Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪৩


#আড়ালে_তুমি |৪৩|

#_সাইদা_মুন 

মেঘ পিহুকে নিয়ে সারার সাথে দেখা করতে স্টেজের দিকে যায়। বউয়ের সাজে সারাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। আশপাশের সবাই ছবি তুলছে, ভিডিও করছে। মেঘ আর পিহুকে দেখে সারা ইশারা করে কাছে ডাকে,

-“আরে তোমরা কেমন আছো?”

-“এই তো আপু, ভালো। তোমার কি খবর?”

-“আর বলো না, এই বিয়ের সাজ নিয়ে এতক্ষণ বসে আছি, অবস্থা একদম খারাপ। রুদ্ররা আসেনি?”

-“হ্যাঁ, সবাই এসেছে।”

-“আচ্ছা, তোমরা ভেতরে যাও।”

সারার সাথে কথা বলে তারা বাড়ির ভেতরে গেল। সোফায় বরপক্ষের সবাই বসে আছে। রুদ্র মেঘ আর পিহুকে দেখে ইশারা করল, পাশে এসে বসতে। তারা বাধ্য মেয়ের মতো গিয়ে রুদ্রের পাশে বসে। সারার পরিবারের লোকজন তাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত।

এতক্ষণেও সুমনাদের দেখা না পেয়ে মেঘ পিহুকে জিজ্ঞেস করে,

-“সুমনারা কি এখনো আসেনি?”

মেঘের কথায় রুদ্র পাশ থেকে বলে,

-“আসছে, মাঝপথে গিয়ে গাড়ির টায়ার পাংচার হয়ে গিয়েছিল।”

রুদ্র আর তার বন্ধুরা মিলে হাসি-ঠাট্টায় মেতে আছে। ঠিক তখনই অনু এসে হাজির। পাতা-রঙা শাড়ি পরে বেশ সুন্দর লাগছে তাকে। মেঘের চোখ তার দিকেই যায়।

রুদ্রকে দেখে অনু সামনে এসে মলিন হাসিতে বলে,

-“কেমন আছিস?”

রুদ্র কোনো জবাব দিল না। অনু তখন মেঘের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে,

-“কেমন আছো মেঘ?”

মেঘও হাসিমুখে জবাব দিল,

-“এই তো, আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?”

-“আছি… একরকম।”

———

-“আমার বা*লের গাড়ি চালানো শিখছো। পারেনা চালাতে, তাও আবার চালাতে এসেছে!”

সুমনা রাগে ফুঁসে কথাটা বলতে বলতে এগোতে থাকে। সাদ অসহায় গলায় বলে,

-“আরে মেরি মা, বুঝো তো, ব্যাপারটা আমার দোষ না। রাস্তায় কংক্রিটের জন্য টায়ার পাংচার হয়েছে…”

-“তো ওগুলো যে রাস্তায় আছে, দেখোনি কেন?”

-“আজব, আমি তো গাড়ির ভেতরে ছিলাম। রাস্তার বাইরে কি আছে আমি কিভাবে দেখবো?”

কথার মাঝেই হঠাৎ একটা মেয়ে এসে ধপ করে সাদের গলায় ঝুলে পড়ে,

“সাদ বেবি, আমাকে ব্লক করলে কেন? আই মিস ইউ…”

এমন দৃশ্য দেখে সুমনা থমকে দাঁড়ায়, এক হাত কোমরে দিয়ে চোখ কড়া করে তাকায়। সাদ তাড়াতাড়ি মেয়েটাকে সরিয়ে নিয়ে শুকনো ঢোঁক গিলে সুমনার দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আস্তাগফিরুল্লাহ, খালাম্মা, আমার বউ আছে। দয়া করে দূরত্ব বজায় রাখুন…”

মেয়েটি আবারও সাদের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে বলে,

-“সাদ বেবি, কি সব বলছো? হোয়াট ইজ খালাম্মা? আই অ্যাম ইউর ডার্…..”

বাকিটা শেষ করার আগেই সুমনা চটে গিয়ে মেয়েটির চুল পেছন থেকে টেনে ধরে। ব্যথায় মেয়েটি চেঁচিয়ে ওঠে,

-“এই, কি করছো? চুল ছাড়ো..”

সাদ শুধু গিলে গিলে তাকিয়ে থাকে, মুখ খোলে না, জানে কিছু বললেই বড়সড় বোমা ফাটবে তার উপর। সুমনা টেনে মেয়েটিকে সাদের কাছ থেকে দূরে নিয়ে এসে ছেড়ে দেয়,

-“শোনোনি? তার একটা বউ আছে। তাও কাছে ঘেঁষতে আসছো কেন?”

মেয়েটি রাগে বলে,

-“তোমার এত সাহস কে দিয়েছে আমার চুল ধরার? আর তুমি কে আমাদের মাঝে আ…”

-“ও হ্যালো, আমি না, তুমিই আমাদের মাঝে আসছো। আরেকবার যদি সাদের আশেপাশে দেখি, ঠ্যাং ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দিবো।”

বলেই সাদের হাত ধরে টেনে বাড়ির ভেতরে ঢুকে, তারপর মেঘদের দেখে তাদের পাশে গিয়ে বসে।

———

ড্রয়িং রুমে নাস্তা চলতে চলতে ছোটদের আড্ডাও বেশ জমে উঠেছে। একেকজন মেতে আছে একে অপরের বিয়ের খবর নেওয়ায়। সারার ছোট ভাই সায়েম ফারহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-“রুদ্র ভাই তো বিয়ে করেই ফেলেছে, তা আমাদের ফারহান ভাই কবে বিয়ে করবেন?”

ফারহান শান্ত গলায় উত্তর দেয়,

-“তার কুরকুরানি উঠেছে তাই করেছে। আমার কুরকুরানি উঠলে ভেবে দেখবো।”

রুদ্র ভাবলেশহীনভাবে পায়ের ওপর পা তুলে বলে,

-“কুরকুরানি উঠতে মেশিন সচল থাকা লাগে। অচল মেশিনে কি আর এত সহজে কুরকুরানি উঠে?”

রুদ্রের কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে ওঠে, মেয়েদের অনেকে আবার বেশ লজ্জাও পায়।

ফারহান তখনও শান্তভাবে বলে,

-“তুই কি আমার সাথে ট্রাই করে দেখেছিলি সচল না অচল?”

-“আমি কি তোর মতো ওইটা?”

এদের ঝগড়া দেখে মেঘ পিহুকে ফিসফিসিয়ে বলে,

-“এদের ঝগড়া দেখলে মনে হয় দুই সতিন, এতো লেগে থাকে কেন?”

পিহুও আস্তে বলে,

-“আমিও বুঝি না আসল কারণটা কী।”

ঝগড়াটা যেন বেশি দূর না যায়, সে জন্য শান্ত হেসে বলে ওঠে,

-“আরে এসব বাদ দাও, আগে আমাদের রাফানের খবর জানো। সে তো সায়ানের বিয়ের পরপরই কনে দেখতে যাবে।”

এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সবাই রাফানকে চেপে ধরে, কাকে দেখতে যাবে, কে সেই মেয়ে, নাম কী। রাফান মুচকি হেসে পিহুর দিকে একবার তাকিয়ে বলে,

-“সে এমন একজন যাকে আমি ভালোবাসি। অনুভূতি অল্প দিনের হলেও, এই অল্প দিনকে স্থায়ী করতে আমি শিগগিরই তাকে আমার করে নেবো। তখন সবাই দেখে নিও কে সেই মেয়ে।”

রাফানের কথায় সবাই বেশ মুগ্ধ হয়। সামিয়া পাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবে “সবাই নিজের ভালোবাসাকে আপন করে পাচ্ছে, শুধু আমিই এক হতবাগি…”

এমন সময় রুদ্র সবাইকে তাড়া দেয় বউকে হলুদ লাগিয়ে তাড়াতাড়ি যেতে হবে, বাড়িতেও তো প্রোগ্রাম আছে। তার কথায় আড্ডার ইতি টেনে সবাই একে একে বাড়ির বাগানের প্যান্ডেলের দিকে যায়।

ফারহান তখনও সোফায় বসে ফোন টিপছে। সবাই বেরিয়ে গেলে পিহু আস্তে পা ফেলতে ফেলতে তার সামনে এসে দাঁড়ায়। ফারহান ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই সে জিজ্ঞেস করে,

-“আপনি যাবেন না? বসে আছেন যে..”

ফারহান উত্তর দেয়,

-“কাজ আছে, একটু পর যাচ্ছি… তুমি যাও।”

কিন্তু পিহু যায় না, দাঁড়িয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে হচ্ছে কোনো কথা বলবে কি বলবে না ভেবে দ্বিধায় আছে। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, ফারহান ফোনে চোখ রেখেই গম্ভীর গলায় বলে,

-“কি হলো, যাও”

পিহু আর না ভেবে ধপ করে বলে ফেলে,

-“আসলেই কি আপনার মেশিনে সমস্যা?”

কথা শেষ করেই সে ভোঁ দৌড়। ফারহান হঠাৎ এমন প্রশ্নে হকচকিয়ে সামনে তাকায়, কিন্তু কেউ নেই। পাশ ফিরেই দেখে শাড়ির কুচি ধরে কোনোমতে দৌড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে পিহু। ফারহান বিরবিরিয়ে বলে,

-“ভাইটার মতোই বেয়াদব হয়েছে।”

———

মেঘ আর সুমনা পিহুকে দৌড়ে আসতে দেখে বলে,

-“কিরে, এভাবে কেন দৌড়াচ্ছিস?”

পিহু তাদের সামনে এসে চারপাশে তাকিয়ে বলে,

-“না, এমনি আর কি! তবে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস?”

মেঘ আর সুমনা কপাল কুচকে কী বলতেই পিহু বলে,

-“রিককে দেখছি না, যেই ছেলে আমাদের পিছে আঠার মতো লেগে থাকে, সেইটা এখন উধাও। ডালমে তো কুচ কালা হে…”

পিহুর কথা শুনে সুমনা বলে,

-“নেহি নেহি, পুরো ডালটাই কালা হে… ওদিকে দেখ।”

সুমনা আঙুল দিয়ে ইশারা করতেই সবাই তাকায়, স্টেজ থেকে একটু দূরে এক সাইডে রিক বসে আছে, পাশে তখনকার সেই মেয়েটি। মেঘরা জহুরি চোখে তাকিয়ে মেঘ বলে,

-“এইটা ওই মেয়েটা না? ওই যে সায়ান ভাইয়ের বোন, মিষ্টি…”

-“হ্যা হ্যা, তবে ওর সঙ্গে রিক কী করছে?”

সুমনা এগিয়ে গিয়ে বলে,

-“চল, বেটাকে হাতে নাতে পাকড়াও করার সময়।”

———

-“তোমার নামের মতোই তুমিও অনেক মিষ্টি…”

মিষ্টি রিকের কমপ্লিমেন্ট পেয়ে হালকা হাসে, তারপর বলে,

-“ধন্যবাদ ভাইয়া…”

মিষ্টির মুখে ‘ভাইয়া’ শুনে রিক তৎক্ষণাৎ বুকে হাত দিয়ে ‘আহহহ’ করে উঠে। মিষ্টি একটু ভড়কে গিয়ে চিন্তিত কণ্ঠে বলে,

-“কি হয়েছে? আপনি ঠিক আছেন তো?”

রিক মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বুকে হাত রেখে বলে,

-“ভাইয়া ডেকো না এখানে ব্যথা লাগে…”

তখনই কারো গলায় রিক-মিষ্টি দুজনেই পাশ ফিরে তাকায়।

-“হ্যা হ্যা, ভাইয়া ডাকে ওর এলার্জি আছে, তুমি বরং ‘আংকেল’ ডেকো।”

পিহুর কথায় মিষ্টি হেসে ওঠে। আর রিক, পিহুদের দেখে আঁতকে উঠে দাঁড়ায়, ‘এই রে, দিবে রে দিবে’, এতক্ষনের সব চেষ্টায় জল ঢেলে দিবে। দ্রুত বলে,

-“ত…তোরা এখানে কী করছিস? যা, এখান থেকে যা যা…”

রিকের কথায় পাত্তা না দিয়ে সুমনা বলে,

-“তুই আগে বল, তুই এখানে কী করছিস? মিষ্টি, তোমাকে কি এই  রিক দ্য ফিক ডিস্টার্ব করছে?”

মিষ্টি মাথা নেড়ে বলে,

-“না না আপু, আমি অনেকটাই ক্লান্ত ছিলাম। উনি এসে আমার সঙ্গে শুধু গল্প করছিলেন। আমার ভালোই লেগেছে, উনি অনেক ফানি…”

মেঘদের আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রিক নিজেই দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। সে যেখানে থাকুক, নিজের নামে যা যা সোনাম করেছে সবকিছুর উপর কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেবে। রিককে চলে যেতে দেখে সবাই হাসি ধরে না রেখে বলে,

-“আরে, কোথায় যাচ্ছিস? আয়, আমরাও শুনি তোর মজার মজার কথা…”

তাদের হাসাহাসির মাঝে হঠাৎ এক মধ্যবয়সী আন্টি এসে দাঁড়ায় সামনে। মেঘের থোতনা ধরে এদিক-সেদিক ঘুরিয়ে দেখে বলে,

-“নাম কী তোমার? বউয়ের কি লাগো?”

বলেই মেঘকে আর উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে পাশ থেকে একটা ছেলেকে টেনে এনে দাঁড় করায়। ছেলেটি হ্যাবলার মতো সব দাত বের করে হাসছে। তা দেখে মেঘ, পিহু, সুমনা তিনজনই একসঙ্গে একবার মহিলার দিকে, তারপর ছেলেটির দিকে তাকায়। মহিলাটি ছেলের সারা মুখে হাত বুলিয়ে বলে,

-“এইটা আমার বাবু, ওর নাম মিন্টু, আমার একমাত্র ছেলে। অনেক ভদ্র ছেলে, আমার কথার বাইরে যায় না। সে একজন ডাক্তার, এমন ছেলে হাজারে কী লাখেও খুঁজে পাবা না।”

পিহু মহিলাটির কথা মন দিয়ে শুনে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে,

-“জি আন্টি, আপনার বাবু আসলেই বাবু।”

মহিলাটির গর্বে বুক ফুলে উঠে,

-“আমার ছেলের বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজছি, তোমাকে আমি অনেক পছন্দ করেছি। তোমার পরিবারের লোক আছে এখানে?”

মহিলাটি মেঘকে দেখে বলতেই। মেঘ, পিহু, সুমনা চমকে যায়। ‘কি! বিবাহিত বেডিকে আবার বিয়ে দিতে আসছে’ তারা কিছু বলতে চায়, তার আগেই হঠাৎ কেউ বলে,

-“হ্যা আছে তো, তার পরিবারের লোক এখানে আছে, তার স্বামীও এখানেই।”

পুরুষালি কণ্ঠে সবাই সেদিকে তাকায়, দেখে রাহুল ও সঙ্গে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে। মহিলাটি ভ্রু কুঁচকে বলে,

-“মানে মেয়েটি বিবাহিত?”

রাহুল মাথা নেড়ে বলে,

-“জি আন্টি, সে বিবাহিত, সে মিসেস রুদ্র চৌধুরী।”

বেচারি মহিলাটির মুখটা চুপসে যায়। পরক্ষণেই পিহুর দিকে ফিরে বলে,

-“তাহলে তুমিও সুন্দর আছো, তোমার সঙ্গে বিয়ে দেবো।”

-“আমাদের পরিবারের মেয়েরা এত সস্তা না, আন্টি, যে যেখানে সেখানে বিয়ে ঠিক করে দেবেন। আমরা যার তার হাতে মেয়ে দিই না…”

রুদ্রের কথায় মহিলা চমকে উঠল। অপমানিত মুখ নিয়ে থমথমে গলা করে ছেলে নিয়ে চলে গেলো।

রুদ্র এসে রাহুলের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

-“কাহিনি কী? দেখাই যায় না তোকে, এত ব্যস্ত হয়ে গেছিস?”

রাহুল হালকা হেসে বলে,

-“আরে না, ওয়েট…”

পাশের মেয়েটির হাত ধরে সামনে নিয়ে এসে বলল,

-“মিট মাই ফিয়ন্সে, সাফা। আর সাফা, এই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রুদ্র।”

রাহুল একে একে সবার সাথে সাফাকে পরিচয় করিয়ে দিল। সাফাও হাসিমুখে মেঘদের সঙ্গে গল্প শুরু করল। রুদ্র অবাক। সে ভাবে, যেই ছেলেটা তার সাথে শেয়ার করে এক পা এগোতো, হাজারবার জিজ্ঞেস করতো কোনো ডিসিশন নেবার আগে, সেই ছেলে জীবনের এতো বড় ডিসিশন নিয়ে ফেলল, অথচ সে জানেও না।

সেসব ভাবনা ভুলে মেঘের হাত ধরে বলল,

-“চলো, ছবি তুলবো।”

বলেই মেঘকে নিয়ে এগিয়ে গেলো। রাহুল আড়চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। চোখ ঘুরিয়ে সাফার দিকে তাকিয়ে ভাবে,

-“সে কি পারবে আমার মনের ভেতরের মানুষকে ভুলিয়ে দিতে? ভালোবাসলে কি ভুলে যাওয়া সম্ভব?”

———

স্টেজে রুদ্র মেঘ বিভিন্ন পোজে ছবি তুলছে। যে কেউ তাদের দেখে বলবে, অনেক হ্যাপি কাপল। মেঘ একটু ক্লান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তা দেখে রুদ্র তাকে নিয়ে চেয়ারে বসালো। উঠে গিয়ে ঠান্ডা পানি নিয়ে এলো,

-“নেও, এটা খাও, ভালো লাগবে।”

মেঘ পানিটা হাতে নিয়ে খানিকটা খেয়ে বলে,

-“আপনার মোবাইলটা দিন তো, ছবিগুলো দেখবো।”

রুদ্র মোবাইল এগিয়ে দিতেই মেঘ জিজ্ঞেস করে,

-“পাসওয়ার্ড কী?”

-“আমার একমাত্র বউয়ের নাম।”

মেঘ নিজের নাম দিলে ফোন খুলে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে মুখে হাসি ফুটে উঠল। গ্যালারিতে ঢুকে চোখে পড়লো একটা ফোল্ডারের নাম “আমার বোকাফুল”। নামটা চেনা মনে হলো, আগে কোথাও শোনে ছিলো, তবে মনে পড়ছিলো না। ভাবনা বাদ দিয়ে সেই ফোল্ডারে ঢুকতেই দেখা গেলো তার নানা ছবিতে ভরে আছে, ঘুমন্ত ছবি থেকে শুরু করে অনেক সময়ের ছবি, যা রুদ্র লুকিয়ে লুকিয়ে তুলেছে, এমনকি গতকাল রাতের পড়ার টেবিলে ঘুমিয়ে যাওয়ারও কয়েকটা ছবি আছে।

মেঘ অবাক হয়ে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,

-“এসব কী? আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ছবি তুলেছেন?”

রুদ্র ভাবলেশহীন গলায় বলে,

-“আমার বউ, আমি লুকিয়ে কেন তুলব?”

-“তো এগুলো তো আপনি আমার আড়ালে তুলেছেন…”

-“আমার যখন ইচ্ছে হয়েছে, তখনই তুলেছি। তুমি দেখোনি, তোমার ব্যর্থতা…”

মেঘ বুঝল, এই লুকের সাথে যুক্তি করা যাবে না। তাই একটু আগের কাপল পিকগুলো দেখতে লাগল। এর মাঝে রুদ্ররা সব ফ্রেন্ড গ্রুপ পিক তুলতে সবাইকে ডাকে। মেঘকে বলে, স্টেজের দিকে এগিয়ে যায় রুদ্র।

মেঘ ছবি দেখতে দেখতে হঠাৎ রুদ্রের ফেসবুক নোটিফিকেশন চোখে পড়ে। কিছু একটা ভাবনা নিয়ে ফেসবুকে ঢুকতে গেল। আবার ভাবল, অন্য কারো পার্সনাল জিনিসে পারমিশন ছাড়া ঢোকা ঠিক হবে কি না? মুহুর্তেই নিজেকে গালি দিল, নিজের জামাইর টায় ঢুকতে পারমিশন লাগে নাকি।

ফেসবুকে ঢুকে দেখল ৯৯+ নোটিফিকেশন। একটু আগে পাঞ্জাবি পড়া ছবি আপলোড করেছে। মেয়েদের কমেন্টে ভরে গেছে। মাথাটা গরম হয়ে গেলো মেঘের। ইচ্ছামতো কয়েকটা ব্লক মারল। তারপর মেসেঞ্জারে ঢুকে পুরো চ্যাটলিস্ট দেখল, কেউ নেই এক্সট্রা, শুধু তার ফ্রেন্ড আর কাজিনরা। একটু শান্তি পেল, নাহ জামাইটা লয়াল আছে।

মেসেজ রিকোয়েস্টে ঢুকতেই দেখল মেয়েদের মেসেজে ভরে গেছে। বিরক্ত হয়ে ভাবে, এগুলো আসলেই মেয়ে? আমার জামাইকেই প্রশংসা করতে কেমন কেমন লগে। একটা একটা করে চেক করতে করতে রুদ্রের ওপর রাগ উঠে যায়। বেশিরভাগ মেয়েই তাকে বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছে । সে তো ম্যারোড, এরা জানে না? স্ট্যাটাস চেক করল, সিঙ্গেল দেওয়া। মেঘের রাগ সপ্তম আকাশে।

রুদ্ররা পিক তুলে সবাই আবার সায়ানের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। এখন বাজে আটটা।

রুদ্র মেঘের কাছে এসে তাড়া দিয়ে বলে,

-“চলো, এখন বের হবো…”

তবে মেঘ চুপচাপ, তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে। সে লক্ষ্য করতেই দেখে মেঘ ঠোঁট ফুলিয়ে আছে। তা দেখে সে হাটু গেড়ে বসে, চিন্তিত গলায় বলে,

-“কি হয়েছে, বউ?”

মেঘ আরও গালগোল ফুলিয়ে বসে রইল। রুদ্রের মোবাইল তার দিকে এগিয়ে দিল। রুদ্র আবার জিজ্ঞেস করল, তবে মেঘ একবারও উত্তর দিল না।

-“আরে ভাই, বল তো কি হয়েছে? না বললে বুঝবো কেমনে? কেউ কি কিছু বলেছে? খারাপ আচরণ করেছে?”

মেঘ হালকা স্বরে বলল,

-“না…”

-“তো এমন করে আছো কেন?”

-“এমনিই…”

রুদ্র উঠে দাঁড়ায় বুঝতে পারল জিজ্ঞেস করেও লাভ হবে না। মেঘের দিকে তাকিয়ে গলা গলিয়ে বলল,

-“তো মুখ ফুলাবে না, নরমাল করো ঠোঁট…”

মেঘ বিরক্ত হয়ে বলল,

-“নরমালই তো আছে।”

-“না, নরমাল নেই, ফুলে আছে…”

-“তো থাকুক, আপনার কি?”

-“আমার অনেক কিছু…”

মেঘ রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,

-“কি অনেক কিছু?”

রুদ্র ফুস করে শ্বাস ছেড়ে মেঘের হাত ধরে বাইকের দিকে যেতে যেতে বলল,

-“তা তুমি বুঝবে না বউ…”

মেঘও রাগ করে আর জিজ্ঞেস করল না।

———

এবার পিহু ইচ্ছে করেই গাড়িতে উঠল না ফারহানের সঙ্গে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ফারহানের আসার নাম নেই। হাতে কয়েকটা ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, এদিক সেদিক হাটছে। হঠাৎ এক মেয়ের সঙ্গে হালকা ধাক্কা লাগতেই হাতে থাকা ফুলগুলো পড়ে যায় নিচে। বিরক্ত হয়ে নিচু হয়ে তুলতে গেলে শাড়ির আচল অনেকটাই সরে যায়, কোমড় স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ফারহান গেটের দিকে যেতে যেতে দেখে পিহু এখনও সেখানে আছে। নিচু হয়ে ফুল কুড়াচ্ছে, হঠাৎ তার চোখ পড়ে সেই খোলামেলা জায়গায়। দ্রুত চোখ সরিয়ে এদিক সেদিক তাকায়, হঠাৎ দেখতে পায় কয়েকজন ছেলে সেদিকে চোখ রেখে আছে। সঙ্গে সঙ্গে চোয়াল শক্ত করে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গিয়ে পিহুর কোমড় পেচিয়ে তাকে সোজা করে দাঁড় করায়।

অপ্রত্যাশিত স্পর্শে পিহু ভয় পেয়ে চমকে পাশ ফিরে তাকায়, ফারহানের চেহারা দেখেই আরও বিস্মিত হয়।

ফারহান রাগী স্বরে বলে,

-“শাড়ি জায়গামতো যদি না থাকে, তাহলে পড়ার কি দরকার? ছেলেদের শরীর দেখাতে মজা লাগে?”

ফারহানের কথায় পিহু অবাক হয়ে নিজের দিকে তাকায়, দেখে পেটটা একটু বেড়িয়ে গেছে। দ্রুত ঠিক করতে গিয়ে পাশের দিকে চোখ গেলে দেখে কয়েকজন ছেলে তাকিয়ে আছে। ফারহান তাদের থেকে পিহুকে আড়াল করে দাঁড়ায়। ঠিক করতেই হাত ধরে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।

গাড়ির দরজা খুলতেই পিহু বসে পড়ে, যেন অবাক হওয়ার চরম পর্যায়ে। মনে মনে শুধু একটাই প্রশ্ন জাগে”উনি কি আমার খেয়াল রাখছেন?”

———

রুদ্র বাইক চালাচ্ছে আর মাঝে মাঝে মিরর দিয়ে মেঘের দিকে চোখ ছুঁড়ে দেখছে। মেঘ এখনও মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। বারবার চোখ যায় খয়েরি রঙের আবরন করা ঠোঁটের দিকে , যা ফুলিয়ে আছে। যেন ভীষণ টানছে, তবু নিজেকে সামলায়।

-“তুমি কি ঠোঁট নরমাল করবে না? আমার কিন্তু অন্য কিছু করতে মন চাচ্ছে…”

মেঘ হালকা মেজাজে বলে,

-“আমার যা মনে চায় তাই করব, আপনার কি? আপনি ও করুন আপনার যা মনে চায়।”

মেঘের কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে রুদ্র নিরিবিলি রাস্তার একপাশে গাড়ি থামিয়ে মেঘকে নামতে বলে। মেঘ আশেপাশে দেখতে দেখতে ভয়ে ভয়ে বলে,

-“এখানে কেন থামালেন? শুনশান রাস্তা, বিপদ হতে পারে…”

তার কথার মাঝেই রুদ্র কোমর ধরে আলগি দিয়ে বাইকে বসিয়ে দেয় মেঘকে। হঠাৎ এমন করায় মেঘ পড়ে যাওয়ার ভয়ে রুদ্রের কলার ধরে বলে,

-“আরে, কী করছেন? পড়ে যাবো…”

-“হুশশ… ডোন্ট ডিস্টার্ব।”

রুদ্রের কথায় চুপ হয়ে যায় মেঘ। তার চোখ বরাবর তাকানোর আগেই রুদ্র হঠাৎ তার অধর জোড়া টেনে নেয়। কী হচ্ছে বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে মেঘের। মুহূর্তেই সে মুড়ামুড়ি শুরু করে। এটা দেখে বিরক্ত হয়ে রুদ্র ধমক দেয়,

-“সমস্যা কী?”

মেঘ ঠোঁটে হাত দিয়ে বলে,

-“আমার লিপস্টিক…”

-“আবার দিয়ে নিবে…”

বলে আবারো টেনে ধরে রুদ্র। এবার মেঘ আর নড়েনা, চুপচাপ হালকা তাল মেলাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর রুদ্র তাকে ছেড়ে দেয়। মেঘ মাথা নিচু করে সেভাবেই বসে থাকে। রুদ্র ঠোঁট মুছে শান্ত কণ্ঠে বলে,

-“কি হয়েছে বলবে? আমি কিছু করেছি?”

মেঘ মাথা উচু নিচু করে। তা দেখে রুদ্র এক হাতে মেঘের গাল ধরে আদুরে স্বরে বলে,

-“কি করেছি বলো, না বললে বুঝবো কিভাবে?”

মেঘ মিনমিনিয়ে বলে,

-“আপনি ম্যারিড হয়েও সিঙ্গেল স্টাটাস দিয়ে রেখেছেন…”

রুদ্রের ভ্রু কুঁচকে যায়,

-“সামান্য এই ব্যাপার?”

মেঘ রুদ্রের দিকে একবার তাকিয়ে ফের বলে,

-“এজন্য তো কত মেয়ে মেসেজ রিকোয়েস্টে বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছে…”

রুদ্র জোরে হেসে উঠে, মেঘকে নামিয়ে নিজে বাইকে বসে ইশারা করে। মেঘ উঠে বসে। বাইক স্টার্ট দিয়ে রুদ্র বলে,

-“আমি তো মেসেজ রিকোয়েস্ট চেকই দেই না, আর স্টাটাস চেঞ্জ করার কথাও মাথায় ছিল না। তবে আজকেই করে নেবো…”

মেঘ কিছু বলে না, চুপচাপ শোনে।

রুদ্র আবার বলে,

-“কিছু হলে সাথে সাথে বলতে হয়। রাগ দেখানোর হলে দেখাবা, ঝাড়ার হলে ঝাড়বা। মনের ভিতর জমিয়ে রাখলে নিজেরই খারাপ লাগবে, বুঝলে বউ?”

মেঘ মাথা নেড়ে সায় দেয়। বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই শান্তকে দেখতে পায়। গাড়ি পার্ক করে রুদ্র এগিয়ে আসে। শান্ত রুদ্রের দিকে জহুরি চোখে তাকিয়ে বলে,

-“কি মাম্মা, লিপস্টিক পড়া শুরু করেছো নাকি?”

রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

-“লিপস্টিক পড়ব কেন?”

-“ঠোঁট তো তাই বলছে।”

মেঘ চমকে রুদ্রের দিকে তাকায়, দেখে হালকা লিপস্টিকের দাগ আছে ঠোঁটে। রুদ্র দ্রুত হাত দিয়ে ঘষছে। শান্ত দুষ্টু হেসে যেতে যেতে বলে,

-“ভাবি মঞ্জুলিকার ঠোঁটের মতো চটকে দিয়েছে আপনার লিপস্টিক, এই রুদ্র শ*লা। এভাবে ভেতরে গেলে যে কেউ অনায়াসে বলে দিবে সওয়াবের কাজের কথা…”

শান্তের কথায় মেঘ লজ্জায় লাল হয়ে যায়। রুদ্রের দিকে রেগে তাকিয়ে ঠোঁটের উপর হাত দিয়ে দ্রুত বাড়ির দিকে ছুটে যায়,  উদ্দেশ্য ওয়াশরুম। এদিকে রুদ্র মাথা চুলকে এগিয়ে যায়।

চলবে….

[দুঃখিত…রিচেক করতে যেয়ে আরও সময় লেগেছে। তবে বড় করেও লিখেছি। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। মন্তব্য জানাতে কিপ্টামি করবেন না। ]

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply