Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১২


#আড়ালে_তুমি |১২|

#_সাইদা_মুন 

পিহু হাঁটার মাঝে হঠাৎ মেঘকে না দেখতে পেয়ে ভ্রু কুঁচকে যায় “গেল কই এই মেয়ে?”। রিক আর সুমনাকে যেতে বলে সে পেছন দিকে আবার যায় তাকে খুঁজতে।

কিছু দূর যেতেই কারো ডাকে পা থেমে যায় পিহুর। মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখা পায় উজ্জ্বল শ্যামলা রঙের সুদর্শন পুরুষের, মুখে ছাপ দাড়ি, চোখে নরমাল গ্লাস, চুলগুলো ব্রাশ করা, একটু বড় হওয়ায় কিছুটা উঠে উঠে আছে, নেভি-ব্লু পাঞ্জাবিতে বেশ মানিয়েছে। ছোটখাটো একটা ক্রাশ খেয়ে বসে আছে পিহু।

ছেলেটির আবার ডাকে হুঁশ ফিরে। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,

-“কি সমস্যা? কানে কি দেখেন না আমি যে যাচ্ছি, ডাকছেন কেনো”

ছেলেটা হকচকিয়ে যায়। অবাক কণ্ঠে বলে,

-“কানে আবার দেখে কিভাবে?”

পিহুর নিজেরও বোধগম্য হয় কিসব যাতা বলছে। পর মুহূর্তেই নিজেকে ঠিক প্রমাণ করতে কোমড়ে দুই হাত দিয়ে বলে,

-“যেহেতু আমি বলেছি সেহেতু ঠিক বলেছি.। ইউর এনি সমস্যা?”

ছেলেটি হালকা হেসে বলল,

-“না না, একদম সমস্যা নেই”

পিহুর কথায় সায় দিতেই তার ভাবটা আরেকটু বেড়ে যায়। আবার তাকে বলল,

-“ডেকেছেন কেনো?”

-“আসলে অফিস রুমটা কোনদিকে?”

পিহু চোখ ছোট ছোট করে বলল,

-“দেখে তো লাগছে এখানের স্টুডেন্ট। তা নতুন নাকি?”

ছেলেটি হালকা মাথা নেড়ে বলে,

-“হ্যাঁ, নতুন এখানে। আসলে ট্রান্সফার….”

পিহু ভাবে তাদের ক্লাসমেট হয়তো, তাই তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পিহু বলে,

-“নতুন এসেই সিনিয়রের সাথে বেয়াদবি, সালাম ছাড়া কথা! দাঁড়ান, স্যারকে বিচার দিব। টিসি দিয়ে বের করে দিবেন।”

পিহুর কথায় ছেলেটা কি বুঝলো না বুঝলো জানে না তবে, মুখটা একটু ভীতু করে বলে,

-“সরি সরি সিনিয়র আপু, আসসালামু আলাইকুম, আপনি যদি দয়া করে আমাকে অফিস রুমটা দেখাতেন।”

পিহু ‘ফলো মি’ বলে তাকে অফিস রুমের দিকে নিয়ে যায়।

———————-

মেঘ পেছনে তাকিয়ে দেখে আসিফ। তার দিকেই তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। আরেকটু সামনে এগিয়ে এসে বলে,

-“হাই মেঘ, তোমাকে আজ সেইইই হ* লাগছে।”

মেঘ কিছুটা পিছিয়ে যায়। ভয় হচ্ছে দরজা বন্ধ কেনো,

-“আ..আপনি এখানে কেনো? আর দরজা বন্ধ করেছেন কেনো?”

বলেই সে দরজা খুলতে এগিয়ে যেতে নেয়। তবে আসিফ তার সামনে এসে দাঁড়ায়,

-“এত যাওয়ার তাড়া কিসের? এখনো তো অনেক কিছু বাকি..”

হঠাৎ অনেকগুলো গোলাপ ফুল বের করে হাঁটু গেড়ে বসে যায় মেঘের সামনে, তার চোখে অদ্ভুত ঝলক, ঠোঁটে হাসি নয়-এক ধরনের শকুনি ভঙ্গি। সে বলে,

-“আমি তোমাকে ভালোবাসি মেঘ। তোমাকে দেখার পর থেকে আর কোনো দিকেই নজর আটকানো যাচ্ছে না। কী জাদু করেছো আমায়?”

মেঘ কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। মাথায় চিন্তা এখন যদি ডিরেক্ট রিজেক্ট করি ক্লাসে তো সে একা, যদি খারাপ কিছু করতে চায়! সে বুঝ দিয়ে বললো,

-“দে..দেখুন ভাইয়া, আগে দরজা খুলুন..”

আসিফ হুট করে এসে মেঘের হাত ধরে ফেলে। মেঘ দু’পা পিছিয়ে যেতে নিয়েও পারেনি। আসিফ করুণার সুরে বলে,

-“ভয় পাচ্ছো? ভয় পেয়ো না, আমি কিছুই করবো না যদি তুমি রাজি হয়ে যাও।”

মেঘ চুপ, সে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। তাকে চুপ থাকতে দেখে আসিফ রেগে যায়,

-“তুই আমার গার্লফ্রেন্ড হ, আমি তোকে এই সেমিস্টারে টপ রেজাল্ট করায় দিবো… কেমন?”

পরপর আবার বলে উঠে,

-“তুই একবার রাজি হ, দেখবি ক্যাম্পাসে সবার সামনে তোকে নিয়ে তাক লাগায় দিবো। এমন সে* মেয়ে তো, আমার পাশেই ফিট হবি। কেউ কিছু বলার সাহস পাবেনা, সবাই ভাবি ডাকবে।”

মেঘ থমকে যায়। এতটা বাজে প্রস্তাব সে আশা করেনি। মেঘ ভয় পায়। পিছিয়ে যায় আসিফের সামনে থেকে। নরম গলায় বলে,

-“না ভাইয়া, আমি এসব কিছু চাই না। প্লিজ আমাকে যেতে দিন।”

মেঘের মুখে এই কথা শোনতেই আসিফের মুখের হাসি মিলিয়ে যায়। চোখে এক মুহূর্তে হিংস্রতা ভেসে ওঠে। হঠাৎ সামনে এগিয়ে এসে মেঘের চুলের মুঠি ধরে ফেলে।

মেঘ তৎক্ষণাৎ ভয় পেয়ে চিৎকার করতে যায়, কিন্তু আসিফ মুখের খুব কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,

-“ওই রুদ্রটার জন্যই না? তার জন্যই তো রিজেক্ট করলি আমাকে?”

আবার চিৎকার করে বলে,

-“এই শা*লা আমার সব জিনিস কেড়ে নেয়। এখন তোকেও নিয়ে নেবে?”

মেঘের কিছুই মাথায় ঢুকছে না। চুলে শক্ত করে ধরায় ব্যথায় চোখমুখ কেঁচে বন্ধ করে নেয়। আসিফ আবার কণ্ঠে ক্ষোভ নিয়ে বলল,

-“দাঁড়া, তোর এমন অবস্থা করবো যে রুদ্র কেনো, কোনো ছেলেই তোর দিকে ফিরে তাকাবে না। বেশি ভাব তাই না? ছোটাবো।”

তার চোখে তখন ঘৃণা, ক্ষোভ আর বিকৃত আনন্দ। মেঘ আর্তচিৎকার করতে চায়, ছটফট করে বের হওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু আসিফ তখন পাগলের মতো আচরণ করছে…

মেঘের আঁচলে টান দেয়, তবে মেঘ দুই হাতে শক্ত করে ধরে রেখেছে বিধায় সরাতে পারছে না৷ তা দেখে রেগে মেঘের গালে পরপর ৩/৪ টা থাপ্পড় মারে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। মেঘ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে, তবে কেউ শুনছে না। শুনবেই বা কিভাবে, সবাই যে মাঠে। দস্তাদস্তির এক পর্যায়ে মেঘ আসিফকে ধাক্কা মেরে ফেলে দরজার দিকে ছোটে যেতে নেয়, তবে মেঘের পা ধরে ফেলায় মুখ থুবড়ে নিচে পড়ে, ব্রেঞ্চের সাথে লেগে কপাল কেটে যায়। ব্যথায় জর্জরিত মেঘ তবুও নিজের ইজ্জত বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

—————–

রুদ্র স্টেজের এদিকটায় ছিলো তখন, কারো কল আসে।

-“কিরে ব্যাটা, আর কতক্ষণ ওয়েট করাবি?” (অপাশ থেকে)

-“তুই চলে এসেছিস?”

-“হুঁ, অফিস রুমে বসে আছি, দ্রুত আয়।”

-“আচ্ছা, ওয়েট…”

কল কেটে শান্ত রাহুলের উপর সব বুঝিয়ে দিয়ে সে চলে অফিস রুমের উদ্দেশ্যে। নিচ তালার করিডোর পেরিয়ে যেতে নিতেই হঠাৎ ঠাস করে ব্রেঞ্চ পড়ার শব্দে রুদ্রের পা থেমে যায়। কিসের শব্দ হলো তা দেখতে সেদিকে যায়। কয়েকটা ক্লাসরুম পেরিয়ে যেতেও দেখে সব ক্লাসের দরজা বন্ধ। মনের ভুল ভেবে আবার পেছন ফিরে হাঁটতে নিতেই কারো চিৎকারের শব্দ কানে আসে। গলাটা তার পরিচিত মনে হচ্ছে। কারো কোনো বিপদ হলো না তো ভেবে সে সেদিকে আবার দ্রুত পায়ে আগায়। সব ক্লাসের দরজা খুলে চেক করতে করতে লাস্টের ক্লাসটার দরজা ভিতর থেকে অফ দেখে। সে বাইরে থেকে কয়েকবার দরজায় বাড়ি দেয়।

এদিকে মেঘ বাইরে থেকে দরজার করাঘাতের শব্দে আরও চিৎকার করে উঠে, কাঁদতে কাঁদতে বলে,

-“কে আছেন? সাহায্য করুন প্লিজ!”

আসিফও থেমে যায়-এদিকে তো কারো আসার কথা না, কে আসলো? তবে সে দ্রুত মেঘের দিকে আবার এগিয়ে যায়। মেঘের শাড়ি আধখোলা, পেট স্পষ্ট, আসিফ সেদিকে হাত বাড়িয়ে নখ বসিয়ে দেয়। টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। মুখ বাড়াতে নিবে, অমনি পেছন থেকে কারো থাবায় মেঘকে ছেড়ে দেয়। পেছনের ব্যক্তিটি তাকে তার দিকে ঘুরাতেই, আসিফ দেখতে পায় রুদ্রের মুখ। চোখে যেন আগুন ঝলসে। আর কিছু ভাবার সময় না দিয়েই আসিফের নাক বরাবর একটি ঘুষি মেরে দেয়, সাথে সাথে গলগলিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। শরীরের সব শক্তি দিয়ে আসিফকে সমানে মেরে যাচ্ছেই, আধমরা অবস্থা তার। তবুও রুদ্রের থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা, একসময় রুদ্রের হাতের বাঁধন ঢিলে হতেই সে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায়।

রুদ্রও আসিফকে ধরতে সেদিকে যেতে নেয়, কারো ফুপিয়ে কান্নার শব্দে পা থেমে যায়। পেছন ফিরে দেখে মেঘ এক কোণায় জড়সড় হয়ে বসে আছে, কান্নার ফলে মাঝে মাঝে শরীর ঝাঁকি দিয়ে উঠছে। শাড়ি এলোমেলো, ফর্সা গালে পাঁচ আঙুলের দাগ স্পষ্ট,কপালে রক্ত, ডান হাতের ব্লাউজ কিছুটা ছিঁড়ে গেছে, সেখানে নখের আঁচড়ের দাগ, পেটের দিকে নজর যেতেই চোখ সরিয়ে নেয়। রুদ্রের হঠাৎ বুকের মধ্যে ভার ভার লাগছে। এই মেয়েটির এই অবস্থা সে মেনে নিতে পারছে না।

কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে যায় রুদ্র। মেয়েটি ভয়ে জড়সড় হয়ে কাঁদছে,

-“হেই মেঘ, কিছু হয়নি তো? আমি চলে এসেছি…”

মেঘ একইভাবে বসে আছে, যেন আশেপাশে খেয়াল নেই তার। রুদ্র একটা ঢোক গিলে আবার ডেকে উঠে,

-“মেঘ…..”

এবার মেঘ মাথাটা তুলে রুদ্রের দিকে তাকায়, কান্নার ফলে চোখ-মুখ ফুলে আছে। রুদ্র তাকে ভরসা দিতে বলে,

-“Don’t be afraid, I’m here with you….”

মেঘ যেন এমনই সান্ত্বনা খুঁজছিলো। বসা থেকে উঠেই রুদ্রের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গলা ছেড়ে কাঁদছে মেয়েটি। রুদ্র বুঝতে পারছে সে তার নিজের জ্ঞানে নেই। ডান হাতটা মেঘের মাথায় রেখে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।

রুদ্র বাম হাতে তার ফোনটি নিয়ে পিহুকে কল লাগায়,

-“হ্যালো..”

-“হ্যাঁ ভাইয়া বলো…”

-“এখনই ফার্স্ট ফ্লোরের লাস্ট ক্লাসে চলে আয়, দ্রুত…”

বলেই কল কেটে দেয়। পিহু ভাইয়ার কথা মতো ক্লাসে আসতেই তার পা স্লো হয়ে যায়। মেঘের এই অবস্থা দেখে তার ভিতর কেঁপে উঠে,

-“ভাইয়া, ওর কী হয়েছে…?”

রুদ্র মেঘের দুই কাঁধ ধরে নিজের থেকে ছাড়িয়ে পিহুকে ইশারা করে তাকে ধরতে। পিহু তাকে নিজের কাছে জড়িয়ে নেয়। মেঘ তখনো কাঁদছে। রুদ্র কর্কশ গলায় বলে,

-“ঠিকঠাক করে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসিস…”

বলেই হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যায়। কাউকে কল লাগায় “আসিফকে আমি এখনই চাই, ইমিডিয়েটলি”। কল কেটে বড় বড় পা ফেলে চলে যায় তার উদ্দেশ্যে।

এদিকে পিহু মেঘকে প্রায় আধা ঘণ্টা লাগিয়ে শান্ত করেছে, তারপরও মেয়েটি ভয়ে চুপসে আছে। তার শাড়ি ঠিকঠাক করে আঁচল দিয়ে শরীর ঢেকে দেয়। তারপর মেঘকে তাদের গাড়ি করেই বাসায় ড্রপ করে দিয়ে আসে।

চলবে……..

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply