#আড়ালে_তুমি |৪০|
#_সাইদা_মুন
রাত ১১টা। সব গেস্টরাই চলে গেছে অলরেডি।
মেঘের হাত ধরে রুদ্র এগোচ্ছে বাড়ির দিকে। হঠাৎ রুদ্র নরম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-“সারপ্রাইজ কেমন লাগলো, বউ?”
মেঘ হাসিমুখে ঘাড় ঘুরিয়ে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমার লাইফের বেস্ট সারপ্রাইজ ছিলো এইটা…”
রুদ্র মুচকি হেসে প্রতিউত্তরে বলে,
-“এখন আমার লাইফের বেস্ট সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য নিজেকে আস্তে ধীরে তৈরি করুন, ম্যাম…”
মেঘ কনফিউজড হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“কোনটা?”
রুদ্র মেঘের হাত ছেড়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে উচ্চারণ করে,
-“পাপ্পা-পা-পা…”
মেঘের পা থমকে যায়, কিছু মুহূর্ত লাগে বুঝতে। পরক্ষণেই মুখে লজ্জামিশ্রিত হাসি ফুটে ওঠে।
-“কিরে, একা একা হাসছিস কেনো? ভুতে ধরলো নাকি?”
মুখে হাসি নিয়েই পেছন ফিরে তাকায়। পিহু মেঘকে এত খুশি দেখে ফুঁস করে শ্বাস ছাড়ে,
-“তোমারই সময় হাসতে থাকো…”
মেঘ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
-“বলেছিলিস?”
-“রিজেক্ট খেয়েছি…”
মেঘ এগোতে এগোতে বলে,
-“কি বলেছে?”
পিহুও মেঘের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
-“বলে, আমি নাকি বাচ্চা মেয়ে। এখন আবেগের বয়স। আরে ভাই, আজকে বিয়ে হলে কালকে বাচ্চার মা হয়ে যাবো, পরশু বাচ্চার বাচ্চা এসে আমাকে দাদি ডাকবে। আর আমাকে বলে বাচ্চা…”
মেঘ ফিক করে হেসে ফেলে,
-“বাদ দে…”
-“কি বাদ দিবো, আমি উনাকে রাজি করিয়েই ছাড়বো…”
মেঘ তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে,
-“জোর করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না, পিহু। আমি চাই না তুই কষ্টে থাক। ওনার চিন্তা বাদ দে। তোর জন্য আল্লাহ আরও ভালো ছেলে রেখেছে দেখিস, তোকে রানী বানিয়ে রাখবে।”
পিহু মুচকি হেসে হাঁটার মধ্যেই মেঘকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে,
-“ও মেরি জান এত চিন্তা আমাকে নিয়ে?”
মেঘ গ্রাউন্ড সামলাতে সামলাতে বলে,
-“আরে কি করছিস নিজেও পড়বি, আমাকেও ফালাবি…”
পিহু এসব পাত্তা না দিয়ে মেঘের গলায় ঝুলেই বলে,
-“জানিস, উনি অনেক কেয়ারিং। আমার মনে হয় আমি চেষ্টা করলে উনার মনে আমার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারবো।”
তারপর পিহু তখনকার সব কিছু খুলে বলে। মেঘ সব শুনে বলে,
-“মনে তো হচ্ছে ম্যানার ভালোই, ভদ্রও। নয়তো একা বাড়িতে পেয়ে কোনো না কোনো বাজে ইঙ্গিত দিতই…”
-“হু, এসবই ভাবছি…”
কথা বলতে বলতেই যে যার রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় যেতে যেতে প্রায় ১২টা। রুদ্র সারাদিনের ধকলে মেঘকে বুকে নিয়ে শোতেই ঘুমিয়ে পড়ে। তবে মেঘের চোখে ঘুম নেই। রুদ্রের মুখপানে তাকিয়ে থাকে। কেমন জানি তার প্রতি মায়া বেড়েই যাচ্ছে। গভীর ঘুমে তলিয়ে, দেখতে কি স্নিগ্ধ লাগছে। কপালের উপর চুলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে অগোছালোভাবে পড়ে আছে। মেঘ ধীরে ধীরে তা সরিয়ে দেয়। কপালের দিকে তাকাতেই ফিক করে হেসে দেয়। মনে পড়ে সেই প্রথম দিনের কথা, সেদিন তো উনার কপাল ফাটিয়ে দিয়েছিলাম।
হঠাৎ মনে এক অদ্ভুত ইচ্ছে জাগে। নিজেকে নিজেই ধাতস্থ করলেও মনের ভেতর কেমন করছে। যেন এই কাজটা না করলেই নয়। সে তো ঘুমিয়েই আছে ভেবে, মাথাটা হালকা তুলে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছোয়ায় রুদ্রের কপালে। তবে এতেও যেন মন ভরেনি, এবার আরেকটু গভীর করে ঠোঁট ছোয়ায়। শব্দ করেনি, যাতে রুদ্রের ঘুম না ভাঙে। তবে মুহূর্তেই চমকে যায়। রুদ্র তার ঘুম-ভাঙা আধোআধো কণ্ঠে বলে উঠে,
-“এত কিপ্টেমি কেনো বউ? ভালোভাবে দাও না…”
মেঘ একবার রুদ্রের মুখের দিকে তাকায়। চোখ বন্ধই।
ঘুমের ঘোরে ছেলেদের কণ্ঠ নাকি অনেক বেশি সুন্দর হয়, মেঘ আজ তার প্রমাণও পেলো। রুদ্রের কণ্ঠে যেন আরও আদর আদর পেলো। এবার চুলের মধ্যে নিজের হাত ডুবিয়ে ধরে, শব্দ করে একটা চুমু খেলো। তারপর রুদ্রের বন্ধনে আবারও আবদ্ধ হয়ে শুয়ে পড়লো। রুদ্রও তার প্রেয়সিকে আরও নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
———
“ভাইয়া, মার্কেটে নিয়ে যেতে পারবে? সায়ান ভাইয়ার বিয়েতে পরার জন্য কিছুই পাচ্ছি না…”
রুদ্র খেতে খেতে বলে,
-“দুই দিন পরপর যে কাপড় কিনিস, সেগুলো গেল কোথায়?”
-“আরে ভাইয়া, তুমি বুঝবে না সব পড়ে পিক তুলা শেষ। প্লিজ, প্লিজ নিয়ে যেও না। মেঘেরও তো লাগবে!”
রুদ্র কিছু একটা ভেবে বলে,
-“তো সাদকে নিয়ে যা… আমি একটু পরই বের হবো।”
পিহু নাক সিটকে বলে,
-“সাদ ভাইয়াকে নিয়ে গেলে তো দোকানের মেয়েদের সঙ্গে ফ্লার্ট শুরু করে…”
সাদ খাচ্ছিল। পিহুর কথায় কাশতে কাশতে প্রায় দম বন্ধ হয়ে যায়। মেঘ ও সামিয়া মিটিমিটি হাসে। রুদ্র পানি এগিয়ে দিলে সাদ খেতে খেতে বলে,
-“এই আন্তাজি বলবি না, আমি ভেরি গুড বয়…”
-“হুঁ! গুড বয় না ছাই..”
-“আচ্ছা, বিকেলে রেডি থাকিস, এসে নিয়ে যাবো।”
খাওয়া শেষে রুদ্র চলে যায়। পিহু সুমনাকে কল দেয়,
-“বিকেলে লোকেশন দিচ্ছি, চলে আসিস। সায়ান ভাইয়ার বিয়েতে আমরা তিনজন একইরকম পরবো…”
পিহুর কথার মাঝে সাদ এসে তার পাশে বসে,
-“ইয়ে মানে বনু…”
পিহু কল রেখে সন্দেহভরা চোখে তাকায়,
-“কি ব্যাপার সাদ ভাই, এত ভালো ব্যবহার আর তুমি…”
-“না মানে… তোরা একা একা যাবি, আমি-ও যাবো তোদের সঙ্গে…”
-“কোন দরকার নেই। ভাইয়া আমাদের নিয়ে যাবে। তোমার যেয়ে কী কাজ?”
সাদ ইনোসেন্ট মুখ করে বলে,
-“ভাবলাম আমার বোনটাকে একটা জামা গিফট করবো। থাক, যখন দরকার নেই, তখন আর যাবো না…”
‘গিফট’ কথাটা শুনেই খুশিতে গদগদ হয়ে পিহু বলে,
-“না না ভাইয়া, কেন যাবে না। তুমিও যাবে আমাদের সঙ্গে।”
তাদের ভাই-বোনের খুনসুটি দেখে বাকিরা মুচকি হাসে।
———
বিকেলের দিকে…
রুদ্রের অপেক্ষায় বসে আছে মেঘ, পিহু ও সাদ। সামিয়াকে বলা হয়েছিল, কিন্তু তার নাকি কোচিং, তাই সে আসছে না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই রুদ্র গাড়ির হর্ন বাজায়, সবাই বেরিয়ে যায়। গাড়িতে বসতেই রুদ্র স্টার্ট দেয়। সাদ রুদ্রের পাশের সিটে বসে চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“ভাইয়া, তুমি সিকিউরিটি ছাড়া যাচ্ছো?”
-“হুঁ।”
-“যদি কোনো সমস্যা হয়? এখন তো তোমার শত্রুর অভাব নেই!”
-“কিছুই হবে না।”
শপিংমলে পৌঁছাতেই সুমনার দেখা মেলে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে যায়। রুদ্র গাড়ি পার্ক করে, মুখে মাস্ক পরে নেয় নিজের চেহারা ঢাকার জন্য।
পরিচিত এক দোকানে ঢুকে লেহেঙ্গা দেখা শুরু করে। মেঘ একের পর এক দেখছে, দুইটা পছন্দ হয়েছে, এখন কোনটা নেবে বুঝতে পারছে না। বাধ্য হয়ে রুদ্রকে ডাকে,
-“এই দেখুন তো, কোনটা ভালো লাগছে, এই গোলাপিটা না খয়েরিটা?”
রুদ্র মেঘের পাশে বসে বলে,
-“আমার বউকে তো যেকোনো কাপড়েই সুন্দর লাগে…”
একে তো মেঘ চয়েজ করতে না পেরে নিজের ওপর রেগে যায়। আবার কোমরেও ব্যথা করছে, বিরক্ত গলায় বলে,
-“হয়েছে, পাম না দিয়ে বলুন কোনটা ভালো। আমি টায়ার্ড, আর বসে থাকতে পারছি না।”
রুদ্র থতমত খেয়ে যায় বউটা রেগে আছে। তাড়াতাড়ি বলে,
-“এই খয়েরিটাই বেশি সুন্দর।”
মেঘ খয়েরিটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে কিছুক্ষণ, তারপর দোকানদারকে অন্য হাতের গোলাপি লেহেঙ্গাটা দেখিয়ে বলে,
-“আংকেল, এইটা প্যাক করে দিন।”
রুদ্র হতভম্ব হয়ে তাকায়,
-“তুমি ওটা নিলে কেন?”
মেঘ কসমেটিকস দেখতে দেখতে বলে,
-“ওটাই ভালো লেগেছে।”
রুদ্র বিড়বিড় করে বলে,
-“যদি নিজের চয়েজেই নিবে, তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস করলা কেন?”
-“কিছু বলছেন?”
-“না না, ক…কই কী বললাম!”
———
সবার শপিং শেষ হতেই ২ তলার ক্যাফেতে যায় সবাই। বেশ ক্ষুধা পেয়েছে। এক টেবিলে বসতেই রুদ্র হঠাৎ সাদকে জিজ্ঞেস করে বসে,
-“আজকাল সুমনার সঙ্গে বেশ ভাব জমেছে, ব্যাপার কী?”
রুদ্রের কথায় সাদ আর সুমনা দুজনেই কাশতে শুরু করে। পিহু আর মেঘ জহুরি দৃষ্টিতে তাকায় আসলেই ব্যাপার কী?
সাদ আমতা আমতা করে,
-“ইয়ে মানে ভাইয়া, ফ…ফ্রেন্ড…”
রুদ্র কফিতে চুমুক দিয়ে বলে,
-“তুই তোর ভাইকে এত কাঁচা খেলোয়াড় ভাবিস? খবর কানে আসে বাতাসের গতিতে…”
সাদ চুপসে গিয়ে মিনমিনিয়ে বলে,
-“আমরা রিলেশনে আছি, মাত্র ৮ দিন হলো…”
শুনে পিহু-মেঘ চিল্লিয়ে ওঠে। তাদের না জানিয়ে সুমনা এতদূর এগিয়ে গেছে। দুজন মিলে সুমনাকে চেপে ধরে। সুমনার তখন অবস্থা “আমি ফাইসা গেছি, মাইংকার চিপায়”।
এরমধ্যে রুদ্রের ফোনে কল আসে। একটু সাইডে গিয়ে কল ধরতেই ফারহানের গলা,
-“তুই যেখানে আছিস, সেখান থেকে এখনই বের হয়ে যা।”
রুদ্র রেগে বলে,
-“তোর কথায় চলবো নাকি আমি?”
ফারহান গম্ভীর গলায়,
-“যা বলেছি, তাড়াতাড়ি কর নয়তো বিপদে পড়বি।”
রুদ্র ভাবে ফারহান তাকে থ্রেট দিচ্ছে,
-“তোর সঙ্গে ঝামেলা করার মুড নেই। ভালো মুডে আছি, হুদাই মুড আর সময় নষ্ট করিস না।”
বলেই কল কেটে দেয়। ফারহান আবার কল দিলে রুদ্র ফোন সাইলেন্ট করে রাখে।
হঠাৎ শপিংমলে হুলুস্থুল শুরু হয়, লোকজন দৌড়াচ্ছে, চিৎকার করছে। রুদ্র এক লোককে জিজ্ঞেস করতেই বলে,
-“ডাকাত হামলা করেছে।”
রুদ্র স্তব্ধ হয়ে যায়। মেঘরা ভয় পেয়ে যায়। রুদ্র সবাইকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বের হতে যায়। পেছনের গেট দিয়ে বেরোতে গেলে, কিন্তু এদিক তালা মারা। রুদ্র সাদকে সুমনাকে নিয়ে সেইফ জায়গায় যেতে বলে, মেঘ আর পিহুর হাত ধরে তিন তলার দিকে ছোটে।
কিন্তু পথ আটকে দেয় এক ছেলে, হাতে বন্দুক তুলেই বলে,
-“এই, সবাই আমার সঙ্গে আয়, নয়তো গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিবো!”
রুদ্র মনে মনে শুকনো ঢোঁক গিলে। মেঘ-পিহু না থাকলে একে সহজেই নামিয়ে দিতে পারত। কিন্তু এখন কিছুই করা সম্ভব না। এই মুহূর্তে হঠাৎ ছেলেটির পেছন থেকে কেউ তার মাথায় আঘাত করে। সাথে সাথে বন্দুক পড়ে যায় মেঘের পায়ের সামনে। ছেলেটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, সাথে সাথে মাইক্রোফোনে চিৎকার করে বলে ওঠে,
-“ভাই, দুই তলায় আসেন। আমারে আঘাত করছে, কেউরে পাঠান… পালায়তাছে!”
রুদ্র চমকে তাকায় ফারহান লাঠি ফেলে দ্রুত বলে,
-“এই জায়গাটা সেইফ না। দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে না, পালা।”
———
রুদ্র আর কিছু না ভেবে দ্রুত মেঘ আর পিহুর হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছে। দু’জনকে দুই পাশে ধরে রাখায় ঠিকভাবে দৌড়াতে পারছে না। এদিকে ছেলেগুলোকে আগেই বলে দিয়েছে ওরা এই দিকেই এসেছে।
ঠিক তখনই ফারহান এসে পিহুর হাত ধরে তাকে রুদ্রের কাছ থেকে আলাদা করে নেয়। রুদ্র রেগে ফারহানের মুখে ঘুসি মেরে চিৎকার করে ওঠে,
-“জানোয়ার! আমার বোনের হাত ছাড়! না হলে তোর হাত কেটে কু*ত্তাকে খাওয়াবো…”
ঘুসি খেয়ে গালের এক সাইড কিছুটা কেটে গেছে। ফারহানও রাগে ফুঁসে উঠে,সেও পালটা ঘুসি মেরে বলে,
-“মাদার*দ, এভাবে এগোলে বউ-বোন দুটোকেই বিপদে ফেলবি। আমি পিহুকে নিয়ে এদিকে যাচ্ছি, তুই ওইদিকে যা। পুলিশকে ইনফর্ম করে দিয়েছি। ওরা আসার আগ পর্যন্ত সেইফ থাক।”
রুদ্রেরও ঠোঁট কেটে গেছে অনেকটা। এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলে,
-“যদি পিহুর কিছু হয়, তোকে জিন্দা গেঁড়ে ফেলবো মাটিতে…”
বলেই সে মেঘকে নিয়ে উল্টোদিকে চলে যায়। সে জানে ফারহানের উপর বিশ্বাস রাখা যায়, সে পিহুর ক্ষতি করবে না।
কিছুদূর যেতেই পেছন থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। রুদ্র সাথে সাথে মেঘকে কাপড়ের স্টোরেজে ধাক্কা মেরে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু নিজে ধরা পড়ে যায়।
-“এখানেই দাঁড়াবি, না হলে গুলি করে দেবো!”
রুদ্র থেমে যায়। বুকটা ধকধক করছে নিজের জন্য নয় মেঘের জন্য। ওরা মেঘকে দেখে ফেললো না তো?
———
এদিকে পিহু হঠাৎ থেমে পড়ে। ফারহান তাড়াতাড়ি বলে,
-“কি হয়েছে? চলো!”
পিহু পেছন ফিরে বুক ফেটে কেঁদে ওঠে,
-“আমার ভাইয়ায়া….”
ফারহান তাকিয়ে দেখে রুদ্র ধরা পড়ে গেছে, ওরা এই দিকেই আসছে। সে তৎক্ষণাৎ পিহুকে টেনে নিয়ে পাশের দোকানের চেঞ্জিং রুমে ঢুকে পড়ে।
পিহু কাঁদছে, ফারহান এক ধমকে বলে,
-“চুপ, একদম চুপ কাঁদবে না, ধরা পড়ে যাবো।”
তাও পিহু থামছে না। ওদিকে পরিষ্কার কারো পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে ফারহান পিহুর মুখ চেপে ধরে। পিহু কন্দরত চোখ নিয়ে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। ফারহানের বুকে কেমন করে ওঠে, মেয়েটিকে এভাবে দেখে।
বেশ কিছুক্ষণ যায় আর পায়ের শব্দ শোনা যায় না।
তখন সে আস্তে করে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। চারদিকে তাকাতেই দেখে ওরা রুদ্রকে নিয়ে নিচতলায় নামছে, মাথায় বন্দুক তাক করা।
ফারহান পিহুকে বলে এখানেই থাকতে। পাশের দিক থেকে একটা রড তুলে নিয়ে সে অন্য পাশের সিঁড়ি ধরে নিচে নামে। ওয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে, দু’জন লোক রুদ্রকে নিয়ে এগিয়ে আসছে। আরেকটু এগোতেই একজনের মাথায় সজোরে আঘাত করে। সাথে সাথে আরেকজন ঘাবড়ে যায়, কি হলো বুঝে ওঠার আগেই রুদ্র তাকে ধাক্কা দেয়। তার হাতের বন্দুক পড়ে যায় মাটিতে। রুদ্র আর ফারহান মিলে দু’জনের হাত-পা বেঁধে সামনে এগোতে নেয়…
ঠিক তখনই, কারো গলা পেছন থেকে হিম জমিয়ে দেয়,
-“এখানেই দাঁড়া, নয়তো একে মেরে ফেলবো।”
রুদ্র আর ফারহান পেছনে ঘুরতেই রুদ্রের বুক ধক করে উঠে। পিহুর মাথায় বন্দুক ঠেকানো। ফারহান কপালে হাত দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
-“শিট… একে না বলেছিলাম বের না হতে…”
রুদ্র রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে,
-“মাদা****, আমার বোনের দায়িত্ব নিয়েছিলি। অকে ধরলো কিভাবে?”
———
সাদ সুমনাকে নিয়ে দৌড়াতেও পারছে না। রেগে বলে,
-“এতো খাস কেনো! দেখেছো? সময়মতো দৌড়াতেও পারছি না…”
সুমনাও রেগে গিয়ে বলে,
-“তুমি আমাকে খাবারের খোঁটা দিচ্ছো, ব্রেকাপ..”
সাদ ঢুক গিলে বলে,
-“আরে না না বাবু..”
তাদের কথার মাঝেই হঠাৎ পেছন থেকে একজন গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-“এখানেই দাঁড়া…”
একসাথে থেমে যায় তাদের পা। সাথে সাথেই দু’জন লোক সামনে এসে দাঁড়ায়। একজন সাদকে ধরে, আরেকজন সুমনার দিকে এগিয়ে আসে।
সাদ চেঁচিয়ে ওঠে,
-“এই, আমার মুরগির বাচ্চার মতো গার্লফ্রেন্ডটারে কিছু করবি না, দূরে থাক..”
কিন্তু কে শোনে কার কথা। সুমনার হাত ধরে, দু’জনকেই জোর করে টেনে নিচে নিয়ে যেতে শুরু করে।
———
নিচের তলায় সবাইকে বসিয়ে রেখে, পকেট আর ব্যাগ খুঁটে খুঁটে টাকা, মোবাইল যা কিছু আছে সব লুটে নিচ্ছে। একদল ডাকাত প্রতিটি দোকানে ঢুকে লুটপাট চালাচ্ছে। রুদ্র আর ফারহানকে এক জায়গায় বেধে রেখেছে,
-“আহা এক সোনার ডিম ধরতে এসে দুটি পেয়ে গেলাম, এবার তো কোটিপতি হয়ে যাবো।”
রুদ্র রাগে কিরমিরিয়ে ফিসফিসিয়ে ফারহানকে বলে,
-“তুই না পুলিশে খবর দিয়েছিস? তোর পুলিশ কি ঠেলাগাড়ি করে আসছে নাকি?”
ফারহান দাঁত চেপে জবাব দেয়,
-“আমি কী জানি, সাও*য়ার নাতিরা এখনো আসছে না কেনো…”
হঠাৎ উপর তলা থেকে গুলির শব্দ ভেসে আসে।
ডাকাত দলের লিডার মুখ কুঁচকে যায়,
-“কী রে, উপরে আমাদের কেউ আছে?”
একটা ছেলে উত্তরে বলে,
-“না ভাই, আমরা সবাই তো এখানেই…”
লিডার এবার চোখ রাঙিয়ে উঠে দাঁড়ায়,
-“দাঁড়া, আমি গিয়ে দেখি কে ওখানে, তোরা সবগুলোকে চোখে চোখে রাখিস।”
বলেই দ্রুত উপরের দিকে উঠে যেতে থাকে। রুদ্র মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে, মেঘ যেন কিছুতেই বের না হতে পারে…
———
এদিকে মেঘ কাঁদছে। রুদ্রকে ধরে নিয়ে গেছে, এইটুকুই বুঝতে পেরেছিল। বাইরে থেকে দরজা আটকানো থাকায় খুলতে পারছে না। অনেকক্ষণ ধরে ধাক্কা ধাক্কি করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। অবশেষে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়ে।
ভীষণ অসহায় লাগছে নিজেকে।হঠাৎ চোখ পড়ে পাশে রাখা বন্দুকটার দিকে। তখন তুলে রেখেছিলো সে। এখন এটিই একমাত্র ভরসা।
মেঘ উঠে দাঁড়ায়। কাঁপা কাঁপা হাতে বন্দুকটা ধরে দরজার লক বরাবর গুলি ছোড়ে ‘ঠাস’ সাথে সাথে দু’পা পিছিয়ে যায় সে। দরজা খুলে গেছে। মেঘ দ্রুত বের হয়ে আসে। চারদিক তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। কিছুটা এগোতেই হঠাৎ একজন তার হাত চেপে ধরে ফেলে।
———
নিচে সবাই আতঙ্ক নিয়ে বসে আছে। হঠাৎ এক ঝাঁঝালো নারী কণ্ঠে সমস্ত কোলাহল থেমে যায়।সবাই একসাথে ঘুরে তাকায় সেই দিকটায়,
-“সবাই নিজেদের হাতের অস্ত্র নিচে রাখবি, নয়তো একে উড়িয়ে দিবো…….
চলবে…..
[২১০০+ শব্দের গল্প এতো টাইম লাগিয়ে লিখে নিজের ভুলেই ডিলেট হয়ে যাওয়ার যেই ব্যাপার..। ১০ টায় দেওয়ার কথা ছিলো তবে গল্প ডিলেট হয়ে যাওয়ার কারনে দিতে পারিনি। তাড়াহুড়ো করে আবারও লিখেছি আপনাদের জন্য , কেউ রাগ করবেন না…
]
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪১
-
আড়ালে তুমি পর্ব -২৮
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৬
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫০
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩২
-
আড়ালে তুমি পর্ব -২৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩১
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৯
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৮