#আড়ালে_তুমি |৪১|
#_সাইদা_মুন
-“এই আমার স্বামীকে ছাড়, নয়তো এমন জায়গায় গুলি মারবো যে তোর বংশের বাত্তি আজ রাতেই নিভে যাবে…”
মেঘের কণ্ঠে এমন ঠান্ডা কিন্তু ধারালো হুমকি যে, রুদ্রকে ধরে রাখা ছেলেটির গলা শুকিয়ে আসে। থতমত খেয়ে হাত ছেড়ে পিছিয়ে যায় একপাশে। রুদ্র মুহূর্তের জন্য তাকিয়ে থাকে, চোখ যেন কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা, সেই চেনা বউ, হাতে বন্দুক, মুখে এমন এক গম্ভীরতা, যেন গুলি চালানো তার কাছে সকালে চা বানানোর মতো সহজ ব্যাপার। হুমকি এমন মারাত্মক যে, চারপাশের ছেলেগুলোও ভয় পেয়ে যায়, ভবিষ্যতের চিন্তা সবারই আছে। রুদ্র মনে মনে অবাক এটা তার বউ?
পিহু মেঘকে দেখে ঠোঁটে শিস তুলে হেসে ওঠে। চিৎকার দিয়ে বলে,
-“ডার্লিং বারাবার বারাবার…”
সুমনাও পাশ থেকে জোরে বলে ওঠে,
-“ওয়াহ কিয়া এন্ট্রি মেঘ। বেকগ্রাউন্ড মিউজিক ‘টুরুরুরুরুরুরুরুউরুরুরুরু’…”
সাদ সুমনার ফাটা গলার শব্দে কানে হাত দিয়ে কুঁকড়ে যায়,
-“প্লিজ গানটা বন্ধ করো, ধর্ষণ হয়ে যাচ্ছে…”
সুমনা রেগে তাকায়,
-“কেনো, সুন্দর না আমার গলা?”
সাদ মুখ সামলে বলে,
-“ইয়ে মানে জানেমান… তোমার কোকিলের মতো কণ্ঠ মানুষ শোনলে নজর লাগিয়ে দিবে। আমি তো জেলাস হচ্ছি, তাই…”
পিহু সুমনাকে উঠতে দেখে, তখনই এক ছেলে এগিয়ে এসে আটকাতে চায়। মেঘ সজোরে চেঁচিয়ে ওঠে,
-“এইইই, আমার বান্ধুবিদের গায়ে হাত দিবি তো তোর হাত কেটে কুত্তাকে খাওয়াবো… জায়গায় দাঁড়া। নয়তো একে বিনা টিকিটে জাহান্নাম থেকে ঘুরিয়ে আনবো!”
লিডার ভয়ে থরথর করে উঠে, গলা কেঁপে বলে,
-“বান্দির পুতেরা, আমার জানের মায়া তোগো কাছে নাই… চুপচাপ এই মাইয়ার কথা হোন।”
ফারহান পাশ থেকে তাকিয়ে বিরবির করে,
-“যেমন জামাই, তেমন বউ…”
রুদ্র ফারহানের কথায় ভ্রু কুঁচকে কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দেয়, হুমকিমাখা গলায় বলে,
-“এই.. একদম আমার বউয়ের দিকে কুনজর দিবি না, নয়তো চোখ তুলে ফেলবো।”
ফারহান বিরক্ত স্বরে বলে,
-“দেশে কি মেয়ের অভাব পড়ছে, যে আমি অন্যের বউয়ের দিকে তাকাতে যাবো?”
রুদ্র ঠোঁট বাঁকায়, তাচ্ছিল্যের স্বরে খোঁচা দেয়,
-“কথা শোনে মনে হয় মসজিদের ইমাম সাহেব। আবার তলে তলে অন্যের বউ চেয়ে বসে, আবালচু**…”
ফারহান চোখ সরু করে,
-“তোর লয়ালিটি চেক দিচ্ছিলাম, বোকাচু** বুঝে কম চিল্লায় বেশি”
রুদ্র কটমট করে বলে,
-“তোর কথায় বিশ্বাস করবো..? চোরের মায়ের বড় গলা, আমার বা*ল ও তোকে বিশ্বাস করেনা…”
-“করলে কর, না করলে নাই। তাতে আমার বা*লেরও কিছু যায় আসে না। রুচির দূরবিক্ষ দেখা দিয়েছে নাকি, যে বিয়াইত্তা বেডির পিছে পড়বো?”
তাদের খুঁচাখুঁচির মাঝেই পিহু এগিয়ে এসে সবার হাতের বাঁধন খুলে দেয়। রুদ্র উঠে দাঁড়ায়, এমন সময় পিছন থেকে এক ছেলে লুকিয়ে এসে বন্দুক তাক করে, গলায় বিদ্রূপ,
-“এই মেয়ে, বন্দুক নামা, নাহলে একে মেরে দিবো। সাহস বেড়ে গেছে, তাই না? মেয়ে মানুষ, মেয়ে মানুষের মতো থাকবি—-চুপচাপ…”
কথা শেষ হওয়ার আগেই ‘ঠুসস’ মেঘ বিন্দুমাত্র দেরি না করে ছেলেটির হাতের দিকে গুলি ছোড়ে। নিশানা এমন নিখুঁত যে সবাই আঁতকে ওঠে। রুদ্র হতবাক, তার বউ এসব ট্রেনিং নিয়েছিল নাকি? ছেলেটি হাত চেপে বসে পড়ে, বাকি সবাইও ভয় পেয়ে যায়। তারা অস্ত্র ফেলে বসে পড়ে মেঝেতে। এই সুযোগে সবাই মিলে এদের বেধে ফেলে।
মেঘ বন্দুকের আগায় ফু দিয়ে গলা উঁচু করে বলে,
-“মেয়ে মানুষকে কি মনে করিস, ভীতু-নরম-সরলসোজা? মেয়ে মানুষ যেই হাতে রাঁধতে পারে, সেই হাতে অস্ত্রও চালাতে পারে…”
রুদ্র চোখে বিষ্ময় নিয়ে এগিয়ে আসে, তাকে দেখতেই মেঘ বন্দুক ফেলে দৌড়ে গিয়ে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে । এতক্ষনের সব সাহসীকতা মুহুর্তেই শেষ, শরীর কাঁপছে, চোখ ভিজে, ভয় পেয়েছে বেশ। রুদ্র শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, হেসে বলে,
-“আমার বউয়ের আর কয়টা রূপ দেখা বাকি? বাঘিনী আবার কাঁদে নাকি…”
মেঘ ভাঙা গলায় জিজ্ঞেস করে,
-“আপনাকে কিছু করেনি তো ওরা?”
রুদ্র চোখে মায়া নিয়ে বলে,
-“বাহ রে। আমার এমন প্রটেক্টিভ বউ থাকলে, কিছু করার উপায় আছে নাকি?”
এদিকে পিহু গিয়ে যেই ছেলেটি তার মাথায় বন্ধুক তাক করেছিল তার জায়গা বরাবর লাথি মারে,
-“আর কোনোদিন করবি ডাকাতি..?”
ছেলেটি ব্যথায় চোখমুখ খিচে মাথা নাড়িয়ে না না করে। মলের সবাই মিলে ডাকাতদের বেদম পেটাতে থাকে, যার যার জিনিস উদ্ধারও করছে।
এরমধ্যে পুলিশ আসে ফুল ফোর্স নিয়ে, কিন্তু দেরি করে। ঢুকতেই দেখে ডাকাত ধরা পরে গেছে। তাদের পেছনেই মিডিয়ার লোক আর জনতা ভিড় জমায়, সার্কাস দেখার মতো উল্লাস। ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়েছে যেনো এলিয়েন উদয় হয়েছে না দেখলেই নয়। এর মধে বড়বড় লোকেরাও এখানে আটকা পড়েছিল তা যেনো বড়সড় একটা খবর, সবাই ভিডিও করছে, ছবি তুলছে ভাইরাল হওয়ার নেশায়।
পুলিশ এসে রুদ্র-ফারহানদের ঘিরে ফেলে। সাংবাদিকরা একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,”আপনারা এখানে কি করছেন?” “কেনো এসেছিলেন” “এই নিয়ে আপনাদের মতামত দিন” ব্লা ব্লা….
রুদ্র রাগে ফেটে পড়ে পুলিশের উপির। মেজাজ দেখিয়ে বলে,
-“চুর গেলে পুলিশ আসে এই দেশে। নিজের চোখে প্রমাণ পেলাম। একেকটার চাকরি কেমনে থাকে, আমি দেখবো..”
পুলিশের এক সদস্য ঢোক গিলে বলে,
-“না মানে স্যার… জ্যামে পড়ে গিয়েছিলাম। ঢাকা শহরের জ্যাম তো জানেনই…”
ফারহান ঝাঁঝালো স্বরে বলে,
-“তো পা নেই নাকি? কাজে বেড়োলে পা বাসায় রেখে আসেন?”
পুলিশ কুণ্ঠিত হয়ে,
-“ইয়ে স্যার, এতদূর হেঁটে আসা যা…”
-“শাট আপ! আর একটাও কথা বলবেন না। সেইফলি এখান থেকে বের করে দিন।”
তারপর পুলিশের ঘেরাওয়ে রুদ্রদের বের করে আনা হয়। বাহিরে আসতেই মেঘ ফারহানের উদ্দেশ্যে বলে,
-“ধন্যবাদ ভাইয়া…”
রুদ্র বিরক্ত হয়ে বলে,
-“একে ধন্যবাদ দিতে হবেনা চলো..”
ফারহান ভাব দেখিয়ে বলে,
-“সময় মতো না আসলে এতোক্ষনে পরিবার নিয়ে চিৎ হয়ে পড়ে থাকতি… “
রুদ্র ডোন্ট কেয়ার লুক দিয়ে গাড়িতে বসে বাকিরাও বসে পড়ে পিহু বাদে। পিহু ফারহানের দিকে এগিয়ে যায়,
-“আপনার তো গালে চোট লেগেছে। চলুন আমাদের সাথেই..”
ফারহান গালে হাত দিয়ে আবার সরিয়ে বলে,
-“নাহ আমি গাড়ি নিয়ে এসেছি, তুমি যাও.. “
বলেই সে তার গাড়ির দিকে হাঁটা ধরে। পিহু আবার ডেকে উঠে। ফারহান দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“কি?”
-“বলুন আশি..”
ফারহান ভ্রু কুচকে বলে,
-“আশি…”
-“আমি আপনাকে ভালোবাসি…”
বলেই দৌড়ে গাড়িতে উঠে যায়। এদিকে ফারহান স্তম্ভিত হয়ে কয়েক সেকেন্ড সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। মুহুর্তেই ফিরে “বাচ্চামি” উপাধি দিয়ে মাথা চুলকে গাড়ির দিকে হাঁটা দেয়।
———
সাদ-সুমনা-পিহু তো মেঘের প্রশংসা করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। হঠাৎ সাদ বলে,
-“এইরে সবাই সবার মোবাইল মানিব্যাগ উদ্ধার করেছে, আমাদেরটা আর আনলাম না..”
সুমনা ব্যাগ বের করে বলে,
-“আরে কুল আমি ফাঁক দিয়ে সব নিয়ে নিয়েছি আমাদের..”
একে একে বের করে, যার যার মোবাইল ব্যাগ দিয়ে দেয়। শপিং ব্যাগ আগেই গাড়িতে রেখে গেছিলো সাদ, তাই এগুলো সেইফই আছে।
-“যাক, বুদ্ধিসুদ্ধি আছে তাহলে, এতোদিন তো ভাবতাম খাওয়া ছাড়া কিছুই বুঝো না..”
সুমনা রেগে যায়,
-“তুমি কিন্তু আবার আমার খাবার খোটা দিচ্ছো, এই যাও তো ব্রেকআপ এমন বফ আমার চাই না…”
-“আরে বেবি বুঝনা, তোমার প্রশংসা করলাম…”
এদের কথার মাঝেই রুদ্র ফোন অন করতেই দেখে বাড়ি থেকে ১০০+ কল। এতক্ষনে মেইভি খবরের চ্যানেলে ছড়িয়ে পড়েছে নিউজ।
———
সুমনাকে ড্রপ করে বাসায় পৌঁছাতেই রুদ্রের মা চাচি দৌড়ে আসে, তাদের বুকে নিয়ে সে কি কান্না। কি হয়েছে কোথাও লাগেনি তো জিজ্ঞেস করতে করতে কাহিল।রুদ্র একসময় থামাতে হালকা চেঁচিয়ে বলে,
-“কিছু হয়নি তো আমাদের, এই যে দেখো একদম ঠিক আছি। এতো কাঁদছ কেনো..”
রুদ্রের কথায় চুপ হয়ে যায় সবাই। তখনি এরশাদুল চৌধুরী হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেন। রুদ্রের দিকে দ্রুত প্রশ্ন ছুড়ে,
-“সবাই ঠিক আছো তো..?”
-“হ্যাঁ..”
তিনি এবার কিছুটা রেগে বলেন,
-“সিকিউরিটি ছাড়া গিয়েছো কেনো? তুমি কি এখন সাধারণ কেউ? তোমার আক্কেল জ্ঞান নেই যে তোমার শত্রু চারিদিকে ছড়িয়ে আছে?”
সিদ্দিকা বেগম ফাস্টএইড বক্স হাতে রুদ্রকে টেনে বসাতে বসাতে বলে,
-“হয়েছে ছেলেটাকে, আর কিছু বলবে না..”
এরশাদুল চৌধুরী কিছুটা শান্ত হয়ে বলেন,
-“এরপর থেমে এমন ভুল করবে না।”
সবাই ফ্রেশ হয়ে নিচে টিভির সামনে বসেছে। নিউজ চ্যানেলে ভিডিও চলছে, শপিংমলের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে রেকর্ড করেছে” মেঘ কিভাবে ডাকাত দলকে একাই জব্দ করেছে সেই ভিডিও”। খবরের হেডলাইনে “পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুদ্র চৌধুরীর সাহসী স্ত্রী একাই পুরো ডাকাত দলকে কাত করে দিলো”। বর্তমানে এটাই হট নিউজ।
এরশাদুল চৌধুরী তো মেঘের মাথায় হাত দিয়ে বলে,
-“সময় মতো সাহসীকতা দেখিয়েছো বলেই আজ সবাই সেইফ, ভেরি গুড মা..”
রুদ্রের দাদি উল্লাসে বলেন,
-“দেখতে হবে না কার নাতবউ..”
রুদ্র হেসে বলে,
-“একদম, দাদাকে একবার বাড়ি থেকে তুলে নিতে এসেছিল আর তুমি দা নিয়ে কি দৌড়ানিটাই না দিলে…”
এরশাদুল চৌধুরী রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“ফারহানকে একদিন দাওয়াত দিও, যেমন ভাবতাম অতোটাও খারাপ না..”
রুদ্র মাথা নাড়ায়। সবাই বেশ অনেকক্ষণ আড্ডা দেয়। এর মধ্যে বাড়ির বউরা চলে যায় রান্নাঘরে, রাতের রান্না সেরে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে নেয়।
মেঘ বসে আছে পড়ার টেবিলে, মুখটা ভোতা করে। রুদ্র বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে বসে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-“আমি সবসময় টপার হয়েছি, আর আমার বউ হয়ে ফেলটুস হলে আমার মানসম্মান কোথায় যাবে?”
মেঘ মুখটা ছোট করে বলে,
-“প্লিজ কাল থেকে পড়বো..”
রুদ্র কড়া চোখে তাকিয়ে বলে,
-“কালকে সায়ানের বিয়েতে যাবো, পরের কয়েকদিন এমনি পড়ালেখা অফ থাকবে। চুপচাপ পড়ো…”
মেঘ মুখ ভেংচে পড়তে থাকে।
———
পিহু বেশ কষ্টে ফারহানের নাম্বার জোগাড় করেছে। আগে ফেসবুকে ফেক আইডি দিয়ে সবসময় মেসেজ দিতোই। তবে কোনো রিপ্লাই পেতোনা দেখে ভাবলো হয়তো দেখেই না। তাই আর মেসেজ দেয় না সেই আইডি আর চালায় না বহুদিন…
পড়ার টেবিলে বসে ফারহানের নাম্বার ডায়াল করে ভাবছে কল দিবে কি না। ভাবতে ভাবতে কল দিয়েই ফেলে। কয়েকবার রিং হতেই রিসিভ হয়,
-“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম..”
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম, কে?”
-“আমি পিহু…”
-“নাম্বার কোথায় পেলে…?”
-“ম্যাজিক করে এনেছি…”
ফারহান কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,
-“কি বলবে বলো…”
-“খাওয়া দাওয়া করেছেন?”
-“হ্যাঁ”
-“কি করেন?”
-“কিছু না…”
পিহু এমন সোজাসাপ্টা জবাবে কিছুটা রেগে বলে,
-“আজব আমাকেও জিজ্ঞেস করেন..”
-“প্রয়োজন নেই… আর কিছু বলবে? নয়তো কল রাখছি।”
কথাটা পিহুর ইগোতে লাগে, নিজেই ধুম করে কল কেটে দেয়। নাম্বারে মেসেজ পাঠায়, “মিঃ ফালতু…” তবে কোনো রিপ্লাই আসে না। নিজেই নিজেকে বিরক্ত হয়ে বলে,
-“ভাবটা কি নিজেকে? আমি লাগে পাগল তার জন্য হুহ….তবে আমি তো আসলেই পাগল। ধুর ভাল্লাগে না ছাতার মাথা।”
তখনি দরজায় কেউ নক করে। দরজা খুলে দেখে সাদ দাঁড়িয়ে। পিহু ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,
-“কি চাই..?”
সাদ তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে,
-“তোর বান্ধুবি আমাকে ব্লক মেরেছে, রেগে আছে খুব। একটু হেল্প করনা বোন…”
পিহু দরজা ছেড়ে চেয়ারে বসতে বসতে বলে,
-“নিজের গফ নিজেই সামলাও..”
সাদ বিছানায় বসে আফসোসের সুরে বলে,
-“পারছি না, দেখেই তো তোর কাছে আসলাম..”
-“তাহলে অন্য গফদের সাথে কথা বলো। তোমার কি আর একটা দুইটা..?”
-“আর কেউ নাই…”
পিহু অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে,
-“সিরিয়াসলি..? আমি কি ঠিক শোনলাম..”
-“মজা করছিনা পিহু…”
পিহু সাদের দিকে তাকায়, বেচারা বেশ সিরিয়াস। আরেকটু বাজিয়ে দেখতে বলে,
-“তো এখন চান্সে অন্য মেয়ে পটাও..”
-“দূর, বা*ল আর কাউকে ভালো লাগে না, তুই কি ঠিক করে দিবি? আমার ভালো লাগছে না, ঘুম আসছে না।”
পিহু মিটিমিটিয়ে হাসে, প্লেবয় তাহলে লয়াল হয়ে যাচ্ছে। সুমনার নাম্বারে কল দেয়। দুইবার কল কেটে যেতে যেতে তৃতীয় বারের সময় কল ধরে। ঘুমঘুম কণ্ঠে বলে,
-“কিরে, ডিস্টার্ব করছিস কেনো? আমি ঘুমাবো…”
-“এই শা*লি, আমার ভাইয়ের ঘুম হারাম করে তুই ঘুমাচ্ছিস? উঠ এক্ষনি..”
-“কি হয়েছে..?”
-“তুই বল তোদের কি হয়েছে, ব্লক কেন করেছিস?”
-“তোর ভাইকে জিগা, সাপ্তায় ৩ দিন সেই ব্লক মেরে রাখে..”
সাদ পাশ থেকে ফুঁস করে বলে,
-“আর বাকি ৪ দিন যে তুমি মারো..”
সুমনা সাদকে ইগনোর করে বলে,
-“এই পিহু, এই গরুর হাম্বা হাম্বা শুনাতে কল দিয়েছিস..”
সাদ রেগে বলে,
-“আমারও এতো সখ নাই ছাগলের মা মা শোনার।”
এদের ঝগড়া দেখে পিহু চিল্লিয়ে উঠে,
-“চুপপ, এই ভাইয়া তুমি এক্ষুনি আমার ঘর থেকে বের হও। আর তুই এক্ষুনি ব্লক খুলে নিজের গরু সামলা..”
বলেই কল কেটে দরজা লাগিয়ে দেয়,
-“মাত্র ৮ দিনের রিলেশনে ৭ দিনই ব্লক আনব্লক শুরু, বাপরে মাথা নষ্ট করে দিতো আরেকটু হলে….”
———
রাত ১২ টা,
সামিয়া রুদ্র ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। মূলত সামিয়াই রুদ্রকে মেসেজ দিয়ে আসতে বলেছে। রুদ্র সামিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
-“কিরে এতো রাতে ছাদে কেন ডেকেছিস? কোনো সমস্যা কেউ ডিস্টার্ব করে?”
সামিয়া সাহস জুগিয়ে বলে,
-“না ভাইয়া..”
রুদ্র দুই হাত ভাঁজ করে কপাল কুচকে বলে,
-“তো কেন ডেকেছিস?”
সামিয়া মাথা নিচু করে কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
-“রুদ্র ভাই, একটা জিনিস চাইবো দিবে?”
রুদ্র শান্ত ভাবেই জিজ্ঞেস করে,
-“কি..?”
সামিয়া ধমকে বলে ফেলে,
-“তোমাকে…”
রুদ্র চমকিত চোখে তাকায়,
-“কিসব বলছিস, মাথা ঠিক আছে তোর?”
সামিয়া মাথা তুলে রুদ্রের চোখে চোখ রাখে। সামিয়ার চোখে পানি,
-“আমি… আমি তোমাকে ভালোবাসি রুদ্র ভাই। সেই ছোট থেকে তোমাকে ভালোবাসি। আমি সত্যি মেঘকে তোমার পাশে সহ্য করতে পারছি না। আমি নিজেকে সামলাতে চেয়েছি তবে পারিনি। আমি মেঘের থেকেও বেশি ভালোবাসবো তোমায়। তুমিও তো আমায় ভালোবাসো তাই না? তাই জন্যই তো সবসময় গিফট দিতে, আগলে রাখতে। মাঝে কি থেকে কি হয়ে গেলো। এসব বাদ দিয়ে তুমি আমার হয়ে যাওনা রুদ্র ভাই…”
মুহূর্তেই ‘ঠাসসসস’ শব্দে নিস্তব্ধ ছাদ আরও নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে। সামিয়া গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। রুদ্র বাজ কণ্ঠে বলে,
-“আজ অবধি তোকে আর পিহুকে দুই চোখে দেখিনি। পিহুর জন্য যা আনতাম তা তোর জন্যও আনতাম, নিজের বোন ভেবে আগলে রাখতাম। সেসবকে তুই অন্যদিকে নিয়ে যাবি জানলে তখনই দেওয়া বন্ধ করে দিতাম।”
ফুস করে শ্বাস ছেড়ে বলে,
-“চান্স দিলাম নিজেকে শুধরে নে। সামনে আরও লাইফ পরে আছে। আর মেঘ আমার ওয়াইফ, সে ছাড়া দ্বিতীয় কোনো নারীর জায়গা নেই আমার জীবনে…”
বলেই ছাদ থেকে ধুপধাপ পায়ে নেমে যায়। এদিকে সামিয়া নিচে বসে পড়ে, কাঁদছে ভীষণ। কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
-“আমিও তো তুমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পুরুষের কথা চিন্তাও করতে পারিনা। তোমাকে ভালোবেসে বেহায়া ও হয়ে গেলাম,কি করবো আমি এখন..?”
———
ঘরে আসতেই দেখে মেঘ টেবিলেই ঘুমিয়ে গেছে। দরজা লাগিয়ে এগিয়ে গিয়ে তাকে বিছানায় শোয়ায়। নিজেও পাশে শোয়ে মেঘের কপালে ঠোঁট ছোয়ায়,
-“ভালোবাসি… ভালোবাসি বউ, অনেক বেশি ভালোবাসি।”
মেঘ ঘুমের মধ্যেই উম পেয়ে নড়েচড়ে রুদ্রের সাথে আরও মিশে যায়। রুদ্র এই প্রথম তাকে ভালোবাসি বললো আর সে শোনলোই না “বেচারি”। রুদ্র সেদিন অর্ধেক রাত মেঘকে দেখতে দেখতেই কাটিয়ে দেয়……
চলবে…..
[আজকে যদি ভালো রেস্পন্স না পাই, শুধু নাইস নেক্সট এগুলোই কমেন্টে থাকে। কালকে থেকে আমিও কিপ্টামি করে গল্প লিখবো, ছোট হলে আমার দোষ নেই..]
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৩
-
আড়ালে তুমি (সারপ্রাইজ পর্ব শেষাংশ)
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৫৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৪
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬১
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৩
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫১
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৬