#আড়ালে_তুমি |২৫|
#_সাইদা_মুন
[ ইটিসপিটিস এলার্ট ]
-“ওই হালার*পুত, দেখে চলতে পারিস না, চোখ কি বাসায় বউয়ের কাছে রেখে এসেছিস। ভুড়ি নিয়ে হাঁটতে পারিস না তো ভুড়িটাও বাসায় বউয়ের কাছে রেখে আসতি। আমার গেদুর আব্বুটা তর জন্য ব্যথা পাই…..”
-“ওহ শিট. “
দ্রুত মেঘকে টেনে গাড়ির ভেতরে ঢুকায়। লোকটি রেগেমেগে তেড়ে আসছে। হুদাই ঝামেলা করতে চায়না এই সময় তাই মেঘকে এক হাতে চেপে ধরে অন্য হাতে গাড়ি স্টার্ট দেয়। এই মেয়ে আবার কখন কি বলে দেয় কে জানে….
সামিয়া এসব দেখে বলছে,
-“কি বেয়াদব মেয়ে, শিক্ষা দীক্ষা নাই নাকি। কোথায় কিভাবে কথা বলতে হয় জানে না”
মেঘ ঠোঁট উল্টে সামিয়ার দিকে একবার তাকায় তো রুদ্রের দিকে তাকিয়ে কান্না ভাব করে বলে উঠে,
-“এই ডাইনি আমায় বকা দিয়েছে ওই আমার মাগো। আমি এর বিচার চাই আমার মাগো। “
রুদ্র মেঘের বিলাপ শুনে ফিক হেসে উঠে সাথে পিহুও হাসতে হাসতে পেট ব্যথা। তাদের হাসি দেখে মেঘ আরও বিলাপ করে বলে,
-“আমাকে বকা দিয়েছে আর ওরা হাসছে ওই আমার মাগো….”
রুদ্র মনে মনে বিরবিরায়,
-“এই মেয়ে যে পুরাই কার্টুন.. “
পিহু সামিয়ার উদ্দেশ্য করে বলে,
-“আপু দেখছো না মেঘ নিজের হুশে নেই। এই অবস্থায় শিক্ষার কথা কিভাবে বলো.. “
পিহুর কথায় বিরক্তি প্রকাশ করে অন্যদিকে ফিরে সে। অন্যদিকে মেঘ বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ রাস্তা দেখছিলো। হঠাৎ রাস্তায় এক মহিলাকে দেখে এমন এক আবদার করে বসে, যে রুদ্রের সাথে সাথে নাকে মুখে কাশি উঠে যায়। পিহু নিজেও লজ্জায় পড়ে যায় সামিয়া তো রাগে কটমট করে তাকিয়ে আছে।
-“আমিও প্রেগন্যান্ট হবো, ওই মহিলার মতো পেট ফুলিয়ে হাঁটবো। আমাকে প্রেগন্যান্ট করে দিন না.. “
বলে রুদ্রের দিকে অবুঝের মতো তাকিয়ে আছে মেঘ। গাড়ি এক সাইডে পার্ক করে রুদ্র, দুই ডুগে এক বোতল পানি খেয়ে ফেলে বেচারা। প্রসঙ্গ চেঞ্জ করতে বলে,
-“ম..মেঘ আইসক্রিম না খাবে বলেছিলে এনে দিচ্ছি দাঁড়াও..”
মেঘ তাড়াতাড়ি রুদ্রের হাত ধরে তাকে আটকে দেয়। ঠোঁট হালকা উল্টে করুন সুরে বলে,
-“না না আগে বলেন আমাকে পেট ফুলিয়ে দিবেন… “
রুদ্র পারলে গাড়ি ভেঙে মাটির নিচে ঢুকে যাবে। বোনেদের সামনে বউয়ের এমন আবদার নাউজুবিল্লাহ।
-“দে..দেখো মেঘ তোমার ফেভারিট চকোলেট ফ্লেভারের আইসক্রিম আনছি কেমন?”
-“না না আমাকে আগে ফুলিয়ে দিন নয়তো আমি কাঁদবো… এ্যা এ্যা এ্যা। “
রুদ্র পড়ে ফেসাদে, মেঘকে থামাতে বলে উঠে,
-“হ্যা হ্যা ফুলিয়ে দিবোনে এবার থামো প্লিজ… “
রুদ্রের কথায় কান্না থেমে যায় মেঘের মুখে হাসি ফুটে উঠে। পিহু মুখ চেপে হাসছে। রুদ্র তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নেমে যায় ডোর লক করে সামনের দোকানের দিকে এগোয়। যেতে যেতে বলে,
-“খালি সজ্ঞানে আসো তারপর দেখাচ্ছি পেট ফুলায় কেমনে।”
আইসক্রিম নিয়ে একটু পরই চলে আসে। মেঘের হাতে একটা, বাকি দুইটা পেছনে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। আইসক্রিম পেয়ে খেতে লাগে মেঘ। মুখ ভড়িয়ে ফেলেছে একদম। রুদ্র একটু পর পর টিস্যু দিয়ে মুছে দিচ্ছে তো ড্রাইভ করছে। সব সিনই পিহু মোবাইলে ক্যাপচার করছে। সামিয়ার খুবই অসহ্য লাগছে,
-“ধুর ভেবেছিলাম এই মেয়ে নেশা হলে অপদস্ত হবে রুদ্র ভাই রেগে যাবে। তা না আরও মাথায় চড়ে বসেছে। ইচ্ছে করছে এক থাপ্পড় দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলি।”
সামিয়ার ভাবনা কাটে মেঘের কথায়। মেঘ তার হাতের অর্ধেক খাওয়া আইসক্রিমটা রুদ্রের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলছে,
-“নিন আপনিও খান… “
সামিয়া চটজলদি বলে উঠে,
-“ইয়াক এই মেয়ে তোমার মুখের টা খাবে কেনো..”
মেঘ হালকা করে মাথা ঘুরিয়ে চোখ গরম করে বলে,
-“এই ডাইনি চুপ,তোর মুখ দিয়ে গন্ধ বের হচ্ছে….”
রুদ্র বেশ বুঝছে সে না খেলে এই মেয়ে নড়বে না তাই একটু মুখে নেয়৷ মেঘ ও খুশি খুশি মনে বাকিটা খেতে শুরু করে। বাড়ির সামনে আসতেই পিহু ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে। রুদ্র মেঘকে নিয়ে রুমে চলে আসে।
——————
ঘরের দরজা লাগিয়ে একটা শ্বাস ফেলে। মেঘের মুখ মুছে দিয়ে তাকে বিছানায় বসায় । নিজেও ফ্রেশ হতে যায়, ক্লান্ত সে।
চুল মুছতে মুছতে বের হয় ওয়াশরুম থেকে। হঠাৎ নজর যায় বিছানায় চুপচাপ বসে থাকা মেঘের দিকে, লাল শাড়ি ফর্সা শরীরে মিশে আছে, আবেদনময়ী লাগছে, গলার বা পাশের তিলের দিকে চোখ যায়। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজায়, তার গলা শুকিয়ে আসছে। ঘোর ধরা চোখে চেয়ে আছে। এক পা এক পা করে এগোয় মেঘের দিকে। মেঘ রুদ্রকে দেখে হুড়মুড়িয়ে ছুটে আসে,
-“কোথায় ছিলেন আপনি, আমার এই ঘরে একা থাকতে ভয় লাগে তো, সব কিছু ব্ল্যাক ব্ল্যাক… “
মেঘ বলতে বলতে রুদ্রের খালি গায়ের দিকে নজর যায়। তার সিক্স প্যাক দেখে আঙুল দিয়ে গুতোগুতি শুরু করে অবাক হয়ে বলে,
-“আরে ৬ টা বিস্কিট…..”
রুদ্র শান্ত তবে তার চোখ নেশালো, মেঘের থুতনি এক আঙুলে তুলে। একই দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধরা গলায় উচ্চারণ করে,
-“রেড ভেলভেট… “
মেঘ রুদ্রের পানে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। মেঘকে তার একদম কাছে টেনে আনে। দুজনের চোখের দৃষ্টি এক, তবে একজনের চোখে অবুঝ পনা আর আরেকজনের নেশা। এক হাতে মেঘের কোমর পেচিয়ে আরেকটু উঁচু করে তাকে। মেঘ দুই হাতে রুদ্রের গলা জড়িয়ে ধরে। রুদ্রের অন্য হাত মেঘের চুলের মধ্যে গুজে মাথাটা একটু পেছনের দিকে টান দেয়, হঠাৎ গলার তিলটায় মুখ গুজে দেয়। ধীরে ধীরে নিজের ঠোঁট ছোয়ায় একবার…. দুইবার….. এভাবে বেশ কয়েকবার, হাত বিচরণ করছে কোমরে। রুদ্র আজ নিজের মধ্যে নেই।
মেঘ বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলেও এবার তার সুরসুরি লাগছে। খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে বলে,
-“আপনি কি করছেন আমার তো কাতুকুতু লাগছে…. “
মেঘের কথায় রুদ্র থেমে যায়। টনক নড়ে সে কি করছিলো। দ্রুত মাথা তুলে, নিজের কাজে নিজেই ভড়কায়,
-“শিট কি করছিলাম! আম সরি আম সো সরি মেঘ, আমি কোনো সুযোগ নিতে চাইনি….”
মেঘকে ছেড়ে দেয়, নিজেকেই নিজে গালি দিচ্ছে রুদ্র মেঘ হুশে নেই আর সে কিনা,
-“ইডিয়ট রুদ্র হোয়াট আর ইউ ডুয়িং, দিস ইজ নট ইউর ক্যারেক্টার,… “
নিজের চুল টেনে ধরে। মেঘের দিকে তাকায়,
-“বাট সে আমাকে টানছে কাছে ভীষণ ভাবে কাছে টানছে… “
তখনি দরজায় কেউ নক করে। দরজা খুলতেই দেখে পিহু হাতে লেবুর শরবত নিয়ে এসেছে,
-“ভাইয়া এটা খাওয়াও মেঘকে, নেশা কেটে যাবে টক খেলে.. “
রুদ্র মাথা নেড়ে গ্লাসটা নিয়ে দরজা লাগিয়ে পেছন ফিরতেই ভ্রু কুঁচকে যায় মেঘ নেই “কই গেলো এই মেয়ে”। তাড়াতাড়ি বারান্দায় যায়, যা ভেবেছিল তাই মেঘ এখানেই মেঝেতে বসে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে। রুদ্র এগিয়ে গিয়ে ডাকে,
-” মেঘ উঠো এইটা খেয়ে নাও.. “
মেঘ রুদ্রের দিকে অবুঝ চোখে তাকায়। হাত দিয়ে ইশারা করে বসতে পাশে। রুদ্র চুপচাপ বসে পড়ে। রুদ্রের ঘাড়ে মাথা রেখে বলে,
-“আকাশে কয়টা তারা আছে? “
-“অসংখ্য যা গণনার করা যায় না…”
মেঘ রুদ্রের বাহু জড়িয়ে ধরে মাথাটা আরও ভালোভাবে ঘাড়ে রাখে। রুদ্রের ভীষণ ভালো লাগছে মুহূর্তটা। মেঘের স্পর্শ তার বুকে প্রশান্তির ঢেউ তুলছে। সে হাতের শরবতের দিকে তাকায়, তারপর বারান্দা দিয়ে ফেলে দেয় গ্লাসটা সাইডে রাখে মেঘের দিকে চেয়ে বলে,
-“থাকোনা আজ রাতটা এমন, ভালো লাগছে অন্যরকম ভালো লাগছে। নতুন অনুভূতি ভালোই লাগছে..”
মেঘ রুদ্রের দিকে মাথা তুলে তাকায়, কি বুঝলো কে জানে তবে মুচকি হেসে মাথা নাড়ে। তা দেখে রুদ্রের মুখে হাসি ফুটে উঠে। মেঘকে তার হাত থেকে ছাড়িয়ে আদুরে বাচ্চার মতো বুকে নেয়, একদম জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে,
-“আমার ‘বোকাফুল’, এবার শান্তি লাগছে..”
প্রায় ১ ঘণ্টা পর মেঘ সেভাবেই ঘুমিয়ে গেছে। রুদ্র তাকে কোলে নিয়ে বিছানায় রেখে, লাইট নিভিয়ে নিজেও এসে পাশে শোয় মেঘকে তার বালিশ থেকে নিজের বুকে নিয়ে আসে। সেভাবেই ঘুমিয়ে যায় সে নিজেও। সেদিন রাতটা কাটে এভাবেই…
————————
সকালের দিকে মেঘের ঘুম ভাঙে। নিজেকে রুদ্রের বুকে আবিষ্কার করে ধরফরিয়ে উঠে বসে। মাথাটা ভীষণ ভার ভার লাগছে, মাথায় চিন্তা আসে সে তো পার্টিতে ছিলো এখানে কিভাবে আসলো। মনে করার চেষ্টা করে তবে ব্যর্থ।
পাশ ফিরে দেখে রুদ্রের ঘুম ঘুম চেহারা। মাথার নিচে এক হাত দিয়ে শোয় তার দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ চটজলদি প্রশ্ন ছুড়ে মারে,
-“আমি এখানে আসলাম কখন “
রুদ্র ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলে,
-“কালকে রাতেই তো, পেট ফুলাতে না এলে। “
-“মানে কিসের পেট ফুলাতে, আমি তো পার্টিতে ছিলাম। তারপর… তারপর আর মনে পড়ছে না।”
-“কি জানি বলে রুদ্র উপুড় হয়ে আবার ঘুমিয়ে যায়। “
মেঘ এসব ভাবতে ভাবতেই ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে নেয়। তারপর নিচে নামে। পিহুকে ড্রয়িং রুমে দেখে তার পাশে গিয়ে বসে। মেঘকে দেখে পিহু হাসতে শুরু করে,
-“আজব আমাকে কি জোকার লাগছে এভাবে হাসছিস কেনো?”
পিহু হাসতে হাসতেই বলে,
-“ভাই কালকে তুই যা করলি এরপর আর না হেসে পারি.”
-“আমি আবার কি করেছি… “
-“তুই কি করিসনি সেটা বল ওই আমার মাগো.. আমার ভাইকে নাকানিচুবানি খাইয়েছিস ওই আমার মাগো…”
পিহু বলছে আর হেসে হেসে আধমরা। মেঘ অবাক কিসব বলছে এই মেয়ে।
-“আমাকে ক্লিয়ার করে বলবি? “
পিহু মোবাইল বের করে কালকের গাড়িতে যেই ভিডিওগুলো করেছে সেগুলো দেখায়। মেঘের চোখ ছানাবড়া এইটা কি আসলেই সে? নিজেই চিনতে পারছে না। তার মানে একটু আগে রুদ্র পেট ফুলানোর কথা এইটা মিন করে বলেছে “আস্তাগফিরুল্লাহ”। লজ্জায় মেঘের মুখ লাল-নীল হয়ে যাচ্ছে। পিহু বলে,
-” ভাই এইটা তো কম তুই ড্রাংক অবস্থায় এর আগে আরও যা যা করেছিস। সামিয়া আপুকে তো চুলে টেনে ধরে ডাইনি ডাইনি করছিলিস। “
মেঘ মনে মনে শেষ না জানি আরও কি কি করেছে ছি। আবার মনে মনে খুশি হয় এক উছিলায় এই মেয়েকে মেরেছে।
তবে এখন রুদ্রের সামনে যেতে লজ্জা লাগছে। ভেবে নেয় তার সামনে কয়েকদিন যাবেই না। পিহুর সাথে ঘুমাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। সারাদিন রুদ্রের আশেপাশেও ঘেঁষেনি মেঘ।
সন্ধ্যার দিকে মেঘ দ্রুত ছাদের দিকে যায়। কাপড় আনতে ভুলে গেছে। তাদের বেডরুম পেরিয়ে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে কেউ তাকে টান মেরে রু…….
চলবে…….
[ তোমাদের কোন মেঘকে ভালো লাগে? নরমাল মেঘ নাকি এই মেঘ..]
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৪
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৫
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬৩
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৭
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১২
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩১
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৮
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫০