#আড়ালে_তুমি |২১|
#_সাইদা_মুন
সময় কখনো কারও জন্য থেমে থাকে না। চোখের পলকে কেটে যায় আরও তিনটি দিন। মেঘ এখন পুরোপুরি সুস্থ, কিন্তু রুদ্র আর মেঘের মধ্যে এখন কেবল প্রয়োজনের কথাগুলোই বিনিময় হয়, বাকিটা নীরবতা।
সকাল বেলা চৌধুরী বাড়ির সবাই নাস্তার টেবিলে। খাওয়ার এক পর্যায়ে এরশাদুল সাহেব মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-“পিহু ভার্সিটি যাচ্ছে, তুমিও তো এখন সুস্থ তার সাথেই যাওয়া শুরু করো।”
মেঘ চমকে বলে,
-“আমাকে পড়ালেখা করতে দেবেন?”
-“অবশ্যই, পিহুকে পড়াতে পারলে তোমাকে কেনো পারবো না? তুমিও আমার আরেকটা মেয়ে, আমার দায়িত্ব।”
পাশ থেকে সিদ্দিকা বেগম বলেন,
-“আজকে থেকেই যাওয়া শুরু করবে। আমার নাতি-নাতনির জন্য একজন শিক্ষিত মা চাই। “
রুদ্র কেবল মাত্র মুখে খাবার নিয়েছিল, মায়ের কথায় কাশতে শুরু করে। সবাই বিচলিত হয়ে ওঠে,
-“আজব, আস্তে ধীরে খাওয়া যায় না। নে পানি খা.. ”
.
.
.
খাওয়ার পর্ব চুকিয়ে রেডি হয়ে নেয় মেঘ। এর মধ্যে রুদ্রও ঘরে এসে প্রবেশ করে। মেঘকে রেডি হতে দেখে বলে উঠে,
-“পিহু আর তুমি তো সেইম ডিপার্টমেন্টের, আপাতত পিহুর বই দিয়েই চালাও, আজকে রাতের মধ্যে তোমার বই কিনে আনবো। আর আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা যেনো হাইড থাকে।”
মেঘ মাথা নাড়ায়, তা দেখে রুদ্র বেড়িয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর মেঘ আর পিহু বাড়ির গাড়ি নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়। এতোদিন পর ভার্সিটি যাচ্ছে, তার উপর আগে যেইসব কাহিনি ঘটেছিল তার জন্য মেঘের মন সায় দিচ্ছিলো না। তবে পিহু তাকে সাহস জোগায়,
-“উফ ইয়ার এসব চিন্তা বাদ দে না। ভাইয়া এসব সেদিনই ধামাচাপা দিয়েছে। এআই দিয়ে ভিডিও বানিয়ে কেউ ভাইয়াকে বদনাম করতে চেয়েছিল, হাবিজাবি বলে এসব কাহিনি ক্লোজ করেছে। সো এই চিন্তা করতে হবে না।”
মেঘের মন কিছুটা শান্ত হয়, তবে মনের কোনে একটা কিছু থেকেই যায়। ক্যাম্পাসে পা রাখতেই একটা ধমকা হাওয়া যেনো এসে মেঘের গায়ে লাগে। মাত্র কয়েকদিন আসেনি,তাতেই নতুন লাগছে। পিহুর সাথে সামনে এগোয়, হঠাৎ কারো ডাকে মেঘ-পিহু দুজনেই দাঁড়িয়ে যায়,
-“হেই ধানি লংকা,। “
মেঘ অবাক হয়ে তাকালেও পিহু কটমট চোখে তাকিয়ে রুদ্ররা যেখানে আড্ডা দেয় সেদিকে এগিয়ে যায়। রুদ্র বাদে বাকি সবাই উপস্থিত সেখানে। মেঘও পিহুর পিছু পিছু যায়। পিহু কটমট করে বলে,
-“কিছু বলবেন ভাইয়া?”
রাফান শান্ত সুরে বলে,
-“নাহ… “
পিহুর মেজাজ যেনো সপ্তম আকাশ ছুঁয়ে যায়। তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে,
-“তো ডেকেছেন কেনো, ফাইজলামি করেন?”
-“আমি কি তোমাকে ডেকেছি? আমি তো ধানি লংকা বলেছি। তুমি কি ধানি লংকা?”
রাফানের কথায় পিহুর মুখটা চুপসে যায়। রাগি চোখে তাকিয়ে মেঘের হাত ধরে হাঁটা দেয়। কিছু দূর যেতেই পিহুকে আবার ডেকে উঠে এবার তার নাম নিয়েই,
-“কি সমস্যা?”
-“রুদ্র কোথায়? “
-“আপনার ফ্রেন্ড, আপনি জানেন, আমি কি জানি। “
বলেই একটা মুখ মুড়া দিয়ে গটগট পায়ে ক্লাসের দিকে চলে যায় পিহু। আর রাফান মাথা চুলকে হাসে, পাশ থেকে শান্ত বলে,
-“ভাই, মেয়েটিকে হুদাই রাগাস কেনো।”
-“একে রাগাতে ভালো লাগে তাই..”
এদিকে মেঘ পিহুকে জিজ্ঞেস করে,
-“কাহিনি কি? উনি আবার কে আর তোর সাথেই কিসের এতো দ্বন্দ্ব?”
-“আরে এ আমাদের প্রিন্সিপালের ছেলে আর রুদ্র ভাইয়ার ফ্রেন্ড। অন্য ভার্সিটিতে ছিলো, এখানে ট্রান্সফার হয়ে এসেছে কয়েকদিন হলো। বেয়াদব, আসার পর থেকে আমার জীবনটা অতিষ্ঠ করে রেখেছে। আব্বু আর ভাইয়ার জন্য কিছু বলিনা, নয়তো একদম মেরে মেডিকেল পাঠাতাম।”
কথার মাঝে ক্লাসে ঢুকতেই সুমনা মেঘের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। হঠাৎ আক্রমণে সে একটু ভয় পেয়ে গেলেও মুহূর্তে সেও সুমনাকে জড়িয়ে ধরে। তা দেখে পিহুও তাদের সাথে যুক্ত হয়। এতোদিন পর আবার সব ফ্রেন্ডরা একসাথে। পাশেই রিক মোবাইল বের করে সেই মুহূর্তের ভিডিও ক্যাপচার করে নেয়। আবেগময় মুহূর্তের ইতি ঘটে ক্লাস টিচারের আগমনে। সবাই যে যার সিটে বসে। স্যার এসেই সবার মাঝে পেপারস দেওয়া শুরু করে, তা দেখে মেঘ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“কিসের পেপারস দিচ্ছে রে?”
-“আজকে ক্লাস টেস্ট আছে, সেটারই। “
পিহুর কথায় মেঘ চিন্তায় পড়ে যায়,
-“আগে বলিসনি কেনো? কিছুই তো পড়িনি। “
পাশ থেকে রিক বলে উঠে,
-“আরে ইয়ার, মে হু না তো ফির ডার কিস বাত কা হে?”
মেঘ হতাশ হয়ে বলে,
-“তুই আছিস সেটাই বড় ভয়। “
বেচারা রিকের মুখটা চুপসে যায়। পিহু-সুমনা হেসে উঠে। সুমনা বলে,
-“তবে আজকে রিকই আমাদের ভরসা, এর কাছে নকল আছে, দেখে-দেখে লিখবে আর আমরাও এর থেকে মারবো। “
পিহু-মেঘ চমকে উঠে,
-“বলিস কি? ধরা খেলে ক্লাস থেকে বের করে দিবে। “
-“আরে না, কিছুই হবে না।”
তাদের কথার মাঝেই স্যার প্রশ্ন দিয়ে দেয়। তারপর সবাই লেখা শুরু করে। রিক সামনের বেঞ্চে বসেছে, তার পিছে সুমনা। রিক পেইজ দেখে লিখছে, সুমনা রিকের দেখে লিখছে আর বাকিরা সুমনার।
প্রায় অর্ধেক পরীক্ষা শান্তি মতো দিলেও হঠাৎ স্যারের নজরে রিক ধরা পড়েই। সাথে সাথে স্যার এসে টান মেরে নকলটা নিয়ে নেয় হাতে, -“এই তুমি নকল এনেছো?”
রিক অবাক হয়ে বলে,
-“না না স্যার এটা নকল না তো আসল পেইজ। “
পাশ থেকে সুমনাও বলে উঠে,
-“হ্যাঁ স্যার এটা আসলই, আমি নিজে আমার বইয়ের পেইজ ছিঁড়ে দিছি। কোনো নকল পেইজ না। “
এদিকে মেঘ-পিহু কপাল চাপড়াচ্ছে। এরা যে গণ্ডগোল করবে জানা ছিলো। তাই বলে এমন আবুলের মতো কাজ করবে! নকল তো করছে, আবার বলছেও। স্যার তাদের কথায় রেগে যায়,
-“এই বেয়াদবের দল, নকল করেছো আবার বলছোও। যাও, এক্ষুনি বের হবে ক্লাস থেকে। আর কে কে আছে তোমাদের সাথে, সব কয়টা বের হবে। “
স্যারের কথা শোনে পিহু-মেঘ মুখ লুকানোর ট্রাই করে, তবে রিক তাদেরও দেখিয়ে দেয়। অতঃপর তাদের চারটাকেই ক্লাস থেকে বের করে দেয়।
রিক দৌড়াচ্ছে নিজের জান বাঁচাতে, তার পিছে দৌড়াচ্ছে বাকিরা। মূলত একে ধরতে পারলে সেই লেভেলের কেলানি দিবে। নিজে তো বাঁশ খেয়েছে, সাথে সবাইকে বাঁশ খাইয়েছে। কিছুক্ষণ দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে মাঠের মাঝে। একেকজন হাপাচ্ছে, পিহু হাপাতে হাপাতে বলে,
-“শা*লা রিকের বাচ্চা, একবার সামনে পাই, তোর বংশের বাতি জ্বলার রাস্তা বন্ধ করে দিবো। “
তবে কে পায় রিককে, সে তাদের আশেপাশেও নেই। কিছুক্ষণ পর কোথা থেকে চারটে ঠান্ডা নিয়ে হাজির হয় রিক। তাকে দেখে তেড়ে যেতে নেয় পিহু,
-“আরে বোন, আগে এইটা খেয়ে নে, তারপর যা ইচ্ছে করিস। “
সবাইকে স্পিডের বোতল ধরিয়ে দিতেই একটু শান্ত হয়। কিছুক্ষণ নীরবতা যেতেই হঠাৎ সবাই একসাথে হেসে উঠে। মেঘও হাসছে, মন খুলে হাসছে। আজ কতোদিন পর এভাবে হাসছে, সে নিজেও জানে না। বন্ধুরা কি আসলেই জাদুকর? মন ভালো করার ঔষধ?
দূর থেকে কেউ একজন মেঘের হাসি দেখছে। খুব মনোযোগ সহকারে দেখছে। এখন যদি কেউ তাকে জিজ্ঞেস করে, সে নিখুঁত বর্ণনা দিতে পারবে।
হঠাৎ রুদ্রের ধাক্কায় ধ্যান ভাঙে রাহুলের,
-“কিরে, কোথায় হারিয়ে গেলি? “
রাহুল ভাবলেশহীনভাবে বলে,
-“কোনো এক রূপসী কন্যার হাসিতে আটকে গেছি। “
রাফান মজা উড়িয়ে বলে,
-“তো দেখি কোথায় তোর রূপসী কন্যা? “
রাহুল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-“সে এখন আমার জন্য নিষিদ্ধ। “
সবাই অবাক হয়ে যায়,
-“মানে? “
রাহুল তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে,
-“মানে সে এখন অন্য কারোর অর্ধাঙ্গিনী। “
রাহুলের কথায় সবাই চুপসে যায়। রুদ্র তার কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“আল্লাহ হয়তো তোর জন্য আরও ভালো কিছু রেখেছে। মন খারাপ করিস না। মেয়েটি হয়তো তোর ভাগ্যে ছিলো না। “
রাহুল রুদ্রের পানে তাকায়, তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে, মনে মনে বলে,
-“তুই নিজেই তো আমার ভাগ্য কেড়ে নিলি।”
——————
মেঘরা ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে যায়, সেখানে রুদ্রদের দেখা পায়। তার আর রুদ্রের বিয়ের ব্যাপারে কেউ জানে না, রুদ্র নিজেই কাউকে জানাতে না করেছে বিধায় কাউকে বলেনি; সুমনা-রিকও জানে না।
রুদ্রদের সাথে অনুকে দেখে মেঘ কিছুটা অবাক হয়ে পিহুকে জিজ্ঞেস করে,
-“এই অনুর সাথে না তাদের ঝামেলা হয়েছিল, এখন আবার তাদের গ্যাং এ…”
পিহু একটু বিরক্ত হয়ে বলে,
-“তুই আসিসনি, কতো কাহিনী হয়ে গেলো ক্যাম্পাসে। অনু সবার সামনে ভাইয়াদের কাছে মাফ চেয়েছে, ছ্যাছড়ামি করছিলো, পরে বাধ্য হয়ে আবার তাদের গ্রুপে নিয়েছে।”
-“ওহ আচ্ছা… “
তারা তাদের মতো খাবার নিয়ে চলে যায়। সেদিন ভালোই ভালোই ক্লাস করে মেঘ-পিহু বাসায় চলে আসে।
চলবে……
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬০
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৮
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩২
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১১.১
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৬
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩১
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৪
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪৬