Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬৩


#আড়ালে_তুমি |৬৩|

#_সাইদা_মুন

-“কি সমস্যা আপনার এভাবে কাদছেন? কেনো, কি হয়েছে..?”

ফারহানের কাঁধে হাত রেখে কেউ জিজ্ঞেস করলে, ফারহান ভেঙে পড়া গলায় বহু কষ্টে বলে,

-“প..পিহু…”

-“আজব, আমি তো এখানে কিছু হয়নি..”

কথাটি কানে আসতেই মুহূর্তেই ফারহান চুপ হয়ে যায়। এক ঝটকায় মাথা ঘুরিয়ে পেছনে ফিরে তাকায়। পিহুকে সরাসরি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একবার লাশের দিকে তাকাচ্ছে, তো একবার পিহুর দিকে। সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়। এদিকে পিহু ফারহানের চোখ-মুখ দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে, ফারহানের চোখ ও নাক লাল হয়ে আছে কান্নার ফলে, চোখে এখনো পানি। পিহুর বুক মুচড়ে ওঠে। ফারহান অবাক কন্ঠে বলে,

-“তুমি এখানে তো এইটা কে..?”

-“জানিনা কে, তবে আমার সামনেই এক্সিডেন্ট হয়েছে।”

ফারহান সাথে সাথে পিহুকে পুরো স্ক্যান করে, হাতে ও কপালে ব্যান্ডেজ, দেখে কপালে হাত দিয়ে চিন্তিত হয়ে বলে,

-“হাতে কি হয়েছে? কপালে কি হয়েছে? কি করে হয়েছে এসব..”

পিহু ফারহানের অস্থিরতা দেখে কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে,

-“আমি গেট দিয়ে বের হয়ে সামনে এগোতেই দুটো গাড়ি ঠিক আমার সামনেই মুখোমুখি সংঘর্ষ করে। অল্পের জন্য দুটির মাঝেই আমি চলে যেতাম। আমাকে একজন ধাক্কা দিয়ে সাইডে ফেলে দেয়, যার জন্য বড়সড় বিপদ থেকে বাঁচলাম। তবে রাস্তায় পড়ায় হাত আর কপালে চোট লেগেছে কিছুটা…”

পিহুর কথার মধ্যেই, মেডিকেলে ভর্তি মানুষের সামনে ফারহান পিহুকে জড়িয়ে ধরে। যেনো মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফিরে পেয়েছে। শক্ত করে বুকে জড়িয়ে রেখেছে, চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে। এমনভাবে চেপে ধরে যেনো ছাড়া পেলে পালিয়ে যাবে। পিহুকে হারানোর ভয় তাকে একদম কাবু করে ফেলেছে। পিহু চমকের উপর চমক পাচ্ছে, ফারহান তার জন্য কাঁদছে, পাগলের মতো আচরণ করছে। এমন শক্ত মানুষকে এভাবে ভেঙে যেতে দেখছে। তার থেকে বড় কথা, পাবলিক প্লেসে এভাবে জড়িয়ে ধরা।

এদিকে রুদ্র-মেঘ এসেছে আরও কিছুক্ষণ আগেই। এতোক্ষণ ফারহানের অবস্থা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলো। পিহু মেডিকেল আসার পরপরই আননোন নাম্বার দিয়ে বাড়িতে কল দিলে, সিদ্দিকা বেগমের প্রেশার হাই হয়ে যায় মেয়ের টেনশনে। তা দেখে মেঘ রুদ্রকে কল করে আনায়, তারপর দুজনে দ্রুত মেডিকেলে এসে পৌঁছায়। ফারহান-পিহুকে এভাবে দেখে রুদ্র এগিয়ে যেতে চাইলে মেঘ হাত ধরে আটকে দেয়। রুদ্র পাশে ফিরে তাকাতেই মেঘ মাথা দিয়ে ইশারা করে এখানেই থাকতে। বেশ কয়েক সেকেন্ড যেতেই পিহু মোচড়ামুচড়ি শুরু করে ছাড়া পেতে,

-“ছাড়ুন আজব, আমি মরে গেলেও কি আপনার কিছু যায় আসে নাকি। ছাড়ুন সবাই দেখছে..”

ফারহান পিহুকে ছেড়ে দাঁড়ায়, নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,

-“ফালতু কথা মুখে আনলে থাপ্পড় দিয়ে গাল ফাটিয়ে দিবো…”

-“তো সত্যি কথাই তো বলেছি। আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না। তো মরে গেল…”

ফারহান সাথে সাথে পিহুর দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে ঝাকিয়ে উঠে,

-“এই বেয়াদব, আর একবার মরার কথা মুখে আনলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

পিহু তাচ্ছিল্য করে ছাড়িয়ে বলে,

-“শুনেছি, মানুষ ভালোবাসার মানুষের মুখে মরার কথা শোনতে পারে না। তবে আপনিও কি আমাকে?”

ফারহান ফট করে বলে,

-“না আমি বাসিনা..”

পিহু ফুস করে উঠে মনে মনে বলে,

-“হেব্বি শেয়ানা, ভাঙবে তবু মচকাবে না। বাপুরে মরে গেছি ভেবে কি কান্না জান টান ডাকছিলি শা*লা, এখন আবার ভাব ধরেছে। কি মনে করেছিস পিহুকে? পিহু ইজ পিহু, তোকে বেডা আমি যদি শিক্ষা না দিই, নাম বদলে ফেলবো।”

এরমধ্যেই রুদ্র এগিয়ে আসে ,

-“তোর ভালোবাসার দরকার নেই। আমার বোনের বিয়ে ঠিক, শীঘ্রই দাওয়াত পেয়ে যাবি…”

ভাইয়ের কথায় পিহু কিছুটা চমকে যায়। ফারহানের দিকে তাকালে দেখে তার দিকেই অসহায় চোখে চেয়ে আছে। পিহু সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয়। কিছু একটা ভেবে হালকা হেসে বলে,

-“অবশ্যই আপনার হবু বউকে নিয়ে আসবেন ফারহান ভাইইইই..”

———

-“বাব্বাহ, মুরগি দেখি নিজ থেকেই শেয়ালের আস্তানায় পা রেখেছে..”

রুদ্রের ঠেস মারা কথায় ফারহান কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,

-“তোর সাথে ঝগড়া করার ইচ্ছে নেই। আমার কিছু বলার আছে…”

রুদ্র ব্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,

-“বলে ফেল…”

ফারহান কাঠকাঠ গলায় বলে,

-“তোর বোনকে দিয়ে দে…”

রুদ্র হালকা রাগ দেখিয়ে বলে,

-“আমার বোন বাজারের পন্য নাকি, যে বললি আর দিয়ে দিবো..”

-“এতো কিছু জানিনা, পিহুকে দিয়ে দে, তাহলেই হবে।”

-“পিহুর বিয়ে ঠিক…”

-“ভেঙে দে…”

-“ভাঙা যাবে না..”

-“পাত্রকে ঘুম করতে সময় লাগবে না…”

-“হোয়াই?”

রুদ্রের চোখে চোখ রেখে ফারহান দৃঢ়ভাবে বলে,

-“বিকজ আই নিড হার…”

ফারহানের জবাবে রুদ্র বলে,

-“ওয়েট, কাহিনি করছিস? সেদিন যখন তোকে জিজ্ঞেস করলাম, পিহুকে ভালোবাসিস কিনা, তখন না করলি। আর এখন নাটক করছিস?”

ফারহান ফুস করে শ্বাস ছেড়ে বলে,

-“সেদিন শুধু বন্ধুত্বের চিন্তা ছিলো। যদিও আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের ছিটেফোঁটাও বেঁচে নেই, তাও ভেবেছিলাম আরও দূরত্ব না তৈরি হয় তোর সাথে। তখন মাথায় শুধু একটি বিষয়ই ছিলো, পিহুকে ভালোবাসি শিকার করলে তুই হয়তো মেনে নিবি না।”

রুদ্র শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

-“তাহলে এখন সেই চিন্তা কোথায়?”

ফারহান একটু চুপ থেকে বলে,

-“এখন রিয়েলাইজ করেছি, পিহুকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকা সম্ভব না। ও ছাড়া আমার লাইফ ইনকমপ্লিট। তার থেকেও বড় কথা, যেই বন্ধুত্ব আরও পাঁচ বছর আগে নষ্ট হয়ে গেছে, একজন তৃতীয় ব্যক্তির কথায় বিশ্বাস করে। তার কথা ভেবে, নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দেওয়া হলো নিছকই ভুল সিদ্ধান্ত।”

রুদ্র হঠাৎ ফারহানের দিকে এগিয়ে এসে মুখ বরাবর এক ঘুষি মারে। ফারহান কিছুটা পিছিয়ে যায়, তবে মুহূর্তেই সে ফিরে এসে রুদ্রের মুখে পাল্টা ঘুষি মারে। পরক্ষণেই রুদ্রের কাজে ফারহান হতভম্ব হয়ে যায়। রুদ্র তাকে হাগ করেছে। ফারহান অবিশ্বাসী চোখে তাকিয়ে। রুদ্র ফারহানকে ঝাপটে ধরে বলতে থাকে,

-“আমাকে মাফ করে দে, সেদিন আমি তোকে বিশ্বাস করলে হয়তো আমাদের মাঝে এতো বড় ফাটল ধরতো না। আমি ভুল ছিলাম, অর্নবের কথায় বিশ্বাস করেছিলাম, প্রিন্সিপালের কথায় বিশ্বাস করেছিলাম। আমি ওই মেয়েকে চিনি না, জানতামও না, হঠাৎ হ্যারেজমেন্টের দায় চাপিয়ে দিলো। তখনও আমার ভয় ছিল না, কারণ আমি জানতাম নির্দোষ। তবে যখন জানতে পারি তুই সেই মেয়ের হয়ে সাক্ষি দিয়েছিস, তখন এত গভীরে ভাবতে পারিনি। মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল। তোকে সেদিন খুব মেরেছিলাম। সেদিন হয়তো ভুল ছিলাম, কিন্তু তুই? তুই কি করলি? আমার সাথে আর কথা বলার জন্য এসেছিলি? না আমাকে বোঝাতে এসেছিলি? উল্টো কলেজ চেঞ্জ করে চলে গেলি, রাহুলের সাথেও কথা বন্ধ করলি। আমি ভেবেছিলাম যা হওয়ার হয়েছে, তুই আমার বন্ধু, যা করছিস তা বাদ দিয়ে। দিনের পর দিন অপেক্ষা করলাম, হয়তো মিটমাট করবি। তা না, আরও ঝামেলা বাড়িয়েছিস। আমার বন্ধুত্বে নাহয় বিশ্বাসের কমতি ছিল, তবে তোর?”

ফারহান গলা উঁচিয়ে বলে,

-“বুঝলাম তুই রাগ করেছিস, অভিমান হয়েছে, আমি নাহয় দেখতে যাইনি। তবে আমার দিক? আমার দিক দেখেছিস? আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমাকেই বিশ্বাস করেনা, আরেকজনের কথায় হাত তুলে। এসবের পরেও আমি তোদের সাথে আগে হয়ে কথা বলব? তোর যেমন আত্মসম্মান আছে, আমারও আছে। আমি এক্সপেকটেশন রেখেছিলাম, তুই এসে নিজের ভুল বুঝতে পারবি, করেছিস কিছু? আমি সেদিন এত মার খাওয়ার পরও বারবার বলছিলাম, আমার কথা শোন। আরে ভাই, একটা কুকুরও ঘেউঘেউ করলে মানুষ বুঝার চেষ্টা করে কি বলতে চাইছে। আর আমি এতোবার বলার পরও কেউ শুনলি না। বন্ধু খুন করলেও অন্য বন্ধুরা সাপোর্ট করে, আর আমি কারোর সাপোর্ট পাইনি। কেউ আসেনি ঠিক করতে, আমার দিক দেখতে। তোরা দূরত্ব করেছিস তাই তো আমিও দূরত্ব বাড়াতে অন্য কলেজে সিফট হয়েছিলাম। আমার এমন বন্ধুদের দরকার ছিলোনা….”

দুজনেই একে অপরের দিকে অভিমানের চোখে তাকিয়ে আছে। আস্তে আস্তে যেনো বরফ গলছে, হঠাৎ একজন আরেকজনকে ঝাপটে ধরে। আজ এত বছর পর তাদের রাগ-অভিমান ভেঙে হয়তো। বন্ধু যদি খাটি হয়, হাজার বছর পরও এক হবেই।

আসলে বন্ধুত্ব খুব নাজুক। ছোট্ট হাসি বন্ধুত্বকে গভীর করে, আর সামান্য ইগো অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করে। ইগো এলে সহজভাবে কথা বলা যায় না, মনে হয় প্রতিটি বাক্যের পেছনে লড়াই লুকিয়ে আছে। বন্ধু হয়ে মন খুলে কথা বলা না গেলে নীরবতাই বড় দূরত্ব। সেই অভিমান জমে পাহাড় হয়ে দাঁড়ায়, নিচে চাপা পড়ে হাসিখুশি স্মৃতিগুলো। বন্ধুত্ব টিকে থাকে আস্থা, খোলামেলা কথা ও ক্ষমার ওপর। কিন্তু ইগো, অভিমান, অবিশ্বাস আর তৃতীয় কারো কথায় বিশ্বাস এলে বন্ধুত্ব নিঃশব্দে ভেঙে যায়।

———

রাত ১০ টা খাওয়া-দাওয়া শেষ করে, সবাই নিজের রুমে। রুদ্র মেঘকে বুকে নিয়ে শোয়ে আছে। মেঘ রুদ্রের দাড়িতে আঙুল দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বলে,

-“একি হাল করেছেন নিজের, চুল-দাড়ি কেমন বড় বড় উস্কোখুস্কো হয়ে আছে।”

-“কোনদিকে দিন যেতো, কোনদিকে রাত হতো, খেয়ালই ছিলোনা। আবার নিজের খেয়াল। আমাকে ছেড়ে যেওনা মেঘ। তুমি ছাড়া আমি সত্যিই অসহায়। এই কটা দিন কিভাবে পার করেছি, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।”

মেঘ রুদ্রের চুলের ফাকে হাত বুলিয়ে বলে,

-“আমি আপনাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা কখনো ভাবিনি। তবে হঠাৎ আপনার ব্যবহার আমাকে তিলে তিলে কষ্ট দিচ্ছিলো। ভেবেছি আমি হয়তো আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলেছি। এসব নাটক কেনো করলেন?”

রুদ্র ফুস করে বলে,

-“সেদিন রাহুলের এক্সিডেন্টের সময় সাফা কলে ছিলো। এক্সিডেন্টের সময় রাহুলের মোবাইল রাস্তার পাশে পড়ে। তখন সে কারো কথা শোনে ফেলে, যা শোনে নিশ্চিত ছিলো এটা পরিকল্পিত। তোমাকে মারতে গিয়ে মাঝে রাহুল….”

একটু থেমে অপরাধী সুরে বলে,

-“মনে করেছিলাম, তোমাকে বললে হয়তো কেউ ধরে ফেলবে এটা নাটক। কারণ নিশ্চিত ছিলাম না, আশেপাশের সবার মধ্যে কে শত্রু। তাই আমি এবং সাফা ছাড়া আর কেউ জানতো না এই বিষয়ে। তবে ভাবতে পারিনি না বলার কারণে এতো বড় ঘটনা ঘটবে। তাহলে আরও আগেই বলতাম তোমাকে…”

রুদ্রের কথায় মেঘ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

-“যা হওয়ার হয়ে গেছে।”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে রুদ্র হঠাৎ বলে,

-“সেদিন মেডিকেল থেকে কল এসেছিলো, তোমার কিসের রিপোর্ট…”

মেঘ চমকে উঠে,

-“আপনি আনেন নি তো..”

-“কিসের রিপোর্ট ছিল মেঘ?”

মেঘ আমতা আমতা করে বলে,

-“মানে তেমন কিছু না…”

এবার রুদ্র শান্ত স্বরে বলে,

-“মেঘ, আমি তোমার স্বামী। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু দাম্পত্য নয়, একসাথে পথচলার গভীর বন্ধুত্বও। যেখানে বন্ধুত্ব থাকে, সেখানে গোপনীয়তা থাকার জায়গা নেই। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই উচিত জীবনের প্রতিটি দুশ্চিন্তা, আনন্দ, স্বপ্ন, দুর্বলতা একে অপরের সাথে খোলাখুলি ভাবে ভাগ করা। যে সম্পর্ক ছোট-বড় সবকিছু নির্দ্বিধায় শেয়ার করা যায়, সেই সম্পর্ক টিকে থাকে সবচেয়ে সুন্দরভাবে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে লজ্জা থাকলে দূরত্ব বাড়ে, কিন্তু খোলামেলা মনোভাব ও বিশ্বাস থাকলে সম্পর্ক অটুট ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। এতে ভুল বোঝাবুঝিও কম হয়।”

মেঘ চুপ করে থাকে। রুদ্র নরম সুরে বলে,

-“শোনো বউ, এটা কোনো ভয়ংকর রোগ না। একেবারেই সাধারণ একটা ইনফেকশন। এর মানে এই না যে তুমি খারাপ কিছুতে আক্রান্ত। খুব সহজেই ওষুধে ভালো হয়ে যায়। এর জন্য এতো ভয় পেতে হবে না। আর আমার কাছে সম্পর্ক মানেই শুধু শরীর না, বউ। তুমি আমার সাথে শেয়ার করতে, আমি কখনো ফোর্স করতাম না। যাই হোক আর কখনো কিছু লুকাবে না। আগে তোমার খুঁজ নেয়ার, চিন্তা করার লোক ছিল না। তবে এখন তোমার আছে, তোমার কিছু হলে এই রুদ্র শেষ হয়ে যাবে।”

মেঘের চোখ দিয়ে সুখের পানি গড়িয়ে পড়ে। নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে, এমন মানুষকে জীবনসঙ্গি হিসেবে পেয়ে। নিজের কাছেই প্রশ্ন করছে, “জীবনে কি এমন ভালো কাজ করেছি, যার ফলস্বরূপ উনাকে পেয়েছি?” এমন বুঝদার মানুষই চায় একজন মেয়ে তার জীবনে। যে যেকোনো পরিস্থিতিতে তাকে বুঝবে, বোঝাবে। শুধু স্বামী হিসেবে নয়, বন্ধু হিসেবেও পাশে থাকবে।

———

সাদকে সেই কখন থেকে সুমনা কল দিয়েই যাচ্ছে, কিন্তু ধরছে না। রেগেমেগে আগুন হয়ে আছে, কল ধরছে না দেখে। আজকে মজা বুঝাবে ভেবে আবারও কল লাগায়, তখনই রিসিভ হয় কল। সাথে সাথে সুমনা রেগেমেগে তেতিয়ে উঠে বলে,

-“এই কুদ্দুসের বাপ কল ধরিস না কেনো বেডা…”

সাথে সাথে অপাশ থেকে কেউ একজন কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে,

-“মা, আমি কুদ্দুসের দাদা, কুদ্দুসের বাপ বাথরুমে।”

সুমনা বড়সড় এক ঝাটকা খায়, চোখ বড়বড় করে একবার মোবাইলের দিকে তাকায়, না, নাম্বার ঠিক আছে। তার মানে সাদের আব্বু কল ধরেছে।  সাথে সাথে ফোন কানে দিয়ে তড়িগড়ি করে বলে,

-“আসসালামু আলাইকুম শশুড় আব্বা, ইয়ে মানে সরি আংকেল…”

অপাশ থেকে এনামুল চৌধুরী হেসে উঠেন, সুমনার বাচ্চামি দেখে, উনিও মজা করে বলেন,

-“ওয়ালাইকুম আসসালাম, বউমা, সরি মা…”

সুমনা এবার লজ্জায় একদম মনে হচ্ছে মাটির নিচে চলে যাবে। নিজেকে মনে মনে ইচ্ছে মতো গালি দিচ্ছে, এই পাতলা মুখে কিছু আটকায় না ছি ছি, কি না কি ভাবছেন। ভাবতে ভাবতেই ওদিক থেকে এনামুল চৌধুরী বলেন,

-“কুদ্দুসের বাপ চলে এসেছে, নেও মা, কথা বলো…”

বলেই সাদের হাতে কল দিয়ে হাসতে হাসতে চলে যান। এদিকে সাদ ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে, বাবা কি বলে গেলো সব মাথার ওপর দিয়ে গেলো। তারপর ফোনের দিকে তাকাতেই দেখে, সুমনা কল দিয়েছে। এবার যা বুঝার, বুঝে যায়। নিশ্চিত, এই মেয়ে কোনো গন্ডগোল পাকিয়েছে।

-“হ্যালো, এই আব্বু কল ধরেছিলো। আব্বুর সাথে কি কথা বলেছো? উল্টাপাল্টা কিছু বলোনি তো?”

সুমনা বেচারি কাদু কাদু কন্ঠে বলে,

-“আমি না, ইচ্ছে করে করিনি…”

একে একে সব বলতেই সাদ হাসতে হাসতে শেষ। সাদকে হাসতে দেখে সুমনা রেগে যায়,

-“আমি বাচিনা টেনশনে। এই বেয়াদব বেডা হাসে। এখন যদি তোমার আব্বু আমাকে মেনে না নেয়। যদি বলে এই সুমনা অরফে অসভ্য মেয়েকে আমি বেটার বউ করবো না। তখন আমার কি হবে এএএএএ…”

সুমনার বিলাপ শোনে সাদ কোনোরকমে হাসি থামিয়ে বলে,

-“আরে বলদ, বুঝোনি এখনো?”

-“কি?”

-“আব্বু তো রাজি, নয়তো তোমাকে কি বলতো বউমা?”

সুমনা অবাক হয়ে বলে,

-“সত্যি?”

-“আরে হো, জান…”

সুমনার খুশি ধরে কে। সাদ ও খুশি হয়ে বলে,

-“যাক, এই প্রথম একটা ভালো কাজ করলে। কথাটা এগিয়ে রাখলে এবার বললে রাজি হয়ে যা…”

সাদের কথা সাথে সাথে সুমনা চুপসে যায় ,

-“এই প্রথম ভালো কাজ করেছি মানে? তারমানে আগে যা করতাম সব খারাপ ছিলো? আর কথা বলবানা, ব্লক…”

বলেই রেগে-মেগে ধুম করে কল কেটে দেয়। এদিকে সাদ হেবলার মতো মোবাইলের দিকে তাকিয়ে। বুঝে উঠছে না, সে তো প্রশংসা করলো। এখন প্রশংসা করলেও দোষ।

-“শা*লার বউ না বেদনা, আমায় একটু বুঝেনা…”

———

এদিকে রিক ভিডিও কলে এসে এ নিয়ে ২০ বার কানে ধরে ফেলেছে, তাও মিষ্টির রাগ কমছে না। মূলত মিষ্টি একটা মেয়ের পিক দিয়েছিলো রিককে দেখতে। তারপর প্রায় ১০ সেকেন্ড পর তা ডিলেট করে ফেলে। তারপর জিজ্ঞেস করে, পেছনের দেয়ালের কালার কি? এবার তো রিক হকচকিয়ে যায়, সে তো খেয়াকই করেনি। এ নিয়ে লেগেছে ঝগড়া।

-“আরে জানু, মনু, বাবু, সুনু, টুনু, সরি বলছি তো…”

রিকের আজগুবি ডাক শোনে আরও রেগে উঠে মিষ্টি বলে,

-“এসব ফাউল ডাকের জন্য আরও ২০ বার কানে ধরবে। আর একটাও কথা বললে ১০ করে বাড়বে।”

রিক তো বেক্কল বনে যায়, মানে একটু রোমান্টিক ডাকই তো দিয়েছিলো।

-“এতো লোমান্টিক বয় হয়ে কি লাভ, গার্লফ্রেন্ড আমার রোমান্টিক ডাক বোঝেনা, হুহ…”

———

পিহু বেশ কিছুক্ষন ধরে আরামসে বসে আছে, সামনের বেডে ফোনটা রেখে। রিকের একটা ফেইক আইডির সাথে এংগেজড দিয়ে রেখেছে। এরপর থেকেই ফারহানের কল-মেসেজ আসছে, কিন্তু সে ধরছেই না। বেশ মজা লাগছে,

-“হাহ, আমি যখন ঘুরেছি তখন কেমন লেগেছিলো, বুঝো চান্দু।”

বেশ কিছুক্ষন পর এবার কল ধরবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। যা ভাবনা, তাই কাজ। আবার কল আসতেই কল রিসিভ করে। কল ধরতেই সাথে সাথে সেদিক থেকে গলা ভেসে আসে,

-“এই মেয়ে, তোর কি আমারে ছ্যাছড়া মনে হয়?”

-“না না…”

-“তো কল ধরছিলে না কেনো?”

-“এমনি..?”

-“এমনি মানে? ওই আইডি কার? এংগেজড দেওয়া মানে কি এসবের, পিহু? তুমি কি ফাইজলামি করছো?”

পিহু ভাবলেশহীনভাবে বলে,

-“সে যেই হোক, তাতে আপনার কি…”

-“পিহু, রাগ উঠাইও না, যদি সামনে পাই, গাল আস্ত থাকবেনা…”

-“তা তো থাকবেই না, কারণ…”

ফারহান ব্রু কুচকে প্রশ্ন করে,

-“কারণ..?”

পিহু গলা খাকারি দিয়ে গান ধরল,

-“তুমি হইলা পুরুষ মানুষ,

   আমি হইলাম নারী…

   আমি কি আর গায়ের জোরে

   তোমার সাথে পারি…..?”

বলেই ধুম করে কল কেটে দেয়। আর এদিকে ফারহান তাজ্জব বনে যায়। এই মেয়ে সিরিয়াস মুহুর্তেও বাদরামি অফ করবে না।

-“বেয়াদব মহিলা…”

চলবে……

[গল্প দিতে দেরি হওয়ায় খুবই খুবই দুঃখিত। তবে আজকের পর্বে কিন্তু আপনাদের আগের সেই হাসি-খুশি কাপল গুলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না।]

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply