Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪


#আড়ালে_তুমি |০৪|

#লেখনিতে_সাইদা_মুন

মেঘ সামনে তাকিয়ে দেখে এক অপরিচিত মুখ। ছেলেটিকে দেখেই সাথে সাথে গা থেকে ধাক্কা মেরে নিজেকে সরিয়ে নেয়। সিনিয়র কিনা এই ভেবে, আবার যদি রুদ্রর মতো রেগে যায়! তাই নিজেই তাড়াতাড়ি বলে ওঠে,

-” স্যরি স্যরি ভাইয়া, আসলে দেখতে পাইনি।”

এদিকে আসিফ মেঘের দিকে এমন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেন চোখ দিয়েই গিলে ফেলবে। মেঘ যে কিছু বলছে, সেদিকে তার কোনো মনোযোগ নেই। সে নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত মেঘকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে, একটা নোংরা কৌতূহল নিয়ে। মেঘ অস্বস্তিতে পড়ে যায়। গলা শুকিয়ে আসে।

লোকটা না সরছে, না কিছু বলছে। মেঘ আমতা আমতা করে পাশ কাটিয়ে যেতে চায়। কিন্তু ঠিক তখনই ছেলেটা তার সামনে এসে দাঁড়ায় আবার। মেঘ ভাবে হয়তো সেও সরতে যেতে সামনে পড়েছে, তাই অন্য পাশে যেতে চায়-কিন্তু না, এবারও সেই একই অবস্থা। মেঘের রাস্তা আটকে দেওয়া।

সে বুঝে উঠতে পারে না কী করবে এমন পরিস্থিতিতে।

অন্যদিকে রুদ্ররা ক্লাস থেকে বের হচ্ছিল। হঠাৎ সায়ান চোখ কুঁচকে বলে ওঠে,

-” এই মামা, ওইটা তো মেঘ না?”

রাহুল একটু এগিয়ে তাকিয়ে বলে,

-” হ্যাঁ রে, ওই মেয়েটাই তো লাগছে। কিন্তু আসিফ কেন ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে? ব্যাপারটা কী?”

-” এই ছেলের তো ক্যারেকটারের ঠিক নাই, আগেও অনেকবার মেয়েদের টিজ করেছে।” সারা ঘৃনার সূরে বলে।

রুদ্র ওদিকে তাকিয়ে তার চোয়াল শক্ত করে ফেলে। ভেতরটা হঠাৎ করে জ্বলে ওঠে-একটা অজানা রাগে। কোনো কথা না বলে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে দুজনের মাঝে এসে দাঁড়ায়, আসিফের মুখ বরাবর আর মেঘ রুদ্রের বলিষ্ঠ দেহের আড়ালে ।

মেঘ হঠাৎ সামনে রুদ্রকে দেখে একটু স্বস্তি পায়, ভাবে এখানেই অ্যাসাইনমেন্টটা দিয়ে সরে পড়বে।

আসিফ রুদ্রকে দেখে বিরক্ত হয়ে গম্ভীর গলায় বলে,

-” কি সমস্যা, সামনে থেকে সর।”

রুদ্র ঠান্ডা গলায় বলে,

-“তুই ওর পথ আটকেছিস কেন?”

আসিফ মুখ বেঁকিয়ে বলে,

-“সেই কৈফিয়ত কি তোকে দিতে হবে?”

-“অবশ্যই,”

-“তোর কথায় নাকি,  পুরো ভার্সিটি তর?, সবাই তোর চাকর? “

-” ওর পথ ছাড়,”

-” আমার যারে মন চায় তারে আটকাবো তাতে তর কি,  “

এর কথা কানে না দিয়ে রুদ্র এবার মেঘের দিকে ঘুরে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

-” তুমি এখানে কি করছো?”

মেঘ একটু নার্ভাস হয়ে বলে,

-” আমি… আসলে আপনার অ্যাসাইনমেন্টটা দিতে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম আপনি ক্লাসে থাকবেন না, তাই এখানেই…”

রুদ্র এক টানে মেঘের হাত থেকে খাতাটা নিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,

-” তোমাকে এত ভাবতে কে বলেছে? যাও, ক্লাসে যাও। ক্লাস শেষ হলে ক্যান্টিনে দেখা করো।”

মেঘ কোনো কথা না বলে মাথা নেড়ে উল্টো ঘুরে চলে আসে। মনে মনে বিড়বিড় করে,

-” বেয়াদব, অকৃতজ্ঞ একটা লোক! একটা ধন্যবাদও দিল না।”

রুদ্র আসিফের চোখের দিকে তাকিয়ে গলা শান্ত গলায় বলে,

-“মেয়েদের থেকে দূরে থাকবি। ডিসটেন্স বজায় রেখে চলবি নয়তো…”

-” নয়তো কি? “

জবাব না দিয়ে চোখ টিপে পাশ কাটিয়ে চলে  যেতে যেতে আসিফের কানের কাছে বলে যায়, 

-” রুদ্র চৌধুরীর জিনিসে নজর দিবি না, চোখ তুলতে সময় লাগবে না… “

, বাকিরাও পেছন পেছন চলে যায় তবে কেউ এই কথাটি শুনেনি আসিফ ছাড়া।

আসিফ তখন ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

-” আমি যা কিছুতে চোখ দেই, সব তোরই হয়ে যায়, রুদ্র। ডিপি হওয়ার কথা আমার ছিল তুই হয়েছিস , সবার প্রিয় হয়েছিস… কিন্তু বারবার তোকে জিততে দিব না।”

-” এই তুশার এদিকে আয়, মেয়েটা আমার চাই। ওর উপর নজর রাখবি।”

সঙ্গে থাকা তুশার নিচু গলায় বলে,

-” ঠিক আছে ভাই।”

————–

মেঘ ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে যেতে চায়নি, কিন্তু সুমনা বারবার জোর করতে থাকে,

-” প্লিজ চল না, আজ সারাদিন ক্রাশটাকে দেখিনি, একটু কাছ থেকে দেখবো।”

-” তোকে কে মানা করছে? গিয়ে কোলে উঠে বসে থাক, আমাকেই বা টানছিস কেন? ওই লোক আবার না জানি কী বলে বসে!”

-” তুই না গেলে আমরা যাব কীভাবে? তোর অজুহাতেই তো চান্স পাচ্ছি। আয় আয়, এবার যদি অ্যাসাইনমেন্ট দেয়, আমি তোরে হেল্প করবো নে।”

পিহু, সুমনার কাকুতি-মিনতি দেখে বলে,

-” আরে মেঘ, চলো না, বেচারি এতো করে বলছে যখন…”

মেঘ বাধ্য হয়ে তাদের সঙ্গে ক্যান্টিনে যায়। ভেতরে ঢুকেই এক পাশে তাদের আড্ডা দিতে দেখা যায়। মেঘ একটু এগিয়ে নরম স্বরে জিজ্ঞেস করে,

-” রুদ্র ভাইয়া ডেকেছিলেন যে…”

রুদ্র কথার মাঝেই মেঘের কণ্ঠ শুনে তার দিকে তাকায়। এবার ভালো করে দেখে মেয়েটা কালো সালোয়ার কামিজ পরা, চুল বেনি করা, মাথায় কালো ওড়না, এক পাশে ঝুলন্ত ব্যাগ। 

-” এদিকে আসো।”

মেঘ সামনে এগিয়ে যায়, পিহু আর সুমনাও তার সঙ্গে যায়।

রুদ্র সরাসরি মেঘকে উদ্দেশ করে বলে,

-” তোমার নাম্বারটা দাও।”

সঙ্গে সঙ্গে সবাই এমনভাবে তাকায় যেন ভূত দেখেছে, যেন এলিয়েন ল্যান্ড করেছে। রুদ্র তাদের চাহনি দেখে বিরক্ত হয়ে বলে,

-” আজব, এভাবে তাকানোর কী আছে? আমার কী নতুন করে রূপ বেরিয়েছে?-“

সায়ান বলে,

-” রূপ বের হোক আর না হোক, এই রুদ্রটাকে নতুন লাগছে।”

রাহুল এবার রুদ্রর কপালে-গালে হাত বুলিয়ে দেখে, ঠিক আছে তো?

-” আরে সর, আমি প্রেম করতে বলিনি, দরকারে ওকে কল দিয়ে আনাতে পারবো তাই নাম্বার চেয়েছি। এছাড়া, আমার ওর প্রতি অন্য কোনো ইন্টারেস্ট নেই।” (মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে)

মেঘ মনে মনে বলে,

“হুহ! আমারও তোর উপর ইন্টারেস্ট নেই, শালার সানডা চৌধুরী অরফে করলা।”

-” কী হলো? নাম্বার দাও।”

মেঘ আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনই সুমনা ঝট করে মেঘের নাম্বার বলে দেয়।

মেঘ রাগে চোখ বড় বড় করে তাকায়, কিন্তু সুমনার কোনো পাত্তাই নেই।

রুদ্র নাম্বার নিয়ে একবার মিসড কল দিয়ে বলে,

-” সেভ করে নিও। এবার যেতে পারো।”

মেঘরা বেরিয়ে আসে।

সুমনা বলে,

-” বইন, তোর কপালের লগে আমার কপালটা একটু ঘষা দে, কোনো কষ্ট ছাড়াই রুদ্র ভাইয়ার নাম্বার পেয়ে গেলি। আর কত মাইয়া যে ওইটার নাম্বারের জন্য ঘোরে!শুন আমাকে নাম্বারটা সেন্ড করে দিস। “

সুমনার কথা শুনে পিহুও বলে,

-“আসলেই, আমাদের মেঘের মধ্যে কিছু স্পেশাল আছে, নয়তো আমার নিরামিষ ভাই কীভাবে হঠাৎ করে কোনো মেয়ের সঙ্গে কথা বলে।”

পিহুর কথা শুনে মেঘ আর সুমনা দুজনেই তাকায় সন্দেহভরা চোখে।

-” ‘আমার ভাই’ মানে? রুদ্র চৌধুরী তোর ভাই?”

পিহু থমকে যায়,

-” আরে না না! মানে রুদ্র ভাই তো সিনিয়র, আমাদের তো ভাইই লাগে। সেই হিসেবে বললাম। গাধাগুলা, কথার মানে বুঝিস না।”

পিহু কথার গোঁজামিল দিয়ে পরিস্থিতি সামলে নেয়। তারপর সবাই যার যার পথে চলে যায়।

পিহুর বাসা থেকে গাড়ি আসে, সে চলে যায়। সুমনাও ফিরে যায়।

রয়ে যায় মেঘ। সে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে।

ঠিক তখনই পাশে কেউ এসে দাঁড়ায়। তাকিয়ে দেখে, আগের সেই ছেলেটা। ছেলেটা মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে বলে,

-” হেই, আই এম আসিফ মাহমুদ। আর তোমার নাম?”

মেঘের কেন জানি ছেলেটার চাহনি তার একদম ভালো লাগছে না। হাত না বাড়িয়ে জোরপূর্বক হেসে বলে,

-” আমি মেঘ।”

আসিফ হাত সরিয়ে নেয়।

-” কোন ডিপার্টমেন্টে?”

-” জি, অ্যাকাউন্টিং-এর প্রথম বর্ষে।”

-” ওহ, এখানে বুঝি রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছো?”

মেঘের মন চায় বলে দিতে, “দেখছিসই যেহেতু আবার জিজ্ঞাসা করছিস কেন ফালতু?”, কিন্তু ভদ্র মেয়ের মতো বলে,

-” জি।”

ঠিক তখনই একটা খালি রিকশা চলে আসে। মেঘ তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে।

আসিফ দাঁড়িয়ে থাকে, মেঘের যাওয়া দিকে তাকিয়ে,

-” এই পাখিটাকে তো আমার খাঁচায় আটকে ফেলতেই হবে… খুব শীঘ্রই।”

চলবে……

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply