#আড়ালে_তুমি |৪৬|
#_সাইদা_মুন
সকাল সকাল ভূইয়া বাড়ির ডাইনিং টেবিলে সবাই বসে নাস্তা করছে। হঠাৎ ধুম করে কারো পড়ে যাওয়ার শব্দে সবাই চমকে তাকাতেই দেখে, রিক মেঝেতে পড়ে আছে। এক হাত কোমরে দিয়ে কুকাচ্ছে, অন্য হাতে শাপলা ফুল ধরা। সবাই দ্রুত এগিয়ে যায়। এদিকে রিক পড়েই আহাজারি শুরু করে,
-“ও মাই গড, গায়েজ হেলেপ মি। মাই কোমর ইজ ভাইঙ্গা গেলো। নাউ নোবডি উইল গিভ মি দেয়ার মাইয়া….”
পরে গিয়েও ওর বিটলামি শেষ হয়না। সুমনা রিকের কথায় বলে,
-“প্লিজ বন্ধ ইউর মুখ, নাইলে মাইয়ার ফাদার রিজেক্ট ইউ ফর ইউর হাংকু-পাংকু ইংলিশ।”
-“হেই, শাট ইউর মুখ এন্ড টাইনা তুল মি।”
এদের আজগুবি ইংলিশ শুনে সবাই হাসতে হাসতে শেষ। সায়ান আর সাদ মিলে রিককে টেনে তোলে। তেমন ব্যথা পায়নি, তবে বেকায়দায় পড়ে কোমরে হালকা লেগেছে। রিককে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতে করতে সবাই নাস্তা শেষ করে উঠে যায়। তবে কেউ একজন খুব গিল্টি ফিল করছে।
-“আসতে পারি ভাইয়া?”
রিক বিছানায় বসে ফোন টিপছিলো, হঠাৎ মেয়েলি ডাকে দরজার দিকে তাকায়। মিষ্টিকে দেখে হেসে বলে,
-“অবশ্যই…”
মিষ্টি এসে রিকের সামনে হালকা মাথা নিচু করে দাঁড়ায়,
-“সরি ভাইয়া, আমার জন্যই এমন হয়েছে…”
-“আরে না, এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ছিলো।”
মিষ্টি মন খারাপ করে বলে,
-“তাও আমি শাপলা আনতে বলেছিলাম, আর তার জন্যই তো ভিজে গিয়ে পিছলে পড়েছেন।”
রিক হেসে বলে,
-“আরে,তেমব কিছু না। একদম মন খারাপ করোনা। তোমার মুখে হাসি না দেখলে আমার ভালো লাগে না…”
রিকের কথায় মিষ্টি হঠাৎ মাথা তুলে তাকায়, চোখে চোখ পড়তেই লজ্জায় মিষ্টি দ্রুত বেরিয়ে যায়। আর রিক মাথা চুলকে লাজুক হাসি হাসে।
———
মেয়েদের জন্য পার্লারের মেয়ে বুক করা হয়েছে, একটু পরই আসবে। মেঘ সোফায় বসে আছে, অন্যদিকে রুদ্ররা বাইরে কি করছে কে জানে।
সায়ানের এক কাজিন সাফার সাথে মেঘের বেশ ভাব জমেছে। আলাপচারিতায় জানতে পারে, সাফা ডিভোর্সি। মেঘ ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করে,
-“তোমার ডিভোর্স হলো কেনো?”
সাফা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-“আমি ছিলাম পান্তা ভাত, আর তার পছন্দ ছিলো বিরিয়ানি। তাই বিরিয়ানি পেয়ে পান্তা ভাত ফেলে দিয়েছে।”
মেঘ চমকে যায়। এত সুন্দরী মেয়েকে ছেড়ে কেউ যায়? মুখ ফসকে বলে ফেলে,
-“এমন সুন্দরী বউ রেখেও পুরুষ অন্য নারীতে আসক্ত হয়?”
সাফা হেসে বলে,
-“হুম। নতুন কাপড় কিনলে প্রথমে যত্নে রাখে, পরে পুরোনো হয়ে যায়। তবে একটা উপদেশ দেই জামাইকে সবসময় দেখে রাখবা, না হলে অন্যদিকে যেতে কতক্ষণ।”
কারো ডাক আসায় সাফা উঠে যায়। মেঘের মাথায় কিন্তু অন্য চিন্তা ঘুরছে। সে উঠে তাদের জন্য বরাদ্দ রুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে দেখে। নিজেকে ফিকে লাগছে। নাক একদম খাড়া না, চোখ বড় বড়, গালে মাংস জমে আছে, হাসলে আরও ফুলে যায়। নিজেকে নিজেই বলছে,
-“আমি তো আহামরি সুন্দর নই। তাহলে উনি সুন্দরী মেয়ে পেলে আমাকে ছেড়ে দেবেন না তো? ছেলেরা তো স্লিম জিরো-ফিগারের মেয়ে পছন্দ করে। আমি তো মোটা হয়ে যাচ্ছি। তবে কি উনি আমাকে আর পছন্দ করেন না?”
ভাবতেই বুকের ভেতর কেমন যেন করে ওঠে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। কিছুক্ষন যেতেই তা বেড়ে যায়, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। হাসফাস করতে করতে ব্যাগের চেইন একের পর এক খুলে ইনহেলার খুঁজছে, পাচ্ছে না।
এসময় রুদ্র ফোন নিতে রুমে ঢোকে। মেঘকে অস্থিরভাবে কিছু খুঁজতে দেখে এগিয়ে যায়,
-“কি খুঁজছো?”
মেঘ তাকাতেই রুদ্র চমকে যায়। দ্রুত টেনে বিছানায় বসায়। মেঘ শ্বাস নিতে পারছে না, ছটফট করছে। রুদ্র ব্যাগের শেষ চেইন খুলে ইনহেলার বের করে দেয়।
ইনহেলার নেওয়ার পর মেঘ কিছুটা স্বাভাবিক হয়। ক্লান্ত মাথা রুদ্রের কাঁধে রেখে বসে থাকে। রুদ্র মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-“খারাপ লাগছে? নেবুলাইজড করবে?”
মেঘ মাথা নেড়ে না করে। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর রুদ্র জিজ্ঞেস করে,
-“কি হয়েছে বউ? চিন্তিত লাগছো।”
মেঘ মাথা তুলে আস্তে বলে,
-“আপনার কি এখন আমাকে ভালো লাগে না?”
রুদ্র অবাক দ্রুত মেঘের গালে এক হাত দিয়ে বলে,
-“কে বলেছে?”
-“আমি… আমি জিম করবো।”
-“কেনো?”
-“আমি মোটা হয়ে যাচ্ছি।”
-“তো?”
-“তো আপনি আমাকে পছন্দ করবেন না। বেশিরভাগ ছেলেদের সুন্দর জিরো-ফিগারের মেয়ে দেখলে চোঝ আটকায়।”
রুদ্র নরম স্বরে বলে,
-“কিন্তু আমি তো এই মেঘেতেই আটকাই। আমার না স্লিম ভালো লাগে না মোটা ভালো লাগে, আমার কাছে মেঘকে ভালো লাগে। আমার বউ সব দিক দিয়ে পারফেক্ট। আমি তো তোমার থেকে চোখ সরাতে পারি না, অন্যদিকে কখন আটকাবো?”
মেঘ লজ্জা আর ভালোলাগার মিশ্র অনুভূতিতে তাকিয়ে। হঠাৎ মাথায় একটা প্রশ্ন আসতেই বলে,
-“কিছু পুরুষ সুন্দরী বউ রেখেও পরকীয়া করে কেনো?”
রুদ্র মুখ শক্ত করে,
-“ওরা কাপুরুষ। সুপুরুষ কখনোই নিজের বউ রেখে অন্য নারীতে আসক্ত হয় না।”
মেঘ ফট করে জিজ্ঞেস করে,
-“দ্বিতীয় নারীর জন্য আমাকে ছেড়ে দেবেন না তো?”
রুদ্র মৃদু হেসে তার জানা ভেদ করে কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নেয়, কপালে কপাল ঠেকিয়ে হালকা স্বরে গেয়ে ওঠে,
“এ প্রণয়ে কথা দিলাম,
সূর্য-চন্দ্র-তারা…
সাক্ষী থেকো, মরণ যেনো হয়,
হয় না তোমায় ছাড়া…”
মেঘ শিউরে উঠে,মুচকি হাসে। দুই হাতে রুদ্রের গলা জড়িয়ে ধরে। ঠিক তখনই দরজা খোলা পেয়ে সাদ ভেতরে চলে আসে,
-“ভাইয়া, সায়ান ভা…”
ভেতরে দেখেই থেমে যায়, দ্রুত পেছনে ঘুরে বলে,
-“আস্তাগফিরুল্লাহ, আমি কিছু দেখিনাই!”
ওর গলা শুনে রুদ্র-মেঘ দু’জনই ছিটকে যায়। মেঘ তড়িঘড়ি ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। রুদ্র কড়া চোখে সাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
হ”বুঝেছি, সুমনার জন্য ভালো ছেলে খুঁজতে হবে।”
সাদ ফট করে বলে,
-“নাহ ভাইয়া। তোমরা দরজা খুলে রোমান্স করলে আমার মতো ভদ্র সিঙ্গেল সুশীল ছেলেটা কি বুঝবে?”
রুদ্র ফোন হাতে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,
-“তোর বিয়েটা হোক…তারপর দেখছি..”
———
ফারহান করিডোর থেকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে পিহু আর রাফানকে লক্ষ্য করছে। সোফায় বসে কি নিয়ে যেন হেসে হেসে কথা বলছে তারা। কেন যেন ফারহানের সেটা একদমই ভালো লাগছে না, ভেতরে ভেতরে রাগ জমছে। হঠাৎ করেই সে নিচে নেমে আসে। পিহু কথা বলতে বলতে সিঁড়ির দিকে চোখ যেতেই থেমে যায়।
ফারহান আসছে পড়নে কালো প্যান্ট, নেভি ব্লু শার্ট, উপরের দুইটা বোতাম খোলে রাখা, হালকা ফরসা বুকের অংশ দেখা যাচ্ছে। সুঠাম দেহে শার্টটা একদম লেগে আছে। বেশ নজর কাড়া লাগছে। একটুপর হয়তো তার ওপর কোটও পড়বে। এক কথায়, পিহুর চোখ সরানো দায়।
-“পিহু, কি ভাবছো?”
রাফানের ডাকে ঘোর কাটে। চোখ সরিয়ে রাফানের দিকে তাকায়,
-“না ভাইয়া, কিছু না।”
এর মধ্যেই ফারহান এসে ধপ করে পিহুর পাশে বসে পড়ে। পিহু আড়চোখে বারবার তাকাচ্ছে। ফারহান রাফানকে বলে,
-“তোকে সায়ান ডাকছে।”
রাফান ভ্রু কুঁচকে জিগায়,
-“কেন?”
-“আই ডোন্ট নো…”
ফারহানের ভাবলেশহীন জবাবে, রাফান উঠে সায়ানদের কাছে চলে যায়। পিহু তখনো চুপচাপ অন্যদিকে তাকিয়ে বসে আছে। ফারহানের কেমন যেন অস্বস্তি লাগলো।এ মেয়ে তাকে সামনে পেয়ে এত চুপ , এমন তো কখনো হয়নি। একটু আগে কি হেসে হেসে কথা বলছিলো। বাধ্য হয়ে নিজে থেকেই বলছে,
-“এখন কেমন লাগছে?”
-“আগের থেকে ভালো।”
-“খেয়েছো?”
-“হুঁ।”
-“এখানে কি করছো?”
-“এমনি বসে ছিলাম…”
মেয়েটি শুধু ছোট ছোট উত্তরই দিচ্ছে।আবার তার দিকে তাকাচ্ছেও না। ফারহান কিছুক্ষণ ভেবে জিজ্ঞেস করে,
-“রেডি হবে কখন?”
পিহুর সোজাসাপটা উত্তর,
-“একটু পর হবো…”
ফারহানের রাগ চেপে গেল না। খানিকটা গম্ভীর গলায়,
-“আমাকে কি খারাপ লাগছে দেখতে?”
পিহু অবাক হয়ে তাকায়,
-“না তো?”
-‘তো তাকাচ্ছো না কেন?”
-“তাকিয়ে কি হবে?”
-“কি হবে মানে? আমার সাথে কথা বললে চোখে চোখ রেখে বলতে হবে।”
পিহু কোনো উত্তর দেয় না। হঠাৎ নরম স্বরে বলে,
-“ধন্যবাদ। আপনার কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। কাল আপনি সময়মতো না এলে হয়তো আমি এখন সুইসা…”
ফারহান হঠাৎ হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে। পিহু চোখ বড় বড় করে তাকায়। ফারহান সাথে সাথে হাত ছেড়ে দিয়ে নির্লিপ্ত স্বরে বলে,
-“এসব বাজে কথা মুখে আনবে না। আর ধন্যবাদের প্রয়োজন নেই। কাউকে বিপদে দেখে সাহায্য করা মানুষ হিসেবে এটা দায়িত্ব আমার।”
পিহু শান্ত চোখে তাকায়। ফারহানের দৃষ্টিও তার দিকে।
-“আমার জায়গায় অন্য মেয়ে থাকলেও এভাবে বাঁচাতেন? এমন রিয়েক্ট করতেন?”
ফারহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
-“হ্যাঁ…”
-“আর ওভাবে বুকেও আগলে নিতেন?”
ফারহান শুধু তাকিয়েই থাকে, উত্তর দেয় না। পিহু আর অপেক্ষা না করে উঠে উপরে যেতে হাটে। কিছুদূর যেতেই ফারহানের ডাকে পেছন ফিরে,
-“তোমাকে বাচ্চামি, হাসি-খুশি আর চঞ্চলতায় মানায়। দেবদাস সাজা একটুও মানায় না।”
পিহু দুষ্টু হেসে বলে,,
-“মনে হচ্ছে নেতা সাহেব, আমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছেন…”
পিহুর কথায় ফারহান থতমত খায়। ফারহানের হুশ ফেরে কি বলছিলো। দ্রুত কথা কাটিয়ে দেয়,
-“এমন কিছুই না। বন্ধ….শত্রুর বোনও তো আমার বোনের মতোই। সেই হিসেবেই বলেছি।”
পিহু কোমরে হাত দিয়ে চোখ ছোট করে বলে,
-“আমি কিন্তু আপনার কোনো বোন না। কারণ…”
পিহু আটকাতেও ফারহান বলে,
-“কারণ কি?”
পিহু হাসতে হাসতে গেয়ে উঠে,
“আমি নষ্ট মনে, নষ্ট চোখে, দেখি তোমারে,
মন আমার কি চায়, বোঝায় কেমনে…”
বলেই এক চোখ মেরে উপরে চলে যায়। এদিকে ফারহান বিষম খেয়ে বসে। বিরবিরায়,
-“বেয়াদব মহিলা!”
———
মেঘ রেডি হয়ে বসে আছে। রুদ্র মাত্রই রুমে ঢুকেছে। ঘেমেটেমে অবস্থা খারাপ। ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকাতেই থমকে যায়। মেঘ চুল ঠিক করে সাইড টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয়। রুদ্র চুপচাপ খেয়ে নেয়। মেঘ কাপড় এনে দেয়,
-“নিন, গোসল করে রেডি হয়ে নিন।”
রুদ্র মেঘের হাত টেনে নিজের উরুর ওপর বসিয়ে দেয়। হাস্কি স্বরে বলে,
-“তোমাকে কেমন লাগছে জানো, বউ?”
-“কেমন?”
রুদ্র মেঘের ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে নাক ঘেঁষে বলে,
-“মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর লাগছে…”
মেঘ সুরসুরি পেয়ে নড়েচড়ে ওঠে,
-“কি করছেন! ছাড়ুন।”
-“ছাড়তে ইচ্ছে করছে না বউ। মনে চাচ্ছে এভাবেই যুগের পর যুগ তোমাকে দেখেই কাটাই…”
তারপর দুষ্টু হেসে,
-” আবার মাঝে মাঝে একটু আদরও করি…”
মেঘ জোর করে ছাড়িয়ে নেয়,
-“আপনি গোসলে যান তো।”
রুদ্র মেঘের কপালে আলতো ঠোঁট ছোঁয়ায়, যেন মেকআপ নষ্ট না হয়, তারপর বাথরুমে ঢোকে। মেঘ চলে যায় পিহুদের কাছে।
———
-“তুমি তোমার পিক স্টোরি দিয়েছো কোন সাহসে?”
সাদের প্রশ্নে সুমনা মুখ কুঁচকে বলে,
-“কারণ আমি এখন সিঙ্গেল। আমার সুন্দর রূপ সবাইকে দেখাতে আপলোড দিয়েছি। কেন? তোমার জ্বলে নাকি? অবশ্য জ্বলবেই, এত সুন্দর গার্লফ্রেন্ড হারিয়েছো..”
আর কিছু বলার আগেই সাদ এক টানে সুমনাকে নিজের সামনে নিয়ে আসে। ধাক্কা খেয়ে সুমনা সাদের বুকের সাথে লেগে যায়। সাদের এক হাত সুমনার লেহেঙ্গার ওড়না ভেতর দিয়ে পেটে রেখে শক্ত করে চেপে ধরে,
-“এবার বলো, কি যেন বলছিলেন ম্যাডাম?”
সুমনার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে। সাদের স্পর্শে নড়াচড়া করার শক্তিও নেই। তোতলাতে তোতলাতে,
-“ছাড়ো… কেউ দেখবে…”
সাদ নির্লিপ্তভাবে বলে,
-“দেখুক। আমার বাচ্চার মাকে যা খুশি করতে পারি, তাই না?”
সুমনা লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকে। সাদ তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
-“তাই না?”
সুমনা মাথা ঝাঁকায়। সাদ হেসে ছেড়ে দেয়। সুমনা বারবার ওড়না ঠিক করছে, চারপাশে তাকাচ্ছে।
-“এবার বলো, স্টোরিতে নিজের ছবি দিয়েছো কেন?”
-“ভুল হয়েছে, আর দেবো না।”
-“ডিলিট কে করবে?”
— “আমি…”
-“ফাস্ট ডিলিট করো। এন্ড যা যা ছবি তুলছো, আমার নাম্বারে পাঠাও।”
বলেই সাদ সুমনার গাল টিপে চলে যায়। সুমনার বুক এখনো ধকধক করছে। মেঘদের দিকে যেতে যেতে সাদকে ইচ্ছে মতো বকে,
-“অসভ্য, ইতর, বেয়াদব, খবিশ লোক…”
———
রুদ্র তার মোজা না পেয়ে মেঘকে ডাকতে ডাকতে মেয়েদের রুমের সামনে চলে আসে,
-“মেঘ…”
রুদ্রের ডাক শুনে মেঘসহ বাকি মেয়েরাও তাকায়। তার পরনে কালো প্যান্ট, গায়ে সাদা শার্ট যা একেবারে বডি ফিট হয়ে আছে। ফলে জিমে গড়া শরীর স্পষ্ট, আর উপরের কয়েকটা বোতাম খোলা, ফাঁক দিয়ে বুকের অংশও দৃশ্যমান। মেঘ রুদ্রকে দেখেই চারপাশে তাকায়। দেখে অনেক অপরিচিত মেয়েই তাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। তাতে মেঘের ভীষণ রাগ হয়। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে রুদ্রের হাত ধরে তাদের ঘরের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
রুদ্র অবাক হয়ে বউয়ের কাজকর্ম দেখছে। এমন হন্তদন্ত করে টেনে আনছে কেনো। রুমে ঢুকেই মেঘ রুদ্রকে এক ঝাড়ি দেয়,
-“আপনার কি কোনো কান্ডজ্ঞান নেই? এইভাবে ওদের সামনে গিয়েছিলেন কেন?”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“কেন? আমায় খারাপ লাগছে নাকি?”
মেঘ রুদ্রের বোতাম লাগাতে লাগাতে রাগী গলায় বলে,
-“হ্যাঁ, জঘন্য লাগছে। আর এভাবে বের হবেন না!”
রুদ্র হেসে কোট পরে নেয়। মেঘ তার মোজা খুঁজে দিয়ে নিচে চলে আসে। কিছুক্ষণ পর রুদ্রও নামে, সাথে সাদ। বোনের দিকে তাকিয়ে দেখে পিহুকেও ভীষণ মিষ্টি লাগছে। এগিয়ে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“খারাপ লাগছে না তো?”
পিহু হেসে মাথা নেড়ে না বুঝায় । রুদ্র আবার বলে,
-“খারাপ লাগলে সাথে সাথে ভাইয়াকে বলবি, কেমন?”
পিহু মাথা নাড়তেই রুদ্র মেঘের দিকে তাকিয়ে চলে যেতে গিয়ে থেমে যায়। হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তোমার হাতের চুড়ি কোথায়?”
মেঘ হাতের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ গলায় বলে,
-“ভেঙে গেছে…”
শোনা মাত্র রুদ্র চিন্তিত হয়ে এগিয়ে গিয়ে মেঘের হাত উল্টে-পাল্টে দেখতে লাগে,
-“কোথাও কাটেনি তো?”
-“না না, ব্যাগে থাকতেই চাপ খেয়ে ভেঙে গেছে।”
পাশে সায়ানের কাজিনসহ অন্য মেয়েরা মিটিমিটি হাসছে। রুদ্র শান্ত স্বরে বলে,
-“আগে বলোনি কেন?”
-“এখনই দেখেছি, তাই…”
রুদ্র হাত ছেড়ে ফোন করতে করতে চলে যায়। মেয়েরা তো রুদ্রকে নিয়ে রীতিমতো গবেষণায় নেমে যায়। একেকজন বলছে, “বউয়ের অতি ক্ষুদ্র বিষয়ও খেয়াল রাখে এমন পুরুষ এখনো আছে!” প্রায় পনেরো মিনিট পর রুদ্র আবার হাজির হয়। মেঘকে ইশারা করলে সে এগিয়ে যায়। রুদ্র প্যাকেট থেকে গোলাপি চুড়ি জোড়া বের করে মেঘের হাতে যত্নে পরিয়ে দিয়ে চলে যায়।
সব মেয়েরা উঠে বলে, “রুদ্র ভাই তো একেবারে বউপাগল” মেঘ অনেক লাকি, এমন জামাই স্কবার ড্রিম, ইত্যাদি ইত্যাদি । তখন সাফা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-“এমন মানুষ পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার। বউয়ের খেয়াল রাখছে, আবার বোনেরও সব দিকেই ব্যালেন্স। এটা শুধু বউপাগল নয়, প্রকৃত পুরুষের উদাহরণ। মেঘ, তুমি খুব লাকি।”
মেঘ মুচকি হাসে। পিহু উঠে বলে,
-“এই, সবাই মাশাল্লাহ বলো, না হলে আমার ভাই-ভাবির সংসারে নজর লাগবে।”
———
সবাই যে যার গাড়িতে উঠে পড়ে। রুদ্র ফারহানদের জন্য আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করেছে সিকিউরিটি সহ। যেহেতু রাস্তা অনেক দূর, তাই রিস্ক নিতে চায় না। রুদ্র, মেঘ, পিহু ও ফারহান একই গাড়িতে যাবে। সাথে আরেকটি গাড়িতে পুলিশের সিকিউরিটি থাকবে। একজন পুলিশ এসে তাদের জন্য সামনের দরজা খুলে দেয়। তবে রুদ্র ও ফারহান পেছনের দরজা খোলে। মেঘ পিহুকে ইশারা করলে দুজনেই দুদিকে উঠে পড়ে। তারপর রুদ্র ড্রাইভিং সিটে, আর ফারহান পাশে বসে।
প্রায় এক ঘণ্টা যাওয়ার পর একটা মসজিদের সামনে গাড়ি থামে। এখান থেকে পুরুষরা নামাজ পড়বে, মহিলারা গাড়িতেই থাকবে।
পিহুর একটু বিরক্ত লাগছিলো, তখনই জানালায় দেখে সুমনা ঠোকা দিচ্ছে। সুমনা এখানে একা কী করছে সাদের সাথে ছিলো না? সুমনাকে দেখে তারা বেরিয়ে আসে। সিকিউরিটি গার্ডরা নিষেধ করলেও ওরা শোনে না। চারপাশে গ্রামীণ পরিবেশ দুই পাশে মাঠ, মাঝে রাস্তা।
নামতেই তারা ছবি তুলতে শুরু করে। রুদ্রদের নামাজ শেষ হলে বের হয়। তখন মেঘ রাস্তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে, কিছুটা দূরে পিহু মোবাইলে ছবি দেখছে, আর সুমনা সাইড থেকে ছবি তুলছে মেঘের। আশেপাশে গাড়ি নেই ভেবে নিশ্চিন্ত।
ছবি তুলতে এতটাই মগ্ন যে ফুল স্পিডে আসা বিশাল ট্রাকটির টেরই পায়নি। পিহু শব্দে মাথা তুলে মেঘের পেছনে তাকিয়ে দেখে ধেয়ে আসছে ট্রাক। সে চিৎকার করে উঠে,
-“মেঘঘঘঘঘঘ…”
চিৎকার শুনে রুদ্র চমকে তাকাগ সাথে সাথে ডেকে উঠে মেঘের নাম ধরে ,
-“মেঘ, সাইডে যাও!”
বলতে বলতেই দৌড় দেয়। এদিকে মেঘ যেনো আটকে আছে। পিহু দৌড়ে গিয়ে মেঘকে ধাক্কা মেরে সাইডে সরিয়ে আনে। দুজনেই পড়তে যাচ্ছিলো, রুদ্র কোনরকম ধরে ফেলে। ফারহান দ্রুত পুলিশকে জিজ্ঞেস করে,
-“এই রাস্তায় ট্রাক আসবে কই থেকে? এখানে তো ট্রাক চলাচল বন্ধ ছিলো?”
রুদ্রের ভেতরে কাঁপছে এক হাতে মেঘকে জড়িয়ে রেখেছে। পুলিশ জানায়,
-“জি স্যার, এই রাস্তায় ট্রাক নিষিদ্ধ, হাইওয়ে দিয়ে যাওয়ার কথা। নিশ্চয় কেউ ইচ্ছে করেই পাঠিয়েছে।”
রুদ্র গম্ভীর মুখে বলে,
-“এই গাড়ির সব ডিটেইলস আজকের মধ্যে বের করবেন।”
সবাই আবার গাড়ি করে রওয়ানা দেয়। রুদ্রকে চুপ দেখে মেঘ আমতা-আমতা করে বলে,
-“কিছু বলছেন না যে…”
রুদ্র শান্ত কণ্ঠে বলে,
-“যে কথা শোনে না, তাকে কিছু বলেও লাভ নেই। শব্দের অপচয় ছাড়া কিছুই না।”
মেঘ বুঝতে পারে রুদ্র রেগে আছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই তারা সেন্টারে পৌঁছে যায়। মেয়ে পক্ষের লোকেরা গেট নিয়ে ঝগড়া করছে, ভিড় জমেছে। তা দেখে রুদ্র মেঘদের নিয়ে অন্য গেট দিয়ে ঢুকে পড়ে।
চলবে……..
[কেমন হয়েছে অবশ্যই বলবেন… ]
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৮
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬০
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৪
-
আড়ালে তুমি আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫০
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪০
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১০
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৭