#আড়ালে_তুমি |৫৬|
#_সাইদা_মুন
সকাল ৬ টা বাজে মেঘের চোখে ঘুম নেই। রুদ্র কিছুক্ষণ আগে বারান্দা থেকে এসে শোয়েছে। সারা রাত বারান্দাতেই ছিল। তার সাথে ভালো করে একটা কথাও বলেনি। মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে। বারান্দায় পা রাখতেই নাক কুঁচকে যায়। নিচে সিগারেটের ছাই পড়ে আছে। হয়তো পুরো এক প্যাকেট শেষ করেছে। হতাশ হয়ে ঘর থেকে বের হয়। বাইরে যাবে মনটা ফ্রেশ করতে। তবে শাড়ি চেঞ্জ করতে হবে, তাই সারার রুমে নক করে। সবাই ঘুমিয়ে আছে। কয়েকবার নক করতেই সারা এসে দরজা খুলে। চুল মুছতে মুছতে বলে,
-“আরে মেঘ কিছু লাগবে…”
মেঘ সারাকে দেখে অবুঝের ন্যায় প্রশ্ন করে ফেলে,
-“এতো সকালে গোসল করে ফেলেছেন আপু..”
সারা দুষ্টু হেসে বলে,
-“কেনো তুমি বুঝি করোনা।”
সারার ইঙ্গিত বুঝতেই নিজেকে নিজে মনে মনে গালি দেয় কিসব প্রশ্ন করছিল ভেবে।
-“আপু আমার কাপড়ের ব্যাগটা দিন, চেঞ্জ করে একটু হাটঁতে বাইরে যাবো..”
মেঘের কথায় সারা ভেতর থেকে ব্যাগ নিয়ে আসে,
-“ধরো ফ্রেশ হয়ে আসো। আমিও যাবো, ড্রয়িং রুমেই আছি।”
মেঘ কাপড় নিয়ে নিজেদের ঘরে চলে আসে। বিছানায় চোখ যেতেই দেখে রুদ্র খালি গায়ে উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে। প্রায় ১০ মিনিটের মাথায় ফ্রেশ হয়ে বের হয়। তারপর সারার সাথে তাদের রিসোর্টের সামনের কাঁচা রাস্তায় হাঁটার উদ্দেশ্যে যায়।
সকালের ফ্রেশ পরিবেশ আশপাশটা সবুজে ঘেরা হালকা বাতাসে একটু একটু ঠান্ডাও লাগছে। দুজনেই টুকটাক কথা বলে এগোচ্ছে। হঠাৎ মেঘ একটা প্রশ্ন করে বসে,
-“আপু স্বামী স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক না হলে কি স্বামী বদলে যায়..?”
সারা একবার সন্দিহান চোখে তাকায় মেঘের দিকে। তারপর শান্ত গলায় উত্তর দেয়,
-“সব পুরুষই চেঞ্জ হয়ে যায় এমনটা নয়। অনেক স্বামী ধৈর্য ধরে স্ত্রীকে সময় দেয়, কারণ তারা বোঝে যে শারীরিক সম্পর্ক মানেই শুধু শরীর নয়, এখানে আবেগ, বিশ্বাস, স্বস্তি আর মানসিক প্রস্তুতি দরকার। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক না হয়, তখন স্বামী মানসিকভাবে হতাশ বা একাকী অনুভব করতে পারেন। এতে ঝগড়া, দূরত্ব, বিরক্তি এমনকি অন্যদিকে ঝোঁকার ঘটনাও ঘটতে পারে।”
মেঘ অনেক মনোযোগ দিয়ে সারার প্রতিটি কথা শোনে। লাস্টের কথাগুলো শোনে তার ভেতর ভয় লাগতে শুরু করে। মেঘকে মনমরা হতে দেখে সারা প্রশ্ন করে,
-“তোমাদের মধ্যে সব ঠিক আছে তো মেঘ..?”
মেঘ চমকে তাকায় আমতা-আমতা করে বলে,
-“হ…হ্যা।”
মেঘকে এমন অপ্রস্তুত হতে দেখে সারা কিছু একটা আন্দাজ করে বলে,
-“দেখো মেঘ, যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে নির্দ্বিধায় বলতে পারো আমাকে।”
-“না না আপু তেমন কিছু না। ওই আরকি ফেসবুকে একটা ভিডিও দেখেছিলাম তাই মনে প্রশ্ন জাগলো..”
সারাও আর ভাবে সত্যিই বলছে। তাই আর মাথা ঘামায়নি। টুকটাক কথায় সারা জিজ্ঞেস করে,
-“আচ্ছা তোমার মতে রুদ্র কেমন?”
সারার প্রশ্নে মেঘের মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠে। সে আনমনেই বলতে লাগে,
-“উনি অনেক কেয়ারিং একটা মানুষ। বেস্ট হাসব্যান্ড ফর এভাররর। উনি আমার ছোট বড় সব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখেন। আমাকে ভালো রাখতে, খুশি রাখতে সর্বদা চেষ্টা করেন। এক কথায় উনি হাসব্যান্ড ম্যাটেরিয়াল..”
মেঘের কথায় সারা হেসে বলে,
-“বাহ বাহ তার মানে রুদ্রের প্রেমে ভালো করেই পড়েছো।”
এর মধ্যে কারো উপস্থিতিতে দুজনেই পেছন ঘুরে তাকায়। দেখে রাহুল আসছে তাদের দিকেই। রাহুলকে দেখে সারা ভ্রু কুঁচকায়,
-“কিরে ঘুম শেষ..?”
রাহুল তাচ্ছিল্য করে বলে,
-“ঘুম হলে তো শেষ হবে..”
সারা রাহুলকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে,
-“কেনো ঘুম হয়নি? আচ্ছা কি হয়েছে রে তোর, কেমন চেঞ্জ হয়ে গেছিস আগের আমাদের সেই হাসিখুশি রাহুলকে এখন কেমন জানি অপরিচিত লাগে।”
রাহুল ম্লান হেসে বলে,
-“ধুর তোদের মনের ভুল। আমার কিছু হয়নি, এমনি মাথা ব্যথায় ঘুম হচ্ছিল না..”
সারা চিন্তিত হয়ে বলে,
-“তো আমাকে বললি না রাতে, মুভ ছিল আমার কাছে, লাগালে আরাম লাগতো একটু..”
-“হো রাতে কাপলদের মাঝে কাবাবে হাড্ডি হতে যাবো..”
সারা একটা কিল বসায় রাহুলের কাঁধে,
-“ঢং কমাই কর। দাঁড়া আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসি তিনজনে মিলে আড্ডা দিবো।”
সারা চা বানানোর উদ্দেশ্যে চলে যেতেই মেঘ রাহুল নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ায়। মেঘ এক ধ্যানে নদীর স্রোতের দিকে তাকিয়ে আছে। সে ভাবছে অন্য কিছু, অন্য চিন্তা। হঠাৎ রাহুলের ডাকে ধ্যান ভাঙে,
-“কেমন আছো মেঘ..?”
মেঘ আলতো হেসে বলে,
-“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া, আপনার কি অবস্থা?”
-“আমিও আছি একরকম..”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাহুল মেঘের দিকে তাকায়, কি মায়ায় ভরা মুখ। এই মুখের দিকে তাকালেই তো যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়। সে তো আসতে চাইছিল না এই কারণেই। রুদ্রের সাথে মেঘকে দেখলে নিজেকে আর সামলাতে পারে না। রুদ্রের প্রতি ক্ষোভ জন্মায়। কালকের পর থেকে তো রুদ্রের সাথে কথাই বলছে না। রুদ্র যদি মেঘকে প্রথম থেকেই ভালোবেসে থাকে তবে রাহুলকে বলতে সমস্যা কি ছিল। তাহলে অন্তত নিজেকে আগে থেকেই গুটিয়ে নিতো। গভীর এক নিশ্বাস ফেলে অনুভূতিহীন কণ্ঠে মেঘকে জিজ্ঞেস করে,
-“তোমরা সুখে আছো তো মেঘ..?”
মেঘ হঠাৎ এমন প্রশ্নে চমকে তাকায়। রাহুল এমন প্রশ্ন কেন করলো ভাবছে। নিজেকে সামলে বলে,
-“জি ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ।”
এর মধ্যেই সারা চা নিয়ে হাজির হয়। তারপর বেশ অনেকক্ষণ সবাই নদীর পাড়ে বসে আড্ডা দেয়। তারপর গিয়ে মেঘ সারা মিলে নাস্তা বানাতে লাগে সবার জন্য।
———
একে একে সবাই উঠে গেছে। একেকজন ফ্রেশ হচ্ছে। সুমনাকে তো পিহু টেনে-টুনে তুলেছে, এমন ঘুম দিচ্ছিল। বেচারি আরেকটু ঘুমাতে চেয়েছিল। আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ায়, চোখে এখনো ঘুম। তাদের ওয়াশরুমে পিহু ঢুকেছে তাই অন্য রুমে যাওয়ার জন্য বের হয়। ওড়না গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে পাশের রুমে উকি দিতেই দেখে কেউ নেই। সেই ওয়াশরুম খালি ভেবে রুমে পা দেয়। তবে ভেতরে যেয়ে দেখে এতে ও কেউ আছে। বিরক্ত হয়ে আসতে নেয়, তবে সাদের ডাকে পেছন ফিরে,
-“ঘুম ভেঙেছে ম্যাম..”
সাদ বারান্দার দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মুখে মুচকি হাসি। সুমনা পেছন ফিরতেই সাদের চোখ যায় তার দিকে। চুল উসকোখুস্কো হয়ে আছে, ঘুম ঘুম চোখ, মুখটা ফোলা ফোলা। এমনিতেই গুলুমুলু এখন আরও টমেটো লাগছে যেন। সাদের যেন হার্টবিট মিস যায়। সুমনা এগিয়ে এসে বলে,
-“ওয়াশরুম ফাঁকা কিনা দেখতে এসেছিলাম।”
সাদ আরেকটু এগিয়ে সুমনার দুই গাল দুই হাতের আজলায় নিয়ে মুখটা উপরে তুলে বলে,
-“তোমাকে অনেক কিউট লাগছে জান, ইচ্ছে করছে একদম খেয়ে ফেলি।”
সুমনা চোখ বড় বড় করে তাকায়,
-“আরে ছাড়ো কেউ চলে আসবে। কিসব বলে ছি ছি ছাড়ো।”
সাদ ছাড়ে না, উল্টো তার ফোলা ফোলা গাল চেপে ধরে, টানা কয়েকটা চুমু বসিয়ে দেয়। সুমনা তো লজ্জায় চোখ বুজে নেয়।
-“এহেম উহুম, এখানে সিঙ্গেলরাও উপস্থিত আছে। দেখেশুনে কাজ করা উত্তম।”
হঠাৎ কারো গলায় দুজনেই হকচকিয়ে ছিটকে দাঁড়ায়। তাকিয়ে দেখে রিক ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে। তাদের লজ্জা পেতে দেখে রিক ঘর থেকে বেরোতে বেরোতে টিটকারি মেরে বলে,
-“ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না…”
———
রিক দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। বুকে টিপটিপ ব্যথা করছে। চাইলেও কি সব কিছু মেনে নেওয়া যায়? চোখের সামনে নিজের চাওয়া মানুষটাকে অন্যের প্রেয়সী হতে দেখা। এটা কি খুব সহজ ব্যাপার? সে নিজের মনকে কন্ট্রোল করার পুরোপুরি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবুও মনের এক কোণে প্রশ্ন থেকেই যায়, সাদের জায়গায় যদি আমি থাকতাম খুব কি বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো? রিকের কাছে বর্তমানে, অনুভূতিকে খুব ভয়ঙ্কর অস্ত্র লাগছে। যা তাকে বারবার আঘাত করছে। মনে মনে আওড়ায়,
-“তুই যাকে ভালোবেসেছিস সে তোকে ভালো না বাসলেই বা কি? তোকে ভালোবাসার মানুষ তো আছে রিক।”
কথাটা ভাবতেই মিষ্টির হাসিখুশি মুখ ভেসে উঠে চোখের সামনে। তার পাগলামি, তার দুষ্টুমি সব যেন ভাসতে থাকে। মুহূর্তেই মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠে। নিজেকে নিজে বলে উঠে,
-“আমাকে ভালোবাসতে মিষ্টি আছে, আমার মিষ্টি। যার মনে একান্তই আমার বসবাস। তাকে কষ্ট দিবো না, দিবো না… সব চিন্তা ঝেরে ফেলবো মাথা থেকে…”
তখনই মিষ্টির গলা ভেসে আসে। মনের ভুল ভেবে সেভাবেই তাকিয়ে মুচকি হেসে নিজের মাথা চুলকায়,
-“এখন দেখছি তার গলাও কানে বাজছে…”
তবে আবার কর্কশ গলায় রিক দ্রুত পেছনে তাকায়। মিষ্টি দাঁড়িয়ে এক হাতে চায়ের কাপ, অন্য হাত কোমরে, ভ্রু কুঁচকে আছে। তাহলে কি ভুল শোনেনি! এদিকে মিষ্টি রাগী গলায় বলে,
-“কি সাহেব, আপনাকে কি মাইক দিয়ে ডাকলে তারপর শুনবেন..?”
রিক দ্রুত বলে,
-“আরে না না, আসলে খেয়াল করিনি..”
রিকের হাতে কাপ ধরিয়ে মিষ্টি বলে,
-“খেয়াল কই থাকে শুনি?”
মিষ্টিকে টেনে এনে নিজের ঠিক সামনে দাঁড় করিয়ে রিক ফিসফিসিয়ে বলে,
-“এতক্ষণ খেয়াল ছিলো অন্যদিকে। তবে এখন আমার ফিউচার ওয়াইফের দিকেই আটকে গেছে।”
মিষ্টি মুচকি হেসে রিকের কলার ঠিক করে বলে,
-“বাহ রিক সাহেব, আপনি দেখছি দিনদিন রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছেন। তা আমি তো কোনো ক্লাস নেইনি..”
রিক মাথাটা নিচু করে মিষ্টির বরাবর এনে বলে,
-“এমন সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড থাকলে কে-ই বা আনরোমান্টিক থাকতে চায়। একটু তো নিকনিক করতে মন চায়..”
রিকের কথায় মিষ্টি তাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে আসে। যেতে যেতে বলে,
-“লুচ্চা রিক সাহেব, বিয়ের আগে টাচ করলে খবর আছে বলে রাখলাম।”
রিক হেসে উঠে। মনটা ভীষণ ফুরফুরে লাগছে। বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেয়।
———
রুদ্রকে ডাকতে এসে দেখে সে বিছানায় মাথা ধরে বসে আছে। চোখ লাল হয়ে আছে। সারারাত ঘুমায়নি তাই হয়তো। তা দেখে দ্রুত মেঘ এগিয়ে যায়,
-“কি হয়েছে আপনার?”
রুদ্র একপলক মেঘের দিকে তাকিয়ে ফের চোখ সরিয়ে নেয়। শান্ত কণ্ঠে বলে,
-“মাথা ধরেছে, একটু কফি বানিয়ে দাও..”
মেঘ সাথে সাথে কফি বানাতে চলে যায়। এদিকে রুদ্র বালিশে হেলান দিয়ে বসে। হঠাৎ মোবাইলে মেসেজ আসে,
“মাঝে মাঝে নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে, ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে দেওয়া উত্তম।”
রুদ্রের ভ্রু কুঁচকে যায়। এই মেসেজ কে দিলো? নাম্বারটা অপরিচিত। সাথে সাথে কল লাগায়, তবে অফ দেখায়। এর মধ্যেই মেঘ কফি নিয়ে হাজির হয়। তাই আর বেশি মাথা না ঘামিয়ে কফিতে চুমুক দেয়। মেঘ আবার বের হয়ে যায়। তারপর ফিরে আসে মুভ নিয়ে। বিছানায় উঠে রুদ্রের পাশে বসে তার কপালে মালিশ করতে থাকে। এতে রুদ্রের বেশ ভালোই লাগছে। কফি শেষ করে মাথা রাখে মেঘের কোলে। তার পেটে মুখ গুঁজে এক হাতে কোমর পেঁচিয়ে ধরে বলে,
-“চুল টেনে দাও…”
মেঘ মুচকি হেসে তাই করে। চুল টেনে দিতে থাকে। এভাবেই রুদ্র ঘুমিয়ে যায় আবার।
———
-“শুনুন না…”
-“কি?”
-“একটা প্রশ্ন ছিলো..”
ফারহান ভাবলেশহীনভাবে বলে,
-“একটা প্রশ্ন তো করেই ফেলেছো। এবার যাও..”
পিহু চোখ মুখ কুঁচকে ভেবে বলে,
-“তাহলে দুইটা প্রশ্ন..”
-“এইটা নিয়ে দুটো প্রশ্ন হয়ে গেলো..”
ফারহানের এসব কথায় পিহু এবার রেগে যায়,
-“আরে ধুর মশাই, আপনি মিয়া ফাজলামি করেন আমার সাথে? আমি সিরিয়াস..”
এবারও ফারহান একইভাবে বলে,
-“ওকে, বুঝলাম..”
তখনই ফারহানের মোবাইল বেজে উঠে। ফারহান কল রিসিভ করতে যাবে, তার আগেই মেয়েলি নাম দেখে পিহু টান মেরে নিয়ে নেয়। কল ধরেই বলে,
-“হ্যালো, কে..?”
পিহুর গলা শোনে ওপাশের মানুষটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
-“তুমি কে? আমার ফারহান বেবি কোথায়?”
কথা শোনতেই পিহু চমকে যায়। দ্রুত রেগে বলে,
-“এই কে রে, তুই। ফারহান বেবি মানে কি?”
এদিকে পিহুকে তুই-তাকার করতে দেখে ফারহান মোবাইল কেড়ে নেয় রেগে বলে,
-“এসব কোন ধরনের ব্যবহার পিহু? কিছু বলিনা বলে কি মাথায় উঠে যাচ্ছো?”
ফারহানের এমন কথায় পিহু চুপসে যায়। ফারহানের বলা পরের লাইনটুকুতে বেশ খারাপ লাগে তার। তবুও কড়া গলায় বলে,
-“তো, সে আপনাকে বেবি বলছে কেনো?”
ফারহান গম্ভীর গলায় বলে,
-“আমাকে যা খুশি বলবে, তাতে তোমার কি?”
পিহু অবাক হয়ে বলে,
-“যা খুশি বলবে মানে। সে কি আপনার গার্লফ্রেন্ড যে বেবি ডাকবে? হুদাই কে…”
পিহু বাকি কথাটুকু বলার আগেই ফারহান বলে উঠে,
-“হ্যা, সে আমার গার্লফ্রেন্ড হয়েছে শোনা? তার সাথে আমার বিয়েও ঠিক। এবার সামনে থেকে বিদেয় হও। যদি মান-সম্মান থাকে তাহলে আর দ্বিতীয়বার আমার সামনে আসবে না।”
এদিকে পিহু হতবাক, দু’কদম পিছিয়ে যায়। সে যেন এক ঝটকা খেয়েছে। ফারহানের বিয়ে ঠিক? কানে বারবার বাজছে কথাটা। পিহুকে যেন কেউ ভেঙে চুরে দিচ্ছে। অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে।
ফারহান আবার ঝাড়ি মেরে উঠে,
-“কি হলো, যাচ্ছো না?”
পিহুর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
-“আপনার বিয়ে যেহেতু ঠিক, তাহলে আমাকে বললেন না কেনো? আমাকে চান্স দিলেন কেনো আপনার আশেপাশে আসার?”
ফারহান সোজাসাপ্টা বলে,
-“আমি আমার পার্সোনাল ব্যাপার যারতার সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছুক নই..”
ফারহানের প্রত্যেকটা কথাই যেন পিহুর বুকে সুই গাঁথার মতো যন্ত্রণা দিচ্ছে। চোখ বেয়ে অবাধ্য জল গড়িয়ে পড়ছে। আজ ফারহান যেনো তাকে তার জীবনের সব থেকে বড় দুঃখটাই দিয়েছে। পিছুতে পিছুতে বলে,
-“আর কোনোদিন আমার এই চেহারাও আপনার সামনে আসবে না। দোয়া করি সুখী হন, অনেক অনেকককক…”
———
দুপুর ৩ টার দিকে সবাই বাসায় আসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। এর মধ্যে পিহু একবারও ফারহানের সামনে যায়নি। সবাই বেশ চিন্তিত পিহুকে নিয়ে। হঠাৎ কেমন চুপচাপ মনমরা হয়ে গেছে। জিজ্ঞেস করলে বলছে শরীর খারাপ লাগছে। তাই আরও রুদ্র তাড়া দেয় বাড়ি ফিরতে। একে একে সবাই উঠে পড়ে গাড়িতে। গাড়িও চলতে শুরু করে। প্রায় ১ ঘণ্টা পর গ্রাম পেরিয়ে শহুরে রাস্তায় উঠে গাড়ি। আশেপাশে আর সেই সবুজ শ্যামলা পরিবেশ নেই। দোকানপাট, বড় বড় বিল্ডিং, গাড়ি-ঘোরাই চোখে পড়ে। বেশ আরও কিছুদূর যাওয়ার পর সামনের দুই গাড়ি দাঁড়াতে দেখে রুদ্ররাও দাঁড়িয়ে যায়। রুদ্র বাকিদের গাড়িতে রেখে নিজে নেমে সামনে যায় দেখতে কি হয়েছে।
-“কোনো সমস্যা?”
রুদ্রের কথায় সায়ান বলে,
-“না না, ওই আরকি, ওরা বলছে ফুচকা খাবে তাই এখানে দাঁড় করালাম। পিহুরা কই, ওদের নিয়ে আয়।”
মিষ্টি গিয়ে ওদের বলতেই ওরাও নেমে আসে। ফুচকার দোকানের সামনে বসে আছে সব মেয়েরা। আর ছেলেরা দাঁড়িয়ে আছে। ছোটখাটো দোকান, চেয়ার বেশি নেই তাই আর কি। ফুচকা খেতে খেতে মেঘ বারবার রাস্তার অপরপাশে তাকাচ্ছিলো। তা দেখে রুদ্রও সেদিকে তাকায়। দেখে একটি আইসক্রিমের ভ্যান। ভ্রু কুঁচকে মেঘকে জিজ্ঞেস করে,
-“আইসক্রিম খাবে?”
মেঘ সাথে সাথে মাথা নেড়ে হ্যা বলে। তা দেখে রুদ্র আশেপাশে তাকায়। তেমন দোকানপাট নেই।
-“এদিকে তো বড় কোনো দোকান নেই। আচ্ছা, সামনে থেকে নিয়ে আসছি।”
মেঘ রুদ্রের হাত ধরে থামিয়ে বলে,
-“ওইতো, এখানেই আছে, দোকানে যেতে হবে কেনো?”
রুদ্র নাক কুঁচকে বলে,
-“এগুলো খাবে?”
-“হ্যা।”
-“না না, এগুলো ভালো না, কি না কি পানি দিয়ে বানায়।”
রুদ্রের নাকুচ কথায় মেঘ বায়না ধরে বসে,
-“না না, এগুলোও অনেক মজা। এনে দিন না, প্লিজ প্লিজ..”
মেঘের কথায় আর না পেরে উঠে যায়,
-“আচ্ছা, এখানেই থাকো, আমি নিয়ে আসছি।”
রুদ্র যায় আইসক্রিম আনতে। সেখানে অনেকগুলো বাচ্চাও ভিড় করেছে আইসক্রিম কিনতে। মেঘ তা দেখছে আর খাচ্ছে। এর মধ্যেই অর্ণব এসে দাঁড়ায় মেঘের সামনে। মেঘ মাথা তুলে তাকাতেই বলে,
-“ভাবি, রুদ্র ডাকছে আপনাকে..”
মেঘ ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“কই, উনি তো বললেন এখানেই থাকতে।”
-“আরে না, আমাকে একটু আগে ইশারা দিয়ে বললো যেতে। হয়তো কোন ফ্লেভারের আইসক্রিম খাবেন সেটাই জানতে..”
মেঘ আর প্রশ্ন না করে উঠে দাঁড়ায় রুদ্রের দিকে যেতে। রাস্তার দুইপাশে ভালো করে দেখে নেয়। গাড়ি চলমান, তবুও সাবধানে দেখে দেখে এগোচ্ছে। অর্ধেক রাস্তায় হঠাৎ চোখে পড়ে বড় একটা দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসা ট্রাক। তা দেখে সে একটু থেমে যায়। ভাবে ট্রাকটা তো সামনে ডানে দিয়েই যাবে, তারপর নাহয় সে বাকি রাস্তা পার হবে। কিন্তু ট্রাকটি সামনে আসতেই হঠাৎ ব্রেক ঘুরিয়ে মেঘের দিকে আসতে থাকে। তা দেখে মেঘ চমকে উঠে, পা যেন থেমে গেছে, নড়তেও পারছে না। চোখের সামনে ভেসে উঠে তার বাবার মুখটা মনে পড়ে যায় সেই দূরঘটনার কথা। এদিকে বাকিদের মেঘকে চোখে পড়তেই সবাই আতঙ্ক নিয়ে সাথে সাথে চিৎকার করে উঠে,
-“মেঘ, সাইড হও”
মেঘের নাম ধরে চিৎকার শুনে রুদ্র সাইডে তাকানোর সাথে সাথেই চোখের নিমিষেই ট্রাকটি কাউকে ধাক্কা মেরে চলে যায়। রুদ্রের কিছুটা সামনে এসে ছিটকে পড়ে এক নিথর দেহ। পড়ার সাথে সাথেই রক্তে ভেসে যায় আশপাশ। রুদ্রর যেন দুনিয়া থমকে গেছে। হাতে থাকা আইসক্রিম পড়ে গেছে। হাত কাঁপছে প্রচণ্ডভাবে। সামনে আগানোর সাহস হচ্ছে না। তাও একপা একপা করে সামনে এগোচ্ছে। মনে মনে আওরাচ্ছে “আল্লাহ এটা সত্যি না, এ..এটা যেনো স্বপ্ন হয়”….
চলবে…….
[ কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না। আর ভুল-ত্রুটি দেখলে অবশ্যই ধরিয়ে দিবেন। শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবো। ]
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪১
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৬
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩০
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৮
-
আড়ালে তুমি পর্ব -২৯
-
আড়ালে তুমি গল্পের লিংক সাইদা মুন
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৮