#আড়ালে_তুমি |৫৫|
#_সাইদা_মুন
শুক্রবার সকাল ৯টা। সবাই ঠিক সময়মতো রেডি হয়ে বসে আছে। রুদ্র, মেঘ, পিহু, সাদ, তাহমিদ সবাই একসাথে বসে আজকের পিকনিকে যাওয়ার অপেক্ষা করছে। এর মধ্যে টুকটাক নাশতাও সেরে ফেলে সবাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ির হর্ন বেজে উঠে, সায়ানরা এসেছে। বড়দের কাছে বিদায় নিয়ে নিচে নামতেই চোখে পড়ে ৩টি মাইকো। সুমনা, রিকও এসেছে, যাদের আসা মূলত মেঘ আর পিহুর অনুরোধে। রুদ্ররা তাদের ফ্রেন্ডস নিয়ে মজা করবে, আর তারা বসে বসে দেখবে নাকি।দুইটি মাইকো ফিলাপ আর লাস্টেরটা তাদের জন্য খালি।সায়ান সামনের গাড়ির ফ্রন্ট সিট থেকে মাথা বের করে রুদ্রকে বলে,
-“ওই গাড়িতে উঠে পড়।”
সায়ানের কথায় একে একে সবাই গাড়িতে উঠে বসে। সায়ানদের গাড়িগুলো রওয়ানা দিয়েছে। তাদের মাইক্রোর পেছনের সিট দখল করে নেয় সাদ, রিক আর তাহমিদ। মাঝের সিটে ঘেঁষে বসে সুমনা, মেঘ, পিহু আর সামিয়া। সামনে, ড্রাইভারের পাশেই বসেছে রুদ্র।
শহরের কোলাহল পেরিয়ে গাড়ি গ্রামের আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে এগোতে থাকে। চারপাশের দৃশ্য যেন একেবারে অন্য জগতে নিয়ে যাচ্ছে সবাইকে। মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সবুজ ধান, কোথাও গরুর গাড়ি, কোথাও মানুষ চাষ করছে। জানালা দিয়ে আসা হাওয়ার সঙ্গে মাটির ঘ্রাণ মিশে যাচ্ছে, পুরোপুরি গ্রামীণ পরিবেশের অনুভূতি।
গাড়ির ভেতর হই-হুল্লোড়, কেউ গান গাইছে, কেউ হাবিজাবি খাচ্ছে, চিপস, বাদাম, ঠান্ডা সব মিলিয়ে চলছে খাওয়া-দাওয়া আর মজা। একেকজন একেকজনকে পিঞ্চ মারছে মজা উরাচ্ছে। এভাবেই প্রায় দুই ঘণ্টার জার্নি শেষে গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছায়। সবার চোখ-মুখে ফুটে ওঠে উত্তেজনা আর আনন্দ।
তারা পৌঁছায় একটি রিসোর্টে, যা গ্রামীণ পরিবেশের মাঝেই অবস্থিত। দূরদূরান্তের শহর থেকে মানুষ আসে এখানে এক বা দুই দিন পরিবারসহ থাকবার জন্য। আজ সবাই এখানেই থাকবে। সবাই একে একে নামতে নামতে চোখে পড়ে রুদ্রের সব বন্ধুদের, তাদের সঙ্গে সারা ও তার বোন মিষ্টিও আছে। মিষ্টি দৌড়ে আসে মেঘদের দেখে। এর মাঝেই সবাই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়, যার যার রুমে। কাপলদের জন্য আলাদা দুইটি রুম, বাকি চারটি রুমে ভাগাভাগি করে থাকবে সবাই।
ফ্রেশ হতে হতে ১২টা বেজে যায়। সবাই রান্নার আয়োজন শুরু করে। আজ ছেলেরা রান্না করবে। পিহু আসার পর থেকে এদিকসেদিক ঘুরছে, ভাবছে ফারহান কোথায় গেলো, গাড়ি থেকে নামার পর আর দেখেনি। কল্পনায় ব্যস্ত হয়ে একটু সাইডে চলে আসে। আশেপাশের পরিবেশ দেখে, রিসোর্টের পাশের ছোট নদীটি দেখতে পেয়ে মোবাইল বের করে ছবি তুলতে শুরু করে। হঠাৎ পুরুষালি গলায় চমকে যায় পিহু,
-“তা এখন নিশ্বাস কিভাবে নিচ্ছো?”
পেছন ঘুরে দেখে ফারহান দুই হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে। ফের বলে,
-“কি হলো, নিশ্বাস কিভাবে নিচ্ছো?”
পিহু থমথমে মুখে তাকিয়ে থাকে, কিছুই বুঝে না। আমতা-আমতা করে বলে,
-“মানে কি বলছেন, বুঝছি না…”
ফারহান কুচকে বলে,
-“কাল না মেসেজ দিলে, ‘মেসেজ দিন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে’। কে দিয়েছিলো এই মেসেজ?”
পিহু চমকে যায়, রাতের কথা মনে পড়ে সাথে সাথে কিছুটা লজ্জায় পড়ে যায়। মোবাইলে যাই উলটা পালটা মেসেজ দিক সামনা সামনি তো বলতে পারবে না। এদিকসেদিক তাকাতে থাকে।
-“আমি তো ভাবলাম, শ্বাস না নিয়ে মরেই গেছো। কিন্তু এখনো বেঁচে আছো যে…”
ফারহানের ঠাট্টার গলায় পিহুর হঠাৎ অভিমান হয়। মুখ চুপসে শান্ত গলায় বলে,
-“মরে গেলেই হয়তো আপনি খুশি হতেন। দোয়া করেন, মরে যাই যেনো আপনাকে রেহাই দিই…”
বলেই চলে যেতে নেয়। তবে কথাটা ফারহানের বুকে তিরের মতো লাগে, পিহুর হাত ধরে আটকে দেয়। এক টানে তার সামনে এনে দার করিয়ে বলে,
-“একদম আমাকে রাগ দেখাবে না..”
পিহু তাকিয়ে জোরে বলে,
-“দেখাবো দেখাবো, তো কি করবেন..”
ফারহান কিছু বলতে যায় তখনি তার মোবাইলে কল আসে। ফারহান তা ধরতে যাবে তার আগেই পিহু ছো মেরে মোবাইল নিয়ে নেয়,
-“হ্যালো কে..? “
-“ফারহান ভাই..”
-“ফারহান বেপি নাই আই এম হার ওয়াইফ স্পিকিং, সে হোয়াট ইজ ইউর সমস্যা, এন্ড গেট লস্ট..”
ফোনের অপর পাশের ছেলেটি অবাক হয়ে নামাবার চেক দিয়ে আবার কানে ধরে,
-“আরে আজব আপনি কে ফারহান ভাইয়ের মোবাইলে।”
-“আপনাগো ভাবি ভাবি, আপনার আনরোমান্টিক ভাইয়ের লগে ইটিশপিটিশ করতেছি। পরে কল দিয়েন দেবরজি।”
বলেই কল কেটে দেয়। পিহু এবার ফারহানের হাতে ফোনটা দেয়। ফারহান রাগী চোখে তাকিয়ে আছে,
-“কি করলে এটা?”
পিহু তার কথায় পাত্তা না দিয়ে চুল এদিক থেকে সেদিক করে যেতে যেতে গায়,
“তোমার যতো ভাই ব্রাদার ডাকবে আমায় ভাবি,
আমার শাড়ির আঁচকেতে থাকবে ঘরের চাবি..”
ফারহান পিটপিট করে তকিগে আছে তার যাওয়ার পানে। তারছিড়া মেয়ে মাত্র রাগ দেখায় আবার মাত্রই মুড চেঞ্জ বাধরামি শুরু। মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে সেই চিরচেনা শব্দ,
-“বেয়াদব মহিলা”
এদিকে দূর থেকে কেউ একজন এই সব কিছু পর্যবেক্ষন করছিলো।
———
দুপুর ২টা বাজে। ছেলেরা পাশের মসজিদ থেকে নামাজ আদায় করে এসে রান্নায় হাত দেয়। মেয়েরা সব কেটে-কুটে ঘুচিয়ে রেখেছে। রুদ্র রান্না করছে, বাকিরা সাহায্য করছে। মেঘ অবাক হয়ে দেখে বলে,
-“আপনি রান্নাও পারেন?”
পাশ থেকে শান্ত বলে,
-“ছি ভাবি, ছি, জামাই কি কি করতে পারে জানেনই না দেখছি। আমাদের রুদ্র তো পাক্কা রাঁধুনি। কলেজ লাইফ থেকেই পিকনিকে গেলে সেই রাধে।”
মেঘ কিছুটা লজ্জিত হয়। ইট দিয়ে চুলা বানিয়ে রান্না করছে, ধোঁয়া উড়ছে। মেঘ সামনে বসে দেখছে, রুদ্র কি সুন্দরভাবে চামচ নাড়ছে। পড়নে হাত কাটা গেঞ্জি, বডি যেন পুরো উন্মুক্ত। মেঘ কিছু বলছে না, চুলার সামনে অনেক গরম সেজন্য, নয়তো এতক্ষনে ঝারি দিয়ে চেঞ্জ করাতো।
-“অন্যদিকে যাও…”
রুদ্রের কথায় মেঘের ধ্যান ভেঙে যায়। ব্রু কুচকে বলে,
-“কেনো এখানে থাকি না…”
রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-“এখানে ধোঁয়া উড়ছে, শ্বাসকষ্ট হবে। যাও, অন্যদিকে।”
বাধ্য হয়ে মেঘ চলে যায় পিহুদের কাছে। এদিকে সবাই মিলে কিছু প্ল্যান করছে। তা দেখে মেঘ এগিয়ে যায়। দেখে রিকের হাতে ম্যাচ লাইট, তাহমিদের হাতে বোমা। তাহমিদই এনেছে এগুলো ফাটাতে। পাশে সুমনা, পিহু, মিষ্টি, সারা, সামিয়া দাঁড়িয়ে। মেঘ আসতেই রিক সবাইকে বলে,
-“শোন, সবাই গাছের আড়ালে থাকো। আমি আগুন ধরিয়ে এখানে রেখে আসছি। এইটা অনেক ডেঞ্জারাস বোম কিন্তু।”
সবাই দ্রুত গাছের আড়ালে দাঁড়ায়। রিক বোমের লেজে আগুন ধরিয়েই ভোঁ দৌড়। এক দৌড়ই তাদের কাছে আসে, আসার এক সেকেন্ডের মধ্যেই বোমা ফুটে বিকট শব্দে। সাথে সাথে মেঘ, পিহু, সামিয়া, মিষ্টি, সারাও চিল্লিয়ে ওঠে। রুদ্ররা হকচকিয়ে ছুটে আসে।
কিছুটা সামনে এগিয়েই, ছেলেরা আশ্চর্য হয়ে একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। সামনের সবাই থমথমে। হঠাৎ শান্তরা জোড়ে হেসে উঠে। মেঘরা দাঁড়িয়ে আছে, মুখে জামায় কালির দাগ, চুল টুল ও আউলা-ঝাউলা। তাদের হাসতে দেখে মুখ ভোতা করে আছে। সাদ হাসতে হাসতে বলে,
-“কিরে, তোদের এই অবস্থা কে করেছে?”
পিহু রিকের দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,
-“এই হতচ্ছাড়া বোম ফাটিয়েছে। বোম না রেখে ম্যাচ রেখে বোম হাতে নিয়ে আমাদের কাছে চলে গেছে।”
পিহুর কথায় সবাই হাসতে হাসতে লুটুপুটি খাচ্ছে। রুদ্র রাগী গলায় বলে,
-“ঠিকি হয়েছে, এতো বাদরামি করতে কে বলেছে। এখনি সবকটা ফ্রেশ হয়ে আয়।”
রুদ্রের ধমকে সবাই একে একে ভেতরে চলে যায়। এভাবেই রান্না শেষ হতে হতে বিকাল হয়ে যায়। সবাই খেয়ে, টেয়ে একটু রেস্ট নিয়ে আশেপাশে একটু ঘুরাঘুরি করে।
———
সন্ধ্যা ৭টা বাজে সবাই গোল হয়ে বসে আছে রিসোর্টের সামনে। এখন সবাই মিলে বারবিকিউ পার্টি করবে। পাশেই শান্ত–রাহুল মিলে সব ব্যবস্থা করে। হঠাৎ সারা উঠে বলে,
-“চল সবাই ট্রুথ অ্যান্ড ডেয়ার খেলি।”
তার কথায় সবাই রাজি হয়। তবে রুদ্র–ফারহান এরা মোটেও ইন্টারেস্টেড না। সায়ান বারবার তাদের বলছে। তা দেখে রুদ্র কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,
-“বললাম তো তোরা খেল, আমি এখানেই আছি…”
রুদ্রর কথায় ফারহান পাশ থেকে খুচা দিয়ে বলে,
-“রসকসহীন মানুষের দ্বারা কি আর সব হয়?”
ফারহানের কথায় রুদ্র কড়া চোখে তার দিকে তাকায়। গলা উঁচিয়ে বলে,
-“তোর আছে রস?”
ফারহান ভাব নিয়ে বলে,
-“অবশ্যই।”
রুদ্র বাঁকা হেসে বলে,
-“কোন রস? ওই যে তোর ঘুমের মধ্যে মুখ দিয়ে লালা পড়ে, ওইটাকে রস ভাবছিস না তো? চু চু ওইটা রস নারে পাগল।”
রুদ্রর কথায় উপস্থিত সবাই হেসে ওঠে। ফারহান একবার কড়া চোখে তাকিয়ে ফের চোখ সরিয়ে নেয়,
-“যেটা ভেবে তুই অভ্যস্ত সেটা কি আর সবাই ভাবে? সবাই কি আর তোর মতো..”
রুদ্র কলার ঠিক করতে করতে বলে,
-“অবশ্যই সবাই আমার মতো না। আমি দুনিয়াতে এক পিস। চাইলেও কেউ এতো ভালো হতে পারবে না।”
রুদ্রের কথায় ফারহান ভাবলেশহীনভাবে বলে ওঠে,
-“ওহহো, আমি তো ভুলেই গেছিলাম তুই হলি শাহ সুফি পীরে কামেল মুর্শিদে মোকাম্মেল অলিয়ে আ’যম নেওয়াজে আকরাম মুহাদ্দিসে আলা কুতুবে তাম শাইখিয়া হাফেজিয়া আলহাজ্ব হযরত মাওলানার বংশধর, অরূফে মাওলানা রুদ্র চৌধুরী।”
ফারহানের মুখে এতো বড় নাম শুনে একজন চোখ বড় বড় করে বোকার মতো তাকিয়ে আছে। কয়েক সেকেন্ড যেতেই যেন গগন ফাটিয়ে হাসির রোল পড়ে যায়। একটা আরেকটার উপর পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মুহূর্তেই জায়গাটা হাসির রাজ্যে পরিণত হয়।
পিহু তো হাসতে হাসতে ফারহানের কাঁধে জুড়ে একটা থাপ্পড় মারে। এটা তার অভ্যাস হাসতে হাসতে কাউকে ঠুসঠাস মারা। ফারহান পাশে ছিলো বিদায় সে খেয়েছে। ফারহান সাথে সাথে রাগী চোখে তাকায়, মুহূর্তেই পিহুর হাসি বন্ধ হয়ে যায়। কি করেছে বোধগম্য হতেই ফারহানের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে একটা হাসি দেয়। ফারহান গম্ভীর মুখে চোখ সরিয়ে নেয়।
এদিকে রিক হাসতে হাসতে বেহুশ হওয়ার উপক্রম। সাদ সেই ফাঁকে নিচে থেকে খেয়ে ফেলে রাখা একটা চুইংগাম তুলে রিকের মুখে ভরে দেয়। সাথে সাথে রিকের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে। এই কাহিনি দেখে সবাই কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে যায়। রিক বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বোঝার চেষ্টা করে সাদ করলোটা কী। যখনই মাথায় আসে, নিচে ফেলা অন্যের চিবানো চুইংগাম মুখে দিয়ে দিয়েছে, সাথে সাথে মুখ থেকে ফেলে ‘ওয়াক ওয়াক’ শুরু করে,
-“ছি দুলুলুর বাচ্চা, কি করলে এইডা। এখনো বউরে চুম্মা দেইনাই, তার আগেই মুখটা ওয়ায়ায়াক্কক…”
রিক দৌড়ে রিসোর্টের ভেতরে ঢুকে যায়। এদিকে রিকের কাণ্ডে সবাই আরও একবার হাসিতে মেতে ওঠে। একেকজন পেটে হাত দিয়ে বসে আছে। মিষ্টি উঠে বলে,
-“অনেক হয়েছে হাসাহাসি, আর পারছি না। প্লিজ তোমরা বন্ধ করো। আমি পানি খেয়ে আসি।”
সায়ান ফাঁকে বলে,
-“তাহলে আমার জন্যও আনিস…”
একে একে সবাই বলছে পানি আনতে। মিষ্টি ঘরে ঢুকেই চুপিচুপি পা ফেলে ওয়াশরুমের সামনে যায়। মূলত রিককে জালাতন করতেই এসেছে। ভেতরে দেখে রিক ‘ওয়াক ওয়াক’ করছে আর কুলি করছে। তা দেখে সে হেসে ওঠে। কারো খিলখিলিয়ে হাসার শব্দে রিক পেছন ফিরে তাকায়। মিষ্টিকে দেখে ওয়াশরুমের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে, ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
-“এতো হাসছো কেন? খুব মজা লেগেছে বুঝি। তুমিও খাবে?”
মিষ্টি হাসি থামিয়ে নাক কুঁচকে বলে,
-“ছি ছি, কি সব ময়লা মুখে নিয়েছো, ইয়াক! এই ঠোঁটে আমি জীবনেও চুমু খাব না।”
রিক চোখ ছোট ছোট করে বলে,
-“কোনোদিনও না?”
-“না দরকার হয় বিয়ের পর আজীবন চুমু না খেয়েই কা..”
আর কথা বলার আগেই হঠাৎ রিক মিষ্টির দিকে কেমন চোখে তাকিয়ে এগোতে থাকে। তা দেখে মিষ্টি ভড়কে যায়। এক পা এক পা করে পিছিয়ে যেতে থাকে। আটকে আটকে গলায় বলে,
-“স..সামনে এগোচ্ছো কেন?”
রিক ধীরগতিতে বলে,
-“ভাবলাম বমির ভাব কাটাতে একটু মিষ্টি মুখ করি”
মিষ্টি চমকে যায়, দ্রুত বলে,
-“ত..তাহলে আমি রান্নাঘর থেকে চিনি এনে দিচ্ছি।”
রিক মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,
-“উহু, তার দরকার নেই। মিষ্টি এখানেই আছে, তাকেই খাবো।”
মিষ্টি আরও দু’কদম পিছিয়ে গিয়ে হালকা জোরে বলে,
-“ক..কাকে?”
রিক তার দিকে ঝুঁকতে ঝুঁকতে বলে,
-“তোমাকে….”
সাথে সাথে মিষ্টি রিককে এক ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। এদিকে রিক তার কান্ডে হাসতে শুরু করে, মুখে ফুটে ওঠে,
-“পাগলি।”
———
ট্রুথ ডেয়ার খেলা শুরু হয়ে গেছে। একে একে একজন আরেকজনকে ডেয়ার দিচ্ছে, ট্রুথ দিচ্ছে। এই যেমন রিককে অলরেডি মেয়ে সাজিয়ে নাচিয়েছে। এবার রুদ্রর পালা আসতেই সে ট্রুথ নেয়। সায়ান হালকা মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,
-“তুই ভাবিকে কি দেখে ভালোবেসেছিস, আই মিন কোন কারণে..”
তার কথায় সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকায়। মেঘও চেয়ে আছে উত্তর শোনার আশায়। রুদ্র এক মুহূর্ত চুপ থাকে। তারপর গলার স্বরটা একটু ভারী করে মেঘের দিকে চোখ রেখে বলে,
-” আমি মেঘকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসেছি, তখন স্পেসিফিক কি দেখে ভালোবেসেছি জানি না। তবে তার হাসি, তার সরলতা, তার চোখের তাকানোয় যে শান্তি আমি অনুভব করেছি। সবকিছু একসাথে মিলে আমাকে থমকে দিয়েছিল। এখন যদি বলতে বসি ঠিক কোন দিকটা আমাকে টানে, তাহলে হয়তো সারাজীবন লেগে যাবে, তবু শেষ হবে না তা বলা। মেঘ আমার কাছে শুধু একজন মানুষ না, সে একটা অনুভূতি, যাকে দেখে প্রতিদিন নতুন করে বাঁচতে ইচ্ছে করে।”
রুদ্রর কথায় সবাই বাহবা দিয়ে ওঠে। একেকজন শিস বাজাচ্ছে। রুদ্র ভাই প্রেমিক পুরুষ হয়ে গেছে এসব বলছে। তবে এদিকে মেঘ যেন অবাক। মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে ‘তাকে প্রথম থেকেই ভালোবাসে’ মানে কথাটা তার হজম হচ্ছে না। রুদ্রকে জিজ্ঞেস করতে হাসফাস করছে মেঘর ঘোর কাটে সায়ানের কথায়। নিজের মনে প্রশ্ন ধমিয়ে রেখে তাদের দিকে ফোকাস দেয়। সায়ান এবার সাদকে চেপে ধরে,
-“এই, এখন তুই বল, তুই প্লেবয় টু একদম লয়াল কিভাবে হয়ে গেলি?”
সাদ মাথা চুলকে বলে,
-“এখানে বলতে হবে? ইয়ে মানে বড় ভাইয়েরা আছে তো..”
পাশ থেকে শান্ত তার কাঁধে থাপ্পড় মেরে বলে,
-“নাটক কম করো পিও, গফ নিয়ে বড় ভাইদের সামনে বসে থাকতে লজ্জা নেই, বলতেই লজ্জা?”
সাদ মুচকি হেসে বলে,
-“জানি না কিভাবে কখন আমি সত্যিই সুমনার মাঝেই আটকে গেছি। দিনের পর দিন তার সাথে সময় কাটাতে কাটাতে বুঝেছি, এই মেয়েটাই আমার ভেতরের সব জায়গা পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে। এই বলদ মেয়ের মাঝে আটকে গেছি, এর বলদামি দেখে। এর মধ্যে কোনো সমস্যা দেখিনি তাই আরও ভালো লেগেছে।তবে একমাত্র সমস্যা যদি বলতেই হয়, ও একটু বেশি খায়, তবে সেটা নিয়েও আমি খুশি।”
সবাই মিটিমিটি হাসছে। এদিকে সুমনা কড়া চোখে তাকিয়ে আছে। তাকে প্রশংসা করছে নাকি অপমান করছে। তার খাওয়া নিয়ে আবার খুটা। হাত দিয়ে দেয় জুড়ে এক গুতা সাদের পেটে। এর মধ্যেই এভাবে তাদের আড্ডা -মাস্তি চলতেই থাকে।
———
প্রায় রাত ১১টার দিকে সারা–পিহুরা সবাই মিলে মেঘকে জোর করে রেডি করে ঘরে বসিয়ে চলে যায়। মূলত এটা সারারই প্ল্যান সাথে পিহু সুমনা মিলিত। তাদের উপর রেগে মেঘ থমথমে মুখে বসে আছে। তাদের একটাই কথা যেভাবে আছে সেভাবেই যেন বসে থাকে। ঘর থেকে অন্য কাপড়ও নিয়ে গেছে। তবে মেঘের এখন ভয় হচ্ছে। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে মেঘ ফট করে অন্ধকারেই উঠে দাঁড়ায়।
এদিকে রুদ্র ঘরে ঢুকেই দেখে অন্ধকার, ব্রু কুচকে আসে তবে মেঘ কি পিহুদের সাথে। ভাবতে ভাবতে সুইচ টিপে লাইট জ্বালালো। হঠাৎ ঘর আলোকিত হতেই সামনে যে দৃশ্যটা ধরা দিলো, কিছুক্ষণ সে একেবারেই স্তব্ধ হয়ে গেল। পাতলা সিল্কের লাল শাড়ি পড়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ। তাকে যেন আগুনে মোড়া এক রূপকথার সবচেয়ে সুন্দর আকর্ষণীয় চরিত্রটা লাগছে। তার পিঠের হালকা বাঁক, কোমরের সরু রেখা আর শাড়ির সাথে গায়ে মিশে যাওয়া শরীরের সৌন্দর্য সবকিছুই রুদ্রের চোখে ধরা দিচ্ছে।
রুদ্র মেঘকে এমন রূপে দেখে যেন একেবারে ঘায়েল হয়ে গেছে। নিজেকে সামলানো আর তার পক্ষে সম্ভব হলো না। ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে মেঘের কোমরে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তার চোখে, দৃষ্টি যেন ছিঁড়ে ফেলার মতো গভীর। মেঘ একবার তাকিয়ে ফের চোখ সরিয়ে ফেলে, এই চোখে তাকানো দুষ্কর। সে লজ্জায় মাথা নিচু করে নিঃশ্বাস আটকে রেখেছে। রুদ্র হঠাৎ মৃদু নেশাগ্রস্তের মতো মুখ গুঁজে দিলো মেঘের গলায়। মেঘের শরীরের উষ্ণ ঘ্রাণ যেন তাকে আরও পাগল করে তুললো। হুস্কি ভরাট গলায় রুদ্র ফিসফিস করে বলে,
-“এভাবে শাড়ি পড়েছো কেনো..?”
মেঘ কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জবাব দেয়,
-“সারা আপু পড়িয়ে দিয়েছে.. জোড় করে।”
রুদ্রর ঠোঁটে হালকা হাসি ফুটে উঠলো। তার হাত ধীরে ধীরে মেঘের শরীরের উপর ঘুরে বেড়াতে লাগলো, কখনো কোমর, কখনো পিঠ। প্রতিটি ছোঁয়াতেই মেঘ শিহরে উঠছিলো, আর রুদ্র যেন ডুবে যাচ্ছিলো তার রূপ-ঘ্রাণ-উষ্ণতার এক অন্তহীন নেশায়। তার আঁচলের ভেতরকার বাঁকে হাত যেতেই মেঘ ফট করে রুদ্রের হাত চেপে ধরে। নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে তার। রুদ্র থেমে গিয়ে গভীরভাবে তাকায় মেঘের দিকে। তারপর হঠাৎ এক ঝটকায় তাকে কোলের মধ্যে তুলে নেয়। মেঘ দুহাত দিয়ে রুদ্রের গলা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। রুদ্র তাকে নিয়ে এসে বিছানায় বসে, কণ্ঠে অদ্ভুত কোমলতা নিয়ে ডাকে,
-“মেঘ…”
মেঘ চমকে তাকায়। রুদ্রের গলায় যেনো এক অদৃশ্য নেশা। তার দৃষ্টি গিয়ে থামে মেঘের ঠোঁটে, লাল লিপস্টিকে লেপ্টে থাকা সেই ঠোঁটজোড়ায়। বুড়ো আঙুল বেয়ে আলতোভাবে ঠোঁট ছুঁয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
-“এখন কী করবো বলো? তুমি সব বাঁধ ভেঙে দিলে। আমার আর নিজেকে থামানোর সাধ্য নেই, বউ…”
মেঘের কান লাল হয়ে উঠছে, নিশ্বাসে বুক দ্রুত উঠানামা করছে। সে আরও জোরে রুদ্রের কলার চেপে ধরে। এই দৃশ্য যেনো রুদ্রকে আরও পাগল করে তুলছে। নিজেকে আর আটকে রাখতে পারে না সে। মেঘের চুলের ভাঁজে হাত ডুবিয়ে, উন্মত্ততার সাথে তার অধরজোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়। শ্বাসরুদ্ধ করা আবেগে চুম্বন ছড়িয়ে পড়ে। তার হাত অবাধ্যভাবে ঘুরে বেড়ায় মেঘের শরীরের নিষিদ্ধ বাঁকে বাঁকে। রুদ্রের উন্মাদনা সামলাতে পারছে না মেঘ। শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসায় সে ঠেলতে শুরু করে, কিন্তু বলিষ্ঠ দেহের সঙ্গে পেরে ওঠা যায় নাকি। শেষমেশ না পেরে রুদ্রের ঠোঁটে দাঁত বসায় সে। রুদ্র তড়িঘড়ি তাকে ছেড়ে দেয়। অবশেষে মুক্ত হয়ে মেঘ হাপিয়ে ওঠে। রুদ্র মেঘকে ধীরে ধীরে বিছানায় শোয়ায়, নিজেকে তার উপর আলতো করে ঝুঁকিয়ে রাখে। গলায়, ঘাড়ে নিজের মুখ ডুবিয়ে দেয়, নিঃশব্দ স্পর্শে মেঘের শরীরে আগুন জ্বলছে যেনো। মেঘ রুদ্রের শার্ট শক্ত করে ধরে রাখে। আস্তে আস্তে রুদ্রের হাত চলে যায় শাড়ির দিকে। এক টানেই খুলতে গেলেই মেঘ হঠাৎ তার হাত ধরে ফেলে। রুদ্র থেমে যায়, মাথা তুলে চোখে চোখ রাখে মেঘের দিকে। মেঘ মাথা নাড়িয়ে বার বার না না করছে। তে দেখে রুদ্র অসহায় কন্ঠে বলে,
-“বউ প্লিজ আজ না করোনা। আমার পক্ষে নিজেকে দমিয়ে রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না।”
বলেই মেঘের উত্তরের আশা না করেই বুকের উপর থেকে আচল সরিয়ে ফেলে এক টানে। আস্তে আস্তে হাত বাড়ায়। মেঘ রুদ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে শাড়ির আচল গায়ে জড়িয়ে নেয়। ভীতু হয়ে বসে আছে। মেঘের এহেন কান্ডে রুদ্র বেশ রেগে যায়। মেঘের দিকে তাকাতেই তার ভীতু চেহারা দেখে আরও রাগ বেড়ে উঠে। দুই বাহু চেপে ঝাকিয়ে বলে,
-“এই তোমার সমস্যা কি? যখনি কাছে আসি সরিয়ে দাও৷ আমার স্পর্শ খারাপ লাগে? বলো..”
মেঘ মাথা নিচু করে আছে, মাথা এদিক সেদিক করে ‘না’ বোঝায়। তা দেখে রুদ্র রেগে আবার বলে উঠে,
-“তো সমস্যা কোথায় তোমার। আমি তোমার স্বামী তোমার শরীরের প্রতিটি ভাজে ভাজে আমার ছোয়ার অধিকার আছে। বিয়ের ৬ মাস হয়ে যাচ্ছে এতোদিন ধরে তোমাকে সময় দিয়েই আসছি তোমার দিক আমি বুঝতেছি। তুমি কি আমার দিক বুঝোনা? নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করো। আমি কি মানুষ না? আর কতো ওয়েট করবো, আর কতো কন্ট্রোলে থাকবো? এইবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।”
রুদ্রের প্রতিটি কথায় মেঘ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদেঁ উঠে। তা দেখে রুদ্র বিরক্ত হয়ে তাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ধপধপ পায়ে বারান্দায় চলে যায়। গিয়েই নিকোটিনের ধোঁয়ায় নিজেকে শান্ত করতে লাগে। এদিকে মেঘ কাদঁছে খুব। নিজেকে ভীষণ অপরাধি লাগছে। রুদ্রকে কয়েকবার ডেকেও তার থেকে উত্তর আসেনি, রেগে ভীষণ।
———
এদিকে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে কেউ। মোবাইলে কথা বলছে,
-“আজকের রাতটাই শেষ রাত, পাখি যতো খুশি উড়ুক। কালকে এর গল্প খালাস…”
চলবে…….
[ দুঃখিত আজকেও আপনাদের মনটা ভেঙে দেওয়ার জন্য । গালি দিলেও আমি দেখুম না।
]
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৪
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১০
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৯
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩২
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২২
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৮
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১২