Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১৮


#আড়ালে_তুমি |১৮| 

#সাইদা_মুন

রুদ্র ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে পানি কোন দিক থেকে আসলো তা খুঁজতে এদিক সেদিক তাকায়। হঠাৎ নজর আটকায় সামনের ড্রেসিং টেবিলে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে হলুদ সিল্কের শাড়ি পরা, মাত্রই গোসল করে বেরিয়েছে হয়তো। সদ্য ফোটা পুষ্পের মতো লাগছে, চোখ সরাতে পারছে না সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। লম্বা চুল আবারও ঝাড়া দিতেই রুদ্রের মুখে এসে পানি ছিটিয়ে পড়ে, সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয় মনে মনে আওড়ায় “ফুলপরি”। মুহূর্তেই আবার চোখ খুলে ফেলে। ভড়কে যায় সে, তার ঘরে মেয়ে কই থেকে আসলো। দ্রুত জিজ্ঞেস করে,

-“এই কে আমার ঘরে কি করছো ?”

এমন প্রশ্নে মেঘ চুল ঝাড়া রেখে ঘুরে তাকায়। ভ্রু কুঁচকে বলে,

-“কে মানে আমি মেঘ..”

-“ত..তো আমার রুমে কি করছো এতো সকালে?”

-“কালকে রাতে এখানেই তো ঘুমালাম। ভুলে গেছেন? আপনি কি ঠিক আছেন এভাবে কাঁপছেন কেনো দেখি জ্বর এলো নাকি.. “

বলেই এগোতে নেয় মেঘ। সাথে সাথে রুদ্র আরও পিছিয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে

-“না না আমি ঠিক আছি.. “

বলেই দ্রুত ওয়াশরুমে চলে যায়। দরজা লাগিয়ে একটা ধম ছাড়ে। এদিকে মেঘের কিছুই বোধগম্য হলো না, সে তার চুল মুছে, বিছানা গুছিয়ে নেয়। ততক্ষণে রুদ্রও ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে, হাত-মুখ মুছতে মুছতে বলে,

-“এতো সকালে গোসল করেছো কেনো কিছুই তো করলাম না.. “

রুদ্রের কথায় থতমত খেয়ে যায় মেঘ। অপ্রস্তুত সুরে বলে,

-“এমনি অস্বস্তি হচ্ছিলো তাই গোসল করে ফেলছি.. “

-“ওহ তাও ভালো… “

বলেই আবার বিছানায় শুয়ে পড়ে রুদ্র। মাত্র ৭ টা বাজে। কেউ এসে ডাকেও নি, মেঘের বোরিং লাগছে বিধায় বারান্দার দিকে এগোয়। বারান্দায় আসতেই মনটা ভালো হয়ে যায়। এটা মিনি ছাদও বলা যায়, এক পাশে অনেকগুলো ফুলের টব, এর পাশেই একটা দোলনা। মেঘ ধীরপায়ে হেঁটে দোলনায় গিয়ে বসে। সকালের পরিবেশ বেশ উপভোগ করছে সে।

হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দে ধ্যান ভাঙ,  উঠে রুমে প্রবেশ করে। দেখে রুদ্র ঘুমিয়ে গেছে আবার। তাই সে নিজেই দরজা খুলে দেয়, বাইরে সামিয়া কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে। মেঘ তাকে দেখে হালকা হাসে। তবে সামিয়া রাগি চোখে তাকিয়ে আছে, মেঘের চুল ভেজা দেখে আরও রাগ হচ্ছে তার। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

-“রুদ্র ভাইয়ার কফি.. “

মেঘ বলে উঠে,

-“উনি তো ঘুমাচ্ছে আচ্ছা দাও আমি ডেকে দিচ্ছি.. “

বলেই সামিয়ার হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। রুদ্রের কাছে এসে তাকে ডাকে কয়েকবার তবে ওঠার নাম নেই। তাই একটু ঝুঁকে ডাকতে যাবে, অমনি রুদ্র এপাশ থেকে ওপাশ হতে নেয়। সাথে সাথে গরম কফির মগ রুদ্রের হাত লেগে তার উপরই পড়ে। বেচারা গরম অনুভব করে চিল্লিয়ে দ্রুত উঠে বসে নিজের শরীর ঘষতে লাগে। মেঘ ভড়কে গিয়ে কি করবে না করবে ভেবে বেডের পাশের এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢেলে দেয় রুদ্রের বুকের উপর। একে তো গরম কফি ফেলেছে তার উপর আবার পানি ফেলায় রুদ্র বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে যায়। রেগেমেগে মেঘকে দেয় একটা ধমক,

-“ইডিয়েট কি করেছো এসব? সাহস কতো আমার উপর গরম কফি ফালাও আবার পানি “

মেঘ ভয়ে দাঁত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে। বেচারি তো হেল্প করতেই গেছিলো। রুদ্র আবার হুংকার দিয়ে উঠে,

-“কানে কথা যায়নি? কফি ফেলেছো কেনো “

মেঘ কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,

-“আপনাকে ডাকতে যেয়েই তো আপনার হাত লেগে পড়ে গেছে। আর গরম কফি পড়ায় জ্বলছিলো দেখেই তো আমি ঠান্ডা পানি ঢেলেছি।”

রুদ্র কিছুক্ষণ আহাম্মক এর মতো মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর উঠে বাথরুমে যেতে যেতে বলে,

-“স্টুপিড একটা.. “

ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসতেই রুদ্রের বুকের দিকে নজর যায় লাল হয়ে আছে। মনে মনে নিজেকেই বকে একটু সাবধানে ধরে রাখলে এমন হতো না। এদিকে মেঘকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠে,

-“আমার বডি সুন্দর, আই নো দ্যাট..”

মেঘ লজ্জা পেয়ে যায় চোখ সরিয়ে ফেলে বেয়াদব ছেলে আজাইরা কথা বলে। তখনই পিহু এসে ডাকে মেঘ দরজা খুলতেই বলে,

-“তোদের ডাকছে মা খেতে আসতে। “

রুদ্র ভেতর থেকে বলে,

-“যা তুই আসছি “

তারপর রুদ্র রেডি হয়ে মেঘকে নিয়ে নিচে নামে। রুদ্র বড় বড় পা ফেলে আগে আগেই গিয়ে বসে পড়ে চেয়ারে। মেঘও আস্তে ধীরে নেমে আসে। কোথায় বসবে ভেবে দাঁড়িয়ে থাকে, তা দেখে পিহু ইশারা করে তার পাশের চেয়ারে বসতে।

সবাই প্রায় বসে পড়েছে টেবিলে। আসমা খালা সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছেন। মেঘের সাথে সবাই টুকটাক কথা বলেছে। তখনই আগমন ঘটে সাদের। তাকে দেখেই এনামুল চৌধুরী বলেন,

-“এতো দেরি করলে যে?”

সে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে,

-“ঘুম থেকে উঠতে একটু লেট হয়ে গেছিলো। আসমা খালা খাবার দাও”

বলেই হঠাৎ পিহুর পাশের সিটে নজর যায়। মেঘকে দেখে সে বলে উঠে,

-“কিরে টিহু তোর পাশের এইটা কে? “

পিহু মুখ ভেংচে বলে,

-“এইটা রুদ্র ভাইয়ার বউ অরফে আমার বান্ধুবি। “

-“ওহ তার মানে একেই বিয়ে করেছো ভাইয়া। ভাবি কিন্তু হেব্বি সুন্দর। “

মেঘ মাথা তুলে তাকায় একবার সাদের দিকে তবে তার তাকানোর ধরন দেখে সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেলে। নাস্তা করা শেষে সবাই যেয়ে সোফায় বসে। রুদ্রের মা গম্ভীর কণ্ঠে বলেন,

-“তা নতুন বউয়ের হাতের এক কাপ চা কি খাওয়া সম্ভব? “

এহেন কথায় মেঘ সাথে সাথে বলে উঠে,

-“অবশ্যই মা, এক্ষুনি বানিয়ে আনছি .. “

মেঘ আসমার সাথে রান্নাঘরে গিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে চা বানিয়ে নিয়ে আসে। একে একে সবাইকে দিয়ে সাদকেও দিতে যায়, তবে সে ইচ্ছে করে মেঘের হাত হালকা ধরে ফেলে। এতে মেঘ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। দ্রুত সেখান থেকে রুদ্রের দিকে আগ বাড়ায়। তাকে চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিতেই, সে কিছু বলতে যাবে তার আগে সামিয়া কফি নিয়ে হাজির। রুদ্রকে কফি দিতে দিতে মেঘকে খোঁচা মেরে বলে,

-“তোমার স্বামী যে চা খায় না জানো না, কেমন বউ তুমি?”

সামিয়ার কথায় মেঘ চুপসে যায়। তাকে তো বলেনি জানবে কেমন করে। তখন সামিয়ার মা বলেন,

-“আহ সামিয়া মেয়েটা কালকেই মাত্র আসলো আস্তে ধীরে সব জেনে যাবে। “

সামিয়া কিছু না বলেই নিজের জায়গায় বসে পড়ে। এদিকে মেঘের হাতের চায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই।  কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই চা খেয়ে যে যার কাজে চলে যায়। রুদ্রও ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। তবে পিহু আজ যায়নি মেঘের সাথে গল্প করবে বলে।

পিহুর রুমে বসে আছে মেঘ। পিহু ফাজলামি করে জিজ্ঞেস করে,

-“কিরে ভাইয়া তোকে কি কি করেছে শোনি”

মেঘ চোখ গরম করে বলে,

-“ছি লজ্জা করে না বড় ভাইয়ের এসব জানতে চাস। “

-“ওমা তো কি হয়েছে বলনা বলনা. “

-“কিছুই তো হয়নি কি বলবো?”

তখনই মেঘের গলার দিকে নজর যায় হালকা ফুলে লাল হয়ে আছে। তা দেখে পিহু মজা উড়িয়ে বলে,

-“এহ তলে তলে সব করে এখন বলছো কিছু হয়নি। তো ঘাড়ে ওটা কিসের দাগ হু?”

মেঘ সাথে সাথে হাত দেয় ঘাড়ে হালকা ব্যথা অনুভব হয়। তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,

-“ওইদিন ভার্সিটি থেকে যাওয়ার পর মা মেরেছিল তারই দাগ। “

মেঘের কথায় মুখটা চুপসে যায় পিহুর। সে অবাক হয়ে বলে,

-“কি বলিস এতো বড় মেয়ের গায়েও হাত দেয় কেউ? “

মেঘ হাসে তবে কিছুই বলে না। তারপর তারা নিজেদের মতো আড্ডা দিতে থাকে।

কিছুক্ষণ পর সিদ্দিকা বেগমের ডাক পড়ে। পিহু মেঘকে নিয়ে নিচে নামতেই দেখে তার মায়ের পাশে একটি মহিলা বসে আছে সামনে অনেক কাপড় রাখা। মেঘকে দেখে সিদ্দিকা বেগম মহিলাটিকে বলে,

-“নিন ওর গায়ের মাপ নিয়ে নিন। আর যেগুলো যেগুলো বেছে রেখেছি ওগুলোই বানাবেন। মেঘ এদিকে আসো।”

মেঘ সামনে এগোতেই মহিলাটি তার মাপ নিয়ে নেয়। সে বুঝতে পারে তার জন্য কাপড় বানাতে দিচ্ছে। সিদ্দিকা বেগম আবার মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-“তোমার কোনোটা ভালো লাগলে বলো সেটাও বানাতে দিয়ে দিবো।”

মেঘ সাথে সাথে বলে,

-“না না মা আপনি যা যা দিয়েছেন তাই হবে। “

তাদের কথায় দরজি মহিলাটি মাপ নিয়ে চলে যায়। এদিকে সিদ্দিকা বেগম উঠে রান্নাঘরে যেতে নেয় তখন মেঘ পেছন থেকে বলে,

-“মা আমিও আসি?”

তিনি পেছনে ঘুরে বলেন,

-“কোথায়?”

মেঘ আমতা আমতা করে বলে,

-“রান্নাঘরে। “

তিনি কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে বলেন,

-“যেহেতু এই বাড়ির বউ হয়েছো, সেহেতু এখন থেকে এই সংসার তোমারও যেখানে খুশি যেতে পারো। “

উনার কথায় মেঘের চোখের কোনে পানি জ্বল জ্বল করে উঠে। তারা তাকে এতো তাড়াতাড়ি নিজের করে নিয়েছে, “তার সংসার” কথাটা বারবার সে মনে ননে আওরায়। মুখে হাসি ফুটে ওঠে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে “তবে কি আমি আমার স্বপ্নের সংসার পেয়ে গেছি?”। মুচকি হেসে তার সাথে রান্নাঘরে ঢোকে। তিনি তাকে রান্না করতে না দিলেও সে জোর করেই একাই দুপুরের রান্নাটা করে ফেলে। তারপর গোসল সেরে বাড়ির সব মহিলারা একত্রে খেয়ে নেয়। দুপুর বেলা বাড়ির কর্তারা কেউ খেতে আসেন না, বাইরে খেয়ে নেয়।

বিকালের দিকে মেঘ ঘুমাচ্ছিলো। রুদ্র এখনো আসেনি হয়তো। তবে হঠাৎ ঘুমের মাঝে মেঘের মনে হয় সে পানিতে ভাসছে, ঘুমটা হালকা হয়ে আসে। চটজলদি চোখ খুলে সে নিজেকে দেখতে পায়…

চলবে…….

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply