#আড়ালে_তুমি |৪৯|
#_সাইদা_মুন
-“এই এই, আমার ব্যাটা আসছে, সবাই সালাম দাও।”
বলেই স্কাউটের ভঙ্গিতে হালকা জোরে মেঘ বলে ওঠে,
-“সামনে সালামমমমম…”
সাথে সাথে মেঘসহ পেছনের সবাই একসাথে কপালে হাত দিয়ে বলে ওঠে,
-“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম… দুলাভাই।”
রাত ১টা, রুদ্ররা বাগান থেকে মাত্রই ঘরে ঢুকেছে। ঢুকতেই দাঁড়িয়ে যেনো থ বনে গেছে। চোখে-মুখে অবাক ভাব, কি হচ্ছে কিছুই যেন মাথায় ঢুকছে না। সামনে সিঁড়িতে মেঘরা দাঁড়িয়ে। একদম নিচে মেঘ, তার পেছনে দুই পাশে সুমনা-পিহু, তাদের পেছনে সামিয়া-ফারহা, আর সবশেষে মিষ্টি আর আরও একজন মেয়ে। সবাই মাথায় হাত দিয়ে সালামের ভঙ্গিতে একেবারে ট্রায়াঙ্গেল স্টাইলে দাঁড়িয়ে আছে। সালাম শুনে রুদ্ররা ভীষম খায়।
এদিকে পিহু রাগী চোখে বলে,
-“এই মুর্খের দল, সালাম বলতে হয়, আসসালামু আলাইকুম “
পিহুর কথা শুনতেই মেঘ আবার বলে,
-“ওক্কে, আবার… সামনে সালামমমম “
এবারও কপালে হাত দিয়ে সবাই একসাথে বলে,
-“আসসালামু আলাইকুম দুলাভাইইই।”
ফারহান রুদ্রের পাশে এসে ফিসফিস করে বলে,
-“এরা কি ড্রাংক নাকি?”
রুদ্র খেয়াল করে বলে,
-“দেখে তো তাই মনে হচ্ছে…”
তারপরই কটমট করে সাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তোকে না বলেছিলাম নজর রাখতে, কেউ যেন হাতের নাগালে না পায়।”
সাদ নখ কামড়ে বলে,
-“আরে আমি তো অন্য বোতলে ভরে লুকিয়েই রেখেছিলাম। কিভাবে এদের হাতে পড়লো কিভাবে কে জানে…”
ওদের ফিসফিসানি দেখে সুমনা বিরক্ত হয়ে বলে,
-“এই, আমার হাত ব্যথা করছে। আমি পা তুলছি কপালে ধরতে।”
বলেই হাত নামিয়ে পা তুলতে যায়, তবে উল্টে পড়ে যেতে যেতে দেয়ালে ভর দিয়ে কোনোমতে সামলায়। সাদ তো দৌড়ে আসে ধরতে, কিন্তু সুমনা ঠিক হয়ে দাড়াতেই থেমে যায়। এর মধ্যে পিহু হঠাৎ চেঁচিয়ে এক হাত উঁচু করে বলে,
-“জয় বাংলা…”
সাথে সাথে বাকিরাও গলা মিলিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে,
-“জিতবে আবার নৌকা…”
সবাই চমকে উঠে ফারহান দ্রুত বলে,
-“এদের চুপ করা, নয়তো আম্মুরা উঠে পড়লে বাঁশ খাবো আমরাই…”
ফারহানের কথা শুনে সবাই তাড়াহুড়া করে ওদের ঠেলে-ধাক্কা দিয়ে উপরে তুলতে শুরু করে। রুদ্র এক হাতে মেঘকে, আরেক হাতে পিহুকে ধরে রেখেছে। মেঘ হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,
-“ছাড় শয়তান! তুই আমার দেহ পাবি, কিন্তু মন পাবি না। ছাড় ছাড়…”
রুদ্র বিড়বিড় করে,
-“দেহ পেলেই হবে…”
শেষমেশ সবাইকে এক রুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। রুদ্র, ফারহান, রিক, সাদ, শান্তসহ কয়েকজন দরজার সামনে বসে থাকে।
-“ভাই, আমরাও তো খেলাম। কই, নেশা তো ধরলো না! শুধু একটু ঘুম ঘুম লাগছে।”
শান্তের কথায় রুদ্র ফুঁস করে শ্বাস ছেড়ে বলে,
-“তোর মতো কি এদের খেয়ে অভ্যাস আছে নাকি…”
———
সকাল ১০টা বাজে,
পিহু মাথা ধরে উঠে বসে। মাথাটা যেন ভারী হয়ে আছে। চারপাশে তাকাতেই দেখে, সবাই একই রুমে। যেভাবে পেরেছে ঘুমিয়েছে, একটার উপর আরেকটা গড়াগড়ি খাচ্ছে। রাতে কী হয়েছিলো কিছুই মনে নেই। শুধু মনে আছে সুমনা একটা বোতল এনেছিলো, তারপর গ্লাসে করে সবাইকে একটু একটু টেস্ট করিয়েছিলো।
পিহু সবাইকে ডেকে তোলে। একে একে সবাই মাথা ধরে বসে পড়ে। সামিয়া কপাল চেপে বলে,
-“ওটা ওয়াইন ছিলো… আল্লাহ জানে রাতে আমরা কী কী করেছি।”
সবার রাগী চোখ সুমনার দিকে যায়। সুমনা ঠোঁট উল্টে বলে,
-“আমি জানতাম নাকি, জানলে জীবনে আনতাম না?”
সেদিনই রিসেপশনের পর বাড়ি ফিরে আসে রুদ্ররা। বাড়িতে ঢুকতেই সবাই ঘিরে ধরে তাদের। তিনদিন পর চৌধুরি বাড়ির প্রানগুলো ফিরে এসেছে, সবার মুখে আনন্দ।
পিহু বাবাকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে,
-“আমার সোনা মা, কেমন কেটেছে সময়?”
পিহু আহ্লাদ করে বলে,
-“তোমাকে ছাড়া একটুও ভালো লাগেনি…”
পেছন থেকে রুদ্র চুল টেনে বলে,
-“এহ, সেখানে তো বেশ মজা করছিলি, এখন আব্বুর সামনে ভালো সাজা হচ্ছে..”
পিহু রেগে বিচার চায়,
-“আব্বুউউউ, তোমার ছেলে আমাকে মেরেছে..”
এরশাদুল চৌধুরী মেকি রাগ দেখিয়ে বলেন,
-“আহ রুদ্র, আমার প্রিন্সেসকে একদম টাচ করবে না।”
এভাবেই তারা হাসি-ঠাট্টায় মেতে আছে। মেঘ দূর থেকে বাপ-মেয়ের ভালোবাসা দেখছে, চোখ ভিজে আসে। এরশাদুল চৌধুরী মেঘকে কাছে ডেকে পাশে বসান, মাথায় হাত রেখে মজা করে বলেন,
-“কি ব্যাপার বাড়ি এসে একবারও এই বুড়ো বাবাটার খবর নিলে না? ভুলে গেছিস নাকি?”
মেঘ হেসে বলে,
-“কি যে বলেন আব্বু…”
বাড়ির সবাই খুশি । তিনদিন পর চৌধুরী বাড়ি আবারও হাসি-খুশিতে ভরে ওঠে।
———
দেখতে দেখতে কেটে যায় দুই মাস। এই দুই মাসে অনেক কিছু বদলেছে। কারো সাথে কারো ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, কেউ বা মুভ অন করার চেষ্টা করছে। তবে লিহু ফারহানকে জ্বালিয়ে ত্যানাত্যানা করে দিচ্ছে। রুদ্রদেরও ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। আজ ভার্সিটি শেষে মেঘ-পিহু, রিক-সুমনাকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে।
অন্যদিকে সুমনাকে অন্য পথে যেতে দেখে রিক ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
-“তোর বাসা তো ওইদিকে, এদিকে কোথায় যাস?”
রিকের কথায় সুমনা একটু ইতস্তত করে বলে,
-“আমার একটা কাজ আছে সামনেই, তুই যা।”
-“আমি চলি তাহলে তোর সাথে?”
সুমনা সাথে সাথেই “না” বলে চলে যায়। রিকের কাছে সুমনাকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছিলো, তাই সেও সন্দেহ নিয়ে লুকিয়ে পিছু নেয়। কিছুদূর যেতেই সুমনা রিকশায় উঠে পড়ে, রিকও আরেকটা রিকশা নিয়ে পিছু নেয়।
প্রায় দশ মিনিট পর একটা পার্কের সামনে গিয়ে থামে সুমনা। ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। রিকও পিছু নেয়, মনে মনে ভাবে “ওর আবার কি কাজ এখানে?” কিছুদূর যেতেই সুমনা একটা বেঞ্চে বসে এদিক-সেদিক তাকাতে থাকে, কারো জন্য হয়তো অপেক্ষা করছে হয়তো। কে আসবে তা দেখার জন্য রিক কাছাকাছিই তবে এক্কটু আড়ালে দাঁড়ায়।
পাঁচ মিনিট পর হঠাৎ এক অপরিচিত ছেলে এসে দাঁড়ায়। সুমনা তাকে দেখে তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ায়। তার ভঙ্গিমায় স্পষ্ট, ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছে।
সুমনার সামনে দাঁড়িয়ে আকাশ।
-“দেখো আকাশ, আমি তোমাকে ভালোবাসি না। রিলেশনটা ছিলো শুধু মজার ছলে। আমরা কোনোদিন বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের মতো আচরণও করিনি। তোমার সাথে কথা বলেই, তোমার মত নিয়েই ব্রেকাপ করেছিলাম। তাহলে আবার সিন ক্রিয়েট করছো কেনো? কী চাই তোমার?”
আকাশ সুমনাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত স্ক্যান করে হেসে বলে,
-“এতোদিন তোমাকে সামনাসামনি দেখিনি, শুধু ছবি দেখেছি। কিন্তু সেদিন দেখে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারছি না। যদি জানতাম এত সুন্দরী, কখনোই ছাড়তাম না। আমার তোমাকে চাই।”
সুমনার ঘৃনা লাগে আকাশের কথায়। বিরক্ত হয়ে বলে,
-“আকাশ, কালকেও বলেছি আজও বলছি, আমি একটা সিরিয়াস রিলেশনশিপে আছি।”
আকাশ ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
-“তো কি হয়েছে, সাদের সাথে ব্রেকআপ করে ফেলো।”
সুমনা ক্ষেপে গিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে,
-“শাট আপ, আমি বলেছি না আমি সিরিয়াস রিলেশনে আছি, মানে আমি সত্যিই ওকে ভালোবাসি।”
আকাশ হঠাৎ রেগে গিয়ে সুমনার হাত ধরে টেনে নেয়।
-“এই, আমি কিছু জানি না। তোকে আমার লাগবে। তুই ব্রেকআপ করবিই, শেষ কথা।”
সুমনা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। এদিকে রিকের চোখ লাল হয়ে যায়, এগিয়ে যেতে নেয়, কিন্তু তার আগেই সেখানে হন্তদন্ত হয়ে হাজির হয় সাদ।
সাদকে দেখে সুমনা ভয় পেয়ে যায়। সাদের মুখ গম্ভীর, চোখে ভয়ঙ্কর রাগ। সুমনার হাত আকাশের হাতে দেখে সাদের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। বুকে টিপটিপ ব্যথা করছে, যেনো কেউ আঘাত করছে । রেগে গিয়ে সজোরে ঘুষি বসায় আকাশের নাক বরাবর। সাথে সাথে আকাশ হাত ছেড়ে মাটিতে পড়ে যায়। নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হয়ে আসে। কিন্তু সাদের রাগ তাতেও কমে না, সে আকাশকে মারতে শুরু করে।
-“তোকে সাহস কে দিয়েছে, আমার জিনিসে হাত দেওয়ার!”
সাদ আকাশকে পেটাতেই থাকে। রিক আর দাঁড়িয়ে না থেকে দৌড়ে গিয়ে ধরে। পাবলিক প্লেসে এভাবে মারামারি হলে আরও ঝামেলা হবে। আশপাশ থেকে কয়েকজন ছেলেও এসে সাদকে আটকায়। সুযোগ বুঝে আকাশ পালিয়ে যায়।
এদিকে সুমনা কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে, চোখে পানি, হাত পা কাপঁছে। আকাশ যেতেই সাদকে ছেড়ে দেয়। সাদ তেড়ে সুমনার সামনে এসে তার দুই বাহু শক্ত করে ধরে ঝাঁকি দেয়,
-“এই তোর কয়টা লাগে, হ্যাঁ? একটা দিয়ে হয় না? আমি তোকে কি কম ভালোবেসেছি? তোকে যেভাবে ট্রিট করেছি, আজ পর্যন্ত কাউকেই সেটুকুও করিনি। আর তুই..তুই এসবের যোগ্যই না।”
সাদের মুখ লাল হয়ে আছে, চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে। ভয়ে সুমনা কেঁদে ওঠে, ভাঙা গলায় বলে,
-“তুমি যা ভাবছো তা ন…”
সাদ আরও গর্জে ওঠে,
-“চুপ একদম! নয়তো থাপ্পড় মেরে গাল ফাটিয়ে দেবো। ভাগ্যিস ছোট ভাই একটা সময়মতো বলে দিয়েছিলো, নয়তো এতক্ষন ওই ছেলের সাথেই থাকতি।”
সুমনা অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে। কান্নায় ভেঙে পড়ে হিচকি উঠে গেছে।
-“আমাকে বিশ্বাস করো প্লিজ..”
সাদ তাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দেয়, এক হাত কোমরে গুঁজে, অন্য হাতে কপাল স্লাইড করে বলে,
-“তোকে বিশ্বাস? আর কোনোদিন যেন আমার চোখের সামনে না দেখি।”
রিক দাঁতে দাঁত চেপে সব দেখছিলো। সাদ একবার তার দিকে তাকিয়ে হনহনিয়ে চলে যায়। সুমনা বেঞ্চে বসে কাঁদতে থাকে। রিক গিয়ে পাশে বসে বলে,
-“কাঁদিস না, তোর কান্না ভীষণ বাজে লাগে। একদম পেত্নির মতো।”
রিকের কণ্ঠে সুমনা তার দিকে তাকায়। কান্নাভেজা চোখ দেখে রিক ঢোক গিলে,
-“বলদ, কাঁদছিস কেনো? কান্না দিয়ে সব সমস্যার সমাধান হয় নাকি?”
হঠাৎ সুমনা হাত জোড় করে রিকের সামনে বলে ওঠে,
-“রিক, প্লিজ ওকে একটু বুঝা। ও আমাকে ভুল বুঝছে। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। বল না ওকে যেন আমাকে ছেড়ে না দেয়, আমাকে একটু বিশ্বাস করে।”
বলতে বলতে মাথা নিচু করে ফেলে। চোখ দিয়ে টপটপ করে জ্বল গড়িয়ে পরছে। রিক অসহায় চোখে তাকায় কিছুক্ষণ, তারপর দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,
-“তোদের কিছু হবে না। আমি সব ঠিক করে দেবো।”
-“সত্যি?”
-“হ্যাঁ রে বাবা। তবে এখন কান্না বন্ধ কর, কান ফেটে যাচ্ছে।”
রিকের কথায় ঠাস করে একটা ঘুঁষি মারে তার পিঠে। রিক হেসে উঠে, সুমনাও কান্না থামিয়ে হালকা হাসে। তখনই একটা পিচ্চি ছেলে দৌড়ে এসে বলে,
-“আপু, রিকশা দাঁড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি আসেন।”
সুমনা ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“আমি তো রিকশা দাঁড় করাইনি।”
-“ওই যে একখান লম্বা সুন্দর ভাই গেলো, হেয় আমারে দেখাইয়া কইছে আপনাকে বাসায় দিয়ে আসতে।”
সুমনা সাথে সাথে জিজ্ঞেস করে,
-“অ্যাশ কালারের শার্ট পরা ছিলো?”
পিচ্চিটা মাথা নেড়ে বলে,
-“হ্যা হ্যা।”
মুহূর্তেই সুমনার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। পাশে রিক বলে,
-“দেখছিস? কতটা কেয়ার করে। রেগে আছে, তাও তোকে নিয়েই ভাবছে। যা, চিন্তা করিস না, তোকে ছাড়বে না। রাগের মাথায় বলেছে।”
-“তুইও চল,সামনে নামবি।”
রিক সাথে সাথেই ব্যস্ততার ভান করে বলে,
-“না না, তুই যা। আমার কাজ আছে।”
তারপর সুমনা চলে যায়। রিকও অন্য পথে হাঁটতে থাকে। কোথায় যাবে জানে না, শুধু একটু শান্তি খুঁজছে। মনে মনে হেসে উঠে,
-“সবাই শুধু আমায় হাসতেই দেখে, এই হাসির পেছনের দুঃখ ক’জনই বা বোঝে…”
———
নদীর ধারে বসে আছে রিক। হঠাৎ মোবাইল বেজে ওঠে। কারো নাম দেখে কল রিসিভ করে,
-“কি ব্যাপার, কল করলে যে..”
ওপাশ থেকে মিষ্টি অসহায় কণ্ঠে বলে,
-“আপনি আমায় কয়েকদিন ধরে ইগনোর করছেন..”
রিক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। সায়ানের বিয়ের পর থেকে মিষ্টির সাথে বেশ ফ্রেন্ডলি কথা হতো। কিন্তু কয়েকদিন আগে হুট করে মিষ্টি তার ভালোবাসার কথা জানায়। এরপর থেকেই রিক ইচ্ছে করেই তাকে এড়িয়ে চলছে, যেন মেয়েটা ধীরে ধীরে ভুলে যায়।
-“কি হলো, কথা বলছেন না কেনো..?”
রিক ভাবনা সরিয়ে উত্তর দেয়,
-“এমনি একটু ব্যস্ত ছিলাম..”
মিষ্টি হতাশার স্বরে বলে,
-“আমি জানি, ইচ্ছে করেই এমন করছেন।”
রিক চুপ করে থাকে। তখনই মিষ্টি আবার জিজ্ঞেস করে,
-“আপনার লাইফে কেউ আছে..?”
-“না।”
মিষ্টি কষ্ট মেশানো কণ্ঠে বলে,
-“তাহলে আমায় ভালোবাসতে আপনার সমস্যা কোথায়..?”
রিক নদীর পানির দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বলে,
-“একজনকে গভীরভাবে চেয়েও হারিয়েছি। এরপর থেকে আর সেই পথে হাঁটার সাহস পাই না।”
মিষ্টির বুকের ভেতর হালকা ব্যথা জাগে,
-“ও কি আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে?”
রিক হেসে বলে,
-“বলতেই তো পারিনি আমার অনুভূতি…”
-“কে সে..?”
-“তা জেনেও কি, সে এখন অন্য কারো। তার নাম নেবার অধিকারও আমার নেই।”
অদ্ভুতভাবে মিষ্টির মুখে হাসি ফুটে ওঠে। যেন হঠাৎই আশার আলো খুঁজে পেয়েছে। হঠাৎ বলে ফেলে,
-“সে যেহেতু অন্য কারো, তাই তাকে আপনি পাবেন না। তাহলে মুভ অন করুন, লাইফ কি আর থেমে থাকে..?”
-“চেষ্টা করছি,..”
-“তাহলে আজ থেকে আপনি অফিশিয়ালি আমার বয়ফ্রেন্ড। ব্যাস, এটাই শেষ কথা। যদি তিড়িং-বিড়িং করেন, ফারহান ভাইয়াকে বলে তুলে নিয়ে আসবো..”
বলেই ফট কল কেটে দেয়। এদিকে রিক অবাক, এভাবেও হুমকি দিয়ে কেউ রিলেশনে যায়। মুহুর্তেই মিষ্টির বাচ্চামিতে হেসে উঠে, মনটা হালকা লাগছে একটু।
———
পিহু ফেবুতে স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ ফারহানের নতুন পোস্ট সামনে আসে। এক্ষুনি আপলোড দিয়েছে। পিহু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ছবিটা, কালো শার্ট, ফরমাল গেটআপ, গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পিহু ফট করে কমেন্ট করে,
-“দুই টাকার পেপ্সি, ফারহান ভাই সেক্সি..”
ফারহান তখন ফোনেই ছিলো। হঠাৎ নোটিফিকেশন আসে,”Pihu Chowdhury commented on your post…”। নামটা দেখে কৌতূহল নিয়ে ঢোকে, কমেন্ট দেখে বিষম খেয়ে বসে। সাথে সাথেই ডিলিট করে নাম্বারে কল লাগায়।
পিহু তখন ফানি ভিডিও দেখছিলো। স্ক্রিনে ফারহানের নাম ভেসে উঠতেই লাফিয়ে ওঠে। কয়েকবার চোখ কচলিয়ে দেখে, এটা কি সত্যিই ফারহানের কল। আজ সূর্য কোনদিকে উঠলো? খুশি হয়ে দ্রুত কল ধরে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই সেদিক থেকে ধমক,
-“এই স্টুপিড, এসব কি কমেন্ট করো?”
পিহু অবাক হয়ে বলে,
-“মানে আপনি দেখেন..? তো আমি যে রিকু দিলাম, মেসেজ দিলাম, ওগুলো দেখেন নি কেনো?”
-“এটা চোখে পড়লো। এখন বলো, এসব কি ধরনের কমেন্ট? কেউ দেখলে যে তোমাকে খারাপ বলবে, সেই কমন সেন্সটুকুও নেই?”
-“ও, আপনি বুঝবেন না..”
-“কি বুঝবো না?”
-“যেটা আমি বুঝাতে চাইছি..”
-“কি বুঝাতে চাইছো?”
-“বুঝতে চান?”
ফারহান কনফিউজড হয়ে বলে,
-“বোঝাও..”
পিহু এক টানে শ্বাস নিয়ে শুরু করে,
-“তো শুনুন, লজিকালি ব্যাপারটা এমন না। ব্যাপারটা যেমন ব্যাপারটা তেমন। যদি বলি বুঝবেন না, না বললেও বুঝবেন না। তাই বলছিনা। বলার ইচ্ছা ছিল, বাট বললে বুঝবেন কেমনে? না বললেও তো বুঝবেন না। তাই বলছি ব্যাপারটা এমন না। বুঝবেন কিন্তু বুঝবেন না। এভাবে বুঝালেও বুঝবেন না। তাই যেভাবেই বুঝাই না কেন মূল কথা হলো, আপনি বুঝবেন না। তাই আর বুঝাইলাম ন…”
এই কয়েক সেকেন্ডেই ফারহানের মাথা ঘুরছে। চিৎকার করে উঠে,
-“স্টপ! আর একটা কথা বললে মুখ সেলাই করে দিবো।”
সাথে সাথে পিহু চুপসে যায়। ফারহান রেগে বলে,
-“বাচাল..”
পিহু আস্তে গলায় বলে,
-“আরেকটা কথা বলি?”
ফারহান সাথে সাথে,
-“নায়ায়া দরকার নেই!”
-“আরে, এটা ভালো কথা..”
-“না, কল রাখছি..”
-“আরে আরে শুনুন, মাত্র এক লাইন..”
ফারহান বিরক্ত হয়ে বলে,
-“দ্রুত বলো “
পিহু গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
-“আয়না করি ফষ্টিনষ্টি, দেখতে নুনতা খেতে মিষ্টি।”
ধাম করে কল কেটে দেয় পিহু। ফারহান কয়েক সেকেন্ড ফোন কানে রেখেই বসে থাকে। তারপর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে,
-“বেয়াদব একটা…”
———
মেঘ বোরিং ফিল করছে। সন্ধ্যা এখন, রুদ্র সকালে বেরিয়েছে, এখনও ফেরেনি। দুইবার কল দিয়েছিলো, বলে চলে আসবে তাড়াতাড়ি। তাই একটু পিহুকে জ্বালাতে তার ঘরে উঁকি দেয়। দেখে বসে আছে,
-“কি গো ননদিনী, কি করো?”
-“ফানি ভিডিও দেখছিলাম..”
-“এসব বাদ দে, আমার একটা ম্যাজিক দেখবি?”
পিহু সন্দিহান চোখে তাকায়,
-“তুই আবার কবে থেকে ম্যাজিশিয়ান হলি?”
-“আরে, দেখবি কিনা বল..”
-“দেখা..”
মেঘ উঠে যেতে যেতে বলে,
-“দাঁড়া, দুই মিনিটে আসছি..”
কিছুক্ষণ পর ফিরে আসে মেঘ। পিহু দেখেই হেসে ওঠে। মেঘের কপালে মার্কার দিয়ে বড় করে PRESS লেখা, পাশে টিপের মতো বড় গোল বিন্দু। পিহুকে হাসতে দেখে মেঘ চোখ গরম করে কপালের দিকে ইশারা করে। পিহু এগিয়ে এসে সেই বিন্দুতে প্রেস করে। সাথে সাথেই মেঘ মুখভর্তি পানি ছুড়ে মারে পিহুর মুখে। পানি পড়তেই পিহু হকচকিয়ে সরে যায়, আর এই ফাঁকে মেঘ দৌড় দেয়। পিহুর বুঝতে বাকি থাকে না কি হয়েছে। সাথে সাথে চিৎকার,
-“মেঘের বাচ্চায়াাাা…”
দু’জনই ছুটতে থাকে। মেঘ নিচে নেমে সিদ্দিকা বেগমের পিছে গিয়ে লুকোয়। পিহু ধাওয়া করতে করতে আসে। এদের দেখে সিদ্দিকা বেগম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন,
-“কি হলো দাঁড়া দৌড়চ্ছিস কেনো?”
পিহু হাপাতে হাপাতে বলে,
-“তোমার গুণধর বউমা আমাকে ভিজিয়ে দিয়েছে।”
মেঘ বলে,
-“আমি তো শুধু ম্যাজিক দেখাচ্ছিলাম।”
ড্রয়িংরুমজুড়ে ওদের বাচ্চামি, ছুটাছুটি এসবই চলছে। এ দৃশ্য দেখে সোফায় বসে থাকা রুদ্রের মা, চাচী, দাদি সবাই হাসছে।
———
রুদ্র আসতে আসতে রাত দশটা বেজে যায়। এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে নেয়। মেঘ কফি নিয়ে রুমে ঢোকে। রুদ্র দেখে গাল ফুলিয়ে আছে। কফি মেঘের থেকে হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“বউ, রাগ করেছো?”
মেঘ ফুঁসে উঠে,
-“না, একদমই না।”
রুদ্র মুচকি হেসে বলে,
-“তাহলে আমার কাছে আসো..”
মেঘ মুখ ঝামটা মেরে বলে,
-“ঢং করতে এসেছে এখন..”
হনহনিয়ে বারান্দায় চলে যায়। রুদ্র বুঝতে পারে বউ সত্যিই রেগে আছে। নিজেই তো অপেক্ষা করিয়েছে। মেঘের পিছু নিয়ে বারান্দায় যায়। মেঘ গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে। রুদ্র পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে গেয়ে ওঠে,
“ও বউ তুমি আমায় কি ভালোবাসো না…
ও বউ কেনো আমার কাছে আসো না…
চলো ঝগড়া মারামারি ভুলে যাই তাড়াতাড়ি
itna gussa qeu…?
তুমি এত বোকা সাজো না,
আমায় একটু বোঝো সোনোনা
এই লাভ ইউ…
ও বউ তুমি আমায় কি ভালোবাসো না…”
মুহূর্তেই মেঘের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। বেশ উপভোগ করছে রুদ্রর কণ্ঠ। গান শেষ করেই রুদ্র মেঘকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,
-“বউ, সত্যি বলছি তাড়াতাড়ি আসার ট্রাই করেছিলাম..”
মেঘ নরম হয়ে বলে,
-“হুম, বুঝলাম..”
হঠাৎ রুদ্র পকেট থেকে দুইটা গোলাপ বের করে মেঘের সামনে ধরে। মেঘ ফুল হাতে নিয়ে খুশি হয়ে বলে,
-“যাক, জামাইটা একদম আনরোমান্টিক না। একটু বুদ্ধিসুদ্ধি আছে তাহলে..”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“আমি আনরোমান্টিক?”
-“হ্যাঁ..”
রুদ্র ফিসফিসিয়ে বলে,
-“চলো ছোয়াছুয়ির খেলা খেলি। তখন বুঝিয়ে দিবো আমি কেমন..”
মেঘ তাকায়,
-“খেলবেন আপনি?”
রুদ্র মাথা নেড়ে বলে,
-“হ্যাঁ, গভীর রাতে..”
মেঘ মুচকি হেসে বলে,
-“চলুন, এখনই খেলি..”
-“খেলার এত তাড়া?”
-“হু..”
রুদ্র দুষ্টু হেসে বলে,
-“তাহলে চলুন ম্যাডাম..”
মেঘ বলে,
-“এক মিনিট দাঁড়ান, প্রস্তুতি নিয়ে আসি।”
বলেই মেঘ বেরিয়ে যায়। রুদ্র ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ভেবেছিলো মজা করছে মেঘ। তবে কি সত্যিই? তার অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে তাহলে। মাথা চুলকে হেসে উঠে,
-“যাক, বউটা এতোদিনে আমার কষ্টটা বুঝলো…..
চলবে….
[ এতো বড় করে লিখেও,কয়েকজন ছাড়া আপনাদের থেকে গঠনমূলক কমেন্টই পাই না। এতো কিপ্টামি করেন কেনো? সুন্দর সুন্দর বড় বড় মন্তব্য করে কোথায় লেখিকার দিল খুশ করে দিবেন, তা না খালি নেক্সট…
]
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৬
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৭
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৪
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪৬
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২০
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২১
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৫