#আড়ালে_তুমি |১১.১| (বোনাস )
#_সাইদা_মুন
সন্ধ্যার দিকে মেঘের জন্য পিহু গাড়ি পাঠায়। মেঘকে কিছুতেই পাঠাতে চাচ্ছিল না তার মা। তবে মিজানুর সিকদারের কথার উপর কথা বলার সাহস নেই, তাই আর আটকাতে পারেনি।
মেঘকে নিয়ে সুমনাকেও তার বাসা থেকে পিক করে নেয়। গাড়ি চৌধুরী বাড়ির গেট পেরিয়ে প্রবেশ করতেই মেঘ আর সুমনা অবাক হয়ে চারপাশ দেখছে। বাড়ি বললে ভুল হবে, ছোটখাটো একটি রাজপ্রাসাদ বলা চলে। গেট দিয়ে ঢুকতেই সরু রাস্তা, একপাশে গ্যারেজ, অন্য পাশে সুইমিংপুল, পেছনের দিকটায় হয়তো বাগান, গাছপালা দেখা যাচ্ছে। সুমনা মেঘকে বলে,
-“পিহুরা এত বড়লোক অথচ তাকে দেখে বোঝতেই পারিনি, আমাদের সাথে একদম সাধারণ হয়ে থাকে।”
-“হুম, মেয়েটির মধ্যে অহংকার নেই।”
তখনই পিহু বেরিয়ে আসে। দৌড়ে এসে তাদের জড়িয়ে ধরে,
-“তোরা কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি? চল ভেতরে চল,”
দুজনের হাত ধরে হাঁটা দেয়। বাড়িতে প্রবেশ করতেই চোখ জুড়িয়ে যায় তাদের, যেন সৌখিনতায় মোড়ানো এক জগৎ। আধুনিক আসবাবপত্রের সুন্দর কম্বিনেশন দেখেই যে কেউ বলবে বাড়ির লোকজন খুবই রুচিশীল।
পিহু একে একে সবার সাথে মেঘ আর সুমনাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। পিহুর মা, দাদির তো মেঘকে ভীষণ ভালো লেগেছে। কিছু সময়ের মধ্যেই পিহুর দাদির সাথে বেশ আড্ডা জমিয়েছে মেঘ। তার মধ্যে আবার পিহুর মা সিদ্দিকা চৌধুরী তাদের নাস্তাও দিয়ে যায়। নাস্তা করে পিহুর সাথে তার রুমে চলে যায় মেঘ আর সুমনা।
-“তর বাপ যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, একবারও তো বললি না?”
সুমনার প্রশ্নে মেঘ, সুমনা দুজনেই প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পিহু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-“কারণ আমি সত্যিকারের বন্ধুত্বের স্বাদ চাচ্ছিলাম, নিজের মতো বাঁচতে চাই, নিজের পরিচয়ে। বাবার পরিচয় শোনলে সবাই আমাকে অনেক প্রায়োরিটি দেয়, তবে ওগুলো লোক দেখানো। স্কুল কলেজে অনেক মানুষ পাশে পেয়েছি, তবে মন থেকে কাউকে পাইনি। আমি চাই আমার জীবনে অল্প কিছু মানুষ থাকুক, তবে তারা আসল মানুষ থাকুক, মুখোশধারী নয়।”
পিহুর কথা শেষ হতেই মেঘ, সুমনা তাকে জড়িয়ে ধরে। মেঘ আশ্বাস দিয়ে বলে,
-“আমরা আছি না।”
সুমনা ফাইজলামি করে বলে,
-“হু হু, ভাবিস না তোর বাপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলে তোকে আমরা ভয় পাবো, হুহ উই ডোন্ট কেয়ার।”
তার মধ্যে রিক ও এসে পড়ে। পিহু সবাইকে ডান্স থিম বলে, সাথে তার রেডি করা কস্টিউম ও দেখায়। পিহুর ডান্স থিম আর কস্টিউম দেখে সবাই একসাথে “কিইই” বলে ওঠে।
-“আরে ভাই, এটাই তো মজা। আমরা ডান্স প্লাস সবাইকে এন্টারটেইন ও করবো। প্লিজ প্লিজ, না করিস না, আমার অনেকদিনের শখ ছিলো আমার ফ্রেন্ডদের নিয়ে এভাবে নাচতে।”
পিহুর রিকোয়েস্টে সবাই নিজের কস্টিউম পরে নেয়। বোরকা, এর উপর সাদা ওড়না দিয়ে হিজাব পড়া, আর মুখে পাউডার দিয়ে সাদা করে নিয়ে ভূত সেজে নেয়।
কস্টিউম পড়ার পর একেকজন নিজেদের দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে প্রায়। রিক তো হাসতে হাসতে বলে,
-“বইন, তোদের আসল রূপে এই প্রথমবার দেখলাম। ভালোই হয়েছে, রূপ বদলে থাকিস। এই রূপে কারো সামনে গেলে হার্ট অ্যাটাক করতো, ড্যাম সিওর।”
রিকের কথায় পাল্টা জবাবে পিহু বলে,
-“আর তুই যে ছেলে থেকে মেয়ে হয়ে গেলি, তোকে কি ওইটা বলবো..?”
রিকের মুখটা চুপসে যায়। এই তিন বেডির ফ্রেন্ড হয়ে কত কী যে করতে হচ্ছে জীবনে, এখন আবার মেয়ে ও বানাই দিছে। বেচারা নিজের সম্মান বাঁচাতে মুখটা বন্ধ রাখে। তারপর সবাই ডান্স স্টেপ প্র্যাকটিস করতে লাগে। প্রায় ১ ঘণ্টা করে সবাই টায়ার্ড হয়ে বসে পড়ে। সুমনা হতাশ হয়ে বলে,
-“আর না, আর ভালো লাগছে না নাচতে।”
মেঘ ও সম্মতি দেয়। পিহুরও সেম অবস্থা। রিক এদের এই অবস্থা দেখে বলে,
-“চল লুকোচুরি খেলি।”
মেঘ অবাক হয়ে বলে,
-“এখন এই অবস্থায়? আর আমরা কি বাচ্চা?”
-“আরে খেলতে গেলে বাচ্চা বড় লাগে নাকি! আয়, পিহুদের বাড়িটা বড় আছে, খেলতে পারবো।”
রিকের কথায় সুমনা-পিহুও রাজি হয়। তারপর আর কি, সবাই সাক্ষী মিলিয়ে মেঘ চোর হয়। মেঘকে এক সাইডে চোখে হাত দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বাকিরা লুকাতে চলে যায়। বেচারি মেঘ চোখ বন্ধ করেই এক থেকে দশ অব্দি গুনে, তারপর খুঁজতে বের হয়।
পিহুর রুম থেকে বেরিয়ে সে আশেপাশে তাকায়, লম্বা এক করিডোর পেরিয়ে ছাদের সিঁড়ি, দোতলায় টোটাল পাঁচটা রুম। পিহুর রুমের পাশে দুই রুম, আর অপজিটে আরও দুই রুম। সামনের রুমগুলোর দরজা বাইরে থেকে লাগানো দেখে মেঘ করিডোর ধরে সামনে এগোয়। আশেপাশে তাকিয়ে একটাকেও দেখতে পাচ্ছে না। ছাদে গেলো নাকি ভেবে সিঁড়ির দিকে এগোতেই, সিঁড়ির আগের রুমের দরজা খোলা দেখে ভাবে হয়তো এখানে কেউ লুকিয়েছে। আস্তে আস্তে দরজাটা হালকা খুলে, ভেতরে আধো অন্ধকার। আশেপাশে তাকাচ্ছে, কাউকে দেখছে না, হঠাৎ ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকায় মেঘ।
রুদ্র একটু আগেই বাইরে থেকে ফিরেছে। মাত্র গোসল করে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দরজার দিকে চোখ যায়, হালকা আলোতে এমন ভূতের মতো কাউকে দেখে কে এইটা দেখতে রুদ্র এগিয়ে যায়। এদিকে মেঘ রুদ্রকে শুধু টাওয়াল পরা অবস্থায় দেখে এক চিৎকার দিয়ে দ্রুত চোখে হাত দিয়ে বেরিয়ে যায়। মেঘের চিৎকারে রুদ্রের পা থেমে যায়, নিজের দিকে তাকাতেই সে তড়িঘড়ি করে দরজা লাগায়।
-“শালা, দরজা লাগাতে ভুলে গেছি!”
অন্যদিকে সুমনা রুদ্রের রুমের বাইরের ছোট একটি ক্যাবিনেটের পেছনেই লুকিয়ে ছিলো। এদিকটায় হালকা আলো। মেঘের চিৎকারে সে বেরিয়ে আসে দেখতে কি হয়েছে। তবে মেঘ দ্রুত বের হয়ে আসায়, আর সুমনাও সামনে থেকে দ্রুত আসায়, দুজনেই ধাক্কা লেগে একজন আরেকজনের দিকে তাকাতেই ভূতের মুখ দেখে হালকা আলোয় ভয় পেয়ে কেঁপে উঠে একসাথে দেয় আরেকটা চিৎকার,
-“আআআয়াআআআ!”
তাদের চিল্লানোতে পিহু সিঁড়ির আড়াল থেকে জলদি বেরিয়ে আসে। আর সেদিকটা একদম অন্ধকার হওয়ায় পিহু যে আসছে, কিন্তু লাগছে সাদা কিছু আসছে। সুমনা মেঘ পায়ের শব্দে সেদিকে তাকাতেই ভয়ে লাফিয়ে একসাথে দেয় আরেকটা চিৎকার,
-“আয়াআআআআআ ভূততততত!”
তাদের চিৎকার শোনে পিহু ভাবে তার পেছনে হয়তো ভূত আছে, সেও ভয়ে তাদের সাথে চিল্লিয়ে উঠে। এদিকে একের পর এক চিৎকার শোনে রিক ছাদ থেকে ভয়ে তাড়াতাড়ি দৌড়ে নামতে গিয়ে, লাস্টের সিঁড়িতে বাল্লা খেয়ে একদম উল্টে মেঘদের সামনে এসে পড়ে। এর হঠাৎ আগমনে সবাই আরেকটা বাড়ি কাঁপিয়ে চিৎকার দেয়।
এদিকে এমন চেঁচামেচি শোনে বাড়ির সবাই নিচ থেকে ওপরে উঠে আসে, রুদ্রও টি-শার্ট ট্রাউজার পরে বের হয়ে আসে। এদিকে অন্ধকারে এদের দেখে তারাও চিল্লিয়ে উঠে ভূত ভেবে। রুদ্র এদের কাহিনি দেখে তাড়াতাড়ি গিয়ে করিডোরের সব লাইট অন করে। লাইট অন হতেই তাদের চারটাকে দেখে তাদের বোধগম্য হয় না কাহিনি কী। এই অবস্থায় দেখে রুদ্রের মা বলে উঠে,
-“এসব কি?”
পিহু আমতা আমতা করে বলে,
-“না মানে আম্মু, আমরা কালকে নবীন বরণে নাচবো এভাবে, তাই একটু প্র্যাকটিস করছিলাম। কিন্তু অন্ধকারে আমরাই আমাদের দেখে ভয় পেয়ে গেছি।”
পিহুর কথা শেষ হতেই চৌধুরী বাড়িতে হাসির বোমা ফুটে।
এদিকে পিহুরা বেক্কলের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তবে সুমনা আর রিক রুদ্রের দিকে নজর যেতেই বিষ্ময় নিয়ে তাকায়। ফিসফিস করে জিগায়,
-“এই পিহু রুদ্র ভাইয়া এখানে কি করছেন?”
পিহু নরমাল ভাবেই ভলে,
-“তার বাপের বাড়ি সে থাকবে না “
রিক সুমনা হালকা জোরে বলে,
-“মানে?”
-“মানে রুদ্র ভাই আমার বড় ভাই “
পিহুর কথায় তারা আরও অবাক হয়। এতোদিন বললো না কেনো সেই প্রশ্ন তাদের চোখে। মেঘ হঠাৎ রুদ্রের দিকে তাকাতে লক্ষ্য করে তার হাসি, উনার হাসি সুন্দর, বিশেষ করে উনার দাঁতগুলো সুন্দর। দুই পাশের দাঁতের কোনা বের হয়ে আছে যেনো ভ্যাম্পায়ার। তবে হাতের দিকে নজর যেতেই ভ্রু কুঁচকে আসে।
পিহুর মায়ের কথায় ধ্যান ভাঙে তআদের। উনি সবাইকে চেঞ্জ করে নিচে যেতে বলেছে ডিনার করতে। তার কথায় সবাই চেঞ্জ করতে চলে যায় পিহুর রুমে । তবে মেঘ রুদ্রের সামনে যায়। মেঘকে তার সামনে দেখে ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিগ্যেস করে”কি হয়েছে?”।
মেঘ রুদ্রের হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আপনার হাত কাটলো কিভাবে? রক্ত বেরোচ্ছে তো এখনো। মনে হচ্ছে থেতলে গেছে।”
রুদ্র মেঘের কথায় হাতটা লুকিয়ে ফেলে। কঠিন গলায় বলে,
-“তোমার এত কিছু দেখতে কে বলেছে? যাও, চেঞ্জ করে নিচে নামো।”
রুদ্রের হালকা ধমকে মেঘ আর সাহস করে কথা বাড়ায় না, পিহুর রুমে চলে যায়। তারপর রাতের খাবার খেতে নিচে নামে পিহুর সঙ্গে, যদিও তারা খেতে চাচ্ছিল না। তবে রুদ্রের মা তাদের না খাইয়ে ছাড়বেন না বলে দিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে টেবিলে যেতেই দেখে তাদের পরিবারের সবাই বসে আছে।
পিহু মেঘদের তার বাপ চাচার সাথেও পরিচয় করিয়ে দেয়। তবে এদিকে একজন যেন মেঘকে দেখে নিজের হুঁশে নেই, এক ধ্যানে তাকিয়েই আছে। মনে মনে আওরায়,
-“উম, এই মেয়েকে আমার লাগবে। “
খাওয়া দাওয়া পর্ব চুকিয়ে মেঘদের তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসে।
চলবে…
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৩
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬৪
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৭
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৯
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩২