Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৩


#আড়ালে_তুমি |৩৩|

#সাইদা_মুন 

সামনে এগিয়ে দেখে একটি মেয়েকে মারছে কয়েকজন মেয়ে মিলে, আর অনু চেয়ারে বসে আছে পায়ের উপর পা তুলে। রুদ্র দ্রুত এগিয়ে যায়,

-“এসব কি অনু? তোর সামনে মারছে তুই আটকাচ্ছিস না?”

হঠাৎ রুদ্রের কণ্ঠে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় অনু। লাফ মেরে চেয়ার থেকে ওঠে দাঁড়ায়, চেহারায় আতঙ্কের ছাপ। বাকি মেয়েগুলোরও সেম অবস্থা, কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে। যেই মেয়েটি নিচে পড়ে আছে সে রুদ্রকে দেখে দৌড়ে আসে,

-“ভাইয়া আমাকে বাঁচান প্লিজ এই এই অনু আমাকে মেরে ফেলবে..”

রুদ্র তার মুখের দিকে তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে যায় এইটা তো সেদিনের মেয়েটি। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-“তুমি..? কী হয়েছে ওরা তোমাকে মারছে কেনো?”

অনুর দিকে আঙুল তুলে বলে,

-“ভাইয়া এই মেয়ে, এই মেয়ে ওইদিন আপনার আর মে…”

কথা শেষ করতে না দিয়ে অনু তাড়াহুড়ো করে এসে মেয়েটিকে ধাক্কা মেরে সাইডে ফেলে দেয়। আমতা-আমতা করে বলে,

-“এ..এই মেয়ে আমার গায়ে হাত তুলেছে বেয়াদবি করেছে তা..তাই..”

রুদ্রের ভ্রু কুঁচকে যায় অনু এতো তুতলাচ্ছে কেনো আর মেয়েটি বা কী বলতে চেয়েছিল। সে অনুকে থামিয়ে দেয়, সেই মেয়ের সামনে যায়,

-“তুমি কী যেনো বলছিলে?”

অনুর যেনো জান যায় যায় অবস্থা। এই মেয়ে সত্যি কথা বললে রুদ্র তাকে যে কী করবে। নিজেকে বাঁচাতে বলে,

-“র..রুদ্র শোন এই মেয়ের কথায় কান দিস না উল্টো পাল্টা কথা বলে। “

রুদ্র বিরক্ত হয়ে বলে,

-“তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি, answer me..?”

-“আরে এই মেয়ে মিথ্যা…”

রুদ্র এক ধমক দিয়ে অনুকে চুপ করিয়ে দেয়। মেয়েটির দিকে তাকাতেই সে ঝরঝরিয়ে কেঁদে বলে,

-“ভাইয়া, আপনার আর মেঘের যেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছিলো, সেটা এই অনুর কাজ, সে আমাকে দিয়ে আপনার কাছেও মিথ্যা বলিয়েছিলো। মেঘের দোষ নেই, স..সব এই মেয়ে করিয়েছে। আমাকে লোভ দেখিয়েছিলো টাকা দিবে এই কাজ করে দিলে। কিন্তু এতোদিন ঘুরিয়েও দেয়নি। কালকে আমি বলেছিলাম আপনাকে সব বলে দিবো, তাই ওরা আমাকে… “

মেয়েটি কাঁদছে, রুদ্রের রাগে কপালের রগ ফুলে উঠেছে, চোখ লাল টকটকে হয়ে আছে। অনুর তো কাপাকাপি অবস্থা। রুদ্র তার দিকে তাকাতেই আত্মা কেঁপে ওঠে। রুদ্র শান্ত কিন্তু ভীষণ ভয়ংকর কণ্ঠে বলে,

-“এমনটা কেনো করেছিস?”

অনু ভয়ে ভয়ে বলে,

-“ত..তুই এই মেয়ের কথায় বিশ্বাস করিস না। আ..আমি তোর ফ্রেন্ড না আমার কথা শোন…”

রুদ্র সাথে সাথে চিৎকার করে,

-“আই সেইড, তুই কেনো এমনটা করেছিস? সত্যটা স্বীকার করে নে নয়তো ভালো করেই চিনিস আমায়.. “

অনু গুটিয়ে যায়, তবে এবার যেনো হালকা রাগ আসে ভেতরে চিৎকার করে বলে,

-“কারণ আমি তোকে ভালোবাসি, আর ওই মেঘের প্রতি তোর এতো কেয়ার এতো মেলামেশা আমার একদমই পছন্দ না। ওই মেয়ে তোকে আমার থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছিলো তাই রাস্তা থেকে ক্লিয়ার করতে..”

সাথে সাথে ক্লাসরুমে ‘ঠাসসসস’ শব্দ দেয়ালে বাড়ি খায়, উপস্থিত সবাই কেঁপে ওঠে। অনু গিয়ে নিচে পড়ে, ঠোঁট কেটে রক্ত বেরোচ্ছে।

-“একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে নরক বানাতে একটুও ভাবিসনি। তোকে তো একদম মাটিতে গেঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তোর শাস্তি আমি না…. “

বলেই হঠাৎ অনুর চুলে ধরে পুকুর পারে নিয়ে আসে। এমন দৃশ্য দেখে সবাই ভিড় জমিয়েছে, সবাই বেশ অবাক, সাথে তো ক্যামেরা অন আছেই। রুদ্র সেখানে দাঁড়িয়েই মেঘকে কল করে।

রুদ্রের কল পেয়ে মেঘ ধরতেই কর্কশ গলার স্বর ভেসে আসে,

-“২ মিনিটের মধ্যে পুকুর পাড়ে আসবে, আই রিপিট ২ মিনিটের মধ্যে.. “

বলেই কল কেটে দেয়। এদিকে মেঘ লাফিয়ে ওঠে, রুদ্র ভীষণ রেগে আছে কিন্তু কেনো, কী হয়েছে। দ্রুত উঠতে দেখে পিহু জিজ্ঞেস করে,

-“কি হয়েছে রে.. “

-“তোর ভাই ভীষণ রেগে আছে, ২ মিনিটের মধ্যে পুকুর পাড়ে যেতে বলেছে.. “

-“বলিস কি, জলদি চল। “

মেঘরা সবাই তাড়াতাড়ি সেদিকে গিয়ে পৌঁছায়। দেখে রুদ্র পুকুরের একদম লাস্ট সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে, পাশে অনু কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। মেঘ তার পাশে গিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবে, তার আগেই রুদ্র বলে ওঠে,

-“একে লাথি মেরে পানিতে ফেলো..”

উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে যায়, “কি বলে রুদ্র!” অনুও ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। মেঘ বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে, বোঝার চেষ্টা করছে রুদ্র আসলে বললো কি। রুদ্র মেঘকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গর্জে ওঠে,

-“কথা কানে যায় না?”

মেঘ কেঁপে ওঠে,

-“আ..হ্যাঁ..হ্যাঁ কী বলছেন, মাথা ঠিক আছে আপনার?”

-“আমার সব ঠিক আছে, তুমি একে লাথি মেরে পানিতে ফেলো, ফাস্ট..”

মেঘ দু’পা পিছিয়ে যায়, তার দ্বারা এসব পসিবল না। রুদ্র ফুঁ করে শ্বাস ফেলে, পিহুর দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করতেই… হঠাৎ কারো পানিতে পড়ার শব্দে সবাই পুকুরের দিকে তাকায়।

পিহু ভাইয়ের ইশারা পেতেই অনুর পিছে লাথি মেরে পানিতে ফেলে দেয়। আর এই দৃশ্য সবাই দেখে বেশ চমকে যায়, পুরো ভার্সিটিতে ফিসফাস শুরু হয়। অনু পানি খেয়ে কোনোরকমে উঠে দাঁড়ায়, বেশি গভীর না তাই পানিতেই দাঁড়াতে পেরেছে।

রুদ্র শান্ত স্বরে বলে,

-“বউ আমার কোনো মেয়ের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি পছন্দ করে না, নয়তো এই লাথি আমিই দিতাম… নেক্সট টাইম কারো ক্ষতি, বিশেষ করে কোনো মেয়ের ক্ষতি করার আগে এই অপমান যেনো মাথায় থাকে… “

বলেই মেঘের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসে সেখান থেকে। পিছে পিছে পিহুরাও আসছে। সেই মেয়েটি ইতোমধ্যে অনুর কুকর্ম সবাইকে বলে দিয়েছে।

মিনহার কিছুই মাথায় ঢুকছে না, কাহিনি কি জানতে সে দাঁড়িয়ে যায়। পাশের একটি মেয়েকে জিজ্ঞেস করতেই সব জানতে পারে। সব শুনে মিনহা শয়তানি হাসে,

-“ওহ আচ্ছা, তার মানে এই ছিলো আসল কাহিনি.. নাও ওয়েট অ্যান্ড সি বেবি..”

————————

মেঘকে নিয়ে এসে তাদের আড্ডার স্থানে বসে। মেঘ কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে,

-“এমনটা কেনো করলেন…”

-“যেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, তা অনুই করিয়েছে… “

মেঘ অবাক হয়ে যায়,

-“কি বলেন এসব..”

রুদ্র গম্ভীর শ্বাস ছেড়ে বলে,

-“হু, এমনকি এসবের পিছে তোমার হাত ছিলো এইটাও বলিয়েছিলো, তাই আমি অনেক রেগে ছিলাম তোমার উপর তখন।”

মেঘের যেনো আস্তে আস্তে সব ক্লিয়ার হয়। তাই জন্যই কি রুদ্র সেদিন তার বিয়ের আসরে গিয়ে তার বিয়ে ভাঙলো? তার নামে এতো বাজে মিথ্যে কথা বলেছিলো? তবে কি রুদ্র তাকে রাগের বশেই বিয়ে করেছিলো? দ্রুত রুদ্রের দিকে ফিরে,

-“আপনি কি তাহলে আমাকে রাগের মাথায় বিয়ে করেছিলেন?”

রুদ্র শান্তভাবে মাথা নাড়ায়, যার অর্থ ‘হ্যাঁ’। মেঘ থমকে যায়, তার ভেতর এক আচমকা ভয়ে শুকিয়ে আসছে। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। সবাই ও সেখানে উপস্থিত হয়। মেঘদের ক্লাস টাইম হওয়ায় তারা চলে যায় ক্লাসে।

পুরো ক্লাসে মেঘের মনমরা দেখে পিহু, সুমনা কিছুটা চিন্তিত হয়,

-“এই মেঘ কিছু হয়েছে? এমন মন খারাপ করে বসে আছিস কেনো?”

মেঘ মাথা নেড়ে না বোঝায়। হঠাৎ মেঘ বলে,

-“আচ্ছা ধর কেউ আমাদের ছেড়ে দিবে কিনা সেই ভয় থাকলে কি করা যায়?”

সুমনা মুহূর্তেই বলে,

-“সেই কেউটা কে?”

মেঘ মাথা নিচু করে বলে,

-“হাসব্যান্ড…”

সুমনা কিছু একটা ভেবে বলে,

-“পুরুষ আটকায় নারীর শরীরে বা রূপে। কথাটা খারাপ হলেও সত্য। তবে কিছু সুপুরুষ আছে যারা এসবে আটকায় না, শুধু নিজের প্রিয় মানুষে আটকায়। তবে এখনকার বেশির ভাগ পুরুষই এমন। তাই তাদের নিজের কাছে রাখতে হলে নিজেকে অনেক পরিপাটি রাখতে হবে, তাদের সামনে নিজেকে সুন্দরভাবে পেশ করতে হবে, যেমনটা তারা চায় তেমন করতে হবে।”

মেঘ চুপচাপ শোনে কথা। হঠাৎ পিহু বলে উঠে,

-“তোর আর ভাইয়ার মধ্যে সব নরমাল না..?”

মেঘ মাথা তুলে তাকায়,

-“নরমাল বলতে?”

-“স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিকঠাক তো? আই মিন তোরা ক্লোজ হয়েছিস তো..?”

মেঘ বেশ বুঝতে পারে কিসের কথা বলছে, মাথা নাড়িয়ে বলে,

-“না.. সেরকম সম্পর্ক হয়ে ওঠেনি..”

পিহু সুমনা দুজনেই হালকা চেঁচিয়ে বলে ‘কিইইই’।

-“এটা কিভাবে সম্ভব..? এখনকার বিয়ে ছাড়াই একটা ছেলে মেয়ে কিছুক্ষণ এক ঘরে থাকলেই কাম ঘটে যায়। সেখানে তোদের বিয়ের ২ মাস হয়ে যাচ্ছে আর তোদের মধ্যে কিছুই হয়নি?”

-“নাহ..”

সুমনা ভ্রু কুঁচকে বলে,

-“রুদ্র ভাইয়াও ফোর্স করেনি..?”

মেঘ মাথা নেড়ে ‘না’ বুঝায়। সুমনা জহুরি চোখে কিছু ভেবে বলে,

-“তার মানে ঘাপলা আছে। নিশ্চয় রুদ্র ভাইয়ার বাইরে অ্যাফেয়ার আছে, নয়তো এত সাধু তো পুরুষ না…”

মেঘের বুকটা ধক করে ওঠে। দ্রুত বলে,

-“না না উনি এমন না..”

পিহু পাশ থেকে বলে,

-“এই আমার ভাই মোটেও এমন না..”

-“আরে ভাই ঘটনা বুঝ। যদি কেউ নাই থাকে, বউকে সামনে রেখে কিছুই করবে না? এটা আধো সম্ভব?”

কথায় যুক্তি আছে, মেঘ পিহু ভীষণ ভাবছে। পিহু শেষমেষ সুমনার কথায় সায় দেয়,

-“তুই ভাইয়ার সামনে সুন্দর করে থাকিস? তাকে সিডিউস করার চেষ্টা করিস?”

মাথা মাথা নেড়ে না বলে।

-“যাহ শা*লি তাহলে সুমনার কথাই সত্য লাগছে। আমার ভাই বলে ভালো বলছি না। তবে পুরুষের একটা চাহিদা আছে না? কি বলতে চাচ্ছি বুঝছিস তো?”

মেঘের চোখের কোনায় পানি চলে এসেছে। অসহায় সুরে বলে,

-“আমি এখন কি করবো..”

সুমনা দ্রুত বলে,

-“শোন আমি যা যা বলছি তা তা করবি, তাহলেই হবে, তোর স্বামীকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না…”

তারপর সুমনা আর পিহু মিলে টেকনিক শিখাতে লাগে। মেঘকে তাদের পরিকল্পনায় এগোতে বলে।

————————

বিকেলের দিকে রুদ্র রেডি হচ্ছিলো, একটা মিটিং আছে সেখানেই যেতে। শার্টের বোতাম লাগাতে যাবে হঠাৎ মেঘ এসে মুখোমুখি দাঁড়ায়। রুদ্র ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে কি? তবে মেঘ কিছু না বলেই রুদ্রের শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিতে লাগে। রুদ্র বেশ অবাক হয়, মেঘের আবার কি হলো, এমন তো আজ অব্দি করেনি হঠাৎ এত যত্ন। রুদ্রের ভাবনার মাঝেই ঘড়িটা নিয়েও পড়িয়ে দেয়। তারপর সরে দাঁড়ায়। রুদ্র অবাক নয়নেই প্রশ্ন করে,

-“কি ব্যাপার?”

মেঘ ভাবলেশহীনভাবে বলে,

-“কিছু না..”

রুদ্র এসব ভাবতে ভাবতেই চুল ঠিক করে বেরিয়ে যেতে লাগে। তবে পেছন থেকে মেঘের ডাকে আটকায়,

-“আপনার মানিব্যাগ রেখে যাচ্ছেন যে..”

মেঘ রুদ্রের হাতে মানিব্যাগটা দিয়ে বলে,

-“সাবধানে যাবেন, আর তাড়াতাড়ি ফিরবেন।”

রুদ্র চুপচাপ মাথা নেড়ে বেরিয়ে যায়। মাথায় তার অন্য চিন্তা, “বউটা আজ হঠাৎ বউ বউ আচরণ করছে, ঘটনা কী?”

————————

রুদ্রের ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। বাসায় এসে নিজের কাছে রাখা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়েই প্রবেশ করে। দরজা লাগিয়ে নিজের রুমে আসতেই দেখে লাইট জ্বালানো, মেঘ কি এত রাত অব্দি তার জন্য জেগে আছে।

দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকতেই রুদ্রের পা থেমে যায়, সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা এক রমণীকে দেখে। চোখ যেনো অবাধ্য হয়ে গেছে, পাতলা শাড়ি আর গলা বড় ব্লাউজ পড়া নারীকে দেখে। শুকনো ঢোক গিলে ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়।

দরজা লাগানোর শব্দে মেঘের ঘুম ভেঙে যায়। রুদ্রকে দেখে দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। জলদি গিয়ে সাইড টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয়। রুদ্র তা এক ঢুকে খেয়ে ফেলে। হঠাৎ রুদ্রর গরম লাগছে, দ্রুত শার্টের বোতাম খুলতে যাবে, তার আগে মেঘ নিজে থেকেই খুলে দেয়। রুদ্র শুধু মেঘের কাজকর্ম দেখেই যাচ্ছে। না চাইতেও বারবার মেঘের দিকে নজর যাচ্ছে। বউ এমন পাতলা শাড়িতে থাকলে কোন পুরুষই নিজের নজর সংযত রাখতে পারে না। মেঘ তা লক্ষ্য করে ভীষণ নার্ভাস হয়ে পড়ে। রুদ্রের সামনে থেকে গিয়ে ওয়ারড্রব থেকে কাপড় বের করে রুদ্রের সামনে রাখে,

-“নিন আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন, আমি খাবার গরম করে আনছি…”

বলেই মেঘ যেতে নেয়, রুদ্র মেঘের হাত ধরে আটকে দেয়,

-“এভাবে নিচে যাবে..?”

মেঘ হালকা লজ্জায় মাথাটা নিচু করে বলে,

-“স..সবাই তো ঘুমে..”

মেঘকে টেনে নিজের কাছে এনে বলে,

-“নো, বউকে নিয়ে একটুও রিস্ক নিতে রাজি নই.. বাইরে থেকে খেয়েছি, এখন খাবো না..”

মেঘ একই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।

-“খেয়েছো?”

তড়িঘড়ি করে বলে

-“জি, খেতে চাইনি, আম্মু জুড় করেছে তাই খেয়ে নিয়েছি। নয়তো আপনার জন্য অপেক্ষা করতাম…”

-“ভালো কাজ করেছো, আমার জন্য অপেক্ষা করবে না, খাওয়ার সময় খেয়ে নিবে।”

মেঘ কিছুই বলে না। রুদ্র অনেকক্ষণ মেঘকে ঘুরে ঘুরে দেখে। ব্ল্যাক কালার শাড়ি পড়েছে, পাতলা হওয়ায় ফর্সা শরীরের সব কিছু ভেসে উঠছে, ব্লাউজের গলা অনেকটা বড় হওয়ায় গলার অনেকটা নিচে অবস্থিত একটা লাল তিলে চোখ যায়। রুদ্রের গলা শুকিয়ে আসছে, ঢোক গিলে যার ফলে অ্যাডামস উঠা নামা করছে।

মেঘকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, সাইডে রাখা কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। এদিকে মেঘের এতক্ষণে আটকে রাখা শ্বাস মাত্রই ছাড়ে, বুকে হাত দিয়ে দেখে ধুকপুক করছে। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে পড়ে। এইভাবে রুদ্রের সামনে কিছুক্ষণ থেকেই এই অবস্থা, বাকি সময় থাকবে কি করে। না না, থাকতে হবে তোকে মেঘ, রুদ্রকে নিজের করে রাখতে চাইলে এইসব ভাবলে চলবে না।

রুদ্র ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখে মেঘ বিছানায় বসা। মেঘ শাড়ির আঁচল ভাজ করে কাঁধে রেখেছে, যার ফলে নাভি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রুদ্র চোখ বুজে একটা শ্বাস নেয়, তার মাথা হ্যাং মারছে। মনে মনে নিজেকেই বলে,

“এই মেয়ে এমন করছে কেনো, সে কি বুঝে না একটা ছেলের সামনে এভাবে থাকলে তার নিজেকে কন্ট্রোল করা বড় কষ্ট হয়ে পড়ে? নাকি মেঘ ইচ্ছে করেই আমাকে সিডিউস করতে চাইছে?”

মেঘের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করে, সে নিজেও নার্ভাস, মুখে হালকা ভয়ের ছাপ। এসবে অভ্যস্ত না যে বেশ বুঝাই যাচ্ছে। রুদ্র এগিয়ে গিয়ে মেঘের পাশে বসে নরম স্বরে জিজ্ঞেস করে,

-“কি হয়েছে তোমার?”

মেঘ চমকে তাকায়, রুদ্র কি বুঝে ফেললো,

-“ক..কি হবে?”

-“তুমি এরকম শাড়ি পড়েছো কেনো?”

-“আ..আমার ইচ্ছে করেছে তাই”

-“তাহলে চেহারায় এত অস্বস্তি কেনো, যেহেতু এসব পড়ে অভ্যস্তই না তো পড়ার মানে কি..?”

মেঘ মাথা নিচু করে রেখেছে। রুদ্র হঠাৎ বলে উঠে,

-“তুমি কি এনিহাউ আমাকে সিডিউস করতে চাইছো..?”

মেঘ লজ্জায় মাথা আরও নিচু করে ফেলে। তা দেখে রুদ্র মেঘের থুতনি ধরে মাথা উঁচু করে বলে,

-“বলো.. কি চলছে তোমার মাঝে? কিছু হয়েছে? এমন চেঞ্জ হয়ে গেছো কেনো?”

মেঘ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

-“ক..কই না তো আমি চেঞ্জ হইনি..”

-“উহু, এই মেঘকে নতুন লাগছে। তোমার কাজকর্মগুলো বাধ্য হয়ে করছো লাগছে। আমি তো তোমার থেকে এসব চাইনি। তুমি ধীরে ধীরে আমার সাথে মানিয়ে নাও, সমস্যা নেই আমার। এসব চেঞ্জ করে আসো..”

রুদ্র মেঘের আঁচল ঠিক করে দিতে যাবে। মেঘ হাত দিয়ে আটকে দেয়। রুদ্র তার দিকে ফিরতেই সে মাথা নিচু করে ফেলে। রুদ্র তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে,

-“আমি তোমাকে নরমালভাবে দেখেই সিডিউস হয়ে যাই, সো সিডিউস করার জন্য নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে এমন চেষ্টা না করলেও চলে।”

মেঘ চোখ বড় বড় করে তাকায়। পরক্ষণেই আবার অবাক হয়ে, “সে যে নিজেকে বাধ্য করে এসব করছে, তা রুদ্র জানলো কিভাবে?”

রুদ্র মুচকি হেসে বলে,

-“রুদ্র মানুষের চোখের দিকে তাকিয়েই তার মনের খবর বলে দিতে পারে।”

তারপর মেঘকে ছেড়ে একটু ফাঁক রেখে বসে। নিচু কণ্ঠে বলে,

-“আই এম সরি মেঘ, আমি জানি কালকের রাতের আমার ওই আচরণের জন্য তুমি ভেবেছো আমি তোমার থেকে অধিকার চাচ্ছি। বাট বিলিভ মি মেঘ, এমন কিছুই না, আমি তোমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছুই করবো না। এইটুকু ভরসা রাখো আমার উপর। তুমি যখন মন থেকে অধিকার দিবে তখন আমিও বুঝে নিবো..”

মেঘ হতবাক হয়ে রুদ্রের দিকে তাকায়। মানে, সে ভেবেছে মেঘের আসল কারণ হয়তো রুদ্র বুঝে গেছে। আর এখানে রুদ্র উল্টো বুঝে বসে আছে। হায়রে, সে চাচ্ছে তাদের দূরত্ব দূর করতে, সেখানে রুদ্র কিনা উল্টো ভেবে নিলো। মেঘের ইচ্ছে করছে নিজের কপাল নিজে চাপড়াতে।

-“যাও, চেঞ্জ করে আসো, ঘুমাবো..”

মেঘ চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো গিয়ে চেঞ্জ করে আসে। মনে মনে সুমনা পিহুকে গালি দেয়, ঘুরার ডিমের প্ল্যান দিছে, কোনো কাজই হলোনা। চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়ে।

চলবে……

[ অনেক্বি গল্প পড়েব তবে পেইজ ফলো করেননি, এগুলো ঠিক না। ]

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply