Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪৭


#আড়ালে_তুমি |৪৭|

#_সাইদা_মুন

মেঘরা স্টেজের সামনেই একপাশে বসে আছে। সামনে সবাই বউয়ের সাথে ছবি তুলছে, অনেকে খেতে বসেছে। ওরা এগুলোই দেখছে। আশেপাশে এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে, তাই সুমনা সাদকে শক্ত করে নিজের পাশে বসিয়ে রেখেছে।

সাদ ফিসফিস করে বলে,

-“আরে ভাই, আমি মেয়ে নাকি এক জায়গায় বসে থাকবো? একটু যাই ওদিকে, ছেলেরা বসে আছে…”

সুমনা চোখ রাঙিয়ে বলে,

-“দরকার হলে আমার এক্সকে বিশ্বাস করবো, তাও তোমাকে না। কালকের দিনের মতো আবার কেউ এসে গলায় ঝুলে যাক, নো নেভার! কাবি নেহিইইইই…”

সাদ কানে হাত দিয়ে অসহায় গলায় বলে,

-“আচ্ছা আচ্ছা, যাচ্ছি না…”

এদিকে মেঘ রুদ্রকে খুঁজছে। এমনি রেগে আছে সে,  আবার এখন মেঘেরও ভালো লাগছে না। তাই একটু উঠে সামনে খুঁজতে যায়। কিছুদূর যেতেই রুদ্রকে দেখতে পায়, কয়েকজন লোকের সাথে কথা বলছে। মেঘ সেদিকেই এগিয়ে যায়। হঠাৎ এক ছেলে তার পথ আটকে দিয়ে বলে,

-“হাই…”

মেঘ ইতস্তত করে জবাব দেয়,

-“জি ভাইয়া, কিছু বলবেন?”

-“হ্যা, আপনার নামটা কী?”

রুদ্রের চোখ তখন থেকেই মেঘের ওপর ছিল। ছেলেটাকে মেঘের পথ আটকাতে দেখে দ্রুত এগিয়ে আসে। 

-“মেঘ…”

মেঘের কথা থামিয়ে দিয়ে, রুদ্র বলে,

-“মিসেস রুদ্র চৌধুরী…”

মেঘ ঘাড় গুড়িয়ে তার দিকে তাকায়। ছেলেটি ভুরু কুঁচকে বলে,

-“ম্যারিড?”

রুদ্র এক হাত পকেটে, অন্য হাতে মেঘকে টেনে নিজের সাথে চেপে ধরে বলে,

-“ইয়েস, কোনো সমস্যা?”

ছেলেটি মুখ শুকিয়ে বলে,

-“নাহ, তেমন কিছু না..”

বলেই সেখান থেকে কেটে পড়ে, ভাবছিলো মেঘ সিঙ্গেল।

রুদ্র মেঘকে নিয়ে একপাশে গিয়ে বসে। তবে তার মুখে কোনো কথা নেই, হাসি নেই, শুধু গম্ভীর ভাব। মেঘ অনেকক্ষণ ধরে এক আঙুল দিয়ে রুদ্রের গালের ছোট ছোট দাঁড়িতে হাত বুলাচ্ছে। কিন্তু রুদ্র চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়েই আছে। মেঘ মুখ চুপসে বলে,

-“রেগে আছেন এখনো?”

রুদ্র নির্লিপ্ত গলায় বলে,

-“রেগে নেই।”

-“তো কথা বলছেন না কেনো?”

-“এমনি।”

মেঘ চুপ হয়ে যায়, পাশে সেভাবেই বসে থাকে। হঠাৎ রুদ্র উঠে দাঁড়িয়ে কোট ঠিক করতে করতে বলে,

-“চলো…”

মেঘও উঠে দাঁড়ায়,

-“কোথায়?”

রুদ্র শান্ত কণ্ঠে তাকিয়ে বলে,

-“সামনেই…”

তার হাত ধরে সেন্টারের বাইরে নিয়ে আসে। সামনের রাস্তা ধরে কিছুটা হেঁটে সামনেই দাঁড়ায়। রাস্তার দুই পাশে মাঠ আর গাছপালা অসাধারণ সুন্দর পরিবেশ। মেঘ রুদ্রের হাত ছাড়িয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে আশেপাশে তাকায়, ফুরফুরে লাগছে। মুচকি হেসে বলে,

-“খুব সুন্দর না জায়গাটা? এরকম একটা জায়গায় ছোট্ট বাড়ি করে থাকলে কতো শান্তি লাগবে। ফ্যানেরও দরকার নে…”

কথা শেষ হবার আগেই রুদ্র বলে,

-“আমার তোমাকে দরকার এখন…”

মেঘ চমকে পেছন ফিরে তাকায়। রুদ্রের দৃষ্টি স্থির, কণ্ঠে আকুতি। তাকে কেমন জানি লাগছে। মেঘ এগিয়ে এসে নরম সুরে জিজ্ঞেস করে,

-“কি হয়েছে আপনার?”

রুদ্র এক পা এগিয়ে এসে দু’হাত মেলে আবার বলে,

-“আমার তোমাকে দরকার…”

মেঘ বুঝে যায়, রুদ্র আসলে কী বলতে চাইছে। আশেপাশে তাকায়, কেউ নেই। বিয়ের লোকেরা সবাই ভেতরে, বাইরে নির্জন। মেঘ মুচকি হেসে এগিয়ে এসে তার খোলা বুকে নিজেকে সঁপে দেয়। রুদ্রও শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে রাখে। মেঘ মৃদু স্বরে বলে,

-“বুকের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলবেন নাকি?”

রুদ্র বিষণ্ণ গলায় জবাব দেয়,

-“পারলে তাই করতাম…”

মেঘ কিছুই বুঝতে পারছে না।

-“কি হয়েছে আপনার? বলুন না…”

রুদ্র তাকে ছেড়ে দু’গাল নিজের হাতে নিয়ে চোখে চোখ রাখে।

-“আমি কি তোমার খারাপ চাই, মেঘ?”

মেঘের কেমন জানি লাগে রুদ্র সাধারণত ‘বউ’ বলেই ডাকে। হঠাৎ নিজের নামে ডাকায় অদ্ভুত লাগছে। মাথা নাড়িয়ে বলে,

-“না…”

রুদ্র আবার বলে,

-“তাহলে শোনোনি কেনো? কতোবার বলেছিলাম অপরিচিত জায়গায় গাড়ি থেকে নামতে না আমি না আসা অব্দি। শোনোনি কেনো? যদি কিছু হয়ে যেতো..”

মেঘ চোখ নামিয়ে বলে,

-“সরি…”

রুদ্র ঠান্ডা গলায় বলে,

-“সরি দিয়ে কি মনের অশান্তি দূর হয়?”

হঠাৎ মেঘ হালকা হেসে বলে,

-“আমি মরে গেলে তো আপনার ভালোই হবে। আবার একটা সুন্দরী বউ বিয়ে করতে পারবেন…”

রুদ্র রেগে ওঠে,

-“তোমার ভাগ্য ভালো আমি বউয়ের গায়ে কোনোদিন হাত তুলবো না বলে ভেবে রেখেছি। না হলে এইমাত্র দুই গালে দু’টা থাপ্পড় পড়ত। মরার শখ মিটিয়ে দিতাম…”

একটু চুপ থেকে নিজেকে সামলে নেয়। তারপর মেঘের হাত ধরে সামনে হাঁটতে হাঁটতে গম্ভীর গলায় বলে,

-“শোনো বউ, আমার জীবনে তুমি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনো নারীর অস্তিত্ব নেই, আর থাকবেও না। এটা মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে নাও।”

———

ফারহান বেশ কিছুক্ষণ ধরে এক মেয়ের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছে। এই কয়দিনে তো তাকে এত হাসতে একবারও দেখেনি পিহু। পিহুর মুখটা থমথমে হয়ে যায়, ভীষণ রাগে তার মন জ্বলে উঠে। মোবাইল হাতে নিয়ে ডিরেক্ট ফারহানের সামনে চলে আসে।

হঠাৎ সামনে পিহুকে দেখে ফারহান কপাল ভাঁজ করে তাকায়। পিহু নিজের ফোনটা ফারহানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

-“কি??”

পিহু ভাবলেশহীনভাবে বলে,

-“ছবি তুলবো…”

ফারহান কপাল কুচকে বলে,

-“তো তুলো…”

-“তো তুলে দিন…”

ফারহান অবাক হয়ে বলে,

-“আমি?”

-“হ্যাঁ, আপনি…”

ফারহান ডিরেক্ট বলে,

-“পারবো না…”

মেয়েটির সামনে এভাবে না করায় পিহুর রাগ আরও বেড়ে যায়, ইগোতে লাগে ভীষণ। নাক ফুলিয়ে পাশের দিকে চলে যায়। এদিকে পাশের মেয়েটি পিহুর দিকে তাকিয়ে আবার ফারহানের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করে,

-“কে রে..?”

ফারহান পিহুর দিকে তাকিয়েই বলে,

-“যার কথা বলেছিলাম সে…”

মেয়েটি এক্সাইটেড হয়ে বলে,

-“পিহু…?”

ফারহান মাথা নাড়ে।

-“মাশাল্লাহ, কি কিউট রে, এতো সুন্দর বাচ্চা মেয়েটাকে তুই এভাবে রিজেক্ট করছিস।”

ফারহান কিছুই বলে না, কেবল পিহুর দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে আছে। এদিকে স্নেহা বলে,

-“তুই শুধু শুধু নিজের লাইফ নষ্ট করছিস, অন্য একটা মেয়ের জন্য, যাকে চিনিস না, জানিস না নামও। পিহুর সঙ্গে মুভ অন করা উচিত…”

স্নেহার কথার মাঝেই ফারহান চোয়াল শক্ত করে উঠে বড় বড় পা ফেলতে ফেলতে পিহুর দিকে হাটা ধরে।

এদিকে পিহু ফারহানের থেকে এসে মন খারাপ করে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে,

-“হুহ, অন্য মেয়েদের সাথে হেসে হেসে আড্ডা দিতে পারে, আমাকে একটু ছবি তুলে দিতে পারছে না। তাতে আমার কি, ছেলের অভাব পড়েছে নাকি।”

বলেই এদিক সেদিক ছেলেদের খুঁজতে থাকে। হঠাৎ চোখে পড়ল এক ছেলে, পিহু ডাকল,

-“ভাইয়া, আমাকে একটু ছবি তুলে দিবেন…”

ছেলেটি পিহুর কথায় রাজি হয়ে যায়। হবেই না কেন, সুন্দরী মেয়ে নিজেই চাইছে। ছেলেটির হাতে ফোন দিয়ে পিহু সামনে পোজ দিয়ে দাঁড়ায়। ছেলেটি বলে,

-“স্মাইল প্লিজ…”

যেই ক্লিক করতে যেত, ঠিক সেই সময় কেউ মোবাইলটা এমনভাবে ধরে নিল যেনো বাঘের থাবা। ছেলেটা ভড়কে তাকায়। দেখে ফারহান চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। বেচারা ঢুক গিলে অন্যপাশে চলে যায়।

সে যেতেই ফারহান নিজের ফোনের ক্যামেরা ধরে পিহুর দিকে ছবি তুলতে । তবে পিহু ফারহানকে দেখে রেগে মেগে দুই হাতে লেহেঙ্গা আগলিয়ে ধরে ধেয়ে আসে,

-“এই, আপনি এসেছেন কেনো? যান, ওর কাছে যান, আমার মোবাইল দিন…”

বলেই ফারহানের হাত থেকে ফোন নেওয়ার চেষ্টা করে। ফারহান ফোনটি উপরে তুলে ধরে,

-“নিতে পারলে নাও…”

পিহু কটমট করে তাকিয়ে থাকে, তার হাইটের সুযোগ নিচ্ছে। ফুস করে উঠে বারবার হাত উচিয়ে নিতে চায়, তবে হাতের নাগালে পাচ্ছে না। শেষমেষ না পেরে বলে,

-“এই, আপনারা ছেলেরা এতো খাম্বার মতো হতে কে বলেছে..”

ফারহান চোখ ছোট ছোট করে বলে,

-“তোমাদের পুটি মাছের মতো হতে কে বলেছে..?”

পিহু রেগে বলে,

-“আমরা পুটি মাছ?”

ফারহান হালকা হেসে বলে,

-“তা নয়তো কি..?”

পিহু কড়া চোখে তাকিয়ে নাক ফুলিয়ে ওঠে রাগে। ফারহান হঠাৎ পিহুর নাক টিপে বলে,

-“পিচ্চিদের বেশি রাগ করতে নেই, যাও দাঁড়াও, ছবি তুলে দিচ্ছি…”

ফারহানের কথায় পিহু অভিমান নিয়ে বলে,

-“লাগবে না, আপনি যান, আমি অন্য কাউকে দিয়ে তুলিয়ে নিই…”

তারপর তখনের ছেলেটাকে দেখিয়ে বলে,

-“ওই ভাইয়াটা তুলে দি…”

ফারহান এক ধমক দিয়ে উঠে, পিহু সঙ্গে সঙ্গে কেপে উঠে,

-“চুপচাপ দাঁড়াও…”

পিহু এই প্রথম ফারহানের ধমক খেয়েছে। ভয়ে কিছুটা চুপসে দাঁড়ায়। ফারহান কয়েকটা ছবি তুলে দেয়। একই জায়গায় তুলছে দেখে পিহু আসফাস করছে, তবে ভয়ে বলছেও না । ফারহান শান্ত কন্ঠে বলে,

-“অন্য কোথাও তুলবে..?”

সাথে সাথে পিহু মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। ফারহান চলো বলতেই, পিহু হাটা ধরে সেন্টারের বাইরে। সেখানে সুন্দর জায়গায় আছে।

এদিকে স্নেহা বেশ কিছুক্ষণ ধরে ফারহানের কাজকর্ম লক্ষ্য করছিল, হেসে বলে,

-“ব্যাটা যতই বলো, ওই মেয়ের জন্য অপেক্ষায় আছো। তবে প্রেমে তো পড়েছো এই মেয়েটারই।”

———

-“দেখো, ছেলেটা সুন্দর, কিন্তু মেয়েটা দেখতে কেমন কুটনি কুটনি, ধুর, একটুও মানায়নি..”

সুমনার কথায় সাদ বলে,

-“হু, আর ওইদিকে দেখো, ওরা মেভি বফ গফ। ছেলেটাকে কি মগা লাগছে, ফু দিলেই উড়ে যাবে। আর মেয়েটা কি সুন্দর..”

সুমনা দুই হাত ভাজ করে সাদের দিকে বোম হয়ে তাকিয়ে। সাদ কথাটা বলে সুমনার রেস্পন্স না পেয়ে পাশ ফিরে তাকায়, আঁতকে ওঠে। সাথে সাথে বুকে থু থু দেয়, কে জানে কি হলো। আমতা-আমতা করে বলে,

-“জান কি হয়েছে…”

সুমনা উঠে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে হাঁটা ধরে। পেছন পেছন সাদ এগোচ্ছে,

-“আরে কি হয়েছে, কোথায় যাচ্ছো..?”

সুমনা ঝাড়ি মেরে বলে,

-“জাহান্নামে যাচ্ছি, তুমি যাওনা ওই মেয়ের কাছে। ফালতু, কারেক্টারলেস ছেলে, বেয়াদব।”

সাদ অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। যাহ বাবা নিজে অন্য ছেলের প্রশংসা করতে পারবে আমি মেয়ের করলেই দোষ। রিক সাদকে থমকে দাঁড়াতে দেখে, পিছন থেকে পিঠে হাত রেখে তা স্লাইড করে পেছন থেকে ঘাড় দিয়ে বুকে নিয়ে যায়, মেয়েলি স্বরে বলে,

-“হেই সাদ বেবি, হোয়াট হ্যাপেন্ড..?”

হঠাৎ এমন স্পর্শে সাদ লাফিয়ে উঠে, ছিটকে দূরে সরে যায়। দ্রুত মুখে ঝপে,

-“নাউজুবিল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আমার পুকির মা আছে, আমার পুকির মা দেখলে আমার ইন্না-লিল্লাহ করে দিবে। দূর হো দূর হো…”

বলতে বলতে পাশে তাকায়। দেখে রিক হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম। সাদ কপাল কুচকে এদিক সেদিক তাকায়। কোনো মেয়ে নেই, বুঝে ফেলে এটা রিকের কাজ,

-“শা*লা, দাড়া, তোকে আজ দেখছি..”

এদিকে রিক হাসি থামিয়ে ভৌ দৌড়,

-“দুলুলু, তোমার যা আছে, আমারাও তা আছে, দেখার মতো বিশেষ কিছু নেই…”

দৌড়াতে দৌড়াতে তারা বাইরে আসে। হয়রান হয়ে দাঁড়ায়। রিক হাপিয়ে বলে,

-“আরে দুলুব্রো, আমি তো তোমার লয়ালিটি চেক দিচ্ছিলাম..”

সামনে তাকাতেই দেখে পিহু, সুমনা, মেঘ, ফারহান, রুদ্ররা সেদিকেই। সাদ রিক ও সেদিকে এগিয়ে যায়।

———

চারপাশে সবুজ মাঠ, গাছগাছালি, মাঝ দিয়ে রাস্তা। সেখানেই বসে আছে মেঘ, পিহু, সুমনা। রিক হাটাহাটি করছে এদিক-সেদিক। গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র, ফারহান। সামনের সিটের দরজা খুলে পা বাহিরে দিয়ে বসে আছে সাদ। ফারহান এদিক-সেদিক দেখে হঠাৎ বলে,

-“জায়গাটা গ্রাম সাইড লোকালয় না..”

রুদ্র শান্ত গলায় বলে,

-“এমন জায়গায় তোকে কো*পাতে ইচ্ছে করছে..”

ফারহান ভ্যাঙ্গ করে বলে,

-“আর আমার তো তোকে চুম্মাতে ইচ্ছে করছে, তাই না..?”

চারিদিকে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। রুদ্ররা চুপচাপ উপভোগ করছে পরিবেশ, তবে ওদিকে বিচ্ছুর দল চুপ নেই। একেকজন আশেপাশের পরিবেশ দেখছে, উল্টাপাল্টা বকবক করছে।

-“আরে এই মাঠ তো আমার বাপ-দাদার সম্পত্তি ছিলো, দান করে দিয়েছি…”

রিক বুক ফুলিয়ে বলে ওঠে। রিকের কথায় সুমনা ভ্রু তুলে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে,

-“জানিস, আমি একসময় দুবাইয়ের আইফেল টাওয়ারের মালিক ছিলাম। এখন সব দান করে দিয়েছি। মনটা যে অনেক বড়, বুঝলি তো…” 

বলে বুকের ওপর হাত চাপড়ায়। ওদের কথায় পিহু বিরক্ত মুখে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

-“ইচ্ছে করছে দুটোকেই প্লেনের নিচে চাপা দেই। আফসোস, আমার প্রাইভেট প্লেনের চাকা পাংচার হয়ে আছে… “

ওসব শুনে মেঘ দুই হাত কোমরে দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,

-“তোদের কথা শুনে ইচ্ছে করছে আমার প্রাইভেট হেলিকপ্টারে তুলে সবকটাকে ওপর থেকে ফেলে দিই। হালা বাটপারের দল। বাঁচলি, আমার হেলিকপ্টারের তেল শেষ হয়ে গেছে।”

ফারহান আর সাদ মুখ চেপে হাসি আটকাচ্ছে। রুদ্র ফুস করে শ্বাস ছেড়ে বলে,

-“এরাই সবচেয়ে শান্তিতে আছে… ব্রেন নাই, ব্রেন ক্যান্সারের ঝুঁকিও নাই…”

———

কিছুক্ষণ পর সবাই চলে যায়, বিয়ে পড়ানো হয়েছে, এখন খাওয়ার পালা। সায়ান সারা তাদের পুরো ফ্রেন্ড গ্যাং আর কাজিন সহ তিনটা টেবিল একত্র করে বসেছে। হাসি-ঠাট্টার মাঝে খাওয়া শেষ হয়। এবার বিদায়ের বেলা। সবাইকে সালাম করাচ্ছে, একে একে সবাই সালামি দিচ্ছে। সারা ভীষণ কাদছে। একটা মেয়ের যেই বাড়ি ছোট থেকে বড় হয়েছে, সেই বাড়ি মা-বাবা, ভাই-বোন সব ছেড়ে নতুন ঠিকানায় যাবে। ভাবতেই কেমন লাগে।

মেঘের অনেক খারাপ লাগছে সারার কান্না দেখে তার চোখেও পানি। তার নিজের বিদায়ের কথা মনে পড়ে, নিজেকেই তাচ্ছিল্য করে,

-“আমার ওটা কি কোনো বিদায় ছিলো? হ্যা, ছিলো, আপদ বিদায় ছিলো..”

রুদ্র মেঘের দিকে তাকিয়ে পাশে এসে দাঁড়ায়,

-“শরীর খারাপ লাগছে..?”

মেঘ মাথা নেড়ে না করে। রুদ্র ফের বলে,

-“তো চোখ-মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো?”

মেঘ হাসার চেষ্টা করে বলে,

-“এমনি, সারা আপুর বিদায় দেখে খারাপ লাগছে..”

রুদ্র এক হাতে মেঘকে ধরে দাঁড়ায়। মেঘ মুচকি হেসে রুদ্রের দিকে ছলছল চোখে তাকায়। এমন মানুষই তো সে চেয়েছিলো, যে খারাপ লাগা-ভালো লাগা সবকিছুতে পাশে থাকবে।

পিহু ও সুমনা বসে বসে দেখছে আর হিসাব করছে কে কত টাকা দিচ্ছে। এক মহিলা সারার কি লাগে জানে না, তবে দেখে সেই লেভেলের বড়লোক মনে হচ্ছে। বয়স্ক মহিলা, হাতে, কানে, গলায় স্বর্ণের অলংকারে ভরা। সুমনা বলে,

-“বাপরে, ডিস্কো মহিলা..”

পিহু তাকিয়ে বলে,

-“মনে হয় ৫০-৬০ হাজার সালামি দেবে। দাড়া দেখি..”

মহিলাকে সালাম করতেই ব্যাগ থেকে ১ হাজার টাকার নোট বের করে। পিহু সুমনার ভ্রু কুচকে আসে,

-“আরে মনে হয় ভুলে বের করেছে, আবার ঢুকাচ্ছে এবার বের করবে বড় বান্ডেল..”

মহিলাটি ১ হাজার টাকার নোট রেখে এবার ৫০০ টাকার নোট বের করে সায়ানের হাতে দেয়। সুমনা-পিহু থতমত মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। ঘটনা বি লাইক এক্সপেকটেশন VS রিয়ালিটি।

সুমনা উত্তেজনায় জুড়েই বলে উঠে,

-“কি কিপ্টা মাইরি…”

সাথে সাথে আশেপাশের সবাই তাদের দিকে তাকায়। মহিলাটি শোনেই দ্রুত এগিয়ে আসে। পিহু ঢুক গিলে বলে,

-“এইরে, এজন্যই বলি সুমনা, ভালো হতে টাকা লাগে না ভালো হো। এবার…”

সুমনা দাত দিয়ে নোখ কামড়ে বলে,

-“আমি ইচ্ছে করে বলেছি নাকি, আমার গলার ব্রেক নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো……”

চলবে…….

[ কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন পাঠকগণ। আর অবশ্যই কিপটামি করে মন্তব্য করবেন না😒।]

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply