Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬


#আড়ালে_তুমি |০৬|

#_সাইদা_মুন 

মেঘ ক্লাসে পা রাখতেই পিহু আর সুমনা যেন হাওয়ার বেগে তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চোখেমুখে উৎকণ্ঠা, কণ্ঠে প্রশ্নের ঝড়,

-“কি বলেছে স্যার?”

-“হঠাৎ ডেকে পাঠাল কেন?”

-“এত দেরিও হলো কেন?”

-“তুই কি কেঁদেছিস? মুখ এমন ফ্যাকাসে কেন লাগছে?”

-“স্যার বকা দিয়েছে বুঝি?”

প্রিয় বান্ধবীদের একের পর এক প্রশ্নে অতিষ্ট হয়ে ওঠে মেঘ। সে যেন এক দমবন্ধ করা জিজ্ঞাসার ভেতর আটকে গেছে।

-“বইন, তোরা এক এক করে জিজ্ঞাসা কর, এইভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লে কোনটা বলবো কোনটা না!”

পিহু গাল ভাড় করে বলে,

— “তাহলে উত্তরও একসাথে করে দে, তুই জানিস না কতটা টেনশনে ছিলাম আমরা।”

মেঘ খুলে বলে তার উপর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো।

সব শুনে তারাও টেনশনে পড়ে যায়, 

-“কিন্তু খবরটা দিল কে?”(পিহুর চিন্তিত কন্ঠ) 

-“জানি না,” 

মেঘ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে, 

-“তবে উনি বলেছেন খোঁজ নেবেন,আর অভিভাবক আনতে হবে না।”

সুমনা তখন নখ কামড়ে বলে,

-“তবে রুদ্র ভাইয়ার সাথে না জেনে এমন ব্যবহার করা ঠিক হয়নি, যতই হোক না কেন, উনি তো সিনিয়র!”

মেঘ মাথা হালকা উপরে উচিয়ে  দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে,

-“আমার কি করার? সেই মুহূর্তে মাথা যেন কিছু কাজই করছিল না।”

পিহু সান্ত্বনা দিয়ে বলে, 

-“থাক উনি বুঝবে হয়তো, আর পরে স্যরি বলে দিস তাহলেই হয়। 

মেঘ ছোট করে বলে 

-“হুমম….”

এইদিকে, রুদ্র প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি সামলায় ।আর জানতে পারে অনুপমা স্যারকে পুরো ব্যাপারটা জানিয়েছে।

প্রশ্নটা মাথায় ঘুরতে থাকে অনু কেনো বললো । সে আর দেরি না করে সরাসরি বন্ধুদের দিকে এগোয়।

সবাই প্রশ্ন নিয়ে বসে আছে কোথায় গিয়েছিল ক্লাস রেখে। 

রুদ্র কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা গিয়ে অনুপমার সামনে দাঁড়ায়। স্বাভাবিক তার কণ্ঠ, তবুও ভেতরে টনটনে একটা রাগ,

-“স্যারকে বললি কেন?”

অনু ভ্রু কুঁচকে তাকায়,

-“কি?”

রুদ্র ধীর অথচ কাঁচির মতো কাটা কণ্ঠে বলে,

-“মেঘ যে আমার মাথা ফাটিয়েছে…”

‘মেঘ’ নামটা শুনতেই অনুর মুখটা যেন রক্তবর্ণ ধারণ করে।

চোখেমুখে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়ায়।

-“হ্যাঁ, আমি বলেছি। কারণ কিছু মেয়েকে বিচার ছাড়া ছেড়ে দিলে তারা মাথার ওপর উঠে বসে!”

বাকিরাও অবাক অনুর কাজে, সায়ান বলে,

-“অনু আমাদের তো জানালিও না..”

-“জানানোর কি আছে যা সত্য তা বলে দিয়েছি শেষ। “

রুদ্র এবার গলার স্বর একটু শক্ত করে,

-“কিন্তু আমি তো সেদিনই সবাইকে বলেছিলাম, এসব যেন স্যারের কানে না যায়। তোর কানে কি যায়নি?আমার না বলার পরেও আমার ব্যক্তিগত কাজে কেনো ইন্টারফেয়ার করলি ?”

অনু হতচকিত।

-“রুদ্র, আমি তো তোর বন্ধু

-“বন্ধু হয়েছিস বলেই কি সাহস পেয়ে গেছিস?”

-“তুই ওই সামান্য একটা মেয়ের জন্য আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস?”

-“কথা সেটা না, কথা হচ্ছে আমার স্পষ্ট নিষেধ থাকা সত্ত্বেও তুই আমার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করলি কেন?”

অনুপমা যেন এক অচেনা রুদ্রকে দেখছে। অবিশ্বাস ভরা দৃষ্টিতে বলে,

-“রুদ্র, যা বলছিস ভাবনা-চিন্তা করেই বলছিস তো?”

-“ভেবেই বলছি।”রুদ্রর সোজা সাপটা উত্তর।

-“দুইদিনের একটা মেয়ে এসে তোর মাথা ফাটিয়ে দিলো, তুই কিছুই করলি না। আর আমি স্যারের কাছে পুরোটা বলেছি বলেই তুই আমার সাথে এমন ব্যাবহার করছিস? তর কাছে ওই মেয়ে বড়, না আমি?”

রুদ্র ঠান্ডা কিন্তু কঠোর কণ্ঠে বলে,

-“আমার কাছে আমার জবান বড়। আমি যা বলি, তার খেলাফ হলে সেটা আমি সহজে মেনে নিতে পারি না। কারন আমি অযথা কথা বলিনা। নেক্সট টাইম যদি এই ভুল আবার করিস তাহলে তুই যে আমার বন্ধু, সেটা ভুলে যেতে বাধ্য হবো।”

রুদ্র বেরিয়ে যায় ক্লাস থেকে। রাহুল এবার হতাশ হয়ে বলে,

-“তুই জানিস না রুদ্র কেমন সবার থেকে আলাদা, একরুখা টাইপের সে যা বলে তা না হলে কি করে জানিসই তো। হুদাই ফ্রেন্ডশিপে ঝামেলা লাগালি। 

অনু অবাক নয়য়ে দেখছে রুদ্র কে, তার ভেতর ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে এই কোন রূপ রুদ্রের। এই সামান্য একটা মেয়ের জন্য এমন করছে, 

-“তবে কি মেঘের জন্য আমি আমার রুদ্র কে হারিয়ে ফেলবো?”

বাকিরাও অনুকে রেখে রুদ্রের পিছে যায়। তবে মাঠের মাঝে আসতেই দেখে রুদ্র ততক্ষনে বাইক জিয়ে বেরিয়ে গেছে। সবাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। 

মেঘ ক্লাস শেষ করে সুমনা পিহুকে সঙ্গে নিয়ে মাঠের সাইডের গাছের নিচে যায়, যেখানে রুদ্ররা বসে। সে অনুতপ্ত, রুদ্রর সাথে এভাবে কথা বলায়। তাই একটা স্যরি বলা দরকার। 

তবে সেখানে এসে দেখে কেউ নেই,

-“কি ব্যাপার আজকে এখানে একটাও নেই।” সুমনা ব্রু কুচকায়।

-” হয়তো ক্যান্টিনে সব। “

পিহুর কথা শোনে ক্যান্টিনে যায়। সেখানে অনুকে দেখতে পায় একটা টেবিলে একা বসে আছে। তা দেখে মেঘ এগিয়ে যায়। মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,

-“আপু রুদ্র ভাইয়া কি চলে গেছে.. 

অনু মাথা তুলে দেখে মেঘ, এমনি এই মেয়ের উপর রেগে তার ওপর, সে এসে রুদ্রের কথা জিজ্ঞেস করছে। অনু দাঁড়িয়ে যায়। রাগের মাথায় হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে নিজের সর্বশক্তি লাগিয়ে, মেঘের গালে চড় মেরে বসে। 

চারপাশ মুহুর্তেই নিস্তব্ধতা নেমে আসে। 

হঠাৎ থাপ্পড়ের শব্দে আশেপাশের সব স্টুডেন্টস তাদের কথা থামিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে। 

মেঘ হতভম্ব। ঠোঁট কাপছে, গাল জ্বলছে, কিন্তু মুখে কোনো শব্দ নেই। 

পিহু সুমনা ছুটে আসে তার দিকে, 

-“আপনি মারলেন কেনো? ” পিহুর গলা কেপেঁ ওঠে ক্ষোভে। 

-“সিনিয়র বলে যা খুশি তাই করবেন।” সুমনারও চোখমুখ লাল। 

-“বেশ করেছি, তোদের এই ছোটলোক থার্ড ক্লাস বান্ধুবির জন্য আজকে এই প্রথম আমার এতো বছরের ফ্রেন্ডশিপে ঝামেলা হলো।

-“মুখ সামলে কথা বলবেন নয়তো সিনিয়র যে সেটা ভুলে যাবো।” 

-“কারে কি বলি সব তো এক ক্ষেতের মুলাই “

বলেই অনু চলে যায়। কিন্তু মেঘ অবাক তার কারনে উনার ফ্রেন্ডশিপে কি হলো সে কিছুই বুঝছে না। পিহু সুমনা মেঘকে সেখান থেকে নিয়ে চলে আসে। 

পিহুর রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে, 

-“চিন্তা করিসনা মেঘ এই মেয়ের সঠিক জবাব যদি আমি না দিয়েছি তবে আমিও পিহু চৌধুরী না। “

মেঘ তাচ্ছিল্য করে বলে, 

-“বাদ দে, এসব এ অভ্যাস আছে, হুদাই ঝামেলায় জড়াস না তরা। “

সুমনা মেঘকে চুপ দেয়,

-“চুপ বেশি সতী-সাবেত্রী সাজতে হবে না এই মেয়ের ক্লাস আমরা নিবোই। দেখ গালটা কি লাল করে ফেলেছে আঙুলের দাগ স্পষ্ট।” 

-“হয়েছে এবার নিজেদের বাসায় যা আমার দেড়ি হচ্ছে যেতে হবে।”

মেঘ তাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে। রিকশার জন্য দাড়াতেই একটা খালি রিকশা এসে হাজির, 

-“আপা উঠে পড়ুন কোথায় যাবেন। “

মেঘ বিষন্ন মনে উঠে পড়ে রিকশায় নিজের ঠিকানা বলে।  রিকশা চলতে থাকে তার আপন গতিতে। বাসার কাছে থামতেই মেঘ রিকশা থেকে নেমে ভাড়া বের করবে তার আগেই রিকশা চলে যাচ্ছে তা দেখে, 

-“এই মামা ভাড়া না নিয়ে যাচ্ছেন কেনো দাড়ান.।”

-“ভাবি ভাড়া লাগবো না ভাই দিয়ে দিছে।”

মেঘ হতবাক হয়ে যায়,

-“আবার সেই ভাই। কে এই ভাই যে এতো কিছু করছে আমার জন্য.. “

চলবে…..

(দেখি বলো তো কে এই ভাই হতে পারে..? )

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply