#আড়ালে_তুমি |৩২|
[ ইটিশ-পিটিশ এলার্ট ]
রাতে মেঘ ঘরে এসে দেখে রুদ্র নেই। এই রাতের বেলা আবার কোথায় গেলো ভাবতে ভাবতে মোবাইল নিয়ে বসে। এফবি স্ক্রল করতে করতে রুদ্রের আইডি সামনে পড়ে। আইডিতে ঢুকে স্ক্রল করতে থাকে। কয়দিন আগের ধূসর রঙের পাঞ্জাবি পরা পিক ও দিয়েছে। কমেন্ট বক্সে ঢুকতেই মেঘের মাথা হয়ে যায় হট। একেকটা মেয়ের কমেন্ট,
“উফফ রুদ্র জান্স ইউ আর ড্যাম”
মেঘের যেন ইচ্ছে করছে এই মেয়ের চুল টেনে দিতে “শা*লি আমার জামাইকে জান্স ডাকে দাড়া,”। মেঘ এর প্রোফাইলে ঢুকে ইচ্ছে মতো সব পিকে হাহা দিয়ে বেড়িয়ে আসে। তারপর আরেকটা মেয়ের কমেন্ট চোখে পড়ে,
“আমার দেখা সেরা সুদর্শন পুরুষ..”
এই মেয়ের প্রোফাইলে ঢুকে দেখে ম্যারিড,
-“ছি ভাই, বিয়াইত্তা হইয়াও অন্যের জামাইর দিকে নজর দেয় খবিশ বেটি,”
তারপর সেই কমেন্টের সস নিয়ে মেয়েটির জামাইর আইডিতে পাঠিয়ে দেয়।
-“হুহ, এবার শান্তি..”
এভাবে যে কতক্ষণ কত মেয়ের পিকে হাহা দিলো, কতোজনকে হুমকি দিলো নিজেও জানে না।
রুদ্র আসে কিছুক্ষণের মধ্যে, মেঘ তাকে দেখতেই ফোন রেখে অপাশ হয়ে শুয়ে পড়ে। রুদ্র তা দেখে ফুঁস করে একটা শ্বাস ফেলে, ফ্রেশ হয়ে আসে। রুমের দরজা লাগিয়ে পাশে এসে বসে।
হঠাৎ মেঘের চোখের সামনে এক জোড়া নুপুর ঝুলতে দেখে মেঘ সেদিকে ফিরে তাকায়। তারপর অবাক হয়ে রুদ্রের দিকে তাকায়। রুদ্র হাসিমুখে তাকিয়ে তার দিকে।
-“এইটা কার..?”
-“কার আবার, আমার বউয়ের..”
মেঘ বেশ বুঝছে, তাকে ঘুষ দিয়ে রাগ ভাঙাতে চাচ্ছে। মনে মনে ভীষণ খুশি হলেও উপরে তা প্রকাশ করে না।
মেঘের ভাবনার মধ্যেই রুদ্র হুট করে মেঘের দুই বাহু ধরে টেনে তুলে বসায়। তারপর শাড়িটা একটু উপরে তুলে পায়ে নুপুর পড়াতে থাকে। তবে রুদ্রের চোখ আটকে যায় মেঘের পায়ে, ফর্সা পা ড্রিম লাইটের আলোতে আরও ঝলমলে, তারার মতো চকচক করছে। রুদ্র নিজেকে সংযত করে নুপুর পড়িয়ে দেয়। মেঘ অবাক হয়ে দেখছে, মুহূর্তেই রুদ্রের হাত ধরে ফেলে,
-“এই, কী করছেন আপনি? আমার পায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো?”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“তো কী হয়েছে?”
-“কি হয়েছে মানে, আপনি বয়সে বড়। এভাবে পায়ে হাত দেওয়া মানায় না..”
মেঘ আর কিছু বলার আগে রুদ্র হাস্কি কণ্ঠে বলে,
-“হুশশ বউ, ডোন্ট ডিস্টার্ব মি..”
মেঘের মুখ আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যায়। রুদ্রের ছোঁয়া পায়ে লাগতেই মেঘের শরীরে এক অন্যরকম বাতাস বয়ে যায়। রুদ্র নুপুর পড়িয়ে মেঘের পায়ে হালকা ঠোঁট ছোঁয়ায়। মেঘ যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে, নড়াচড়া করতে পারছে না। রুদ্রের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে সে অবাক, চোখ কুঁচকে বন্ধ করে রেখেছে।
তা দেখে রুদ্র ঠোঁট কামড়ে হাসে, বেশ বুঝছে মেঘ এই রুদ্রকে দেখে অবাক। রুদ্র মেঘের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
-“বউ, রাগ আছে এখনো?”
মেঘ বিছানার চাদর শক্ত করে ধরে আছে। রুদ্রের একেকটা শব্দ তার কানে, গলায় স্পর্শ করে গেছে, ভয়েসে অন্য কিছু ছিল। রুদ্র আরও এগিয়ে কানের লতির সাথে ঠোঁট লাগিয়ে আবারও বলে,
-“বউ, রাগ এখনো কমেনি?”
মেঘ চোখ কুঁচকে বন্ধ করে মাথা ঝাঁকায় যার অর্থ কমেছে। রুদ্র হালকা হেসে মেঘের কানে নিজের অধর ছোঁয়ায়। মেঘের হাত টেনে ধরায় সে চোখ খুলে, দেখে বেলিফুলের মালা। রুদ্র যত্ন সহকারে তা মেঘের হাতে পড়িয়ে দেয়। মুহূর্তেই মেঘের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ফুল তার ভীষণ পছন্দ, বাচ্চাদের মতো এদিক-সেদিক করে দেখছে। নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে। রুদ্র মুগ্ধ নয়নে তা উপভোগ করছে। হঠাৎ মেঘ সেই ফুলে ঠোঁট ছোঁয়াতে যাবে, রুদ্র ধপ করে হাতটা ধরে ফেলে। মেঘ মাথা তুলে রুদ্রের দিকে তাকায়,
-“এই মেয়ে, একদম ঠোঁট ছোঁয়াবে না..”
-“কেনো..?”
মেঘের ঠোঁটের উপর নিজের আঙুল চালিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-“আমার জিনিসের ভাগ কাউকে দিতে পারবো না..”
মেঘ লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। গালে লাল আভা দেখা যাচ্ছে, গোলাপি ঠোঁট হালকা কাঁপছে। রুদ্র যেন এই দৃশ্য দেখে নিজেকে আটকে রাখা পাপ মনে করছে। হঠাৎ রুদ্র নেশা ভরা কণ্ঠে বলে ওঠে,
-“মেঘ… ক্যান আই?”
মেঘ চটজলদি রুদ্রের দিকে তাকায়, রুদ্র এখনো তার ঠোঁটের দিকেই এক ধ্যানে তাকিয়ে। বেশ বুঝতে পারছে রুদ্র কিসের কথা বলছে। সে কী বলবে, তার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। আবারো চোখ নামিয়ে নেয়। নীরবতাকে সম্মতি ভেবে রুদ্র ধীরে ধীরে এগোয়। রুদ্র যতই কাছে আসছে, মেঘের শরীরের শক্তি যেন তত কমে যাচ্ছে। রুদ্র এক হাতে মেঘের কোমর ধরে টান মেরে নিজের পায়ের উপর বসিয়ে দেয়। কোনো আগাম বার্তা ছাড়াই আকড়ে ধরে মেঘের অধর জোড়া। মেঘ খামচে ধরে রুদ্রের শার্ট, আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। দুজনেরই বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়েছে। রুদ্রের হাত বিচরণ করছে মেঘের কোমর পেরিয়ে আরও অনান্য জায়গায়। এতে মেঘ আরও লেপ্টে যায় রুদ্রের সাথে। রুদ্র যেন অনেক বছরের সাধনার ফল পেয়েছে। প্রথমে সফট হলেও আস্তে আস্তে তা পাগলামিতে রূপ নেয়। মেঘ হাপিয়ে উঠছে, তাও ছাড় পাচ্ছে না। একসময় অস্ফুটভাবে ছাড়া পেতে চায়। প্রায় ৫ মিনিট পর রুদ্র ছেড়ে দেয়। দুজনেই জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। রুদ্রের নজর যায় এক স্পর্শকাতর জায়গায়, জোরে শ্বাস নেওয়ার ফলে ওঠানামা করছে। রুদ্রের নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে উঠছে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চোখ সরিয়ে মেঘের মুখের দিকে ফিরে। মেঘকে খুব আকর্ষণীয় লাগছে, মেঘের গলার সেই তিলটা যেন তাকে কাছে ডাকছে। ধীরে ধীরে সেদিকে মুখ এগোয়, গলায় মুখ গুজে দিতেই হঠাৎ রুদ্রের ফোন বেজে ওঠে।
দুজনেরই ধ্যান ফিরে, ছিটকে দুজন দুই পাশে চলে যায়। মেঘ লজ্জায় গুটিশুটি হয়ে খাটের এক কোণায় বসে আছে, কী হয়ে গেল এসব ভেবে আরও লাল-নীল হচ্ছে। রুদ্র দ্রুত ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে আসে। দেখে সায়ান কল করেছে, কিছুটা রেগে কল ধরে,
-“শালা মা****, কল দেওয়ার সময় পেলি না। তোর যৌবনে ঠাডা পড়ুক দোয়া করি…”
সায়ান চমকে যায়,
-“নাউজুবিল্লাহ, কিসব বলছিস বন্ধু, দুই দিন পর আমার বিয়ে, এমন অভিশাপ দিস না। এতো বছরের অপেক্ষা..”
রুদ্র কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,
-“কল কেন দিয়েছিস, সেটা বলেই দ্রুত কল কাট..”
সায়ান দুষ্টু ভঙ্গিতে বলে,
-“কেন কেন, বউ অপেক্ষা করছে বুঝি..?”
-“তো বউ অপেক্ষা করবে না তো কি, তোর মতো হিজ*ড়া অপেক্ষা করবে..”
-“ছি ছি ভাই, কিসব বলিস! আই এম পিউর ছেলে.. হুহ, যাই হোক, কালকে তোদের বাসায় আসছি বিয়ের কার্ড দিতে, বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়েছে। সামনের মাসের ১ তারিখ, ভাবিকে অবশ্যই আনবি। আম্মু বারবার করে বলেছে….”
-“আচ্ছা, এবার কল রাখ…”
রুদ্র কল কেটে রুমে আসে। মেঘ অপাশ ফিরে শুয়ে আছে। পাশে শুয়ে মেঘকে হালকা ধরতেই সে নিজেই ফিরে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে, তবে এখনো চোখ বন্ধই। রুদ্র মুচকি হাসে, বউ যে তো দেখছি তার নেক্সট স্টেপগুলো নিজে থেকেই জানে। নিজেও মেঘকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়,
-“আজকের জন্য ছাড় দিলাম, নেক্সট টাইম কিন্তু…”
মেঘ রুদ্রের বুকে মুখ লোকায়। অতঃপর ঘুমের দেশে পাড়ি দেয় দুজনেই।
———————
পরের দিন ভার্সিটি যাওয়ার সময় মিনহাও তাদের সাথে যাবে বলে বায়না ধরে। রুদ্রের মামারা নাকি কয়েকদিন থাকবে। এই আপদ ও থাকবে ভেবে মেঘের কিছুটা বিরক্ত লাগে। মিনহাকে সাথে নিয়ে সবাই ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
রুদ্র গাড়ি পার্ক করতে যায়। মেঘরা ক্যাম্পাসে ঢুকতেই হঠাৎ একটা ছেলের সামনে পড়ে। সে মেঘকে দেখে বলে,
-“আসসালামু আলাইকুম ভাবি..”
মেঘ অবাক হয়ে তাকায়। ছেলেটি সাথেসাথেই চলে যায়। এভাবে আরও ঢুকতে আশেপাশের অনেকেই তাকে ভাবি বলে সম্মোধন করছে, কেমন আছেন জিজ্ঞেস করছে। মেঘ শুধু চমকাচ্ছে, পিহু-মিনহাও বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে।
রুদ্র গাড়ি পার্ক করে এসে মেঘের পাশেই হাঁটে, তখন আবার একটি ছেলে বলে,
-“রুদ্র ভাই, কেমন আছেন?”
-“এই তো, ভালোই। তোর কী অবস্থা?”
-“এই তো ভাই ভালো। আরে ভাবি, আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?”
মেঘ হতবাক হয়ে তাকায়, সালামের জবাব দেয়। ছেলেটি যেতেই মেঘ রুদ্রকে বলে,
-“এই দেখেন না, ক্যাম্পাসের সবাই আমাকে ভাবি ডাকছে কেন?”
রুদ্র দুই পকেটে হাত দিয়ে হালকা হেসে গান ধরে,
“আমার যত ভাই ব্রাদার…
ডাকবে তোমায় ভাবি….
তোমার শাড়ির আঁচলেতে…
থাকবে ঘরের চাবি….”
মেঘ মুগ্ধ হয়ে রুদ্রের গান শোনে। এই প্রথম সামনাসামনি রুদ্রের কণ্ঠে গান শুনেছে। সে ভালো গান গায় জানে, তবে শোনার সৌভাগ্য হয়নি। পরক্ষণেই খুশিতে মন ভরে ওঠে। তার মানে ভার্সিটির সবার সামনে মেঘকে রুদ্র তার বউ হিসেবে পরিচয় দিয়েছে? অবাক চোখে তাকায় রুদ্রের দিকে। এদিকে মিনহা রাগে ফুঁসছে। আকর্ষণ নিতে ন্যাকা কন্ঠে রুদ্রকে বলে,
-“রুদ্র ভাই, আমাকে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখাও না..”
রুদ্র মেঘের দিকে একবার তাকিয়ে দ্রুত বলে,
-“পিহুদের সাথে যা, আমার কাজ আছে..”
বলেই সে সেখান থেকে নিজের ক্লাসে চলে যায়। এতক্ষণে সুমনা-রিক ও চলে এসেছে। সবাই মিলেই ক্যাম্পাস ঘুরছে।
রুদ্র ক্লাসের দিকে যেতে যেতে হঠাৎ কারো কান্নার শব্দ শোনে, থেকে যায়। সামনে এগিয়ে দেখে……
চলবে…..
[ভাবছি শীগ্রই গল্পটা শেষ করে ফেলবো…]
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪৮
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৮
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৮
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬৫
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৭
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৫২
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪১
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩২