#আড়ালে_তুমি |৬৪|
#_সাইদা_মুন
কপি করা নিষিদ্ধ
দেখতে দেখতে কেটে যায় আরও ২ মাস। চৌধুরী বাড়িতে বিয়ের তোড়জোড় লেগেছে। বাড়ি নতুন রূপে সেজে উঠেছে। বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা। ১ মাস আগেই সব আত্মীয়স্বজনসহ পুরো এলাকা দাওয়াত দিয়ে রেখেছে এরশাদুল চৌধুরী আর এনামুল চৌধুরী। ওরা তো ভীষণ এক্সাইটেড ছেলের বিয়ে নিয়ে। শুধু ওরাই না, পুরো চৌধুরী পরিবারই এক্সাইটেড।
আর ১ সপ্তাহ বাকি বিয়ের, মার্কেটিং পুরো দমে চলছে। বাড়ির সব পুরুষেরা বসে আছে ড্রয়িং রুমে। এরশাদুল চৌধুরী চা খেতে খেতে সাদ আর তাহমিদের উদ্দেশ্যে বলেন,
-“এখন কিন্তু তোদের অনেক দায়িত্ব নিতে হবে। আর বড় ভাইয়ের আশায় থাকলে চলবে না।”
দুজনেই হালকা হেসে বলে,
-“অবশ্যই আমরা সব দায়িত্ব পালন করবো, আমাদের বড় ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা।”
পাশ থেকে রুদ্র উঠে বলে,
-“ওদের কেনো হুদাই এসবে টানছো আব্বু। আমি আছি তো সামলাতে। ওরা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে মজা করবে বিয়েতে, এসব বাড়তি ঝামেলায় জড়াতে হবেনা।”
রুদ্রের কথায় তাহমিদ-সাদ দুজনেই এসে দুদিক দিয়ে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে। এই ছেলেটা যে তাদের চাচাতো ভাই, কখনোই গোনাক্ষরেও বুঝতে দেয়নি। সেই ছোটবেলা থেকে নিজের আপন বড় ভাইয়ের মতো আগলে রেখেছে। তাহমিদ তো সাদকে রেখে যত আবদার ছিল, তার বাবার পর রুদ্রের কাছেই করেছে। তাহমিদ রুদ্রের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
-“ইউ আর মাই বেস্ট ভাইয়া।”
সাদও বলে উঠে,
-“ছোট থেকে অনেক বাঁচিয়েছো আমাদের সব কাজ থেকে। আমাদের কষ্ট হবে দেখে নিজেই সব একা হাতে আব্বুদের সাথে সামলাতে। তবে এখন আমরা বড় হয়েছি, আমরাও দায়িত্ব নিবো। তুমি শুধু আনন্দ উপভোগ করতে থাকো। বাকি সব আমরা বাপ-বেটারা মিলে ভাগাভাগি করে সামলে নিবো। এই সময়টা শুধু তোমার হোক, আমার বিয়ে তো আসছেই, তখন নাহয় তুমি দায়িত্ব নিয়ো।”
লাস্টের লাইনটুকু বলেই দাঁত বের করে হেসে উঠে। বাকিরাও হেসে উঠে সাদের কথায়। এরশাদুল আর এনামুল চৌধুরী দুজনেরই চোখাচোখি হতেই হাসে, একে অপরের কাঁধে হাত রাখেন। তাদের ভাইয়ের মধ্যে যেমন মিল সারাজীবন ছিল, তাদের ছেলেমেয়েদেরও এমন মিল দেখে যেন তারা এক অন্যরকম শান্তি অনুভব করেন। এই পরিবারটা এক সুতোয় বাঁধা আজীবন যেন এভাবেই থাকে।
এদিকে তাদের কথার মাঝেই বাড়ির মহিলারা রেডি হয়ে নেমে আসেন। আজকেও চৌধুরী বাড়ির মহিলারা মার্কেটে যাবে। আজকে মূলত বিয়ের মার্কেট করতে, এতোদিন বাকিসব অনুষ্ঠানের মার্কেটিং শেষ করেছে। তারপর একসাথে রওনা হয় সবাই।
সেই কখন থেকে সবাই মিলে ডিসাইড করতে পারছে না মেঘের জন্য বিয়েতে লেহেঙ্গা না শাড়ি কিনবে। একের পর এক শাড়ি-লেহেঙ্গা দেখেই যাচ্ছে। পুরো দোকান উলটপালট করে ফেলেছে। রুদ্র-সাদ বসে থাকতে থাকতে এখন ভীষণ বোরিং ফিল করছে। সাদ বিরক্ত হয়ে বলে,
-“এজন্যই এসব মেয়েলি ব্যাপারে আসতে চাইনি…”
রুদ্র উঠে এগিয়ে যায়, সবার উদ্দেশ্যে বলে,
-“যা ইচ্ছে কিনো, তবে বিয়ের দিন আমি একটা লালপরি দেখতে চাই…”
পাশ থেকে রুদ্রের দাদি উঠে বলে,
-“তো আয়, নিজের বউকে নিজে দেখেশোনে কিনে দে। তোর তো চয়েজ ভালো…”
-“তোমরা আপাতত দেখাও, আমি একটু আসছি…”
বলেই মোবাইলে কাউকে কল দিতে দিতে বেরিয়ে যায়। এরমধ্যেই সায়ান-সারাও চলে আসে। সুমনা-রিকও এসেছে। বিয়েতে সব মেয়েরা একই রকম পড়বে, ছেলেরাও একই রকম পড়বে। তাই একসাথে মার্কেট করতে এসেছে। মেঘ-পিহুরা সারাদের সাথে ভালোমন্দ কথা বলতে বলতে হঠাৎ নজর যায় কিছুটা দূরে। সাথে সাথে বিস্ময় নিয়ে একে অপরের দিকে একবার তাকায়, তো একবার সামনে তাকায়। সামনে রুদ্র-ফারহান একে অপরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হেসে হেসে আসছে। এ যেন পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যজনক ঘটনা তাদের জন্য।
রুদ্র এসেই মেঘের পাশে বসে পড়ে। তারপর দোকানদারকে একে একে লেহেঙ্গা বের করতে বলে। বউয়েরটা নিজেই পছন্দ করবে। তবে মেঘের মাথায় অন্য ভাবনা। মেঘ অবাক হয়ে রুদ্রকে জিজ্ঞেস করে,
-“ফারহান ভাইয়ের সাথে আপনি?”
রুদ্র মেঘের দিকে তাকাতেই তার এক্সপ্রেশন দেখে হেসে ফেলে,
-“ভুল বোঝাবুঝি ঠিক হয়ে গেছে।”
-“মানে আপনারা ফ্রেন্ড..?”
-“হুম…”
মেঘ আরও অবাক হয়ে বলে,
-“তাহলে পিহু চিনেনা কেনো?”
-“আমি বাসায় কোনো ফ্রেন্ড আনতাম নাকি। আমার কোনো ফ্রেন্ডকেই তো পিহু চিনতো না। ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে না তারপর চিনলো সায়ান-শান্তদের। এসব পরে কথা হবে। দেখো তো, এইটা কেমন…”
মেঘও আর এসব না ভেবে রুদ্রের সাথে লেহেঙ্গা দেখতে থাকে। পাশেই পিহু ছিল, এটা-ওটা দেখছিলো মনোযোগ দিয়ে। হঠাৎ কেউ তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ায় হকচকিয়ে তাকায় পাশে। দেখে ফারহান, সাথে সাথে মোচড়ামুচড়ি শুরু করে। হাত ছাড়াতে চেষ্টা করছে দেখে ফারহান দাঁত চেপে বলে,
-“একদম সিন ক্রিয়েট করবে না। মানুষ দেখছে…”
তাকে নিয়ে যেতে থাকে শপিং মলের ক্যাফে কর্নারে।
———
সামিয়া বেশ অনেকক্ষণ ধরেই রুদ্রদের দেখে যাচ্ছে। হাজার হোক তার প্রথম ভালোবাসা ছিল। নিজেকে বুঝিয়ে নিলেও বুকের এক কোনে হালকা হলেও ব্যথা হয়। হয়তো সে রুদ্রকে কোনোদিনই মন থেকে মুছে ফেলতে পারবে না। সামিয়াকে একা একা মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে রাফান এগিয়ে যায়।
-“কি ব্যাপার ম্যাম, মুড অফ কেনো?”
রাফানকে দেখে সামিয়া মুচকি হেসে বলে,
-“কই না তো, ঠিক আছি…”
হঠাৎ রাফান আমতা-আমতা করে বলে,
-“সামিয়া, কিছু কথা ছিল…”
সামিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকায় রাফানের দিকে। রাফান বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকে। আসলে সে আজকে এমন কিছু কথা বলবে, তা নিজের কাছেই ঠিক মনে হচ্ছে না। রাফানকে চুপ থাকতে দেখে সামিয়া প্রশ্ন করে,
-“কি কথা…”
এবার আর রাফান চুপ থাকেনা, বড় একটা শ্বাস ছেড়ে বলে,
-“দেখো, এভাবে লাইফ চলে না। আমি জানি তুমি আমাকে তোমার বন্ধু হিসেবেই ভেবেছ, আমিও বন্ধু হিসেবেই পাশে থেকেছি। তবে আমার মনে হয় আমাদের মুভ অন করা উচিত।”
রাফানের কথা মনোযোগসহ শোনে সামিয়া। তারপর বলে,
-“মুভ অন তো করেছিই…”
রাফান ইতস্তত করে বলে,
-“মানে, আমি অন্য কিছুর কথা বলছি…”
-“সেটা কি..?”
-“তুমি চাইলে আমার সাথে একটা দুষ্টু, মিষ্টি, সুন্দর সংসার সাজাতে পারো, আমার আপত্তি নেই।”
সামিয়া চমকে ফাঁকা চোখে রাফানের দিকে তাকায়। রাফান হুট করে এমন প্রস্তাব দিবে, সে ভাবতেও পারেনি। সামিয়াকে এভাবে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাফান ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“কি ম্যাম, কিছু তো বলুন..?”
সামিয়া মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ চুপ থাকে। এদিকে রাফান ভেতরে ভেতরে ভয়ে আছে, সামিয়া যদি তাকে ভুল বুঝে বসে। সামিয়া হঠাৎ মাথা তুলে মুচকি হেসে বলে,
-“মেয়ের নাম সাবা, আর ছেলের নাম সাফিন কিন্তু…”
সামিয়ার কথা বুঝে উঠতে রাফানের কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। তবে মুহূর্তেই বুঝে যায় সামিয়ার উত্তর। সাথে সাথে তার মুখেও হাসি ফুটে উঠে। সামিয়ার মুখের হাসিও আরও প্রখর হয়।
———
কফি শপে বসে আসে দুজনেই। পিহু ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
-“কি সমস্যা এখানে এনেছেন কেনো?”
ফারহান অসহায় কণ্ঠে বলে,
-“পিহু, সত্যি আর ভালো লাগছে না। আমি মানছি, আমি ভুল করেছি। তোমার সাথে রুড বিহেভ করেছি, তোমাকে ইগনোর করেছি, তবে সেটা তো একটা স্পেসিফিক কারণে করেছিলাম। তবে তুমি টানা ২ মাস ধরে এমন করছো কেনো? আমাকে আর কত ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে?”
পিহু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
-“আত্মসম্মানে লাগছে তাই না? আমারও লেগেছিলো, তবে ভালোবাসতাম বলে এসব সাইডে রেখে চেষ্টা করেছিলাম আপনাকে নিজের করে পেতে। তবে তখন আপনার কাছে কোনো মূল্যই পাইনি। এখন আমারও আর আপনার সঙ্গ লাগবে না।”
একটু থেমে, তাচ্ছিল্য করে বলে,
-“মানুষ থাকতে মূল্য দেয় না, হারিয়ে ফেললে আফসোস করে।”
পিহুর প্রত্যেকটি কথা ফারহানের বুকে এসে লাগে। সে অনুভব করতে পারছে পিহুর প্রত্যেকটা কথা বলার পেছনের কষ্ট। সে আর কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না। আসলেই তো সে অপরাধী, আর কোন মুখে সে এখন পিহুকে ফেরাতে যাবে? ফারহানকে চুপ দেখে পিহু উঠে দাঁড়ায়, যাওয়ার উদ্দেশ্যে কয়েক পা এগোয়। ফারহানও আর আটকায় না।
তখনই কোথা থেকে এক মেয়ে এসে ফারহানের সামনে দাঁড়িয়ে, ন্যাকা গলায় বলে,
-“হেই, ক্যান ইউ গিভ মি ইউর নাম্বার প্লিজ…”
ফারহান কপাল কুঁচকে মেয়েটির দিকে তাকায়। এদিকে পিহু কিছুদূর যেতেই মেয়েলি কণ্ঠ পেয়ে ফট করে ফিরে তাকায়। মেয়েটি ফারহানের কাছে তার নাম্বার চাইছে, শোনে তো তার মাথা বিগড়ে যায়। সাথে সাথে এগিয়ে যায় আবার তার দিকে। মেয়েটি যেন কথা বলতে বলতে ফারহানের গায়ে এসে পড়ে যাবে। পিহু আর নিজেকে সামলাতে পারে না, সোজা গিয়েই মেয়েটির চুল টেনে ধরে, পেছন থেকে,
-“দিস ইজ মাই ম্যান, এন্ড মাই ম্যান ইজ অনলি মাইন।”
বলতে বলতেই মেয়েটিকে দূরে সরিয়ে ছেড়ে দেয়। মেয়েটি রেগে মেগে বলে,
-“টক্সিক একটা মেয়ে, এসব কোন ধরনের ব্যবহার।”
পিহু তেতে উঠে বলে,
-“টক্সিক বল আর যাই বল, আমার বেডার সাথে কেউ হাহা-হিহি করবে, সেটা আমি মেনে নিবোনা। চাল হাটটটট…”
আশেপাশের অনেকেই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। মেয়েটি কিছু বলতে চেয়েও অপমানে রেগেমেগে সেখান থেকে চলে যায়। এদিকে ফারহান একইভাবে বসে আছে, মুখে মুচকি হাসি। পিহু এবার ফারহানের দিকে তাকায়, তাকে হাসতে দেখে রাগ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। সাথে সাথে গিয়ে তার গলা চেপে ধরে,
-“এই বেডা খুব মজা লাগে তাই না, অন্য বেডিদের সাথে হাসতে। আমি যেতে না যেতেই শুরু। আবার মুচকি মুচকি হাসি। কি বেয়াদব বেডা, কি মনে করেছেন আমি এতো সহজে ছেড়ে দিয়েছি? নো, নেভার কাভি নেহিইইইইই..”
ফারহান হাসতে হাসতে পিহুর হাত ছাড়িয়ে সামনের চেয়ারে বসিয়ে, সামনে পানির গ্লাস রাখে,
-“নেও, পানিটা খাও, গলা শুকিয়ে গেছে, ভিজিয়ে তারপর আবার চিল্লাও…”
পিহু কিছুটা শান্ত হলেই ফারহান প্রশ্ন করে,
-“তোমার না, আমার সঙ্গ লাগবে না, তাহলে আবার চলে এলে যে।”
পিহু এবার কেঁদে উঠে, ফারহান দ্রুত একহাতে তাকে আগলে জড়িয়ে ধরে,
-“এই পিহু, কাঁদিস না, আমি তো মজা করে বলেছিলাম।”
পিহু যেন ফারহানের একটু আদুরে কথায় আরও গলে যায়, আরও কেঁদে উঠে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে,
-“আপনি ছাড়া আর কারোর সঙ্গ চাই না, আমার শুধু আপনার সঙ্গ লাগবে।”
ফারহান হালকা হেসে পিহুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
-“আমারও এই বেয়াদব মহিলা ছাড়া আর কারোর সঙ্গ চাই না। এই মহিলাই যথেষ্ট ফারহান ভূইয়ার জন্য।”
———
সাদকে সুমনা তার পাশে হুদাই বসিয়ে রেখেছে। বেচারা বিরক্ত হয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছে। তাকানোর মাঝেই তার সামনে দিয়ে এক মেয়ে যায়, তবে সে তার দিকে তাকায়নি একবারও। কিন্তু পাশ থেকে সুমনা বলে উঠে,
-“ওই মেয়েকে ভালো লেগেছে বুঝি….”
সাদ ফট করে ভীতু চোখে তাকায় সুমনার দিকে, ফরফরিয়ে বলা শুরু করে,
-“আস্তাগফিরুল্লাহ তওবা নাউজুবিল্লাহ কিসব বলোরে, আমি ভুলেও তাকাইনি।”
সুমনা একটু রাগ দেখাতে গিয়েছিলো, তবে সাদের রিয়েকশন দেখে হেসে ফেলে। বেচারির রাগ এক নিমিষেই চলে যায়। সাদ যে মিথ্যা বলছে না, ওর রিয়েকশনই বলে দিচ্ছে।
———
দেখতে দেখতেই সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত চলে আসে। আজ মেঘ রুদ্রের গায়ে হলুদ। সকাল থেকে বাসায় মানুষে ভরপুর, রুদ্রের বন্ধু-বান্ধব থেকে শুরু করে রুদ্রের নানা বাড়ির সকলে। সাথে সাদের নানা বাড়ির লোকও আছে। তাদের কাছের-দূরের আরও অনেক আত্মীয়; সব মিলিয়ে পুরো বাড়ি মানুষে ভরপুর। ছেলেরা সব এদিক-সেদিক কাজে ব্যস্ত। বাড়ির মেয়েরাও ব্যস্ত অতিথি আপ্যায়নে। মাহিরা, মেয়েটি এখন বেশ ভালো হয়ে গেছে, মেঘের সাথে ভালোই বিহেভ করছে আসার পর থেকে। হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।
বিকালের দিকে পার্লারের লোকজন আসে। মেঘসহ বাকিদের সাজগোছ শেষ হতে হতে ৭টা বেজে যায়। সব মেয়েরা সেইম শাড়ি, সেইম সাজে সেজেছে আজ। পার্লারের লোকজন যেতেই মেঘ উঠে দাঁড়ায়। আয়নার সামনে যেতেই চোখ জুড়িয়ে যায় তার। সে তো নিজের বিয়েতে এভাবেই কনে সাজার স্বপ্ন দেখেছিল, গায়ে হলুদ শাড়ি, কাঁচা ফুলের গহনা, ব্রাইডাল মেকাপ, মাথায় ডুপাট্টা। যেনো এক বাঙালিয়ান নববধূ। রুমে উপস্থিত সবাই তো প্রশংসা করেই যাচ্ছে।
এর মধ্যেই হঠাৎ কেউ দরজা ধাক্কা দেয়। পিহু ভেতর থেকে ডেকে ওঠে,
-“কে..?”
বাহির থেকে রুদ্রের গলা ভেসে আসে,
-“আমি, দরজা খোল..”
-“কেনো, কি দরকার..?”
রুদ্র বিরক্ত হয়ে বলে,
-“আমার বউ কই? সেই সকাল থেকে রুমে ঢুকিয়ে রেখেছিস।”
-“বাব্বাহ, একদিন বউকে না দেখেই এই হাল..”
পিহুর কথায় সেখানে উপস্থিত সকল মেয়েরাই হেসে ওঠে। বোনের কথায় রুদ্রও কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়। ভাইকে কিছু বলতে না দেখে পিহু আবার বলে উঠে,
-“এখন যাও, যাও বাপু, একেবারে স্টেজেই আমার বান্ধুবির সোনামুখখানা দেখতে পাবে…”
রুদ্র খানিকটা লজ্জা পেয়ে আর কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে যায়। এখানে থাকলে এই বোন নামের দোষমন সকলের সামনে খালি লজ্জায় ফেলবে। রুদ্র গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে, তার উদ্দেশ্যে। প্রায় ১৫ মিনিটের মাথায় পৌঁছে যায় গন্তব্যে। বাড়িতে ঢুকে কলিং বেল বাজাতেই রাহুলের মা দরজা খুলেন। রুদ্রকে দেখে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠেন। প্রত্যেকবার এমনই হয়।
রাহুলের বাবা কে এসেছে দেখতে, রুদ্রকে দেখে স্ত্রীকে বলেন,
-“কি করছো, কি, ছেলেটাকে ভেতরে না ঢুকতে দিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছো?”
স্বামীর কথায় রুদ্রকে ছেড়ে তাকে ভেতরে আনে। রুদ্র সোফায় বসতেই বলে উঠে,
-“যাবে না তোমরা? আজ আমার গায়ে হলুদ..?”
রাহুলের বাবা বুক ভরা হতাশার শ্বাস ছেড়ে বলেন,
-“বাবা, শরীরটা ভালো লাগছে না।”
রুদ্র তাকে থামিয়ে তাদের সামনে এসে বলে,
-“তোমাদের ছেলের কাছে যাবে না..?”
রাহুলের মা চমকে ওঠেন,
-“মানে..?”
রুদ্র হালকা হেসে বলে,
-“মানে আমি, আমি তোমাদের ছেলে কিনা বলো..?”
রাহুলের মা রুদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে চোখে জল নিয়ে বলেন,
-“তোদের কারণেই তো বেঁচে আছি, নয়তো ছেলে হারিয়ে কবেই মরে যেতাম। তোরাই তো আমার ছেলে।”
রুদ্র উনার হাত ধরে অনুরোধের স্বরে বলে,
-“মামুনি, আমার কথা রাখবে?”
-“বল, বাবা…”
রুদ্র নরম কণ্ঠে বলে উঠে,
-“আমি আমার এই বাবা-মা ছাড়া বিয়ের প্রোগ্রাম শেষ করতে পারবো না। তোমরাও চলোনা, আম্মু-আব্বুও তোমাদের অপেক্ষায় বসে আছে।”
রুদ্রের কথায় উনারা আর না করতে পারেন না। রেডি হয়ে রুদ্রের সাথেই বেড়ে পড়ে।
———
মেঘকে স্টেজে বসানো হয়েছে সেই অনেকক্ষণ আগেই। তার একার কিছু ফটোশুট অলরেডি হয়েছে। তারপর একে একে ফ্রেন্ড-আত্মীয়, যারাই বউয়ের সাথে ছবি তুলতে চেয়েছে, সবাই তুলেছে। বেচারি মেঘ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এইটুকুতেই।
পিহু বাড়ির ভেতর যাচ্ছে, তার মোবাইলটা রুমে ফেলে এসেছে। দু’তালায় উঠতেই হঠাৎ কেউ তাকে টেনে রুমে ঢুকায়। পিহু কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে কেউ। পিহু ভয়ে সামনে তাকাতেই ফারহানকে দেখে চুপসে যায়। ফারহান ঠিক তার সামনে, পিহুর দু’পাশের দেয়ালে দু’হাত দিয়ে তাকে মাঝে আটকে রেখেছে। তাদের মধ্যের দূরত্বও বেশি না। ফারহানের তাকানো দেখে পিহু ভড়কে যায়,
-“ক..কি করছেন কি? এখানে এনেছেন ক..কেনো?”
ফারহান গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-“সারাদিন ধরে না কলে পাচ্ছি না, ভালো মতো দেখা পাচ্ছি, এসব কোন ধরনের অসভ্যতামি?”
-“বিজি ছিলাম..”
পিহুর কথায় ফারহান আরেকটু এগিয়ে আসে। এবার ফারহানের শ্বাস-প্রশ্বাস পিহুর চোখ-মুখে ঠেকছে। পিহু দেয়ালের সাথে আরও চেপে যেতে চায়, তবে আর সম্ভব না। বেচারি লজ্জায় মিয়িয়ে যাচ্ছে। ফারহানকে এতো কাছ থেকে অনুভব করেনি কখনো। কেমন জানি অন্যরকম এক অনুভূতি হানা দিচ্ছে। তার একপ্রকার কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়। এদিকে পিহুর অবস্থা দেখে ফারহানের বেশ মজা লাগে। বেয়াদব মহিলাকে এই প্রথম সে হাতে আনতে পেরেছে। নয়তো সারাক্ষণ তাকেই দৌড়ের উপর রাখে। দুষ্টু হেসে বলে,
-“কি, ম্যাডাম, এতো কাপাকাপি করছো যে শীত করছে নাকি?”
পিহু আমতা-আমতা করে বলে,
-“ম..মানে না, ইয়ে মানে আমার যেতে হবে, ড..ডাকছে আমাকে..”
পিহুর অবস্থা দেখে ফারহানের হাসি চলে আসে, তবুও নিজেকে সামলে বলে,
-“কোথায়? আমি তো শোনলাম না কোনো ডাক…”
পিহু এবার কি বলবে ভেবে না পেয়ে চুপ হয়ে যায়। পিহুকে চুপ হতে দেখে ফারহান তার কপালে একটা চুমু বসিয়ে দেয়। পিহু চমকে চোখ বড় বড় করে ফারহানের দিকে তাকায়। পিহুর টানা টানা চোখের দিকে নজর যেতেই আটকে যায় ফারহান। এবার সে পিহুর দিকে ভালো করে লক্ষ্য করে, পিৎ কালার শাড়ি পড়েছে, সাথে ফুলের গহনা, মুখে ভারি সাজ। ঠোঁটের দিকে নজর যেতেই বড়সড় একটা ঢুক গিলে ফারহান। কেমন যেনো টানছে তাকে, ঘোর লেগে যাচ্ছে, যেন নিজের মধ্যে নেই সে। আস্তে আস্তে মুখ এগিয়ে নিয়ে যায় পিহুর দিকে। এদিকে পিহু যেনো জমে আছে, নড়াচড়া করার শক্তি পাচ্ছে না। ফারহানকে যে ধাক্কা দিয়ে সরাবে তার জন্য হাতটুকুও তোলার শক্তি পাচ্ছে না। ফারহান যত এগিয়ে আসছে, পিহুর নিশ্বাস ততো ভারি হচ্ছে। একপর্যায়ে যখন একদম কাছাকাছি চলে আসে, পিহু খিঁচে চোখ বন্ধ করে নেয়। আর ঠিক সেই সময়েই ফারহানের ফোন বেজে উঠে। মুহুর্তেই ফারহানের হুশ ফিরে আসে; কি করতে যাচ্ছিলো টনক নড়ে। দ্রুত পিহুকে ছেড়ে অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজেকে সামলে বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে দ্রুত কল রিসিভ করে। এদিকে পিহু যেনো নিশ্বাস ফিরে পেয়েছে, এখনও দেয়ালের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে আছে। কি হতে যাচ্ছিলো ভাবতেই তার গা শিউরে উঠছে।
এদিকে ফারহানকে অপরপাশ থেকে কেউ কিছু বলতেই সে বলে উঠে,
-“হ..হ্যা, হ্যা, আমি আসছি…”
কল রেখেই দ্রুত পিহুর দিকে তাকায়। পিহুর অবস্থা দেখে জুড়ে হেসে উঠে,
-“কেমন লাগলো? ভাব সব দেখে তো লাগতো, বাঘিনি, এখন তো দেখছি বিড়াল।”
পিহু ফারহানের হাসি আর কথা শুনে তার দিকে তাকায়। তার মানে, ফারহান তার সাথে ইচ্ছে করে মজা করছিলো, তাকে অসস্থিতে ফেলতে। মুহুর্তেই রাগ উঠে যায়। রেগে এগিয়ে আসে,
-“আপনি তারমানে এতোক্ষণ মজা করছিলেন..?”
ফারহান হেসে বলে,
-“ওই আরকি, একটু বাজিয়ে দেখছিলাম…”
একটু থেমে পিহুকে চোখ মেরে বলে,
-“তুমি চাইলে সত্যিও করতে পারি। তবে তুমি যেই ভীতু, এতেই এই অবস্থা, যদি সত্যি কিছু করতাম কি হাল হতো ভাবছি…”
ফারহান মুখ টিপে টিপে হাসছে। তা দেখে পিহু কিছুক্ষন রেগে তাকিয়ে থাকে। মুহুর্তেই মনে মনে ফন্দি আটে “আমাকে নিয়ে মজা উড়ানো? এবার দেখাবো মজা” পিহু হুট করে ফারহানের সামনে এসে দাঁড়ায়। ফারহান ব্রু কুচকে তাকালে, তার দিকে এক পা এক পা করে এগোতে লাগে। পিহুর ভাবমূর্তি দেখতে দেখতে ফারহানও একটু একটু করে পিছাচ্ছে।
-“কি হয়েছে?”
পিহু উত্তর না দিয়ে উল্টো মুচকি হাসি দিয়ে ফারহানকে হুট করে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দেয়। হঠাৎ ধাক্কায় ফারহান নিজেকে সামলাতে না পেরে বিছানায় পড়ে যায়। অবাক হয়ে পিহুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করতে যাবে, তার আগেই পিহু বিছানার একপাশে উঠে বসে পড়ে। আস্তে আস্তে তার দিকে ঝুকে আসে। তা দেখে ফারহানের প্রশ্ন গলাতেই আটকে যায়। চোখ বড় বড় করে পিহুর দিকে তাকিয়ে আছে। কি করতে চাচ্ছে পিহু বুঝার চেষ্টা চালাচ্ছে।
পিহু শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,
-“আমার তো ভালোই লাগছিলো। চলুন, আবার কন্টিনিউ করি।”
বলেই পিহু আরেকটু এগিয়ে আসতে নিলেই ফারহান ভয় পেয়ে ধরফরিয়ে উঠে বসে,
-“ক..কি করছো কি, মাথা ঠিক আছে তোমার..?”
ফারহানের কথায় এদিকে পিহু জুড়ে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে উঠে হাটা ধরে,
-“হাহ, আসছে পিহুর সাথে পাঙ্গা নিতে, ভীতুর ডিম নিজেই..”
পিহু দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। তবে ফারহান এখনো বসে আছে, ভাবছে পিহুর কথাই। বাপরে, কি সাংঘাতিক মেয়ে। একে জব্দ কি ওই ফারহানকে জব্দ করে রেখে গেছে। ফারহান উঠে দাঁড়ায়, চুল ঠিকঠাক করে, যেতে যেতে বিরবির করে,
-“বেয়াদব মহিলা…”
নিচে নামতেই দেখে ফারহানের মা, সারা, মিষ্টি,ফাহিমা এরা সবাই বসে আছে। মাত্রই এসেছে হয়তো। পিহু তাদের সাথেই কথা বলছে। সিদ্দিকা বেগম নাস্তা আনতে গেছেন। ফারহান এগিয়ে যায়, মায়ের কাছে বসে। ফারহানের মায়ের অপরপাশেই পিহু বসে গল্প করছিলো। হঠাৎ ফারহানের কথায় সে তব্দা খেয়ে যায়। ফারহান তার মাকে জিজ্ঞেস করে,
-“মা, বউমা কেমন লেগেছে?”
ফারহানের মা হেসে পিহুর থোঁতনা ধরে বলেন,
-“পিহুকে তো আমার সেই সায়ানের বিয়ে থেকেই পছন্দ। নতুন করে আর কি বলবো? মিষ্টি একটা মেয়ে। দ্রুত ঘরে তুলতে পারলেই হলো।”
পিহু লজ্জা, সরম, অবাক সব মিলিয়ে এমন এক অনুভূতি হচ্ছে যে সে এখন কি এক্সপ্রেশন দিবে বুঝে উঠছে না। এর মধ্যেই সিদ্দিকা বেগম নাস্তা নিয়ে আসে। আর এই বিষয়ে কেউ কথাও তুলেনি।
———
রুদ্র মাত্রই রাহুলের মা-বাবাকে নিয়ে বাড়িতে এসেছে। তাদের বাড়ির সবার সঙ্গে দেখা করিয়ে বসিয়ে রেখে দ্রুত স্টেজের দিকে যায়। মেঘকে এক ঝলক দেখার লোভ আর সামলাতে পারছে না। কয়েক ঘন্টা দেখেনি, তবে মনে হচ্ছে যেনো কয়েক যুগ দেখেনি সে। রুদ্র তড়িঘড়ি করে স্টেজের সামনে যায়। তবে কিছুটা সামনে যেতেই জায়গায় পা আটকে যায়। মুখ হাঁ হয়ে যায় মেঘকে দেখে। যেনো এক জীবন্ত পুতুল বসে আছে সামনে। সঙ্গে সঙ্গে এক হাত মুখে চলে যায়। অবাক হয়ে বলে উঠে,
-“এইটা কি আমার বউ নাকি কোনো পরি…”
রুদ্রের কথা শোনে আশেপাশের সবাই হেসে উঠে। শান্তরা তাকে সামনের দিকে ঠেলে বলে,
-“আরে বেটা, তোর নিজের বউই…”
রুদ্র ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় মেঘের দিকে। মেঘও তার আসার পানে তাকিয়ে। রুদ্রও তার সঙ্গে মিলিয়ে হলুদ পাঞ্জাবি পড়েছে, সঙ্গে সাদা পাজামা, চুলগুলো সুন্দরভাবে সেট করা, খুবই পরিপাটি ও সুন্দর লাগছে। যেনো এক দেখাতেই যে কারো মন কাড়া লুক। রুদ্র এসেই ধপ করে মেঘের পাশে বসে পড়ে। এক আঙুল মেঘের চোখের দিকে বাড়াতে নিলেই মেঘ চমকে উঠে,
-“এই কি করছেন..?”
রুদ্র ফুস করে শ্বাস ছেড়ে বলে,
-“বউ, একটু কাজল দাও, নজর টিকা দেই, নয়তো আমার নজরই আগে লাগবে।”
রুদ্রের কথায় মেঘ হেসে উঠে। রুদ্র মেঘের হাসি দেখে বলে উঠে,
-“মাশাল্লাহ…”
রুদ্রের কান্ডে তার বন্ধুমহলের একেকজন পিঞ্চ মেরে মেরে কথা বলছে। যা শোনে মেঘ লজ্জায় মিঁয়ে যাচ্ছে। পাশ থেকে কিছু মহিলার কথা কানে আসে,
-“আরে রুদ্র, দেখি বিয়ের পর বউ পাগল হয়ে গেছে..”
রুদ্রের কানে কথাটি আসতেই মুচকি হেসে বলে,
-“পাগল তো হবই, এমন সুন্দরি বউ থাকলে, কে না হয়ে থাকে?”
রুদ্রের উত্তর শোনে আশেপাশের ছেলে-মেয়েরা শিস বাজিয়ে ওঠে। শান্তরা চিল্লিয়ে বলে,
-“মাম্মা, জিতছো…”
এর মধ্যেই হলুদ লাগানোর পর্ব শুরু হয়ে যায়। বড়রা একে একে এসে হলুদ ছোয়ে দিচ্ছে তাদের। ক্যামেরাম্যানও তাদের সুন্দর সুন্দর মুহূর্তগুলো রেকর্ড করছেন।
———
সুমনা মোবাইলে ছবি চেক করতে করতে একটু সাইডে আসতেই সাদের মুখোমুখি পড়ে। তাকিয়ে দেখে সে ভীষণ রেগে আছে। সারাদিন বেশ তো ইগনোর করেছে। তবে এখন বেচারি ভড়কে যায়। এখন কি করবে? যদি থাপ্পড় টাপ্পড় মেরে দেয়, মেকআপ নষ্ট হয়ে যাবে।
সাদ রেগে সামনে এগোতেই সুমনা চটজলদি এগিয়ে এসে বাচ্চাদের মতো সাদের কোমড় পেচিয়ে ধরে হেসে উঠে। ব্যাস, সাদ যেনো এখানেই গলে গেছে। মানে, ম্যানস আর সিম্পল কথাটা আসলেই সত্য। এতো রাগ নিমিষেই পানি হয়ে গেলো প্রেয়সির একটা মাত্র হাসিতেই। সাদ নিজেও হেসে ফেলে। সাদের হাসি দেখে সুমনার হাসি আরও প্রখর হয়। যার ফলে তার গুলুমুলু গালগুলো আরও ফুলে উঠে।
সাদ দুই হাত দিয়ে সুমনার দুই গাল আগলে ধরে। বুড়ো আঙুল দিয়ে নরম সফট গালে স্লাইড করতে করতে বলে,
-“আমি কিন্তু রেগে ছিলাম..”
সুমনা বাচ্চাদের মতো করে ঠোঁট উল্টে বলে,
-“এখনও রেগে আছো?”
সাদ ফিক করে হেসে ফেলে, সুমনার গালে হালকা ঠোঁট ছুয়িয়ে নরম স্বরে বলে,
-“উহু, একদমই না। তবে পুকির আম্মু, আপনি আমাকে একদম ইগনোর করবেন না। কারণ….”
কারণ বলেই সাদ গান ধরল,
“মন খালি খালি,
তুই তুই করে…
তুই তুই করে….
এবুকে চূড়া বালি,
ছুই ছুই করে….
ছুই ছুই করে….”
সুমনা হেসে বলে,
-“বাব্বাহ, ভাই-বোন সব সিংগারের দল নাকি।”
-“বউয়ের জন্য সবই হতে পারি, সিংগার কবি….”
———
অন্যদিকে, রিককে পরীক্ষা করতে মিষ্টি একটা মেয়েকে পাঠায় রিকের সঙ্গে ফ্লার্ট করতে। আসলে তার বান্ধুবিরাই বারবার বলছিলো, লয়াল হবেনা, হবেনা। সেই সন্দেহ থেকেই আজ বিয়ে বাড়িতেই হাতে নাতে পরীক্ষা করতে চাচ্ছে।
রিক শান্তদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলো বসে। একটি মেয়ে হঠাৎ এসে রিককে ডাকে। সে উঠে আসলে, তখন মেয়েটি বলে,
-“একটু সাইডে যেতে, ইমারজেন্সি কথা আছে।”
তা শোনে রিক সাইডে একটা কর্নারে যায়। তাদের পেছনে যে মিষ্টি লুকিয়ে আছে, সেই খবর রিক জানেনা।
-“আপু, কি বলবেন, কোনো দরকার?”
মেয়েটি সাথে সাথে বলে,
-“আপু, কেনো বলছো, নাম ধরে ডাকতে পারো..”
রিকের কাছে কেনো জানি সুবিধার মনে হচ্ছিলো না মেয়েটিকে। তাই কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে,
-“কি বলতে ডেকেছেন, বলেন..”
-“আসলে, আমার আপনাকে পছন্দ হয়..”
মেয়েটি কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে রিক তাকে থামিয়ে দেয়,
-“দেখুন আপু, পছন্দ হয়েও লাভ নেই। আমি অলরেডি বুকিং..”
-“তো কি হয়েছে? তাকে ছেড়ে দিন, আমি নতুন করে বুকিং করে নেবো..”
রিক কিছুটা বিব্রত হয়ে যায়, এমন গায়ে পড়া মেয়ে আগে দেখেনি,
-“শুনুন আপু, আমার একটা শখের নারী আছে। আর তার কাছেই আমি বুকিং, এন্ড দিস ইজ নট অনলি বুকিং, আমি লকড। তাই বলি যে এসব চিন্তা বাদ দিন। আর দয়া করে অভিশাপ দিবেন না, পারলে দোয়া করবেন আমাদের জন্য।”
বলেই ডান হাতের অনামিকা আঙুলে মিষ্টির পড়ানো রিংটা দেখিয়ে চলে যায়। এদিকে মিষ্টির তো কেঁদে দিবে অবস্থা। ফ্রেন্ডদের কথা শোনে, তার ভালোবাসাকে সে অবিশ্বাস করছিলো। ছি, তার তাহলে রিকের উপর বিশ্বাসই নেই। আর যেখানে বিশ্বাস নেই, সেখানে ভালোবাসাও থাকে না।
মিষ্টি দ্রুত এগিয়ে যায় রিকের কাছে। রিক হঠাৎ মিষ্টিকে এমন হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখে দ্রুত এগিয়ে যায়,
-“কি হয়েছে, এভাবে হাটছো কেনো? শাড়ি পড়েছো তুমি, পড়ে যাবে তো..”
মিষ্টি রিকের হাত ধরে স্টেজের অন্যপাশে নিয়ে আসে। এপাশে মানুষজন নেই। হঠাৎ রিককে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে মিষ্টি। রিক হকচকিয়ে যায়, হঠাৎ কাদছে কেনো ভেবে। দ্রুত তাকে প্রশ্ন করে,
-“এই জান, কি হয়েছে? কাদছো কেনো? কেউ কিছু বলেছে? কেউ খারাপ ইঙ্গিত দিয়েছে?”
মিষ্টি কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-“আমার অনেক গিল্টি ফিল হচ্ছে…”
রিক মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-“কি নিয়ে?”
-“আমি তোমাকে অবিশ্বাস করেছি, তাও অন্যের কথায়। যা একদমই উচিত হয়নি। তোমার উপর আমার বিশ্বাস রাখা উচিত ছিলো..”
মিষ্টির কথায় রিক কিছুক্ষন চুপ থেকে মুচকি হেসে তাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে পকেট থেকে টিস্যু বের করে হালকা হালকা চেপে চোখের পানি মুছে দিতে থাকে, যাতে মেকআপ না নষ্ট হয়। তারপর তার হাত ধরে স্টেজের দিকে যেতে যেতে বলে,
-“এই যে, নিজের ভুলটা উপলব্ধি করতে পেরেছো, গিল্টি ফিল করেছো, তার থেকেও বড় কথা আমার সঙ্গে শেয়ার করেছো। এগুলোই অনেক। হয়তো আমার কাজে এমন কোনো খুঁত পেয়েছো যার জন্য তোমার আমার ওপর সন্দেহ জন্মেছে। আমি এখন থেকে চেষ্টা করবো নিজেকে আরও শুধরানোর, যাতে মিষ্টি পাখির মনে আর সন্দেহ না জন্ম নেয়।”
মিষ্টি রিকের কথায় হেসে উঠে। দিনকে দিন যেনো এই লোকটার প্রতি ভালোবাসা ক্রমশ বেড়েই চলছে।
———
-“আরে ম্যাম, আর একটু দাঁড়ান…”
সামিয়া কোমড়ে দুই হাত দিয়ে মেকি রাগ দেখিয়ে বলে,
-“বলুন তো মশাই, আমার চুলের সঙ্গে কিসের এমন যুদ্ধ করছেন..?”
রাফান সামিয়ার চুলে তার কিনে আনা বেলিফুলের গাজরাটা লাগাতে লাগাতে বলে,
-“রুদ্রের পরই তো আমাদের সিরিয়াল, তাই এখন থেকেই হাসব্যান্ড ম্যাটারিয়াল হওয়ার ট্রাই করছি।”
-“তাই বলে আমার বাধা, চুল আউলিয়ে..?”
-“আরে, ম্যাডাম সাহেবা, আগে দেখো তো তারপর বকো..”
বলতে বলতেই সে কোনোভাবে গাজরাটা সামিয়ার চুলে লাগিয়ে দেয়। সামিয়া মাথায় হাত দিতেই বুঝে যায় বেলি ফুল। সঙ্গে সঙ্গে রাফানের দিকে তাকায়। লোকটা তার জন্য ছোট-বড় এমন এমন কাজ করে বসে যা সামিয়ার ভীষণ মন কাড়ে। তার প্রত্যেক কাজেই সামিয়া যত্ন, ভালোবাসা, সম্মান খুঁজে পায়। চোখ চিকচিক করে উঠে, এমন মানুষই তো চেয়েছিলো সে। আল্লাহ তাকে মিলিয়েও দিয়েছেন।
রাফান মোবাইল বের করে সামিয়ার চুলের পেছনের ছবি তুলে তার সামনে ধরে,
-“এই যে, ম্যাম, দেখেন, আপনার চুলের কোনো ক্ষতিই করিনি।”
মুহুর্তেই সামিয়া থোঁতনা ধরে মুখটা একটু উচু করে বলে,
-“আমি কি বোকা নাকি, আমার এতো সুন্দর সাজ-সজ্জায় সজ্জিত ফুলটাকে নষ্ট করে দিবো? এখন যেনো আমার ফুলের গায়ে বেলিফুল মিশে আরও বেশি সুন্দর হয়ে উঠেছে। মাশাল্লাহ…”
সামিয়া ছলছল চোখে তাকিয়ে রাফানের হাত শক্ত করে ধরে বলে,
-“এতো ভালোবাসা তো চাইনি, একটু হলেই হতো…”
রাফান সামিয়ার হাতে গভীর এক চুমু দিয়ে বলে,
-“তোমাকে ভালোবাসায় একটু কমতি রাখলে আমার পাপ হবে যে। তোমার জন্যই আজ আমি রাফান, নয়তো আমি কবেই ভেঙে গুড়িয়ে যেতাম…”
———
স্টেজের সামনে বসে আছে সবাই। হলুদ পড়ানো শেষ, এখন নাচ-গানের পালা। মেঘ আর রুদ্রকেও স্টেজ থেকে নামিয়ে সামনের সারিতেই বসানো হলো।
হঠাৎ সব লাইট অফ হয়ে যায়। চারদিকে গুঞ্জন,
-“কি হলো? কি হলো?”
কিন্তু মুহূর্তেই মুখগুলো বন্ধ হয়ে যায়, যখন স্পিকারে বেজে ওঠে,
“Mehendi lagake rakhna…”
সবাই ভাবছে ছেলে-মেয়েরা নাচবে। লাইট অন হতেই চোখ বড় হয়ে যায়। কেউ কথা বলতে পারছে না।
স্টেজে দাঁড়িয়ে আছেন চৌধুরী পরিবারের দুই কর্তা, তাদের স্ত্রী, আর কয়েকজন অতিথি। একপাশে মহিলারা, অন্যপাশে পুরুষরা। হঠাৎ বাজতে শুরু করে,
“Ye kudiyaan nashe di pudiyaan…”
এরশাদুল চৌধুরীসহ সবাই মহিলাদের দিকে হাত নেড়ে নাচে। এরপর মহিলারাও সমান তালে পুরুষদের দিকে ইশারা করে নাচে। চারদিক হাততালি, গমগম করে মিউজিকের সঙ্গে সবাই মেতে ওঠে।
হঠাৎ আসল টুইস্ট “ও ও ও ও…” সুরের সঙ্গে রুদ্রের দাদি-নানি স্টেজে এসে লিপসিং শুরু করে, যেনো নিজেই গান গাইছে।
পুরো প্যান্ডেল হৈ-হুল্লোড়ে ভরে ওঠে। ছেলেরা শিস বাজাচ্ছে, কেউ উল্লাস করছে, কেউ দাঁড়িয়ে বাহবা দিচ্ছে। মেঘ, পিহু, সামিয়া, রুদ্র, সাদ, তাহমিদসহ সবাই অবাক। তাদের বাপ-চাচারা এমন নাচবে, তারা কল্পনাও করেনি।
মেঘের চোখে আনন্দাশ্রু। স্পষ্ট বোঝা যায়, এই বিয়ে পরিবারের জন্য কতটা খুশির। বয়স ভুলে সবাই নাচে-গানে ভেসে গেছে। গান শেষ হতেই সবাই স্টেজ থেকে নেমে আসে। পিহু ও বাকিরা ছুটে গিয়ে সবাইকে আলিঙ্গন করে। মেঘও উঠে আসে, এরশাদুল চৌধুরী মেঘের মাথায় হাত রেখে বলে,
-“সর্বদা সুখি থাক মা, তোকে আমি সারাজীবন আমার ছেলের পাশে দেখতে চাই…”
মেঘ মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়। এরপর একেরপর এক সবাই নাচে, এঞ্জয় করে। রাত ১২টা বাজে, বড়রা সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকে।
৩-৪টি টেবিল একসাথে করে চৌধুরী পরিবারের সবাইসহ রুদ্র-মেঘদের বন্ধুরাও বসেছে। সবাই গল্প করছে, হাসি ঠাট্টা করছে। রুদ্রও খাচ্ছে, মেঘকেও খাইয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু হঠাৎ এক মহিলা নাক কুচকে বলে,
-“আচ্ছা আপা, আপনার ছেলের বউয়ের বাপের বাড়ির কাউকে দেখলাম না, এতিম নাকি…”
রুদ্রের হাত থেমে যায়, রাগে তাকায়। মেঘ চুপ হয়ে যায়। রুদ্র কিছু বলার আগেই পাশে বসা সাদের মা ওঠে বলে,
-“মেঘ আমার আর সাদের আব্বুর মেয়ে। মেঘের মা-বাবা আমরা। আর শশুড়-শাশুড়ি আমার জা আর ভাসুর। আর কিছু জানতে চান? নাহলে খান, খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে…”
মহিলাটি অপমানে চুপ, বাকিরা হাসে। মেঘ ছলছল নয়নে তাকায় রুদ্রের দিকে।
———
পরেরদিন সকাল সকাল উঠেই মেঘ সহ বাকি মেয়েরা চলে যায় পার্লারে। সেখান থেকে তৈরি হয়ে আসে। মেঘ পড়েছে লাল খয়েরি রঙের পাকিস্তানি লেহেঙ্গা, সাথে মিলিয়ে কিনা অর্নামেন্টস, সাথে ব্রাইডাল সাজ আছেই। যেনো কোনো এক রাজ্যের রানী নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে, নিজস্ব রাজ্য সকলের সামনে দখল করে নিতে। পার্লার থেকে তারা ডিরেক্ট চলে যায় সেন্টারে। তারপর সব বিচ্ছুদের শুরু হয় প্লানিং। ছেলেরা আসবে নামাজ পড়েই। সেই আশায়ই তারা বসে আছে। এর মধ্যে বাকি দাওয়াতিরাও একে একে আসতে শুরু করে।
হঠাৎ একটা মেয়ে দৌড়ে এসে বলে, “জামাই চলে এসেছে, জামাই চলে এসেছে।” শোনতেই সব মেয়েরা দৌড়ে গিয়ে গেইট ধরে দাঁড়িয়ে পড়ে। মেঘ সেন্টারের দু’তালার বারান্দা থেকে দেখছে নিচে তাকিয়ে।
একের পর এক বাইক ঢুকছে ভেতরে। সব বাইক একে একে ঢুকতেই হঠাৎ ঘোড়া নিয়ে প্রবেশ করে রুদ্র। পড়নে সাদা রঙের শেরোয়ানি, সাথে উড়না আর মাথায় পাগড়ি লাল খয়েরি রঙের। কোমরের পাশে ঝুলছে মাঝারি সাইজের চাকু। ঘোড়ার উপর রাজকীয় ভঙ্গিতে চড়ে আসছে রুদ্র, চারপাশে তার সব বন্ধু, ভাই, বাবা, চাচারা আনন্দ উল্লাসে তাকে ঘিরে এগিয়ে আসছে। দৃশ্যটা যেনো একেবারে রূপকথার রাজপুত্রের আবির্ভাব। সেই রাজপুত্র, যাকে মেঘ সারাজীবন মনে মনে চেয়েছিল। যেনো সে এসে তার জীবনে সুখ বয়ে আনে। কিন্তু আল্লাহ যে এভাবে তার প্রতিটা ইচ্ছা পূরণ করবেন, তা মেঘ কোনোদিন কল্পনাও করেনি। হয়তো মেঘের মনটা এতটাই স্বচ্ছ ছিলো, কোনো দাগ ছিলো না, তাই তাকে দিয়েছেন, ঢেলে, একদম অগাধ ভালোবাসা, অগাধ সুখ।
রুদ্ররা প্রবেশ করতেই পিহুরা আটকে ধরে। তাদের গেইট ধরতে দেখে শান্ত বলে উঠে,
-“এই ভাংতি নাই, ভাংতি নাই। বিয়েতে এমন ফকিরেরা কোথা থেকে আসলো…”
শান্তর কথায় সব ছেলেরা হেসে উঠে। তবে পিহুরা এসবে পাত্তা না দিয়েই শরবতের ট্রে এগিয়ে দেয়। প্রত্যেকটা গ্লাসের নিচে একটা করে কাগজ,
-“নেন নেন ভাই উঠান। আপনিই সিলেক্ট করুন, আমাদের কত অ্যামাউন্ট দিতে ইচ্ছুক…”
পিহুর কথায় সাদ বলে উঠে,
-“কিরে, তোর ভাই এদিকে, তুই ওইদিকে কি করিস?”
পিহু সাদকে মুখ ভেঙ্চি দিয়ে বলে,
-“টাকা আছে, যেদিকে পিহু আছে সেদিকে…”
এরপর রুদ্রকে বলতেই একটা গ্লাস উঠায়। তার নিচের কাগজ উল্টাতেই দেখে ৫০ হাজার টাকা লেখা। সাথে সাথে মেয়েরা চিল্লিয়ে উঠে আর স্লোগান দেওয়া শুরু করে,
“এইই এক বড়, না দুই বড়,”
বাকিরা চিল্লিয়ে উঠে বলে,
-“দুলাভাইয়ের মন বড়…”
এ নিয়ে লেগে যায় দু’পক্ষের মধ্যে চুলাচুলি। একেকজন একেকজনের চুল টেনে ছিড়ে দিচ্ছে কথার মাধ্যমে। এক পর্যায়ে যখন মেয়েরা দেখছে যে ছেলেদের সাথে লজিকে পারছে না, তারা প্ল্যান ২-এ সিফট করে আর চিল্লানো শুরু করে,
“টাকা দেন দুলাভাই
টাকা কই দুলাভাই
কিপটা কেন দুলাভাই
কিপটামি কমান দুলাভাই
টাকা বের করেন দুলাভাই
ওই আমার দুলাভাই
ওই সবার দুলাভাই”
এদের চিল্লাচিল্লিতে রুদ্রের যেনো মাথা এখানেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছেলেরা একেকজন কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। শেষমেষ না পেরে ৩০ হাজার দিয়ে কোনোরকম বোঝ দিয়ে ভেতরে ঢুকে। তাদের যেহু বিয়ে আগেই হয়েছে, এখন শুধু অনুষ্ঠান সেই হিসেবে রুদ্রকে ডিরেক্ট মেঘের কাছেই নিয়ে বসানো হয়। রুদ্রকে যখন স্টেজে নেওয়া হচ্ছিলো ক্যামেরা ঠিক তার দিকেই ফোকাস ছিলো। কিছুটা এগোতেই মেঘ উঠে দাঁড়ায়। এগিয়ে এসে রুদ্রের হাত ধরে হাসি মুখে তাকে স্টেজে উঠায়। রুদ্র তো তার লাল পরির দিক থেকে চোখই সরাতে পারছিলো না। তারপর শুরু হয় ছবি তোলা, তাদের কাপল পিক থেকে ধরে গ্রুপ পিক সব একে একে তোলা শুরু হয়। এসবের এক পর্যায়ে রুদ্র হঠাৎ মাইক নিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“প্লিজ সবাই জায়গায় বসুন। একটা সারপ্রাইজ আছে।”
সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে বসে আছে সারপ্রাইজ কি সেটা দেখার জন্য। বেশ কয়েক মিনিট যেতেই রুদ্রকে কেউ কল দেয়। সাথে সাথে রুদ্র মাইকে বলে,
-“প্লিজ, নিয়ে আসা হোক….”
সাথে সাথেই সবাই আশেপাশে তাকাতে লাগে কি নিয়ে আসবে সেই ভাবনায়। তখনি সেখানে উপস্থিত হয় সাফা….
চলবে…..
[৯ টায় দেওয়ার কথা থাকলেও কারেন্ট না থাকায় দিতে পারিনি। আমি ওয়াইফাই ব্যবহার করি, বুঝে নিবেন। আর এই পর্বে সবটুকু লিখে শেষ করতে পারিনি। আজ সন্ধ্যায় বা রাতে লাস্টটুকু দিয়ে দিবো। ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ]
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪০
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১৭
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১১.১
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৯
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৭
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২২