Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৩


#আড়ালে_তুমি |২৩|

#_সাইদা_মুন 

হন্তদন্ত হয়ে বাগানে আসে রুদ্র। আম গাছের কাছে যেতেই দেখতে পায় দুই উড়নচণ্ডীকে, মেঘ আর পিহুকে। মেঘ গাছের বড় ঢালটায় উঠে গেছে আর তার পিছে পিহুও উঠছে, পেছন থেকে মেঘকে ধরে রেখেছে যেনো পড়ে না যায়। পিহু মেঘকে বলছে,

-“আর একটু আর একটু..”

রুদ্র পেছন থেকে গম্ভীর গলায় বলে উঠে,

-“এখানে হচ্ছেটা কি?”

মেঘ পিহু দুজনেই খুব সিরিয়াস হয়ে কিছু একটা করছিলো। হঠাৎ রুদ্রের গলায় দুজনেই কেঁপে উঠে। পিহু ব্যালান্স হারিয়ে মেঘকে ছেড়ে দেয়। গাছের অতোটাও উপরে সে উঠেনি বিধায় লাফ মেরেই নেমে যায়। এদিকে মেঘ বেচারি গাছের ঢালেই বসে আছে।

রুদ্র ধমকের সুরে বলে,

-“এই তোরা কি বাচ্চা?  এতো বড় বড় মেয়ে গাছে উঠে? পড়ে হাত-পা ভাঙতে?”

রুদ্রের ধমক খেয়ে মেঘ পিহু দুজনেই চুপসে যায়, মেঘ এতক্ষণ সাহস করে উঠলেও এখন নিচের দিকে তাকিয়ে জান যায় যায় অবস্থা। পিহু আমতা-আমতা করে বলে,

-“ভা…ভাইয়া…”

পিহুর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে উপরে মেঘের দিকে ফিরে। কর্কশ গলায় বলে,

-“এই মেয়ে, এতো উপরে যে উঠেছো এখন যদি পড়ে গিয়ে হাত-পা ভাঙে একবারও ভেবেছো?”

মেঘ ভয়ে গাছের ঢাল আঁকড়ে ধরেই মাথা ঝাঁকাচ্ছে যার অর্থ “না, সে এসব কিছুই ভাবেনি”। রুদ্র হতাশ, মেঘ ভয় পাচ্ছে দেখে শান্ত সুরে বলল,

-“নিচে নেমে আসো..”

এদিকে মেঘ রুদ্রের কথায় তাকায় নিচের দিকে। আবার সেভাবেই বসে থাকে তা দেখে রুদ্র চিল্লিয়ে বলে,

-“কি শুনতে পাচ্ছো না? নেমে আসতে বললাম। পড়বা এভাবে…”

মেঘ একবার গাছের ঢালের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার রুদ্রের দিকে। গাছের ঢালের পাখির বাসাটা অর্ধেক ঝুলে আছে, মূলত তাদের কারণেই। এটা এভাবে রেখেই নেমে যেতে মন মানছে না দুটো বাচ্চা পাখি এতে। তাই নিজের মনে সাহস জুগিয়ে বলে উঠে,

-“না না, পড়বো না, ওই পাখির বাসাটা ঠিক করেই নেমে যাবো।”

বলেই গাছের ঢাল ধরেই একটু একটু করে আগ বাড়তে শুরু করে। এর কাহিনি দেখে রুদ্র বারবার নেমে আসতে বলছে। তবে মেঘ ভাবছে এতদূর যেহেতু এসেছি তবে উদ্দেশ্য হাসিল করেই যাই। তাই আরও এগিয়ে যায়। পাখির বাসাটা হাত বাড়িয়ে কোনোভাবে জায়গায় রাখে যদিও অনেকটা ভেঙে গেছে।

অন্যদিকে রুদ্র এই মেয়ের কাজে রেগে মেগে গাছের ঠিক নিচেই দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই সুইমিংপুল কখন জানি পড়ে সেই ভয়েই। তবে রুদ্রের ভয় আর বেশিক্ষণ কাল্পনিক থাকলো না। তা বাস্তবে রূপ নিলো। মেঘ পাখির ঘরটা ঠিক জায়গায় রেখে পেছন দিকে যেতে গিয়ে পিছলে নিচের দিকে পড়ে। রুদ্র তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে দেয় কোনোভাবে মেঘকে ধরতে পারলেও, শেষ রক্ষা হয়নি। উপর থেকে পড়ায় তাকে ধরে স্থির থাকতে পারেনি, কয়েক পা পিছিয়ে যেতেই ধুম করে সুইমিংপুলে পড়ে দুজনেই।

দুজনেই পানিতে পড়ে জুবুথুবু অবস্থা, মেঘ কয়েক ঢোক পানি খেয়ে উঠে। রুদ্রও ভিজে গেছে। যেদিকটায় পড়েছে সেদিক বেশি গভীর না হওয়ায় মেঘ নিজেকে সামলে নেয়। তবে রুদ্রের দিকে ফিরতেই আঁতকে ওঠে। রেগে আছে প্রচণ্ড, চোখ লাল হয়ে আছে। চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে। হনহনিয়ে উঠে আসে রুদ্র।

বাগানের বেঞ্চে বসা রুদ্র তার সামনেই অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ আর পিহু। রুদ্র টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে গর্জন করে উঠে,

-“গাছে কিসের জন্য উঠেছিস?”

পিহু ভয়ে ভয়ে বলে,

-“ভা…ভাইয়া আমরা দোলনা বাঁধতে চেয়েছিলাম। নিচে থেকে দড়ি গাছের ঢালে লাগানোর চেষ্টা করছিলাম, ঠিক তখনই ভুলবশত দড়িটা লেগে পাখির বাসাটা অর্ধেক পড়ে যায়। আর মেঘের তা দেখে অনেক গিল্টি ফিল হচ্ছিলো তাই গাছে উঠে, ঠিক করার বুদ্ধি করে।”

নিজেকে বাঁচাতে পিহু আবার দ্রুত বলে উঠে,

-“কিন্তু আমি না করেছিলাম তোমার বউ কথা শোনেনি, সে আগে আগে উঠে পড়েছে।”

এদিকে মেঘ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে পিহুর দিকে। কত বড় বাটপার, মীরজাফর এই মেয়ে। সেও তো রাজি ছিলো, এখন আমাকে ফাঁসাচ্ছে।

রুদ্র রেগে মেঘের দিকে ফিরে কিছু বলতে নেবে মুহূর্তেই সে চুপসে যায়, হঠাৎ গলার অ্যাডামস অ্যাপল বারবার উঠা নামা করছে। কেমন অনুভূতি হচ্ছে সে বুঝে উঠছে না তবে কিছুটা ভুলভাল চিন্তা আসছে। ভিজে যাওয়ার ফলে কাপড় একদম শরীরে লেগে আছে মেঘের। শরীরের প্রত্যেকটা ভাঁজ স্পষ্ট। ততক্ষণই চোখ সরিয়ে নেয়। “শীট কি হচ্ছে, টা কি”। মনে মনে বিরবির করছে।

রুদ্রকে চুপচাপ দেখে পিহু বলে উঠে,

-“ভাইয়া এভাবেই দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি। আর এমন করব না তো, এবারই ফার্স্ট এন্ড লাস্ট প্লিজ।”

রুদ্র দ্রুত উঠে হাঁটা দেয় রুমের দিকে। যেতে যেতে বলে যায়,

-“আর যেনো এসব বাদরামি করতে না দেখি। আর মেঘ এক্ষুনি চেঞ্জ করে নাও।”

রুদ্র যেতেই মেঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে পিহুর উপর,

-“তুই আমার দোষ দিলি কেনো? তুই নিজেই তো বুদ্ধি দিলি।”

পিহু নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,

-“আরে পুরুষ আটকায় বউয়ের কাছে তাই তো তোর দোষ দিছি। দেখলি না তোকে কিছুই বলেনি। নয়তো আমাকে এতক্ষণে ঝাড়তো।”

তবে কে শোনে কার কথা, মেঘ টেনে টুনে পিহুকেও পুলে ফালায়। সে একা কেনো ভিজবে, তাকেও ভিজতে হবে।

————————

সন্ধ্যা ৬ টা চৌধুরী বাড়ির সকলেই রেডি, কিছুক্ষণের মধ্যেই বেরোবে পার্টির উদ্দেশ্যে। শুধু যাবেন না রুদ্রের মা চাচি দাদিরা।

মেঘকে তার শাশুড়ি নিজ হাতে তৈরি করে দিয়েছেন। পরনে তার রেড সিল্কের শাড়ি, সাথে সাদা স্টোনের ম্যাচিং ইয়াররিং, নেকলেস ও চুড়ি। মুখে হালকা মেকআপ আর ঠোঁটে ডার্ক রেড লিপস্টিক দিয়েছে। ব্যাস, তাতেই যেনো নজরকাড়া সুন্দর লাগছে।

মেঘের শেষ হতেই সিদ্দিকা বেগম তার থুতনিতে ধরে মাথাটা হালকা তুলেন,

-“মাশাল্লাহ, আমার ছেলের বউটাকে পরির মতো লাগছে। কারো নজর না লাগুক।”

মেঘের মুখে লজ্জামিশ্রিত হাসি ফুটে ওঠে। তখনই পিহু এসে হাজির। শাশুড়ি বউয়ের এত ভালোবাসা দেখে সে ফাজলামি করে বলে,

-“হুহ ডং শাশুড়ি বউ হবে সাপ আর নেউলের মতো তা না, দেখো এদের যেনো মা মেয়ে। আর আমি যে এদিকে একটা মেয়ে আছি সেটা ভুলেই গেছে।”

পিহুর কথায় সিদ্দিকা বেগম কপট রাগ দেখিয়ে তার কান মলে ধরে,

-“খুব পাজি হয়েছিস তো দেখছি। তোকে কি কম আদর করি?”

-“আহ মা লাগছে তো।”

মেঘ মা মেয়ের খুনসুটি দেখে হাসছে। অতঃপর মেঘ পিহু নিচে নেমে আসে।

রুদ্র নিচেই সোফায় বসে ছিলো, সে আজকে ফর্মাল গেটাপে, ফুল ব্ল্যাক, সাথে চুল জেল দিয়ে সেট করা, হাতে ব্র্যান্ডের ওয়াচ। যেনো কোনো হিরোর থেকে কম না। হঠাৎ সিঁড়ির দিকে নজর যেতেই আটকে যায়। লাল পরি নেমে আসছে যেনো সিঁড়ি বেয়ে। দিনদুনিয়া ভুলে সে একইভাবে তাকিয়ে। পিহু ব্যাপারটা লক্ষ করে দুষ্টু হেসে বলে উঠে,

-“কি ভাইয়া, এভাবে বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলে তো মশা ঢুকবে মুখে। বউ তোমারই আছে রুমে নিয়ে যতো খুশি দেখো।”

সবার সামনে বোনের এমন কথায় রুদ্র কেশে উঠে। ড্রয়িং রুমের সবাই মুচকি মুচকি হাসছে। রুদ্রের বাপ চাচারাও এখানেই বসে। বেচারা রুদ্র অস্বস্তিতে পড়ে যায়। দ্রুত উঠে দরজার দিকে হাঁটা দেয়,

-“আমি গাড়িতে আছি, সবাই চলে আসো।”

একে একে সবাই রওনা দেয়। দুটো গাড়ি যাচ্ছে, একটায় রুদ্রের বাপ চাচারা, আরেকটায় রুদ্ররা। রুদ্র ড্রাইভিং সিটে, তার পাশে সামিয়া ধপ করে এসে বসে পড়ে। তাদের পেছনে মেঘ পিহু আর সাদ অন্য গাড়িতে। পার্টিতে পৌঁছাতেই তাদেরকে ওয়েলকাম করা হয়। মেঘ অবাক হয়ে চারপাশ দেখছে। টিভিতে বা নিউজে যাদের চেহারা এতদিন দেখে আসছে, তাদের অনেকেই এখানে উপস্থিত। রুদ্র ও তার বাবা সবার সাথেই কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত। আর সাদ তো এসেই ফ্লার্ট শুরু। মেঘরা একটু সাইডে গিয়ে দাঁড়ায়। তখনই একজন আন্টি এসে পিহু সামিয়াকে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করছে, একটা মেয়েও উনার পিছে ছুটে আসে। গায়ে ছোট ড্রেস পরা, শরীরের প্রায় অর্ধেকই দেখা যাচ্ছে। সে পিহুকে দেখেই বলে উঠে,

-“হেই পিহু, হাউ আর ইউ? রুদ্র আসেনি?”

পিহু কিছুটা বিরক্ত হয় তবে মুখে সৌজন্যতার হাসি রেখে বলে,

-“হ্যা আপু এসেছে ওইদিকটায়।”

মেয়েটি যেনো এই কথা শোনার অপেক্ষায় ছিলো, পিহুর বলার সাথে সাথেই রুদ্রের দিকে এগিয়ে যায়। পিহু হতাশ হয়ে বলে উঠে,

-“দেখিস, এই মেয়ে এখন ভাইয়ার গায়ে উঠে যাবে, ছ্যাঁচড়া মেয়ে ভাইয়ার পিছে পড়ে আছে।”

মেঘের দৃষ্টি তখনো সেদিকেই, সাথে সামিয়াও কটমট করে তাকিয়ে। মেয়েটি রুদ্রকে পেয়েই ভরা মজলিসেই জড়িয়ে ধরে।

হঠাৎ কেউ জড়িয়ে ধরায় রুদ্র তানিয়াকে দেখে বিরক্তিতে “চ” উচ্চারণ করে দ্রুত নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। যদিও এসব কমন ব্যাপার এখানের সবার কাছে। তাও রুদ্র এদিক ওদিক তাকায়, নজর যায় দূরে দাঁড়িয়ে তাদের দিকেই কঠিন চোখে তাকিয়ে থাকা মেঘের দিকে। “মেয়েটি কি রেগে গেছে?” হঠাৎ কেমন জানি লাগছে রুদ্রের, শত হোক মেঘ তার বউ, বউয়ের সামনে অন্য মেয়ে এভাবে ধরলে তো রাগার কথাই।

রুদ্রের ভাবনা কাটে তানিয়ার প্রশ্নে,

-“রুদ্র কেমন আছো? কতদিন পর দেখা। তুমি তো দেখছি আগের থেকে আরও হ্যান্ডসাম হয়ে গেছো।”

তানিয়া প্রত্যেকটা কথায় কথায় রুদ্রের গায়ে হেলে পড়ছে। সে কোনোমতে এই মেয়েকে ব্যস্ততা দেখিয়ে অন্যদিকে চলে যায়।

হঠাৎ অ্যানাউন্সমেন্টে সবাই স্টেজের দিকে ফিরে। সেখানে এই পার্টি যে আয়োজন করেছে, সে তার পাশে তানিয়া নামের মেয়েটি। লোকটি বলে উঠে,

-“গুড ইভনিং এভ্রিওয়ান, আজকে আমার ছোট আদরের মেয়ে তানিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে আপনাদের সবাইকে এই পার্টিতে স্বাগতম।

তার কথায় সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে। উনি আবার বলতে লাগেন,

-“আজকে মিডিয়ার জন্য একটা তাজা খবরও আছে। যা বলতে আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু, আপনাদের সবার প্রিয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এরশাদুল চৌধুরী ও তার ছেলে রুদ্র চৌধুরীকে মঞ্চে আসতে রিকোয়েস্ট করছি।”

আবারও চারিদিকে করতালি বেজে উঠে। আশেপাশের মেয়েরা চিৎকার করে উঠে, রুদ্রের দিকেই তাকিয়ে, যেনো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। ভীষণ বিরক্ত হয় মেঘ, তার ইচ্ছে করছে একেকটার চুল টেনে ছিঁড়ে দিতে।

রুদ্ররা স্টেজে উঠতেই এরশাদুল চৌধুরী রুদ্রকে সামনের ইলেকশনে দাঁড় করাবেন বলে ঘোষণা দেন। তারপর কিছু বক্তব্য দিয়ে নেমে আসেন।

মেঘ অনেকক্ষণ ধরেই এদিকটায় একা দাঁড়িয়ে, পিহু কোথায় যেনো গেলো, তাকে একটু দাঁড়াতে বলেছে। পেছনে ৪/৫ টা ছেলে দাঁড়িয়ে তাকে নিয়েই আজেবাজে মন্তব্য করছে, সে বেশ বুঝতে পারছে। তবে এখান থেকে গেলে এত বড় জায়গায় পিহুকে খুঁজে পাবে কিভাবে, তার মোবাইলও নেই, তাই সেখানেই দাঁড়িয়ে। একটা ছেলে হঠাৎ একটু এগিয়ে এসে বলে,

-“হেই হ*টি, নাম্বারটা দেওয়া যাবে?”

হঠাৎ এত জঘন্য ডাকে মেঘ ভড়কে যায়। তাদের দিকে না তাকিয়েই দ্রুত সেই জায়গা ত্যাগ করতে পা বাড়ায়। তবে তখনই কেউ তার কোমর ধরে তাকে আটকে দেয়। মেঘ থমকে যায়, ভয়ে আতঙ্কে হাত-পা জমে যাচ্ছে যেনো…..

চলবে…….

[ভাবছি তানিয়াকে নাইকা বানাই দিবো..(ভয়ে মুখ লুকানোর ইমোজি) ]

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply