Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৩


#আড়ালে_তুমি |৫৩|

#_সাইদা_মুন

-“দ্রুত নেচে দেখান তো রুদ্র সাহেব…”

সকালবেলা মেঘের এমন অদ্ভুত আবদারে রুদ্র একেবারে চমকে যায়। মেঘ তো এতটা বিচ্চু ছিল না, তার শান্ত, সরল, অবুঝ বউটার হঠাৎ কী হলো। চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-“এই বউ, তুমি কি কোনোভাবে কারো সাথে এক্সচেঞ্জ হয়ে গেছো? আমার বউ তো এমন ছিল না… দেখি দেখি…”

বলেই মেঘের মুখ এদিক-সেদিক ঘুরিয়ে দেখতে থাকে রুদ্র। মেঘ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে। হঠাৎই রুদ্রর লুঙ্গির গিটে হাত দেয় মেঘ। শয়তানি হাসি মুখে বলে,

-“হয় লুঙ্গি নাচ দিবেন, নয়তো লুঙ্গি খুলে দেবো!”

রুদ্র ভড়কে যায়, অবিশ্বাসের চোখে তাকায়। নিশ্চয়ই তার বউয়ের সঙ্গে কিছু একটা ঘটেছে। নইলে কথায় কথায় এমনভাবে মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি করবে এমন মেয়ে তো মেঘ না? সঙ্গে সঙ্গে মেঘের হাত শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বড় বড় করে বলে,

-“তোমাকে কি দুষ্টু জিন ভর করেছে?”

রুদ্রর কথায় মেঘ বিরক্ত গলায় বলে,

-“ফটাফট নাচবেন, না হলে যা বলেছি তাই করবো।”

রুদ্র অসহায়ের মতো মিনতি করে,

-“দেখো বউ, আমার মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি করো না…”

মেঘ কড়া গলায় বলে,

-“দিবো খুলে..?”

রুদ্র দ্রুত বলে,

-“না না দাড়াও নাচছি..”

মেঘ লুঙ্গি ড্যান্স গান ছাড়ে, রুদ্র লুঙ্গির নিচের অংশ দুই হাতে নিয়ে। হাটুর নিচ পর্যন্ত করে এদিক সেদিক নাড়াতে লাগে। মুখটা বাংলার পাচেঁর মতো করে রেখেছে। মেঘ রুদ্রের নাচ দেখে হাসতে হাসতে লুটুপুটি খাচ্ছে। রুদ্র মেঘের হাসি দেখে থেমে যায়। মেঘ হাসতে হাসতে এবার উঠে বলে,

-“আপনার মান-সম্মান আছে নাকি?”

রুদ্র রাগী গলায় বলে,

-“অবশ্যই আছে।”

-“হুহ, সবই তো দেখে ফেলেছি…”

রুদ্রর কপাল কুঁচকে যায়। সব দেখে ফেলেছে মানে কী! সঙ্গে সঙ্গে নিচের দিকে তাকায়, না লুঙ্গি তো খোলেনি হাটু অব্দি। তবে মেঘ কী দেখেছে? রাতে ঘুমের মধ্যে কি লুঙ্গি উঠে গেছিলো? কিন্তু উঠলেও ভেতরে তো ওটা ছিলো… তাহলে কেমন করে দেখলো? তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করে,

-“তুমি দেখলে কেমন করে?”

মেঘ মিটিমিটি হেসে দরজার দিকে গিয়ে বলে,

-“অ্যালবাম থেকে আপনার লেংটু ছবি দেখে নিয়েছি।”

কথা শেষ করেই তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে যায়। এইটা বলার পর রুদ্রর সামনে দাঁড়ানো আর সম্ভব নয়, নিজেরই লজ্জা লাগছে। আর এদিকে রুদ্রর লজ্জায় কান দিয়ে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে। বেচারা দাদিকে ইচ্ছে মতো বকতে থাকে,

-“এই বুড়ির জন্যই বউয়ের সামনে আমার মান-সম্মান প্লাস্টিক হয়ে গেলো…”

———

ক্লাস শেষে গেট পেরোতেই দুপুরের রোদ চোখে লাগে। ভিড়ের ভেতর দিয়ে হাঁটছে সবাই, কেউ বাস ধরছে, কেউ বন্ধুদের বিদায় দিচ্ছে। গরমে ক্লান্ত মুখে মেঘ, পিহু আর সুমনা রিকশা খুঁজছে। আজ রিক আসেনি।

পিহু বিরক্ত হয়ে বলে,

-“দূর! বাড়ির গাড়ি থাকলে এত কষ্ট করতে হতো না।”

ঠিক তখনই একটা রিকশা দেখতে পেয়ে মেঘ হেসে বলে,

-“তোর কষ্ট দূর করতে রিকশা চলে এসেছে।”

তিনজন মিলে রিকশায় উঠে বসে। গন্তব্য রেস্টুরেন্ট। প্রায় পনেরো মিনিট পর পৌঁছে ভাড়া মিটিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে রাফানের জন্য। সে নাকি এই রেস্টুরেন্ট চেনে না, তাই লোকেশন দিয়ে অপেক্ষা করছে সবাই। অনেকক্ষণ এদিক-সেদিক দেখেও রাফানের দেখা নেই।

মেঘের হঠাৎ নজর যায় রাস্তার পাশে ছোট্ট একটা বিড়ালছানার দিকে। ফুটপাত ছেড়ে ব্যস্ত রাস্তায় নেমে পড়ছে সে। মেঘ একবার রাস্তার দিকে তাকায়, একের পর এক গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। সে দ্রুত ছুটে গিয়ে ছানাটাকে ধরে ফেলে। খুব সাবধানে অপরপাশে নামিয়ে দেয়।

পিহুরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরো মেঘের কান্ড দেখছিলো। মেঘ আবার রোড ক্রস করে এপাশে আসার জন্য হাঁটা দেয়। ঠিক পিহুদের কাছে পৌঁছতেই হঠাৎ পিহু চমকে ওঠে। সে মেঘের হাত ধরে এক টানে, নিজের দিকে টেনে নেয়। মেঘ পড়তে পড়তে নিজেকে সামনে নেয়। মেঘকে টেনে আনার এক সেকেন্ডের মধ্যেই ফুল স্পিডে একটা গাড়ি ছুটে যায় ঠিক মেঘ দাঁড়িয়ে থাকা জায়গা দিয়ে। তা দেখে ভয়ে স্থির হয়ে যায় মেঘ। আর একটু দেরি হলে কি হতো সেটাই ভাবছে। আশেপাশের মানুষজনও বলাবলি করছে,

-“ঠিক সময়ে টান না দিলে পিষে দিতো গাড়িটা…”

-“এমন রাস্তায় কেউ এত স্পিডে গাড়ি চালায় নাকি।”

পিহু আর সুমনা মেঘকে ইচ্ছে মতো বকে চলেছে,রাস্তা দেখে পার হতে জানে না, এতো কেয়ারলেস কেনো। এর মধ্যে রাফানও এসে পড়ে, সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে বসে।

রাফান মাথা নিচু করে আছে। চারপাশে নিরবতা। বেশ কিছুক্ষণ পর হঠাৎই বলে ওঠে,

-“আই’ম সরি পিহু, কালকের ঘটনাটার জন্য।”

পিহু শান্ত স্বরে জবাব দেয়,

-“সরি আমাকে না, আপুকে বলুন। সে ভেঙে পড়েছে অনেকটা।”

রাফান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

-“সে আমার কল-মেসেজ কিছুই দেখছে না। হয়তো কথা বলতে ইচ্ছুক নয়।”

তারপর অসহায় চোখে আকুতিভরা কণ্ঠে বলে,

-“পিহু প্লিজ, তুমি তোমার পরিবারকে বোঝাও। আমি সত্যিই তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে ফেলেছি। এভাবে সব শেষ হয়ে যাবে, মানতে পারছি না…”

রাফানের চোখে স্পষ্ট ভালোবাসা আর আকুলতা। মেঘ আর সুমনা সেটা টের পাচ্ছে, কিন্তু পিহুর চোখে তা ধরা পড়ছে না। সে নিজেই অন্ধ অন্য কারো প্রেমে। আবেগ উপেক্ষা করে স্বাভাবিক গলায় বলে,

-“দেখুন রাফান ভাইয়া, আমি আপনাকে ভাইয়ের চোখেই দেখেছি। এর বাইরে কিছু ভাবিনি।”

রাফান তাড়াতাড়ি বলে ওঠে,

-“তো কী হয়েছে? এখন থেকে অন্য চোখে দেখো। তোমার সময় লাগবে? আমি দেবো। যত চাইবে ততটাই সময় দেবো। জোর করবো না কিচ্ছুতে।”

পিহু মাথা নাড়ে,

-“না, ব্যাপারটা এমন নয়। অন্য কারণ আছে।”

রাফানের বুকটা কেঁপে ওঠে। ভয় হয়, অন্য  কারন?  কি কারণ? পিহু কি কাউকে ভালোবাসে? বুকে চিনচিন ব্যথা করছে। কাপাঁ কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

-“কী কারণ, পিহু?”

কিছুটা সময় নিয়ে পিহু বলে,

-“আমি একজনকে ভালোবাসি।”

কথাটা কানে আসতেই রাফান থমকে যায়। শুধু সে না, মনে হয় তার পুরো পৃথিবীই থেমে গেছে। বুকের ব্যথা বেড়ে ওঠে। শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে।

পিহু থেমে আবার বলে,

-“আমি তাকে ছাড়া অন্য কাউকে মেনে নিতে পারবো না।”

রাফান কিছু বলতে পারছে না। অনেক কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু মুখ দিয়ে কিছুই বেরোচ্ছে না। হঠাৎ আটকে আসা গলায় বলে ,

-“তাহলে কি আমি দেরি করে ফেললাম…?”

পিহু চুপচাপ তার দিকে তাকায়। রাফানের চোখে যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট। তার মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে যায়। নিচু গলায় বলে,

-“পরিবারকে আনার আগে আমার সাথে কথা বলা উচিত ছিলো।”

রাফান নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে। তখন পিহু মিনমিনিয়ে বলে,

-“প্লিজ ভাইয়া, বিয়ের চিন্তা বাদ দিন। আমাদের ভালোবাসার মধ্যে আসবেন না।”

রাফান কিছুক্ষন নিস্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। হঠাৎ সে উঠে দাঁড়ায়। বড় একটা শ্বাস ফেলে বলে,

-“তুমি ঠিক বলেছো। এটা আমারই ভুল। এতোদিন ধরে ভালোবেসে হালালভাবে নিজের করতে গিয়ে, যাকে ভালোবাসি, তাকে আগে থেকে ভালোবাসার কথা বলিনি। এটাই আমার ভুল। আগে বললে হয়তো আজকের দিন আসতো না। সরি পিহু, আমি এক্সট্রিমলি সরি। তোমার অনুভূতিকে আমি শ্রদ্ধা করি। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, তোমাদের মাঝে আসবো না। জানি না কে সেই ভাগ্যবান, যে তোমাকে এত সহজে পেয়ে গেলো। তবে দোয়া করি তোমাদের জন্য। এখন যাই, একটা মিটিং আছে।”

পিহু অবাক হয়ে বলে,

-“এত সহজেই মেনে নিলেন?”

রাফান মুচকি হেসে জবাব দেয়,

-“যদি তাকে খুশি না দেখতে পারি, তবে কেমন ভালোবাসা?”

সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। রাফান বেরিয়ে যায়।

তার চলে যাওয়া দেখে মেঘ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

-“কেউ ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ছুটে চলে, আবার কেউ ভালোবাসা পেয়েও হারায়।”

সুমনা আফসোস নিয়ে বলে,

-“ছেলেটা তোকে সত্যিই অনেক ভালোবাসতো রে। তার চোখে-মুখে তোকে পাওয়ার প্রবল ইচ্ছে ছিলো। তুই যখন বললি অন্য কাউকে ভালোবাসিস, উনি যেন ভেঙে পড়লেন।”

পিহু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

-“আমারই বা করার কী আছে বল? আমিও তো ভুল মানুষকেই ভালোবেসে বসেছি। কবে যে সে আমাকে বুঝবে…”

নিয়তির খেলা, কে কাকে পায়, কে পূর্ণতা পায়, তা কে জানে। তবে সবাই একে অপরের ভালোবাসার পূর্ণতার জন্যই ছুটে চলে।

———

চলে যায় আরও এক সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহে পিহু নিজের সঙ্গে একপ্রকার যুদ্ধ করেছে। বারবার ফারহানকে কল বা মেসেজ দিতে গিয়েও নিজেকে আটকে রেখেছে। মনের ভেতর জমেছে অনেক অভিমান, কিন্তু কার জন্য? যে তাকে বোঝে না, চায়ও না।

পিহু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকায়, তারপর নিজেকেই দেখে হেসে বলে,

-“তুই এতোটা তুচ্ছ রে পিহু। এক সপ্তাহে তুই ইগনোর করেই ভেতর থেকে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিস। অথচ যাকে ইগনোর করছিস তার খোঁজই নেই।”

———

সেই সকাল থেকে রুদ্র মেঘের পিছে পিছে ঘুরছে। বউ রেগে আছে। সকালের অফিসিয়াল কলে কথা কাটাকাটির কারণে মেজাজ খারাপ হয়েছিল, আর সেই রাগ গিয়ে ঝেরেছে মেঘের উপর।

মেঘ আলমারি থেকে রুদ্রের কাপড় বের করে বিছানায় ঠুসঠাস রাখে, কোনো কথা না বলেই অন্য পাশে যায়। রুদ্র পিছু নিয়ে আটকাতে চাইলে সে হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে দেয়।

-“এই বউ, এত রাগ করছো কেনো?”

-“রেগে নেই, একদম কাহিনি মারবেন না।”

রুদ্র ঢোক গিলে ফেলে। রেগে নেই বললেও কথায় স্পষ্ট রাগ। অতঃপর মুচকি হেসে মেঘকে গলাতে বলে,

-“পুরুষ কিন্তু আটকায় বউয়ের মিষ্টি মিষ্টি কথায়…”

মেঘ উত্তর দেয়,

-“আমার এত পুরুষদের নিয়ে জানার দরকার নেই। আমার পুরুষ আমার জালে আটকালেই হবে। আর যদি না আটকে, তবে খবরের কাগজে শিরোনাম হবে ‘স্বামীর গোপন অঙ্গ কেটে ১০ টুকরো করলেন মিসেস মেঘ চৌধুরী’।”

রুদ্র চমকে তাকায়, সাথে সাথে হাত চলে যায় নিজের জায়গায়। চোখ বড় বড় করে মেঘকে দেখছে। শান্ত গলায় বড়সড় হুমকি দিলো বউ। এদিকে মেঘ হনহনিয়ে নিচে নেমে যায়, রুদ্রও চুপচাপ কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢোকে।

সকালের নাস্তা শেষে রুদ্র মেঘদের ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।

———

বিচ্চু বাহিনী মাঠের মাঝে বসে আছে। তাদের কেন্দ্রবিন্দু এখন পিহু। সুমনা চিপস খেতে খেতে বলে,

-“আমার তো মনে হয়, ফারহান ভাইয়া তোকে ভালোবাসে না। নয়তো এতদিনে একটু হলেও খোঁজ নিতো। বাদ দে, নিজেকে হুদাই কষ্ট দিচ্ছিস।”

পিহু হতাশ স্বরে বলে,

-“কি করবো আমি? ভালো লাগছে না একদম। উনাকে তো বাদও দিতে পারবো না আমি।”

মেঘ ভাবলেশহীনভাবে বলে,

-“বাদ দিতে কে বলেছে? এখনো দ্বিতীয় প্ল্যান আছে। ওইটা কাজ না হলে তারপর বাদ।”

-“ওটাই এখন শেষ ভরসা।”

পিহুর ফোন নিয়ে মেঘ ফারহানকে মেসেজ পাঠায়, “ফারহান, প্লিজ হেল্প। আমাকে বাঁচান…”

মেসেজ পাঠিয়েই ফোনটা ফেরত দেয়। তারপর সবাই ক্যান্টিনে গিয়ে বসে। ক্লাস চলছে, তাই স্টুডেন্টসও কম। পিহু নখ কামড়ে বলে,

-“উনি কি আসবেন?”

রিক ঘড়ি দেখে ভেবে বলে,

-“যদি তোকে ভালোবেসে থাকেন, তবে ১০ মিনিটের মধ্যেই চলে আসবেন। এখান থেকে সচিবালয় ১৫ মিনিটের রাস্তা, দ্রুত এলে ১০ মিনিট লাগবে। এতক্ষণে ৩ মিনিট গেলো, দেখা যাক বাকি ৭ মিনিটে আসেন কি না।”

———

ফারহান চেয়ারে হেলান দিয়ে গভীর মনোযোগে একটা?মেয়ের ভিডিও দেখছে। মেয়েটির মুখে রাগ, ভারি লেহেঙ্গা দুই হাতে সামলে এগিয়ে আসছে। সেই মুহূর্তের ক্লিপ। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল। হঠাৎ পিহুর নাম্বার থেকে মেসেজ দেখে ভ্রু কুঁচকে ওপেন করে।

মেসেজ দেখতেই মুহূর্তে হকচকিয়ে উঠে। বুক কাঁপতে শুরু করলো। পিহুর কি হলো? ঠিক আছে তো? ভাবতে ভাবতেই দৌড়ে গাড়ির দিকে যায়। ড্রাইভারকে দ্রুত বের করতে বলে। অনেকে জিজ্ঞেস করছিলো কি হয়েছে, কোথায় যাচ্ছেন। কিন্তু ফারহান কিছুই বলার প্রয়োজন মনে করল না। ছুটে চলল নিজের গন্তব্যে, আতঙ্কিত মস্তিষ্ক নিয়ে।

অনেকবার কল করছে কিন্তু ঢুকছে না। সাথে সাথেই নাম্বারের লোকেশন ট্র্যাক করে, ভার্সিটিতে দেখায় পিহুকে। আরও ভয় পেতে লাগে, কোনো খারাপ ছেলের পাল্লায় পড়লো নাকি।

ভার্সিটিতে এসে একে একে তন্নতন্ন করে ক্লাসগুলো খুঁজতে লাগে, কিন্তু পিহুর দেখা নেই। ফারহানের হাত-পা কাঁপছে, শ্বাস দ্রুত হচ্ছে। তাকে দেখে শিক্ষক-শিক্ষিকারা এগিয়ে আসে।

-“স্যার, আপনি এখানে? হঠাৎ এমন অবস্থায় কেনো? কোনো সমস্যা?”

ফারহান ভীত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,

-“পিহু… পিহুকে দেখেছেন?”

স্টুডেন্টসও জড়ো হয়েছে অনেকটা। তাদের একজন বলে,

-“জী, ক্যান্টিনের দিকে যেতে দে..”

কথা শেষ হবার আগেই ফারহান ছুটে ক্যান্টিনের দিকে।

———

পিহু মন খারাপ করে বসে আছে। ১০ মিনিট তো দূরের কথা, ২০ মিনিট হয়ে গেছে, তবু ফারহানের দেখা নেই। সুমনার কথায় মোবাইলও অফ করে রেখেছিল। মন খারাপ দেখে মেঘ, রিক, সুমনা নানা জোকস বলছিলো। পিহু তাই মন খারাপ সাইডে রেখে তাদের সাথে হেসে উঠে। তবে সেই হাসি টিকলো না।

হঠাৎ ঠাস করে গালে থাপ্পড় পড়লো। মাথা ঝিম ধরে গেলো, চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। গালটা জ্বলছে,। কি থেকে কি হলো কিছুই বুঝে আসছে না। মাথা ধরে সামনে তাকিয়েই আতঙ্কে জমে গেলো।

ফারহান দাঁড়িয়ে আছে। চোখ লাল হয়ে আছে রাগে, কপালের ঘারের রগ ফুলে উঠেছে। পিহু ভয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়াতেই আরেকটা থাপ্পড় পড়লো অন্য গালে। এবার টেবিলে গিয়ে ধাক্কা খেলো, টেবিল ধরে সামলায় নিজেকে। সাথে সাথেই হুরহুরিয়ে কেঁদে উঠলো ব্যথায়। ফারহান সামনে এসে তার দুই বাহু শক্ত করে ধরে গর্জে উঠলো,

-“এই! তুই আমাকে মিথ্যে বলেছিস? মিথ্যে বলে আমাকে পাগলের মতো ছুটিয়ে এনেছিস? ধারনা আছে, আমি কতোটা ভয় পেয়েছিলাম? পুরো ভার্সিটি খুঁজেছি, তোকে না পেয়ে শ্বাস নেওয়ারও সুযোগ পাচ্ছিলাম না। তুই আমার ইমোশন নিয়ে খেলছিলি?”

পিহু ফুঁপিয়ে কাঁদছে। গালের ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করছে, যেনো এক্ষুনি অজ্ঞান হয়ে যাবে। ফারহানের ভয়ংকর রূপ আত্মা কাপিয়ে দিচ্ছে। নিজেকে আর সামলে রাখতে পারে না হেলে পড়ে। পিহুকে পড়ে যেতে দেখে ফারহান নিজের বাহুডোরে টেনে নিলো। নিমেষে রাগ কমে গিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লো।

মেঘ-সুমনা-রিক ছুটে আসে। ফারহানও ভড়কে যায় , কি করবে বুঝছে না। দ্রুত কোলে তুলে গাড়ির দিকে হাঁটা ধরলো। সাথে ওরাও পিছু নিলো।

———

মেডিকেলের সিটে শুয়ে আছে পিহু। সামনে ফারহান গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে। পাশে মেঘ, রিক, সুমনা কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওরাও ঝাড়ি খেয়েছে ফারহানের কাছ থেকে।

ডাক্তার চেক-আপ করে বললেন,

-“তেমন কিছু না, দুর্বলতা থেকে হয়েছে। খাওয়াদাওয়া নিয়মিত করাবেন।”

ডাক্তার বেরিয়ে যেতেই ফারহান একবার পিহুর দিকে তাকায়। থাপ্পড় খেয়ে দু’গালই লাল হয়ে আছে। মুহুর্তেই চোখ সরিয়ে বেরোতে বেরোতে বললো,

-“এই মেয়েকে এখনই বাসায় নিয়ে যান। আর একে যেনো আমার আশেপাশেও না দেখি।”

বলেই বেরিয়ে গেলো। গলায় রাগ আর ক্ষোভ স্পষ্ট। পিহুও বেশ বুঝতে পারলো। মেঘ এগিয়ে এসে বসে,

-“ভাইরে ভাই! পুরোই রুদ্রের ফটোকপি মনে হলো। আমাদেরও যেই ঝাড়ি দিলো।”

সুমনা বলে উঠলো,

-“সে যাই বল, একটা জিনিস খেয়াল করেছিস?”

সবাই একসাথে,

-“কি?”

-“পিহুর জন্য কেমন পাগলের মতো ছুটে এলো। পুরো ভার্সিটি খুঁজলো। দেখতেও কত চিন্তিত লাগছিলো। কথাবার্তা শুনেছিস? মনে হচ্ছিলো ভীষণ ভয় পেয়েছে।”

রিক মাথা নেড়ে বললো,

-“হ্যাঁ। যখন পিহু অজ্ঞান হলো তখনও ওর অবস্থা দেখার মতো ছিলো। আমি সিউর, উনার মনে পিহুর জন্য সফট কর্নার আছে। নয়তো এতটা উতলা হতো না।”

তাদের কথায় পিহুর চিন্তিত মুখেও এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। একটু আশার আলোর দেখা মিললো। নিজেকেই নিজে বলে,

-“না, হেরে গেলে চলবে না। উনার মনে আমার জন্য কি আছে, আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে…….

চলবে…….

[অনেক অনেক দুঃখিত বেশি দেরি হয়ে গেলো..😓]

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply