#আড়ালে_তুমি |৩৮| (সারপ্রাইজ স্পেশাল)
#_সাইদা_মুন
সকাল থেকে সবাই ব্যস্ত, রুদ্র ডেকোরেশনের লোকেদের সাথেই দৌড়াচ্ছে। পুলের অপর পাশে অ্যারেঞ্জ করা হয়েছে সব। মেঘ বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই কখন থেকে রুদ্রকে দেখে যাচ্ছে। কালো ট্রাউজার আর কালো টি-শার্ট পরা, ঘেমে টি-শার্ট একদম শরীরের সাথে লেগে আছে, চুলগুলো এলোমেলো। গরমে ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে, একটু পরপর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছে। মেঘ এক হাত গ্রিলে রেখে ভর দিয়ে বেশ মনোযোগসহ দেখছে।
হঠাৎ পিহুর ডাকে ফিরে তাকায়। পিহুকে বেশ খুশি খুশি লাগছে, তা দেখে মেঘ এগিয়ে যায়,
-“কি ব্যাপার এতো খুশি লাগছে যে…”
পিহু এক্সসাইটেড হয়ে বলে,
-“জানিস আজকে কে আসবে..?”
মেঘ ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“না তো, কে..?”
-“আরে ফারহান, যে উনিও আসবেন।”
মেঘ অবাক হয়ে বলে,
-“কি বলিস, তোকে কে বললো? আর উনাকে ইনভাইট কে করলো?”
পিহুও কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলে,
-“শুনেছি ভাইয়া নাকি উনাকেও ইনভাইট করেছে। আব্বু না করেছিল, তাও করেছে। নিশ্চয় কোনো না কোনো কারণ আছেই। সে যাই হোক, আমি না একটা জিনিস ভাবছি…”
-“কি..?”
পিহু কিছুটা ইতস্তত করে বলে,
-“ভাবছি আজকেই উনাকে প্রপোজ করবো…”
-“কি বলিস! কেউ দেখতে পারলে বাঁশ খাবি। আর উনি যদি সিনক্রিয়েট করে..?”
-“আরে না, তেমন কিছু…”
-“কে কি সিনক্রিয়েট করবে..?”
রুদ্রের গলায় দুজনেই চমকে যায়, শুনে ফেললো নাকি কিছু। পিহু আমতা আমতা করে বলে,
-“না মানে, ওই আরকি, কিছু না। আমি আসছি…”
বলেই পিহু কেটে পড়ে। রুদ্র সেদিকে একবার তাকিয়ে আবার মেঘের দিকে আসে। মেঘ দ্রুত জিজ্ঞেস করে,
-“ঠান্ডা পানি দিবো? নাকি শরবত দিবো..?”
রুদ্র আলতো হেসে বলে,
-“আপাতত আমাকে একটু টাইম দিলেই চলবে..”
মেঘ ফিক করে হেসে দেয়। মেঘের নজর যায় রুদ্রের হাতের অনেকগুলো গোলাপ ফুলের দিকে। দেখে তার ভীষণ লোভ লাগলো একটা গোলাপ নেওয়ার। মিনমিনিয়ে রুদ্রকে বলে,
-“আমাকে একটা দিবেন… প্লিজজজ…”
রুদ্র মেঘের কথায় হঠাৎ গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-“না, দিবো না..”
সাথে সাথে মেঘের মুখটা চুপসে যায়। চুপচাপ বসে আছে মেঘ, সামনে রুদ্র কাঁচি আর সুই-সুতা দিয়ে কি যেন করছে, বেশ কিছুক্ষণ দেখার পর বুঝলো হাতের বালা বানাচ্ছে গোলাপ দিয়ে। বানানো শেষ হতেই মেঘের হাত টেনে বলে,
-“আমি তোমাকে দিবো না, আমার বউকে দিবো…”
বলেই মেঘের হাতে গোলাপ দিয়ে বানানো বালাটা পরিয়ে দেয় যত্নসহ। মেঘ প্রথমে অবাক হলেও মুহূর্তে খুশি হয়ে যায়। খুশির ঠেলায় একবার হাতের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার রুদ্রের দিকে, মনে মনে ভাবে
“তার মানে উনি এইগুলো আমার জন্যই এনেছে, আবার এতো এফোর্ট দিয়ে নিজের হাতেই বানালো..”
রুদ্র পরানো শেষ করে মেঘের হাতে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়। মেঘের দিকে তাকাতেই দেখে মেঘের মুখে হাসি, তবে চোখে পানি চিকচিক করছে,
-“কি ব্যাপার, কাঁদছো? পছন্দ হয়নি?”
মেঘ রুদ্রকে আলতোভাবে জড়িয়ে বলে,
-“অনেক অনেকককক পছন্দ হয়েছে, এইটা আমার দেখা বেস্ট ফুলের বালা..”
রুদ্র মেঘের কপালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়, বেশ কিছুক্ষণ পর রুদ্র বলে,
-“তা বউ, আপনার হলে আমাকে যদি একটু ছাড়তেন। নিচে ডেকোরেশনের লোক আমার জন্য ওয়েট করছে..।”
মেঘ সাথে সাথে ছেড়ে দেয়, লজ্জায় মাথাটা নিচু করে নেয়। রুদ্র মেঘের গাল টেনে উঠে যেতে যেতে বলে,
-“বারান্দায় আর দাঁড়াতে হবে না, বাইরে অনেক রোদ…”
মেঘ চমকে তাকায়, অবাক হয় ভীষণ,
-“তার মানে উনি আমাকে দেখেছে, তবে একবারও তো দেখলাম না আমার দিকে তাকাতে। কিন্তু… ছি! আমি ওভাবে তাকিয়ে ছিলাম, কি না কি ভাবছে…”
———
সব কাজ শেষ হতে হতে বিকেল হয়ে গেছে। বাড়ির মহিলারা সবাই রেডি হচ্ছে, সবাই নেভি ব্লু কালারের ড্রেস পরবে, বড়রা শাড়ি আর মেঘ, পিহু, সামিয়া গ্রাউন। ছেলেরাও সেইম কালারে ফরমাল গেটআপ নিবে।
রুদ্র একটু আগে রুমে এসে গোসলে ঢুকেছে। মেঘ আয়নার সামনে বসা, নিজে নিজেই মেকআপ করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে রুদ্র গোসল সেরে বেরিয়ে আসে। ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দেয়, কিছু সময় চোখ বন্ধ রাখে। আবার চোখ খুলে পাশে তাকায়, সাথে সাথে রুদ্রের বুকে ধক করে ওঠে। তার সামনে ব্লু ফেয়ারি বসে আছে, যে নিজেকে আরও গুছিয়ে তুলছে। রুদ্র বিছানা থেকে উঠে মেঘের পিছে গিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়ায়, আয়নায় তার প্রেয়সীকে দেখছে।
মেঘ আয়নায় রুদ্রের প্রতিচ্ছবি দেখে বলে,
-“কি ব্যাপার রেডি হননি? বিছানায় আপনার কাপড় রাখা আছে দেখ…”
মেঘের কথা অফ হয়ে যায় রুদ্রের ছোঁয়ায়। আলতো হাতে মেঘের ইয়াররিং পরিয়ে দিচ্ছে রুদ্র, পরানো হতেই কানের লতিতে ছোট একটা চুমু খায়। মেঘ আবেশে চোখ বুজে নেয়, মুখে মিষ্টি একটা হাসি। তারপর রুদ্র নেকলেসটাও নিয়ে মেঘের গলায় পরিয়ে দেয়। মেঘকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
-“মাশাল্লাহ…”
ড্রেসিং টেবিল থেকে কাজল নিয়ে আঙুল দিয়ে মেঘের কানের পেছনে লাগিয়ে বলে,
-“নজর যেন না লাগে তাই নজর টিকা..”
মেঘ রুদ্রের বাচ্চামো দেখে হেসে ফেলে। রুদ্রও হাসে, মুহূর্তে আবার বলে,
-“চুল কি খোলা রাখবে?”
মেঘ আগের জায়গায় বসে চুল আচড়ে বলে,
-“না খোঁপা করবো, একটু পিহুকে ডেকে দিবেন? চুলটা বাঁধতে হেল্প করবে।”
রুদ্র দ্রুত বলে,
-“কেনো, আমাকে বলো কিভাবে করতে হবে। আমি করে দিচ্ছি..”
মেঘ ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“আপনি পারবেন?”
-“বলেই দেখো..”
তারপর মেঘ বলে বলে দিচ্ছে, রুদ্র সেভাবেই চুলে প্রথমে বেণী করে। লম্বা চুল হওয়ায় বেণী করতে করতেই বেচারা হাঁপিয়ে উঠেছে। মেঘ রুদ্রের অবস্থা দেখে খোঁচা মেরে বলে,
-“সামান্য বউয়ের চুলই সামলাতে পারছেন না, আর দেশ সামলাবেন কিভাবে মন্ত্রী মশাই..”
রুদ্র বেণী বাঁধা শেষ করে, চুলগুলো উপরে তুলে খোঁপার মতো করে চুল ঘোরাতে ঘোরাতে বিরবিরিয়ে বলে,
-“বউ সামলানো থেকে দেশ সামলানো হাজার গুণে সহজ..”
-“কিছু বললেন..?”
-“না না, এখন কি করবো..?”
মেঘ চুলগুলো ধরে বলে,
-“হয়েছে, এবার আর কিছু লাগবে না। ক্লিপ আমিই মারতে পারবো, আপনি রেডি হয়ে নিন..”
রুদ্র মাথা নেড়ে নিজের কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। মেঘের রেডি হওয়া শেষ, আয়নায় নিজেকে দেখে নেয় কয়েকবার।
রুদ্র বের হতেই মেঘ এগিয়ে গিয়ে তার শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিয়ে কোট পরিয়ে দেয়। রুদ্র চুলগুলো সেট করে মুখে হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগায়। ঘড়ি পরতে পরতে নিজের জুতা খুঁজে। মেঘ তা বের করে দিতেই সে পরে নেয়। মেঘ মুখটা ভোঁতা করে রেখেছে, তা দেখে রুদ্র জিজ্ঞেস করে,
-“কি হয়েছে..?”
মেঘ মনমরা হয়ে বলে,
-“আপনি এভাবে যাবেন?”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“কেনো, খারাপ লাগছে?”
মেঘ মুখ বেঁকিয়ে বিরবিরিয়ে বলে,
-“যেমন লাগছে, মেয়েরা চোখ দিয়ে গিলে খাবে, এমনি আইসা উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে..”
আস্তে বললেও রুদ্রের কানে ঠিকই যায়, রুদ্র হেসে বলে,
-“আজকে তুমি পাশে থেকো, তাহলে কেউ কাছে ঘেঁষার চান্স পাবেনা..”
———
গেস্টরা সবাই আসা শুরু করেছে, মিডিয়ার লোকও চলে এসেছে, বাড়ির সবাইও রেডি। ড্রইং রুমে এসে একত্রিত হয়। শুধু মেঘ আর রুদ্রের আশা বাকি, ঠিক তখনই সিঁড়ি দিয়ে দু’জনে একসাথে নেমে আসছে। বাড়ির সবাই সেদিকে তাকায়, সবার মুখ থেকে একটাই শব্দ বের হয়,
-“মাশাল্লাহ, কারো নজর না লাগুক..”
তাহমিদ পাশ থেকে শিস বাজিয়ে ওঠে, সাথে সাদও। পিহু ফোনের ক্যামেরা অন করে বলে,
-“সেই সেই..”
এদিকে এদের কাণ্ডে মেঘ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। তবে রুদ্র তার একই ভঙ্গিমায়, চেহারায় গাম্ভীর্য, সাথে অ্যাটিটিউড। রুদ্ররা নামতেই সিদ্দিকা বেগম এগিয়ে এসে কি যেন দোয়া পড়ে মেঘ-রুদ্রকে ফুঁ দিয়ে দেয়। তবে এসব কাহিনি সামিয়া অসহ্য চোখে দেখছে।
সব মেহমানরা চলে এসেছে, সবাই চৌধুরী পরিবারের অপেক্ষায় এখন। এরশাদুল চৌধুরী সবাইকে ইশারা করে নিজে সবার আগে হাঁটা ধরে, তার পিছু পিছু বাকিরাও বের হয়। তাদের আসতে দেখে সব লাইট, ক্যামেরা তাদের দিকেই। উপস্থিত সকলেই হাততালি দিয়ে ওঠে। একে একে সবাই চলে আসে। সামনে যেতেই সুমনা রিকের দেখাও পেয়ে যায়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে রুদ্রর বন্ধুরা, সাথে ভার্সিটির আরও অনেক পরিচিত মুখই আছে, অনেক টিচাররাও এসেছে। নামিদামি লোক তো আছেই। ফারহান রাশেদ ভূইয়াও এসেছে। কিছুটা সামনে যেতেই কাউকে দেখে ভীষণ অবাক হয়ে যায় মেঘ। দ্রুত এগিয়ে, আবেগে চোখের কোনায় পানি চলে আসে,কতোদিন পর দেখলো।
-“আম্মু তুমি এখানে… কখন আসলে?”
মাহমুদা বেগম মেঘের কথায় পাশ ফিরে তাকিয়ে মেঘকে দেখে নিজেও চমকে যায়। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখছে তিনি। বেশ বুঝতে পারে মেয়েটাকে রাণী বানিয়ে রেখেছে তারা। তিনি মেঘের মুখে হাত দিয়ে বলেন,
-“রুদ্র বাবা আমাদের দাওয়াত দিয়েছে, বারবার করে বলেছে আসতেই হবে তাই এসেছি। কেমন আছিস?”
মেঘ নিজেকে শক্ত করে বলে,
-“তা আর জেনে কি করবে? এতোদিন একটা খোঁজও নিলেন না। মানুষ তো বাসার ধারের কুকুরটাকেও একদিন না দেখলে তার খোঁজ নেয়, আর আমি তো তোমার পেটের সন্তান ছিলাম…”
মাহমুদা বেগমের মুখটা ম্লান হয়ে যায়। পাশ থেকে রিমির কথা ভেসে আসে, মেঘ সেদিকে ফিরে,
-“বাহ, এখানে এসে মুখে তো দেখছি বেশ কথা ফুটেছে…”
মেঘ হালকা হেসে বলে,
-“ফুটবেই তো, এ বাড়িতে আমার মুখের কথারও মূল্য আছে। ও বাড়ির মতো নাকি…”
রিমি কিছু বলতে যাবে, তখনই রুদ্রের মা এগিয়ে আসে। মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“মেঘ আসো, কিছু খাবে.. বিকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি কারোই, পিহুরা ওদিকটায় আছে, আসো…”
মাহমুদা বেগম ও তাদের পরিবারের বাকিরা অবাক হয়ে দেখছে। মেঘ মাথা নেড়ে বলে,
-“আম্মু, ইনি হচ্ছেন আমার মা…”
সিদ্দিকা বেগম মাহমুদা বেগমকে দেখে খুশিমনে আলতো জড়িয়ে ধরেন, তারপর টুকটাক কথা বলেন।
তখনই মাইকের এনাউন্সমেন্টে সেদিকে ফিরে সবাই। এরশাদুল চৌধুরী স্টেজের মাঝে দাঁড়িয়ে, সব লাইট ক্যামেরার ফোকাস তার দিকেই,
-“সবাইকে শুভ সন্ধ্যা। আজকের এই আনন্দঘন আয়োজনে উপস্থিত থাকার জন্য আপনাদের সবাইকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আজ আমরা আমার ছেলের সাফল্য অর্জনের খুশির সাথে আরও একটি বিশেষ খবর আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। আমাদের স্নেহের ছেলে রুদ্র চৌধুরী তার নতুন জীবনে পা রেখেছে, পারিবারিক ভাবে আমরা আকদ করিয়ে রেখেছি। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা অনুষ্ঠান করে আমাদের পুত্রবধূকে সসম্মানে ঘরে তুলবো…”
এরশাদুল চৌধুরীর কথায় আশেপাশে বেশ গুঞ্জন পড়ে যায়। “কে সেই মেয়ে যে রুদ্র চৌধুরীর বউ?” অনেকে জিজ্ঞেস করছে।
এদিকে মেঘ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে, তবে কি তার বিয়ের অনুষ্ঠান হবে? সে অবাক, তবে কি এটাই রুদ্রের সারপ্রাইজ? মুহূর্তেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
তখনই রুদ্র মেঘকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে আসে। মেঘের মাকে দেখে সালাম দিয়ে মেঘকে বলে,
-“তোমরা এখানে, আর আমি সব জায়গায় খুঁজছি। চলো ওদিকটায়। আম্মু তোমাকে ছোট মা খুঁজছে।”
মেঘ রুদ্রের সাথে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করে,
-“তাহলে এটাই আপনার সারপ্রাইজ?”
রুদ্র মেঘের গ্রাউনটা সামনের দিকে হালকা উঁচু করে ধরে যেন পড়ে না যায়। সেই অবস্থায় বলে,
-“উহু ম্যাম, এটা তো আব্বুর পক্ষ থেকে। আমার সারপ্রাইজ এখনো বাকি…”
পেছনে মাহমুদা বেগম ও তাদের পরিবারের সবাই বিস্ময় নিয়ে দেখছে। যেই মেয়েকে তারা পায়ের নিচে রাখতো, তাকে আজ সবাই মাথায় করে রাখছে।
এরশাদুল চৌধুরী নেমে গেছেন, সাদ স্টেজে উঠে মাইক নিয়ে বলছে,
-“সো, আমাদের বিউটিফুল কাপল এখনই আমাদের মাঝে হাজির হবে।”
সাদের কথা শেষ হতেই রুদ্র মেঘের হাত ধরে স্টেজে উঠে। মেঘ কিছুটা অপ্রস্তুত, কিন্তু রুদ্র পাশে থাকায় কিছুটা সাহস পায়। তারা স্টেজে দাঁড়াতেই সবাই চিৎকার করে উঠে। একেকজন বলছে,
“পারফেক্ট কাপল!”
“মেইড ফর ইচ আদার!”
রুদ্র মাইক নিয়ে বলে,
-“হ্যালো এভরিবডি! দিস ইজ মি রুদ্র চৌধুরী অ্যান্ড সি ইজ মাই ওয়াইফ, মিসেস মেঘ চৌধুরী।”
রুদ্র একবার মেঘের দিকে ফিরে তাকায়। খুশিতে মুখ থেকে হাসি সরছেই না মেঘের। রুদ্র মুচকি হেসে আবার বলে,
-“আপনাদের সবার কাছে একটা অনুরোধ, প্লিজ সবাই সাদের সাথে আমাদের বাড়ির পেছনের দিকটায় চলে আসবেন…”
তারপর ফারহানের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
-“এন্ড মিস্টার ফারহান রাশেদ ভূইয়া, আপনাকে তো মাস্ট বি যেতেই হবে…”
সবাই রুদ্রের কথায় সেদিকে চলে যায়, ফারহান রুদ্রের দিকে একবার তাকিয়ে সেও সেদিকে যায় দেখতে, ঘটবে কি..
মেঘ ভ্রু কুঁচকে তাকায়, আচমকাই পিহু এসে কালো কাপড় দিয়ে তার চোখ ঢেকে দেয়।
-“আরে কি করছিস তুই!”
মেঘ অবাক গলায় বলে উঠতেই, তার কথার মাঝেই হঠাৎ রুদ্র এসে তাকে কোলে তুলে নেয়।
-“কি করছেন! নামান প্লিজ।”
মেঘের গলার টোনে অস্থিরতা, কিন্তু রুদ্র একটাও কথা না বলে সোজা হেঁটে চলে যেতে থাকে। চারপাশের আওয়াজ, কৌতূহলী কণ্ঠস্বর, হাসি, সব থেমে যায় যেন। এক অদ্ভুত উত্তেজনা, থমথমে পরিবেশ জমে ওঠে মুহূর্তটা।
ঠিক একটা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছেই রুদ্র ধীরে ধীরে মেঘকে নিচে নামিয়ে দেয়। তখনও মেঘের চোখ ঢাকা। পিহু এসে তার কাঁধে আলতো করে হাত রাখে, তারপর একটু সামনে এগিয়ে দেয়। রুদ্র সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, কিছু একটা ইশারা করে পিহুকে।
পিহু ধীরে ধীরে মেঘের চোখের উপর থেকে কালো কাপড়টা সরিয়ে দেয়। মেঘ পিটপিট করে চোখ খোলে, আর মুহূর্তেই যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে তার।
সামনে লাল কার্পেট বিছানো, চারপাশে ঝিকিমিকি ফেয়ারি লাইটের আলো, অজস্র মোমবাতি আর ফুলে ঘেরা চারদিক। মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র, হাতে মাইক। তার পেছনের ব্যানারে স্পষ্ট লেখা “Will you marry me?”
রুদ্রের চোখে অদ্ভুত এক স্থিরতা, ঠোঁটে হালকা হাসি। রুদ্র গাওয়া শুরু করে,
“নীলচে আকাশ ধূসর কালো
মেঘে ঢেকে যায় শহর জুড়ে
বৃষ্টি এসে তোমায় ছুঁয়ে যায়…”
এক হাত মেঘের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে আবার গাওয়া শুরু করে,
“ধরো না আমার এ হাত,
বলো না হবে কি আমার,
করবো না চোখের আড়াল
তোমায় কখনো…”
মেঘ আবেগে মাথা নেড়ে নেড়ে রুদ্রের বাড়িয়ে দেওয়া হাতটি শক্ত করে ধরে।
রুদ্র মুচকি হাসে, আবারও সুর ধরে,
“বলোনা মনে কি রাখবে,
একটু ভালো আমাকে বাসবে,
বলোনা থেকে কি যাবে পাশে চিরকাল……”
মেঘের হাত ছেড়ে মাইক সিডির একজনকে দিয়ে হঠাৎ এক হাঁটু গেড়ে বসে যায় মেঘের সামনে,
-“Will you marry me… again?”
মেঘ এক পা পিছিয়ে যায়। যেন বিশ্বাস করতে পারছে না সে।
একটার পর একটা চমকে সে হতবাক। সে চোখের পলকে এদিক-সেদিক তাকায়, যেন নিশ্চিত হতে চাইছে এগুলো কল্পনা না বাস্তব।
রুদ্র আবারও বলে, এবার আরও নরম স্বরে,
-“Will you marry me again, Megh?”
পাশ থেকে শান্তরা হৈ-চৈ করে ওঠে,
-“ভাবি রাজি হয়ে যান জলদি, বেচারার পা ব্যথা হয়ে যাচ্ছে…”
সুমনা চিল্লিয়ে বলে,
-“মেঘ দুলাভাইটাকে আর কষ্ট দিসনা ফাস্ট..”
রুদ্রের দাদিও মজা করে বলেন,
-“নাতবউ দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তাড়াতাড়ি.. “
মেঘ চমকে ওঠে, মুখে চাপা হাসি ফুটে ওঠে। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় রুদ্রের দিকে। চোখ টলমল, ঠোঁট কাঁপছে। সে হাত বাড়িয়ে দেয়, মাথা একসাথে অনেকবার নেড়ে বলে,
-“Yes… yes, I will.”
চারপাশে করতালির শব্দ, উল্লাস, চিৎকার। রুদ্র মেঘের হাত ধরে আস্তে করে রিং পরিয়ে দেয়। মুহূর্তটাই যেন মেঘের কল্পনার কোনো দৃশ্য। মেঘ এবার আর আবেগে থেমে থাকতে পারে না। তার চোখ থেকে টুপটাপ করে জল পড়তে থাকে। সে নিজেও হাঁটু গেড়ে বসে যায় রুদ্রের সামনে।
মুখে হাসি নিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে বলে,
-“এইটা… এইটা আমার ড্রিম ছিল।”
তার কণ্ঠ ভাঙা ভাঙা। রুদ্র কোনো কথা না বলে এক হাতে আলতোভাবে তাকে জড়িয়ে ধরে। তারপর আস্তে ধীরে টেনে তোলে দাঁড় করিয়ে, দু’হাত ধরে বলে,
-“হুশশ… একদম কাঁদবে না। এখন থেকে সারাজীবন আপনার মুখের মিষ্টি হাসিটাই দেখতে চাই, মিসেস রুদ্র চৌধুরী।”
মেঘ কিছু বলতে পারে না, শুধু কাঁদতে কাঁদতেই মাথা নেড়ে হাসে। সবাই ভীষণ খুশি, তাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। ক্যামেরাম্যান তাদের কাপল পিক, ফ্যামিলি পিক তুলছে, ফ্রেন্ডরাও আছে। সাথে কিছু ট্রেন্ডিং কাপল ট্রেন্ড ভিডিও ও করে নিচ্ছে, এক কথায় মেঘের যা যা ইচ্ছে সব পূরন করার মিশনে নেমেছে রুদ্র।
তবে এই আনন্দ মেনে নিতে পারেনি হাতে গোনা কয়েকজন। তার মধ্যে সামিয়া, ফারহান তো আছেই। তারা রাগী চোখে তাকিয়ে দেখছে, কোনোভাবে শুধু হজম করছে মুহূর্তটা।
ফারহান তখন গটগট পায়ে অন্য পাশে চলে যায়। তাকে সেদিকে যেতে দেখে পিহুও পিছু নেয়….
চলবে……
[ রুদ্রের সারপ্রাইজ আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে অবশ্যই বলবেন…]
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪৪
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৯
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৫
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৫
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১৮
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৫
-
আড়ালে তুমি আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩