#আড়ালে_তুমি |১১.২|
#_সাইদা_মুন
আজ নবীন বরণ অনুষ্ঠান, ১০ টার মধ্যেই সবাই উপস্থিত তবে মেঘের আসতে একটু লেট হয়ে যায়। গেট দিয়ে ঢুকতেই পুরো ক্যাম্পাস চোখে পড়ে নতুন রূপে সাজিয়ে তুলেছে চারিদিক। মেঘ সোজা স্টেজের দিকে চলে যায় সবাই ওদিকেই।
রুদ্র স্টেজের দিকটায় ছিলো হঠাৎ কল আসায় সাইড নিয়ে বেরিয়ে আসে। কথা বলতে বলতে দু’তালার বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। কথা বলার মাঝেই হঠাৎ চোখ যায় নিচে দাঁড়িয়ে থাকা মেঘের দিকে।
রুদ্র ঠিক জানে না সে কখন থমকে দাঁড়িয়েছে। দূর থেকে চোখে পড়লো মেঘ-নীল শাড়িতে। কোলাহলের মধ্যে হঠাৎ যেন সময় থেমে গেল। তার নীল শাড়িটা বাতাসে দুলে উঠছে, চুলগুলো খোলা, চোখে একরাশ ব্যস্ততা, ঠোঁটে নীরবতা। কিন্তু রুদ্রের চোখে সে যেনো এক নিঃশব্দ বিস্ফোরণ, ছিল অন্যকিছু তার চোখে, একটা চাপা আতঙ্ক, একটা নড়েচড়ে বসা অনুভব। আর বুকের ভিতর এক নিঃশব্দ ঘোষণা, “আমি বিপদে পড়ে গেছি…।”
রুদ্রের ধ্যান ভাঙে ফোনের অপরপাশের মানুষের ডাকে। নিজের কাজ বোধগম্য হতেও অধর নাড়িয়ে বিরবিরিয়ে বলে,
-“শিট..”
এদিকে মেঘ পিহুদের কাছে যায়। সুমনা পিহুও সেম শাড়ি পড়েছে, মূলত সবার শাড়ি সেইমই। ভীষণ মিষ্টি লাগছে তাদের। আর রিক পড়েছে পাঞ্জাবি। মেঘকে দেখে পিহু এক্সাইটেড হয়ে বলে উঠে,
-“বইন তোকে তো আজ যেই দেখবে ক্রাশ খাবে। কি যে সুন্দর লাগছে তোকে। আমি ছেলে হলে তোকে এতক্ষনে প্রপোজ করে বসতাম।”
মেঘ হালকা হেসে ফেলে,
“তোকেও সুন্দর লাগছে।”
তা শোনে রিক গলা টেনে বলে,
-“ফাম দেওয়ার জন্যে নারীরা সেরা রেহহহহহহহহহ”
তার কথায় মেঘ পিহু কটমট করে তাকায়। তাদের তাকানো দেখে রিক ফিকে হেসে বলে,
-“না মানে পুরুষ সেরা রেহহহহহ”
সুমনাকে অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকতে দেখে ব্যাপারটা হজম করতে পারছে না মেঘ। এই মেয়ে তো এতো ভালো মানুষ না। তার উপর আজকের দিন সে নিয়ে অনেক এক্সাইটেড ছিল। পিহুকে ইশারায় জিজ্ঞেস করে “কি হয়েছে” তবে তার উত্তর “সেও জানে না”। মেঘ সুমনাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে জিগায়,
-“কিরে কি হয়েছে”
সুমনা তাদের দিকে তাকিয়ে কাঁধো কাঁধো গলায় বলে,
-“মেভি আমার হার্ট সার্জারি করাতে হবে..”
সবাই অবাক হয়ে যায় সাথে চিন্তিত কণ্ঠে প্রশ্ন করে,
-“কেনো কি হয়েছে তোর?”
সুমনা হতাশার শ্বাস ছেড়ে বলে,
-“আমার হার্টে মনে হয় ছিদ্র আছে রে, যারেই জায়গা দেই সেই ক্ষতি করে বেরিয়ে যায়।”
সবাই হতবাক বলে কি এই মেয়ে। পিহু রিক তো বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে। তা দেখে মেঘ বিরক্ত হয়ে বলে,
-“২৩ নাম্বার টার সাথেও ব্রেকআপ?”
সুমনা মাথা নাড়ায়। সাথে সাথে মেঘ বলে,
-“তো এর জন্য মন খারাপ করছিস?”
সুমনা বলে উঠে,
-“ওই হ্যাবলার জন্য কিসের মন খারাপ। আমার তো নিজের জন্য মন খারাপ। শালার জন্য কালকে সারা রাত জেগে ছিলাম, এই দেখ চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়েছে। শালা সারা রাত কথা বলে ফজরের সময় ব্রেকআপ করছে, ব্রেকআপ করতি আগে কর তাহলে ঘুমাই যাইতাম, কালকে সারাদিন রূপচর্চা করছি আজকের অনুষ্ঠানের জন্য। কিন্তু কালকে রাত জেগে সব ব্যর্থ হয়ে গেল রে। আজকে আমাকে দেখতে খারাপ লাগছে, কেউ পছন্দ করবে না ইয়ায়ায়ায়া।”
সুমনার দুঃখের আসল রহস্য শোনে সব হতবাক। হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝে উঠছে না। পরক্ষণেই হাসির রোল পড়ে যায়।
এদিকে সব স্টুডেন্টস গেটের দিকে যাচ্ছে নবীন বরণে ইনভাইটেড গেস্টরা চলে এসেছে তারাও এগিয়ে যায় সেদিকে। ভলান্টিয়াররা তাদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়। প্রধান অতিথি হিসেবে রুদ্রের বাবা এরশাদুল চৌধুরী কে প্রিন্সিপাল স্যার স্পেশাল ভাবে নিজে এগিয়ে গিয়ে নিয়ে আসেন। তারপর শুরু হয় ভাষণ। স্টুডেন্টসদের জন্য সব থেকে বোরিং টাইম। একেকজন হামি দিচ্ছে ভাষণ শুনতে শুনতে। এক পর্যায়ে তা শেষ হয় তখন সবাইকে কিছুক্ষণের জন্য ব্রেক টাইম দেওয়া হয়। এর মধ্যে যারা নাচে, গানে বা নাটকে নাম দিয়েছে তারা কস্টিউম চেঞ্জ করে নেয়।
মেঘরাও তাদের ড্রেসআপ পরে নেয়, শাড়ির উপরই কালো বোরকা পড়েছে। আর মুখে পাউডার, চোখে কালি লাগিয়ে নেয় ব্যাস। প্রথমে একটা গান হয় তারপর দুইটা নাচের পর এবার তাদের নাচের পালা। সবাই স্টেজের পেছনে এসে দাঁড়ায়। রুদ্ররা এদিকেই সব মেইনটেইন করে স্টেজে পাঠাচ্ছে। তাদের ডাকতেই উঠে আসে তখনই মেঘের নজর যায় রুদ্রের দিকে,
নেভি ব্লু পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা পরা রুদ্রের মুখে আজ ভীষণ ব্যস্ততা। রুদ্রের পাঞ্জাবির হাতা গুটানো, ঘামে ভেজা কপাল, চোখে কিছুটা ক্লান্তি-তবু সেই চোখে কিছু আছে… একধরনের মনোযোগ, আর নেতৃত্ব।
রুদ্র হয়তো একঝলক দেখেওছিলো মেঘকে, তবে দেখামাত্র ফিক করে হেসে ফেলে এতে মেঘ কিছুটা লজ্জা পায় বটে।
—
হঠাৎ স্টেজে কয়েকটা ভূতের বেশে মানুষের আগমনে সব স্টুডেন্টস নিশ্চুপ হয়ে যায়। কৌতূহল নিয়ে চেয়ে থাকে।
মেঘ, পিহু, সুমনা, রিক চারজনই মঞ্চের মাঝখানে। চোখে বড় কালো কালি, মুখে সাদা পেইন্ট, মাথায় সাদা কালো হিজাব আর কালো বোরকায় যেনো ‘নান’ মুভির ভূতের রিক্রিয়েট করতে চেয়েছে।
পেছনে আরও কয়েকজন সাথি সাদা কাপড়ে মোড়ানো, কনফিউজ লুক। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে,
“Sone sone pathole lakkan,
Sobe sone pathole yeaahh…”
সাথে সাথে সবাই সেইম স্টেপে নাচতে শুরু করে।
তার সঙ্গে সঙ্গে পুরো মাঠ হইহই করে চিৎকার করে ওঠে, কেউ সিটি বাজাচ্ছে, কেউ হাততালি, কেউ আবার জায়গা থেকে লাফিয়ে উঠে।
তারা প্রতিটা স্টেপ মিলিয়ে নাচছে। গানের বিটে বিটে গালে আঙুল দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়, তো আবার কখনো কোমড়ে হাত দেয়।
“O baby doll main sone dii..”
সবাই বেশ এঞ্জয় করছে, মুখে অট্টহাসি, স্যাররাও হাসছেন হালকা।
শেষ বিটে সবাই একসাথে ঘুরে দাঁড়ায়।
মাঠের সবাই দাঁড়িয়ে যায় একসাথে, পুরো মাঠে হাসির বিস্ফোরণ। তালিতে ফেটে পড়ে। কিছু স্টুডেন্টস রীতিমতো মিছিল দিচ্ছে “Baby doll ভূত রিটার্ন চাই” এই বলে।
অতঃপর তারা নাচ শেষে স্টেজ থেকে নেমে যায়। মেঘরা চেঞ্জ করে নেয়। মেঘ শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে এগোচ্ছে, পিহুরা তার অনেকটা আগেই। হঠাৎ একটি মেয়ে দ্রুত আসায় মেঘের সাথে ধাক্কা লাগে। মেঘসহ মেয়েটি নিচে পড়ে যায়। এভাবে পড়ায় মেঘের ঠিক করা কুচিটা আরও এলোমেলো হয়ে যায়, কোমড়েও বেশ ভালোই ব্যথা পেয়েছে। সাথের মেয়েটি সাথে সাথে উঠে মেঘকে টেনে উঠায়,
-“স্যরি স্যরি আপু আসলে তাড়াহুড়ায় দেখিনি। কিছু মনে করোনা, চলো আমার সাথে ওই ক্লাসটা ফাঁকা আছে, শাড়িটা ঠিক করে নিবে।”
মেঘও কিছু না বলে চুপচাপ মেয়েটির পিছে পিছে যায়। মেঘকে নিয়ে ক্লাসের সামনে যায়, মেয়েটি দরজার পাশে দাঁড়ায়। মেঘ ক্লাসে ঢুকে শাড়ি ঠিক করার উদ্দেশ্যে তবে ক্লাসে ঢুকতেই হঠাৎ দরজা বন্ধের শব্দে পেছনে ফিরে তাকায়………
চলবে……….
Share On:
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE