারে। রাহুলকে মৃত রেখেছিলাম সবার সামনে। কারণ শত্রু আমাদের মধ্যেই ছিল। জানতাম না কে সে।  যদি রাহুলের এই অবস্থায় তার ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তাকে আর বাচাঁনো যেতো না। সেই ভয়ে কাউকে বলিনি।”

রাহুলের মা কেঁদে উঠে বলে,

-“আমাকে তো একবার বলতি বাবা। ছেলে হারানোর যন্ত্রণা যে কতটা কষ্টের ছিল…”

রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

-“ডাক্তার বলেছিল তোমাকে না বলতে। দুই বার স্ট্রোকের রোগী তুমি, আরেকবার স্ট্রোক করলে… তবে তোমার ছেলে এখন ভালো আছে। এই যে দেখছো বসতে পারছে। টানা এই কয়েক মাস সাফার যত্নে সে এতদূর আসতে পেরেছে। নয়তো এমন রোগী বছর খানেক আগে হাতও নাড়ায় না। এই মেয়েটি দিনরাত তার পিছে যেভাবে পড়ে ছিল। আজকালকার বউ হয়েও স্বামীর পা ভাঙা দেখলেই ফেলে চলে যায়, সেখানে সে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে রাহুলকে সুস্থ করে তুলছে। তোমরা ছেলের বউ হিসেবে হীরের টুকরো পেয়েছো মামনি। এখন একদম চিন্তা করোনা, তোমাদের ছেলে তো বেঁচে আছে এটাই অনেক, তাই না? ডাক্তার বলেছে লক্ষণ ভালো, খুব দ্রুত ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তুমি শুধু চিন্তা করোনা মামণি। তোমার কিছু হলে তোমার ছেলেও কিন্তু আর ঠিক হবে না।”

রাহুলের মা রুদ্রের গাল ও কপালে পরম স্নেহে চুমু এঁকে দেন,

-“না না, আমার কিছু হবে না। আমি শক্ত হবো। আমার ছেলের জন্য তোরা এত কিছু করতে পারলে আমি মা হয়ে এতটুকু করতে পারব না? পারবো পারবো।”

তিনি বারবার রুদ্রের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন তো ছেলেকে আদর করছেন। মেঘ অবাক হয়ে সাফার দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েকে প্রথমে সে কতোই না খারাপ ভাবতো যখন রুদ্রের সাথে অমন নাটক করেছিলো। তবে এখন যেনো তার প্রতি সম্মান বেড়ে গেছে। উপস্থিত সবাই সাফার সুনামে পঞ্চমুখ। এর মধ্যেই সব বন্ধুরাও ছুটে যায় রাহুলের কাছে। একেকজনের চোখে পানি, তবে মুখে হাসি। বন্ধু ফিরে পাওয়ার আনন্দ সবাইকে যেন আরও উল্লাসিত করে তোলে। সবাই সেখানেই রাহুলের সাথে কথার ঝুড়ি খুলে বসে। রাহুলও তাকিয়ে তাকিয়ে তাদের সবকিছু শোনে। বিশেষ করে যখন ফারহান আর রুদ্র একত্রে রাহুলের সামনে যায়, তখন সে বারবার হালকা হালকা আঙুল নাড়িয়ে কিছু একটা বোঝাচ্ছিল। হয়তো সে অনেক খুশি হয়েছে, সেটাই বলেছে। রুদ্ররা সব ফ্রেন্ডরা স্টেজে উঠেছে ছবি তুলতে রাহুলকে তাদের মাঝে রেখে তার চারিদিকে সবাই বসে পড়ে। ফারহান তার মোবাইলটা পিহুর কাছে দেয় ছবি তুলে দিতে। পিহু বেশ অনেক্ষন তাদের সবার গ্রুপ পিক তুলে দেয়। ওদিকে ওদের বন্ধুদের টুকটাক আড্ডা মাতামাতি হচ্ছে। 

পিহু একসাইডে এসে বসে। সুযোগে সৎ ব্যাবহার করতে বসে আরকি। ফারহানের সবকিছু চেক দিতে লাগে সে। তার মাথায় খালি একটাই চিন্তা ওই আইডিটা একবার দেখতে মেসেজগুলো একবার পড়তে। কি এমন মেসেজ দিয়েছিলো মেয়েটি যা দেখে ফারহান তার মায়ায়ই পড়ে গিয়েছিলো। পিহু ইনবক্সে ঢুকে দেখে মেসেজের অভাব নেই। বেশিরভাগই মেয়েরা মেসেজ দিয়ে রেখেছে যদিও রিপ্লায় দেয়নি। তবে সে কয়েকটাকে বাংলা ওয়াজ শুনিয়ে ব্লক ও মেরে দিয়েছে। বেশ ধৈর্য ধরে একদম নিচের দিকে আসে  এখানে এগুলো অনেক পুরোনো পুরোনো মেসেজ। হঠাৎ তার চোখ আটকায় একটা আইডিতে,

-“আরে এইটা আমার ওই ফেইক আইডিটা না.. “

ভাবতে ভাবতেই কনভার্সেশনে ঢুকতেই শক খেয়ে যায়। ফারহানের মেসেজের উপর মেসেজ। যদিও অনেক আগেই মেসেজ দিয়েছিল রিসেন্ট কোনো মেসেজ দেয়নি। তবুও একেকটা মেসেজ পড়ে সে তব্দা খেয়ে বসে থাকে। তার মানে ফারহান আমার অপেক্ষায়। মানে ঘটনাটা এমন হলো আমার ক্রাশ ও আমার উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে। অথচ আমিই জানিনা। নিজেকে ইচ্ছে মতো গালি দেয় পিহু “আইডিটা যদি অফ না করতাম তাহলে আমার ভূইয়া সাহেবকে আরও আগেই পেয়ে যেতাম”। আফসোস নিয়ে স্টেজের ফারহানের দিকে তাকায় একবার তো একবার মোবাইলের দিকে। ফারহান রাহুলদের সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ পিহুর দিকে নজর যেতেই দেখে সে আপসেট হয়ে বসে আছে। চিন্তিত হয়ে এগিয়ে আসে তার দিকে,

-“কি হয়েছে পিহু? শরীর খারাপ লাগছে তোমার.?”

পিহু ফারহানের কথায় তার মোবাইলের দিকে ইশারা করে। ফারহান মোবাইলের স্ক্রিনে তাকাতেই সাথে সাথে তা কেড়ে নেয়।

-“এসব বের করেছো কেনো। ডিলেট দিতে মনে ছিলোনা..”

পিহু অসহায় কন্ঠে বলে,

-“এইটাই ওই মেয়ে যাকে আপনি ভালোবাসতেন..?”

ফারহান পিহুর হাত ধরে বলে,

-“ওইটা ভালোবাসা না ওইটা ছিলো ভালোলাগা। আমি একবারো বলিনাই আমার ভালোবাসা ছিলো। ভালোবাসা আর ভালোলাগার মধ্যে অনেক তফাৎ।”

পিহু ব্রু কুচকে বলে, 

-“ঘুরে ফিরে তো একই হলো..”

-“উহু মুটেও এক না। ভালোলাগা হলো কারো প্রতি টান অনুভূব হওয়া। যা কারো স্বভাব বা অভ্যাস থেকে হয়। তবে তা সাময়িকের জন্য। আর ভালোবাসা হলো গভীর, দীর্ঘস্থায়ী। ভালোবাসা শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্য বা গুণ দেখে নয়, পুরো মানুষটাকে মেনে নেওয়া। এখানে স্বার্থের চেয়ে প্রাধান্য পায় যত্ন, মান-অভিমান, বোঝাপড়া, পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি। ভালোবাসা সহজে মুছে যায় না,দূরে থেকেও টিকে থাকে।”

একটু থেমে বলে,

-“এক কথায়, ভালোলাগা হলো ফুলের সৌরভে মুহূর্তের মুগ্ধতা। আর ভালোবাসা হলো পুরো গাছকে আগলে রাখা, ঝড়-বৃষ্টি-রোদ যাই হোক না কেন।”

পিহু মুগ্ধ হয়ে শোনে ফারহানের বিশ্লেষণ। পিহু নরম সুরে বলে, 

-“একটা সিক্রেট বলি..?”

ফারহান ব্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে, 

-“কি…?”

-“যদি বলি ওইটা মেয়ে ছিলো… “

-“তোহ…?”

-“তোহ কি আমাকে ছেড়ে দিবেন?”

-“তুমি কি আমাকে বাজিয়ে দেখছো? তোমার কি এই ফারহানের পার্সনালিটি এতো লো মনে হয়? আমি তোমাকে ভালোবাসি মানে তোমাকেই ভালবাসি। এখন আমার সব কিছু জুড়ে শুধুই পিহু। ফালতু চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলো। বাচ্চাদের নাম কি কি রাখবা তা চিন্তা করো।”

ফারহানের কথায় পিহু হেসে উঠে মনে মনে বলে,

-“থাক কিছু জিনিস আপনার অজানা ভূইয়া সাহেব…”

অনেক আনন্দ, ভালোবাসা, হাসি-ঠাট্টার মাঝে বিয়েটা শেষ হয়। রাহুলকে তার বাড়িতে শিফট করা হয় মেডিকেল থেকে। বাকিরাও বর-কনে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। মেহমানরা কিছু চলে গেছে, আর কিছু থেকে গেছে।

———

রাত ১০টা,

 এখন চলে এসেছে সেই সময়, যার অধীর আশায় বসে ছিল রুদ্র। তার বউকে একটু একান্ত করে পাওয়ার সময়। সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সে রুমে ঢুকে পড়ে। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ড্রিম লাইটের আলোয় এক লালপরি বসে আছে তার ফুলে সাজানো খাটের ঠিক মাঝখানে। রুদ্র ঘরে প্রবেশ করতেই দরজা লাগিয়ে দেয়। এদিকে দরজা লাগানোর শব্দে মেঘ হালকা কেঁপে ওঠে। রুদ্র একটু একটু করে এগিয়ে আসে মেঘের সামনে। আলতো হাতে মেঘের দুপাট্টা তুলে ধরে তার মুখখানার দিকে তাকায়। সারাদিনের সব ক্লান্তি যেন এখানেই এসে শেষ। মেঘও চোখ তুলে রুদ্রের দিকে তাকায়। দুজনের চোখাচোখি হতেই হালকা হেসে ওঠে। এ কোনো সাধারণ হাসি নয় এ হলো প্রাপ্তির হাসি। মেঘ বিছানা থেকে নেমে রুদ্রকে পায়ে ধরে সালাম করতে গেলেই রুদ্র তার হাত ধরে আটকে দেয়। তাকে বুকে নিয়ে বলে,

-“তোমার জায়গা শুধুই আমার বুকে। এখানেই থাকবে সারাজীবন আমার হয়ে। মিসেস রুদ্র চৌধুরী হয়ে থাকবে তো আজীবন?”

মেঘ মাথা তুলে রুদ্রের চোখে চোখ রেখে বলে,

-“মিসেস রুদ্র চৌধুরী আপনাকে কথা দিচ্ছে, শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত মেঘ শুধু আপনারই থাকবে।”

মেঘের কপালে গভীরভাবে ঠোঁট ছোঁয়ায় রুদ্র। মেঘও আবেশে চোখ বুজে নেয়।

-“চেঞ্জ করে নাও, নামাজ দিয়েই শুরু করবো আমাদের জীবনের আরেক নতুন অধ্যায়।”

তারপর রুদ্র মেঘকে একে একে গয়না খুলতে সাহায্য করে। মেঘ লেহেঙ্গা পালটে নরমাল শাড়ি পরে নেয়। দুজনেই ফ্রেশ হয়ে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নেয়। নামাজ শেষ করে দুজনে বারান্দায় আসে। আজকের চাঁদটা স্পষ্ট, আকাশে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। রুদ্র মেঘকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,

-“শ্বশুর আব্বু, আপনার মেয়ে তো আমার নামে অনেক অভিযোগই দিয়েছে আপনার কাছে। এখন দেখুন, আপনার মেয়ের সব অভিযোগ ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আপনার মেয়েকে আবারো নিজের করে নিলাম।”

মেঘ অবাক হয়ে রুদ্রের দিকে তাকায়। সে যে তার বাবার কাছে বারান্দায় এসে অভিযোগ করতো, তা কি রুদ্র শোনেছে। হকচকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-“আপনি কি সব শোনেছেন?”

রুদ্র হালকা হেসে বলে,

-“একটু শোনে নিয়েছিলাম…”

-“আপনি তো অনেক খারাপ লোক, আমার সিক্রেট কনভারসেশন শোনে ফেলেন।”

-“খারাপ হলেও তোমারই তো…”

রুদ্রের কথায় দুজনেই হেসে ওঠে। মেঘ রুদ্রের কাঁধে মাথা রেখে বলে,

-“আচ্ছা, সুখ বলতে কি জানেন?”

-“মন আর জীবনে প্রশান্তি, তৃপ্তি, আনন্দের অনুভূতিকে সুখ বলা হয়।”

-“তবে আমি তো এগুলো জানি না, আমি সুখ বলতে শুধু আপনাকেই জানি।”

রুদ্র ফট করে মেঘের দিকে তাকায়। মুহূর্তেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে,

-“আমিও সুখ বলতে আমার এই বোকাফুলকেই জানি…”

মেঘ চমকে তাকায়,

-“কি বললেন?”

রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,

-“কি..?”

-“বোকাফুল বললেন না মাত্র?”

-“হুম…”

মেঘ চিন্তিত হয়ে বলে,

-“আপনি এই নাম জানলেন কিভাবে? এই নামে আমাকে একবার ওই লোকটি ডেকেছিলো…”

রুদ্র মিটিমিটি হেসে বলে,

-“যদি বলি ওই লোকটি তোমাকে এখনো বোকাফুল বলে ডেকেছে…”

মেঘ রুদ্রের ঘুরিয়েপেচিয়ে বলা কথা বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে তাকায়। রুদ্র মেঘের ভাবভঙ্গি দেখে তার গাল টিপে বলে,

-“এই ছোট ব্রেনে এতো প্রেশার দিও না বউ…”

মেঘ বসে আছে বিছানায়, রুদ্র ড্রয়ার খুলে কিছু একটা বের করে আনে। মেঘ তার হাতের দিকে তাকাতেই দেখে জুয়েলারি বক্স। রুদ্র বক্সটা খুলে একটা সোনার চেইন বের করে যাতে একটা লকেট আছে মেঘের নামের। রুদ্র যত্নসহকারে তা পড়িয়ে দেয় মেঘের গলায়। তারপর গভীরভাবে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয় সেখানে। অতঃপর মেঘের কানের কাছে মুখটা নিয়ে বলে,

-“শুরু করতে পারি?”

রুদ্রের কথার অর্থ বুঝতেই সাথে সাথে মেঘ লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। তাকে চুপ থাকতে দেখে রুদ্র ফের বলে,

-“নাকি এখনো পারমিশন পাবো না?”

মেঘ কোনো উত্তরই দেয় না। তাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে নীরবতাকেই সম্মতির লক্ষণ ভেবে রুদ্র এগিয়ে যায়। শাড়ির ভাজে হাত ঢুকিয়ে ধনুকের মতো কোমর আকড়ে ধরে এক টানে কাছে নিয়ে আসে। সাথে সাথে অধরজোড়া আকড়ে ধরে, যেন বহু বছরের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। ডুবে যায় একে অপরের অধরের মাঝে। বেশ কিছু মুহূর্ত যেতেই রুদ্র ছেড়ে দেয়। মুখ গুঁজে দেয় মেঘের গলায়। মেঘ রুদ্রের শার্ট চেপে ধরে আছে। রুদ্রের ছোঁয়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, অপ্রত্যাশিত বিভিন্ন জায়গায় ছুঁয়ে দিচ্ছে। মেঘের পুরো শরীরে রুদ্রের হাত বিচরণ করছে। মেঘ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শক্ত হাতে তার চুল টেনে ধরে।

এক পর্যায়ে রুদ্র মেঘের আচঁলে হাত দিতেই মেঘ ধপ করে হাত আটকে দেয়। রুদ্র তাকায় মেঘের দিকে। মেঘ ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে। রুদ্র একটা ঢোক গিলে, জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে হাস্কি স্বরে প্রশ্ন ছোঁড়ে,

-“আবার কি সমস্যা বউ…?”

মেঘ লজ্জায় এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে ফট করে বলে ওঠে,

-“ব..বাথরুম পেয়েছে…”

আসলে তার লজ্জা লাগছে তবে কি বলবে না বলবে ভেবে না পেয়ে এইটাই বলে বসেছে। মেঘের কথা কানে আসতেই রুদ্র অবাক হয়ে হালকা চেচিয়ে ওঠে,

-“হোয়াট…?”

মেঘ থতমত খেয়ে বসে আছে। রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

-“আর ইউ সিরিয়াস..?”

মেঘ কিছুই বলে না, মাথা নিচু করে এবার রুদ্রের আরও গা ঘেঁষে বসে। রুদ্র বুঝে যায় মেঘের নীরব উত্তর। মুহূর্তেই এক টানে তার বাহু থেকে সরে যায় শাড়ির আঁচল। অতঃপর দু’জন তলিয়ে যায় ভালোবাসার গভীরে। একে অপরের মাঝে হারিয়ে গিয়ে ভেঙে যায় তাদের মধ্যকার সব দেয়াল।

সেই রাত হয়ে ওঠে চিরস্মরণীয়, ভালোবাসার স্বীকৃতি আর আত্মার মিলনের এক অমলিন মুহূর্ত।

                             [এখানেই সমাপ্ত ]

[প্রিয় পাঠকগন, এখানেই আমি আমার গল্পের সমাপ্তি টানলাম। আপনাদের কারও কারও মনের প্রবল ইচ্ছে  পিহু-ফারহান, রিক-মিষ্টি, সামিয়া-রাফান, সাদ-সুমনা এদের পরের জীবন কী হলো তা দেখার। তাদের সংসার, তাদের হাসি,কান্না, ঝগড়া, আদর কেমন হলো? সেই উত্তরটা আমি আপনাদেরর হাতেই ছেড়ে দিলাম। আমি জানি, আপনারা সবাই কল্পনায় তাদের সুন্দর সংসার সাজিয়ে নিতে পারবেন। হয়তো, পিহু আর ফারহান চিরকাল খুনসুটি করে মিষ্টি হাসিতে ভরিয়ে রাখবে সংসার। রিক আর মিষ্টি থাকবে একে অপরের ছায়ার মতো, হাসি–কান্না সবকিছু ভাগাভাগি করে। সাদ আর সুমনা ঝগড়াটাকেই ভালোবাসার ভাষা বানিয়ে আজীবন মিষ্টি টোকাটুকিতে বাঁচবে। রাফান আর সামিয়া হবে সবচেয়ে শান্ত আর ম্যাচিউর দম্পতি, যাদের সংসার হবে একেবারে বন্ধুত্বের মতো মজবুত। কিন্তু এই দৃশ্যগুলো আমি লিখে শেষ করতে চাইনি। কারণ, কখনও কখনও অসম্পূর্ণ রেখেই সৌন্দর্য পূর্ণ হয়।]

[আমি চাইলেই আরও অনেক বড় করতে পারতাম। বারবার বিয়ে, সংসার, দাম্পত্য জীবন দিয়ে প্রত্যেকের কাহিনিই লেখতে পারতাম। আপনাদের অনেকের চাওয়া ও সবার বিয়ে সংসার লিখে শেষ করতে। তবে এগুলো যদি রিপিট হতে থাকে, তাহলে আপনাদের কাছেই একসময় একঘেয়েমি চলে আসবে। আমার গল্পের সৌন্দর্যটা হয়তো নষ্ট হয়ে যেতো। আমার গল্পে বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, পারিবারিক সম্পর্ক আরও যা যা দেখানোর ছিলো সব আমার মতে আমি তুলে ধরেছি। তাই এখানেই ইতি টানলাম।আমার গল্পের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি, এই যাত্রায় আপনারা হাসি, কান্না, ভালোবাসা,সবকিছুই পেয়েছেন। ]

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply