Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫২


#আড়ালে_তুমি |৫২|

#_সাইদা_মুন 

ড্রয়িং রুমে রমরমা পরিবেশ। উপস্থিত সবাই বিস্মিত, অবাক। সামিয়া অবুঝ শিশুর মতো তাকিয়ে রাফানের মুখপানে। রাফানের কথায় ফারুখ সাহেব প্রশ্ন করেন,

-“সামিয়াকেই তো দেখতে আসলাম..”

রাফান থমকে যায়। সে তো পিহুর জন্য বলেছিলো। নিরবতা ভাঙে, রাফান দ্রুত উঠে দাঁড়ায়,

-“না আব্বু, আমি পিহুকে পছন্দ করি, ওর কথা বলেছিলাম।”

হঠাৎ পরিবেশ অদ্ভুত শান্ত হয়ে যায়। সামিয়া চমকে তাকায়, অবিশ্বাস্য চোখে একবার রাফানের দিকে, আর একবার এরশাদুল চৌধুরীর দিকে। পিহু ও বিস্মিত, রাফানের কথায় সে স্তব্ধ। বাড়ির সবাই হতবাক, কেউ বুঝে উঠতে পারছে না কি ঘটছে।

এনামুল চৌধুরী রেগে যান, সাথে এরশাদুল চৌধুরীও। তিনি কড়া কণ্ঠে বলেন,

-“এসব কোন ধরনের ফাইজলামি রাফান, এখানে কোনো তামাশা চলছে না। আমার মেয়ে কোনো খেলনা পুতুল না…”

রাফান অসহায় কণ্ঠে জানায়,

-“সরি, আংকেল। কিন্তু আমি পিহুকে পছন্দ করি। ওরজন্যই বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে বলেছিলাম। হয়তো কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।”

রাফানের কথায় তার মা উঠে আসে,

-“কি বলছিস তুই ?”

-“হ্যা মা, আমি বলেছিলাম এরশাদুল আংকেলের মেয়ের কথা মানে পিহু।”

ফারুখ সাহেব থমথমে মুখে বললেন,

-“আমি ভেবেছি সামিয়া”

চৌধুরী বাড়ির সবাই রেগে আছেন। বড় মেয়েকে রেডি করিয়ে এনে এখন বলা হচ্ছে, ছোট মেয়েকে পছন্দ করা হচ্ছে। এক প্রকার অপমান। মেঘ অসহায় চোখে সামিয়ার দিকে তাকায়। সামিয়া দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত হয়ে বসে আছে। হাত মুঠো করা, পা কাপছে, কিন্তু চেষ্টা করছে নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর। নিজের কাছে তাকে নিজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রানি মনে হচ্ছে। চোখ টলমলে। সামিয়ার পাশে এসে তার মা বসে। এমন সময় হয়তো মেয়ের মনের অবস্থা ভালো নয় টের পেয়েছেন । অল্প ভাঙা স্বরে বলেন,

-“আম্মু, মন খারাপ করোনা, নিজেকে শক্ত রাখো। এগুলো কিছুই না, শুধু ভুল বোঝাবুঝি।”

এরশাদুল চৌধুরী রেগে উঠে বলেন,

-“আমি আমার বাড়ির কোনো মেয়ের বিয়ে এখন দিতে রাজি নই।”

রাফান চমকে যায়। এভাবে পরিস্থিতি গরমেল হয়ে যাবে, সে ভাবতেও পারছে না। ফারুখ সাহেব কিছু বলার ভাষা পাচ্ছেন না। এরশাদুল চৌধুরী সামিয়ার সামনে আসেন আদরের মেয়েটিকে এভাবে চুপসে থাকতে দেখে উনার বুকে হালকা ব্যথা হচ্ছে। সেই তো এই পরিবারের প্রথম রাজকন্যা, তারপর আসলো পিহু। বড্ড আদরের দুই মেয়ে তাদের কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারেন না। সামিয়ার মাথায় হাত রেখে শান্ত কণ্ঠে বলে,

-“আম্মু, আমাকে মাফ করে দিও। বড় আব্বুর ভুল হয়েছে। ইউ আর মাই প্রিন্সেস, আমি আমার প্রিন্সেসের জন্য অনেক ভালো ছেলে খুজে আনবো।”

সামিয়া মাথা তুলে তাকায়, জোরপূর্বক হেসে বলে,

-“না, বড় আব্বু। তোমার কোনো ভুল হয়নি। এইটা একটা মিস্টেক, আই এক্সেপ্ট ইট..”

সামিয়ার কথার মধ্যে এমন কিছু ছিল যা রাফানের মনে গভীর দাগ কাটে। তবে সে এটাকে, পিহুকে নিজের করে না পাওয়ার ব্যথা হিসেবে অনুভব করে। সামিয়া উঠে দাঁড়ায়, আর মেঘ পিহু দ্রুত এগিয়ে এসে তার পাশে দাঁড়ায়। একটু আগে কতো হাসিখুশি ছিলো মেয়েটা। লজ্জা পাচ্ছিলো মুচকি হাসছিলো একা একা কিছু ভাবছিলো আর এখন কিছু সময়ের ব্যবধানে।

সামিয়া একবার মেঘের দিকে তাকায়। নরম স্বরে বলে,

-“মেঘ, আমাকে একটু ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিবে? পা ব্যথা করছে”

সবাই অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে সামিয়ার দিকে। মেঘ-পিহু তাকে ধরে ঘরে নিয়ে আসে। সামিয়া একবার রাফানের দিকে তাকায়, সে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সামিয়ার চোখে ভেসে উঠা ব্যথা রাফানের চোখে স্পষ্ট ধরা পড়ে। মুহুর্তেই সামিয়া মুখ ফিরিয়ে নেয়। মেয়েটি ভীষণ কষ্ট পেয়েছে, যা স্পষ্ট চোখে পড়ছে। তবে কেনো? দেখতে এসে এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে নাকি অন্য কারনে।

———

সামিয়া ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেয়। পিহুরা তার সাথে থাকতে চেয়েছিল, কিন্তু চেঞ্জ করবে বলে তাদের বের করে দেয়। সাওয়ার অন করে তার নিচে বসে আছে সামিয়া। দেখতে আসার সময় যেমন সাজ ছিল, এখনও তাই আছে, শুধু মেকাপটা ধুয়ে নেমে গেছে। গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু কান্না আসছে না। ভেতরে এক জগাখিচুড়ি অবস্থা, অসহনীয় যন্ত্রণা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকায়,

-“আমি কি এতটাই ফেলনা? আমাকে কি কেউ ভালোবাসে না, কেউ নিজের জীবনে চায় না। আমি কি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই? মেঘ না চাইতেও রুদ্র ভাইকে পেয়ে গেল। আমি কেনো এতো কষ্টের পর আকড়ে ধরার মানুষ পেলাম না? মানুষ একবার ভুল করলে শিক্ষা নেয়, আমি বারবার একই ভুল করছি। রাফান যদি আমাকে পছন্দই না করে, তবে কথা বলে কেন? দিনে তিনবেলা খোঁজ নেয় কেন? শুধু বন্ধুত্বের খাতিরে? তবে কি আমি ভুল ধারনায় ছিলাম? “

কিছুক্ষণ চুপ করে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকে। এবার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। বাথরুমের দরজার পাশে বসে ফুপিয়ে ওঠে সামিয়া,

-“আমি তো শুধু একটু ভালো থাকতে চেয়েছিলাম। একটু ভালোবাসা, একটু আঁকড়ে ধরার মানুষ চেয়েছিলাম। আমি আর পারছি না। আমি তো ভাঙতে চাইনি এভাবে। উনি যদি ভাঙারই ছিলেন তবে শক্ত হতে দিলেন কেন? আমি তো আপনাকে আঁকড়ে ধরে রুদ্র ভাইকে ভুলতে চাইছিলাম। অথচ আপনি আমার পুরনো ক্ষত আরও গভীর করে দিলেন, রাফান…”

———

রাফানরা চলে যাওয়ার পর থেকেই বাড়িতে নিরবতা। মেঘ আর পিহু সামিয়াকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। পিহু আবার দুশ্চিন্তায় আছে রাফানকে নিয়ে। যদি কোনোভাবে পরিবার রাজি হয়ে যায় তবে তার কী হবে?

-“দোস্ত, আমার ভয় লাগছে। ওদিকে ফারহানকে রাজি করাতে পারছি না, আর এদিকে যদি রাফান ভাইয়া পরিবার মানিয়ে নেন তাহলে?”

মেঘ একটু ভেবে বলে,

-“আমার মনে হয় সামিয়া আপু রাফান ভাইকে পছন্দ করে।”

পিহুও ভেবে মাথা নাড়ে,

-“আমারও তাই মনে হচ্ছিল। কাল থেকেই আপুর আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল অনেক খুশি। আমি তো ভেবেছিলাম তারা হয়তো নিজেদের মধ্যে কথা বলে পরিবারকে জানিয়েছে। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল…”

মেঘ উঠে দাঁড়ায়,

-“চল, সামিয়া আপুকে সময় দিই। উনার মন-মানসিকতা ভালো নেই একা থাকলে আরও খারাপ লাগবে।”

দু’জনে গিয়ে সামিয়ার দরজায় নক করে। কয়েকবার ডাকতেই দরজা খোলে। মেঘদের দেখে সামিয়া মুচকি হেসে বিছানায় গিয়ে বসে। মেঘ তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে, সে কেঁদেছে। চোখ ফুলে আছে। মেঘ পাশে বসতে বসতে বলে,

-“আপু, মন খারাপ করবেন না। আল্লাহ নিশ্চয়ই আপনার জন্য আরও ভালো কিছু রেখেছেন। ভরসা রাখুন।”

সামিয়া তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,

-“আমার ভাগ্য তোমাদের মতো ভালো না গো। তবে হ্যাঁ, আল্লাহর উপর ভরসা রেখেই এখনো দাঁড়িয়ে আছি।”

মেঘ-পিহু চুপ হয়ে যায়। সামিয়ার কণ্ঠে চাপা কষ্ট। এসব দেখে পিহু গিয়ে সামিয়ার কোলে শুয়ে পড়ে,

-“সামিপু, মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না। অনেকদিন ধরে তুমি আমার খেয়ালই রাখছ না দেখছি।”

সামিয়া ম্লান হেসে বলে,

-“তুই তো এখন বড় হয়ে গেছিস। আগের মতো আর আবদার করিস না, সামিপু এইটা লাগবে, ওইটা লাগবে বলে।”

পিহু হেসে বলে,

-“এখন একটু ছাড় দিচ্ছি তোমাকে। ছোটবেলায় তো কম জ্বালাইনি। জানিস, মেঘ, আগে আব্বু বা চাচ্চু কিছু আনলে আপু আগে আমাকে পছন্দ করতে দিত কোনটা নেবো আমি। আমি বেছে নিলে বাকি যা থাকত আপু নিত।”

তারপর একটু থেমে মুখটা ভোতা করে বলে,

-“কিন্তু মজার বিষয় হলো, আমি যেটাই নিতাম শেষে দেখতাম আপুরটাই বেশি সুন্দর।”

সবাই উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। সামিয়া হাসতে হাসতে বলে,

-“তারপর জানো মেঘ, পিহু কী করত?”

মেঘ কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-“কি?”

-“আমার কাছে এসে আশেপাশে ঘুরঘুর করত। আমার প্রশংসা করত। তারপর জিজ্ঞেস করলে বলত  আপু আমার খারাপ লাগছে ভালোটা নিয়ে। সুন্দরটা তুমি রাখো, আমাকে ওই খারাপটা দাও। বড় বোনদের ভালো জিনিস নেওয়ার অধিকার আছে।”

আবারও সবাই হেসে ওঠে। তাদের হাসি শুনে নিচ থেকে মা চাচি দাদিরাও উপরে চলে আসেন। তারপর সবাই মিলে ছোটবেলার স্মৃতি নিয়ে আড্ডা জমে ওঠে। সিদ্দিকা বেগম অ্যালবাম বের করেন। একে একে সবার শৈশবের ছবি দেখান। কিন্তু শেষের দিকের এক ছবি দেখে মেঘ হঠাৎ চোখ বড় করে ফেলে। ছবিটা দেখে বাকিরাও হেসে ওঠে। দাদি হেসে বলেন,

-“এইটা রুদ্রের পাঁচ বছরের বয়সের লেংটু ছবি। অ্যালবাম থেকে এই ছবি সরাতে ও কত ঝামেলা করেছে। কিন্তু আমি দিইনি। এগুলো আমি তোদের ছেলে-মেয়েদেরও দেখাবো।”

সবাই হেসে লুটোপুটো খাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ দাদির পরের কথায় মেঘের হাসি কাশিতে পরিণত হয়।

-“তা, প্রস্তুতি নিচ্ছো তো? আমার বউমাকে নাতিপুতির মুখ দেখাবে কবে?”

মেঘ কাশতে থাকায় পিহু তাকে পানি এগিয়ে দেয়। সিদ্দিকা বেগম বলেন,

-“আহ মা, এসব কথা থাক। আগে ওদের বিয়ের অনুষ্ঠান হোক…”

বাকিটা বলেন না, চুপ হয়ে যান। সবাই সামিয়ার দিকে তাকায়। তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে আছে। তাই বিয়ের প্রসঙ্গ আর টানে না।

———

রাত ১১টা। পিহু ফোন হাতে বসে আছে। মেঘ পাশের সোফায় বসে দরজার দিকে আর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে বারবার। হঠাৎ মেঘ জিজ্ঞেস করে,

-“রাফান ভাইকে বলেছিস তো কাল আসতে?”

-“হ্যাঁ…”

তারপর দীর্ঘ নীরবতা। পিহু তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে,

-“আমি ক্লান্ত রে মেঘ। সারাদিন হয়ে গেলো, এই ছেলে আমার মেসেজের রিপ্লাইই দিচ্ছে না। আমি ইগো ফেলে ওগো-ওগো করছি, আর সে উল্টো ইগো দেখাচ্ছে!”

মেঘ কিছুক্ষণ পিহুকে লক্ষ্য করে। তাকে ভীষণ অগোছালো লাগছে। কিছু একটা ভেবে বলে,

-“আমার কাছে দুটো আইডিয়া আছে…”

পিহু কৌতূহলী চোখে ঝুঁকে বলে,

-“কি?”

-“তুই এক সপ্তাহ উনাকে ইগনোর কর।”

পিহু হতাশ হয়ে বলে,

-“মেসেজই দেখে না, ইগনোর করলে বুঝবেও না।”

-“আরে গাধা, বুঝবেই। কেউ যদি সবসময় খোঁজ নেয়, হঠাৎ বন্ধ করলে একটু হলেও প্রভাব পড়ে।”

-“সত্যি?”

-“অবশ্যই।”

-“আর যদি কাজ না হয়?”

মেঘ শয়তানি হেসে বলে,

-“তাহলে আরেকটা রাস্তা আছে। গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, কাজ হবেই, যদি তার তর প্রতি একটু হলেও ভালোবাসা থাকে।”

পিহু অবাক হয়ে বলে,

-“কি সেটা?”

মেঘ তাকে বুঝিয়ে বলে। শোনামাত্র পিহু মেঘের পিঠে চাপড় মেরে বসে,

-“এই না হলো আমার ভাইয়ের বউ। পুরাই রাজনৈতিক বুদ্ধি মাথায় কিলবিল করছে। কাজ হলে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না।”

এমন সময় সাদ পানি নিতে নিচে এসে তাদের দেখে,

-“তোরা এখানে কী করছিস?”

পিহু মাথা ঘুরিয়ে বলে,

-“মেঘ ভাইয়ার জন্য ওয়েট করছিল। আর আমার ঘুম আসছিল না, তাই ওর সাথে আড্ডা দিচ্ছি।”

সাদ পাশে বসে বলে,

-“কি ব্যাপার, ভাইয়া এখনো আসেনি?”

মেঘ রেগে বলে,

-“না, কল করেছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে বুঝি।”

পিহু মজা করে বলে,

-“ভাইয়া এলে ভালো করে খবর নিস। জামাইদের শাসনে রাখতে হয়।”

সাদও সাথে তেল মারে,

-“হ্যা হ্যা, ঠিকই বলেছে।”

তাদের কথায় মেঘ আরও রেগে যায়। ঠিক তখনই কলিং বেল বাজে। সাদ বলে ওঠে,

-“ভাবি, ভাইয়া এসেছে। ভালো করে ক্লাস নেও ঘরে ঢোকার আগে। আমরা আছি তোমার পেছনে।”

মেঘ দরজা খুলতে যায়। এদিকে পিহু আর সাদ খিলখিলিয়ে হাসছে। রুদ্র ভাইকে সামলাতে গিয়ে মেঘ কেমন করে তা দেখার জন্য তারা অপেক্ষায়।

দরজা খুলতেই রুদ্র ঢুকতে যায়, তবে মেঘ পথ আটকে দাঁড়ায়। রুদ্র ভ্রু কুঁচকে মেঘের দিকে তাকায়,

-“কি হলো, পথ আটকালে কেনো?”

মেঘ দাঁত কিরমিরিয়ে বলে,

-“এই আপনার আসার সময় হলো? ঘড়ি দেখে এসেছেন?”

রুদ্র একটু মিয়িয়ে যায় চাপা স্বরে বলে,

-“আসলে ওই… ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা..”

-“ওহহো, এখন ফ্রেন্ড পেলে বউ ভুলে যান? তো বউকে এখানে রেখে দিয়েছেন কেনো? দিয়ে আসুন বাপের বাড়ি।”

রুদ্র ঢোক গিলে একবার পিহুদের দিকে তাকায়। এদিকে সাদ পিহু হেসেই যাচ্ছে রুদ্রকে বউয়ের সামনে এমন ভেজা বিড়াল হতে দেখে। রুদ্র হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে মুখটা গম্ভীর করে নেয়। তাদের দিকে কড়া চোখে তাকাতেই হাসি থেমে যায় দুটোর। অতঃপর মেঘের কাছে ঝুঁকে আস্তে বলে,

-“বউ, রুমে চলো। তখন যত ইচ্ছে রাগ দেখিও। এখানে নয়, পিহুরা দেখছে।”

এই কথায় মেঘ আরও দ্বিগুণ রেগে যায়। গলা উঁচিয়ে বলে,

-“পিহুরা আছে তো কি হয়েছে? আপনি লেট করেছেন, তাই এখন আপনার ঘরে ঢোকা নিষেধ। জান-জান বন্ধুর বাড়িতে।”

রুদ্র মাথা চুলকে মিনমিনিয়ে বলে,

-“আই’ম সরি বউ, আর এমন হবে না।”

-“এমনে হবে না মানে, কানে ধরতে হবে।”

রুদ্র হকচকিয়ে যায়,

-“কিইই, আমি বাচ্চা নাকি, এই বউ এই কি বলছো?”

-“তা আমি জানিনা, তবে না ধরলে অন্য রুমে ঘুমাবেন। আমার রুমে জায়গা নেই।”

রুদ্র অসহায় চোখে একবার মেঘের দিকে, একবার পিছনের বিচ্চুদের দিকে তাকায়। বউ ছাড়া ঘুমাতে সে পারবে না। হঠাৎ ওদের দিকে ঝারি মেরে বলে,

-“এই রাত কয়টা বাজে, এখনো ঘুমাস নি? এক্ষুনি রুমে যা বলছি।”

রুদ্রের ধমকে সাদরা হেসে গড়াগড়ি খায়। উঠে যেতে যেতে পিহু গেয়ে ওঠে,

“আখ খেতে ছাগল বন্দি,

জ্বলে বন্দি মাছ,

বউয়ের কাছে রুদ্র ভাই বন্দি,

কানে ধরায় বারো মাস..

সখি গোওও আমার মন বালা না….”

রুদ্র পিহুর গান শোনে রেগে বলে,

-“দাঁড়া, আজেবাজে গান শিখা বের করছি।”

কিন্তু কে কারে পায়, সে ভোঁ দৌড়। মেঘের সামনে এসে একটু ঝুকে ঠোঁট উল্টে কানে ধরে রুদ্র,

-“সরি বউ, সত্যি আর এমন হবেনা।”

রুদ্রকে এভাবে কানে ধরতে দেখে মেঘের হাসি পায়। তবে নিজেকে সামলে ভাব নিয়ে বলে,

-“ওকে, ভেবে দেখবো।”

রুদ্র অবাক হয়ে বলে,

-“ভেবে দেখবে মানে?”

মেঘ একপা পিছু হটে বলে,

-“রুমে জায়গা দেবো কিনা সেটা ভেবে দেখছি।”

আর কিছু বলার আগেই রুদ্র চোখের পলকে মেঘকে কোলে তুলে নেয়,

-“যেই রুদ্র কোনোদিন কানে ধরা তো দূরে সরিও সহজে বলে না তাকে, কানে ধরিয়ে পল্টি নেওয়া হচ্ছে।”

মেঘ হকচকিয়ে রুদ্রের গলা আঁকড়ে ধরে বলে,

-“আরে কি করছেন। নামান, কেউ দেখে ফেলবে।”

রুদ্র পাত্তা না দিয়ে একহাতে দরজা লাগিয়ে তাকে নিয়ে রুমে যায়। ঘরে সে সোফায় বসে, মেঘকে ছাড়েনি। মেঘ ছোটার চেষ্টা করলেও শক্ত করে ধরে রাখে। রুদ্রের ঘোরলাগা চোখ মেঘের ওপর নিবদ্ধ। মেঘ ভড়কে গিয়ে আমতা-আমতা করে বলে,

-“আরে ছাড়ুন, আমি খাবার গরম করে আনি।”

-“লাগবে না, খাবো না।”

-“কেনো?”

রুদ্র এক আঙুলে মেঘের ঠোঁটে আলতো ছোঁয়া দিয়ে বলে,

-“অন্য কিছু খাবো।”

মেঘের যেনো এতোক্ষনের সব হাওয়া ফুস হয়ে যায়। কাঁপাকাঁপি শুরু করে, মুখ দিয়ে কোনো শব্দই বের হচ্ছে না। রুদ্র মেঘের দিকে এগিয়ে যায়, যেই ঠোঁটজোড়া আকরে ধরবে, ঠিক তখনই রুদ্রের ফোন বেজে ওঠে। বিরক্ত হয়ে ফোন বের করে। স্ক্রিনে নাম দেখে রুদ্রের মুখ থেকে গালি বেড়িয়ে আসে,

-“মাদা***…”

এদিকে বাধন ঢিলে হতেই মেঘ সুযোগ নিয়ে দ্রুত নিচে নেমে যায়। রুদ্র বিরক্ত হয়ে কল ধরে,

-“বোকা**, অসময়ে কল দিস কেনো?”

ওপাশ থেকে ফারহান বলে,

-“বাল ছিঁড়তে”

-“পারলে একটা ছিঁড়ে দেখা”

-“একটা কেনো, চিপায় আয় সবকটাই তুলে দেবো…”

-“শা*লা গে, কাজের কথা বল আর বিদেয় হ!”

-“হোয়াটসঅ্যাপ চেক কর। এখন যা মারা খা।”

বলেই কল কেটে দেয়। রুদ্র হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে দরকারি ডকুমেন্ট দেখে চেক করে নেয়, তারপর ফ্রেশ হতে যায়।

কিছুক্ষণ পর মেঘ খাবার গরম করে এনে টেবিলে রাখে। রুদ্র বাথরুম থেকে বের হতেই মেঘ অবাক। আজ প্রথম রুদ্রকে লুঙ্গি পরে দেখলো। খালি গা, সুঠাম শরীর, ভীষণ আকর্ষণীয় লাগছে। এতোদিন তো ফুল প্যান্ট নয়তো হাফ প্যান্টই পড়তো। মেঘকে এভাবে তাকাতে দেখে রুদ্র  কাছে এসে বলে,

-“কি ব্যাপার, চোখ দিয়েই খেয়ে ফেলবে নাকি? চাইলে মুখ দিয়েও খেতে পারো।”

রুদ্রের লাগামহীন কথায় মেঘের ধ্যান ভাঙে। বিরবির করে কিছু গালি দেয়, খাবার বাড়তে থাকে।

-“তুমি খেয়েছো?”

-“না।”

মেঘ বিরক্ত হয়ে বলে,

-“তোমাকে না বলেছি, খাবার সময় খেয়ে নিতে। আমার জন্য ওয়েট করতে হবে না, আর কতবার বলবো?”

সে রুদ্রের হাতে প্লেট দিয়ে বলে,

-“আপনি বুঝবেন না। খেতে গেলেই মনে হয় লোকটা খেলো কিনা। তখন আর গলা দিয়ে খাবার নামে না।”

কথাটা রুদ্রের বুক ছুঁয়ে যায়। মুখে হাসি ফোটে, বউ তবে সারাক্ষণ তার কথাই ভাবে। মেঘকে আরেকটা প্লেট তুলতে দেখে রুদ্র থামিয়ে দেয়,

-“হা করো, স্বামী-স্ত্রী এক প্লেটে খাওয়া সুন্নত।”

মেঘ মুচকি হেসে মুখে খাবার নেয়,

-“বাব্বাহ, রুদ্র সাহেব তো দেখি অনেক কিছু জানেন।”

রুদ্র হাসে,

-“আরও জানি। যেমন, এক প্লেটে খেলে আমাদের মধ্যে ভালোবাসা বাড়বে। আর ভালোবাসা বাড়লে তার ফলও তাড়াতাড়ি পাবো…”

মেঘ কড়া চোখে তাকায়,

-“খেতে বসে কথা বলতে নেই, এইটা জানেন না? চুপ করুন।”

রুদ্র মেয়েদের মতো ভেংচি কেটে বলে,

-“কাজের কথায় গেলেই চুপ।”

মেঘ খিলখিলিয়ে হেসে ফেলে। রুদ্রও হেসে ওঠে। এভাবেই হাসি-ঠাট্টার মাঝে খাওয়া শেষ হয়।

চলবে…….

[ কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ]

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply