#আড়ালে_তুমি |২৪|
#সাইদা_মুন
[ ন্যাকামি থাকবে, ভালো না লাগলে স্কিপ করবেন ]
কোমড়ে টান অনুভব হতেই কারো সাথে একদম মিশে যায় মেঘ। ধম বব্ধ শ্বাস নিয়ে তাকাতেই রুদ্রের চেহারাটা ভেসে উঠে। চোখ ঝলমল করে উঠে, এতোক্ষণের ভয় ডর সব যেনো উধাও হয়ে গেছে।
রুদ্র মেঘকে সেভাবেই ধরে দু’তালার একটা খালি রুমে নিয়ে আসে। ছেলেগুলোর কথা সে শোনেনি। রুদ্রের চোখ মুখ শক্ত, রেগে আছে তবে কেনো? প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেঘ। রুদ্র ক্ষিপ্ত গলায় বলে,
-“শাড়ি যেহেতু সামলাতেই না পারো তো পড়ার কি দরকার।”
মেঘ অবাক হয়ে বলে,
-“সামলাতে পারবো না কেনো, “
রুদ্রের গলা আরও কঠিন হয়ে উঠে,
-“ছেলেদের শরীর দেখিয়ে সামলাও? নিজের সুন্দর কোমড় উম্মক্ত করে রেখেছো মানুষকে দেখাতে?”
রুদ্রের কথা কর্নপাত হতেই চমকে কোমড়ের দিকে নজর যায় আঁচল অনেকটা সরে গেছে যার ফলে পেট দেখা যাচ্ছে। দ্রুত টেনেটুনে ঠিকঠাক করে নেয় তবে সিল্কের শাড়ি হওয়ায় এক জায়গায় স্থির থাকছে না। ফের রুদ্রের কথায় মাথা তুলে তাকায়,
-“কি উত্তর দিচ্ছো না কেনো?”
মেঘের কেনো জানি ভীষণ রাগ লাগছে,
-“আপনার সমস্যা কি অন্যরা দেখলে। আপনার তো কিছু যায় আসে না। “
মেঘের কথায় রুদ্র চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে। মেঘের তখনকার মেয়েটির জড়িয়ে ধরার কথাটি মাথায় আসতেই আবার বলে উঠে,
-“ধুর আপনি আমাকে আনলেন কেনো? পেছনের ছেলেগুলো কতো প্রশংসা করছিলো, আমাকে নাকি হ*ট লাগছিল…”
কথা শেষ করার আগেই রুদ্র ঝরের বেগে এগিয়ে এসে মেঘের দুইগাল চেপে ধরে। রাগে কপালের রগ ফুলে গেছে, চোখ লাল। মেঘ ভড়কে যায়, এতো রেগে যাবে ভাবেনি। রুদ্র চিল্লিয়ে বলে,
-“কোন ছেলে বলেছে এই কথা, এক্ষনি দেখাবি। ওর এতো বড় কলিজা,একদম ছোট করে দিবো। বল কে বলেছে.. “
মেঘের গাল ছেড়ে হাত ধরে যেতে নেয়। তবে মেঘ জায়গায় দাঁড়িয়ে নড়ছে না। রুদ্রের এমন আচরণে সে ভয় পেত্ব যায় যদি সত্যি ঝামেলা করে,
-“আপনার সমস্যা কি আমাকে যা খুশি বলুক, আপনি এতো হাইপার হচ্ছেন কেনো?”
রুদ্র দাঁড়িয়ে যায় চুপচাপ কপালে স্লাইড করছে রাগ কমাতে। তাকে কিছু বলতে না দেখে মেঘ সাইড কেটে যেতে নেয়। রুদ্র তার হাত ধরে ফেলে,
-“নিচে যাবেনা এখন, আগে পিন মেরে ভালোভাবে ঠিক করবে… “
মেঘের কাছে এক্সট্রা পিন নেই পিহুর থেকে নিতেই যেতে নিয়েছিল। তবে রুদ্রের আটকানোতে তাকে আরেকটু রাগাতে বলে,
-“তোহ আমি তো ঠিক করবো না। এমনেই ভালোলাগছে, সব ছেলেরা তাকাবে। “
কথাটি যেনো আগুনে ঘী ঢালার জন্য যতেষ্ট। রুদ্র এবার যেনো কন্ট্রোল এর বাইরে। মেঘকে ধাক্কা মেরে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে তার দুই গাল আবারো চেপে ধরে,
-“তুই কি রাস্তার মেয়ে? তোর শরীর যাকে তাকে দেখাবি?”
মেঘ ব্যাথায় হাত সরানোর চেষ্টা করছে তবে রুদ্রের শক্তির কাছে পেরে উঠছে না। সে বুঝছে না তাকে তো বউ হিসেবেই মানে না তো এতো কিসের রাগ।
রুদ্র চিল্লিয়ে বলে উঠে,
-“এই রুদ্র তার জিনিসে কারো ছায়া ও পড়তে দেয়না, সেখানে তার বউকে এভাবে খোলামেলা রাখবে ভাবলি কি করে। মাথায় ঢুকাই রাখিস যতোদিন এই রুদ্রের নামের সাথে জড়িয়ে আছিস ততোদিন অন্য কেউ তোর দিকে তাকাতেও পারবে না।”
মেঘ তাচ্ছিল্য করে বলে,
-“আপনাকে যে কেউ এসে জড়িয়ে ধরতে পারবে সেটা কিছুই না, আর আমার দিকে তাকিয়েছে বলেই এখন আমার দোষ।”
মেঘের কথায় রুদ্র কর্কশ গলায় বলে,
-“আমি কাউকে বলিনি আমাকে জড়িয়ে ধরতে, ওই মেয়ে হুট করে এসে ধরলে আমার কি করার। তবে তুই নিজের শাড়ি ঠিক রাখতে পারিসনি সেটা তোরই দোষ… “
বলেই হাত ছেড়ে দরজা দিয়ে বের হতে হতে বলে যায়,
-“এখানেই থাকবে আমি পিহুকে খুজে পিন নিয়ে আসছি। দরজা লাগিয়ে রাখো… “
মেঘ মুখ ভেঙ্গিয়ে খাটে গিয়ে বসে। নিজের গাল ঘষছে আর বির বির করছে,
-“গন্ডারের হাত … “
দুই মিনিট পর হঠাৎ দরজায় টুকার শব্দে মেঘ ভাবে হয়তো রুদ্র এসেছে তাই গিয়ে দরজা খুলে। তবে বাইরে সামিয়াকে দেখে ব্রু কুচকে যায়। সামিয়া হাতে দুটো গ্লাস নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলে,
-“এখানে একা একা কি,”
-“শাড়ি ঠিক করতে এসেছিলাম।”
সামিয়া একটা জুশের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে,
-“নাও আসার পর তো কিছু খাওনি, এটা খাও ভালো লাগবে।”
মেঘের কপালে কিছুটা চিন্তার ছাপ পড়ে, “সামিয়া তার এতো খেয়াল রাখছে হঠাৎ “। তবে এসব ভাবনা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দেয়। গ্লাসটা হাতে নিয়ে থাংক্স বলে। মেঘের খাওয়া শেষ হতেই সামিয়া উঠে দাঁড়ায়,
-“মেঘ তুমি থাকো আমাকে আব্বু ডেকেছিলো আসছি।”
মেঘ আচ্ছা বলে উঠে দাঁড়ায় দরজা লাগানোর জন্য, তবে উঠতেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। সাথে সাথে বসে যায় আগের জায়গায়। চারিদিক কেমন ঘোলাটে লাগছে তারপর আর কিছুই হুশ নেই।
——————
রুদ্র পিহুর থেকে পিন নিয়ে সেই রুমে আসতেই ব্রু কুচকে যায়। দরজা লাগিয়ে রাখতে বলেছিল এই মেয়ে খুলে রেখেছে। যেয়েই একটা ধমক দিবে ভেবে ঢুকে পড়ে। তবে ঘরে ঢুকতেই হতভম্ব হয়ে যায়।
-“হ্যান্ডস আপ, চিংগাম কি চাঙ্গুলছে বাচনা ইয়ামপসিবল, মাইনে বলা ইয়ামপসিবল…”
কোমড়ে আঁচল বেধে খাটের উপর দাঁড়িয়ে হাতের চিড়ুনি বন্ধুকের মতো রুদ্রের দিকে তাক করে দাড়িয়ে আছে মেঘ।
-“হোয়াট দ্যা..”
রুদ্র অবাক; হলো কি এই মেয়ের। সামনে এগোতে যাবে মেঘ লাফিয়ে উঠে, মুখ দিয়ে বলছে,
-“ডিস্কাও ডিস্কাও…. ওই কে আছো ট্রিপল নাইনে কল লাগাও, ব্যাটম্যান কই, সুপারম্যান ডাক, হেলিকপ্টার নামাও ডাকাত এসেছে… ভ্রুম ভ্রুম.. “
রুদ্রের পা সেখানেই থেমে যায়। এইটা কি মেঘ? কি করছে, কিসব বকছে। রুদ্র বিষ্ময় নিয়ে বলে,
-“মেঘ হোয়াট আর ইউ ডুয়িং.? “
তৎক্ষনাৎ মেঘ টলতে টলতে তেড়ে আসে রুদ্রের দিকে। তার থেকে খাটো হওয়ায় পা উচু করে, তবে শরীরের ব্যালেন্স করতে পারছে না। পড়ে যেতে নেয় রুদ্র তার কোমড় পেচিয়ে ধরে রাখে। এবার মেঘ চিরুনিকে চাকুর মতো করে রুদ্রের গলায় ধরে,
-“এই মেঘ কিডা আই এম চিংগাম স্যার.. যা আছে সব বের কর.. না না উমম “
কিছু একটা ভেবে বলে,
-“এটা তো জনের ডাইলগ.. “
রুদ্র কিছুই বুঝছে না সে হাসবে না সিরিয়াস হবে। মেঘের মুখের এক্সপ্রেশন খুবই ফানি লাগছে। আবার এমন করছে কেনো সেটাও বুঝে উঠছে না। তবে রুদ্রের ভাবনা কাটে মেঘের কান্নায়। হুট করে ঠোঁট ভেঙে কেদে উঠে মেঘ চোখে পানি নেই তবে মুখে শব্দ।
রুদ্র ঘাবড়ে যায়। দ্রুত মেঘকে টেনে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়,
-“কি হয়েছে কাদছো কেনো?”
মেঘ রুদ্রের কথায় ফেলফেল করে তাকিয়ে থাকে তার মুখের দিকে হঠাৎ এক অদ্ভুত কাজ করে বসে। রুদ্র যেনো একদম জমে গেছে।
মেঘ রুদ্রের দুই গাল টেনে ধুম করে ডান গালে একটা কিস করে বসে। তারপর মুখের একদম সামনে গিয়ে চোখ বড় বড় করে রুদ্রের পুরো মুখ দেখতে লাগে,
-“আপনি না অনেক কিউট, দেখলেই মনে চায় একদম চকোলেটের মতো খেয়ে ফেলি। একটু খাই?”
বলেই হা করে কামড় দিতে এগোয়। রুদ্র দ্রুত মেঘের মুখে ধরে ফেলে। সে বেশ বুঝতে পারছে মেঘ ড্রাংক , নয়তো এসব কথা মেঘের মুখে সজ্ঞানে বাপের জন্মেও বেড়োবে না।
মেঘকে ধরে বিছানায় বসায়,
-“এই স্টুপিড, তুমি কি কিছু উল্টোপাল্টা খেয়েছো? কি খেয়েছো?”
রুদ্রের কথায় মেঘ কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে গালে একটা আঙুল দিয়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। মেঘের এই এক্সপ্রেশন দেখে রুদ্র আর হাসি কন্ট্রোল করতে পারেনি। জুড়ে হেসে উঠে, একদম বাচ্চাদের মতো বিহেভ করছে, রুদ্র মেঘের গাল টেনে বলে উঠে,
-“মেঘ তোমাকে খুব কিউট লাগছে একদম বেবি মেঘ…”
রুদ্র হাসছে, তবে বেচারার হাসি বেশিক্ষণ স্থির হয়নি, মেঘ আবারো কেঁদে উঠে। তবে এবার চোখ বেয়ে পানি বেরচ্ছে। রুদ্র ভড়কে যায়,
-“এই মেঘ কি হয়েছে, ব্যাথা পেয়েছো কোথাও? খারাপ লাগছে?”
রুদ্রের বুকে ধাক্কা মেরে তার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। অসহায় কণ্ঠে বলে উঠে,
-“আপনি না খুব খারাপ। আমাকে আজ অব্দি একটাও গিফট দেননি, আমার সাথে ভালো করে কথা বলেন না। আমাকে একটুও ভালোবাসেন না। কিন্তু ওই ডাইনিকে ঠিকই ভালোবাসেন, তাকে ঠিকই গিফট দেন, তার সাথে হেসে কথা বলেন। তো আমায় বিয়ে করেছেন কেনো? তাকেই বিয়ে করতেন। আমি কি বলেছি রুদ্র আমায় বিয়ে করুন?”
রুদ্রের কপালে ভাঁজ পড়ে। অবাক হয়ে বলে,
-“আমি আবার কাকে ভালোবাসি, কিসব বলছো?”
মেঘ আরও ডুকরে কেঁদে উঠে,
-“আমি কি খুব খারাপ? আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায় না? জানেন আব্বু মারা যাওয়ার পর আমাকে না কেউ একটু আদর করেনি, ভালোবাসেনি। আব্বু তো এক্সিডেন্টে মারা গেছে, আমি তো মারিনি। তাহলে আমাকে কেনো সবাই অপয়া অলক্ষি বলে দূরে সরিয়ে দেয়?”
রুদ্র হতবাক হয়ে শোনছে মেয়েটির ভিতরের চাপা কষ্ট। মেঘ একটু থেমে আবার বলে উঠে,
-“বড় আব্বু যাই আমাকে সাপোর্ট করতো, ভালোবাসতো তবে এখন উনিও আমাকে ঘৃণা করেন, আমার খোঁজই নেননি আর। আমার মা তো আমাকে ছোট থেকেই অপছন্দ করে। আমি একটু আদর পাওয়ার লোভে কতো কেঁদেছি জানেন, কিন্তু আম্মু রিমিকে আদর করতো, আমাকে করতো না, উল্টো আমার উপর রাগ দেখাতো, মারতো। আচ্ছা, কোনো মা কি তার পেটের মেয়ের সাথে এমন করতে পারে?”
রুদ্রের ভীষণ খারাপ লাগছে। মেঘকে টেনে একহাতে জড়িয়ে ধরে। মেয়েটা হুশে নেই, তবে মনের ভেতর চেপে রাখা সব কথাই বলছে। রুদ্র ভীষণ অবাক—এইটুকু মেয়ে এতো কষ্ট সহ্য করেছে। খুব মনোযোগ দিয়ে শোনছে তার অভিযোগগুলো। তার কথায় সাড়া দিতে মাথা নেড়ে বুঝায় “না”…
মেঘ হেসে বলে,
-“কিন্তু আমার মা এমন করতে পারে। আপনাকে একটা সিক্রেট বলি? আমি না বড় হয়ে সবসময় ভাবতাম বিয়ে করে অনেক দূর চলে যাবো আর তাদের কাছে ফিরবো না। হিহি…আমাকে বিয়ে পাগলি মেয়ে ভাবছেন তাই না? কিন্তু আমি বিয়ের পাগল না, শুনেছিলাম বিয়ের পর সবার হাসব্যান্ড তাদের বউকে অনেক ভালোবাসে, আদর যত্ন করে। তাই আমিও বিয়ে করতে চাইতাম অন্তত আমার বর আমাকে ভালোবাসবে। আমি না ভেবে রেখেছিলাম তখন জামাইর সাথে অনেক সুখের সংসার করবো। ছোট সংসার হবে, আমাকে অনেক ভালোবাসবে। কিন্তু আমি না অনেক বড় একটা সংসার পেয়েছি। মা-বাবার ভালোবাসা শ্বশুর-শাশুড়ির থেকে পাচ্ছি। কিন্তু যার সাথে সংসার করি, সে আমাকে চায় না। সে আমাকে বউ হিসেবেই মানে না, তার মনে অন্য কেউ। তাহলে এতো কিছু পেয়ে কি লাভ হলো?”
রুদ্র নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে মেঘের মুখ পানে। তার ভেতরে তোলপাড় চলছে। তার প্রতি মেঘের এতো অভিযোগ। নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে, আসলেই তো তাদের সম্পর্ক আর পাঁচটি স্বামী-স্ত্রীর মতো না। তবে বিয়ে করে কি মেঘের জীবন নষ্ট করলো সে? কিন্তু অন্য চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তার মনে কেউ আছে সেটা মেঘকে কে বললো? তার তো এমন কেউ নেই।
মেঘ তার মাথাটা রুদ্রের কাঁধে রাখে, ফুপিয়ে উঠে। রুদ্র তাকে শান্ত করতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
তখনই সেখানে পিহু আর সামিয়া আসে। মেঘ দরজার সামনে সামিয়াকে দেখে রেগে যায়। রুদ্রকে ছেড়ে উঠে যায় তার দিকে। ডিরেক্ট সামিয়ার চুলে ধরে,
-“এই ডাইনি তুই আবার এসেছিস, আমার জামাই কেড়ে নিতে। লজ্জা করে না তোর…”
হঠাৎ আক্রমণে সামিয়া বুঝে উঠেনি, তবে মুহূর্তেই মেঘের কথা শোনে শুকনো ঢোক গিলে “এই রে, এই মেয়ে যদি বলে দেয় সেদিনকার কথা তাহলে তো বাঁশ খাবো”। তাই মেঘের কথার মাঝেই চিল্লানো শুরু করে,
-“আহ মেঘ, করছো কি। রুদ্র ভাইয়া দেখো না, কি করছে মেঘ! পিহু ছাড়া!”
পিহু-রুদ্র দ্রুত মেঘকে ছাড়িয়ে আনে তার থেকে। রুদ্র মেঘকে চেপে ধরে বলে,
-“ও ফুললি ড্রাংক। সেই কখন থেকে উল্টোপাল্টা আচরণ করছে। আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি গাড়িতে, তোরা গেলে আব্বুকে বলে আয় ফাস্ট।”
পিহু চিন্তিত হয়ে বলে,
-“তুমি ওকে একা নিয়ে যেতে পারবে যেই অবস্থা?”
-“পারবো…”
সামিয়া-পিহু চলে যায় এরশাদুল চৌধুরীর উদ্দেশ্যে। এদিকে রুদ্র মেঘের শাড়ির আঁচল একদম শরীরে পেঁচিয়ে দেয়। তাকে ধরে কোনোরকমে বেরিয়ে আসে। মেঘ একবার এদিকে ছুটে নেয় তো আবার ওদিকে।
গেটের সামনে আসতেই বাধে আরেক ঝামেলা। পেছন থেকে তানিয়া “রুদ্র রুদ্র” ডেকে ছোটে আসে। একদম তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। ন্যাকামি করে বলে,
-“কই ছিলে তুমি এতক্ষণ ধরে খুঁজছি। কোথায় যাচ্ছো? আসো আমরা কাপল ডান্স করবো।”
মেঘ যেনো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। দ্রুত টলতে টলতেই রুদ্রের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে, শাড়ির আঁচলটা রুদ্রের মাথার উপর দিয়ে ঢেকে দেয়। বাসর ঘরে বউকে যেভাবে ঢেকে বসিয়ে রাখে ঠিক তেমন করে। শুধু এটা করেই চুপ নেই সে। রুদ্রকে কভার করতে দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে একদম তানিয়ার সামনে দাঁড়ায়। তানিয়া মেয়েটি অবাক হয়ে চেয়ে আছে। মেঘ চোখ বড় বড় করে রেগে বলে,
-“এই শাকচুন্নি, আমার হ্যান্ডসাম জামাইর দিকে এত কিসের নজর? আর একবার টাচ করলে তোকে টাকলু বানাই, টাকলা-টাকলা গানে নাচাবো। পরে শেখ হাসিনার মতো লুকিয়ে পালাবি। এইটা আমার পুকি জামাই, খালি আমার! শুনেছিস?”
রুদ্র মাথা থেকে আঁচল সরিয়ে নেয় সাথে সাথে। ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় নিজে বারি দিতে। মেঘকে ধরতে ধরতে বলে,
-“বইন কিছু বলিস না, এখান থেকে যা প্লিজ, আমার বউরে আর উছলাইস না।”
বলতে বলতে মেঘকে টেনে টুনে গাড়ির দিকে নিয়ে আসে। এদিকে তানিয়া বেচারি মুখ ভোঁতা করে সেখানেই দাঁড়িয়ে, সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার।
——————
গাড়ির সামনে আসতেই রুদ্র দরজা খুলে, তবে মেঘ রুদ্রের হাত ফসকে দৌড়ে গাড়ির সামনে গিয়ে রাস্তায় বসে পড়ে। এদিকটা পার্কিং এরিয়া, মানুষজন নেই। রুদ্র তাড়াতাড়ি মেঘের সামনে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে,
-“মেঘ, কি করছো এটা রাস্তা। উঠে আসো, আমরা বাসায় যাবো।”
তবে মেঘ নাছোড়বান্দা, সে যাবেনা,
-“না না, আমি যাবোনা। আমি আইসক্রিম খাবো।”
-“কিনে দিবো তো, তুমি আসো আগে গাড়িতে, তারপর দিচ্ছি।”
তবে মেঘ তার কথায় অটল,
-“আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না, একটা আইসক্রিমই তো চেয়েছি শুধু, এ্যা…”
রুদ্র হতাশ। এই মেয়ে আজকে নাকানি-চুবানি খাওয়াচ্ছে তাকে। আবার কান্না শুরু। তাকে সামলাতে মেঘের দুই গাল ধরে আদুরে সুরে বলে উঠে,
-“না না, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তো। সত্যি কিনে দিবো। দেখো, এখানে কোনো দোকান নেই, সামনে আছে, সেখান থেকে কিনে দিবো।”
মেঘ ফ্যালফ্যাল করে তাকায় রুদ্রের দিকে,
-“আপনি সত্যি আমাকে ভালোবাসেন?”
রুদ্র মেঘকে কোলে তুলে নেয়, গাড়িতে বসাতে বসাতে তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে,
-“ভালোবাসি কিনা জানি না, তবে তোমার আশেপাশে থাকতে ভালো লাগে। তোমার কান্না আমার সহ্য হয় না। তোমার কিছু হলে আমার খুব খারাপ লাগে। এক কথায়, তুমি আমার অভ্যাস হয়ে গেছো।”
মেঘের মাথায় কিছুই ঢোকেনি। তাকে পেছনের সিটে বসিয়ে দেয়, তখন পিহুরাও চলে আসে। পিহুও দ্রুত গাড়িতে উঠে মেঘকে ধরে বসে থাকে। পিহুকে দেখে মেঘ অবাক চেহারা করে, তার নাক-গাল টানা শুরু করে,
-“আরে, তুমি তো আমার বান্ধুবি পিহুর মতো দেখতে।”
পিহু বেচারির নাক মুখ লাল হয়ে গেছে মেঘের টানাটানিতে,
-“আরে বইন, মাফ কর, আমিই পিহুরে…”
তখনই সামিয়া রুদ্রের পাশের সিটে বসে। মেঘের নজর সেদিকে যায়। পিটপিট করে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে, এইটা কে। মুহূর্তেই রেগে যায়। রুদ্র গাড়ি স্টার্ট দিবে এমন মুহূর্তে মেঘ চিল্লিয়ে উঠে,
-“এই ডাইনি সামনে কেনো বসেছে? আমার জামাইর কাছে একমাত্র আমি বসবো। এই মেয়ে, সর সর!”
বলতে বলতে সে গাড়ির ভেতর দিয়েই সামনের সিটে চলে যাচ্ছে। এদিকে রুদ্র তাকে ধরে সামিয়াকে বলছে,
-“তুই পেছনে চলে যা…”
সামিয়া রেগেমেগে পেছনে গিয়ে বসে। মেঘ সামনে বসে, পেছনে ফিরে সামিয়াকে ভেংচিয়ে দেয়। সামিয়া রাগে কটমট করছে। পিহু মেঘের এসব দেখে হাসতে হাসতে শেষ। রুদ্র তাকে সিটবেল্ট বেঁধে দিয়ে, স্পিডে ড্রাইভ করছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় যাবে বলে।
মেঘ একটা রিকশা দেখে বলে উঠে,
-“আরে হেলিকপ্টার… “
সামিয়া বিরক্তি নিয়ে বলে,
-“ওইটা রিকশা, হেলিকপ্টার মাটিতে চলে নাকি আজব।”
মেঘ মুখ ফুলিয়ে বলে,
-“না না ওইটা হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টার মাটিতে চলে আর রিকশা আকাশে উড়ে.. তাই না? “
রুদ্রের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে। রুদ্র মাথা নেড়ে হুহু করে। মেঘের আজব আজব কথা শোনতে শোনতে গাড়ি চলছে।
হঠাৎ গাড়ির সামনে একটা লোক চলে আসায় দ্রুত ব্রেক কষে, যার ফলে হাতে একটু ব্যথাও পায়। হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,
-“শিট, একটুর জন্য এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো, কেয়ারলেস পিপল…”
তবে মেঘের কথায় চটজলদি হতভম্ব হয়ে পাশে ফিরে তাকায়। মেঘ জানালা দিয়ে অর্ধেক বডি বের করে রেখেছে কাউকে বলছে,
-“ওই হালার*পুত………”
চলবে…….
[ কমেন্ট না করলে রুদ্র মেঘের ডিভোর্স করিয়ে দিবো কিন্তু…..]
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৩
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৫২
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬০
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩০
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২০
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪৫
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৭
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩২