Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২০


#আড়ালে_তুমি |২০|

#সাইদা_মুন

সকালের দিকে বুকে ভার কিছু অনুভব হওয়ায় চোখ পিটপিট করে খোলে রুদ্র। বুকের উপর কি আছে দেখতে সেদিকে তাকাতেই থমকে যায় রুদ্র। মেঘের মুখটা একদম চোখের সামনে, সামনের বেবি হেয়ারগুলো কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, ঠোঁট হালকা ফুলে আছে, অনেকক্ষণ একইভাবে থাকায় গালের একসাইডে লাল দাগ পড়ে গেছে। স্নিগ্ধতায় যেনো ঘিরে রেখেছে তাকে। দু’হাতে জড়িয়ে আছে রুদ্রকে, বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে। চমকায় রুদ্র এই দুইদিনে তো এমন করেনি মেয়েটি, রাতের বেলায়ও তো তেমন নড়াচড়া করেনা। মুহূর্তেই টনক নড়ে মেয়েটার শরীর অসম্ভব গরম হয়ে আছে। দ্রুত কপালে গলায় হাত দিয়ে যা বুঝার বুঝে যায়। জ্বর এসেছে মেঘের, রাতে হয়তো শীত লাগছিলো উষ্ণতার খোঁজেই ঘুমের মধ্যে তার কাছে এসেছে।

সাবধানে মেঘকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে সাইডে শোয়ায়। ব্ল্যাঙ্কেটটা ভালো মতো মুড়িয়ে দেয় শরীরে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৯ টা বেজে গেছে। একটু পরই তার ভার্সিটিতে যেতে হবে আজকে একটা টেস্ট আছে। কি করবে না করবে ভেবে ফ্রেশ হতে চলে যায়। বেড়িয়ে এসে ডিরেক্ট নিচে নামে। রুদ্রের মা তাকে দেখে খেতে ডাকে, 

-“রুদ্র আয় খেতে বস আর তোর বউ কোথায় দেখছি না যে সকাল সকালই তো উঠে যায় মেয়েটা।”

-“মেঘের হঠাৎ প্রচণ্ড জ্বর এসেছে।”

-“কি বলিস জ্বর আসলো কিভাবে? “

রুদ্র মনে মনে নিজেকেই গালি দেয় কালকে পানিতে না চোবালে হয়তো এমনটা হতো না।

-“জানিনা, আমাদের নাস্তাটা দিয়ে দাও রুমে। “

সিদ্দিকা বেগম ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, 

-“মেঘকে খাওয়াতে পারবি তুই?”

রুদ্র মাথা চুলকে বলে, 

-“দাও পারবো। “

-“আচ্ছা যা আসমাকে দিয়ে পাঠাচ্ছি। “

রুদ্র যেতেই সিদ্দিকা বেগমের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠে। আসমাকে দিয়ে তাদের ঘরে খাবার পাঠিয়ে দেয় সাথে মেঘের জন্য ঔষধও।

রুদ্র মেঘকে প্রায় ৫ মিনিট টানা ডেকেও উঠাতে পারছে না, হু হু করে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। তাই শেষমেষ দু’বাহু ধরে একটানে উঠায়, পেছনে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে বসায়। 

মেঘ পিটপিট করে ফোলা ফোলা চোখগুলো খুলে। রুদ্রকে দেখে ভ্রু কুঁচকায়, ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলে, 

-“একটু ঘুমাতে দিন না মাথা নিয়ে উঠতে পারছি না তো.. “

রুদ্র পরোটা ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলে, 

-“খাবারটা খেয়ে তারপর যত ইচ্ছা ঘুমাও। এবার হা করো ফাস্ট আমার লেট হচ্ছে। “

রুদ্রের হাতে খাবার দেখে নাক কুঁচকে মুখ ফিরিয়ে নেয় মেঘ, 

-“আমি খাবো না গন্ধেই বমি আসছে। “

তবে কে শোনে কার কথা মেঘের দুই গাল চেপে মুখের ভেতর মাংস আর পরোটা ঢুকিয়ে দেয়। মেঘ ওয়াক করে ফেলতে নেয়, রুদ্র চোখ গরম করে তাকায়, 

-“যদি মুখ থেকে খাবারটা পড়ে এই জ্বরের মধ্যেই পানিতে চুবিয়ে আনবো। “

পানির ভয়ে মেঘ আর ফেলেনা, তবে সে বসে থাকতে পারছে না মাথা এদিক সেদিক হেলে পড়ছে। তা দেখে রুদ্র মেঘের মাথাটা তার কাঁধের উপর রেখেই খাইয়ে দিচ্ছে নিজেও এর মধ্যে খেয়ে নিচ্ছে। এর ফাঁকে দরজায় কেউ নক করায় রুদ্র ভেতরে আসতে বলে।

সামিয়া পারমিশন পেয়ে খুশি মনে ভেতরে ঢুকতেই তাদের এভাবে দেখে বুকটা মুচড়ে ধরে। রুদ্র সামিয়াকে দেখে জিজ্ঞেস করে, 

-“কোনো দরকার? “

-“নান…না কফি নিয়ে এসেছিলাম.. “

-“রেখে যা.. “

সামিয়া কফিটা রেখে যেতে নিয়ে আবার ফিরে আসে, 

-“ওর কি হয়েছে?”

রুদ্র একবার সামিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার মেঘকে খাওয়াতে লাগে, 

-“জ্বর উঠেছে.. “

-“ওহ..”

বলে চলে যায় সামিয়া। যেতে যেতে নাটক বলতে ভুললো না সে।

রুদ্র মেঘকে খাওয়ানো শেষ করে ঔষধ খাইয়ে দেয়। তারপর মেঘ আবার শুয়ে পড়ে। রুদ্রও রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। তাকে দেখে সিদ্দিকা বেগম ডেকে উঠে, 

-“খেয়েছে মেঘ? আর ঔষধ? “

-“হ্যা, তোমরা একটু খেয়াল রেখো আমার একটা টেস্ট আছে, ওইটা দিয়েই চলে আসবো।”

বউয়ের জন্য চিন্তিত হতে দেখে তাহেরা বেগম হেসে বলে, 

-“তুই যা বাবা। তোর বউকে আমি আর ভাবি দেখে রাখবো নে, তুই নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিয়ে আয়। “

ছোট মায়ের কথায় মাথা নেড়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায় রুদ্র। এদিকে সিদ্দিকা বেগম মেঘকে দেখতে এসে চমকে যান। শরীর একদম গরম হয়ে আছে। নিজেই পানি পট্টি দিতে থাকেন। একসময় তাপ একটু কমতেই  তিনি পিহুকে বসিয়ে রেখে নিজের কাজে চলে যায়। 

১টার দিকে রুদ্র বাসায় ফিরে দেখতে পায় মেঘকে তার মা খাওয়ানোর চেষ্টা করছে তবে সে ব্যর্থ, 

-“মা ওর জ্বর কমেনি?”

সিদ্দিকা বেগম অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে, 

-“না রে, আরও বাড়ছে। জ্বরের ঘোরে কিসব বিড়বিড় করছে। কোনো খাবার মুখেই নিচ্ছে না। ১২টায় একবার খাওয়াতে চেয়েছিলাম তবে বমি করে আর খায়নি। “

রুদ্র একটা শ্বাস ফেলে বলে, 

-“তুমি রেখে যাও আমি ফ্রেশ হয়ে খাওয়ানোর ট্রাই করছি। আর তুমি গিয়ে গোসল করে খেয়ে নাও।”

ছেলের কথায় তিনি খাবার ঢেকে রেখে চলে যান। রুদ্র ফ্রেশ হয়ে এসে মেঘকে তুলে গায়ের জোরে দুই তিন লোকমা খাওয়াতেই গলগলিয়ে বমি করে দেয় রুদ্রের গায়ে। বেচারা চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নেয়। সে সেই অবস্থাতেই আবার জোর করে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়। তারপর নিজেও গোসল করে নেয়। রুমে এসে আসমা খালাকে ডেকে ফ্লোর আর বিছানা ক্লিন করিয়ে নেয়।

খেয়ে এসে বিছানায় শুতেই মেঘের ঘুমন্ত মুখের দিকে চোখ যায়। কি নিষ্পাপ লাগছে মেয়েটিকে, চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ, একদিনের অসুখেই কাবু হয়ে গেছে মেয়েটি। নিজে নিজেই ভাবছে, “আমার এর উপর বিরক্ত আসছে না কেনো? এটা কি হালাল সম্পর্কের জন্য নাকি দায়িত্ব থেকে? “। এভাবে যে ঠিক কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলো সে খেয়াল রুদ্রের নেই। সেভাবে নিজেও একসময় ঘুমিয়ে যায়।

বিকালের দিকে ঘুম ভাঙতেই পাশে মেঘকে না দেখে এদিকসেদিক তাকায় রুদ্র কপালে ভাঁজ পড়ে। হঠাৎ বাথরুমের দরজা খোলার শব্দে সেদিকে মেঘকে দেখে চিন্তিত কণ্ঠে বলে, 

-“একা একা উঠতে গেলে কেনো, আমাকে ডাকতে যদি মাথা ঘুরিয়ে পড়তে.. “

মেঘ ধীরে ধীরে বিছানায় এসে গা এলিয়ে বলে, 

-“আপনি তো ঘুমোচ্ছিলেন তাই আর ডাকিনি। “

-“এখন শরীরটা কেমন লাগছে?”

বলতে বলতেই রুদ্র মেঘের কপালে হাত দেয়। হঠাৎ স্পর্শে কেঁপে উঠে মেঘ মুহূর্তেই নিজেকে সামলে বলে, 

-“ভালোই.. “

রুদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় গম্ভীর কণ্ঠে বলে, 

-“মিথ্যা বলছো কেনো, জ্বর এক ফোঁটাও কমেনি। “

-“ও কিচ্ছু না, আমার জ্বর উঠলে টানা ১/২ দিন থাকেই পরে ঠিক হয়ে যায়।”

-“তাহলে ডাক্তার ডাকবো…?”

-“না না, সামান্য জ্বর নিয়ে আবার ডাক্তারের কাছে যায় নাকি। আমি এসবে অভ্যস্ত আছি ঠিক হয়ে যাবে। “

এই মেয়ের খাপছাড়া কথায় হালকা বিরক্ত হয়ে উঠে যায় রুদ্র। কিছুক্ষণ পরই বাড়ির সবাই হাজির হয় তাদের রুমে। মেঘ তাদের দেখে শোয়া থেকে উঠতে নেয় তবে তার শ্বশুরের কথায় আর উঠেনা, 

-“উঠতে হবে না মা, শুয়ে থাকো। শরীর কেমন এখন? “

মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুদ্র বলে, 

-“জ্বর একটুও কমেনি। “

-“সে কি তাহলে ডাক্তার ফয়সালকে ডাকো এসে চেকআপ করে ঔষধ দিয়ে যাবেন। “

মেঘ দ্রুত বলে, 

-“না না আঙ্কেল তার দরকার নেই। “

এরশাদুল চৌধুরী ভ্রু কুঁচকে তাকায় মেঘের দিকে। মেঘ ভড়কে যায়, এবার বুঝেছে রুদ্র এভাবে তাকানো কার থেকে পেয়েছে, বাপ-ছেলে একদম সেইম লুক দেয়। তিনি গম্ভীর কণ্ঠে বলেন, 

-“আঙ্কেল কি? আমি তোমার শ্বশুর, রুদ্র পিহুর মতো তুমিও আব্বু ডাকবে।”

এমন হঠাৎ মায়াময় কথায় মেঘের ভেতরে ঝড় শুরু হয়। হুট করে তার বাবার কথা মনে পড়ে যায়। আপনা আপনি চোখ দিয়ে টপটপিয়ে পানি পড়া শুরু হয়। তা দেখে উপস্থিত সকলেই চিন্তিত হয়ে পড়ে। রুদ্রের মা দ্রুত মেঘের পাশে বসেন তাকে বুকে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করেন, 

-“বেশি শরীর খারাপ লাগছে? কাঁদছো কেনো, এখনই ডাক্তার চলে আসবে ঔষধ খেলে ঠিক হয়ে যাবা।”

একটু আদুরে ছোয়া পেয়ে মেঘের যেনো কান্না আরও দ্বিগুণ হারে বাড়ে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। সে শাশুড়ির বুকে মাথা রেখেই বলে, 

-“ছোটবেলায় আব্বু মারা যাওয়ার পরে আর আব্বু ডাকা হ.. “

তার কথা শোনে এরশাদুল সাহেব উঠে এসে মেঘের মাথায় হাত রাখেন, 

-“এখন থেকে আমি তোমার আব্বু, যত খুশি আব্বু বলে ডাকবে কেমন?”

মেঘ মাথা নাড়ে। তিনি উঠে চলে যান নিজের রুমে। তখন রুদ্রের ছোট চাচা বলে, 

-“আজ থেকে তুমি আমারও মেয়ে, আমিও কিন্তু তোমার ছোট আব্বু। একদম মন খারাপ করবে না কেমন? “

মেঘ ফের মাথা নাড়ায়, বড় ভাইয়ের পিছে পিছে তিনিও বেড়িয়ে যান। এদিকে সামিয়া দাঁড়িয়ে এতক্ষণ কাহিনি দেখছিল। এসব দেখে বিরক্তিতে “চ” উচ্চারণ করে নিজেও বেড়িয়ে যায়, যেতে যেতে বলে, 

-“নাটক, সবার অ্যাটেনশন পাওয়ার জন্যই এমন করছে এই মেয়ে অসহ্য।”

তার কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে দেখে যায়,  কিছু ঔষধও লিখে দেয়, তা আনতে রুদ্র চলে যায়। তারপর একে একে সবাই চলে যায়, রয়ে যায় পিহু। মেঘ চিন্তা করছে অন্য কিছু, তাকে নিয়ে এতজন মানুষ ভাববে কোনোদিন চিন্তাও করেনি। “এই সুখ কি আমার কপালে স্থায়ী হবে?”

-“কিরে কি ভাবছিস?”

পিহুর কথায় তার দিকে ফিরে মেঘ, তার চোখে পানি টলমল করছে, 

-“পিহুরে এসব কি আমার কপালে সইবে?”

পিহু মেঘের কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, 

-“সইবে না মানে, সব সইবে।  জানিস ভাইয়া কি যে টেনসড ছিলো তোকে নিয়ে। আজ অব্দি কাউকে এভাবে খাইয়ে দিতে দেখিনি, সকালে তোকে খাইয়ে নিজে খেয়ে ভার্সিটি গেছে আবার দুপুরে এসেও তোর সেবাই করেছে। “

মেঘ কিছুটা অবাক হয়। নিজেই বলে তার প্রতি ফিলিংস নেই তো আবার এতো করার কি আছে। পিহু কিছুক্ষণ থেকে রুদ্র আসতেই চলে যায়।  রুদ্র ঔষধ খুলে মেঘের হাতে দিয়ে পানি ধরিয়ে দেয়, 

-“খেয়ে নাও.. “

-“সরি.. “

রুদ্র চোখ ছোট ছোট করে তাকায় মেঘের দিকে, 

-“সরি ফর হোয়াট?”

মেঘ মাথা নিচু করে বলে, 

-“আমার জন্য এতো ঝামেলা ফেস করছেন সেজন্য। “

রুদ্র কিছুক্ষণ তাকিয়ে, কিছু না বলেই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। এদিকে মেঘ তীক্ষ্ণ চোখে যাওয়ার পানে তাকিয়ে, 

-“সরি বললাম, কিছু একটা তো বলা যায়। তা না, অ্যাটিটিউড দেখিয়ে চলে গেলো, আজব লোক। ” 

সন্ধ্যার দিকে, মেঘের ঘরে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না, একা একা তাই উঠে ধীরপায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। করিডোরে আসতেই নিচে ড্রয়িং রুমে নজর যায়। রুদ্র বসে আছে, তার পাশে সামিয়া, পারলে রুদ্রের গায়ের উপর উঠে যাচ্ছে। বিষয়টা মেঘের একদম ভালো লাগেনি, একবার ভাবে ভাই হয়, আবার ভাবে আপন ভাই তো না। দুজনে মোবাইলে কিছু একটা দেখছে আর বেশ হাসাহাসি করছে। মেঘ আর দাঁড়িয়ে না থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। রান্নাঘরে ঢুকতেই শাশুড়ীর দেখা পায়। তাকে দেখেই তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে, 

-“কিছু লাগবে?  উপর থেকেই বলতে দিয়ে আসতাম। এই শরীর নিয়ে আসতে গেলে কেনো?”

-“না না মা, এখন শরীর ঠিক আছে। কিছু হেল্প লাগবে?  দেন করে দিই।”

তাহেরা বেগম কপট রাগ দেখিয়ে বলে, 

-“দেখো মেয়ের কাণ্ড, এই অবস্থায় সাহায্য করতে এসেছে। যাও তো চুপচাপ গিয়ে বসো। “

সিদ্দিকা বেগমও ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। তাই বাধ্য হয়ে মেঘ গিয়ে সোফায় বসে। রুদ্র একবার তার দিকে তাকিয়ে, এখন কেমন লাগছে জিজ্ঞেস করে আবার মোবাইলে মন দেয়। এদিকে যেনো সামিয়া মেঘকে দেখে রুদ্রের সাথে আরও চেপে বসেছে। ভীষণ বিরক্তি নিয়ে অন্যদিকে তাকায় মেঘ। প্রায় অনেকক্ষণ এভাবে থেকে বোর হচ্ছে। তাই রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে, 

-“একটু টিভিটা অন করে দিবেন?”

রুদ্র মেঘের কথায় টিভি ছেড়ে রিমোট তার হাতে ধরিয়ে উঠে রুমে চলে যায়। সামিয়া কিছুটা রেগে যায়। কত সুন্দর বসে ছিলো, এই মেয়ের জন্য রুদ্র উঠে চলে গেলো, 

-“এই রুদ্র ভাইকে অর্ডার দাও কেনো?”

এমনিতেই রুদ্রের সাথে চিপকে ছিলো, তার উপর আবার কথা শোনাচ্ছে দেখে মুখ ফসকে বলে দেয়, 

-“আমার জামাই, আমার যা মনে চায় করবো।”

কথাটা বলেই মেঘ মুখ চেপে ধরে, কি বলে ফেললো বোধগম্য হতেই নিজেকেই গালি দেয়, “ছি ছি, এভাবে বলা উচিত হয়নি! কি না কি ভাববে এখন”।

সামিয়া কটমট করে তাকিয়ে উঠে ধুপধাপ পা ফেলে চলে যায়। 

সেদিন রাতে মেঘের আবারও কাঁপিয়ে জ্বর উঠে। সারা রাত সজাগ থেকে রুদ্র তাকে পানি পট্টি দিয়েছে।

রাত তখন ৩ টা, মেঘের জ্বর একটু কমতেই তাকে রেখে রুদ্র বেড়িয়ে যায়। মাথাটা ভীষণ ধরেছে তার, কফি বানাতে নিচে নেমে আসে। প্রায় ৫ মিনিট পর কফি হাতে সিঁড়ির কাছে আসতেই সামিয়ার দেখা মিলে, 

-“কিরে ঘুমাসনি?”

-“না ভাইয়া, দুইদিন পর সেমিস্টার পরীক্ষা, তাই একটু পড়ছিলাম। তবে তুমি এতো রাতে সজাগ, কফি বানিয়েছো? আমাকে বলতে বানিয়ে দিতাম।”

-“না তার দরকার নেই। মেঘের জ্বরটা আবার বেড়েছিলো, সেইজন্যই জেগে। আচ্ছা থাক আমি যাই।”

বলেই ঘরে চলে আসে রুদ্র। এদিকে সামিয়া জায়গায় দাঁড়িয়ে। তার ভীষণ কান্না আসছে, “রুদ্র ভাই কেনো ওই মেয়েকে নিয়ে এতো চিন্তা করবে, রাত জাগবে? ” আফসোসের সুরে বলে, 

-“আমার আর ভালো লাগছে না আল্লাহ, আমাকে আরও ধৈর্য দাও। মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি তো, তবে পারছি না যে। কেনো নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আরও আকৃষ্ট হই আমরা? “

সে মনে মনে ভেবে নেয় কালকেই নানু বাড়ি চলে যাবে, সেখানে কয়দিন থেকে পরীক্ষাটা দিয়ে আসবে, হয়তো স্বাভাবিক লাগবে। 

.

সকাল ৮ টার দিকে মেঘের ঘুম ভেঙে যায়। জ্বরটা নেই শরীরে, তাই উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে। তাকে দেখে সিদ্দিকা বেগম জিজ্ঞেস করে, 

-“ক্ষিদে পেয়েছে? দাঁড়াও খাবার দিয়ে দিচ্ছি এখনই।”

-“না না মা, আমার এখন খেতে মন চাচ্ছে না। “

-“তা বললে হলো নাকি, সকালের ঔষধ আছে না?

বলতে বলতেই প্লেটে করে খাবার বেড়ে দেয়। মেঘ চুপচাপ একটু খেয়ে নেয়। খাওয়া শেষে যেতে নেয়, 

-“শোনো রুদ্রকে ডেকে দিও সবাই খেতে বসে যাবে এখন। আর তুমি রেস্ট নাও। “

সে মাথা নাড়িয়ে রুমে যায়। কয়েকবার রুদ্রকে ডেকেও সাড়া না পেয়ে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর আবার ডাকা শুরু করে।

রুদ্রের একটা জিনিস হলো তাকে কাচাঁ ঘুম থেকে ডেকে তুললে তার মাথা কাজ করে না, রেগে যায়। ঠিক সেটাই হলো। বারবার ডাকার ফলে রুদ্র রেগে চিল্লিয়ে উঠে, 

-“আজব বারবার ডাকছো কেনো, সারা রাত এমনি তোমার জন্য ঘুমাতে পারিনি। এখন আবার কি?”

-“না, মা ডাকছিলো খেতে। খেয়ে এসে ঘুমান আবার। “

মেঘের ভালো কথাও যেনো তার কাছে ভালো লাগলো না, রেগে মেগে বলে, 

-“বিয়ে করেছি বলেই নিজেকে আমার বউ বউ ভাবা বাদ দিও। আমি তোমাকে বউয়ের অধিকার এখনো দেইনি, তাই বউগিরি একদম দেখাবে না। নিজের সীমানায় থাকবে।”

মেঘ স্তব্ধ হয়ে যায়। যেনো কেউ বুকে তির ছুড়ে মেরেছে। টিপটিপ ব্যথা হচ্ছে। এই দুইদিনের রুদ্রের প্রতি জন্ম নেওয়া ভালো লাগা এক নিমিষেই শেষ। তার চোখ দিয়ে আপনা-আপনি পানি ঝরছে। সে তো শুধু খেতে ডেকেছিল, তার জন্য এতগুলো কথা। সেখানে আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না মেঘ, বারান্দায় চলে যায়।

এদিকে দরজার সামনে কফি হাতে দাঁড়ানো কারোর মুখে যেনো বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে উঠেছে। দ্রুত দরজার সামনে থেকে চলে যায়। 

-“তার মানে রুদ্র ভাই আর মেঘের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক না। রুদ্র ভাই মেঘকে বউ হিসেবে মানে না। দ্যাটস মিন সামিয়া, ইউ স্টিল হ্যাভ টাইম…। “

চলবে……..

[আমার লেখা সব থেকে বড় পর্ব এটা। যদি কমেন্ট না করো গাইজ খবর আছে। ]

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply