#আড়ালে_তুমি |৫৪|
#_সাইদা_মুন
সামিয়া ভার্সিটি থেকে বের হয়ে একটু এগোতেই রাফানকে দেখে থেমে যায়। রাফান আনমনে মাথা নিচু করে হাঁটছে, ভীষণ উদাস লাগছে তাকে। খেয়ালই নেই যে সে ব্যস্ত রাস্তায় চলে আসছে, যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে সামিয়া রাফানের শার্টের হাতা ধরে টেনে পাশে সরিয়ে আনে।
হঠাৎ কারো স্পর্শে চমকে তাকায় রাফান। পাশে সামিয়াকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। অনেকদিন পর দেখলো তাকে। স্লান হাসি দিয়ে বলে,
-“কেমন আছো?”
সামিয়া গম্ভীর মুখে জবাব দেয়,
-“জি, আলহামদুলিল্লাহ। তবে রাস্তাঘাটে এভাবে হাঁটলে দুর্ঘটনা ঘটতে দেরি হবে না। সাবধানে চলাফেরা করবেন।”
বলেই পিছন ফিরে হাঁটা শুরু করে, কিন্তু থেমে যায় রাফানের অসহায় কণ্ঠে,
-“জিজ্ঞেস করবে না আমি কেমন আছি?”
সামিয়া বিচলিত দৃষ্টিতে তাকায় রাফানের দিকে। মুখে ক্লান্তির ছাপ, চোখে মুখে প্রাণহীনতা, বুঝাই যায় যত্ন নেয়নি নিজের। তবে সে কি ভালো নেই? একটু থেমে সামিয়া আলতো স্বরে বলে,
-“ভালো থাকার সময় তো এখন আপনাদের। তাই ভেবেছিলাম ভালোই আছেন, তাই জিজ্ঞেস করিনি।”
-“কিন্তু আমি যে ভালো নেই।”
রাফানের গলায় ব্যথার ছোঁয়া স্পষ্ট। সামিয়া নীরবে তাকিয়ে থাকে। সে বুঝতে পারে রাফান কষ্টে আছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-“চিন্তা করবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে। বড় আব্বু এখন একটু রেগে আছেন, পরে রাজি হয়ে যাবেন। আপনি চেষ্টা চালিয়ে যান।”
রাফান তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,
-“তোমার বড় আব্বু রাজি থাকলেই বা কী হবে? যাকে ভালোবাসি, সে-ই তো চায় না।”
একটু থেমে ফের বলে,
-“সামিয়া একটু সামনে বসবে আমার সাথে?”
রাফানের কথায় সামিয়ার ভ্রু কুঁচকে যায়। “যাকে ভালোবাসি সে-ই চায় না” মানে কি পিহু রাজি নয়? সামিয়া প্রথমে না করতে চাইলেও শেষমেশ রাজি হয়। রাফান তার খারাপ সময়ে পাশে ছিল, তাই এখন রাফানের এই ভাঙাচোরা অবস্থায় তাকে একা ফেলে যেতে পারছে না। গাড়ির ড্রাইভারকে চলে যেতে বলে, রাফানের সঙ্গে হাঁটতে থাকে।
দুজন বসে নদীর পাড়ে। চারদিকে শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ, হালকা বাতাস বইছে। নদীর ঢেউয়ের পানিতে সূর্যের আলো ঝিলমিল করছে।
রাফান সব খুলে বললে সামিয়া অবাক হয়। পিহু অন্য কাউকে ভালোবাসে, এ নিয়ে সে আগেই সন্দেহ করেছিলো। তবে রাফান যেভাবে মেনে নিয়েছে তা ভেবে অবাক হয়ে যায়।
-“আপনি তাকে এতো সহজে ছেড়ে দিলেন? চাইলে তো তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে পারতেন।”
রাফান দুই হাত পিছনে রেখে আকাশের দিকে তাকায়, দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে,
-“হুম, চাইলে বোঝাতে পারতাম আমি তাকে কতোটা ভালোবাসি। পাগলামি করতে পারতাম, এমনকি জোরও করতে পারতাম। কিন্তু তাতে লাভ কী? তার মনে তো আগে থেকেই অন্য কারো জায়গা। আমি শুধু তার বিরক্তির কারণ হতাম, হয়তো ঘৃণাও জন্মাতো আমার উপর। আমি তার ঘৃণার কারণ হতে চাইনি। তাই চুপচাপ মেনে নিয়েছি। সে সুখী থাকলেই আমি খুশি।”
সামিয়া একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে রাফানের দিকে। এভাবেও কেউ ভালোবাসে? আজকের দিনে এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা খুব কমই দেখা যায়। সামিয়ার মনে চাপা কষ্ট জমে ওঠে।
রাফান শূন্য চোখে সামিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এই কয়টা দিন কিভাবে কাটাচ্ছি জানি না। কাউকে বলতেও পারছি না। বলেও বা লাভ কী? সে কি আর এনে দিতে পারবে?”
সামিয়া চোখ সরিয়ে নদীর দিকে তাকায়,
-“কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না, এই কথাটা তো আপনিই একদিন আমাকে বলেছিলেন।”
রাফান হেসে ফেলে,
-“আহা, এখন আমার কথাই আমাকে শুনাচ্ছেন, ম্যাডাম?”
“ম্যাডাম” ডাক শুনে সামিয়া কিছুটা চমকায়, সঙ্গে সঙ্গে হেসেও ফেলে।
-“এসব চিন্তা বাদ দিন। আপনার জোড়া হয়তো আল্লাহ অন্য কারও জন্য লিখে রেখেছেন। মুভ অন করুন।”
রাফান তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে,
-“মুভ অন? মানুষের আড়ালে গেলে ব্যথাটা আরও প্রখর হয়ে ওঠে। মুভ অন বড় মুশকিল…”
সামিয়া হতাশার নিশ্বাস ফেলে বলে,
-“জানি আমি। আমিও তো এমন সময় পার করেছি। তখন তো আপনি আমার পাশে ছিলেন।”
একটু থেমে রাফানের দিকে তাকিয়ে হাতের কনিষ্ঠ আঙুল বাড়িয়ে দেয়,
-“আপনার খারাপ সময়ে আমাকে পাশে রাখবেন? মন হয়তো ভালো করতে পারবো না, তবে যথাসম্ভব চেষ্টা করবো। না হলে আজীবন রিনি থেকে যাবো যে।”
রাফান সামিয়ার চোখে তাকায়। সেখানে কিছু আছে যা তার কষ্ট ধীরে ধীরে কমিয়ে দিচ্ছে। সত্যিই সামিয়ার সঙ্গে কথা বলে অনেকটা হালকা লাগছে তাকে। রাফানও হাসে, নিজের কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে সামিয়ার আঙুল আঁকড়ে ধরে বলে,
-“তুমি চাইলে থাকতে পারো।”
দুজনেই মুচকি হাসে। বিকেল গড়িয়ে গেছে দেখে সামিয়া উঠে দাঁড়ায়,
-“আমার যেতে হবে, না হলে বাসায় সবাই টেনশন করবে।”
রাফানও উঠে বলে,
-“চলো, এগিয়ে দিয়ে আসি।”
হাটঁতে হাটঁতে রাফান বলে,
-“নিয়তির কি খেলা দেখো, একদিন তোমাকে আমি স্বান্তনা দিতাম। আজ তুমি আমাকে দিচ্ছো।”
দুজনেই হালকা হাসে, এভাবেই কথা বলতে বলতে হাঁটে তারা। কিছু দূর যেতেই সামিয়াকে রিকশায় তুলে দেয়। সামিয়া রিকশায় বসে রাফানের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ মিনতি ভরা স্বরে বলে,
-“আমার ছোট বোনটাকে আবার অভিশাপ দেবেন না যেনো।”
রাফান মৃদু হেসে বলে,
-“আরে না, এতে পিহুর তো কোনো দোষ নেই। সবই নিয়তির খেলা। যাও, সাবধানে পৌঁছে আমাকে জানিও।”
সামিয়া মাথা নাড়তেই রিকশা চলতে শুরু করে।
———
-“তোমাকে না অনেক সুন্দর লাগছে।”
বলেই সাদ সুমনার গাল টিপে দেয়। সুমনা হালকা ব্যথা পেয়ে সেও সাদের গাল জুড়ে টিপে বলে,
-“তোমাকেও সুন্দর লাগছে।”
সাদ আহ করে ওঠে। মুহূর্তেই হেসে আবার সুমনার গাল সেও জুড়ে টিপে দেয়। এবার সুমনা রেগে,আবার সাদের গাল টিপে দেয় আরও জোরে। ব্যাস, লেগে যায় তাদের হাতাহাতি। ওয়েটার খাবার নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে যায় মারামারি দেখছে, এমন বিনামূল্যের বিনোদন কে মিস করে।
হঠাৎ সাদ থেমে যায়। পাশ ফিরে ওয়েটারের খুশি মুখ দেখে এক ধমক দেয়। ওয়েটার সাথে সাথে খাবার রেখে পালিয়ে যায়।
সুমনা রেগে উঠে দাঁড়ায়,
-“তোমার সাথে ব্রেকাপ। বেয়াদব ছেলে মানুষের বয়ফ্রেন্ড কতো রোমান্টিক হয় আর তুমি খচ্চর, খাটাস। ব্রেকাপ ব্রেকাপ, তিনবার ব্রেকাপ।”
বলেই হাঁটা দেয়। সাদ কলার ঠিক করতে করতে বলে,
-“তুমি যাচ্ছো? যাও, সামনের টেবিলের সুন্দরী মেয়েটাকে এনে দু’জনে মিলে খাবো।”
সুমনা শুনেই তেড়ে আসে, সাদের কলার ধরে বলে,
-“তোকে খুন করে ফেলবো অন্য মেয়ের নাম মুখে নিলে।”
সাদ অবাক হওয়ার ভান করে বলে,
-“ওমা, ব্রেকাপ না করে ফেললে?”
সুমনা আবার বসতে বসতে বলে,
-“তুমি আমার বিয়ে করা স্বামী। ব্রেকাপ বললেও কিছু হবে না।”
বলেই খাওয়া শুরু করে। সাদ মুচকি হেসে সেও খেতে শুরু করে। মাঝে মাঝে সুমনাকে খাইয়ে দিচ্ছে, মুখ মুছিয়ে দিচ্ছে, পানি এগিয়ে দিচ্ছে। তাদের দুষ্টু-মিষ্টি ঝগড়া, খুনসুটি আর ভালোবাসা চলতেই থাকে।
———
সন্ধ্যা ৭ টার দিকে, রুদ্র আর ফারহান বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়। গেট পেরোতেই দু’জন মুখোমুখি হয়। একে অপরকে দেখে মুখ ঝামটা মেরে সামনের দিকে হাঁটা ধরতেই পাশাপাশি হয়ে যায়। এটা দেখে ফারহানের ভ্রু কুঁচকে ওঠে। রুদ্র তো প্রতিদিন ওই দিকেই যায়,
-“তুই এদিকে আসছিস কেনো?”
রুদ্র আড়চোখে তাকিয়ে বলে,
-“এইটা কি তোর বাপের রাস্তা?”
ফারহান মুখ ঘুরিয়ে ভাবলেশহীন গলায় বলে,
-“অবশ্যই তোরও বাপের রাস্তা না।”
-“তো ফাটা বাঁশ বন্ধ কর।”
-“তোর মুখটা আগে বন্ধ কর গন্ধ।”
পেছনের গার্ডরা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে। এরা তো কথায় কথায় এমন লেগেই যায়, কখন না চুলাচুলি শুরু হয় সেই ভয়েই থাকে সারাক্ষণ।
———
অফিস থেকে ফেরার পর থেকেই রুদ্রকে কেমন বদলানো লাগছে। না মেঘের সাথে ভালো করে কথা বলেছে, না মুখে কোনো হাসি। কেমন গম্ভীর হয়ে আছে। মেঘ শরবত বানিয়ে নিয়ে যায়। দেখে রুদ্র ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপে বসা। মেঘ গ্লাসটা সামনে এগিয়ে দেয়। কিছু বলার আগেই রুদ্র না চেয়েই গ্লাস নিয়ে এক ঢোঁক খেয়ে আবার কাজ শুরু করে।
মেঘের ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে, রুদ্র এমন করছে কেনো? খারাপ লাগছে, যেনো ইচ্ছে করেই ইগনোর করছে। না পেরে জিজ্ঞেস করে,
-“আপনার কি হয়েছে?”
রুদ্র কাঠকঠ গলায় উত্তর দেয়,
-“কিছু না।”
মেঘ ফের বলে,
-“তো আমার সাথে কথা বলছেন না কেনো?”
রুদ্র একবার তাকায়, চোখে কোনো অনুভূতি নেই। রাগী স্বরে বলে,
-“মেঘ, ডিস্টার্ব করো না তো। দেখছো না কাজ করছি?”
মেঘ ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকে। রুদ্রের এমন ব্যবহার সে আশা করেনি। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়, চুপচাপ নিচে নেমে যায়। রাতে খাবারের সময় ডাকতে গেলেও একই ব্যবহার। সবার সাথে খেয়ে রুমে এসে ফের ফোন নিয়ে বসে যায়।
মেঘ এবার রেগে গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-“কি সমস্যা আপনার? এমন করছেন কেনো?”
রুদ্র তাকায়, স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে,
-“কিছু না।”
-“তো আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেনো?”
-“কিভাবে বলছি?”
-“কেমন বিরক্ত হয়ে কথা বলছেন, কথা বলতে চাইছেন না।”
রুদ্র চোখ ঘুরিয়ে ফোনে তাকায়,
-“কথা বলার ইচ্ছে নেই তাই।”
মেঘ চমকে তাকায়,
-“মানে কি? কথা বলার ইচ্ছে নেই মানে?”
-“তা তুমিই ভালো জানো।”
রুদ্রের কথায় মেঘের মনে বেশ আঘাত লাগে। তবুও নিজেকে সামলে কাছে বসে,
-“প্লিজ বলুন না আমি কি করেছি? যার জন্য রেগে আছেন।”
-“যে আমার কথা শোনে না, তার কথা শোনারও ইন্টারেস্ট নেই আমার।”
বলেই বিছানায় শুয়ে পড়ে। মেঘ থম মেরে বসে থাকে। রুদ্র তো এমন নয়, হয়তো ভীষণ রেগে আছে। লাইট নিভিয়ে পাশে শোয়। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে, হয়তো রুদ্র টেনে নেবে সেই আশায়, কিন্তু না রুদ্র কিছুই করছে না। এবার যেনো মেঘের বাধ ভেঙে যায়। চোখ টলমল করে ওঠে। পাশ ফিরে রুদ্রের বাহুডোরে নিজেকে জড়িয়ে ফুপিয়ে কান্না শুরু করে।
মেঘ কাঁদছে, রুদ্রের বুকে তার চোখের পানি পড়ছে। রুদ্র দু’হাতে আগলে ধরেছে ঠিকই, তবে মুখে কোনো কথা নেই। মেঘ মাথা তুলে তাকায়। রুদ্র শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে। কান্নাভেজা গলায় বলে,
-“আপনি এমন করছেন কেনো বলুন না। আমার অনেক খারাপ লাগছে। কি করেছি আমি? আর করবো না এমন।”
রুদ্র ফুস করে শ্বাস ছেড়ে আঙুল দিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
-“এইটা আগে ভাবা উচিত ছিলো। আমি একবার না, অনেকবার বলেছি, আমাকে না জানিয়ে একা কোথাও যেও না। তো, কালকে রাফানের সাথে দেখা করতে কার পারমিশনে গিয়েছিলে?”
মেঘ চমকে যায়, রুদ্র জানলো কিভাবে? তারা তো লুকিয়ে গিয়েছিলো। মেঘ আমতা-আমতা করে বলে,
-“আপনি কি করে জানলেন? রাফান ভাই বলেছে?”
-“রাফানের কেনো বলতে হবে? আমার বুঝি জানার লোক কম আছে?”
মেঘ মাথা নিচু করে থাকে। রুদ্র বলে,
-“এবার সরো, ঘুমাও।”
কিন্তু মেঘ আরও জড়িয়ে ধরে, অপরাধীর স্বরে বলে,
-“সরি, আর এমন হবেনা। আমি অনেক সরি।”
রুদ্র ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,
-“তোমার সরি নিজের কাছেই রাখো, এসব আদিখ্যেতা আমার সাথে চলে না।”
মেঘকে সরিয়ে দেয়। রুদ্র যে অনেক বেশিই রেগে আছে বেশ বুঝচহে। মেঘ মুখ ভার করে বসে থাকে। রুদ্র চোখের উপর হাত রেখে সোজা হয়ে শোয়ে আছে। হঠাৎ মেঘ রুদ্রের পেটের উপর উঠে বসে পড়ে। রুদ্র কিছু বোঝার আগেই, মেঘ চুল টেনে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
প্রথমে হতভম্ব হয়ে রুদ্র চুপচাপ বোঝার চেষ্টা করে। কয়েক সেকেন্ড পর বোঝামাত্রই সেও মেঘকে টেনে নেয়। একে অপরের মাঝে ভালোবাসা বিলিয়ে দিতে লাগে।
প্রায় ৫ মিনিট পর হঠাৎ রুদ্রের ফোনে কল আসে। বিরক্ত হয়ে ফোন তুলে বলে,
-“এ অসময়ে আবার কোন আন্টির ছেলে কল দিলো।”
মেঘ লজ্জায় লাল, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত। বিড়ালছানার মতো গুটিয়ে রুদ্রের বুকে লুকিয়ে আছে। রুদ্র দেখে সায়ানের কল। রেগে কল ধরে।
-“কিরে, কি অবস্থা?”
রুদ্র কড়া গলায় বলে,
-“আমার অবস্থা পড়ে আগে তোর আর সাদের একটা ব্যবস্থা করতে হবে।”
সায়ান অবাক হয়ে,
-“কিসের ব্যবস্থা? আমরা আবার কি করলাম?”
রুদ্র মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“অসময়ে বিরক্ত করা আটকানোর ব্যবস্থা।”
রুদ্রের কথায় মেঘ মুখ খিচে চোখ বন্ধ করে নেয়। সায়ান হেসে বলে,
-“তুই যে বউয়ের সাথে নিকনিক করছিস আমি জানতাম নাকি ভাই।”
-“কি বলতে কল দিয়েছিস সেটা বল, সময় নষ্ট করলে কপালে শনি আছে।”
সায়ান দ্রুত বলে,
-“পরশু শুক্রবার, আমরা ভেবেছি সবাই মিলে গ্রামসাইডে পিকনিক করবো। সবাইকেই যেতে হবে।”
রুদ্র বলে,
-“আচ্ছা, ভেবে দেখবো। রাখ।”
বলেই কল কেটে দেয়। মেঘের দিকে তাকাতেই দেখে লজায় গুটিয়ে আছে। হালকা হেসে মেঘকে নিজের থেকে কিছুটা ছাড়িয়ে ফের জড়িয়ে ধরে তার গলায় মাথা গোজে চোখ বুঝে নেয়। শক্ত করে ধরে আছে মনে মনে আওরায়,
-“তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে কেউ। কে বা কারা এমন করছে আমি খুজে বের করবোই। তোমার কিছু হলে আমার কি হবে বউ।”
———
পিহু বিছানায় শুয়ে শুয়ে তখনকার ঘটনাটা ভাবছে। অজান্তেই গালে হাত চলে যায়,
-“আল্লাহ গো, কি জুড়েই না থাপ্পড় মেরেছে। এখনও মনে হলে মাথা ঝিমঝিম করে।”
ভাবনার মাঝেই হঠাৎ মোবাইলে কল আসে। বিরক্ত মুখে না দেখেই কল রিসিভ করে বলে,
-“ইয়েস, আই এম পিহু স্পিকিং..”
ওপাশ থেকে ফারহানের গম্ভীর গলা ভেসে আসে,
-“খেয়েছো..?”
পিহু ভেবেছিলো ভুল শুনেছে। দ্রুত নাম চেক করে দেখে সত্যিই ফারহান। চুপ করে থাকতে দেখে ফারহান ধমকে ওঠে,
-“কি হলো, কথা কানে যায় না..?”
পিহু আঁতকে উঠে তাড়াহুড়ো করে বলে,
-“হ..হ্যা হ্যা, খেয়েছি। আপনি?”
ফারহান কোনো উত্তর না দিয়ে আবার প্রশ্ন করে,
-“গালে ব্যথা আছে?”
-“নাহ..”
কিছুক্ষণ নীরব থেকে ফারহান নিচু স্বরে বলে,
-“ওভাবে থাপ্পড় দেওয়া আমার উচিত হয়নি।”
পিহু অবাক হয়ে যায়। তাহলে কি সে গিলটি ফিল করছে? এ ভেবে ভেতরটা খুশিতে ভরে ওঠে।
কিন্তু সেই খুশিতে পানি ঢেলে ফারহান আবার কড়া গলায় বলে ওঠে,
-“তবে তুমি যা করেছো, সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে আমি একদম ঠিক করেছি। বরং আরও কয়েকটা দিলে ভালো হতো, বেয়াদব মহিলা..”
বলেই ধাম করে কল কেটে দেয়। পিহু স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। সে কি অনুতপ্ত হয়েছিলো, নাকি উল্টে আবার রাগ ঝারলো, মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
চলবে…..
[ আপনাদের রেস্পন্স কমে যাচ্ছে কেনো? নাইস নেক্সট ছাড়া গঠনমূলক মন্তব্য একদমই কম। এভাবে তো আমিও উৎসাহ পাচ্ছি না। ভালো হলে ভালো বলবেন, খারাপ হলে খারাপ বলবেন। তবুও ভালো/খারাপ কিছু একটা মন্তব্য করবেন। ]
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৯
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৭
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৯
-
আড়ালে তুমি (সারপ্রাইজ পর্ব প্রথমাংশ)
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬২
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩২
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪৪
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪৮