Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৭


#আড়ালে_তুমি |৩৭|

#_সাইদা_মুন 

সকালের নাস্তা শেষ করে মেঘ দ্রুত কফি বানিয়ে নিয়ে যায় রুদ্রের জন্য। একটু পরই বেরিয়ে যাবেন। মেঘ ঘরে প্রবেশ করতেই দেখে রুদ্র খুব মনোযোগ দিয়ে মোবাইলে কিছু একটা দেখছে। এতটাই মনোযোগ, ঘরে যে মেঘ এসেছে সেই খেয়ালও নেই।

মেঘ সন্দিহান মন নিয়ে এগোয়, রুদ্রের পেছন থেকে উঁকি দিতেই দেখে, নোরা ফাতেহির নাচ দেখছে ফেসবুকে। মেঘের তো মাথাটা বেশ গরম হয়ে গেল। তবে কিছু বলে না, জুড়ে করে সাইড টেবিলে কফিটা রাখে। শব্দ হতেই রুদ্র সেদিকে ফিরে তাকায়, মেঘকে দেখে সাথে সাথে ফোন অফ করে ফেলে।

-“আরে তুমি কখন আসলে…”

মেঘ ত্যাড়া ভাবে বলে,

-“সওয়াবের কাজে মগ্ন থাকলে দেখবেন কীভাবে কখন আসলাম, কখন গেলাম…”

বলেই মেঘ বেড়িয়ে যায়। এদিকে বেচারা রুদ্রের মাথার উপর দিয়ে গেলো,”বউ কি রেগে আছে? কিন্তু কেন?” এসব ভাবতে ভাবতেই কফি শেষ করে নিচে নামে। আশেপাশে মেঘকে না দেখে রান্নাঘরে যায়, দেখে বউ আর মা বেশ হেসে হেসেই গল্প করছে, সাথে কাজও। রুদ্রের মুখে হাসি ফুটে ওঠে, প্রত্যেকটা ছেলের শান্তি তো এখানেই।

গলা খাকারি দিয়ে বলে,

-“উহুম, মেঘ আমি বেরোচ্ছি।”

সাথে সাথে মা-চাচী জহুরি চোখে তাকায় রুদ্রের দিকে। রুদ্র তো তাদের তাকানো দেখে লজ্জা পেয়ে যায়। আমতা-আমতা করে বলে,

-“আ…আম্মু আসছি আমি…”

সিদ্দিকা বেগম ছেলেকে দেখে কড়া গলায় বলেন,

-“হয়েছে হয়েছে, এখন বউকে পেয়ে মায়ের কথা ভুলেই গেছিস…”

রুদ্র যেনো বিপাকে পড়ে গেলো, এখন কী বলবে বেচারার জানা নেই। তখনই এরশাদুল চৌধুরী এসে বলেন,

-“কেনো বউ, তোমাকে বলার জন্য তো আমিই আছি। ছেলে নাহয় ছেলের বউকেই বলুক।”

সিদ্দিকা বেগম খানিকটা লজ্জা পায় ছেলে-মেয়েদের সামনে স্বামীর এত সুন্দর ডাক শুনে। রুদ্র-মেঘ মুখ টিপে টিপে হাসছে। তারপর তারা বাপ-ছেলে বেড়িয়ে যায়।

পিহু-মেঘ বেরিয়ে পড়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। গাড়িতে বসে পিহুও নোরা ফাতেহির নিউ ডান্স ভিডিওটা দেখছে। মেঘ বিরক্ত হয়ে বলে,

-“এই মেয়ের নাচই দেখতে হবে? অন্য কেউ নাই…”

পিহু কিছুটা অবাক হয়ে বলে,

-“ওমা! এর ডান্স কি খারাপ? কী স্মুথ দেখ, দেখ… ফ্যান হয়ে যাবি। ভাইয়ারও তো ফেব…”

মুখ ফসকে বলে পিহু, নিজের মুখ আটকে দেয়। এদিকে মেঘ ভ্রু কুঁচকে বলে,

-“কি বলছিলি? থামলি কেনো বল…”

-“আরে না মানে কিছুনা…”

-“তুই কি বলবি?”

-“আরে মানে ভাইয়ারও নোরার ডান্স ভালো লাগে, এইটা প্লিজ বলিস না। এইটা ভাইয়ার সিক্রেট আমি তোকে বলেছি, জানলে আমার গর্দান যাবে…”

মেঘের যেনো মাথায় আগুন জ্বলছে। জামাই তার অন্য মেয়ের নাচ দেখবে? ফুঁস করে শ্বাস ছেড়ে দু’হাত ভাজ করে বলে,

-“সকালেও দেখলাম, এর নাচ দেখছে… এর পিছু কিভাবে ছাড়াই?”

পিহু অবাক হয়ে বলে,

-“মানে?”

-“মানে আবার কি? আমার জামাইর চোখ শুধু আমার দিকে থাকবে। অন্যদিকে গেলে আমার সহ্য হচ্ছে না। তাই এই মেয়ের নাচ দেখা অফ করাবো, কেমনে ভাবছি…”

পিহু কিছু একটা ভেবে বলে,

-“আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে, তবে তুই পারবি না, সিউর…”

মেঘ পিহুর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“তুই খালি বল, আমি সব পারবো…”

-“আরে না না, বাদ দে এসব, তোর দ্বারা সম্ভব না। তুই যে লজ্জাবতী…”

পিহুর তুচ্ছ কথায় যেনো মেঘের ইগোতে লাগে, ভাব নিয়ে বলে,

-“তুই বলেই দেখ, আমি সব পারবো…”

-“সিউর তো?”

-“হ্যাঁ, ড্যাম সিউর…”

তারপর পিহু মেঘের কানে কানে কিছু একটা বলতেই মেঘ চমকে উঠে,

-“ছি! কি বলিস…”

পিহু ভাব নিয়ে বলে,

-“দেখেছিস তো? পারবি না জানতাম। বাদ দে, ভাইয়া দেখুক…”

মেঘ হতাশ হয়ে বলে,

-“না না আমি পারবো…”

এরমধ্যে ভার্সিটিও চলে আসে। ক্লাস শেষ করে সবগুলো রিককে ধরে ট্রিট দিতে। তবে সে দেবে না বলে বসে আছে,

-“এই চিটার কালকে বলেছিস দিবি, তো এখন দিবি না মানে? তুই দিবি, তোর বাপ দিবে, উঠ।”

-“তোদের জন্য প্রেম করার আগেই ব্রেকআপ হয়ে গেছে, সো তোদের নো দেওয়া-দেওয়ি..”

সুমনা রেগে বলে,

-“এই কুদ্দুসের বাপ, তোর জন্য লাস্ট ক্লাস থেকে না খেয়ে আছি, তুই খাওয়াবি বলে। আর এখন তুই না করছিস!”

বান্ধবীদের জোড়াজুড়িতে রিক কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে বলে,

-“ওকে চল চল, খাওয়াবো আমি।”

তারপর সবাই মিলে ভার্সিটির পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে যায়। রিক তো বেশ খুশি,

-“নে নে, অর্ডার দে, যা খুশি অর্ডার দে। সব বিল আমি পে করবো।”

মেঘরা তো ভীষণ অবাক, এই ছেলে এমন অফার দিচ্ছে ভাবা যায়! তবে সুযোগ মিস করা যাবে না , সবাই মিলে উরাধুরা অর্ডার দেয়, একে আজ ফকির বানিয়েই ছাড়বে। কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার আসতেই সবাই খাওয়া শুরু করে। খাওয়ার শেষ পর্যায়ে, হঠাৎ রিক উঠে বলে,

-“এই তোরা খা, আমি সামনের দোকান থেকে মালাই চা নিয়ে আসি। ওখানের মালাই চা নাকি বেস্ট…”

সুমনা শুনে বলে,

-“ওকে ওকে, যা যা…”

রিক বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের খাওয়াও শেষ, তবে রিকের আসার নাম নেই। এদিকে ওয়েটার বিল দিয়ে গেছে। এভাবে আরও ৩০ মিনিট চলে যায়, ওয়েটার এসে কয়েকবার বলে গেছে, “আর কিছু লাগবে ম্যাম?” তারা বেশ বুঝছে ইনডিরেক্টলি বিলের কথা বলছে। এদিকে রিককে কল দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না  ফোন সুইচড অফ।

-“ভাই, এরে আর পাবি না। এই ছেলে আমাদের বাঁশ দিতেই এখানে এনেছে…”

মেঘ চিন্তিত হয়ে বলে,

-“এখন কী হবে! ৬ হাজার টাকা বিল হয়ে গেছে। তোদের কাছে কত আছে বের কর দেখি, হয় কিনা…”

সবাই ফাঁদে পড়ে নিজেদের টাকা বের করে, সব মিলিয়ে মাত্র ৫০০ টাকা হয়েছে। রিক খাওয়াবে বলেই তেমন টাকা আনেনি। তা দেখে একটা আরেকটার মুখের দিকে তাকাচ্ছে,

-“ভাই, ৫০০ টাকা দিলে লাথি মেরে রান্নাঘরে ঢুকিয়ে থালাবাসন ধোতে বলবে। এখন কী হবে এএএ, এই রিকের বাচ্চার মনে এত প্যাচ ছিল মাসুম, আমি জানলে খেতামই না…”

সুমনার কথায় সবাই আরও চিন্তায় পড়ে। তখন ওয়েটার আবার এসে বলে,

-“ম্যাম, বিলটা…”

সুমনা মুখ ফসকে বলে,

-“ইয়ে মানে ভাইয়া যে বিল দেবে, সে চলে গেছে…”

ছেলেটি উত্তেজিত হয়ে বলে,

-“কি! এখনই আপনাদের বিল দিতে হবে…”

বলেই ছেলেটি তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে। পিহু-মেঘ বেশ রেগে যায় সুমনার উপর, এমনি বাঁশ, তার উপর আরেক ঝামেলা এনেছে। নিজেরা যেমনেই হোক ম্যানেজ করতো, এর সামনে কীভাবে কী করবে! সবাই বেশ খারাপ পরিস্থিতিতে পড়ে। হঠাৎ পিহু বলে,

-“এই মেঘ, তুই ভাইয়াকে কল করে বল, টাকা পাঠাতে। আমি বললে ঝাড়ি দেবে…”

মেঘ চমকে বলে,

-“না না, আমি না…”

-“আরে বইন, এমন করিস না, প্লিজ সিচুয়েশন বুঝ…”

মেঘ উপায় না পেয়ে কল লাগায় রুদ্রকে। দুইবার রিং হতেই কল ধরে,

-“আরে আজকে সূর্য কোনদিকে উঠলো? বউয়ের থেকে কল আসলো যে!”

-“না মানে, একটা বিপদে পড়েছি…”

রুদ্র হাইপার হয়ে বলে,

-“কি হয়েছে? তুমি ঠিক আছো? কোথায় আছো বলো আসছি।”

-“আরে ঠিক আছি। আসলে রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছিলাম, টাকা নেই সাথে…”

রুদ্র ফুঁস করে শ্বাস ছেড়ে বলে,

-“এই ব্যাপার! বিকাশ নাম্বার দাও, দিচ্ছি…”

-“বিকাশ তো নেই…”

-“লোকেশন সেন্ড করো হোয়াটসঅ্যাপে…”

মেঘ কল কেটে তাই করে। তখনই সেই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে ফারহান, সাথে কয়েকজন লোক আছে। কথা বলতে বলতে ঢুকতেই মেঘদের দিকে নজর যায়। ক্লায়েন্টদের বলে সেদিকে এগোয়,

-“হেই, এনি প্রব্লেম?”

পিহু তো ফারহানকে দেখে অবাক, এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। কালো শার্ট, কালো প্যান্টে যেন হিরো হিরো লাগছে, মুখে গম্ভীর ভাব, চালচলনে একটা অ্যাটিটিউড আছে। এদিকে ওয়েটার উঠে বলে,

-“স্যার, এরা ৬০০০ টাকার বিল করেছে, এখন বলে টাকা নেই। টাকা দিতে পারবে না তো খেতে আসে কেন?”

ওয়েটারের কথায় পিহুর ধ্যান কাটে, বেশ রেগে যায়,

-“এই ছেলে, মুখ সামলে কথা বলেন! দুই মিনিট দাঁড়ান, আমার ভাই আসছে, টাকা পেয়ে যাবেন।”

ফারহান পকেট থেকে টাকা বের করে এগিয়ে দিয়ে বলে,

-“নাও, তাদের বিল। তাদের যেতে দাও…”

টাকাটা যেই ওয়েটার হাতে নিতে যাবে, হঠাৎ কারো কথায় থেমে যায়,

-“মিস্টার ফারহান, এর দরকার নেই। আমার বোন-বউয়ের বিল পে করার জন্য আমিই আছি।”

বলেই টাকা দিয়ে দেয় ওয়েটারকে। তারপর মেঘদের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে গাড়িতে উঠতে। তারাও বাধ্য মেয়ের মতো চলে যায়। রুদ্র ফারহানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,

-“ফলো করছিস বুঝি? লাভ নেই…”

বলেই হাঁটা ধরে। ফারহান পেছন থেকে হেসে বলে,

-“পাখি আমার কাছেই ঘুরে ফিরে চলে আসছে, আমার তো ফলো করতেও হচ্ছে না…”

রুদ্র হাত মুঠ করে গাড়িতে চলে আসে। মেঘদের দিকে ফিরেই এক ধমক দেয়,

-“এই, তোদের এত সাহস কে দিয়েছে একা একা রেস্টুরেন্টে যেতে?”

মেঘ-পিহু ভয়ে চুপসে যায়। তাদের চুপ দেখে আরও রেগে যায়। গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে,

-“আর কোনোদিন যদি দেখি এদিক সেদিক যেতে, পা কেটে রেখে দিবো…”

রুদ্রের ধমকে তারা চুপচাপ বসে আছে। সুমনাও বেশ ভয় পেয়েছে। তারপর সুমনাকে তার বাসায় ড্রপ করে মেঘদের বাসায় দিয়ে সে চলে যায়।

———

সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে রুদ্ররা। ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে, মেঘ সবার জন্য চা বানিয়ে আনে। আর রুদ্রকে তার কফি ধরিয়ে দেয়। এরশাদুল চৌধুরীর পাশে অনেকগুলো শপিং ব্যাগ, সবাইকে একে একে যার যারটা দিয়ে দেয়,

-“কালকের পার্টির জন্য এগুলো। কালকে অনেক সাংবাদিক, মিডিয়ার লোকেরাও আসবে , তাই সেদিনটা স্মৃতি হিসেবে রাখতেই আমার ইচ্ছা সবাই সিমিলার গেটাপে থাকার। বাকিটা যার যার ইচ্ছা…”

সবাই মূলত গোল মিটিং বসিয়েছে কালকের জন্য। এরশাদুল চৌধুরীর প্রস্তাবে সবাই রাজি, বেশ এক্সাইটেডও। রুদ্রকে দায়িত্ব দেয় ডেকোরেশনের দিক সামলাতে আর সাদকে খাবারের দিক। বাকি যা যা লাগে সব এরশাদুল আর এনামুল চৌধুরীই করবেন। এতক্ষণে সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়ে গেছে। পিহুও সুমনা আর রিককে বলে দিয়েছে। রুদ্রের ফ্রেন্ডরাও আসবে।

সব আলোচনা শেষ করতে করতে রাতের খাবারের সময় হয়ে যায়, তাই খাবার খেয়েই একেবারে যে যার রুমে যায়।

রুদ্র বেশ অনেকক্ষণ ধরে মেঘের অপেক্ষায় বসে আছে, তবে আসছে না। এদিকে মেঘ পিহুর রুমে দাঁড়িয়ে,

-“বইন, এইটা এমনি সিল্কের শাড়ি, আবার এভাবে পরাচ্ছিস? উনি দেখলে এক ধমক দেবেন।”

-“তোর মাথা, তুই কি কোথাও যাচ্ছিস? ভাইয়ার সামনে এমনি গেলে কিছু বলবে না। নাচের মেইন তো বডি স্টেপ, তাই যদি না বোঝা যায়, তাহলে তো ভাইয়া তোর নাচ দেখবেই না, ওই মেয়েরটাই দেখবে…”

পিহুর কথায় মেঘের মাথায় জিদ চেপে বসে,

-“না না আমি পারবো…”

শাড়ি পরা শেষ হতেই মেঘ গুটি গুটি পায়ে তাদের রুমে প্রবেশ করে, দরজা লাগিয়ে দেয়। হঠাৎ দরজা লাগানোর শব্দে রুদ্র ল্যাপটপে চোখ রেখেই বলে,

-“এতক্ষণে আসার সময় হলো…”

তবে মেঘের থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে মাথা তুলে তাকায়। সাথে সাথে রুদ্রের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। মেঘ নীল সিল্কের শাড়ি পরেছে, চুল খোঁপা করা। রুদ্র ঢোক গিলে বলে,

-“কি ব্যাপার? শাড়ি পরলে যে…”

মেঘ কিছুটা রাগী কণ্ঠে বলে,

-“সকালে দেখলাম অন্য মেয়ের ডান্স ভিডিও দেখে বেশ মজা পাচ্ছিলেন…”

মেঘের কথায় রুদ্রের শুকনো কাশি উঠে যায়। বউ দেখে ফেলেছে তার মানে। ল্যাপটপ বন্ধ করে সাইডে রেখে উঠে বলে,

-“ইয়ে মানে… তুমি যা ভাবছো আসলে তা…”

মেঘ একপা একপা করে রুদ্রের দিকে এগোয়। তা দেখে রুদ্র কিছুটা পিছিয়ে যায়,

-“হুশশ! কি মনে করেন, ঘরের বউ দুধভাত? এবার ঘরের বউয়েরটাই দেখবেন!”

বলেই রুদ্রের বুকে ধাক্কা মেরে তাকে বিছানায় বসিয়ে দেয়। তারপর সাউন্ড বক্সে গান ছাড়ে,

“Muchhon mein akad ke taav bhare,

jab mojadiya mein paav dhare…..”

গানের তালে তালে মেঘ নিজের স্টেপে নাচছে। একদম নিজের মতো করে, যেন চারপাশের কোনো কিছুতেই ওর কিছু যায় আসে না। চুলের খোঁপা খুলে নেমে পড়া চুল আর প্রতিটা ঘুরে পড়া ভঙ্গিমায় একটা অন্যরকম মায়া। শাড়ির আঁচল সরে গিয়ে ওর কোমরের কাছে পেটের অর্ধেকটা দেখা যাচ্ছে, আর নাচের সাথে তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রফেশনাল ডান্স না হলেও, ওর স্টেপগুলো এতটাই গ্রেসফুল যে চোখ ফেরানো যায় না।

এদিকে রুদ্র টাস্কি খেয়ে বসে আছে। ঠিক যেন পৃথিবী থেমে গেছে তার কাছে। সামনে তার বউ এমনভাবে নাচছে, এমনভাবে নিজেকে মেলে ধরছে,  রুদ্রর চোখে যেন আজ মেঘ নতুন কেউ। এতদিনের চেনা মেয়েটা যেন হঠাৎ করে হয়ে উঠেছে অসম্ভব মোহময়।

ওর চোখে এখন শুধু মেঘের শরীরী দোল, উড়তে থাকা আঁচল, মাঝেমাঝে চোখে তাকিয়ে হালকা হাসি। রুদ্রের বুকের ভিতরটা কেমন যেন ধকধক করছে। সে চোখ সরাতে পারছে না, এমনকি চোখের পলক ফেলতেও ভয় পাচ্ছে, যদি কোনো মুহূর্ত মিস হয়ে যায়।

মেঘ নাচ শেষ করে রুদ্রের দিকে তাকায়। সে নেশালো দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে। মেঘ বেশ লজ্জা পেয়ে যায়। তবে নিজেকে সামলে রুদ্রের সামনে এসে বলে,

-“তা, আমার নাচ কি আপনার মনে ধরেছে?”

রুদ্র মেঘকে টেনে বলে,

-“একদম দিল কেড়ে নিয়েছে, বউ!”

মেঘ এবার রাগী কণ্ঠে বলে,

-“তাহলে এখন থেকে অন্য কোনো মেয়ের নাচ দেখবেন?”

রুদ্র থতমত খেয়ে বলে,

-“না না…”

মুহূর্তে রুদ্র খুচা মেরে বলে,

-“আর ইউ জেলাস..?”

মেঘ কড়া নজরে তাকায় রুদ্রের দিকে। রুদ্র দুষ্টু  হেসে বলে,

-“বউ যদি মাঝে মাঝে নেচে দেখায়, তাহলে জীবনেও দেখবো না!”

মেঘ বলে,

-“বাহ রে, খেতে দিলে শুতে চায়, “

রুদ্র ফিক করে হেসে ফেলে। তারপর মেঘকে বলে,

-“তা আমাকে তো অনেকবড় উপহার দিলেন, এবার আপনার কী চাই, বলেন?”

-“কই উপহার দিলাম?”

-“একটু আগের মুহূর্তটা কোনো বড়সড় উপহারের থেকে কম নাকি?”

মেঘ লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। তারপর কিছু একটা ভেবে মাথা তুলে রুদ্রের চোখে চোখ রেখে বলে,

-“যা চাইবো তা দিবেন?”

রুদ্র মুচকি হেসে মাথা দোলায়। তা দেখে মেঘ বলে,

-“যদি আপনাকেই চাই?”

রুদ্র কিছুটা চমকে যায়। তাকে চাইবে আশা করেনি। মেঘের চোখে অন্যরকম অনুভূতি, রুদ্র কিছু একটা আঁচ করে বলে,

-“চেয়েই দেখো…”

মেঘ ফরফরিয়ে বলে উঠে,

-“মিস্টার রুদ্র চৌধুরী, আপনাকে আমার সারাজীবনের সঙ্গী হিসেবে চাই। একদম আপনার হয়ে যেতে চাই, যেন আমার সব কিছুতে শুধুই আপনি থাকেন…”

মেঘ কথাটা বলেই নিজের মুখ রুদ্রের বুকে চেপে ধরে। রুদ্র বিশ্বজয়ের হাসি দেয়, মেঘের কানে ফিসফিসিয়ে বলে,

-“অবশেষে পারমিশন দিলে।”

মেঘ নিজেকে আরও আড়াল করতে রুদ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বোঝায়। রুদ্র হেসে ফেলে, মেঘের মাথাটা তুলে তার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলে,

-“জান, আর কয়টা দিনের অপেক্ষা। তোমাকে একদম তোমার স্বপ্নের মতো করে নিজের করে নিবো। আর কোনো আফসোস রাখতে দিবো না তোমার জীবনে, তোমার সব শখ আমি পূরন করবো…”

রুদ্রের কথায় মেঘ তার দিকে তাকায়। তার চোখে আলাদা এক মায়া, মেঘ বুঝতে পারছে না কী বলছে। মেঘের অবুঝ চেহারাকে দেখে রুদ্র বলে,

-“এত প্রেসার দিতে হবে না মাথায়। কালকের পার্টিতেই জানতে পারবেন ম্যাডাম… সারপ্রাইজ আছে!”

সেদিন রাতে মেঘ কী সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে।

চলবে…..

[ অবশ্যই জানাবেন কেমন হয়েছে। মেঘ রুদ্রের কি এতো তাড়াতাড়ি মিল করিয়ে দিবো..? নাকি রুদ্রের ধৈর্য পরিক্ষা করবো..🌚 ]

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply