Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫১


#আড়ালে_তুমি |৫১|

#_সাইদা_মুন

মেঘকে সোফায় বসিয়ে রুদ্র একগ্লাস পানি এগিয়ে দিল। এসির তাপমাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে তার পাশেই বসল,

-“তুমি এখানে? কোনো দরকার হলে আমাকে কল দিতে।”

মেঘ একবার সামনে বসা মেয়েটির দিকে তাকায়। মেয়েটি মেঘের দিকেই হেসে তাকিয়ে আছে। গোলগাল মুখে অদ্ভুত মায়াময় ভাব। উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট ছয় এর কাছাকাছি দেখেই লম্বা লাগছে, গড়ন মাঝারি অতিরিক্ত রোগা না, মোটাও না। লম্বা কালো চুল ছেড়ে রাখা, গায়ে ধূসর রঙের শাড়ি, ভীষণ ভদ্র আর পরিপাটি ভঙ্গিতে পরা। পুরো চেহারায় এক শান্ত ভাব। 

মুন উঠে এসে মেঘের সামনে হাত বাড়ায়,

-“হাই, আমি মুন। রুদ্রের ফ্রেন্ড প্লাস কলিগ। তুমি নিশ্চয়ই মেঘ?”

মেঘ হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে,

-“জি..”

-“মাশাল্লাহ, রুদ্র যেমন বলেছে তার থেকেও প্রিটি তুমি। আচ্ছা, তোমরা কথা বলো, আমি আসছি..”

বলেই মুন তাদের একান্ত সময় দিয়ে সরে যায়।

-“আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো..”

রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,

-“তো ভিডিও কল দিতে তাহলে। আর গার্ডরা এলাউ করল কিভাবে?”

রুদ্রের প্রশ্নে মেঘের তখনকার কথা মনে পড়ে যায়। পিহুর কাণ্ড রুদ্র জানলে তো সোজা আছার মারবে। তাই বলে,

-“আপনার পরিচয় দিয়েছিলাম আরকি..”

-“সাথে কে এসেছে..?”

মেঘ চুপসে গেল। পিহুর কথা বললে তো জিজ্ঞেস করবে সে কোথায়। তাই বলে,

-“আমিই একাই এসেছি।”

রুদ্র হালকা রেগে বলে,

-“তোমাকে না বলেছি একা একা কোথাও যাবেনা।”

মেঘ মুখটা গোমড়া করতেই রুদ্র চুপসে যায়।শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

-“দুপুরে খেয়েছো..?”

-“না, আপনি..?”

-“না,”

রুদ্র কাউকে কল করে লাঞ্চের ব্যবস্থা করতে বলে। মেঘকে সেখানেই বসিয়ে সে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসল, ভিডিও কনফারেন্সে ব্যস্ত হয়ে গেল। এই ফাঁকে মেঘ পিহুকে মেসেজ দিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলল। প্রায় আধা ঘণ্টা পর রুদ্রের মিটিং শেষ হলো, সাথে খাবারও চলে আসে।

মেঘকে রুদ্রই মুখে তুলে খাইয়ে দেয়, সাথে নিজেও খায়। খাওয়া শেষ হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর সেই মেয়েটি সাথে অর্নব আর আরও একজন ঢুকল। মেঘকে দেখে অর্নব এগিয়ে আসে,

-“আরে ভাবি, আপনি এখানে? কেমন আছেন?”

মেঘ হেসে উত্তর দেয়,

-“এই তো ভাইয়া, আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?”

অর্নবও হালকা হেসে বলে,

-“বেশ ভালোই আছি।”

রুদ্র উঠে এসে মেঘের সামনে দাঁড়ায়, পাশে রাখা মেঘের হ্যান্ডব্যাগ তুলে নিয়ে বাকিদের উদ্দেশে বলল,

-“একটু থাক, আমি মেঘকে বাসায় দিয়ে আসছি।”

অর্নব ফট করে বলল,

-“ড্রাইভার দিয়ে পাঠিয়ে দে, তোর যাওয়া লাগবে কেন?”

রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

-“কোনো কিছু নিয়ে রিস্ক নিতে পছন্দ করি না। আর বউকে নিয়ে তো একদমই না।”

মেঘকে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই মুন বলে,

-“বাই মেঘ, আবার দেখা হবে।”

মেঘও পেছন ফিরে হালকা হেসে বলে,

-“জি আপু, অবশ্যই।”

অর্নবও মজার স্বরে বলে,

-“ভাবি, সাবধানে থাকবেন। দিনকাল ভালো না।”

এরপর রুদ্ররা বেরিয়ে পড়ল। মেঘকে পৌঁছে দিয়েই আবার ফিরে গেল রুদ্র।

অর্নব সেই তখন থেকেই রুদ্রকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে,

-“কিরে শা*লা, বল তো! আজ অন্তত এড়িয়ে যাস না।”

রুদ্র কলম ঘুরাতে ঘুরাতে বলে উঠে,

-“প্রথম দেখাতেই তো আমার মন তার উপর পিছলে পড়েছে। তার মায়াবী ভীতু মুখখানা আমাকে কাবু করতে যথেষ্ট ছিলো..”

সামনে বসা সবাই রুদ্রকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। মেঘের কথা উঠতেই কেমন হ্যাপি হ্যাপি লাগে তাকে। রুদ্রের কথায় অর্নব অবাক হয়ে জিগায়,

-“মানে তুই রাগে বিয়ে করিসনি, সুযোগ বুঝে কুপ মেরেছিস..?”

রুদ্রের মুখে অদ্ভুত এক হাসি,

-“রুদ্র চৌধুরী এতো কাঁচা খেলোয়াড় না..”

সবাই বেশ অবাক, একটা ছেলে নিজের অনুভূতি এভাবে লুকিয়ে রাখতে পারে রুদ্রকে না দেখলে বুঝতোই না। তবে কেউ একজন মনে মনে ভীষণ হেসে উঠল,

-“তাহলে জায়গা মতোই তীর চলছে..”

———

সুমনাকে নিয়ে সাদ এসে থামে কাজি অফিসের সামনে। কাজি অফিস দেখেই সুমনা চমকে তাকায়। সাদের দিকে চোখ পড়তেই, সাদ তার হাত শক্ত করে ধরে ভেতরে ঢুকে যায়। লিফটে উঠে সোজা ৫ তলায়। সেখানে আগে থেকেই সাদের বন্ধুরা আছে।

সুমনা চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-“এখানে কেনো?”

সাদ তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে বলে,

-“তোমার ভয়, আমার ভয়, আমাদের দু’জনের ভয়ই আজ দূর করতে এসেছি। তোমাকে হারানোর ভয়ে এই দু’দিন ভীষণ অশান্তিতে ভুগেছি। না ঠিকমতো ঘুমিয়েছি, না খেয়েছি। আমি আর এই অনুভূতি জীবনে ফিরিয়ে আনতে চাই না। এক সেকেন্ডের জন্যও সেই পরিস্থিতি ফিরে আসুক, সেটাও চাই না। তোমার কাছে আমাদের সম্পর্কটা কেমন আমি জানি না, তবে আমার কাছে এটা অনেক বড় কিছু। তার থেকেও মূল্যবান তুমি। তুমি আমার জীবনে আসার পর থেকে বিশ্বাস করো, আর কোনোদিকে খেয়ালই যায় না। তুমি আমাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছো। তোমার বাইরে অন্য কাউকে ভাবতেই পারি না। তোমার পাশে কাউকে সহ্য হয়না। তুমি শুধু আমার একান্তই আমার। কিভাবে যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি জানি না, শুধু জানি, এই পাগলটা তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে। আই লাভ ইউ, সুমনা। আই রিয়েলি লাভ ইউ।”

সুমনা চুপচাও সাদের মনের কথাগুলো অনুভব করছে, মুখে অদ্ভুত হাসি। চোখে টলটল করছে পানি, কিন্তু সেটা আনন্দের। সাদের চোখেও চিকচিক করছে অশ্রু। একটু থেমে আবার বলে ওঠে,

-“এখন আমি তোমাকে চিরতরে আমার নামে লিখে নিতে চাই। তোমাকে মিসেস সাদ চৌধুরী করতে চাই। আমার একমাত্র ভালোবাসাকে হালালভাবে সারাজীবনের জন্য নিজের করে চাই। হারানোর সব পথ বন্ধ করতে চাই। আমি চাই আমার সুমনা শুধু আমারই হোক, অন্যকারো হওয়ার ০.০১% সুযোগ ও রাখতে চাইনা।”

কথাগুলো বলে সুমনার সামনে এক হাঁটু গেড়ে বসে হাত বাড়িয়ে দেয়,

-“উইল ইউ ম্যারি মি, জান..?”

সুমনা যেনো বাকরুদ্ধ। এই ছেলেটা তার জন্য এতোটা পাগল হবে, এটা সে কোনোদিন ভাবেনি। আবেগে চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। নাক টেনে টেনে মাথা নাড়ে, মুখে ফুটে ওঠে এক তৃপ্তির হাসি, মূল্যবান কিছু নিজের করে পাওয়ার হাসি। সুমনা সাদের হাতে নিজের হাত রাখে। কান্নাভেজা গলায় শুধু বলে ওঠে,

-“হ্যা..”

সাদের মুখে ছড়িয়ে পড়ে উজ্জ্বল হাসি। সুমনার হাতে রিং পরিয়ে দেয়। বন্ধুদের সাক্ষী রেখে সেখানেই রেজিস্ট্রিও সেরে নেয়।  

লিফটের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে নিচে নামবে বলে। লিফট আসতেই সুমনাকে নিয়ে ভেতরে উঠে পড়ে,

-“তোরা সিঁড়ি দিয়ে আয়, আমার কাজ আছে..”

সাদের কথা শুনে তার বন্ধুরা চিৎকার করে ওঠে,

-“মামা চালিয়ে যাও..!”

অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে সুমনা,

-“আরে ওরাও তো যেতে পারতো, না কেনো করলে..?”

লিফটের দরজা বন্ধ হতেই সাদ হঠাৎ ঝুঁকে পড়ে। সুমনার ঠোঁট তার দখলে চলে যায়। গ্রাউন্ড ফ্লোরে পৌঁছতেই সাদ সুমনাকে ছেড়ে দেয়। লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকে সুমনা। সাদ বাকা হেসে বলে,

-“ওদের কেন আনিনি, এবার বুঝলে তো..?”

———

ফারহানের কেবিনে ঢুকতেই দেখে সে ফোনে কথা বলছে। পিহুকে চোখে পড়তেই ফারহান কল কেটে দেয়,

-“এসে গেছে। রাখি..”

পিহু সরাসরি গিয়ে ফারহানের সামনে চেয়ারে বসে পড়ে। ওড়না দিয়ে গলা-কপাল মুছতে মুছতে বলে,

-“উফ, কী গরম। একটু ঠান্ডা পানি হবে..?”

ফারহান গম্ভীর চোখে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। তারপর কল দিয়ে কাউকে বলে ঠান্ডা পানি আর কিছু স্ন্যাকস পাঠাতে।

হঠাৎ প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,

-“তুমি আমার ওয়াইফ..?”

অপ্রস্তুত হয়ে যায় পিহু। এই রে লোকটা বলে দিলো ফারহানকে। গলা খাঁকারি দিয়ে কিছু বলার আগেই দরজায় নক। ফারহানের অনুমতিতেই ভেতরে ঢোকে একজন, হাতে কয়েকটা প্যাকেট। টেবিলে রেখে পিহুর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আসসালামু আলাইকুম ভাবি..”

পিহু সঙ্গে সঙ্গে ফারহানের দিকে তাকায়। ফারহানের মুখ শান্ত, না হাসি, না রাগ কিছুই নেই। পিহু বিষম খেয়ে কাশতে শুরু করে। ফারহান পানির বোতল খুলে এগিয়ে দেয়। পিহু ঢকঢক করে খেয়ে নেয়। লোকটা অনেকক্ষণ আগে চলে গেছে, তবুও ফারহান টেবিলে হেলান দিয়ে দুই হাত গুঁজে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তার দিকে। অস্বস্তিতে পিহু এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। অবশেষে ফারহান নিরবতা ভেঙে বলে,

-“উত্তর দিলে না যে..?”

পিহু মিনমিনিয়ে,

-“কিসের..?”

ফারহান এবার উঠে দুপা এগিয়ে আসে,

-“ওই যে, তুমি আমার কোন কালের বউ..?”

পিহু আমতা-আমতা করে,

-“কদিন পরেই তো হয়ে যাবো। তাই আগে থেকে একটু প্র্যাকটিস করছিলাম আরকি।”

ভ্রু কুঁচকে ফারহান বলে,

-“এই ভবিষ্যদ্বাণীটা দিলো কে?”

পিহু ভান করে বলে,

-“আমিইই..”

-“আচ্ছা, এটা মানলাম। তবে প্রেগন্যান্ট?”

এই প্রশ্নে একেবারে হকচকিয়ে যায় পিহু। শালাগুলো কি এসবও বলে দিয়েছে। ফারহান পিহুর একদম সামনে এসে চেয়ারের হাতলে দুই হাত রেখে তাকে ঘিরে ফেলে। মুখটা এগিয়ে আনে তার মুখের কাছে। ভয়ে পিহু মাথা চেপে রাখে চেয়ারের সাথে। ফারহান হালকা ফুঁ দিয়ে তার কপাকের বেবি হেয়ারগুলো সরিয়ে দেয়। পিহু চোখ বন্ধ করে ফেলে। শরীরে কেমন অস্থির শিহরণ, ফারহানের গায়ের পারফিউমের গন্ধ, তার শ্বাস-নিশ্বাস এসে নাকে-মুখে পড়ছে। ফারহান ফিসফিসিয়ে হেসে বলে,

-“চাষাবাদ ছাড়াই ফল পেয়ে যাচ্ছি। ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং..”

কথাটা শুনে পিহুর চোখ বিস্ফোরিত হয়, কিন্তু অর্থ বুঝতেই লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। তার এমন অবস্থা দেখে ফারহান অবাক হওয়ার ভান করে বলে,

-“ওমা, তুমি লজ্জাও পাও..?”

পিহু চুপ। ফারহান আবার বলে,

-“কিন্তু আমি তো বিনা পরিশ্রমের ফল গ্রহন করি না। ভাবছি পরিশ্রমটুকু করেই ফলটা নিজের করে নি। কী বলো..?”

পিহুর মনে হয় কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এই লোকটা এতোটা নির্লজ্জ হতে পারে কল্পনাতেও ছিল না। সন্দিগ্ধ চোখে তাকায় সে আসলেই ফারহান কিনা। ফারহানের দুষ্টু হাসিতে অন্য কিছু ইঙ্গিত করছে। পিহু চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। ফারহান বাকা হাসি দিয়ে বলে,

-“চেয়ারেই চলবে নাকি সোফায় শুরু করি..?”

ফট করে চোখ মেলে পিহু, হাত দিয়ে ফারহানের মুখ চেপে ধরে। গালে-নাকে হালকা লাল আভা ছড়িয়ে আছে তার। তড়িঘড়ি বলে,

-“ছিঃ আপনি চুপ করুন। ঢুকতে দিচ্ছিল না বলে তাই মিথ্যা বলেছি, আর কিছু না। সরি, আর এমন বলবো না, কিন্তু মুখটা বন্ধ রাখুন।”

ফারহান হাত সরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ঠোঁটে হালকা হাসি, পকেটে হাত গুঁজে জিজ্ঞেস করে,

-“এখানে এসেছো কেন?”

পিহু অসহায় স্বরে,

-“কাল রাত থেকে আমার কল ধরছেন না। নাম্বারে মেসেজ দিচ্ছি, রিপ্লাই দিচ্ছেন না কেন?”

ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে,

-“তোমাকে একটা চান্স দিচ্ছি। নিজের ভবিষ্যত নষ্ট করো না।”

পিহু দৃঢ় কণ্ঠে,

-“আমিও তো ভবিষ্যত সুন্দর করে সাজাতে চাই.. কিন্তু আপনার সাথে।”

ফারহান নিচু স্বরে ডাকে,

-“পিহু..”

অপ্রত্যাশিত কোমল কণ্ঠে নিজের নাম শুনে পিহু তাকায় তার চোখে। ফারহান বলে,

-“আমার থেকে দূরে থাকো। আমার ভেতরের সত্তাকে জাগিও না।”

পিহু বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। মুখভঙ্গি স্বাভাবিক, কিন্তু কথায় অদ্ভুত ভারী অর্থ। কিছুই বুঝতে পারে না।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রশ্ন করে,

-“কাল কোথায় ছিলেন..?”

-“তোমাকে এসবের জবাব দিতে হবে নাকি? যাও, বাসায় যাও।”

কথা শুনে মুখ বাঁকায় পিহু। রাগে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দরজায় গিয়ে আবার ফিরে তাকায়। ফারহান তাকিয়ে আছে তার দিকেই। চোখ গরম করে বলে,

-“বিয়ের পর একে একে সব হিসাব নেবো। সারাদিন কোথায় ঘুরে বেড়ান টইটই করে!”

তারপর দরজা খুলে বেরিয়ে ফের মাথা ঢুকিয়ে বলে,

-“শোনেন..”

ভ্রু তুলে ফারহান, 

-“কি?”

পিহু দুষ্টু হেসে,

-“আমার না রাতে ঘুম হয় না।”

– “কেনো?”

পিহু দাঁত বের করে গেয়ে ওঠে,

-“কারণ ভাতার আমার কাতার গেছে চাকরি করিতে। একা বিছানায় ঘুম আসে না, ছটফটাই রাইতে । চাইলে আপনি আসতে পারেন রাতে। আমি আবার মাইন্ড করবো না।”

বলেই দৌড়ে পালায়। ফারহান বসতে বসতে বিড়বিড় করে,

-“বেয়াদব..”

———

আজ বুধবার, সকাল থেকেই চৌধুরী বাড়িতে রান্নাবান্নার তোড়জোড় চলছে। বাড়ির বড় মেয়েকে দেখতে আসছে

,এ নিয়ে সবাই বেশ উচ্ছ্বসিত। কিছু আত্মীয়স্বজনও হাজির হয়েছে।

দুপুর গড়াতেই মেঘ আর পিহু মিলে সামিয়াকে রেডি করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সামিয়াকে আজ খুশি খুশি লাগছে। সেটা দেখে মেঘের ভেতরেও প্রশান্তি আসে, যাক মেয়েটা অবশেষে মুভ অন করছে। 

সামিয়া বেশ লজ্জা পাচ্ছে। রাফানের সামনে কেমন করে দাঁড়াবে, সেই চিন্তাতেই তার গাল লাল হয়ে উঠছে। এতদিন পর্যন্ত তো নির্দ্বিধায় ফ্রেন্ডলি কথা বলেছে, কিন্তু আজ ভিন্নভাবে উপস্থিত হওয়ার ভাবনাতেই কেমন জড়তা তৈরি হচ্ছে। গতরাতে রাফান কল দিয়েছিল, কিন্তু লজ্জায় ধরতেই পারেনি সামিয়া।

চৌধুরী বাড়ির সবাই উপস্থিত, এরশাদুল চৌধুরী, এনামুল চৌধুরী সহ সকলে, শুধু রুদ্র ছাড়া সে তার কাজে।

দুপুর ২টার দিকে রাফানরা সপরিবারে এসে হাজির হয়। মুহূর্তেই সবাই আপ্যায়নে উঠে পড়ে লাগে। এরশাদুল সাহেব বন্ধুকে পেয়ে গল্পে মেতে ওঠেন। অতিথিদের বসতেই হালকা নাস্তা পরিবেশন হয়। চৌধুরি পরিবারের সকলে তাদেএ সাথে পরিচয়পর্ব সেরে নেয়। তবে রাফানের মন অস্থির হয়ে আছে। কবে আসল কথায় যাওয়া হবে সেই অপেক্ষায় সময় যেনো থেমে আছে।

রাফানের এ অস্থিরতা দেখে সাদ ঠাট্টা করে বলে,

-“পাত্র তো দেখছি পাত্রি দেখার জন্য অস্থির হয়ে বসে আছে। সবাই যা করার তাড়াতাড়ি করওওও”

সাদের দাদি তার পিঠে থাপ্পড় মেরে বলে,

-“তুই বড় ভাই লাগিস ছোট বোনের জামাইর সাথে এভাবে কেউ মজা নেয়। চুপ কর ফাজিল।”

তাদের কথায় সবাই হেসে ওঠে, তবে রাফান বেশ লজ্জা পায়। এরপর সবাইকে দুপুরের খাবারের টেবিলে নিয়ে যাওয়া হয়। খাওয়া-দাওয়া শেষে আবার ড্রয়িংরুমে বসে আলাপ চলতে থাকে।

এর মধ্যে এরশাদুল চৌধুরী ডাক দেন,

-“মেঘ মা, সামিয়াকে নিয়ে এসো।”

সবাই বেশ এক্সাইটেড, তবে উনার কথায় রাফানের ভ্রু কুঁচকে যায়। সামিয়াকে কেন নামতে বলছেন? মুহূর্তেই ভাবে হয়তো সামিয়াকে নয়, পিহুকেই আনার কথা। তাই তার চোখ সিঁড়ির দিকে নিবদ্ধ হয়ে থাকে। কখন আসবে সেই আশায়।

অপেক্ষার অবসান ঘটে। সিঁড়ি বেয়ে নামে মেঘ, পিহু আর মাঝখানে সামিয়া। দুপাশে ধরে নামাচ্ছে ওরা। সামিয়ার পরনে শাড়ি, তবে রাফানের চোখ আটকে যায় পিহুর দিকে। কালো রঙের সালোয়ার-কামিজে সাজগোজহীন পিহু যেনো এক স্নিগ্ধ পরির মতো লাগছে।

সবার নজর তখন সিঁড়িতেই। নিচে আসতেই এরশাদুল চৌধুরী ইশারা করেন সবাইকে সালাম করতে। সামিয়া আস্তে করে সালাম দিলে সবাই একসাথে উত্তর দেয়, “ওয়া-আলাইকুম আসসালাম।”

এইসময় রাফানের মা উঠে এসে সামিয়ার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা একটু উপরে তুলে বলেন,

-“মাশাল্লাহ, অনেক সুন্দর লাগছে।”

সামিয়া লজ্জায় মুচকি হাসে। এরপর তাকে রাফানের পাশে বসিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও রাফান কেবল অবাক চোখে সবকিছু দেখছে। কেন তার মা সামিয়াকে দেখছে, আবার তার পাশে বসাচ্ছে? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। 

এর মাঝেই ফারুখ সাহেব হেসে বলেন,

-“তোর বাড়ির মেয়ে একেকটা হিরের টুকরো। নতুন করে খোঁজ নেওয়ার দরকার নেই। সামিয়াকে আমাদের পছন্দ হয়েছে। আজ রিং পড়িয়ে যেতেই এসেছি।”

বাবার কথায় রাফান হকচকিয়ে বলে ওঠে,

-“কিইই? সামিয়াকে পছন্দ মানে….!”

চলবে……..

[দুঃখিত দেরিতে দেওয়ার জন্য। কেমন হয়েছে অবশ্যই বলবেন।]

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply