#আড়ালে_তুমি |১৩| (টুইস্ট)
#সাইদা_মুন
টানা এক সপ্তাহ মেঘ ভার্সিটি যায়নি। বাড়ির কেউ এমনিতেও মেঘের কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করে না, তাই এই বিষয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করেনি।
তবে এই এক সপ্তাহ পিহু, সুমনা, রিক মেঘের সাথে যোগাযোগ রেখেছে। আজ পিহুদের জোড়াজুড়িতে যাচ্ছে সে। নিজেও চিন্তা করছে এভাবে আর কয়দিন থাকবে উল্টো নিজের লেখাপড়ার ক্ষতি। তাই সকাল সকাল হাতের কাজ শেষ করে রেডি হয়ে নেয়। হলুদ রঙের চুড়িদার পড়েছে, কানে ছোট সাদা পাথরের দোল, ঠোঁটে লিপবাম লাগিয়ে ব্যাস শেষ তার রেডি হওয়া।
ভার্সিটির সামনে আসতেই ভাড়া মিটিয়ে নামতেই গেটের সামনে পিহুদের দেখা মিলে। মুখে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে মেঘের। তাকে কমফোর্ট দিতেই তার জন্য দাঁড়িয়ে ভালোই বুঝতে পারছে।
মেঘকে দেখে তারা এগিয়ে আসে। সবাই টুকিটাকি কথা বলতে বলতে ক্যাম্পাসে ঢুকে। কথায় কথায় মেঘ জানতে পারে আসিফকে নাকি কারা মেরেছে, তার বাম হাতের আঙুলও কেটে ফেলেছে। আসিফের নাম শুনতেই মেঘের চোখে মুখে ঘৃণা ফুটে ওঠে।
প্রথম ক্লাস শেষে স্যার যেতেই হঠাৎ সবার মোবাইলে নোটিফিকেশন আসে। মেঘরা উঠে ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে বের হতে নিচ্ছিলো তাই খেয়াল করেনি। তবে হুট করেই পুরো ক্লাসের স্টুডেন্টস তাদের দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছিলো। আর কিসব ফিসফাস করছিল। এসব দেখে পিহু একজনকে জিজ্ঞেস করে,
-“আমাদের কি রূপ বেরিয়েছে? এভাবে তাকাচ্ছো কেনো..?”
ছেলেটি কিছুটা মজা নিয়েই বলে,
-“সবারটা তো জানিনা তবে মেঘের রূপ তো বেড়িয়েছেই সাথে লিংক ও..”
এর কথায় ক্লাসের সবাই হাসতে লাগে। আরেকটি ছেলে বলে ওঠে,
-“এজন্যই তো দেখি কলেজের ফেমাস বয়ের চিপায় চিপায় থাকে উহুমমম খেয়ে ছেড়ে দিলো..? “
ক্লাসের সবাই যেন আরও মজা পেয়েছে , আবারও হেসে ওঠে।এদিকে মেঘের কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না কিসব বলছে এরা সে শুধুই অবাক চোখে তাকিয়ে। রিক রেগে গিয়ে ছেলেটির কলার ধরে বলে,
-“এই কিসব ফালতু কথা বলছিস, মুখ সামলে কথা বল..”
ছেলেটি নোংরা হেসে বলে,
-“ভাই আগে মোবাইল চেক দে তারপর বান্ধবীর হয়ে মাইর করতে আসিস..”
তার কথায় হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকতেই চমকে যায়। মেঘ অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে। ৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও যেখানে মেঘ রুদ্রের বুকে। মেঘের সেদিনের ঘটনা মনে পড়ে যায়। সে ভয়ের চোটে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে রুদ্রকেই জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলো। ভিডিওটা সেই মুহূর্তের তবে মেঘ যে কাঁদছে তা বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে দুজনেই খুবই ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে…
ক্লাসে কেউ হাসছে, কেউ চুপচাপ কনফিউশন নিয়ে তাকিয়ে আছে। পিহু ততক্ষণে ভিডিওটা দেখে। চিৎকার করে বলে ওঠে,
-“এই ভিডিও দিলো কে? কার এত সাহস হয়.”
মেঘ যেন কিছু বুঝে উঠার আগেই বেঞ্চে ধপ করে বসে পড়ে। মুখে তার রঙ নেই, ঠোঁট কাঁপছে। সুমনা তখন চুপচাপ তার পাশে এসে বসে বলে,
-“মেঘ, তুই ঠিক আছিস?”
সে কোনমতে মাথা নাড়ে। চোখদুটো ছলছল করছে। তার মনে হচ্ছে, চারপাশের মানুষজন যেন তাকে গিলে খাচ্ছে।
রিক তখন ছেলেটির দিকে তেড়ে যায়,
-“এই ভিডিও কে দিছে বল? তোদের নিজের বোন থাকলে এরকম করতি?”
পেছন থেকে একজন বলে ওঠে,
-“এইটা তো MMS মামা… ভাইরাল হয়ে গেছে পুরো ভার্সিটিতে….”
ক্লাসের সবার হাসি যেন থামে না।
মেঘ হাওয়ার মতো উঠে দাঁড়ায়। কারো মুখের দিকে না তাকিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়। পিহু আর সুমনা চোখাচোখি করে তড়িঘড়ি করে তার পেছনে ছুটে। রিক দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ থমকে থাকে, তারপর সেও গজগজ করতে করতে বেরিয়ে যায়।
কমনরুমে বসে আছে মেঘ। সেই কখন থেকে চুপচাপ, কথা বলছে না, কিছু একটা চিন্তা করছে। পিহু মেঘের সামনে বোতল তুলে ধরে,
-“পানি খা একটু। দম বন্ধ হয়ে আসছে তোকে দেখে।”
মেঘ কিছুই বলে না। চোখে কোনো আবেগ নেই, ঠোঁট দুটো শুকিয়ে আছে। ঠোঁটের লিপবামটুকুও যেন উড়ে গেছে ততক্ষণে। হঠাৎ খুব ধীরে বলে ওঠে,
-“আমি জানি এসব কে করেছে… “
সুমনা পিহু জিজ্ঞেস করে “কে”। তবে মেঘ তাদের কথার জবাব না দিয়েই হুট করে উঠে যায়। তার চোখে মুখে রাগ আর ঘৃণা স্পষ্ট। সে করিডোর ধরে হাঁটা দেয় কাউকে খুঁজছে সে। পিছে পিছে পিহুরাও আসছে।
অন্যদিকে,
ভার্সিটির মেইন গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকছে রুদ্র। ধূসর রঙের পাঞ্জাবি গায়ে, চোখে সানগ্লাস। তার একপাশে কয়েকজন ছাত্র, যাদের সঙ্গে মিনিটখানেক আগেই একটা ছাত্রসমাবেশ শেষ করে এসেছে। ভার্সিটিতে এতক্ষণে কি ঘটে গিয়েছে তা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই তার।
ঠিক তখনই, ক্লাসরুমের করিডোর থেকে ধেয়ে আসে মেঘ, তার চোখ রক্তিম। সে একদম রুদ্রের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রুদ্রের মেয়েটিকে দেখে স্বাভাবিক লাগেনি কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই, একটা ঠাস করে থাপ্পড় পড়ে রুদ্রের গালে।
চারপাশে যেন মুহূর্তেই নিস্তব্ধতা নেমে আসে। সবার চোখ ছানাবড়া। কেউ বুঝে উঠতে পারছে না কী হলো।
রুদ্র জায়গায় দাঁড়িয়ে, চোখ বন্ধ, সানগ্লাসটা মাটিতে পড়ে আছে। ব্যাপারটা হজম করতে একটা ঢোঁক গিলে চোখ মেলে তাকায়। তার দৃষ্টি এবার আর কোমল না, আগুনের মতো শীতল, চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। থাপ্পড়টা যেন তার গালে না, ইগোতে লেগেছে। সে সোজা তাকায় মেঘের চোখে। চারপাশে অনেক ছাত্রছাত্রী তাকিয়ে। এমন কিছু তারাও আশা করেনি। পিহুরাও অবাক মেঘের এই কাজে, ভাবতেও পারেনি এমন কিছু করবে।
পরক্ষণেই মেঘ রুদ্রের পাঞ্জাবির কলার ধরে দু’পা একটু উঁচু করে রুদ্রের মুখোমুখি হয়। এতে রুদ্র এক চুল পরিমাণও নড়েনি। গর্জে উঠে মেঘ,
-“আপনি করেছেন এসব তাই না? আমি জানি তো, আপনার কাজই। ওইদিন তো আপনি ছাড়া আর কেউ ছিল না। আপনার কি একটুও লজ্জা করল না এমনটা করতে। আপনার নিজের বোনের মুখটা একবারও চোখে ভাসলো না। আজ আমার জায়গায় যদি সে থাক…..
চলবে……..
[সরি এই পর্ব অনেক ছোট হয়ে গেলো। পরের পর্ব ইনশাল্লাহ বড় করে দিবো, একটা নতুন মোড় ও আসবে। সবাই তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলো।]
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৫২
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৩
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৮
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৪
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৮
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪২
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪১
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৭
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৯
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৫০