#আড়ালে_তুমি |৪৮|
#_সাইদা_মুন
সুমনার কথায় ডিস্কো মহিলা এমনভাবে তেড়ে আসছে যেন ষাঁড় লাল কাপড় দেখেছে। সুমনা-পিহু কেউই উঠতে পারছে না। মহিলা হন্তদন্ত হয়ে সামনে এসে বলে,
-“এই মেয়ে, কিপটা বলার সাহস হলো কিভাবে?”
সুমনা ঢোক গিলে বলদের মতো হাসি দিয়ে বলে,
-“ইয়ে মানে আন্টি, আমি অভাবে বলতে চাইছিলাম…”
মহিলা আরও রেগে গর্জে ওঠে,
-“এইইই, এভাবে ওভাবে কি? তুমি কিপটা বলেছ কেনো?”
অসহায় হয়ে সুমনা পিহুর দিকে তাকায়। কিন্তু পিহু একদম ভদ্র মেয়ের মতো বসে আছে, যেন সুমনাকে চিনেই না। পিহুর পল্টি দেখে সুমনা চোখে চোখে ইশারা করে, “দাঁড়া এ আপদ যাক, তারপর তোকে দেখে নেব।”
সাদ পাশেই ছিল, চিন্তিত হিয়ে এগিয়ে আসে, “আবার কী কাণ্ড করলো এই মেয়ে।”
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে সুমনা হেসে বলে,
-“আরে আন্টি, মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে আপনার।”
-“অস্বীকার করছো? আমি তো স্পষ্ট শুনেছি।”
-“না না, অস্বীকার করবো কেনো? আমি তো বলেছি।”
-“কতো বড় সাহস…”
মহিলাকে থামিয়ে সুমনা কাঁধে হাত বুলিয়ে শান্ত করার ভঙ্গিতে বলে,
-“আরে আন্টি, কুল কুল। আমি কিপটা খারাপ মিন করে বলিনি। গুড ওয়েতে বলেছি।”
মহিলা হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“কিপটা আবার ভালোভাবে কিভাবে?”
সুমনা মুখটা ইনোসেন্ট করে বলে,
-“দেখেন আন্টি, মানুষকে কিপটা বললে রেগে যায়। কিন্তু আসলে কিপটা খুব ভালো শব্দ। কারণ যারা কিপটা তারাই আসল খাঁটি মানুষ। তারা অপচয় করে না, প্রয়োজনের চেয়েও কম খরচ করে। জানেন কেনো?”
-“কেনো?”
-“কারণ তারা দেশপ্রেমিক। দেশের সম্পদ অপচয় থেকে রক্ষা করে। তারাই হলো ব্রিটিশদের ফেলে যাওয়া উপস, মানে মেরে ভাগানো রত্ন। তাই তাদের কিপটামি দেশের জিনিসের প্রতি মায়ায়। যেমন আপনি একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। দেশের সম্পদ যেন কমে না যায় তাই টাকা হিসেব করে খরচ করেন। ঠিক তো?”
সুমনার যুক্তি শুনে মহিলা খুশি হয়ে বলে,
-“হ্যাঁ হ্যাঁ, একদম ঠিক!”
সুমনা মুখ ভার করে বলে,
-“দেখলেন আন্টি? আমি আপনাকে ভালো দিক দিয়ে কিপটা বলেছি, আর আপনি রেগে গেলেন। আমি নিজেও তো কিপটা। দশ টাকার চিপস পর্যন্ত কিনে খাই না, টাকা চলে যাবে বলে। আর সেই আমি কি না আমার দলের লোকের সাথে খারাপ ব্যবহার করবো…”
এবার আশেপাশের অনেকে মুখ চেপে হাসছে, পিহু কোনোভাবে হাসি আটকাচ্ছে। সাদ পাশে থেকে যোগ করে,
-“আরে হ্যাঁ আন্টি, জানেন না? ও তো ১০ টাকার চিপস কিনলে ১০ সেকেন্ডে কাভার অপ্স সরি ১০ দিনে খায়।”
সাদের কথা কেড়ে নিয়ে রিক বলে,
-“তাও দেখেন, কত্তো মুটকি,
সব আল্লাহর দান,
না খেয়েও এত স্বাস্থবান….
আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ।”
সুমনা কটমট করে তাকায় ওদের দিকে। মহিলা খুশিতে সুমনার গাল ধরে বলে,
-“আরে মা, আমি তো বুঝতেই পারিনি তুমি এত ভালো। এমন একটা মেয়েকেই চাই আমার ছেলের বউ হিসেবে। নাম কী তোমার, বাড়ি কোথায় মা? তোমাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।”
মহিলার কথায় সাদ, সুমনা, পিহু, রিক সবাই চমকে তাকায়। সাদের তো মনে হলো হার্টে কেউ ধপ করে আঘাত করেছে। সে কিছু বলার আগেই পিহু বলে ওঠে,
-“আরে আন্টি, ও তো বিবাহিত, আমার দুইমাত্র ভাবি।”
পিহুর কথায় মহিলার মুখ চুপসে যায়। তারপর আবার হেসে বলে,
-“যাই হোক, তোমাদের ঘরের লক্ষ্মী এই মেয়ে। সংসারে অভাব আসবে না এ রকম সংস্কারী বউ থাকলে। ভালো থেকো মা।”
বলেই ব্যাগ থেকে ১০ টাকার নোট বের করে সুমনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়।
মহিলা যেতেই একেকজন হাসিতে ফেটে পড়ে। পিহুদের সাথে সায়ান, সারার কাজিনরাও হো হো করে হাসছে। কিন্তু সুমনা বোকার মতো হাতে ধরা নোটের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমাকে কি ভিক্ষা দিয়ে গেল?”
পিহু হাসতে হাসতে বলে,
-“যা, ওই দিয়ে ১০ টাকার চিপস কিনে “
বাকিটা সাদ বলে,
-“১০ দিনে খাও।”
রিক বলে,
-“সুমনা যদি সত্যিই ১০ টাকার চিপস ১০ দিনে খেতে পারে, আমি এটাকে পৃথিবীর সবথেকে আশ্চর্যজনক কাজ বলব।”
ওদের মজা শুনে সুমনা রেগেমেগে এক দৌড়ানি দেয়। সামনে সাদ-পিহু-রিক দৌড়াচ্ছে, পিছে সুমনা। রিক দৌড়াতে দৌড়াতে পেছন ফিরে হাত ঝেড়ে বলে,
-“যা যা হুঁশ ফুঁশ, কানা ষাঁড়। দেখছিস না আমরা লাল পরিনি, তাও তাড়া করছিস।”
সুমনা আরও রেগে যায়। মেঘ, রুদ্র, ফারহান, সামিয়ারা হাসতে হাসতে ওদের কাণ্ড দেখছে, একেকটা একেবারে বাচ্চা।
———
সন্ধ্যা ৭টা,
নতুন বউ নিয়ে একটু আগে এসেছে সবাই। বাড়ি ভরা মানুষ, সবাই নতুন বউ দেখতে এসেছে। মেঘরা উপরে চলে যায় চেঞ্জ করতে। আজ রাতটা থাকবে, কাল বউভাত খেয়ে চলে যাবে।
অনেকক্ষণ ধরে মেঘ হাতে কাপড় নিয়ে বসে আছে ফ্রেশ হওয়ার জন্য। কিন্তু রুদ্র যে বাথরুমে ঢুকেছে, বের হওয়ার নাম নেই। বেশ কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার শব্দ হতেই মেঘ উঠে বাথরুমের দিকে এগোয়। সামনে চোখ যেতেই দেখে রুদ্র শরীরে শুধু টাওয়াল জড়ানো।
মেঘ সাথে সাথে চোখ বড় করে সরিয়ে নাক সিটকিয়ে বলে,
-“ছিঃ এভাবে বের হলেন কেনো? কাপড় পরুন।”
মেঘের ভঙ্গি দেখে রুদ্র ভ্রু কুঁচকে সামনে এসে দাঁড়ায়,
-“এমন ভাব ধরছো , যেন অন্য কোনো মেয়ের সামনে এসেছি।”
তারপর মুচকি হেসে লজ্জা দিতে বলে,
-“তাকাচ্ছো না কেনো? কয়দিন পর তো এমনিতেই খোসা ছাড়াই দেখতে হবে।”
রুদ্রের কথায় মেঘের গা ঝাঁঝরা হয়ে যায়। ধাক্কা দিয়ে সরতে গিয়ে তার হাত থেকে ছোট কালো কিছু পড়ে যায়। দ্রুত সেটা দলামোচা করে তুলে নেয়।
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“এটা কী?”
মেঘ থমথমে মুখে তোতলাতে তোতলাতে বলে,
-“ক… কিছু না।”
ওর এমন রিঅ্যাকশন দেখে রুদ্রের সন্দেহ হয়, নিশ্চয় কিছু লুকাচ্ছে। মেঘ পেছন ফিরতেই সে টান দিয়ে সেটা কেড়ে নেয়। খুলে দেখতে যাবে, মেঘ দ্রুত ঝাঁপিয়ে পড়ে,
-“কি করছেন। এটা দিন, এক্ষুনি দিন।”
-“ওমা, এত রিয়েক্ট করছো কেনো? কী এমন জিনিস?”
-“না না, দেখতে হবে না, প্লিজ দিন।”
কিন্তু রুদ্র ছাড়ে না। হাত উঁচু করে ধরে রেখেছে, মেঘ নাগাল পাচ্ছে না। রুদ্র হাসতে হাসতে মেঘের কান্ড দেখছিল, হঠাৎ চমকে ওঠে। মেঘ তার টাওয়ালের গিট্টু চেপে ধরেছে।
-“এইইই, কি করছো?”
মেঘ শয়তানি হেসে বলে,
-“এটা দেন, নাহলে গিট্টু খুলে দেবো।”
রুদ্র চোখ বড় করে তাকায়, বলেই কি মেয়ে। দ্রুত জিনিসটা মেঘের হাতে দিকে বাড়িয়ে দিতে যাবে অমনি মেলে যায়। সাথে সাথে রুদ্রের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। মেঘ লজ্জায় হাত থেকে ছুঁ মেরে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায়।
রুদ্র মাথা চুলকাতে চুলকাতে বিরবির করে,
-“বললেই হতো পার্সোনাল জিনিস। তাহলে আমিই দিয়ে দিতাম স্টুপিড…”
———
পিহু অনেকক্ষণ ধরে ফারহানের রুমের সামনে ঘুরঘুর করছে। ভেতরে ঢুকবে কি না, সেটা নিয়ে দ্বিধায়। দরজা খোলা পেয়ে উঁকি দিল, কাউকে দেখা গেল না। শেষমেশ ভাবল ঢুকেই পড়ি, কাল তো চলে যাবে, তার আগে একবার ঘরটা দেখাই যাক।
ধীরে ধীরে পা ফেলে ভেতরে ঢুকে। চারিদিকে তাকিয়ে অবাক, ভীষণ পরিপাটি গোছানো ঘর।
-“যাক, এদিকে ঠিক আছে। ভবিষ্যতে অগোছালো নিয়ে ঝামেলা করতে হবে না।”
সামনে মিনি বুকসেল্ফ, নানা ধরনের বই সাজানো। একটা একটা করে বের করে দেখছিল, হঠাৎই বাথরুমের দরজা খোলার শব্দে ভড়কে উঠে,
-“কিরে, কেউ তো ছিল না, এখন কই থেকে আসলো।”
হতভম্ব হয়ে এদিক-সেদিক তাকিয়ে বারান্দায় গিয়ে লুকাল। এদিকে ফারহান সবে মাত্র গোসল সেরে বেরিয়েছে। দরজা খোলা দেখে এগিয়ে গিয়ে সেটা লাগাল। পড়নে শুধু একটা টাওয়েল, কেউ চলে এলে বিপদ হবে।
বারান্দার জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে পিহু এই অবস্থায় ফারহানকে দেখে দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিল। মনে মনে বারবার বলছে, নাউজুবিল্লাহ নাউজুবিল্লাহ। হঠাৎ দরজা লাগানোর শব্দে বুক ধক করে উঠল, তাকিয়ে দেখে ফারহান দরজা লক করছে। পিহুর মাথায় দুশ্চিন্তার ঝড়, এখন যদি ফারহান বারান্দায় আসে। তার চেয়েও বড় সমস্যা, যদি বাড়ির কেউ টের পায় যে তারা এক ঘরে, তখন কী হবে?
এসব ভাবতে ভাবতে ফারহানের কাজকর্ম দেখতে লাগল। প্রথমে সে ড্রয়ার খুলে কাপড় বের করে, বিছানায় রাখল। তারপর টাওয়ালে হাত দিলেই পিহুর চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার মতো অবস্থা। দ্রুত মাথা ঘুরিয়ে নিল কি করছে উনি ভেবে লজ্জায় আরষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে। তাকাবে না তাকাবে না করছে, তবু নির্লজ্জ মন বলছে দেখ দেখ। তোরই তো ফিউচার জামাই।
অবশেষে মনের সাথে যুদ্ধে হেরে, ফের তাকাতেই এমন এক দৃশ্য দেখে যে সাথে সাথে পিহু ছিটকে পিছিয়ে যায়। ধাক্কায় ফুলদানি পড়ে গিয়ে শব্দ হয়।
শব্দ শুনেই ফারহান তাড়াহুড়া করে ট্রাউজার পরে “কে কে?” বলতে বলতে বারান্দায় এল। ঢুকতেই দেয়ালের সাথে ঘেঁষে চোখ চেপে রাখা পিহুকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
-“এই তুমি এখানে কী করছো?”
ফারহানের গলা শুনে পিহু ধীরে ধীরে চোখ খুলল। জোর করে হাসার চেষ্টা করে আশেপাশে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলে,
-“এই আরকি… প..পরিবেশ উপভোগ করছিলাম। স..সুন্দর না আকাশটা?”
ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“তো আমার রুমের বারান্দায় আসলে কীভাবে?”
পিহু অবাক হওয়ার ভান করে,
-“ও এটা আপনার ঘর। আমি তো জানতামই না। পরিবেশ উপভোগ করতে করতে চলে এসেছি হয়তো ভুলে।”
ফারহানের হঠাৎ মনে পড়ে কিছু,
-“ওয়েট… তুমি এতোক্ষণ এখানেই ছিলে?”
পিহু ঠোঁট উলটে চোখ ছোট ছোট করে মাথা নাড়ল। ফারহান সাথে সাথেই হালকা আতঙ্ক নিয়ে চেচিয়ে বলে উঠে,
-“এই তুমি কিছু দেখোনি তো?”
ফারহানের চিল্লানোয় পিহুও গুলিয়ে গেল। তড়িঘড়ি করে বলে,
-“না না, কিচ্ছু দেখিনি।”
ফারহান এগিয়ে এসে একদম পিহুর সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে,
-“সত্যি করে বলো।”
পিহুর চোখ হঠাৎ ফারহানের শরীরের দিকে চলে গেলেই দ্রুত নামিয়ে নিল। তোতলাতে তোতলাতে বলল,
-“আ…আপনার জা..মা পড়ুন।”
পিহুর কথায় টনক নড়ে ফারহানের। নিজের দিকে তাকিয়ে, দ্রুত সেখান থেকে বের হয়ে টিশার্ট গায়ে চাপাল। পিহু সুযোগ বুঝে দৌড়ে দরজার দিকে গেল, ফটাফট খুলে বেরিয়ে গেল। ফারহান পেছন থেকে ডাকে,
-“এই মেয়ে দাঁড়াও বলছি…”
পিহু কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে এল। দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,
-“আপনি যে নিচে কালো ইয়ে পড়েছেন, আমি কি দেখেছি? নাহ, একবারও দেখিনি। তাই চিন্তা করবেন না।”
বলেই ভোঁ দৌড়। ফারহান হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। গালে লাল আভা ছড়িয়ে যাচ্ছে। মাথায় শুধু একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে,
“এই মেয়ে আমাকে ওভাবে দেখে গেছে… নাউজুবিল্লাহ”
চিন্তিত হয়ে বিরবির করে বলে,
-“বেয়াদব মহিলা… ইয়া আল্লাহ আমার ভার্জিনিটি..”
———
সাদ রেগে বলে,
-“সুমনা, এবার কিন্তু মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দুই মিনিট পর পর এই ঝামেলাগুলোতে আমি অতিষ্ঠ হয়ে গেছি, আর সহ্য হচ্ছে না।”
সাদের কথায় সুমনা উল্টো রেগে বলে,
-“সহ্য হবে কিভাবে? নতুন নতুন মেয়েরা আসছে, ছবিতে লাভ স্টোরিতে কেয়ার, দুইদিন পর ইনবক্সেও ঢুকে পড়বে। যাও, ওদের কাছেই যাও না কেনো..”
সাদ অসহায় সুরে বলে,
-“আরে জানরে, বুঝো না। এদের আমি একদমই চিনিনা রে। ওরা আমার পোস্টে লাইক কমেন্ট করলে আমার কি দোষ?”
সাদের কথায় সুমনা ধপ করে উঠে দাঁড়ায়,
-“এখন আবার ওদের হয়ে সাফাই গাইছো? আর একবার যদি আমার আশেপাশে দেখেছি, পাছা লাল নীল করে দিবো..”
বলেই হনহনিয়ে চলে যায়। বেশ কিছুক্ষণ ধরেই রিক দূর থেকে সব দেখছিলো। সুমনা যেতেই আস্তে ধীরে এসে সাদের পাশে বসে। সাদের অবস্থা একদম অসহায়, মনে হচ্ছে এই মুহূর্তেই কেঁদে ফেলবে। আহা সুমনা যে বেচারার জীবনটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে বেশ বুঝছে। রিক সাদের কাঁধে ভরসার হাত রাখতেই সাদ কষ্টের ঠেলায় কাদোকাদো সুরে বলে,
-“পাবলিক পোস্টে কে না কে রিয়েক্ট কমেন্ট করেছে, এতেও নাকি আমার দোষ। এই জীবন রেখে কি লাভ বল? আগেই ভালো ছিলাম, এই মেয়ের চক্করে জীবন একদম ত্যানাত্যানা হয়ে গেছে। নিশ্চিত আমার এক্সদের অভিশাপ লেগেছে।”
বলেই গলা ছেড়ে কান্নার আওয়াজ করে, তবে চোখে পানি নেই। রিক সান্ত্বনা দেওয়ার বদলে তার কান্না দেখে বলে ওঠে,
-“সেরা ভাই সেরা, আপনার কান্না যে এত মনোমুগ্ধকর হতে পারে ভাবতেও পারিনি। দোয়া করি ভাই, সারা জীবন কান্না করার তৌফিক, আল্লাহ আপনাকে দান করুক।”
রিকের কথা শুনে সাদের আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। কটমট করে তাকাতেই রিক হে হে বলে আস্তে ধীরে উঠে দাঁড়ায় আর মুহূর্তেই ভোঁ দৌড় দেয়।
———
রুদ্র রেডি হচ্ছে, হয়তো কোথাও যাবে। মেঘ চুপচাপ বিছানায় বসে বসে সেই অনেকক্ষণ ধরে রুদ্রকে দেখছে। রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“আজ কি আমার রূপ বেড়ে গেছে নাকি? কেউ একজন কিন্তু ভীষণ মনোযোগ দিয়ে দেখছে।”
মেঘ চোখ-মুখ কুঁচকে বলে,
-“আমার জামাইকে আমি যখন খুশি দেখবো, আপনার সমস্যা কি?”
রুদ্র হালকা হেসে চুল আচড়ে মেঘের দিকে এগিয়ে আসে,
-“মনে হচ্ছে আজ খুব ভালো মুডে আছেন..”
মেঘ উঠে দাঁড়িয়ে রুদ্রের চুল এলোমেলো করে দেয়, শার্টের ভাঁজ খোলা হাতা নামিয়ে দিয়ে বলে,
-“এভাবে যাবেন? বিবাহিত পুরুষের এত স্টাইল কিসের? এমন ঠাসা রূপ সবাইকে দেখানোর শখ?”
রুদ্র অবাক হয়ে বলে,
-“আরে তাই বলে কি অগোছালো হয়ে বেড় হবো নাকি?”
মেঘ দুই হাত কোমরে দিয়ে বলে,
-“হ্যাঁ, এন্ড দিস ইজ মাই ফিক্সড এন্ড ফাইনাল অর্ডার।”
রুদ্র মুখ চুপসে বলে,
-“আচ্ছা আচ্ছা…”
বেড়িয়ে যেতে যেতে মেঘের ডাকে আবার ফিরে আসে,
-“শোনোন, আমার কিছু একটা চাই..”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“তোমার কি চাই?”
মেঘ ফট করে বলে,
-“আপনাকে..”
রুদ্র কিছুক্ষণ মেঘকে দেখে ভাবে মজা করছে। তাই সেও হেসে আবার জিজ্ঞেস করে,
-“আমাকে সাইডে রেখে বলো, কি চাই?”
মেঘ ফের নির্দ্বিধায় বলে,
-“সাইডে রাখা আপনাকেই চাই..”
রুদ্র মেঘের কথায় কিছু আন্দাজ করে, এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
-“বউ, তুমি কিন্তু বেশি পেকেঁ যাচ্ছো..”
মেঘ মুখ ভেংচিয়ে বলে,
-“আপনারই সাইড ইফেক্ট..”
রুদ্র মুচকি হেসে মেঘকে একটা টাইট হাগ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
———
রাত ১১টা। সায়ান বাসরঘরে ঢুকে গেছে আরও আগেই। বাকি ছেলেরা সবাই নিচে বাগানের পাশে কি যেন করছে। মেয়েদের সেখানে যাওয়া নিষেধ। তবে তাদের সেদিকে কি হচ্ছে জানার ইচ্ছে খুব। মেঘরা সব, মিষ্টি সহ আরও দু’জন একসাথে রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। সুমনা গেছে খবর আনতে। তখনই হঠাৎ সুমনার গলা শোনে সবাই দরজার দিকে ফিরে দেখে সুমনা হাতে একটা বোতল নিয়ে দৌড়ে আসছে,
-“ইয়েএএএ,পেয়ে গেছিই…..”
চলবে……..
[ আপনারাই বলেন সুমনা কি পেয়েছে.? আর অবশ্যই কেমন হচ্ছে জানাবেন। ]
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪০
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৫৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬২
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫১
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬০
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৬
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৪
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৭